এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আলাস্কা

    Tim
    অন্যান্য | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ | ৫০৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 108.228.61.183 | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:১৬692654
  • আলাস্কা পার্ট ওয়ানঃ উইন্টার ২০১৫।
    স্থান, কাল, ইত্যাদিঃ
    ফেয়ারব্যাঙ্কস। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ (২৪-২৮)। উদ্দেশ্যঃ মূলত অরোরা বোরিয়ালিস খুঁজে দেখা, পারলে ছবি তোলা, এবং আর্কটিক সার্কল পর্যন্ত রোডট্রিপ। চেনা হট স্প্রিং, নর্থ পোল বলে একটা গ্রামে সাজিয়ে রাখা স্যান্টার বাড়ি এগুলো ফাউ।
    ----------------------------------------------
    (এই সবে ইঁট পাতা হলো। এবার ধীরে সুস্থে লেখা হবে, ছবিছাবাও ক্রমে দেওয়া যাবে, যদিও অনেকেই দেখে ফেলেছে, সে যাহোক)
  • Rivu | 83.230.117.28 | ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:২৫692665
  • !!! আমি ডিসেম্বর এর ২৫ থেকে ২৯, ২০১৩। লিখুন, অপেক্ষায় রইলাম।
  • | 213.132.214.81 | ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩১692676
  • জ্জিও । লেখো লেখো!!

    ঝিংকু টাইপের ছবি টবি দাও..
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩০692687
  • (১)
    অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো আলাস্কা যাব। বাঘার যেমন ছেলেবেলার সাধ ছিলো রাজকন্যা বিয়ে করবে, সেরকম। কিন্তু রাজকন্যা কিনা গুলিসুতো খেয়ে ফেলেছে, সেই ইস্তক তার দেখা পাওয়া ভারি মুশকিল ছিলো। শেষমেশ দেখা মিললো, আর জানা গেল আলাস্কা কমন পড়েছে। কমন নিলে কেটে যায়, ছেলেবেলা। সুতরাং হচ্ছে হবে করে পাক্কা পাঁচ বছর কাটার পরে, ক্রমে এলো, ফেয়ারব্যাঙ্কস।

    এর আগে তানিয়াদির লেখা পড়ে জেনেছিলাম, আলাস্কায় সত্যিই বেড়াতে যায় (বাঙালী)। সে অনেকদিন আগের কথা, নেটিকেট সম্পর্কে কিসুই জানতাম না, তাই হাসবেন না। পরে সাইট ঘেঁটে ঘেঁটে জবরদস্ত ট্রিপ প্ল্যান কিভাবে করতে হয়, একটু একটু ঠেকে আর বাকিটা বউকে দেখে শিখলাম। সেই সময় থেকেই মাঝে মাঝে কয়েকটা কমন গন্তব্য নিয়ে আমরা আলোচনা করি, খানিক ইতিউতি সাউট হাঁটকাই, খানিক দিবাস্বপ্ন দেখি। এইভাবেই চলছিলো। তারপর আস্তানাতেই একদিন মনে হলো, অলক্ষ্যে বালি ঝরছে নিরন্তর। সবই তো বাকি, কিসুই দ্যাখা হয় নাই। জাদুজুতা তো নাই, তাই ঠিখলো ২০১৫ র শীতেই হয় আলাস্কা নয় স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কোথাও যেতে হবে। অরোরা বোরিয়ালিস দেখতে হবে, কেজানে কবে মরে যাই। ভাবতেই বেশ একটু উৎসাহ হলো। তখন ইউনিভার্সিটিতে একটা ফিজিক্স ক্লাব চালাতো আমাদের ডিপার্টমেন্ট। এক এক সপ্তাহে একটা করে বেশ সহজবোধ্য চিত্তাকর্ষক বিষয়ে বক্তিমে হতো। সেখানে অরোরা নিয়ে একটা বক্তিমে দিলাম, যাতে সেই চাড়ে খানিকটা পড়াশুনো হয়। অপূর্ব সব ছবি দেখলাম নেটে আর ইউটিউবে। কোনদিন ভাবিনি সেইসব নিজের চোখে দেখতে পাবো। তবু যাহোক, সেই আশাতেই প্ল্যান করা হলো।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৪৫692698
  • (২)
    সমস্ত ট্রিপ প্ল্যানেরই কয়েকটা সাধারণ সমস্যা থাকে। এক, ছুটি। দুই, পয়সা। তিন, উদ্দেশ্য আর ছুটি ম্যাচ করা। এই শেষেরটা নিয়ে আমাদের খুবই চাপ হলো। অরোরা "সিজন" যখন পুরোদমে চলবে, তখন আমাদের ইউনিও পুরোদমে চলবে। ক্রিসমাস থেকে জানুয়ারির দুই অবধি ছুটি নেওয়ার সুবিধে, কিন্তু সেই সময় অরোরা দেখার গ্র্যান্টি নাই। আমরা উপায়ান্তর না দেখে, এবং যেহেতু ঠিক করা ছিলো যে যাবই, তাই বুক ঠুকে লেগে পড়লাম। ঠিক হলো চব্বিশের সকালে ফ্লাইট ধরে অ্যাঙ্কারেজ হয়ে ফেয়ারব্যাঙ্কস পৌঁছবো বিকেলে। থাকার জায়গা ঠিক হলো বিলির ব্যাকপ্যাকার্স হোস্টেল। যেহেতু মূলত বাইরে বাইরেই থাকতে হবে রাতের বেলা, তাই আমরা চেয়েছিলাম শহরের বাইরে, একটু অন্ধকার জায়গা, যেখানে আলোকদূষণ কম। তাই হোটেল নয়, হোস্টেল, যদিও খরচের হিসেবে খুব একটা পার্থক্য নেই। এইটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, ক্রেডিট হুচির।
    চব্বিশ রাত জেগে আকাশ দেখা, তারপর পঁচিশ বেলা ভোর এগারোটার আগে উঠে (ঐ সময়ই সূর্য ওঠে) চেনা হট স্প্রিং আর স্যান্টার বাড়ি যে ছোট গ্রামে সেই নর্থ পোল দেখতে যাওয়া। আড়াইটে থেকে সূর্য্য ঢলতে শুরু করে তারপর নিভে যায়। তার মধ্যেই ফিরে এসে আবার রাতের প্রস্তুতি। ছাব্বিশ সকালে আর্কটিক সার্কল ট্রিপ এবং অরোরা হান্টিং। এইটা একটা কন্ডাক্টেড ট্যুর, কারণ শীতে ডাল্টন হাইওয়ে দিয়ে প্যাসেঞ্জার গাড়ি যেতে দেয়না। ট্যুরটা পনেরো ষোলো ঘন্টার, হস্টেলে ফিরতে ফিরতে সাতাশ ভোর। ঐ দিন আর বিশেষ কিছু রাখা হয় নি, শহর দেখা বাদে। সন্ধেবেলা ফেরার ফ্লাইট। এই প্ল্যানে অবশ্য সামান্য পরিবর্তন আনতে হয়েছিলো, তবে সেকথা যথাস্থানে।
  • পুপে | 131.241.184.237 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:২৬692709
  • লেখো টিমদা, হই হই করে। ছবি তো দেখেইছি, এবার অভিজ্ঞতাটা পড়তে চাই। দারুণ শুরু হয়েছে।
  • SS | 160.148.14.4 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৫৪692720
  • ধন্যবাদ টিম। এই টইটা শুরু করার জন্যে। নেক্স্ট কয়েক বছরের মধ্যে আলাস্কা যাবার প্ল্যান আছে। আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
    আমি অরোরা দেখেছিলাম আমেরিকাতে এসেই। যে ইউনিভার্সিটিতে এসেছিলাম, সেখানে দু সপ্তাহের একটা ওরিয়েন্টেশান ছিল সেমেস্টার শুরু হবার আগে, অগাস্টের শেষে। আমরা ছিলাম লেক আইটাস্কার পাশে, যেখান থেকে মিসিসিপি নদীর শুরু। একদিন রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর ক্লাসের অন্য ছেলেপুলেরা হইহল্লা করে এসে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেল, নর্দান লাইটস দেখার জন্যে। অরোরাকে যে নর্দান লাইটস বলে সেটাও সেদিন জেনেছিলাম। ছবিতে যেরকম স্পেক্টকুলার একটা ব্যাপার দেখা যায় সেরকম দেখিনি তবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলেছিল সেই আলোর খেলা। আপনার আভিজ্ঞতা লিখুন, আগ্রহ নিয়ে পড়ব।
  • hu | 140.160.143.215 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩১692731
  • SS এর কথা শুনে মনে পড়ল, আমার বন্ধু স্টেসি গল্প করছিল, অনেকদিন আগে ও নাকি আপার ইলিনয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে আকাশে সবুজ মত একটা কিছু দেখেছিল। ও কিছুই বোঝেনি কি হচ্ছে। পরে লোকজনের থেকে জেনেছে সেটা ছিল নর্দান লাইটস।

    আমাদেরও সেরকম গল্প আছে। রেস্টরুম স্টপে নেমে টিম দেখছে আকাশে সবুজ একটা ব্যান্ড। ভরা পূর্ণিমার রাত। খুব ভালো বোঝাও যায় না। দুটো লোক তাদের স্নো-মোবিলে খুটখাট করছে। টিম কিন্তু কিন্তু করে জিগ্যেস করে - আচ্ছা, আকাশে যা দেখা যাচ্ছে সেটা কি ওটাই? সেই লোকেরা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিয়ে আবার দড়ি বাঁধতে বাঁধতে বলে - কি? নর্দার্ন লাইটস? হ্যাঁ ঐ তো। আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে।

    যাক গে, সেসব টিম লিখবে বিস্তারিত। প্রথম রাতে আমরাও SS এর মত একটু দমে গেছিলাম। মনে হয়েছিল যতখানি আশা নিয়ে গেছিলাম তা তো পূর্ণ হল না। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি আমাদের নিরাশ করেনি। ঝুলি ভরে ঘরে ফিরেছি।

    নর্দার্ন লাইটস প্রেডিকশনে ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কার জিওফিজিকাল ইনস্টিটিউটের সাইটটা খুব ভালো।
    http://www.gi.alaska.edu/AuroraForecast
    এদের একটা ফেসবুক পেজও আছে। যাওয়ার কদিন আগে জিওফিজিকাল ইনস্টিটিউটের কয়েকজন অধ্যাপক/ছাত্রকে মেইল করে দেখেছিলাম যদি ঐ সময় ওদের কোন ইভেন্ট থাকে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সময়টা ভালো বাছি নি। ক্রিসমাসের জন্য সব কিছু বন্ধ ছিল। নইলে ওদের সাথে ঘুরতে পারলে দারুন একটা এক্সপেরিয়েন্স হত।
  • Tim | 140.126.225.237 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫১692742
  • তারও আগে, বোলিংগ্রীনে থাকার সময়েরও একটা গল্প আছে। তখন আমাদের এক প্রফেসর (আমার গাইডও) ছিলেন, অস্ট্রিয়ার লোক আর খুব ডাকাবুকো, তিনি প্রত্যেক উইকেন্ডে আপার পেনিনসুলা (মিশিগানের উত্তরে) চলে যেতেন। একটা কুকুর ছিলো, আর পুরোনো কিন্তু মজবুত একটা জিপ। মাঝে মধ্যেই শীতের সময় ব্লিজার্ডে আটকে থাকতে হতো দু তিনদিন, ফিরে গল্প করতেন। ঐদিকে একটা সময়ের পর শুনশান রাস্তা থাকে, গাড়ি বিশেষ থাকেনা। সেরকমই একদিন, অন্ধকারে ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ আকাশে আলোর ঝলক দেখে প্রথমে বুঝতে পারেন নি। ভেবেছিলেন স্টেডিয়াম হবে টবে। তারপরেই খেয়াল হলো, আরে এ তো আপার পেনিনসুলা, এখানে তো বসতিই নেই, স্টেডিয়াম কোদ্দিয়ে আসবে। তখন ভালো করে দেখে বোঝা গেল নর্দার্ন লাইটস।
    আমি এই গল্পটা যেদিন শুনেছিলাম, গায়ে কাঁটা দিয়েছিলো।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:২১692655
  • (৩)
    আলাস্কা যাওয়ার একটা বড়ো অংশ হলো পরিকল্পনা। যা বুঝলাম, অন্তত দুটো ট্রিপ না করলে আলাস্কার, এমনকি ঝরোখা দর্শনও সম্ভব না। একটা উত্তরের দিকে ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে আর্কটিক সার্কল অবধি, যত বেশি দিন পাওয়া যায় ততই ভালো তবে চার থেকে পাঁচদিনে কিছুটা হলেও দেখা হয়। সেটা করতে হবে শীতের আশেপাশে, যখন রাতগুলো অরোরা দেখার কাজে ব্যবহার করা যায়। আর্কটিক সার্কলের রাস্তা গেছে ডাল্টন হাইওয়ে দিয়ে, যা মূলত ট্রাক চলার জন্য বানানো, এবং অনেকটা অংশ গ্র্যাভেল দিয়ে, সুতরাং লো ক্লিয়ারেন্স সেডান বা টু হুইল ড্রাইভ নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। এসিউভি বা পিকাপ ট্রাক নিয়েও সাধারণ যাত্রীদের (অর্থাৎ যারা পর্যটক) বছরের অনেকটা সময় যেতে দেওয়া হয়্না। ডাল্টন হাইওয়ে নিয়ে পড়ে নিনঃ

    http://wikitravel.org/en/Dalton_highway

    অন্য ট্রিপটা অ্যাঙ্কারেজ থেকে উত্তরের দিকে ডেনালি ঘুরে এসে আবার দক্ষিণে উপকূলবর্তী অঞ্চল বরাবর। সেখানে গ্লেসিয়ার থেকে ওয়াইল্ডলাইফ সবই আছে। রাস্তাঘাট খুবই ভালো, সুতরাং সেটা মোটের ওপর নিজেদের ড্রাইভ করে করার কথা। এটা আমাদের কোন একটা গ্রীষ্মে করতে হবে, সময় লাগবে কম করে দিন দশেক।

    যাই হোক, আসল কথায় ফিরে আসি। প্ল্যান করতে বসে মনে হয়েছিলো ঐ আর্কটিক সার্কল ট্রিপের দিনেই একমাত্র মেরুজ্যোতি দেখা সম্ভব হবে। কারণ সেদিনই আমরা ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে অনেকটা উত্তরে চলে যাব। মনে হওয়াটা ঠিকই ছিলো।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৩692656
  • (৪)

    অরোরা ফোরকাস্টের যে পেজটা ওপরে আছে, সেখানে দেখা যাবে সম সময়ই একটা সবুজ ব্যান্ডের কাছে বা ওপরে ফেয়ারব্যাঙ্কস পড়ে। এর মানে হলো ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে অরোরা দেখতে পাওয়ার সুযোগ বেশ বেশি। আর যদি আরো উত্তরে ব্যারোস অবধি চলে যাওয়া যায় (শীতে হবেনা) তাইলে আরো বেশি, প্রায় গ্র্যান্টি যাকে বলে।

    পরিকল্পনার আরেকটা বড়ো জায়গা হলো ফোটোগ্রাফি। অরোরা দেখবেন, আর ছবি তুলবেন না, তা কি হয়? সুতরাং লাগবে, একটা ভালো ক্যামেরা (ডিএসেলার হলে ভালো হয়), একখান ট্রাইপড (এইটা নিয়ে গল্প আছে), আর রিমোট কন্ট্রোল যাতে লম্বা এক্সপোজারে ছবি তোলা যায়। এর সাথে যদি ওয়াইড অ্যাঙ্গল লেন্স থাকে তাহলে খুবই ভালো কথা (আমাদের ছিলোনা)। এর আগে আমরা গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে দুজন ফোটোগ্রাফারকে দেখেছিলাম অপূর্ব সুন্দর মিল্কি ওয়ের ছবি তুলেছিলো।

    ট্রাইপড নিয়ে একটা চাপ হলো, ডোমেস্টিক ফ্লাইটে ক্যারিঅনে করে ট্রাইপড নিতে দেবেনা বললো। চেক-ইন করানোর থেকে ওখানে গিয়ে কিনে নেওয়া শস্তা হবে বলে আমাদেরটা নিলাম না। ওমা, পরে প্লেনে ওঠার সময় দেখি একজন ব্যাকপ্যাকের সাইডে সেঁটে নিয়ে গেল, কেউ রা কাড়লোনা।

    পরে খেয়াল হলো, আমদের পৌঁছনোর কথা ২৪ বিকেলে। ততক্ষণে সব দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রাইপড কোথায় পাবো? তখন হোস্টেল মালকিন বিলিকে ফোন করলাম ভাড়া করা যায় কিনা জানার জন্য। বিলি বললো ওদের একটা ট্রাইপড আছে, ঐটা আমরা ব্যবহার করতে পারি চাইলে।

    এইসব করতে করতেই কিকরে যেন ২৩ তারিখ এসে গেল। মিডওয়েস্টের ঝড়বৃষ্টির যা রকম দেখলাম, দুপুর দুপুরই বেরিয়ে শিকাগো চলে গেলাম। পার্ক অ্যান্ড ফ্লাই বুক করা ছিলো, যাতে গাড়িটা শস্তায় রাখা যায়। পরদিন সকালে উঠেই ফ্লাইট।
  • T | 165.69.169.152 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৫692657
  • খুব ভালো লাগছে। আশা করি যা সব ছবি তুলেছ সেসবও থাকবে।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৫692658
  • (৫)

    চব্বিশে শিকাগো অ্যাঙ্কারেজ ফ্লাইটে একটা মজার অভিজ্ঞতা হলো। ক্রিসমাস উপলক্ষে এয়ারলাইন্স থেকে একটা গেম খেলা হচ্ছিলো। ওরা হঠাৎ করে একটা জিনিসের (ট্রাভেল সংক্রান্ত) নাম বলবে আর যাত্রীদের কাছে সেটা থাকলে দেখাতে হবে। নানারকম প্রাইজ ইত্যাদি। লোকজনের যা ক্ষিপ্রতা দেখলাম, আমরা চেষ্টা করিনি। শেষে, একবার বললো ফ্রুটকেক আছে? তো দেখি কেউ হাত তোলেনা। হুচি একটু কিন্তু কিন্তু করে হাত তুলে বললো আমার কাছে আছে, কিন্তু ক্যারিঅনে। তারপর এক কান্ড হলো। এয়ার হোস্টেস এসে হুচির সঙ্গে মিলে ওভারহেড বিন খুলে কেক বের করে ওয়ার্লড কাপের ভঙ্গীতে কনফার্ম করলেন। পরের আলাস্কা ট্রিপের জন্য একটা ভাউচার পাওয়া গেল, যদিও তা হয়ত এক্সপায়ার করে যাবে আমাদের যাওয়ার আগেই।

    অ্যাঙ্কারেজ থেকে ফেয়ারব্যাঙ্কস পৌঁছে গেলাম যথাসময়ে। অ্যাংকারেজ থেকেই দেখেছিলাম সবই বরফে ঢাকা। ফেয়ারব্যাঙ্কস পৌঁছে মনে হলো আইস স্কেটিং রিঙ্কের আদলে পুরো শহরটা তৈরী। রেন্টাল গাড়িগুলো চার্জে দেওয়া, সঙ্গে এক্সটেনশন কেবল, যাতে কোন অবস্থাতেই রাতে চার্জে বসানোর অসুবিধে না হয়। এয়ারপোর্ট থেকে হোস্টেল অসম্ভব সাবধানে গাড়ো চালাতে হলো, শেষে হড়কাতে হড়কাতে আর কেন অল-হুইল ড্রাইভ নিই নি সেই নিয়ে নিজেকে শাপান্ত করতে করতে (পাগলের মত ভাড়া চেয়েছিলো) কোনক্রমে হোস্টেলে পৌঁছলাম। ততক্ষণে চাঁদ উঠে গেছে। ২৩শেই মনে হয় পূর্ণিমা ছিলো। আপনারা যদি অরোরা দেখতে যান, তবে এইটা পারলে এড়াবেন। খুব ভালো ডিসপ্লে না হলে ছবি তুলতে অসুবিধে হয়।
  • | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৬692659
  • আমার বোধহয় কক্ষণো অরোরা দেখা হবে না। :-(((

    ছবিছাবা সব ফেবুতে আছে টি।
  • | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৭692660
  • হ্যাঁ ভাল যে লাগছে সেও কি নতুং করে বলতে হবে?
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৮692661
  • হ্যাঁ ছবি তো সবই ফেসবুকে দেওয়া হয়েছিলো, রেডিই আছে। এখানেও দিয়ে দেব।
    যারা পড়ছে, সবাইকে থ্যাংকু। ঃ-)
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:০১692662
  • দমদি, হবে হবে। আগে আমিও অমনি ভাবতাম। এখন ভাবি অনেক কিছুই হয়। হওয়ালেই হয়। কদিন আগে দেখলাম স্ক্যান্ডিনেভয়ার একটা ট্রিপ, বারো দিনের। অরোরা দেখাবেই বলেছে, না দেখালে আরেকটা ট্রিপ বিনি পয়সায় করাবে। ঃ-)
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:১৯692663
  • (৬)
    ঐ সময় ফেয়ারব্যাঙ্কসে -৩৩ ডিগ্রি সেঃ চলছিলো। আমাদের এমনিতে -৫৩ অবধি দেখা আছে আস্তানায় থাকার দরুণ। কিন্তু বললে বিশ্বাস করবেন না, এই ঠান্ডা কাঁপিয়ে দিলো। আস্তানায় গাড়ি চালাতে হতোনা, বাইরে দরকার না পড়লে বেরোতাম না ঐ ঠান্ডায়, বেরোলেও ট্যাক্সি বা শাটলে করে দোকানের দোরগোড়া। ফেয়ারব্যাঙ্কসে বুঝলাম, সে বড়ো সুখের সময় নয়। তারওপর আবার জানা ছিলো যে সেদিনই রাতে অরোরা অ্যাক্টিভিটি হওয়ার সম্ভাবনা ভালোই, আকাশ পরিষ্কার বলে দেখাও যাবে। হোস্টেলের কমন কিচেনে এক ঝাঁক ছেলেমেয়ের সাথে আলাপ হলো, সবাই এশিয়ার। কেউ জাপান, কেউ কোরিয়া, কেউ চীন থেকে এসেছে শুধু বেড়াবে বলে। সবাই একা একাই ঘুরছে, ভয়ডরহীন। বড় ভালো লাগলো।

    নটা নাগাদ একবার দেখতে গেলাম বাইরেটা। চারদিক ধুয়ে যাচ্ছে জোছনায়। আকাশে তারা ফুটছে। লোকজন বিশেষ নেই। বিলির হোস্টেল থেকে মিনিট পাঁচ-সাত হাঁটলে একটা রেল ইয়ার্ড। সেটার গেট ফেলা থাকে, ডেড এন্ড। ঐখানে একটা বিস্তীর্ণ ময়দানের মত আছে, একেবারে টিলা অবধি অনেকখানি খালি জায়গা। সদ্য আলাপ হওয়া এরিক (এও চৈনিক, আমেরিকান নাম নিয়েছে) আমাদের দেখাতে নিয়ে গেল জায়গাটা। সে আজ চারদিন হলো ঘাঁটি গেড়ে বসেছে এখানে, একদিনও দেখতে পায়নি। এইসব শুনে মনটা দমে গেল, একইসঙ্গে বুঝলাম রাতে ঘুমোবার আশা প্রায় নেই। নটার সময় কিছুই হওয়ার কথাও না, হয়ওনি। বাইরে দশ মিনিটের বেশি থাকা যাচ্ছিলোনা, যদিও আমাদের অন্তত পনেরো মিনিট থেকে আধঘন্টা থাকতে হচ্ছিলো। তবে তখনও ঠান্ডার অনেকটাই দেখা বাকি ছিলো।

    পরবর্তী পরিকল্পনা এগারোটা থেকে তিনটে, ননস্টপ। অগত্যা কোনক্রমে একটু ম্যাগি আর কেক খেয়ে একটু গড়ালাম। আর ময়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়েও পড়লাম। ঘুম ভাঙলো সাড়ে দশটায়। এগারোটা বাজুক তারপর বেরোবো এই করে করে আরো কয়েক মিনিট কাটার পরে তৈরী হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখি লোকজন বেরোচ্ছে। আমাদের দেখেই বললো সে কি তোমরা যাওনি, অরোরা তো শুরু হয়ে গেছে মিনিট পনেরো হলো!
  • 4z | 217.245.236.101 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:২৬692664
  • খুব ভাল লাগছে পড়তে।

    দমদি, হবে না বলে কিছু হয় নাকি?
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:৩৫692666
  • (৭)
    বিলির হোস্টেলের সদর দরজা সারাদিন, সারারাত খোলা থাকে। দুটো পাগ আছে, সেগুলো মাঝে মাঝে ঘুমোয়, মাঝে মাঝে করুণ মুখে বসে থাকে। বিলি আর ওর ছেলে হোস্টেল খুলে রেখেই রাতে ঘুমিয়ে পড়ে নিজেদের ঘরে। বিলির বয়স ষাটের আসেপাশে, রীতিমত শক্ত মহিলা, খুবই স্পিরিটেড আর সদাহাস্যমুখ। ঐ হোস্টেলেরই একজন কর্মী বা বিলির আত্মীয় জো আমাদের ট্রাইপড দিলো। জো খুব সিগারেট খায়, তাই বাইরে বেরোচ্ছিলো, আর সেই সময় ওর বিশাল ধবধবে সাদা কুকুর রিঙ্গো পায়ে পায়ে ঘুরছিলো। এর মধ্যে কবে যেন অরণ্যদেবের কথা হলো, রিঙ্গো একেবারে তুফানের মত দেখতে।

    যাই হোক, হুচির গাল খেতে খেতে (ঘুমো, আরো ঘুমো, সারাজীবনই ঘুমো ইঃ), পড়িমরি করে ট্রাইপড কাঁধে ছুটলাম রেলইয়ার্ডের দিকে। সেখানে তখন হোস্টেলের জনা পাঁচেক জমা হয়ে ছবিছাবা তুলছে। আমাদের দেখেই ওরা হইচই করে বললো এইত্তো এসে গেছে যেন কতদিনের চেনা। আমরা দেখলাম আকাশে একটা সবজে ফিতের মত, হাল্কা খুব হাল্কা একটা আলো। এর মধ্যে চাঁদের আলোর জন্য খুবই যাচ্ছেতাই অসুবিধে হচ্ছে। আমরা ভাবলাম, যাক, অন্তত খালি হাতে ফ্রতে হচ্ছে না। যদিও নেটে যা ছবি দেখেছি সেরকম কিছু হলোনা, নানারকম রং, আলোর ঝলকানি সেসব কিছুই না, তবু কম কি। এরিক খুবই খুশি, সেদিন রাতে ওর ফেরার টিকিট কাটা। আমরাও ভাবলাম, দেখা তো হলো। চাইলেই যে কেউ পড়ে নিতে পারবে কিভাবে অরোরা হয়। কিন্তু তবু অবাক হওয়া আটকায় না।

    রাত দুটো অবধি সেই আলো থাকলো। কখনো হাল্কা হয়ে, কখনও ছড়িয়ে দুটো এলাকায়, আর আমরা জনা পাঁচ, আধঘন্টা করে বাইরে আর আধঘন্টা করে ভেতরে এইভাবে আড়াইটে অবধি চালালাম। তারপর সেই আলো একসময় খুবই ফিকে, ক্যামেরা বাদে দেখা যায়ইনা এরকম হয়ে গেল।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:৫৩692667
  • (৮)

    আমার ভোরে ওঠার দরকার থাকলে ঘুম হয়না। তাই একরকম দুরাত টানা জেগে, পঁচিশের ভোরে ঘুমোলাম। উঠে দেখি সূর্য্য ওঠেনি, সাড়ে নটা বাজে। আগেরদিনের আলাপ হওয়া কুচোগুলোর মধ্যে তিনজন আমাদের সঙ্গে চেনা হটস্প্রিং দেখতে যাবে বলেছিলো। ওদের রাইড দরকার, আমাদেরো গল্প করার লোক, অতএব সবাই মিলে রওনা দেওয়া গেল। প্ল্যান হলো, আগে নর্থ পোল বলে যে গ্রামে স্যান্টার বাড়ি আছে সেইটা দেখে নিয়ে চেনা চলে যাব। সব মিলিয়ে দু ঘন্টার পথ। ওদিক থেকে আড়াইটের মধ্যে বেরোলে আবার চারটে নাগাদ ফিরতে পারবো, ঐ প্রবল ঠান্ডায় অন্ধকারে চলা বিপজ্জনক, আর ক্রিসমাস বলে সার্ভিস ফেসিলিটি বেশিরভাগ বন্ধ, সুতরাং ওসব না করাই ভালো।

    কিন্তু গাড়ি স্টার্ট করেই দেখি চাকায় হাওয়া কমে গেছে সারারাতের ঠান্ডায়। শহরেই ইতিউতি গ্যাস স্টেশনে চেষ্টা করা হলো, হলোনা। এয়ার পাম্পও সব হয় বন্ধ নয় কাজ করছেনা। শেষে এয়ারপোর্টে গেলাম। ওরা শুনেটুনে গাড়ি বদলে দিলো, কিন্তু ততক্ষণে যা দেরি হওয়ার হয়ে গেছে। স্টার্ট করলাম সাড়ে বারোটায়। নর্থ পোল ক্যানসেল করে সোজা চেনার দিকে। রাস্তার অনেক জায়গাতেই বরফ পরিষ্কার করা হয়নি, পরেরদিন অবধি হবেওনা। সোজা একফালি পথ, দুদিক দিয়েই গাড়ি চলতে পারে (কিন্তু জনহীন), আর একটার পর একটা পাহাড়, কোথাও ন্যাড়া গাছের জঙ্গল। এইসব পার করে পৌঁছতে বেজে গেল দুটো। পথে কুচোরা ঘুমিয়ে পড়লো কিছুক্ষণ গল্প করে, আর আমি একজোড়া মুজ দেখলাম। গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা ছিলোনা, ব্রেক মারলেও বিপদ হতে পারতো, তাই আর ছবি তোলা হয়নি। এমনিতে আমাদের নিয়ে তেমন চিন্তা নেই, কিন্তু বাচ্চাগুলোর জন্য চিন্তা ছিলো। ওরা আমাদের ওপর ভরসা করে এসেছে, শেষে যদি বিপদে পড়ে। সক্কাল সক্কাল হাওয়া নিয়ে যা হলো, সেটাও একটা কারণ হয়ত।

    চেনায় গ্লাস মিউজিয়াম আর তার স্কাল্পচার, হটস্প্রিং এইসব দেখা হলো। কুচোরা গরমজলে চান করে খুবই খুশি। এইসব করে চারটে বাজলো রওনা দিতে। অন্ধকারে ফেরার পথ ধরলাম। ঐ সময় খুব একটা কেউ ফিরছিলোনা, সবাই রিসর্টে থেকে যায়। আমাদের ফিরতেই হতো, পরেরদিন সকালে আর্কটিক সার্কল ট্রিপ।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৩১692668
  • (৯)

    পরেরদিন "ভোর" নটায় বেরিয়ে আবার এয়ারপোর্টের দিকে গেলাম। ওখানেই সারি সারি ট্যুর কোম্পানির অফিস। একগুচ্ছা এজেন্সির ট্যুর আছে আর্কটিক সার্কল নিয়ে যাওয়ার। দুভাবে যাওয়া যায়, একটা হলো রোডট্রিপ, আমরা যেটা করেছিলাম। আর অন্যটা হলো এয়ার অ্যাডভেঞ্চার। রোডট্রিপে সব মিলিয়ে কুড়ি ঘন্টা লাগে। প্লেনের ট্রিপটা ৫-৬ ঘন্টা মত। খরচ অবশ্যই প্লেনে বেশি। কিন্তু বাসট্রিপে বোনাস হলো ফেরার সময় অরোরা দেখার জন্য জায়গায় জায়গায় স্টপওভার। যেহেতু আমরা তখন আরো উত্তরে, অরোরাল অ্যাক্টিভিটি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা, সুবিধে (অন্ধকার, জনহীন খোলা প্রান্তর) আর সময় (ফেরার সময় পুরোটাই অন্ধকারে, বেশ কয়েক ঘন্টার পথ) সবই পর্যাপ্ত থাকে। আমাদের আশা ছিলো, যদি দেখতে পাই তো এদিনই সুবিধে। যদি অবশ্য মেঘলা আকাশ বা লো অ্যাক্টিভিটি থাকে তো অন্য কথা।

    সেদিনও চাঁদের আলো ছিলো খুব। আমরা ডাল্টন হাইওয়েতে উঠলাম, আর দৃশ্যপট পাল্তাতে লাগলো। চতুর্দিকে স্প্রুস আর আরো নানান গাছ, বরফে পুরো ঢেকে গিয়ে অদ্ভুৎ সব মূর্তি তৈরী হয়েছে। নয় নয় করে বরফ তো কম দেখলাম না মিডওয়েস্ট আর সেন্ট্রাল এশিয়া জুড়ে, কিন্তু এ জিনিস কোথাও দেখিনি। এর মধ্যেই সূর্যাস্ত হলো (উঠেছিলো যখন তখনও আমরা বাসেই, সব সময়ই জানলার সমান্তরালেই ছিলো তার বেশি ওঠেনি)। আর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পার্মাফ্রস্ট। এর মধ্যেই দেখতে পাওয়া গেল ট্রান্স-আলাস্কান পাইপলাইন। তার ইতিহাস, ভূগোল ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে একটা ডকুমেন্টরি চালিয়ে দিলো আমাদের সারথি ডেভিড।

    পথে পড়লো ইউকন নদী। সে তো জমে মাঠের মত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ঠান্ডা ক্রমে বাড়ছে। বাস থেকে নামার মিনিট দশেক পরেই পায়ের চেটো জমে যাচ্ছিলো, স্বাভাবিক হচ্ছিলো আধ ঘন্টা পরে। এর মধ্যে যদি আবার নামার দরকার হয় তো তাও নয়। ফোটো ব্রেক ছিলো বেশ কিছু, রেস্টরুম ব্রেক সেই সাথে। এটা জেনে রাখা ভালো, যে ট্যুর কোম্পানির কাছে রেস্টরুমের চাবি থাকে, ঐ চাবি ছাড়া ওগুলো ব্যবহার করা যায়না। তবে এটা শুধুই সেই সময়ের জন্যেই হয়ত, যখন ট্রাক ছাড়া আর কিছু যাওয়ার নিয়ম নেই। ট্রাক গুলো দেখছিলাম, আর ডিস্কভারি চ্যানেলের অনুষ্ঠানটা মনে পড়ছিলো। ডাল্টন হাইওয়েতে ড্রাইভ করা সমস্ত কমার্শিয়াল গাড়ির চালকের কাছে রেডিও ট্রান্সমিটার আছে, এবং একটা ব্যান্ডেই সবাই টিউনড থাকে। রাস্তার অবস্থা খুব হঠাৎ করেই পাল্টে যায়, বা কোথাও হয়ত অ্যাক্সিডেন্ট হলো, এসব চালকেরা একে অপরকে জানিয়ে দেয় রেডিওয়। কখনও বা শুধুই গল্পগাছা করে।

    আর্কটিক সর্কল পৌঁছলাম যখন, তখন ঘোর অন্ধকার। ছবি তোলার ধুম হলো। লোকে যা সব পোজে সেলফি তুললো, তার সাথে একমাত্র সার্কাসেরই মিল আছে। সেই অনেকদিন আগে আমার এক বন্ধু আর তার স্ত্রী কোন এক স্তুপে ঘুরতে গিয়ে একটা ছবি তুলেছিলো যেখানে কন্যেটি বুদ্ধের গাল টিপে দিচ্ছে, অনেকটা সেইরকম সব পোজ।

    ঐ জায়গাটায় দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চ হলো রাতের আকাশ দেখে। পৃথিবির অন্য অনেক প্রান্ত থেকে এখন অসংখ্য লোক ঐ তারা দেখছে। আমি একদিন কলকাতার এক্প্রান্তে দাঁড়িয়ে, সম্ভাবনাহীন, ঐরকম দেখে ভেবেছিলাম, যারা উত্তর মেরু যায় তারা না জানি কিরকম মানুষ। তখন ওখানে দাঁড়িয়ে, ঐ প্রথমবার শিহরণ হলো যা তাপমাত্রাজনিত নয়, সত্যিই পাওয়ার ঝুলি ভরে উঠেছে, আগে বুঝিনি।
  • :) | 132.177.66.189 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৪৬692669
  • "হুচির গাল খেতে খেতে ..." পড়ে প্রথমে চমকে চৌতিরিশ হয়ে গেছিলাম। তারপরে বুঝলাম, গালাগালের কথা হচ্ছে ;-)

    অসাম হচ্ছে। এবার একটু ছবি আসুক।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:০৭692670
  • (১০)

    তো, মোটের ওপর এই উপলব্ধি হলো যে হওয়ালেই হয়। সিকি যেমন পথের টানে পাগল হয়েছে, বা আরো যাদের কথা আমরা খবরে দেখি, সেইরকম। এতদূর আসতে পেরেছি, তো একদিন, মরে যাওয়ার আগে, একেবারে আন্টার্কটীকা অবধিই বা কেন যাবনা? চিলি থেকে ট্যুর যায়, ইত্যাদি।

    এ ছাড়াও, এই পুরো ট্যুরে গ্রিজলি ম্যান বলে ডকুমেন্টরিটার কথা খুব মনে হচ্ছিলো। আলাস্কা শব্দটার সাথে ঐ তথ্যচিত্র আর কয়োটি বলে গানটা জড়িয়ে গেছে।

    যাক, যেকথা হচ্ছিলো। আগে বলা হয়নি, ট্যুরে বেশ কয়েকটি ভারতীয় পরিবার ছিলো। তাদের মধ্যে একজনের সাথে আমার একটু আলাপ হলো। আমি ততক্ষণে হুঁশে ফিরে এসেছি, এবং আবিষ্কার করেছি যে ট্রাইপডটা, সেই হোস্টেল থেকে ধার করে আনা ট্রাইপড, গাড়িতে রেখেই বাসে উঠে পড়েছি। আমরা দুজনেই খুব হতাশ হয়ে, টেনিদার ভাষায় বলতে গেলে কচুরির মত মুখ করে জানলা দিয়ে আকাশপাতাল দেখছি, এমন সময় নতুন বন্ধু চৈতন্য (আহা, সার্থকনামা!) বললো এত ভাবছো কেন, যেখানে বাস ফিরতি পথে অরোরা দেখাতে দাঁড়াবে, ওখানে একটা ট্রাইপড আছে, সেইটা বাগিয়ে নিও। একটাই আছে, যে আগে যাবে তার। পরে দেখলাম আমাদের মত লোক বিরল, আর কারুরই লাগলোনা, কিন্তু সে অন্য কথা।

    কিন্তু সেতো অনেক পরের গল্প। তার আগেই আমরা আলো ফুটলো, নর্দার্ন লাইটস, ফেরার পথে খানিক পরেই।

    কিছুটা এসেই একটা রেস্টরুম ব্রেক হলো। আমরা প্রথম সিটে বসেছি কাজেই আমিই আগে নামলাম। হুচি নামলোনা, কারণ তখন বাইরে দরকার ছাড়া নামা বাতুলতা। কিন্তু আমার আবার চাঁদের ছবি তুলতে হবে। হিসিটিসি করে বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, আরে! উল্টোদিকে বিশাল সবুজ রামধনু উঠেছে না? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, বাস থেকে নেমেছে আমি বাদে দুজন, তারা সবাই বাথরুমের দরজায়, অর্থাৎ উল্টোদিকে। ওরা জানতেও পারবেনা আমি না বললে। কিন্তু কনফার্মড না হয়ে বলতে মন চাইলোনা, এই ঠান্ডায়। তখন আরো একটু এগিয়ে দেখি চার পাঁচজন একটা পিকাপ ট্রাকের পাশে বসে জুতোটুতো বাঁধছে। হাইহুই করে তারপর জিগ্যেস করলাম ঐ দেখা যায় জাজ্জ্বল্যমান, ঐটা কি যা ভাবছি তাই? ওরা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নিয়ে খুবই তাচ্ছিল্য করে বললো হ্যাঁ, ঐ তো। আমি বললাম এই নটার সময়ই, হয়? (যেন আমি বিরিঞ্চিবাবা)। তো বললো, হয়, কখনও কখনও। বলে আবার সবাই মিলে জুতো পরছে। এখুনি স্নোমোবিলে করে অ্যাডভেঞ্চারে বেরোবে। তখুনি বাসের দিকে ছুটলাম। মিনিটখানেকের মধ্যেই প্রায় অর্ধেক বাস খালি হয়ে গেল (বাকিরা হয় ঘুমোচ্ছে, নয় ঠান্ডায় কাবু)। বেশ খানিক পিঠ চাপড়ে টাপড়ে দিয়ে লোকে ছবি তুলতে লাগলো, আর আমার মনে পড়ল্প, আমার তো ট্রাইপড নেই। কি আর করা, টাইম সেট করে কয়েকটা ছবি তোলা হলো। সেদিন আলোর খোলতাই ছিলো খুব, তাই ওতেই মোটামুটি উঠলো ছবি। রং সবুজই আগের দিনও দেখেছিলাম, শুধু এদিনেরটা আর খুঁজে দেখতে হচ্ছেনা।

    এই ঘটনার থেকে একটা বড়ো শিক্ষা হলো এই যে, সাথে গাইড থাকলেও এতবড়ো ঘটনাটা আরেকটু হলেই না-দেখা হয়ে যেত।

    পথে জানলা দিয়ে মাঝে মাঝেই দেখা যেত লাগলো সেই আলো। একেক সময় মনে হচ্ছিলো বুঝি আরো উজ্জ্বল। ইউকন নদীর খাতে আবার দাঁড় করালে আরেক প্রস্থ ছবি তোলা হলো। এবারে, সবার হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের এক চীন থেকে আসা সহযাত্রী ওঁর ট্রাইপড ব্যবহার করতে দিলেন, আর আমরা যারপরনাই উপকৃত হলাম। তখনও চৈতন্যকথিত ট্রাইপডের আশা ছাড়িনি, কিন্তু জয় (সেই জায়গার নাম যেখানে দাঁড়ানো হবে, ওখানেই ট্রাইপড) অবধি অরোরা কি বসে থাকবে আমার জন্য? টেনশন হচ্ছিলো।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:০৮692671
  • খিস্তি খেতে খেতে লেকা উচিত ছিলো। ভালোমানুষের দিন গিয়াছে ;-)
  • sinfaut | 74.233.173.203 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৩৪692672
  • আমিও ঐ লাইনটা অমনি পড়েছিলাম, আর তার পরের ঘুমো গুলোকে ... নাঃ থাক।
    :-D
  • :) | 132.177.66.189 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৩৬692673
  • :D ঘুমোগুলোও ... সে কথা আর নজ্জা পে' লিখি নি।

    ছবি হোক, আর লেখা আগে বাড়ুক।
  • sosen | 184.64.4.97 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৩৯692674
  • পড়ছি, টিম লেখো। এই সব ব্যাদড়া ছেলেপুলেকে পাত্তা দিওনি।
  • | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৪০692675
  • এদের ক্কি পাপমন মাইরি!!
    আমি দিব্বি ঠিকঠাক বুঝল্কাম। অবশ্য বাঙালভাষায় গাইল বা গাল গালি অর্থে বেশ কমন। সেজন্য হতে পারে।
  • T | 165.69.169.152 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৪৬692677
  • আমারও পাপমন। অবশ্য ঘুমোটা আমি ঠিকই পড়েছিলাম। সিকিটা মহাপাপী। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন