এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২১০৫৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • AS | 125.187.57.238 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:২৯652341
  • খুব ভালো লাগছে
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০২652342
  • ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিনে সন্ধেবেলায় আমার চাকরিটা চলে গেল। নবাব্দা হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দম দেওয়া বেল ক্রীং ক্রীং করে বাজালেন। বাসবী আমাকে ইঙ্গিত করে বলল, তোমাকে ডাকছে ভেতরে।
    টেবিলের ওপরে একটা লম্বা রুলটানা খাতা। তাতে আবার ডটপেন দিয়ে লম্বা লম্বা লাইন টানা রয়েছে। এম্‌প্লয়ীদের নাম লেখা, এক্কেবারে ডানদিকে রেভিনিউ স্ট্যাম্প সাঁটা। সেখানে সই করে আমার হাতে দুহাজার টাকা গুনে দিলেন নবাব্দা।
    আপনি একবার গুনে নিন।
    আমি টাকাটা গুনে নিলাম। এটা পুরোমাসের স্যালারী।
    শুনুন, আরেকটা কথা। আপনাকে আর কাল থেকে আসতে হবে না। মানে বুঝতেই তো পারছেন, বিজনেস সেভাবে আসছে না, দেবরূপ আছে, কাজরী, ... এতগুলো লোকের মাইনে দেওয়া... খরচটা বেশি হয়ে যাচ্ছে।
    ঠিক আছে।
    আমার সিচুয়েশানটা বুঝতে পারছেন তো? একটা বিজনেস দাঁড় করানো।
    হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।
    ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখি বাসবী আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে দেখছে। চুপ করে আমাকে পর্যবেক্ষণ করে কিছুক্ষণ। আমিই মুখ খুলি।
    চাকরিটা চলে গেল।
    হ্যাঁ, নবাব্দা আমাদের কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন। আমরাই তোমাকে বলিনি, মানে তোমার মন খারাপ হয়ে যেত।
    না। এতে মনখারাপের তো কিছু নেই। আমি কি এখন চলে যাব?
    তোমার যদি তাড়া থাকে তবে চলে যেত পারো, আমার কয়েকটা এন্ট্রি বাকি আছে। তারপর আমাকেও স্যালারীটা নিতে ডাকবে হয়ত।
    আমি বেরিয়ে যাই। সিঁড়ি দিয়ে নামছি, দেখলাম নীচে তপন।
    চলে যাচ্ছিস?
    চাকরিটাই তো চলে গেল।
    ভালো হয়েছে, চলে গেছে। শোন, একটা কথা ছিলো। উত্তমদা যেখানে কাজ করেন, ওটাও কিন্তু অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সী, এই অ্যাড্‌হিয়ারের থেকে অনেক বড়ো। ওখানে জয়েন করবি? যাবি এখন? চল। ওরা তোকে নেবে। আমাকে জিগ্যেস ও করেছে কয়েকবার।
    আবার এই অ্যাকাউন্ট্‌স্‌ একজেকিউটিভের চাকরি?
    হ্যাঁ। ওরা মাইনে বেশি দেয়, কমিশন ও দেয়। যাবি তো চল। আমি কিন্তু তোকে না জানিয়েই তোর ফোন নম্বরটা উত্তমদাকে দিয়ে রেখেছি।
    ঠিক আছে। কিন্তু আমি আর এই অ্যাড্‌ভার্টাইজিং এ কাজ করব না। এই লাইন আমার পোষাচ্ছে না।
    তুই যে টাইপের মেয়ে, এ লাইন তোর জন্যে নয়।

    আরেকটু এগোতেই দেবরূপের সঙ্গে দেখা। ও অফিসে ঢুকছে।
    কীরে?
    চাকরি নট হয়ে গেছে তো!
    জানি। মানে জানতাম। আজ সকালেই জেনেছি। কী করবি এখন?
    এখন বাড়ী যাব।
    না মানে নতুন কোথাও কাজ খুঁজতে হবে তো।
    সেতো হবেই।
    দাঁড়া। এক মিনিট। তোকে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তুই আমার কাছে একশ পঁচাত্তর টাকা পাশ।
    কেন?
    দুর্গাপুরে গেলাম না? সব হিসেব বুঝিয়েও কিছু সরিয়ে রেখেছিলাম। জুতো কিনলাম। তারপরে হিসেব করে দেখলাম তোর শেয়ার একশো পঁচাত্তর।
    এটাকা নিয়ে আমি কী করব? তুই নবাব্দাকে দিয়ে আয়।
    নবাব্দার সঙ্গে হিসেব কমপ্লীট হয়ে গেছে। ওদিকে যাওয়া যাবে না। এটা তোর টাকা। রাখ।
    ও জোর করে আমার হাতে টাকাটা গুঁজে দেয়।

    মাসের শেষে আমার ইনকাম হলো উপরি মিলিয়ে দুহাজার একশো পঁচাত্তর টাকা।

    এখন আমি বাড়ি ফিরব। তার আগে একটু শপিং করতে হবে। জনসন অ্যান্ড জনসনের দুটো নতুন সাবান বেরিয়েছে। একটা স্ট্রবেরীর গন্ধে অন্যটা গ্রীন অ্যাপেল। কোনটা কিনব ভাবছি। গ্রীন অ্যাপেল খুব কমন গন্ধ। স্ট্রবেরীটাই বেটার হবে মনে হচ্ছে। আজ স্যালারী ডে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০৫652343
  • এই চাকরির গল্পটা এখানেই শেষ।
    এখন বিরতি।
    আপনারা যারা এই নাটকটা পড়ছেন/দেখছেন নিশ্চয় কিছুটা ক্লান্ত।
    বিশ্রাম নিন।
    বিরতির পরে শুরু হবে আরেকটা চাকরির গল্প।
    ও, হ্যাঁ। কুমার শানুর অনুষ্ঠানটা আমি দেখতে যাই নি।
  • . | 59.207.222.236 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:২৭652344
  • এর সময়্কাল কখন '৯০ এর মাঝামাঝি?
  • তাপস | 233.29.204.178 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:৩২652345
  • থ্যাংক ইউ । লেখার মত আর কিছু মনে আসছে না
  • d | 144.159.168.72 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:৪৬652346
  • এই গল্পটা বেশি ভাল লাগল।
  • শ্রী সদা | 190.151.42.110 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৮:৪৯652347
  • খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। ভালো লাগছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন, নব্বই এর শেষদিকে এটিয়েম কার্ড কি খুব বেশী লোক ব্যবহার করতো ? আদৌ ছিল কি ? মানে যে সময়ে দু-আড়াই হাজার মাইনেতে মধ্যবিত্ত সংসার চালাতো বলে লেখা হচ্ছে, সেই রকম সময়ে সেই স্তরের একজন চাকুরের কাছে এটিয়েম কার্ড, খটকা লাগলো।
    চলুক।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:০৭652348
  • সে এটা ৯৬/৯৭ এর কথা বলছিলেন তো, তখন ছিলো এটিএম কার্ড। ঐ ঢুকে যেত, আবার ট্রান্জাকশন শেষে বেরিয়ে আসত। আমাদেরো ছিলো, তখন সবে বিয়ে হয়েছে। আর বরের মাইনেও ঐ দুহাজার টাজার হবে।:D তবে ওনার কার্ডটা আগের সময়ের, সেটা ওনার ভালো সময়, এরকম ই কিছু মনে হলো লেখা পড়ে।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:০৯652349
  • আর সে কে,
    সবার জীবনেই নানারকম কঠিন কঠিন নাটক থাকে তো। ক্লান্ত লাগার কি আছে, বরং সবাই লড়ছি ব্যাপারটা মনে বেশ শক্তি দেয় তো।ঃ)
  • d | 144.159.168.72 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:১৩652351
  • ওহে সদাখোকা নব্বইয়ের শেষদিকে এটিএম কার্ড জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩652352
  • বিরতির পরে।
    থার্ড বেলটা খুব ক্ষীণভাবে বেজেছে। হয়ত সকলে শুনতে পাননি। আমি ধীরে ধীরে এই পর্ব শুরু করছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯652353
  • জানা কথা, তবু রিপিট করে নিই। চাকরি খুঁজছি। এটা নব্বইয়ের দশকের দ্বিতীয়ার্ধের একটা সময়। বাংলা খবরের কাগজে তেমন কর্মখালি বিশেষ থাকে না। তাই রোজ সকালে ইংরিজি খবরের কাগজে চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজি। বিজ্ঞাপনের ভাষা বুঝতে কিঞ্চিৎ অসুবিধে হয়। তার ওপরে চাকরিদাতা এত কিছু চায় যে তাদের সমস্ত দাবী দাওয়া ফুলফিল করতে পারব বলে সাহস হয় না। ইয়াং, ডায়নামিক, রেডি টু টেক চ্যালেঞ্জিং টাস্ক্স, রেডি টু ট্রাভেল, হার্ড ওয়ার্কিং এসমস্তর পরে শিক্ষাগত যোগ্যতা, এত বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, এই সব দেখে হিমসিম খেয়ে ভয়ে কুঁকড়ে পিছিয়ে আসি। অথচ কত মাইনে দেবে সেটা কেউ পরিষ্কার করে বলে না। অ্যাট্র্যাক্‌টিভ স্যালারী শব্দের অর্থটা যে ঠিক কী সেটা বোঝা ভার। তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে যে এদেশে মানুষজনের স্যালারী কেমন সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। কেউ খুলে কথা বলতে চায় না। কীরকম স্যালারী পেলে একটা মানুষ সংসার চালাতে পারবে খেয়ে পরে ঘরভাড়া দিয়ে তার কোনো ধারনা আমার তখন নেই। একটা ব্যাগের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্রগুলো নিয়ে চলছে চাকরি খোঁজা।
    এমনি এক সকালে দেখলাম ঐ ইয়াং ডায়নামিক ইত্যাদি সহকারে মোটামুটি আমার যোগ্যতার কাছাকাছি একটা কর্মখালি রয়েছে। পোস্ট বক্স নম্বর এরা দেয় নি। পরিষ্কার করে ঠিকানা লিখেছে। ক্যামাক স্ট্রীট। তা যাওয়া যাক। যদি তাদের পছন্দ হয় তবে ঢুকে যাবো চাকরিতে।
  • ranjan roy | 24.99.37.87 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:১২652354
  • ছত্তিশগড়ে থাকার ফলে ওই সময়ের কোলকাতা, মধ্যবিত্ত জীবন , চাকরি খোঁজার ব্যাপারটা আমি একেবারে মিস করেছি। ৬৮-৬৯ এ তো প্রাইভেট চাকরি না থাকারই মত।
    তাই সে'র এইলেখাগুলো আমার কাছে ভীষণ দামী, গোগ্রাসে গিলছি।
    গল্পবলার মুন্সীয়ানা অসা!!
  • s | 117.131.42.250 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:১১652355
  • সে'র দ্বিতীয় গল্পটাও ব্যাপক লাগলো। আমি বরাবরই সে'র একনিষ্ঠ ফ্যান, তাই আবার আমার প্রিয় লেখিকাকে কুর্ণিশ। চালিয়ে যাও বস।
    আমিও ৯০ দশকের মাঝামাঝি ধর্মতলার ওরকমই একটা ছোট্ট অফিসে কিছুদিন চাকরি করেছি। মালিক, একজন টাইপিস্ট, একজন পিওন এবং আমি। সেটাও মজার অভিজ্ঞতা।
    তবে তার পরে যে কোম্পানিতে চাকরি করতাম সেখানে টিএ ভালো ই পাওয়া যেত। আমরা যারা সেলস বা সার্ভিসে ছিলাম তারা মাসে ২-৩ টে ট্যুর হলে, টিএ থেকে বাঁচানো টাকায় আরামসে মাস চলে যেত, মাইনের টাকায় হাতই দিতে হত না। সে সব গপ্প পরে। আগে সে'র গপ্প শুনে নি।
    আর এটিম কার্ড আলবাত ছিল। তবে বেসরকারী ব্যাঙ্কের। নব্বইয়ের সেকেন্ড হাফে এমনকি ক্রেডিট কার্ডও ছিল। আমারই ছিল একটা সিটি ব্যাঙ্কের। এটিম মেশিন অবশ্য বেশী ছিল না। ব্যাংকের ব্রাঞ্চ আফিসগুলোতেই যা দু একটা থাকত।
  • . | 132.248.161.59 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৪:৩৫652356
  • '৯৭ সালের ৩১ডিঃ গৌহাটি থেকে আসতে এয়ারপোর্টে এসে দেখি ওভারবুকিংএর ফলে আমার জায়গা নেই। তখন ঐ ক্রেডিট কার্ডের দৌলতে বিজনেশ ক্লাসের টিকিট কেটে কলকাতাই ফিরি। হ্যাঁ তখন শুধু সৌয়াপের মেশিন ছিল আজকের মত নয়। তা আবার ডায়াল-আপ কানেক্শান দিয়ে সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তা সে যুগে আমাদের হাতে অঢেল সময় ছিল, মোবাইল ও নেই, ইন্টারনেট ও টিমটিম করছে। এইগুলি লিখলাম সদাবাবুর জন্যে, যে তখনও এটিএম এবং কার্ড ছিল।
  • শ্রী সদা | 113.19.212.22 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:৪৩652357
  • হুম আমারই মিসটেক। মফঃস্বলের ছেলে, কোলকাতা আসার আগে ওসব জিনিস চোখে দেখিনি :)
  • ASG | 192.75.25.67 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:০১652358
  • ATM card ভারতে প্রথম আনে HSBC Any Time Money নাম দিয়ে ১৯৮৭ সালে মুম্বাইতে। কোলকাতায় ১৯৮৮ তে চালু হয় ডালহৌসী ব্রান্চে। ১৯৯৫-৯৬ এর মধ্যে অনেক এ টি এম চালু হয়ে যায় কোলকাতায়।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:০৮652359
  • সদাকে কেবল একটা পোশ্চেন, হ্যাঁরে! তখন তুই জম্মেছিলিস ? (যে জানবি)
  • শ্রী সদা | 190.151.209.76 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:৫২652360
  • হ্যাঁ >:(
  • সে | 188.83.87.102 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৬:২২652362
  • বাড়ীটার নাম বেল্‌স্‌ হাউস। উঁচু বিল্ডিং। ওদেরই কোম্পানী। কি সমস্ত কন্ট্রোল সিস্টেমের কাজের ব্যাপারে লোক চাই। পৌঁছে গেলাম। কোনো ইন্টারভিউ নয়, তাই কোনো প্রশ্নোত্তরের ব্যাপার মনে হয় থাকছে না, থাকলেও ক্ষতি নেই। যেমন যেমন জানিতেমন তেমন বলব। পাঁচ কি সাততলার একটা অফিসেযেতে হোলো, দরখাস্ত ওখানেই দিতে হবে। অফিসে অনেক লোক কাজকর্ম করছে, আমাদের আসার উদ্দেশ্য জানাতেই রিসেপশানিস্ট/গার্ড ভদ্রলোক ভেতরে খবর দিতে গেলেন।
    লক্ষ্য করুন একটা জিনিস। আমার নয়, আমাদের আসার উদ্দেশ্য লিখেছি। বহুবচন। আমরা দুজন ক্যান্ডিডেট তখন একসঙ্গে একই চাকরি পাবার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিলাম। রিসেপশানিস্ট ফিরে এসে বলল আপনারা দুজনেই ঐখানে গিয়ে কথা বলুন। ঢুকেই অল্প এগিয়ে বাঁ হাতে একটা ছোট্টো ঘর। ছোট্টো টেবিল। টেবিলের ওপারে একজন রোগা পাতলা যুবক ভদ্রলোক বসে আছেন। বিপরীতে দুটি চেয়ার যেখানে আমারা দুজনে পাশাপাশি বসলাম। ভদ্রলোক আমাদের দুজনের পরিচয় জেনে নিলেন এক এক করে এবং দুজনেরই দরখাস্ত ও অন্যান্য কাগজপত্র বেশ মন দিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে লাগলেন। তারপরে আরো কিছু ফর্মালিটি ছিলো, ফোটো কপি ইত্যাদি করা, এবং তারপরে আমাদের বললেন যে ইন্টারভিউয়ের ডাক আসতে আসতে আরো হপ্তা দুয়েক লেগে যাবে। দু একটা হালকা কথাবার্তা হোলো। ওঁর কতো কজের চাপ যাচ্ছে। কথার ফাঁকে বললেন যে ফ্যামিলি বিজনেস আছে বাসের সেটাও সামলাতে হয়, তার ওপরে অফিসে এখন খুব প্রেসার।
    আমি আবার তড়বড়িয়ে কোন রুটের বাস মানে কত নম্বর সেটা জানতে চেয়েছিলাম।
    তাতে উনি স্মিত হেসে শান্তভাবে উত্তর দিলেন, লং ডিস্ট্যান্স লাক্সারী কোচ, মেইনলি কোলকাথা থেকে দীঘা আরকি।
    আমরা থ্যাংক্স্‌ জানিয়ে বাই করে বেরিয়ে আসছি তো ঐ ভদ্রলোক পিছু ডাকলেন।
    শুনুন।
    আমি পেছন ফিরে দেখি উনি সেই কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে আমাদেরকেই ডাকছেন। আমি তৎক্ষণাৎ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কী শুনতে চান সেই উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম।
    আমার সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্যান্ডিডেট ছেলেটিও এগোতে লাগল।
    সেই ভদ্রলোক বললেন, আপনাকে ডাকছি (আমাকে দেখিয়ে), আপনাকে আসতে হবে না (ঐ ছেলেটিকে ) আপনি যেতে পারেন। কিন্তু সে যাবেই না। আমি যদি কোনো স্পেশাল কিছু সুবিধে পেয়ে যাই। বলাতো যায় না। এটা কম্পিটিশানের মার্কেট। ফলে দুজনেই শুনবার জন্যে উদ্‌গ্রীব হয়ে দাঁড়ালাম। আমি এগিয়ে, অন্যজন অল্প তফাতে।
    ভদ্রলোক আমাদের দুজনকেই আবার ঐ কেবিনে ডেকে নিলেন।
    আপনাদের কাগজপত্র যা দেখলাম, আপনারা, বিশেষ করে আপনার (আমাকে দেখিয়ে) কাগজপত্র খুবই ইম্প্রেসিভ। কিন্তু..
    কিন্তু কী?
    না মানে, প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছে তো(টেবিলের ওপরে এক স্তুপ কাগজের ফাইল চিলো, সেদিকে দেখালেন)। আরো এরকম গোটা তিনেক লট আছে ভেতরে।
    আমরা দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে তাকালাম।
    ভাবছি, কত শয়ে শয়ে টেলিকম/ইলেকট্রনিক্স তথা কন্ট্রোল সিস্টেমের ইঞ্জিনীয়ার এখানে অ্যাপ্লাই করেছে, কজনকে নেবে এরা?
    কজনকে নেবেন আপনারা?
    হাউ মেনি ভেকেন্সীজ আর দেয়ার?
    আমরা দুজনেই প্রায় একই সঙ্গে বলে ফেলি।
    আছে, আছে। তিন থেকে পাঁচজন মতো নেওয়া হবে।
    এরপরে আর কোনো কথা নেই। প্রায় আধ মিনিটের নীরবতা। পেছু ডাকল কেন সেটা বুঝলাম না।
    ঠিক আছে স্যার। একটু দেখবেন যেন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ওরা কনসিডার করে।
    ও ইয়েস।
    উঠেই পড়েছি তখন।
    আসলে একটা জিনিস ভাবছি। আমি খুবই চেষ্টা করব। আপনারা যদি ইন্টারভিউয়ের ডেটটা জানতে চান তাহলে..
    বাই পোস্ট চিঠি আসবে তো?
    হ্যাঁ সে তো যাবেই। পোস্টাল সিস্টেমের যা অবস্থা। আমি যদি ডেটটা আগে জেনে যাই তবে এমনিতেও জানিয়ে দিতে পারি।
    কবে আসব বলুন?
    আরে না না, এখানে আসতে হবে না। এখানে সবসময় কাজ। কাজের ফাঁকে কথা হবে না।
    ফোন করব? (অন্য ছেলেটি বলল)
    স্যাটার্ডে দুপুরে কোথাও মিট করি?
    কোথায়?
    বৈভব শপিং কম্প্লেক্স টা চেনেন তো?
    বুঝেছি। ঐ হোটেল হিন্দুস্তানের পেছনে তো? (অন্য ছেলেটি)
    লী রোডে। ওর টপ ফ্লোরে একটা কাফেটেরিয়া টাইপের আছে আরকি। ওখানেই বসা যাবে। তখন কথা বলব।
    কটার সময়?
    লেট্‌স্‌ মীট অ্যাট টু ও ক্লক্‌।

    আমরা দুই প্রতিযোগী একে অপরের দিকে শ্যেন দৃষ্টি হেনে বেল্‌স্‌ হাউস থেকে বেরিয়ে গেলাম।
  • সে | 188.83.87.102 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৬:৩২652363
  • বৈভব শপিং কম্প্লেক্স আমি চিনি না। লী রোড সম্পর্কে একটা পুরোনো অভিজ্ঞতা আছে। আবছাভাবে জানি জায়গাটা কোথায়। তা ও ফেরার পথে জায়গাটা ভালো করে দেখে নিলাম।
    ছাদের ওপরে কিছু চেয়ার টেবিল পাতা রয়েছে। ওপেন এয়ার টাইপ। ভালো ব্যবস্থা। খাবার দাবারের দাম জাস্ট ডবল। তার ওপরে ট্যাক্স আছে। ইন্টারভিউয়ে যদি একবার ডাকে, আমি এই চাকরি নিয়েই ছাড়ব।
  • jhiki | 121.95.121.24 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:১১652364
  • বৈভবের মাথায় কফিশপটায় অনেকবার গেছি। রুফটপ। নব্বই-এর দশকে বেশ সরগরম থাকত। প্রথম পিজা, প্রথম কোল্ড কফি সব ওখানে.... প্রথম তথাকথিত ডেটও ঃ)

    সে, তোমার এই টইটা দারুণ হচ্ছে, পরে সব মিলিয়ে একটা উপন্যাস লিখো...
  • jhiki | 121.95.121.24 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:১৮652365
  • খাবারের দাম খুব বেশী ছিলনা বোধহয়, কুড়ি টাকা কোল্ড কফির দাম ছিল। তবে দামের চেয়েও বড় কলকাতায় ঐ দিকটাই ঐ ধরণের খাবার রুফটপেই পাওয়া যেত। রবীন্দ্র সদন অবধি বাসে এসে নন্দনে সিনেমা দেখা, অর্কিডে/মোমো প্লাজায় মোমো খেয়ে রুফটপে কোল্ড কফি খাওয়া। ফেরার সময় বাস না পেলে ট্যাক্সি। সব মিলিয়ে ১০০ টাকায় হয়ে যেত।
  • কল্লোল | 111.59.29.120 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:৫০652366
  • ঝিকিকে Date:12 Dec 2014 -- 07:11 AM পোস্টের জন্য দুহাত তুলে। তবে উপন্যাস নয় স্মৃতিকথা হিসাবে লিখুন সে। পর্বে পর্বে যেভাবে লিখছেন এখানে।

    আর হ্যাঁ, কলকাতা বা (কোন কারনে) ব্যাঙ্গালোর এলে যেন খবর পাই। আপনার সাথে মুখোমুখি আড্ডার জন্য মুখিয়ে আছি।
  • de | 69.185.236.52 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:২৭652367
  • আমরা কোল্ড কফি খেতাম কলেজস্ট্রীট কফি হাউসে - আমি এখনো অব্দি কোনদিন রুফটপে যাইনি - এবার একবার যাবো -
  • sswarnendu | 138.178.69.138 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:১৪652368
  • কুড়ি টাকা কোল্ড কফির দাম তখনকার হিসেবে বেশি নয়?? আমি সেই সময়ে শুধু কফি হাউসে কফি খেয়েছি... তার দামের হিসেবে কুড়ি টাকা তো অনেকই... বিশেষত আমার তখন দ্বিতীয় দশক... পঞ্চাশ টাকা যেদিন পকেটে থাকত নিজেকে রাজা মনে হত...
  • de | 24.139.119.171 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:৩৪652369
  • কুড়ি টাকা আমার ছাত্রাবস্থায় কোল্ড কফি খেয়ে খরচ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না - তবে কেউ কেউ করতও, দেখেছি!

    আমার মনে আছে গ্রাজুয়েশনের রেজাল্টের পরে বন্ধুরা খাওয়াতে বলেছিলো - মা একশো টাকা দিয়েছিলো - তখনকার হিসেবে সেটা বিরাট ব্যাপার। বন্ধুরাই বল্লো পুরো টাকাটা একদিনে খরচ করবো না, কেমন? আমরা দুদিন খাবো কফি হাউসে। সেইমতো খরচ হয়েছিলো।

    আজকালকার ছেলেপিলেরা শুনলে হেসে গড়াগড়ি দেবে!
  • hu | 102.47.188.169 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:০১652370
  • হ্যাঁ, একশো টাকা তখন বিশাল টাকা। একবার কোন এক কারনে প্রাপ্তি হয়েছিল। বাড়ির সবাই, দিদার বাড়ি, পিসির বাড়ি প্লাস বন্ধুদের খাওয়ানো হল সেই টাকায়। এখনকার হিসেবে খুবই মামুলী ব্যাপার সেসব।
  • sswarnendu | 138.178.69.138 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:০৫652371
  • হ্যাঁ সেই বাজারে ল্যাংটো চারমিনার এর প্যাকেট ছিল বোধহয় ২ টাকা, আরও কম কিনা মনে পড়ছে না, কিন্তু বেশি কিছুতেই নয়...... কুড়ি টাকা তখন অনেক টাকা... আমি নব্বই এর দশক শেষ হওয়ার পরেও শুধু দুর্গাপুজোর নবমী ছাড়া কোনদিন পকেটে ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়েছি খরচ করব বলে বলে মনে পড়ে না...
  • sswarnendu | 138.178.69.138 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:০৯652373
  • সপ্তাহে দুদিন বাড়ি গিয়ে অঙ্ক আর ফিজিক্যাল সায়েন্স পড়িয়ে ২০০৩ সালে পেতুম ১৫০ টাকা, তাও ছাত্রীর বাড়ি সল্টলেক বলে ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন