এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পুজোর আমি , আমার পুজো

    Parolin
    অন্যান্য | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৫০৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tania | 151.151.21.102 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:০২672042
  • পারোলিন, টুপি খুললাম, বাও করলাম। আর বেশী লেখা যাচ্ছে না, চোখটা এত ঝাপসা লাগছে কেন বলতো?
  • bozo | 129.7.154.192 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:১৫672043
  • too good. superb!!
  • vikram | 134.226.1.136 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:২০672044
  • এত ভালো লেখা রিসেন্টলি আর কোথায় পড়েছি মনে করতে পারছি না!
    দেকেচো ডাবলিন কি জায়গা!

    বিক্রম
  • b | 221.134.46.240 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:২৮672045
  • পারোলিন রে সালাম।

    পুজো সম্পর্কে আমার নানা কারণে কোনো রক্ষা করার মত স্মৃতি নাই, আলাদা মমঙ্কÄ তাই গড়ে ওঠে নাই।তবে যে চরিত্র গুলোর কথা বলেছেন , ছবি এঁকেছেন তাতে এক্কেরে চমৎকার লাগলো পড়তে।

    ঐ পাঁচু গুন্ডা কে নিয়ে আলাদা কইর‌্যা আরেকটু লিখুন না। আপনার কলম অক্ষয় হোক।

    এই শালা গুরু র লোক গুলো বেশ ভালো আচে।
  • Paramita | 143.127.3.10 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:৩৪672046
  • নোকখি পুজো আর ভাইফোঁটা আসছে সামনে - সেটা ভুললে চলবে কেমনে। সেইটে শুরু করো তো দিকিন এইবার।

    থিম পুজোর বাজারে এই লেখা যেন এক পিস শারদীয়া কিশোর ভারতী।
  • dam | 61.246.73.31 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:৪১672047
  • পাল্লিন,

    বড্ড বড্ড বড্ড ভাল।

  • koel | 72.201.125.250 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০৮672048
  • পারোলিন,
    আমি কোয়েল। মাঝেমাঝেই
    এ সাইটে আসি,পড়ি,লেখা হয় না।
    আজকে আর না লিখে চলে যেতে ইচ্ছে করলো না।
    কি ভালো যে লেগেছে তোমার লেখা! একদম ছবি।

  • Samik | 59.144.177.27 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:১৪672049
  • পারোলিনের লেখা পিডিএফ করে পারোলিনকে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারুর লাগলে বোলো।
  • Rana | 83.78.107.94 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:২৪672050
  • 'কামাল পারো, তুনে কামাল কিয়া ভাই' ...........
  • J | 84.72.41.180 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:৫০672052
  • সলিড।
  • Ru | 65.87.185.18 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০১:২৩672053
  • পারোলিন,
    অসাধারন, ছোটোবেলার কত কথা মনে পড়ে গেলো। আমিও বাঁকুড়ার মেয়ে। তবে সোনামুখী না, দেশড়া।
  • m | 67.173.95.163 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০১:২৬672054
  • চমৎকার,খুব ভালো লাগলো এক টুকরো ছোটবেলা আবার ফিরে এলো।
  • trq | 58.107.216.189 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৩:৫৮672055
  • পারোলিনের লেখাটা সাংঘাতিক ভালো হয়েছে! একদম মন থেকে আসা লেখাগুলোয় আলাদা গন্ধ থাকে। নো ডাউট।

    দ্বিতীয় বার পড়তে গিয়ে মনে হলো - একেবারে রেডিমেইড চিত্রনাট্য, শুধু পরিচালকের হাতে তুলে দিলেই হলো।

    আপনার জন্যেও- রাপু খাপাং!
  • s | 210.212.0.45 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১২:২৫672056
  • অসাধারন।।।।
  • r | 61.95.167.91 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১২:২৭672057
  • এই genre খগেন মিত্তির, লীলা মজুমদারের genre। আজকাল কেউ এইভাবে লেখে না। বোঝা যায় মন থেকে সেঁচে আনা লেখা। ভাল হয়েছে।
  • Sayan | 59.160.140.1 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৩:৩৫672058
  • পারোলিনদি আজকের দিনটা তুই এত ভালো করে দিলি, আজকের আকাশে কাশের গন্ধ, আজ সব দিক জুড়ে গেছে সোনালী শরতের রোদে, আর কত দিন কত দূরে .... আগমনী গান?
  • Parolin | 213.94.228.210 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৬:৫৫672059
  • অমি বড় হই , হতেই থাকি। কখন যেন কুচুমনা থেকে পারমিতা হয়ে যাই। পুজো কিন্তু ঠিক আসে। আমি হয়তো চেতনে - অবচেতনে অপেক্ষাও করে থাকি। মনের ভিতর ডুডুম ডুডুম বাদ্যিটা শুধু তেমন করে বাজে না। তবু পুজো আসে। আমার পুজো।

    সপ্তমীর সকাল

    এক দল ছেলেমেয়েরা সেজেগুজে যায় দোলা আনতে। আমি ঢাক আর শাঁখের আওয়াজ পেয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে দেখি। আমি যাই না। ইচ্ছে করে না।
    ভাই জোর করে বাইকে বসায়।ভাই শেষ পর্যন্ত নিয়েই যায় আমায়। নিজেকেও। শ্মশানকালীর মন্দির। আমার বাবাকে শেষ দেখেছি এখানেই। আমার সুন্দর বাবাকে।ঝিরঝিরে হাওয়াতে ঠান্ডা চাতালে বসেই পড়ি আমি।বাবা আমার হাতে রাখে হাত। আমি গল্প জুড়ি মনে মনে । আবোল তাবোল গল্প। আমার বাবার সাথে। গল্প শেষই হয় না।অনেক পরে আমরা দু ভাইবোনে বাড়ি ফিরি একসাথে।হাসতে হাসতে।আমাদের বাবার গল্প বলতে বলতে। হাজারবার শোনা গল্পগুলো। আমরা প্রতিবার নতুন করে বলি। আর হাসি।

    অষ্টমীর দুপুর

    যীষ্ণু হাত ধরে টানাটানি করে "ও মিষ্টিমাসী , সন্ধিপুজো যে শেষ হয়ে গেল।খ্যানও এসে গেল। কখন নিয়ে যাবে আমায়।চল চল"। আমি ওকে কোলে তুলে ধীরপায়ে যাই মন্ডপের দিকে । মাকে আর ডাকি না। বেরোবার সময় মা যীষ্ণুর গাল টিপে আদর করে। আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মায়ের মুখে কি যেন একটা হারিয়ে গেছে , নিভে গেছে। যীষ্ণু আমাকে তাড়া দিতেই থাকে।
    মন্ডপ সেই ধোঁয়ায় ধোঁয়া। বুক ভরে ধুপধুনোর মিষ্টি গন্ধ নিই আমি। আরতির প্রদীপের ওপর হাত দিয়ে যীষ্ণুর মাথায় বুলিয়ে দিই।দেখি মা এসে কখন দাঁড়িয়েছে আমার পাশে। মা হাসে। মায়ের চোট্ট ফরসা কপালে একটা কালো টিপ। আমি হাঁ করে মাকে দেখি। আমার মাকে কালো টিপেও কি চমৎকার লাগে। দুগ্গা ঠাকুরের মতন।মা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি যেন বলতেই থাকে।আমি মায়ের হাত ধরে টানি , চল খ্যান চলে এল যে। ঢাকের আওয়াজের তালে যীষ্ণু দু হাত তুলে নাচে।দেখে আমি মা হেসে উঠি।শব্দ করে , খোলা হাসি। ঢাকের আওয়াজ ছপিয়েও শোনা যায়।

    নবমীর সন্ধ্যে -

    আমি মাকে নিয়ে এসেছি ফাংশন দেখতে। প্রথমেই ছোটোদের গান-নাচ-কবিতা। বাদলকাকুর মেয়ে চকমকে ঘাগরা পরে নাচছে "দিলোয়ালো কি দিলকি করার লুটনে......"। আমি মার হত ধরে টানি "খিদে পেয়ে গেছে কখন থেকে "। ক-পা এগোতেই মাইকে একটা ছোট্টো মানুষের গলা। চেনা গলা , চেনা টান। "নমস্কার , আমার নাম .... আমি বলব সুকন্ত ভট্টচার্জের ভেজাল। ভেজাল ভেজাল ভেজাল রে ভাই……"আমি মাকে এগোতে বলে ছুটি স্টেজের দিকে। দিশাহারা হয়ে।কুচোটা স্টেজ থেকে নামতেই চটকে মটকে আদর করে দিই। কুচোর মা না পিসী কে যেন আমাকে অবাক হয়ে দেখে বলে "পারমিতা না , কতদিন দেখি নি তোমাকে , ভালো তো"। এক গাল হাসি আমি। ঠিকই তো। কতদিন দেখি নি আমি নিজেই নিজেকে। এই দেখা হয়ে গেল। ভালো।খুব ভালো আছি আমি। কুচোটার চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরি। চপল পায়ে।

    দশমীর সন্ধ্যে -

    কপিলকে সকালে বাজারে পাঠিয়ে একগাদা বাজী কিনে আনিয়েছি। যীষ্ণুকে লুকিয়ে। ওর জন্যে সারপ্রাইজ। ওর আজ বাজিতে হাতেখড়ি হবে। মুড়িপটকা আর তারাচচ্চড়ি এনেছে বেশি বেশি।কটা তুবড়িও আছে।
    এবারেও চাররকমের মিস্টির অর্ডার আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। অমি তদারকি করি সবের। মা গুছিয়ে রাখে ভুজিয়া , চানাচুরের প্যাকেট। কেউ মিষ্টি না খেতে চাইলে দেওয়া হবে। সন্ধ্যে হতেই লোকজন আসতে শুরু করে। দিদা ধপধপে সাদা শাড়ি পরে বসে থাকে সোফাতে। আমি সবাইকে ডেকে বসাই। খবর নিই। খবর দিই।
    ডোমপাড়া-বাউরীপাড়ার কুচোগুলো ও আসে। ঝিঝির হাতে। আমি ভাই হাসি। মিষ্টি চাইতেই ভাই প্রশ্ন করে
    "মিষ্টি কেন রে"
    "জানো না কি , আজ যে বিজোয়া"
    "বিজোয়া যদি তো প্রণাম কর , তবেই তো মিষ্টি পাবি"
    কুচোগুলো এবারে বিরক্ত।
    " অত পোনাম-মোনাম করতে পারবো নাই। দুটো মিষ্টি দেবে তায় এত কথা। দিবে তো দাও নইলে পালাচ্চি"
    আমি বসে বসে আর হাসতে পারি না। "ওরে দাঁড়া দাঁড়া , মিষ্টি আনছি।কোন মিষ্টিটা নিবি বল"
    ওরা ঝিঝির ভরা মিষ্টি নিয়ে অন্য বাড়ি যায়।
    এবার যীষ্ণু কে নিয়ে আমর সবাই দুগ্গামেলায়। ওদিকে লোকজন ঠাকুর বের করছে আর আমরা যীষ্ণুর হাতে দিয়ে যাচ্চি একটার পর একটা তারাচচ্চড়ি। নাম শুনে যীষ্ণু হেসেই কুটিপাটি। সিঁদুরখেলাও চলছে পুরোদমে। গোরার বৌ এসে বলে "তাড়াতাড়ি মাথা ফাটাও ,তোমাকেও একটু সিঁদুর মাখাই"।
    মাথা ফাটাও ?
    গোরার বৌ চলে যেতে যেতে বুড়ো আঙ্গুল নিজের সিঁথি বরাবর চালিয়ে হাসে।
    চারিদিক আলোয় আলো। হ্যালোজেনের আলোয় দেখি আমার অনামিকার এনগেজমেন্ট রিংটা ঝকঝক করছে। আমি আলতো হাতে ছুঁয়ে নিই একবার। বুঝি একটু সিঁদুরের রং এসে লাগে আমার মুখেও। ভীড় দুরে সরে যেতে থাকে। আওয়াজও হালকা হতে থাকে। ল্যাম্পোস্টের টিউবের সাদা আলোয় আলোয় দেখি ভাই বাড়ি যাবার জন্যে ডাকতে এসে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হয় ভাই ঠিক বাবার মত দেখতে হয়ে যাচ্ছে। সেই সুন্দর মুখ , সেই সুন্দর হাসি , সেই বাঁশির মত নাক। আমরা একসাথে বাড়ি ফিরি।ভাই , কপিল আগে গল্প করতে করতে। মাঝখানে যীষ্ণু লাফাতে লাফাতে।সবশেষে আমি। সবার সাথে একটু গল্প করে নিচ্ছিলাম। সদর দরজার গেট খুলতে খুলতে আমি প্রথম লাইনটা বলি আর যীষ্ণু সুর ধরে

    আসছে বছর ???

    আআআঅবার হবে এ এ এ।।
  • Parolin | 213.94.228.210 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৬:৫৮672060
  • ব্যাস্‌স।

    :-D
  • J | 160.62.4.10 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৮:১৯672061
  • ওসব ব্যাস ফ্যাস বল্লে হব্বে না। আরো চ্চাই!
  • saa | 62.254.64.15 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:২৬672063
  • এবারের লেখাটা পারোলিন, ভালো করে পড়তে পারছিলামনা, সব ঝাপসা দেখাচ্ছিল।
    তুমি আরো লেখো প্লীজ । গুরুচন্ডালী তে আমার পড়া বেস্ট লেখা।
  • mita | 69.134.231.58 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৮:১৪672064
  • পারোলিন,
    খুব, খুব ভালো লাগলো! কত্তদিন আগের কথা সব মনে করিয়ে দিলে! শেষের বিসর্জনের বাজনাটাও ভারি ভালো লাগলো।
  • m_s | 59.93.244.115 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১২:৫৫672065
  • পার'দি,
    অসাধারণ
  • supriya | 140.181.71.148 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৩:১৮672066
  • এই মাত্তর ক'দিন আগে এই সাইট টার কথা শুনিচি/ তারপর দেখে ফাঁকে ফাঁকে এসে পুরনো নতুন লেখা পড়ছি/ তবে এবার না লিখে পারলাম না, পারোলিন। এমন সুন্দর ছবি সত্যি অনেকদিন কোত্থাও দেখিনি। পরের টার জন্যে বসে থাকবো।

    সুপ্রিয়
  • Rana | 212.158.75.196 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৪:২৭672067
  • শালা... পারো, ইআর্কি পেয়েছিস না?? ব্যস বল্লেই হল??

    এই কে আছিস, পারো কে চুল-এর মুঠি ধরে ঝাঁকা তো...
    Tan না কে যেন বলছিলো বোন-এর হয়ে গুন্ডা হয়ে টাকা আদায় করতে গেছিল, Tan কে এই দায়িত্ত টা দিলাম...
  • atithi | 203.197.97.19 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৭:২৯672068
  • পাল্লিন দি,

    প্রশংসার ভাষা নেই
    কলকাতায় এলে খবর দিও, লেখিকাকে দেখতে যাবো

    তবে কলম নামিয়ে রাখতে চাইলে রাখো, কারুর কথা শুনো না। ভালো জিনিস অল্প বলেই সেটা ভালো, নইলে ভীড়ের চাপে নিজেই মাঝারি হয়ে যেতো, কবিগুরুর কথা...

    মন থেকে লেখার বড় গুণ আছে তোমার হাতে...তোমার লেখা অন্যকে inspire করে লিখতে... অসামান্য

    অতিথি
  • ® | 221.135.212.79 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৯:৫১672069
  • পুজো আসছে এই আনন্দ টাই আমার খুব ভাল লাগত।ছোটবেলাতে একটা কি দুটো নতুন জামা কাপড় হত আর হয়ত মেরে কেটে একটা স্কুলের জুতো ,বাবার পক্ষে এর বেশী সম্ভব ও ছিল না। অপেক্ষা করতাম সারা বছর -কখন সেই নতুন জামার,নতুন জুতোর গন্ধ পাব।ছোটবেলা থেকে দেখতাম বাবা সর্বদা কাপড় কিনে লোকাল টেলর সন্তোষ দার কাছে আমায় মাপ দিতে নিয়ে যেত।ভাবতুম কেন আবার দু সপ্তাহ অপেক্ষা করা ,রেডিমেড তো আছে! বাবা আমায় দাবড়ে দিয়ে বলত সন্তোষ পাড়ার ছেলে, সৎ পথে কিছু করার চেষ্টা করছে,তাছাড়া বানায় তো ভালো ই।তা আমি ভাবতুম যাক গে পুজোর আগে তো পরছি না,আমার পুজোর আগে জামা কাপড় ঠিক ই তৈরি হয়ে গেলেই হল।
    ষষ্ঠীর আগে আসত সিঁদুর ওলা সঙ্গে আলতা বিবি। মা বড়মা কাকীমা রা গোল হয়ে বসে আলতা পড়ত। সিঁ দুর ওলা বাক্স থেকে সিঁদুর আলতা বের করত আর ঠাকুমার সঙ্গে দাম নিয়ে খটামটি লাগত।মা একদিন মা ঠাকুমা কে বলেছিল "মা যদি সিঁদুর ওলা বেশী নেয় বলে মনে করেন তবে কেন নিলেন ওর কাছ থেকে",ঠাকুমা উত্তর দিয়েছিলেন "ও কবে কার লোক, ও যে মায়ের আগে আগে আসে মা,ওকে নিয়েই তো পুজো। ওকে কি ফেরাতে পারি?"
    আমাদের বাড়ীর ঠিক সামনে প্যান্ডেল হয়।এক বাঁধা ঢাকী আছে,বংশ পরম্পরায় তারাই বাজায়,সত্যি বলতে কি তেমন ভালো ঢাক বাজায় না। অনেক সময় বাবা রা রেগে বলত "কি যে বাজাচ্ছো ! সন্ধি পুজোর সময় বিসর্জনের বোল! এরকম বাজালে পরের বছর অন্য লোক" ।কিন্তু জানি পরের বছর ও এই আসত।বিজয়া শেষ হবার পরেই ঢাকী বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাইত -"মা কিছু টাকা,পুরোন জামা কাপড় দেবেন';ঠাকুমা ঢাকীদা কে ডাকত - কিছু নতুন জামাকাপড় শাড়ী হাতে ধরিয়ে দিত "অ্যাই ব্যাটা এই শাড়ী টা তোর বৌ কে দিবি আর ছেলে টা কে এই জামা ,পুজোর দিনে পুরোন জামা ও কি কথা ! "

    ইনজিনিয়ারিং ফার্স্ট ইয়ারে খেয়াল হয়েছিল একটা পুজোর প্রতিমা,প্যান্ডেল থেকে শুরু করে সব গোড়া থেকে স্টাডি করব -কিভাবে সাধারন শিল্পীরা কাজ করে।মন্ডপ ,প্রতিমার অলংকার থেকে মানান্সই আলো সব কিভাবে ফুটে ওঠে দেখেছিলুম। সেবার সৌভাগ্য হয়েছিলো মেদিনীপুরের মাদুর শিল্পীদের কাজ দেখার।প্রাইজ এলো, সব নিয়ে গেল মূল পরিকল্পনা যার সে;এই অখ্যাতনামা শিল্পী দের কেউ মনে রাখলো না।প্রশ্ন করেছিলুম এই এত রক্ত ঘাম ঝারিয়ে এত সুন্দর কাজের নাম অন্য কেউ কিনে নিল এতে কষ্ট হয় না? বলেছিল পেটের দায় বড় দায়,এই রুজি টুকুই যে সারা বছরের সম্বল। কষ্ট লাগে যখন তাদের সৃষ্টি পুজো শেষ হলেই নষ্ট করে দেওয়া হয়।

    আমি জানি এবার প্যান্টালুন্স ,শপার স্টপে কেনাকাটা করলেও ও অন্তত একটা জামা প্যান্ট আমি সন্তোষ দা কে দিয়ে করাব। সন্তোষ দার ছেলে টা বি কম ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে ,ওর সঙ্গে দেখা হলে একটু ক্যারাম ও খেলে নেব।
    আমি জানি এবার ও বুড়ো সিঁদুর ওলা আসবে , মা বড়মা রা কিনবে। বুড়ো হয়ত আড়চোখে স্বর্গত ঠাকুমার ছবির দিকে তাকিয়ে "বুড়িমা" কে মিস করবে।
    আমি জানি ঢাকী দা বাজাতে আসবে এবার ও ছেলে সমেত, ছেলের বিয়ে দিয়েছে।আক্ষেপ করবে ছেলে টা একটা ছোট্ট দোকান করেছে - ভালো ই চালায় , কিন্তু ঢাক বাজাতে চায় না , নাকি লজ্জা পায়।
    আমি জানি এবার অনেক প্রতিভাবান অখ্যাত শিল্পী আসবেন কাজ করতে,তারাও প্রচার পাবে না, দশমীর পর তাদের সৃষ্টি যখন ধ্বংস করা হবে তারা আড়ালে চোখের জল মুছে বছরের সম্বল টুকু নিয়ে দেশে ফিরবে। শুরু হবে তাদের পুজো।

    ঠাকুমার কথা টা আজ ও কানে ভাসে -"এরা সবাই মায়ের আগে আসে ।এদের নিয়েই তো আমার পুজো।"
  • m_s | 59.93.221.68 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৫:১১672070
  • সুন্দর সব ভাবনা, স্মৃতি... পড়তে খুব ভালো লেগেছে।
  • s_r | 220.227.146.21 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৭:৪৩672071
  • পারোলিন এর লেখাটা খুব ভালো। গ্রামের পুজোর সুন্দর বর্ন না। আমিও গ্রামের মেয়ে তাই অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছি আমাদের বাড়ির পুজোর সঙ্গে। বিশেষ্‌ত শেষ part টা। এখ্‌ন ও যাই পুজোতে। বাবা নেই, মা নেই বড়োরা যারা আস র জমিয়ে রাখতো তারা বেশির ভাগই নেই। তবু পুজো আছে আর দুই দিনের জন্য হোলেও মন পাখ্‌নায় ভর দিয়ে ফিরে যেতে চেষ্টা করি পুরোনো দিনে। ভালো ই লাগে। thank you পারোলিন
  • maitri | 203.197.89.222 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৭:২১672072
  • পারোলিন
    তোমর লেখা তা অসাধারন,আমর বাড়ি না শহরে না গ্রামে। তাই পুরোপুরি গ্রামের পুজোর আনন্দ টা জানি না। তবে তোমার লেখা টা পড়ে চোখের সামনে ছবির মতো ফুটে উঠছিলো। দারুন লিখেছো।গতো দুবছর পুজোতে বাড়ির বাইরে এই বার বরি যাচ্ছি। এই বাড়ি যাবার দিন গোনার মঝে
    তোমার লেখাটা সেই যাওয়ার ইচ্ছে টা কে আরো বাড়িয়ে দিল।
  • s_r | 220.227.146.21 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৭:৪৫672074
  • মৈত্রী, আমিও পুজোয় বাড়ি যাচ্ছি। আর আজ থেকে প্রায় "মন লাগেনা কাজের অবস্থা"। অথচ ঠিক এই সময়েই যত রাজ্যের কাজ। ছুটিতে যাচ্ছি যে তার আগে সব সারতে হবেনা!
    খবর পেয়েছি প্রতিমার গায়ে আজ থেকে খড়ি পড়তে শুরু হয়েচে (সেল এর দৌলতে সব জায়গাই আজ্‌কাল খবরের রেডিয়াসে পড়ে তা বাংলার গ্রামই হোক না কেন!)।
    আমাদের বাড়ীর পুজো, আর এই সময়টা আমরা যে যেখানকারই বাসিন্দা হই না কেন গিয়ে হাজির হই গ্রামের বাড়ীর পুজোতে। অবশ্য আজকাল পাব্লিক ডিম্যান্ডে (পড়ুন বর ও বাচ্ছারা)কলকাতাকেও বুড়ি ছুঁয়ে যেতে হয়। তবু ঐ পুজোটাই কেন প্রধান আকর্ষ ন তা বোধ্‌হয় পারোলিনের লেখা পড়লে কিছুটা সবাই বুঝবে।
    পুজোর দিনগুলোতে রোজ খুব ভোরে নহবতের দল সানাই বাজানো আরম্ভ করে। আসলে আগের দিন রাত্রে ওদের বলে দেওয়া হয় কখোন বাজাতে হবে পুজোর নির্ঘন্ট অনুসারে। ঐ কদিন সানাই ই আমাদের ঘড়ি। সে এক অপুর্ব অনুভূতি! ঐ গ্রাম্য সানাইবাদকরা তখোন ওস্তাদ বিসমিল্লা খানের চেয়ে কম লাগে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন