এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • একটা অ-সমাপ্ত গল্প (পর্ব - ১৪ও ১৫)

    Kaushik Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৪৯৫ বার পঠিত
  • ১৪।

    একটা সজনে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিনে বাদাম খাচ্ছে গণেশ। সন্ধ্যে হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। একটু আগে তাঁতিবাড়ি থেকে তাঁত বোনার খট্‌খটাখট্‌ খট্‌খটাখট্‌ শব্দ আসছিল। মিনিট পনের হল শব্দটা বন্ধ হয়েছে। এখন রাস্তার উল্টোদিকের ঠাকুরবাড়িটা থেকে আসা ঘন্টা আর কাঁসরের শব্দ আশপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকের মতে এই ঠাকুর বাড়িটাই চৈতন্যদেবের জন্মস্থান। অনেকের আবার মত ভিন্ন। তাঁরা বলেন মহাপ্রভুর জন্ম হয়েছিল নদীর ওপারে - মিঞাপুরে। লোকের মুখে মুখে সেই মিঞাপুরই এখন মায়াপুর। গণেশের কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে যে মহাপ্রভু নবদ্বীপেই জন্মেছিলেন; কোনোদিন হয়ত ওরই মতন দাঁড়িয়ে ছিলেন এই সজনে গাছটার তলায়!অবশ্য সাড়ে চাড়শো-পৌনে পাঁচশো বছর আগে সজনে গাছটার থাকার কথা নয়। তা সে যাই হোক - যদি এই ঠাকুর বাড়িটাই ওনার জন্মস্থান হয়ে থাকে, তবে এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয় যে নিমাই সন্ন্যাসী একদিন ঠিক এই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়েছিলেন। তবে মাঝে মাঝে ওর খটকা লাগে! প্রায় পাঁচশো বছর আগে একটা মানুষ ঠিক কোথায় জন্মেছিল, তা কি হলফ করে বলা যায় কখনও! নিমাইয়ের বাড়িটা যদি এখনও থাকতো, তা হলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু আজ সে বাড়ি কোথায়? গণেশদের এক দূর সম্পর্কের কাকা এই নিয়ে অনেক গবেষণা করেন। গৌর কাকা। কলকাতায় থাকেন। রুপদর্শী না দূরদর্শী - কি একটা ছদ্মনামে লেখেন কাগজে টাগজে। ওনার মতে নবদ্বীপের গঙ্গা তার খাত বদলেছে বহু আগেই। পুরনো পুঁথী ঘেঁটে দেখেছেন যে নিমাই সকালে উঠে পূর্ব দিকে গমন করতেন গঙ্গা স্নানের জন্য। কিন্তু আজকে গঙ্গা নবদ্বীপের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়। গৌর কাকার কথাটা তার মানে ফেলে দেওয়ার মতন নয়! অবশ্য ওই একই পুঁথির সূত্র ধরে অন্য দল বলে যে মহাপ্রভুর জন্ম অধুনা মায়াপুরে; কারন মায়াপুরেরই পূর্ব দিকে গঙ্গা, নবদ্বীপের নয়। পুঁথিটার নাম এখন কিছুতেই মনে পড়ছেনা গণেশের। চৈতন্য মঙ্গল কি? না না চৈতন্য চরিতামৃত বোধহয়! মরুক গে যাক!

    মশা কামড়াচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কেউ একজন আসবে। তার হাতে চিঠিটা দিয়ে তবে গণেশর ছুটি। মনোরঞ্জন কাকা পইপই করে বলে দিয়েছেন - চিঠিটা না দিয়ে যেন ও চলে না আসে। বলেছেন "দেরি হলে আমি তোকে বাড়ি নিয়ে যাব, ডাক্তার বকবে না"। জ্যাঠাকে মনোরঞ্জন কাকা ডাক্তার বলেই ডাকেন। অন্যদের মতন বাবু জোড়েন না। নবদ্বীপে ডাক্তার মাখন লাল ঘোষের খুব নাম ডাক। লোকে সম্মানের সাথে সাথে সমীহ ও করে। কিন্তু মনোরঞ্জন কাকা জ্যাঠার বন্ধু মানুষ; জ্যাঠাকে তাই সম্মানটা উনি প্রদর্শন করেন ভালবাসার মাধ্যমে।

    মনরঞ্জন কাকা বাড়িতে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন, এই ভরসাতেই এসেছে আজকে গণেশ। নইলে এতক্ষণে পুরো পেয়ারা গাছটাই ভাঙত ওর পিঠে!
    সে তো হোল, কিন্তু সে লোক এখনও আসে না কেন? গণেশ জিজ্ঞেস করেছিল, "ভদ্রলোক কে আমি চিনব কি করে ?" কাকা বলেছিলেন, "চেনার দরকার নেই, ডোরাকাটা জামা পড়ে একটা ছেলে এসে বলবে 'আকাশমণি' আর তুই চিঠিটা দিয়ে হাঁটা লাগাবি।" ওর খুব ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করে চিঠিতে কি লেখা আছে। এখনও ওর ভীষণ ইচ্ছে করছে চিঠিটা পড়ে দেখতে; কিন্তু পার্টির নির্দেশ তা বলে না।

    অশোকটা সাথে এলে ভাল লাগত। কিন্তু ওকে কাকা অন্য কাজ দিয়েছেন। পোস্টার লেখা। গণেশের হাতের লেখা অশোকের মতন ভাল না, তাই পোস্টার লেখা থেকে ওকে বিরত থাকতে হয়। মনোরঞ্জন কাকা বলেছেন স্কুল ফাইনাল হয়ে গেলে পর ওদের কলকাত নিয়ে গিয়ে পার্টির মিটিঙ শোনাবেন। উফ্‌! ভাবলেই উত্তেজনা হয় গণেশের। অনেকটা মাঠে ফুটবল খেলেতে নামার আগের মূহুর্তটার মতন - আট আনা আনন্দ, ছ আনা উত্তেজনা আর দু আনা উৎকন্ঠা। ফুটবল খেলার পরই যদি ওর কিছু ভাল লাগে তবে তা হল পার্টির কাজ করতে। অবশ্য কাজের নামে ওই শক্ত শক্ত বই গুলো পড়তে ওর মোটেই ভালো লাগে না। মনোরঞ্জন কাকা বলেন, "পড়তে থাক। পড়তে পড়তে একদিন রস পাবি। সেদিন দেখবি এগুলোর কি মাদকতা, কি শক্তি!" গণেশ ঠিক করে ফেলেছে, বড় হয়ে ও মোহনবাগানে ফুটবল খেলতে খেলতেই পার্টিরও কাজ করবে। অফ্‌ সিজনে পার্টি আর অন্য সময়টা ফুটবল। ওর বাড়ানো থ্রু থেকে চুনী গোল করবে। বা যদি উল্টোটা হয়! নিজের অজান্তেই গায়ে কাঁটা দিল গণেশের।

    খেয়ালি সূতো বোনাতে ছেদ পড়ল।। অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা সাইকেল বেড়িয়ে এল। সওয়ারির পরনে একটা খাটো ধূতি আর ডোরাকাটা শার্ট। ওর সামনে এসে থামল সাইকেলটা। গণেশের দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল, "চিঠিটা দাও"। পকেটে হাত ঢোকাতে গিয়ে থমকাল গণেশ। বলল, "এমনি এমনি চিঠি দেওয়ার নির্দেশ নেই, কোড বলুন"। সাইকেল থেকে নেমে লোকটা বলল, "গুড! এই তো চাই কমরেড! আকাশমণি। তা এবার দেবে তো চিঠিটা?" কোনো কথা না বলে গণেশ লোকটার হাতে চালান করে দিল চিঠিটা। তারপর হাঁটা লাগাল। লোকটা বলল, "তোমাকে এগিয়ে দিতে পারি। সাইকেলে উঠে পর"। গণেশ বলল, "নির্দেশ নেই। আপনি যান, আমি একাই ফিরতে পারব"।
    "ঠিক আছে, কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে যেও। বিপদ আছে"। গণেশের পিঠে একটা মৃদু চাপড় দিয়ে সাইকেলটাকে তীরবেগে হাঁকিয়ে চলে গেল লোকটা। লোকটার চলে যাওয়াটা দেখল গণেশ। তারপর বাড়ির দিকে জোর কদমে হাঁটা দিল; দেরি হয়ে গেছে।
    খুব আনন্দ হচ্ছে ওর। বেশ কিছুদিন হল পার্টির কাজ করছে, কিন্তু আজ অবধি ওকে কেউ কমরেড বলে সম্বোধন করেনি! আজ ওই 'আকাশমণি'ওকে কমরেড বলাতে খুবই সম্মানিত বোধ করছে ও। সত্যিই তো - ও তো মনোরঞ্জন কাকা বা এই লোকটার সহযোদ্ধাই, একই নৌকার যাত্রি। অশোককে বাড়ি গিয়ে বলতে হবে কথাটা। অশোককেও কেউ কখনও কমরেড বলেনি!

    হাঁটতে হাঁটতে একটা কথা মনে হল ওর। লোকটা বলল বিপদ আছে কিন্তু কই মনোরঞ্জন কাকা তো সেরকম কিছু বলেননি ওকে! কাকা কি তাহলে বিপদের কথাটা জানতেন না! অশোককে রাতের দিকে পোস্টার লেখালে কি খুব।।।।

    হাঁটার গতিটা শ্লথ হয়ে এল গণেশের।

    ১৫।

    মাথার ওপর পাখা চলছে, তবু বিন্দু বিন্দু ঘামে কপালটা ভিজে যাচ্ছে। একটা বড় হল ঘরে বসে রয়েছে কমল। হলের মধ্যে আরও জনা পঞ্চাশ ছেলে বসে-দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে - কখন তার ডাক আসে, যদি ভাগ্যে শিঁকে ছেঁড়; সেই আশায়। কমলের আগে আরো চার জনের নাম আছে। যে ছেলেটা ভেতরে গেছে সে আর বেরোনোর নাম করছে না। আধঘন্টা হতে চলল প্রায়। এক একটা মূহুর্ত অনন্ত মনে হচ্ছে। এই গতিতে ইন্টার্ভিউ চললে ঘন্টা দুয়েকের আগে কোনো আশা নেই। অন্য সময় হলে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসার কথা ভাবত হয়ত কমল কিন্তু ওই ভীড় আর গরমের মধ্যে করবেটা কি! আর ঘুরতে গিয়ে যদি ওর ডাক চলে আসে! ওই ঝুঁকি নেওয়া যাবেনা। খড়কূটোই সই, তবু এই ইন্টারভিটাকে আঁকড়ে যদি গত দেড় বছরের অনিশ্চয়তার অশান্ত নদীটাকে পেরনো যায়, গলার ওপর প্রতিদিন অল্প অল্প করে চেপে বসতে থাকা ফাঁসটাকে যদি এক ঝটকায় খুলে ফেলা যায় - তবে সত্যিই আর কোনও দিন ভগবানের কাছে কিচ্ছু চাইবে না কমল।

    রেলের ক্লার্কের চাকরি; কত জন কে নেবে তা কেউ জানেনা। এই ঘরের মধ্যেই পঞ্চাশ জন রয়েছে। বাইরে অন্তত এর বিশ গুণ লোক অপেক্ষা করছে। আচ্ছা, সকলের বাড়ির অবস্থাই কি কমলের মতন? না কি তার চাইতেও খারাপ? চাকরিটা কমলের যতটা দরকার আর সকলেরও কি ততটাই দরকার? নাকি এই ভীড়ের মধ্যে এমনও কেউ আছে যার কাছে চাকরিটা অনেক বেশি অমূল্য, কমল যতটা ভাবতে পারে তার চাইতে অ-নেক বেশি!
    ভাবনাটায় ছেদ টানল কমল। বসে বসে হাত পায়ে জড়তা এসে গেছে। একটু পায়চারি করবে ভেবে চেয়ারটা থেকে উঠতে যেতেই আগের ছেলেটা বেরল ইন্টারভিউ রুম থেকে। ওকে কি প্রশ্ন করল - ভাবনাটা মাথায় আসার আগেই কমল দেখল ছেলেটাকে ঘিরে ধরেছে জনা বিশেক ছেলে। সকলেরই এক প্রশ্ন - কি প্রশ্ন করল ইন্টারভিউতে? নিজের অজান্তেই পায়চারি করার খেয়ালটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেল;চেয়ারটাতে আগের মতই বসে রইল ও। বসে বসে জটলাটার দিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। প্রশ্ন-উত্তর-উদ্বেগ মেশানো কিছু শব্দ পুঞ্জ জটলাটা থেকে উৎপন্ন হয়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরছে হলঘরটার দেওয়ালে দেওয়ালে। ওর উল্টোদিকের চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটা এখন ঢুকছে ইন্টারভিউ দিতে। ছেলেটার হাত অল্প অল্প কাঁপছে। যেন বদ্ধ ভূমির দিকে এগিয়ে চলেছে বলিপ্রদত্ত এক ছাগ শিশু। না কি রোমান amphitheater এর দিকে এগিয়ে চলা কোনো গ্ল্যাডিয়েটর? সে তো সময়ই বলবে!

    স্নায়ু গুলোকে যুদ্ধ করে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে হচ্ছে কমলকে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়! সামান্য একটা চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছে। এই ভীড়ের মধ্যেই কোনো কোনো মুখ পাবে চাকরি; তবে সকলেরই এহেন অবস্থা কেন! আর এমন ও নয় যে এই চাকরিটা না পেলে চিরজীবনের মতন চাকরি পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি চাকরিতে ঢোকার শেষ বয়সে পৌঁছতে কমলের এখনও ঢের দেরি আছে। তবুও এই অস্থিরতা। আসলে উবে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের যায়গাটায় স্থান নিয়েছে উদ্বেগ - একরাশ অন্ধকারের মতন উদ্বেগ - যা আর সকলের মতন ওকেও শান্ত থাকতে দিচ্ছেনা।

    চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত পা গুলো কে খেলিয়ে নিল কমল। ধূর! আর ভাবতে ভাল লাগছে না। আবার, যা হবে তা হবে - এমনটাও ভাবতে পারছে কই! পায়চারি করতে করতে ওর আগে নাম থাকা তিন জনের ঢোকা বেরোনোর সময়টা খেয়াল করল। গড়ে পনের মিনিট করে চলছে এক এক জনের ইন্টারভিউ। ওর ঠিক আগের জন ইন্টারভিউতে ঢোকার পর ফিরে গেল চেয়ারটায়; মনটাকে শান্ত করতে।

    একটা বিশাল টেবিলের অন্য পারে জনা সাতেক বসে রয়েছে। চারটে স্লিপ দুটো গালি। এত উৎকন্ঠার মধ্যেও হাসি পেল কমলের। ওকে বধ করতে একটা কিপারই যথেষ্ঠ ছিল। এর পরের কুড়ি মিনিট কেটে গেল একরকম। ঝড়ের গতিতে আক্রমন। তবে সে সব একরকম সামলে দিয়েছে ও। বাইরে বেড়িয়ে একবুক প্রশ্বাস নিল ও। কলকাতার বাতাস বড় দীন। সতেজতার বড় অভাব এতে। ধর্মতলার দিকে হাঁটতে থাকল কমল। ইন্তারভিউটা দিয়ে নিজের হারানো আত্মবিশ্বাসটা অনেকটাই ফিরে পেয়েছে যেন। চাকরি পাবে কিনা তা বলা সম্ভব নয়, তবে ইন্টারভিউ খারাপ দেয় নি ও। বেশির ভাগই জেনারেল ন্যলেজের প্রশ্ন। বিলেতের পার্লামেন্টের হাউস অফ লর্ডস আর হাউস অফ কমন্সের পার্থক্য কি - এর উত্তর জেনে একজন বুকিং ক্লার্কের যে কি সুরাহা হবে, তা মাথায় ঢুকল না কমলের। তবু যা হোক উত্তর দিয়েছে এই প্রশ্নটার কিন্তু একটা প্রশ্ন একে বারেই পারেনি ও। গল্ফ খেলায় 'বুগি' কথাটার অর্থ কি। গল্ফ খেলাটাই কখনও চোখের সামনে দেখেনি কমল। মায়ের মুখে শুনেছে বটে খেলাটার কথা কিন্তু কোনো পোক্ত ধারনা গড়ে ওঠেনি খেলাটার সম্পর্কে। কে জানে রেলের ক্লার্কদের হয়ত আজকাল গল্ফ ও খেলেতে হয়!

    জি পি ও টাকে বাঁ দিকে রেখে ধর্মতলার মোড়ের দিকে হেঁটে চলেছে কমল। ওখান থেকে পার্ক সার্কাসের ট্রাম ধরবে। ট্রাম না পেলে বাসেই যেতে হবে। মামিমা অনেক বার বলেছিলেন গাড়ি পাঠাবার কথা - কিন্তু কমল কিছুতেই রাজি হয়নি। ধার করা প্যান্ট পড়ে গাড়িতে চড়ার লজ্জা বইতে পারবেনা ও। হাঁটতে হাঁটতে ধর্মতলার মোড়ের কাছাকাছি এসে পড়েছে। ছোটোবেলার একটা ছড়া হঠাৎই মনে পড়ে গেল।।।। মুস্কিল আসান উড়ে মালি, ধর্মতলা কর্মখালি। মালির কাজ করতেও ওর আপত্তি নেই কিন্তু কর্মখালি থাকলে তো!

    ট্রামে উঠে জানলার ধারের একটা সিট পাওয়া গেল। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে চলেছে। অফিস গুলো ছুটি হতে এখনও দেরি আছে। সামনের সিটে একজন বয়স্ক মানুষ বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। বসুমতি। হেডলাইন গুলো লুকিয়ে পড়ে নিল কমল। কাগজের একটা ছবিতে চোখ আঁটকাল কমলের। এক হাবিলদার একটা ছাত্রকে লাঠিপেটা করছে। কোন দাবি দাওয়া আদায় করতে গেছিল হয়ত। ছাত্রটার পরনে হাফ শার্ট ও হাফ প্যান্ট। মার বাঁচাতে নিজের ডান হাতটা তুলে লাঠিটা আটকানোর চেষ্ঠা করছে। স্বাধীন দেশের ছাত্রদেরও তাহলে পড়ে পড়ে মার খেতে হবে নিজের দেশেরই পুলিশের কাছে! নিজেকে মনে মনে বছর পঁচিশ আগেকার কলকাতার রাজপথে এনে ফেলল কমল। সেদিনও হয়ত এমনই রোদ ওঠা দুপুর বেলা ছিল। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া আজকের মতন এতটা বেশি নয়। হাজারে হাজারে মানুষ জড়ো হয়েছে গান্ধিজীর "ভারত ছাড়ো" ডাকে। সেদিনও হয়ত কোনো তরুন খবরের কাগজের ওই ছেলেটার মতই অসহায় ভাবে মার খাচ্ছিল ইংরেজের মাইনে করা স্বদেশি পুলিশের হাতে। তবে কি শুধু ক্ষমতায় থাকা মানুষ গুলোই পাল্টায়; পাল্টায় না আর কিছু? কমলের মনে হল ছবির ওই হাবিলদার আর ছাত্রটার মধ্যে আদতে কোনো পার্থক্য নেই। একটা টেবিলের আলাদা প্রান্তে বসে আছে দু জনে। প্রান্ত বদল হলে ছাত্রটাও তাইই করত যা এখন হাবিলদারটা করছে। দুজনের সামাজিক অবস্থানও প্রায় অনুরুপ।

    ট্রাম থেকে নেমে মামার বাড়ির দিকে হাঁটা লাগিয়েছে কমল।পার্ক সার্কাস মোড়ের থেকে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের দিকে। ওখান থেকে বাঁদিকে বেঁকে আরও খানিকটা হাঁটলেই মামার বাড়ি। এখন আর কমলের মাথায় পুলিশ বা ওই ছাত্রটার কথা নেই। ইন্টারভিউ পুলিশ কর্মখালি ভারতবর্ষ - সমস্ত কিছু এখন তালগোল পাকিয়ে ওর পেটের মধ্যে প্রচন্ড খিদে তে পরিনত হয়েছে। সেই সকালে খেয়ে বেড়িয়েছে পরীক্ষা দিতে - তারপর থেকে আর কিছু খাওয়া হয়নি ওর।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৪৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শঙ্খ | 169.53.174.145 (*) | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:৫৩46153
  • ও কৌশিক, একটা পাতাতেই তো সব কটা পর্ব দিতে পারো, পরের পর, তাহলে পুরো লেখাটা এক জায়গায় থাকবে। এই ভাবে বড্ড খেই হারিয়ে যাচ্ছে।
  • kaushik | 127.211.91.74 (*) | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:৩৪46154
  • শঙ্খ,
    আসলে হয়েছে কি জানো, আমার বানানের অবস্থা তো জানোই :P। পর্ব গুলোর বানান গুলো ওপাড়ার জল স্বতপ্রণোদিত হয়ে শুধরে দেবে বলেছে। (ধন্যবাদ দিয়ে আর ওকে ছোটো করতে চাইনা)

    যে যে পর্ব গুলো আবর্জনা মুক্ত হয়ে আসছে, সে গুলো টুকটুক করে দিয়ে দিচ্ছি এখানে। তোমার কথাটা মাথায় রইল, যতটা সম্ভব একসাথে দেওয়ার চেস্টা করব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন