এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সর্ষেঃ তালেগোলে হরিবোলে, দয়ারা বুগিয়ালে ...

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ | ১৬০৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pipi | 60.129.53.31 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:২৩689551
  • ট্রেক*
  • Div0 | 132.179.23.163 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:৪৮689552
  • এটা হবে এক্সপেক্ট করেছিলাম। এর সঙ্গে হাই অল্টি, লেস অক্সিজেনের খুব বেশি হলে ৫% সম্পর্ক। বাকিটা কার্ডিয়াক। টোটাল লাঙ ভল্যুম জিনিসটা এখানে ম্যাটার করে। লাঙ ক্যাপাসিটি নর্মাল বা বেশি হলে স্মোকার হলেও এই সমস্যাটা হয় না। কিন্তু যারা লাঙ্‌স রিলেটেড যে কোনও অসুখে ভুগেছে, টিবি বা ব্রঙ্কাইটিস বা অরকম কিছু, কন্টিন্যুয়াস লাঙ্‌সকে ওয়ার্ক করানোটা বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এদের ক্ষেত্রে ইনক্লাইনে দৌড়ানো বা সাইক্লিংও কঠিন লাগবে।

    তবে বুনান ঠিক বলেছে। একটু ধাতস্থ হয়ে গেলে মানে হার্ট একটা রিদ্‌ম পেয়ে গেলে চড়াই ভাঙা অনেকটা ইজি লাগে। সিকি যদি রেগুলার কার্ডিয়াক এক্সারসাইজ করিস তাহলে পরের ট্রেকে প্রচুর উপকার পাবি।
  • Blank | 24.99.5.129 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:১১689553
  • আর একটা ছবি দিয়ে যাই

  • aranya | 83.197.98.233 | ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৩৬689554
  • গত এক ঘন্টা ধরে পুরোটা পড়লাম আর ছবি দেখলাম।কি অপার্থিব, অপরূপ সব জায়গা, জাস্ট ভাবা যায় না।
    আর সিকি লেখে বড় ভাল, জাত লেখক।

    কখনো কি আমিও এদের সাথে বেড়াতে যাব - সে সৌভাগ্য কি হবে? বুড়ো হয়ে যাচ্ছি...
  • King Ghidorah | 117.167.108.185 | ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৫৩689555
  • ওএটি - অমন অসাধারণ জায়গায় - সত্যিই মনোরম। একদিকে গঙ্গা, তার দুপাশে পাহাড়, মাঝখানে ভাগিরথী ১,২,৩ দেখা যাচ্ছে - পিপি কিনা তাকে অব্যবস্থা বল্ল!!!

    অব্যবস্থা হল গঙ্গোত্রীর ডান্ডিবাবার আশ্রমে। সে সেই পান্ডবদের আমলে তৈরী, আর সেই তখনই শেষ পরিষ্কার হয়েছিলো। তো একবার গিয়েই বেজায় অভক্তি হল। তারপরে একদিন ভোরে বাবা এদিক সেদিক ঘুরে একটা দিকে দ্যাখে ওদের মহারাজদের টয়লেট, বেশ পরিষ্কার। কিন্তু রেলিং টপকে অন্য একটা বারান্দায় যেতে হয়। তো তাই সই। সেদিন আর অসুবিধা হয়নি।
  • pipi | 139.74.230.45 | ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:১৬689556
  • হেঁইয়ো ও ও ও! ওরে ওইইইইইই!
  • lcm | 83.162.22.190 | ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:০৪689557
  • ওহ্‌, বুনানের ক্যামেরার লেন্সের ঢাকনা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, গরম গরম ছবি তুলেছে বোঝা যাচ্ছে
  • সিকি | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:৩২689558
  • সকাল হল। ঠাণ্ডাটা বেশ ভালোরকমই ছিল, কিন্তু শূন্যর নিচে নামে নি। হাঁচোরপাঁচোর করে পায়ে জুতো গলিয়ে টেন্টের বাইরে বেরোলাম। বুনানের এখন নাক ডাকছে না, যদিও নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে। অর্পণ বেরিয়েছিল আরও ভোরে, প্রকৃতির মাঝে হালকা হতে। সে হালকা টালকা হয়ে তাঁবুর ঠিক বাইরেই বিজেন্দারের সাথে খেজুর করছিল – আধোঘুমে শুনছিলাম – হাম তো কালকাট্টা মে নেহি র‍্যাহতে হ্যায়, কালকাট্টা সে থোড়া দূর এক গ্রাম হ্যায়, হামারা ঘর উসি গ্রাম মে হ্যায়। কালকাট্টা মে তো ঠান্ডা নেহি পড়তা হ্যায়, পাস মে হি ও হ্যায় না – কী বলে, বঙ্গোপসাগর হ্যায়, ইসি লিয়ে কালকাট্টা মে ইতনা ঠান্ডা নেহি হোতা …

    বাইরে কাঠকুটোর আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে। তাড়াতাড়ি তার পাশে গিয়ে বসলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আদা দেওয়া গরম চা চলে এল। মনে হচ্ছে এখন আর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার দরকার হবে না। সামলে নেওয়া গেছে। সামনেই ডিকেডি আর বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ, সকালের প্রথম সোনালী রোদ্দুর পড়েছে তার চূড়োয় – ঝলমল করছে চারদিক। আকাশে লেগেছে লালচে রঙ, সে-ও আস্তে আস্তে সোনালী হয়ে যাচ্ছে।







    সাড়ে আটটার মধ্যে দুরন্ত ব্রেকফাস্ট চলে এল – আলু-জিরা, রুটি, ডবল ডিমের ওমলেট আর ডিমসেদ্ধ। না দাদা, আপনারা সকালে যে ব্রয়লারের ডিম খান, সেই জিনিস না – দেশী মুরগীর ডিম। লাল টুকটুকে কুসুম, আর সে কী টেস্ট! এই প্রেম আর বিজেন্দর মিলে এবারের ট্রেকটাকে মোটামুটি ফুড ট্রেক বানিয়ে রেখে দিয়েছে।

    বুনানও উঠে পড়েছে, তবে খেল না বিশেষ কিছু, শরীর এখনও ঠিক হয় নি। কালকের মতই আমরা হাঁটা শুরু করলাম – খচ্চরগুলোকে রেডি করে পিঠে মাল বেঁধেছেঁদে ওরা একটু পরে শুরু করবে।



    আজ বেশির ভাগটাই বরফে হাঁটা। কাল এসেই বরফের ওপর খানিক খচমচ করে হেঁটে দেখে নিয়েছি, মোট্টেই অসুবিধে হচ্ছে না। অতএব, অর্পণ আর বুনানের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম, আর খানিক পরেই যা হবার, তাই হল। বুনান হনহনিয়ে খানিক বাদেই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল, বেচারা অর্পণ আমাকে সম্মান দিতেই আমার সাথে টুকটুক করে হাঁটতে লাগল, আর একটু এগোবার পরেই আমি দাঁড়াচ্ছি আর জিভ বের করে হ্যা হ্যা করছি।

    তবে কালকের থেকে অবস্থা সামা-ন্য হলেও উন্নত। প্রায় দেড় কিলোমিটার চলে এসেছি। এখন অনেকখানি রাস্তা খাড়াই উঁচু, বরফ আর নেই রাস্তায়। ধীরে ধীরে এগোচ্ছি, হঠাৎ পেছন থেকে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে প্রেম এসে ওভারটেক করে গেল আমাদের। একটু এগোতেই রাস্তা ঘুরে গেছে ওপরে, সেইখানে দেখি পাথরের ফাঁক দিয়ে সরু জলের ধারা এসে পড়েছে পথের ওপরে, চারপাশে বরফ জমে আছে, আর সেইখানে প্রেম পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু এগোতেই বোঝা গেল কারণটা কী।

    মিনি ঝরণায় পাথরের ওপর জল জমে বরফ হয়ে আছে – কিন্তু এটা চারপাশের ঝুরো বরফের মত নয়। কতযুগ ধরে এখানে জল জমেছে কে জানে, বরফ এখানে কাঁচের মত, শক্ত এবং মসৃণ। পা ফেলতেই হড়কে গেলাম, কোনওরকমে ব্যালান্স সামলাতে গিয়ে টের পেলাম প্রেম শক্ত হাতে ধরেছে আমাকে। সে নিজেও পিছলোচ্ছে – দুজনে পাশাপাশি হাত না ধরলে এই ছোট্ট স্ট্রেচটুকু একা পেরনো মুশকিল, আমার তো ট্রেকিং শু-ও নয়।

    প্রায় তিন কিলোমিটার চলে এসেছি আজও। এবং, আর সত্যিই পারছি না উঠতে। একই সমস্যা, একই সিম্পটম। অর্পণ এগিয়ে গেল সন্তোষকে সাথে নিয়ে, প্রেম রইল আমার সাথে। নিচ থেকে টুংটুং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে – খচ্চরেরা এসে গেল প্রায়।

    তারা এল, আমি উঠে বসলাম। এবং বসার পরে আর কোনও সমস্যা নেই। ওঠার মুখে যেমন যেমন নিয়ম, সামনের দিকে ঝুঁকে যান, নামার সময়ে বডি পেছন দিকে হেলিয়ে দিন – এসব আমার জানা, এতে সমস্যা কিছুই হয় না। খচ্চরের পিঠে বসে দিব্যি মনে হতে লাগল, আমি কেন বসে আছি, আমি তো আরামসে হেঁটে যেতে পারি – পিঠে ব্যথা নেই, পায়ে ব্যথা নেই, কোমরে ব্যাদনা নেই, কোথাও কিছু নেই, দিব্যি সুস্থসবল একটা মানুষ। … কিন্তু নামতে সাহস পেলাম না, জানি সমস্যা হবেই অন্যত্র।




    একটু এগোতেই আমরা পৌঁছে গেলাম একটা চারদিক সাদা বরফে ঢাকা ছোট্ট ভ্যালিতে, আর সেটা পেরিয়ে একটু এগোতেই আমাদের জার্নি শেষ। আমাদের আজকের জার্নি ছিল ছ কিলোমিটারের। এগারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম একটা উঁচু জায়গায়, প্রেম বলল, এটাই দয়ারা টপ। সামনে একেবারে তিনশো ষাট ডিগ্রির ভিউতে বিভিন্ন বরফের চূড়ো, একদিকে বান্দরপুঞ্ছ, অন্যদিকে শ্রীকণ্ঠ, ডিকেডি এবং তাদের সঙ্গের ছোটোখাটো পীক। নিচের দিকে নীলচে পাহাড়, তার মাঝে মেঘেরা খেলে বেড়াচ্ছে, সামনে পাথরের কয়েকটা অস্থায়ী বাসস্থান, নিচে গোইতে যেমন দেখেছিলাম। পুরোটাই বরফে ঢাকা। তার সামনেই একটা বরফে ঢাকা ঢালু জমি নেমে গেছে, আর তার বাঁ পাশ দিয়ে একটা বিশাল উঁচু টিলা উঠে গেছে। খচ্চরওলা আর বিজেন্দর দুজনে মিলে টকাটক সেই টিলায় উঠে চলে গেল, জলের সন্ধানে। এখানে বহমান জল নেই, ওপরের দিকে একটা বহমান জলের সোর্স আছে – সেইটা পাওয়া গেলে আমরা ওপরে গিয়ে টেন্ট লাগাব, নইলে এখানেই।







    তারা গেল এবং এল, আমি বসে বসে খানিক ছবি তুলে ভাবলাম, মোবাইলে দুটি ছবি তুলি – পরে শেয়ার করতে সুবিধে হবে, ও মা, বের করে দেখি দুটি মিসড কল এবং ছটি এসেমেস। এবং, এবং, রোমিং-এ ফুল সিগন্যাল।

    এইখানে? দয়ারা বুগিয়াল টপে? বুনান এবং অর্পণও এল। তারাও মোবাইল বের করে দেখল, এয়ারটেল, ভোডাফোন, সবারই ফুল সিগন্যাল আসছে এখানে। ব্যাপক ব্যাপার! কোথায় দূরে কোন পাহাড়ের গায়ে টাওয়ার বসানো আছে কে জানে, এইখানে তার সিগন্যাল এসে পৌঁছচ্ছে। টপাটপ কিছু ছবি শেয়ার করে লোকজনকে হিংসে দেওয়া গেল।

    জলের সন্ধানে যারা গেছিল, তারা ফিরে এল। ওপরে জল পাওয়া যায় নি, তাই এখানেই নিচের দিকে টেন্ট বসানো হবে। টিলার নিচে, যাতে হাওয়াটা আটকায়। আজকে দুটো টেন্ট খাটানো হল, একটা আমাদের জন্য, একটা প্রেম, বিজেন্দর, সন্তোষ এবং খচ্চরওলাদের জন্য, কারণ নিচের দিকে আর কোনও হাট নেই। সেই দ্বিতীয় টেন্টেরই এক্সটেনশনে পলিথিন টাঙিয়ে রান্নার জায়গা তৈরি হয়ে গেল। টেন্টের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে বরফ। একজন সেখান থেকেই থালায় করে বরফ চেঁছে চেঁছে তুলে টিনের ড্রাম ভরতে লাগল, প্রেম আর বিজেন্দর কাঠকুটো জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে ফেলল, এই আগুনেই বরফ গলিয়ে জল হবে, সেই জলে চা হবে, রান্না হবে …

    প্রেম বলল, চা খেয়ে নিয়ে আমি আপনাকে আর দুইপায়নদাকে ঘোড়ায় করে এই টিলার ওপরে তুলে দিচ্ছি, ওপরে গিয়ে একটু ঘুরে আসুন, ওপরে আরও ভালো ভিউ পাওয়া যায়।

    এদিকে এতটা চলে এসে ঘোড়া, আই মিন খচ্চরদের বেশ তেষ্টা পেয়ে গেছে। সন্তোষ এক টিন জল নিয়ে গিয়ে ধরল, দুই খচ্চর মিলে তিন চুমুকে সেই জল শেষ করে আহ্লাদে চামরের মত ল্যাজ দোলাতে থাকল। এইবারে আমাদের নিয়ে তারা টিলায় উঠবে। এদিকে ঘোড়ার পিঠে চড়া আমার কাছে যতটা সহজ, বুনানের কাছে ততটাই শক্ত। টপে উঠে খচ্চরের পিঠ থেকে নেমে বুনানের দার্শনিক উপলব্ধি, এচ্চেয়ে পায়ে হেঁটে ওঠা অনেক সহজ।

    ওপরে উঠে চোখ জুড়িয়ে গেল চারদিকে বরফ, আর বরফ। যেদিকে তাকাই, দিগন্তবিস্তৃত সাদা চাদর, ধবধবে সাদা, আর উঁচু উঁচু পাইন গাছের সারি। সামনেই প্রকাণ্ড বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ, মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই বোধ হয় ধরা যায়। বরফে পা রাখলে প্রথমে জুতোর সোল, তার পরে জুতোটাই ডুবে গেল।

    এ জিনিস লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, খানিক ছবি দেখুন বরং।









    ঘণ্টাদেড়েক ঘোরাঘুরি করে আবার নেমে এলাম, ততক্ষণে ম্যাগি তৈরি। খানিক গল্পগুজব, আস্তে আস্তে সূর্যাস্তের সময় হয়ে গেল, আকাশের রঙ পাল্টাতে শুরু করল।






    আমি আবার ওপরের দিকে উঠে এলাম। নিচে কোনও মোবাইলের সিগন্যাল ধরছে না, একমাত্র ওপরেই ধরছে।

    আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে এল – আকাশে ফুটে উঠল একটা দুটো করে হাজার হাজার তারা। খচ্চরওয়ালা আজ তার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসল। … একটা টিম এসেছিল বান্দরপুঞ্ছ সামিট করতে, পীকের দিকে ওঠার সময়ে একজনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এই খচ্চরগুলোকে নিয়েই সে উঠছিল পোর্টার হিসেবে। তাড়াতাড়ি সেই লোকটিকে নিয়ে সে নেমে আসে – কারণ অন্তত উত্তরকাশী না পৌঁছনো গেলে মিনিমাম মেডিক্যাল সাপোর্টও জুটবে না। এই ওপরের যে টিলাটা – যেখানে আমরা দুপুরে উঠেছিলাম, সেখানে একটা টেম্পোরারি হেলিপ্যাড আছে, ওইখানেও এনে ফেলতে পারলে ফোন করে হেলিকপ্টার ডেকে নেওয়া যেত। … কিন্তু ওই অবধি আনবার আগেই লোকটা মারা গেল। আমরা তার ডেডবডি নিয়ে নিচে নিচে নেমে এলাম।

    খাওয়া শেষ হয়ে গেল সাড়ে সাতটার মধ্যেই – এর পরে শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে জাস্ট ঘুম আসে না, রাতে হাজারবার ঘুম ভেঙে যায়। খানিক গল্পগুজব ইত্যাদি সেরে শেষমেশ নটার সময়ে ঘুমোতে যেতে হল। বুনানের নাকি শরীর ঠিক হয়ে গেছে, তাই আজ, ম্যাজিকের মত, বুনান পুরো নিঃশব্দে ঘুমোল – একবারও নাক না ডেকে। অতএব, আমারও ঘুম আসতে সময় লাগল না।

    ***************************

    এখানে আমাদের দেড়দিনের স্টে। সকালবেলায় ঘুম ভেঙে উঠে দেখি, আকাশে রাশিরাশি মেঘ। সামনে ডিকেডি আর শ্রীকণ্ঠ পুরো ঢেকে গেছে মেঘে – কালচে মেঘ আর ধূসর মেঘে ঢাকা আকাশ। সূর্যোদয়ের ছবি সেভাবে তোলা হল না। প্রেম চা নিয়ে এসে বলল, ওখানে নিশ্চয়ই এখন তেড়ে স্নোফল হচ্ছে, যদি মেঘ এদিকে উড়ে আসে, তা হলে এখানেও হওয়া বিচিত্র নয়।







    আজকে রিল্যাক্স করার দিন। আজ আবার ওপরে যাব। অন্যদিক দিয়ে – আরও ভালো কিছু ভিউ পাওয়া যেতে পারে।

    বুনান ট্রেক করতে ভালোবাসে, ছবি তুলতে ভালোবাসে – কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসে কী বলুন তো? কাঁচালঙ্কা। মানে যে কোনও টিয়াপাখিও লজ্জা পেয়ে যাবে বুনানের লঙ্কা খাওয়া দেখলে। এই দুদিনে বিজেন্দরকে ও মোটামুটি পাগলা করে দিয়েছে লঙ্কা চেয়ে। তো – এই ভালোবাসা দেখে আজ প্রেম বুনানের জন্য একটা স্পেশাল ডিশ তৈরি করে আনল – এই দেখুন ছবি।



    বরফ গুঁড়ো করে, কাঁচালঙ্কাবাটা আর নুন মাখিয়ে। আমি মুখে দেবার সাহস করি নি, বুনান অর্ধেকটা খেল, অর্পণ দু চামচ, তারপরে বাকিটা ঘোড়াদের খেতে দেওয়া হল, তারা এসে থেকেই দেখছি চেটে কামড়ে বরফ খেয়ে তেষ্টা মেটাচ্ছে আর কেমন অস্থির অস্থির ভাব দেখাচ্ছে। খচ্চরওলা বলল, ওরা নুন খুঁজছে – নুন খেতে চাইছে। তো, বাকি ওই নুন-লঙ্কা মেশানো বরফকুচি তাদের সামনে ঢেলে দেওয়া হল, প্রথমে দুটো খচ্চর খুব উৎসাহ নিয়ে চাটতে শুরু করল, তারপরে বোধ হয় ঝাল লাগায় কেমন সন্দেহকুটিল চোখে তাকিয়ে অন্যদিকে সরে গেল।

    আমরা অন্যদিক দিয়ে উঠলাম, কিন্তু আকাশে মেঘ আর রোদের খেলা চলছে, আকাশ ক্লিয়ার নয়। ওপরে উঠেই তাক লেগে গেল – অদূরে একটা ডোম শেপের ঘর, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের, চারদিক সাদা হয়ে আছে, সামনে একটা কিউট ছোট সাঁকো।









    আমি আর অর্পণ এগোলাম সেদিকে। সাঁকো পেরোতেই পায়ের ডিম পর্যন্ত ডুবে গেল বরফে, এত বরফ। মহা আনন্দে খানিক হাঁটাহাঁটি করলাম, ছবি তো তুললামই – অর্পণ আবার একটা ঢালু জায়গার ওপরে উঠে সেখান থেকে স্লাইড করে নেমে আসার চেষ্টাও করতে লাগল।

    ঘন্টাতিনেক মত ওপরে রইলাম – ততক্ষণে আস্তে আস্তে মেঘ সরে গিয়ে আকাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গেল, আর চোখের সামনে ঝলসে উঠল বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ।



    আজও সূর্যাস্ত হল জম্পেশ। আমরা তো কোন ছাড়, এমনকি খচ্চরগুলো পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে দেখল সূর্যাস্তের ছটা।




    ফিরে এলাম আগুনের কাছে, প্রেম আলু পোড়াচ্ছিল, পোড়া আলু খেতে যে কী উমদা হয়, সে কী বলব। গপাগপ খেয়ে ফেললাম। … এদিকে আমি তো সলিডে বিচরণ করি, বুনান আর অর্পণ তো বেশি স্বচ্ছন্দ জলপথে। ইতিমধ্যেই কত গেলাস লাল পানি শেষ করে ফেলেছে কে জানে, অর্পণ এইবারে ক্লেম করল, সে এখন গান গাইবে।

    গাইবে তো গাইবে। কেউ তারে দাবায়ে রাখতে পারল না। উদাত্ত কণ্ঠে সে শুরু করল ফসিলসের গান। তার পরে বোধ হয় রূপম ইসলামেরও একদুখানা গান পেরিয়ে সে ঢুকে গেল গুলাম আলিতে। তারপরে কিশোরকুমার টুমার হয়ে একেবারে মাখোমাখো কেস। এমতাবস্থায় আমিই বা কী করে চুপ থাকি? অদ্যই প্রায় শেষ রজনী, কাল রাতে আমরা এই সময়ে উত্তরকাশীর হোটেলে থাকব। অতএব, আমিও গলা ছাড়লাম।

    সব এন্থু শেষ হবার পরে শুতে চলে গেলাম রাত সাড়ে নটা নাগাদ। কাল বছরের শেষ দিন। প্রেম বলল, কাল ওর বাড়িতে আমাদের নেমন্তন্ন। খাসী কাটা হবে।
  • | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:৫৬689559
  • হ্যাঁ সেদিন মনে পড়ছিল না, এই বরফের চাটনিটা বহু বহুউ বছর আগে বিয়াস কুন্ড যাবার পথে একটা ধাবায় খেয়েছিলাম। ব্যপ্পক খেতে হয়।

    বুনুর মধ্যে বাঙালসুলভ সবকটা গুণই আছে। আহা লঙ্কার মত জিনিষ হয় নাকি!
  • aranya | 83.197.98.233 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৩৯689561
  • ছবি গুলো দেখলে মন প্রশান্ত হয়ে যায় - জাগতিক সব মালিন্যের ঊর্ধে
  • aranya | 83.197.98.233 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৪১689562
  • শুধু যদি একটা ভাল টয়লেট থাকত ..
  • Manish | 127.214.43.83 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:১৩689563
  • ফাটাফাটি সব ছবি। শমীক কিছু কিছু কুড়ে ঘর দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ওখানে কারা থাকে।
  • Blank | 213.99.211.18 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৫৬689564
  • ওগুলো টেম্পোরারি বাসস্থান। গ্রীষ্ম কালে বুগিয়াল ঢেলে যায় সবুজ ঘাসে। তখন বড় বড় ভেড়ার পাল (৩০০/৪০০ ভেড়া মিনিমাম) নিয়ে লোকজন আসে এখানে। এই সব কুড়ে ঘরেই রাত কাটায় ভেড়াদের নিয়ে (ধরুন মে থেকে অক্টোবর)।
  • Blank | 213.99.211.18 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৫৭689565
  • দুটো ছবি দিয়ে যাই

  • Blank | 213.99.211.81 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৫৮689566
  • এই আমাদের লেখক

  • T | 24.100.134.82 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১০689567
  • অন্য টই ডোবাচ্ছি তাই...
  • তাই ... | 192.69.246.234 | ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ১৮:১৪689568
  • এই টইটাও ডুবে গেল।
  • Manish | 113.242.196.165 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১৪:১৬689569
  • অসাধারন ছবি সব।জিও
  • de | 24.97.206.181 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১৪:২৬689570
  • আহা! কি সব ছবি - আর তেমনি লেখা!

    শুধু যদি টয়লেটটা বাইরে যেতে না হোতো ঃ((
  • যাঃ | 79.157.32.154 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:০৪689572
  • শেষে সবার কনসার্ন টয়লেটে গিয়ে ঠেকল?
  • সিকি | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৫০689573
  • টয়লেটটা সত্যি মেজর কনসার্ন। সবাই তো আর বুনান হতে পারে না। টয়লেটের ফিয়াস্কোসমূহ বাদ রেখেই লিখছি।
  • sinfaut | 127.195.34.105 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৪১689574
  • টয়লেটের থেকেও বেশি কনসার্ন ঠান্ডার মধ্যে টয়লেট। নইলে একমুঠো শ্যাওলার অ্যালুফ ব্যবহার এর কোনো তুলনাই নেই।
  • Rupert Hentzau | 117.167.104.61 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৫৭689575
  • ওএটি-টা আদৌ কোনো ফ্যাক্টরই নয়। বরং নোংরা বিটকেল বাথ্রুম অনেক বেশি ইয়ে। এরা সব যেন কী। আরে বাবা কে আর আপনাদের দেখতে যাচ্ছে?
  • Div0 | 132.172.237.168 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:০৪689576
  • রুপার্ট মার্ডককে ক। ওএটি অনেক ভালো অপশন, ক্লগ্‌ড বাত্তুমের চাইতে।
    ম্যারাথনগুলোয় দেখি ইদানিং Portaloo আমদানি করেছে। সেও ইসের এপিঠ বনাম ওপিঠ।
  • Rupert Hentzau | 117.167.108.171 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৩689577
  • ঈস্স্স্স ময়ূরবাহন শেষে মার্ডক?

    যাঁদের ওএটি নিয়ে অসুবিধা, সবাই একটা করে মাফলার বা মাংকিক্যাপ রাখবেন। তাইলেই মিটে গেলো।
  • Blank | 24.96.43.253 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৭689578
  • আরে একটু গরম জল নিয়ে যাবি। এই সব কেসে অত সমস্যা হয় না। -১০/১৫ র নীচে হলে খুব চপ হয়, তখন হাগজ ভরসা।
  • পুপে | 74.233.173.193 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:৫৩689579
  • রুপার্টদা আপনার আট জিবি বা আরো বড় পেন্ড্রাইভ থাকলে কাল নিয়ে গেলে খুব সুবিধে হয়। আগাম থ্যাংকু।
  • de | 24.139.119.172 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:২৬689580
  • পুপে পেন্ড্রাইভে কি করবে? ঃ))

    সিকি - টয়লেট ডিটেল সম্বন্ধে ডিসকাস করলেই ভালো হয় - আমরা অতোজনের মহিলামহল যাবো কিনা!
  • Ekak | 113.6.157.185 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩১689581
  • ব্লান্কির ছোপি গুলো দুর্দান্ত। কিন্তু তোমার লেন্সে তো পার্পল ফ্রিঞ্জ আসার কথা না, এসেছে দেখছি।
  • পুপে | 74.233.173.193 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১৫:০৯689583
  • দে- দি, ব্ল্যাংকদা ররুপার্টদাকে দিয়ে আমায় কমিক্সের কালেকশন পাঠানোর জন্য লাগতো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন