এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আলাস্কা

    Tim
    অন্যান্য | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ | ৫০৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:১০692678
  • ছবি হুচি দেবে, কারণ সেগুলো সর্টেড হয়ে ওর কম্পিউটারে আছে। তাছাড়াও হুচির যা বক্তব্য আছে যা আমি ভুলে গেছি সেইসব অ্যাড করবে। ঃ-)
  • sinfaut | 74.233.173.193 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:১৫692679
  • আরে দমদি বোঝার কথা কে বলছে, পুরোটা পড়ার আগেই ব্রেন স্যাট করে গাল এর পর ঘুমো পড়ে ইসে করে ফেলেছিল। পুরোটাই ঘটেছে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে।
  • Manish | 127.200.85.127 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:২৮692680
  • কিছু ছবি upload করা যায় না। ফেবুতে আমি অভ্যস্ত নই।
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩৭692681
  • (১০)

    শেষে একসময় "জয়" এলো। দিনের বেলাও বাস এখানে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু তখনকার সাথে এখন কোন মিল নেই। জয় একটা স্টপোভার, কয়েকটা কুঁড়েঘর নিয়ে, সকালে সেগুলো সব বন্ধ ছিলো, একটা বরফে হাকা স্কুলবাস, বোঝাই যায় অনেকদিন সে অম্নি দাঁড়িয়ে আছে, আর লাগোয়া একটা পার্কিং লট। রাতেও খুব আলাদা না, তবে একটা কুঁড়েতে আলো জ্বলছে, সেটা হলো সাময়িক বিশ্রাম করার জায়গা। একটা ফায়ারপ্লেস আছে, তাতে খুব আরাম হলো। আমাদের ট্যুর কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থায় সেখানে গরম নুডল স্যুপ, চা-কফি-চকোলেট এইসব পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতে আমাদের সারাদিনের খাবার বলতে ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে কিনে আনা ঠান্ডা স্যান্ডউইচ আর গ্র্যানোলা বার ছিলো।

    আবার একটা ট্রাইপড পেলাম। আকাশে তখনও আলো আছে, তবে ছবি তোলার জন্য তেমন ভালো কিছু না। একটূ জিরোবো বলে সবে একটা নুডল গরম করেছি, অমনি একটি ছেলে ছুটে এসে বললো বাইরে দারুন রং হচ্ছে। ব্যস, খাওয়া মাথায় উঠলো।

    বেরিয়ে দেখি সবজেটে রংটা পাল্টে ক্ষণে ক্ষণে গাঢ় বা হাল্কা হচ্ছে। তারপর সে আলো লম্বা ধোঁয়ার মত আকাশের দুইপ্রান্তে ছড়িয়ে গিয়ে নাচতে শুরু করলো। আমি জানিনা কেন সেই ছবি বর্ণনা করছি, কলমের অসম্ভব জোর না থাকলে এগুলো কেমন তা ছবিতেই বলে দেওয়া ভালো। কারণ এরপর সবুজের সাথে লাল, গোলাপী ইত্যাদি রঙ মিশতে শুরু করার পরে আমরা বাক্যহারা হয়ে খালি দেখছিলাম। ক্যামেরা সেট করে একদিকে একটা ছবি তুলতে না তুলতেই অন্যদিকে কিছু একটা শুরু হয়ে যাচ্ছে, এ যেন অদৃশ্য কিছু শিল্পী প্রতিযোগিতা করছে পরষ্পরের সাথে। রাত এগারোটা থেকে দুটো, এই পুরো সময়টাই আকাশে ঐ আলো ছিলো, তার মধ্যে ঐ অপার্থিব আলোর ম্যাজিকের আয়ু ছিলো পনেরো মিনিট কি আধঘন্টা। এর পরেও আমরা মাঝে মাঝেই বেরিয়ে এসে ছবি তুলছিলাম। অমন পরিবেশ আর ঐ আলো, দেখে আশ মেটেনা। শুধু ঐ দৃশ্য দেখতেই আরো একবার ফেয়ারব্যাঙ্কসে যেতে পারি।

    হোস্টেলে ফিরলাম যখন, ভোর সাড়ে চারটে। ক্লান্তিতে, যা অভিজ্ঞতা হলো তার অলৌকিকতায়, একটা ঘোরের মধ্যেই তখনও আমরা। ঐদিন অরোরা ফোরকাস্ট ছিলো মডারেট, যা বেশ কমের দিকেই। যেদিন আমরা হাল্কা ফিতের মত দেখেছিলাম, সেদিনও ছিলো তাই। কিন্তু যা ডিসপ্লে হলো, সেটা মোটেই মডারেট লেভেল না, অ্যাকটিভ ডিসপ্লে। সদ্য লটারি জিতলে কি এরকম লাগে?
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩৮692682
  • কিছু না, সব ছবিই আসছে। পিলিজ একটু ধৈর্য্য ধরুন। উইকেন্ডের মধ্যেই হয়ে যাবে।
  • | 213.132.214.85 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৪০692683
  • " ছবি কি স্লো পিকচারে আসিতেছে.. " ঃ)
  • Tim | 108.228.61.183 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:০৯692684
  • (১১)

    শেষদিন তেমন কিছু করার কথা ছিলোনা, শুধু সেই নর্থ পোল গ্রাম (নামেই, আসলে শহর) দেখতে যাওয়া ছাড়া। সেখানে স্যান্টার বাড়ির সারা গায়ে দারুণ সব ছবি আঁকা, আর রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্ট ক্যান্ডির মত দেখতে। হোস্টেল থেকে একজন বললেন, যদি পারো তো ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসটা দেখে এসো, একটা মিউজিয়াম আছে। আমাদের সময় ছিলো, তাই চলে গেলাম। ক্যাম্পাসটা একটা টিলার মাথায়, তাই অনেকদূর পর্যন্ত ভ্যালিটা দেখতে পাওয়া যায়, তারপর ডেনালির পাহাড়েরা প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে। ক্যাম্পাস শুনশান, বরফের স্তুপ গাড়ি চলার রাস্তা প্রায় ঢেকে দিয়েছে, কাচের ওপর গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা হলো, কিন্তু না গিয়ে উপায় নেই এত সুন্দর ভিউ পয়েন্ট। নর্থ পোল থেকে ফেরার পথে দেখি সূর্যাস্ত হচ্ছে। তখনও আবার ঐ একই জায়গায় গেলাম।

    ফেরার সময় এসে পড়ছিলো। এইসব সময়গুলো সবথেকে কঠিন। ফিরবো বললে ফেরা যায় নাকি ইত্যাদি। সেদিন আবার অরোরা অ্যাক্টিভিটি হাই থাকবে বলে খবর। প্লেনে বসে ভাবছিলাম, অনেকটা পথ তো ক্যানাডা হয়ে ফিরবো, কিছুই কি দেখা যাবেনা?

    ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে অ্যাঙ্কারেজ হয়ে শিকাগোর দিকে ফিরছি যখন, রাত গভীর হচ্ছে বলে সমস্ত অলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। হুচিও গভীর ঘুমে। আমারো ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু খালি ভাবছি এই জায়গায় কি আর কোনদিন আসতে পারবো? দেখে নি। খুব পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যাচ্ছে প্লেন থেকে, অন্ধকারে যতটুকু যা দেখা যায়। ব্লাইন্ড খুলছি আর বন্ধ করছি, বারবার। এইরকম করতে করতেই হঠাৎ দেখি বাইরে আকাশে সবুজ, বেশ জোরালো আলো দেখা যাচ্ছে। হুচিকে তুললাম, ক্যামেরা নামালাম। তারপর ওখানেই ছবি তোলা শুরু হলো। একটু পরে আলো ফ্যাকাসে হয়ে এলো, কিন্তু রইলো অনেকক্ষণ। তারপর ভোরের দিকে নিভে এলো একেবারে। হয়ত খুব করে চাইছিলাম দেখতে, তাই ফ্লাইট থেকেও একবার দেখা হলো নর্দার্ন লাইটস।

    এই হলো গল্প। চারটে রাতের মধ্যে তিনবার অরোরা দেখা গেল, কী বলবো, এর জন্য আমরা নিজেরাই প্রস্তুত ছিলাম না। বাকি আছে ডেনালি পেরিয়ে রোডট্রিপটা। সেরে ফেলতে হবে এই বছরেই।

    আমার লেখা এখানেই শেষ। এরপর হুচি ছবি দেবে আর লিখবে। কোন দরকারি ইনফো ইত্যাদি মিস করে গেলে জানাবেন/জানাবে, লিখে দেব। পড়ার জন্য সবাইকে থ্যাঙ্কু।
  • T | 165.69.169.152 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:১৭692685
  • বাহ্‌, চমতকার। ছবিগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।

    লাইফে কিছুই দেখা হ'ল না। ধ্যুত।
  • pepe | 113.21.127.76 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১৪:৫৪692686
  • অনবদ্য! জীন্দেগি তে আর কিস্যু করা হলনা ঃ( ছাপোষা সংসারী হওয়া ছারা ঃ'(
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৩০692689
  • সত্যি বলতে কি ঘুমোগুলোকে আমিও প্রথমে তা-ই পড়েছিলাম। প্রথমে ভাবলাম সেকি! তারপর ভাবলাম বেশ করেছে লিখেছে। তারপর বুঝলাম আমার পাপী মন।

    দারুণ লেগেছে লেখাটা -
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৩১692690
  • গালের পাশে ঘুমো থাকলে লোকে ভুল করবেই :)
  • dd | 116.51.31.148 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:০৯692691
  • দেখুন, প্লীজ কিছু মনে কইরেন্না। কিন্তু এইযে সব অদ্ভুত সুন্দোর যায়গায় বেড়াতে যান - সব সময়েই এতো ছবি তুলবার ধান্দায় থাকেন কেনো? হোয়াই?

    যদি হোতো জেনারেল অরোরা, তাহলে ছবি তুলতেন - কোনো অসুবিদে নেই। কিন্তু অরোরা বেরিলিয়াসের কোনো ছবি হয় নাকি? ও কি সুদুই আলো ? ঝমঝমে নিশুতি রাত। চারদিক নিঃঝুম। কনকনে ঠান্ডা। হিমেল বাতাস। এই সব নিয়েই একটা এক্ষপেরিয়েন্স। ওর ছবি হয় না। ট্রাইপডেও না। হেপ্টাপডেও না।

    আপনেদের সকল ট্র্যাভেল ইচ্ছা বড্ডো বেশী ক্যামেরা নির্ভর। শুধু কোথায় গিয়ে ক্যাৎ করে ছবি তুলবেন - সেই চিন্তা।

    একটু শিখুন ক্যামেরায় চোখ না লাগিয়ে চুপ চাপ এই সৌন্দর্য্য অনুভব করা।গাঁজা থাকলে ডেফিনিটলি আরো ভালো হোতো - কিন্তু এতো ক্যামেরা নির্ভরতাও ভালো না বাপু।
  • নী-পা | 53.252.140.240 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৮692692
  • এক ঘোরের মধ্যে আছি .... লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।

    এটাও থাকুক এখানে -----

  • Tim | 140.126.225.237 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:১২692693
  • ডিডিদা,

    অনেকে তো খুবই ভালো ছবি তোলে, এই পাই বুনু অজ্জিতদা রোবু। তাদের ছবি তোলার তাগিদ তো বেশি থাকবেই। আমি ভালো ছবি তুলিনা, অত চর্চাও নেই। আমি ছবি তুলি মনে রাখার জন্য। স্মৃতি একসময় ফিকে হয়ে যায়, তারপর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এইসব হয়েছিলো। যেদিন আর বেরোতে পারবোনা, সেদিন এইগুলো দেখলে মনে পড়বে। এই আর কি। ঃ-)

    তবে আমাদের শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখারও যথেষ্ট সময় ছিলো। মাঝের একটা দিনে ঐ পনেরো মিনিটের স্পেল বাদ দিলে আর ছবির পেছনে দৌড়তে হয়নি। প্লেন থেকে অরোরা দেখেছি কিছু নাহলেও ঘন্টা দুয়েক ধরে। ছবি কমই তুলেছি, দেখেছিই খালি। নিচে এক একটা টিমটিমে আলো, তা ধরো মিনিট দশেক পর পর কখনো আসছে, আর সবটাই নিঝুম সাদা প্রান্তর আর আকাশে সবজে আলো, এগুলো চুপ করে বসেই দেখেছি। প্লেনের ঐ স্পিডে জানলা দিয়ে ছবি হয়ও না।

    তবে সব সময় চুপ করে কাব্যি করতে ভয় আছে। বাজারে কবিদের ভারি দূর্নাম, পীড়ও বিমুখ, তাই কবিরা ধীরে ধীরে আন্ডারগ্রাউন্ড চলে যাচ্চে। তখুন ক্যামেরা আর ট্রাইপড কাঁধে ছদমোবেশ না ধল্লে কেং কয়ে চলে? যেরম টপাটপ ভয়েস চলে আসছে, হয়ত চুপ করে কাব্যি করতে গেলাম আর জেহাদি বলে তুলে নিলো!
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৯692694
  • বল্লে বিশ্বাস করবে না আম্মো নর্দান লাইটস দেখেছি আর খচমচ করে ছবি তুলি নি (আসল কথা হল তেমন ক্যামেরা ছিল না আর রাত তখন দুটো। আশা ছিল পরে আরো ছবি তোলার চান্স পাবো, সে আর হয় নি)
  • pi | 120.227.64.109 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৩২692695
  • 'ঝমঝমে নিশুতি রাত। চারদিক নিঃঝুম। কনকনে ঠান্ডা। হিমেল বাতাস। এই সব নিয়েই একটা এক্ষপেরিয়েন্স। ওর ছবি হয় না।'

    মেরুজ্যোতির সাথে এসবের কম্বোর কথা জানিনা। তবে এই রাতের নিশুতিপানা, ঝমঝমানি, কনকনানি, হাওয়ার হিমেলপানা এসবেরই ছবি হয়। হয় বলেই ঘোরতর বিশ্বাস। কোনোদিন তুলতে পারবো কিনা জানিনা, কিন্তু সেগুলোই তুলতে চাই, সেটা বিলক্ষণ জানি। এমনকি শিশিরের শব্দ গন্ধ ইস্তক তুলে ফেলা যায়। সেটা অবশ্য শোনা কথা।

    লেখাটা শুরু করেছি, দিব্বি লাগছিলো। জমিয়ে রেখেছি, ভাল ক'রে পড়বো বলে, হুচির লেখা আসার পরে। একসাথে।
  • kk | 182.56.13.32 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৪692696
  • বাঃ,কত সুন্দর বেড়িয়েছো, কত সুন্দর করে লিখেছো। কী ভালো না? এরপর আর কিস্যুই দেখা হলোনা, কতকিছু বাকি আছে, এইসব বলে দুঃখু কোরোনা একদম! এই বেড়ানো কটা লোকের হয়?
  • hu | 78.63.145.192 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৬:৫৭692697
  • এই মুহূর্তে নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল এমন একটা সময় খুঁজে বার করা যেটা দুজনের জন্যই সুটেবল। নইলে এতদিন ধরে ইঁট পাতার পর টিম যেদিন লিখতে শুরু করল সেদিনই আমি সময় পেলাম না সঙ্গত করার!

    ব্যাদড়া বালকেরা, গালাগালকে গালাগালই পড়তে শেখো। আর জেনে রাখো সেদিন কি হয়েছিল। হ্যাঁ মানছি, প্রথম আলস্কা যাওয়ার উত্তেজনা, সকালে উঠে ফ্লাইট নেওয়ার টেনশন ইত্যাদিতে আগের দিন রাতে ভালো ঘুম হয়নি। তার ওপর ফেয়ার ব্যাঙ্কসে নেমেই কাঁচের রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর কসরৎ আমি নই, টিমকেই করতেই হয়েছে। বাপ রে! শহরের ভেতরের রাস্তা তো তবু ভালো, কিন্তু অমন হতকুচ্ছিৎ এয়ারপোর্টের রাস্তা জাস্ট ভাবা যায় না। এদিকে কি একটা গাড়ি দিয়েছিল, সব রকমের সুইচ অন-অফ করেও সে গাড়ি গরম হয় না, পরের দিন সে গাড়ি বদলাতে হল। কিন্তু সে যা হোক, বাইরে এমন ভরা পূর্ণিমা, বরফে ঢাকা গ্রাম জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে, একটু পরে মেরুজ্যোতি ফুটবে, তার মধ্যে তুই ঘুমোবি? টায়ার্ড সত্যিই লাগছিল। সেটা টোয়েন্টি ফোর্থ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা। ডর্মে থাকার পক্ষে বয়সটা একটু বেশিই হয়ে গেছে বলে হোস্টেলের মধ্যেই প্রাইভেট রুম নেওয়া হয়েছিল। আর সেটাই ছিল ভুল। বিলি নিজেরই একটা থাকার ঘর প্রাইভেট রুম হিসেবে ভাড়া দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা যখন পৌঁছলাম, বিলির ঐটুকু ছোট বাড়িতে তখন কম করে জনা তিরিশেক অতিথি। সবার সাথে আলাপ করালো। আমি হুঁ-হাঁ করে যাচ্ছি, এদিকে টিম তো তখনও গাড়ি নিয়ে বাইরে। আমি এসেছি বিলির কাছে কোথায় পার্ক করা হবে জানতে। প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল সেদিন। ইলেকট্রিক কার পোর্ট ছাড়া সারা রাত বাইরে গাড়ি রেখে দিলে পরের দিন আর চালানো যাবে না। গাড়ি পার্ক করে, কোন রকমে ধাতস্থ হয়ে ম্যাগি বানাতে হোস্টেলের রান্নাঘরে গেলাম। এই রান্নাঘরটা বাইরের দিকে, ডর্মের সাথে। সেখানেই এক ঝাঁক বাচ্চার সাথে আলাপ হল।

    টিম এরিক বলে যাকে চালাচ্ছে তার নাম আসলে ইউজিন। ও পাঁচদিন আগে এসেছে। একদিনও লাইটস দেখতে পায় নি। চব্বিশের রাতেই চলে যাবে। মানে ঐদিনই লাস্ট চান্স। মোমোকো নামে একটা মিষ্টি জাপানি পুতুল ছিল। উপায় থাকলে ওকে আমি পুষ্যি নিতাম। ও ছ'দিন আগের একটা যা ছবি দেখালো তা দেখেই তো আমাদের মাথা ঘুরে গেল। কালীপুজোর রাতের মত আলোর বাহার। বিলির হোস্টেলের সামনে থেকে ছবি তুলেছে। ইউজিন যেদিন এসেছে তার আগের রাতে হয়ে গেছে এসব। ওরাই বলল এগারোটার আগে বাইরে গিয়ে লাভ নেই। আমরা ওদের বললাম আলো দেখতে পেলে আমাদের খবর দিতে। তখন সাড়ে আটটা মত বাজে। তাই ঠিক হল একটু বিশ্রাম নেওয়া যাক।

    সেই বিশ্রাম নিতে গিয়েই একজন নাক যা ডাকাতে শুরু করল তারই ফলশ্রুতি হল এই গালাগাল। বিলির ঘরে তখন পুরোদমে পার্টি চলছে। বিলির ঠাকুর্দার আমলের পিয়ানোয় ওর নাতনি টুংটাং বাজাচ্ছে। তবু তার মধ্যেই আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। সাড়ে দশটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো। টিমকে উঠতে বললাম। সে পাশ ফিরে শুলো। অরোরা যেন কর্পোরেশনের জল, ঘড়ি ধরে আসবে। আমিও দেখলাম বাইরে বেরোনো মানেই চারটে লেয়ার পরা, সর্বোপরি জুতোর ফিতে বাঁধা, অতএব আমিও পাশ ফিরে শুলাম। তবে একটা জরুরী কাজ ইতিমধ্যে করে রেখেছি। ফেসবুকে অরোরা বোরিয়ালিস নোটিফিকেশন নামে একটা পেজ আছে। সেটাতে প্রশ্ন রেখেছে লাইট দেখা যাচ্ছে কিনা, কখন যাবে ইত্যাদি। জিওফিজিকাল ইনস্টিটুটের পাতাতেও ঘুরে এলাম একবার। তারপর নিজেরও চোখ জড়িয়ে এসেছে। আবার ঘুম ভাঙলো এগারোটা দশে। ঘুম ভাঙামাত্র ফেসবুক। আর কি সাঙ্ঘাতিক কান্ড! মিনিট পাঁচেক আগে পোস্ট পড়েছে - লাইটস আর আউট। সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে ওঠা, টিমকে গালাগাল এবং তারপর কি হল তা তো আপনারা জানেন।

    ছবি দিচ্ছি পরের পোস্টে। অনেকদিন ছবি দিই নি এখানে। দেখি পারি কিনা!
  • hu | 78.63.145.192 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৪০692699
  • ছবি দিতে একটু টেকনিক্যাল অসুবিধায় পড়েছি। ততক্ষণ একটু লিখে নিই। ডিডিদা ঠিকই বললেন, অরোরা বোরিয়ালিস একটা অনুভূতি। এর কোন ছবি হয় না। পাই হয়তো তুলতে পারবে। ওর তোলা ছবিগুলো ঠিক যা ঘটে গেল তার রেপ্লিকা নয়, তার বেশি কিছু। কিন্তু আমি পারব না। আমার এক বন্ধু জানতে চাইছিল - আমার সেই সময় কি মনে হচ্ছিল। এটা বর্ণনা করা অসম্ভব। আমি খুব ছোট থেকে কয়েকটা জিনিস দেখার স্বপ্ন দেখেছি। মেরুজ্যোতি তার মধ্যে একটা। এটা আবার এমন একটা জিনিস সেটা টিকিট কেটে প্লেনে চড়ে বসলেই দেখা যায় না। প্রকৃতি দেখালে তবেই দেখা হবে। তিনমাস আগে টিকিট কাটা ছিল। কোন মডেলই তিনমাস আগে থেকে নর্দার্ন লাইটসের প্রেডিকশন মেলাতে পারবে না। যাওয়ার দুসপ্তাহ আগে থেকে টিম রোজ ফোরকাস্ট চেক করত। আমরা যে কদিন থাকব সেই কদিনই অরোরা অ্যাকটিভিটি লো। ফিরে আসার পরের দিন আবার হাই। আমি তখন আর ঐ সাইটটা দেখতাম না। ফোরকাস্ট কি বলছে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। ট্রাইপড নিয়েও চাপ নিই নি। দেখা যাবে কিনা তারই ঠিক নেই। ঢাকঢোল পিটিয়ে গিয়ে কি হবে। যদি কিছু দেখতে পাই মনেই রেখে দেব সেটা।

    তবে আমাদের অশেষ সৌভাগ্য যে আমরা লো ফোরকাস্ট সত্ত্বেও একটা অসাধারন ডিসপ্লে দেখতে পেয়েছি। ছাব্বিশে ডিসেম্বর সকাল থেকেই আর্কটিক সার্কেল টুরে। ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। ফোরকাস্ট হয়তো বদলেছিল। আমরা চেক করার সুযোগ পাই নি। ফলে যা দেখেছি তা পুরোটাই সারপ্রাইজ হিসেবে এসেছে। এমনকি ট্রাইপডটা গাড়িতে ফেলে এসেছিলাম। তারও একটা ব্যবস্থা হয়ে গেল সেই অসাধারণ আলোর খেলা শুরু হওয়ার আগেই। টিম লিখেছে পনেরো মিনিট থেকে আধঘন্টা, আমার মনে হয় না মিনিট দশেকের বেশি হবে। আমরা সবে ট্রাইপড সেট করে ট্রেডিং পোস্টের ফায়ারপ্লেসে একটু হাত-পা সেঁকে নিচ্ছি এমন সময় হৈ হৈ শুরু হল। দৌড়ে বেরিয়ে দেখি এই ব্যাপার। হোমের আগুনের মত আকাশের এক প্রান্ত থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তারপর সেই আগুনের শিখা আমাদের মাথার ওপর দিয়ে আরেক প্রান্তে গিয়ে আছড়ে পড়ছে। ওদিক থেকে আবার তার উত্তর আসছে। প্রথমে কিছুক্ষণ সবুজের সাথে গোলাপী-বেগুনীও ছিল। তারপর শুধু সবুজ। নাহ,ঐ সময় কোন ভাবনাই মাথায় আসেনি। এমনকি অহো কি দেখিলামও নয়। সবাই ছবি তুলছে, আমরাও তুলেছি যতটা পেরেছি। কিন্তু ছবি তোলাটা তুচ্ছ। আমরা পৃথিবীর যে অঞ্চলে বাস করি সেখানে এই জিনিস তো দেখতে পাই না। গল্প পড়ে কল্পনা করি শুধু। সেই কল্পনা রূপ পেল। বহু বহু দিনের স্বপ্ন রূপ পেল। আবার কখনও দেখতে পাবো কিনা জানি না। আপাতত ঐ রাতটাকে মনের মধ্যে জমিয়ে রেখেছি। সেই ১৯৯৫ এর অক্টোবরের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সেই তারাভরা রাতে এক ফোটোগ্রাফারের লেন্সে চোখ রেখে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখা, আর ছাব্বিশে ডিসেম্বরের মেরুজ্যোতি - এই মুহূর্তগুলো মনে রাখতে ক্যামেরার প্রয়োজন নেই সত্যিই।
  • hu | 78.63.145.192 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:০৯692700
  • hu | 78.63.145.192 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৩৫692701


  • <

    <

    <

    <
  • Binary | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪০692703
  • টিম্ভাই এর লেখা টা দারুন হচ্ছে । বাই দ্য বাই , আমার শহর থেকে ৫ কিমি গেলেই অরোরা বরিয়ালিস দ্যাখা যায় ।
  • Tim | 140.126.225.237 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৩692704
  • হ্যাঁ ফ্লাইটে ফেরার সময় আর লেখার সময়েও ভাবছিলাম বাইনারিদা ফোজ্জি এদের বাড়ির আসেপাশে থেকেই হয়ত নর্দার্ন লাইটস দেখা যায়। ঃ-)
  • Tim | 140.126.225.237 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৫692705
  • হ্যাঁ হ্যাঁ ইউজিন। আমার স্মৃতি মানে পুরো কিউকি সাস ইত্যাদি হয়ে গেছে। আমি ফেয়ারব্যাংকসেও ইউজিনকে এরিক বলছিলাম মাঝে মাঝেই, কুচোগুলোর এত বুদ্ধি বুঝেও নিচ্ছিলো।
  • T | 165.69.175.53 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৩692706
  • অদ্ভুত সুন্দর সব ছবি।
  • Binary | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৫৪692707
  • বাই দ্য ওয়ে , আমার এখান থেকে ড্রাইভ করেও আলাস্কা যাওয়া যায় । এডমনটন থেকে , রোড সাইন দেখেছি
  • Abhyu | 106.32.177.119 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৯:৫৫692708
  • দুরন্ত
  • 4z | 86.68.58.148 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৩০692710
  • বাইনারিদার বাড়ির কাছে, আমাদের থেকে বহুদুর :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন