এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অগ্রতাপস―ডিরোজিও # তিন

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ আগস্ট ২০১৬ | ১৭৫৭ বার পঠিত
  • ।। ৪ ।।
    একটা বেশ বড় সাফল্য এল। হিন্দু রক্ষণশীল মাতব্বররা দারুণ উল্লসিত হয়ে এবার আর একটা আক্রমণ হানল। অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন-এর সভা তো আগেই কলেজের বাইরে চলে গেছে। কলেজে তখন শুধু রাধাকান্ত দেবের ধর্মসভার অধিবেশন বসে। এবার ফতোয়া এল, কলেজের ছেলেরা যেন কলেজের বাইরেও সেই সভার আলোচনায় যোগদান না করে। করলে তারা কলেজের কর্তাব্যক্তিদের “বিরাগ ভাজন” হবে। সেই মর্মে নোটিশও পড়ে গেল। কিন্তু ছেলেদের তাতেও নিরস্ত করা গেল না। ডিরোজিওর আকর্ষণ তখন শক্তিশালী চুম্বকের মতো কলকাতার নতুন আলোকপ্রাপ্ত ছাত্রদের টানছে। এই সব হুমকি আর ধমকির মাঝখানেই ১৮৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লবের সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে টাউন হলে কলকাতার কিছু ইউরোপীয় এক সভায় মিলিত হল এবং ভোজসভার আয়োজন করে ফেলল। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় দিনের সকালে কারা যেন (২৫ ডিসেম্বর) মনুমেন্টের মাথায় ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাকের পাশে ফরাসি ত্রিবর্ণ পতাকা লাগিয়ে দিল। আর দু মাস পরে, ১০ ফেব্রুয়ারি তারা ডেভিড হেয়ারের জন্মদিনে তাঁকে সম্বর্ধনা দিল এক বর্ণাঢ্য সভায়। সেই সভার পশ্চাত-উদ্যোক্তা সেই উজ্জ্বল চোখ সদা-হাসিমুখ বাদামি অ্যাংলো মাস্টার।
    না, আর ছাড়াছাড়ি নয়, এবার ওকে তাড়াতেই হবে। যেভাবেই হোক।
    এই ধরনের কাজের একটা বিশ্বজনীন কালজয়ী ছক আছে। সব দেশে সব কালেই তা মোটামুটি এক রকম। সে সোক্রাতেস বা জুলিয়াস সিজারকে হত্যার পরিকল্পনাই হোক আর ডিরোজিওকে তাড়ানোর মতলবই হোক। নিজেরা নানা রকম ঝামেলা পাকিয়ে তার জন্য ওকে দায়ী কর। বদনাম দাও, চরিত্রে কালি ছেটাও। সুনীতির ধুয়ো তোল, প্রতিষ্ঠান রক্ষার আওয়াজ ওঠাও। ব্যক্তি বড় না প্রতিষ্ঠান বড়, এই জাতীয় প্রশ্ন তুলে দাও। যারা একমত তারা প্রথমে একজোট হও, যাদের দ্বিমত আছে তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি কর, কিছু ব্যাপারে সন্দেহ ঢুকিয়ে দুর্বল করে দাও। তারা যদি কার্যকালে মন খুলে সমর্থন করতে নাও পারে, অন্তত বিরুদ্ধে যেন চলে না যায় দেখ।
    ১৮৩১ সালের সেই গ্রীষ্মে হিন্দু কলেজের পরিচালক মন্ডলি একেবারে এই ধ্রুপদী ছকেই এগোল। প্রিন্সিপ্যাল উইলসনকে জমিদার রাধাকান্ত দেব চিঠি দিয়ে জানালেন, তাঁরা কার্যকরী সমিতির জরুরি সভা ডাকতে চান। কারণও তিনি ব্যাখ্যা করলেন। তবে না করলেও চলত। উইলসন জানতেন এরা কে কী চায়। ২৩ এপ্রিল এক বিখ্যাত সভায় সকলে মিলিত হল।
    আর সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।
    তখনকার কার্যবিবরণীর খাতা থেকে জানা যায়, অধিকাংশ সভায় বহু সদস্যই অনুপস্থিত থাকত। অনেক সময় কোরাম দেখানোর জন্য সদস্যদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাতায় সই করিয়ে আনতে হত। সেদিন তা নয়, সকলে মানে সকলে। অন্য দিন অন্তত দু চারজন ভারতীয় সদস্য দেরি করে আসে। সেদিন কিন্তু কারোর দেরি হয়নি। সবাই একেবারে সময়মতো হাজির।
    প্রথম দিকে মাতব্বররা চেষ্টা করেছিল, ডিরোজিওর শিক্ষকতার গুণ ও মান, অর্থাৎ, শিক্ষক হিসাবে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিতে। সুবিধা হল না। প্রিন্সিপ্যাল, ডেভিড হেয়ার, আরও দু জন আপত্তি জানালেন। ডিরোজিও একজন আদর্শ শিক্ষক, কলেজের গর্ব। অন্য শিক্ষকের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তিনি তাঁর ক্লাশও বিনা ওজরে করে দেন। ছাত্ররা তাঁকে খুব ভালোবাসে। এক সদস্য, শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, কিছুদিন আগেও এই কলেজের ছাত্র ছিলেন, জানেন, ডিরোজিও শিক্ষক হিসাবে কেমন। তিনিও সরাসরি বিরোধিতা করলেন।
    অতঃপর অন্য চাল।
    উনি যা শেখাচ্ছেন আর তার ফলে ছাত্ররা বাড়ি ঘরে পরিবারে যা আচরণ করছে তাতে সাধারণভাবে কলকাতার সম্ভ্রান্ত হিন্দু সমাজে প্রবল বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগছে। অনেকে বলছে, তাদের ছেলেদের কলেজ থেকে তুলে নিয়ে যাবে। পকেট থেকে তারা বেশ কিছু অভিভাবকের সেই মর্মে লেখা চিঠিও বের করে সভায় পেশ করল। মূলত তিনটি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠছে বলে বলা হল। তিনি ছাত্রদের ঈশ্বরে অবিশ্বাস করতে শেখাচ্ছেন; বিভিন্ন ব্যাপারে বাবা-মায়ের কথা শুনে চলার বিরুদ্ধে তাদের উস্কানি দিচ্ছেন; তিনি ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ের সমর্থনে প্রচার করেন। খাতায় অবশ্য এসব লেখা হল না। কিন্তু এইবার সমস্যা হয়ে গেল। যারা এতক্ষণ ডিরোজিওর পক্ষে বলছিলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রশ্নে আর এগোতে সাহস পেলেন না। চুপচাপ হাত গুটিয়ে নিলেন। এই প্রশ্নও কেউ তুললেন না, যার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ, তার নিজের কথাও আমাদের শোনা উচিত। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। না, যুদ্ধে আবার ন্যায়নীতি কী? এটাও তো এক রকম যুদ্ধই। একজনের বিরুদ্ধে অনেকের। যে কোনো যুদ্ধেই সবল আক্রমণকারীই ঠিক করে কীভাবে সে যুদ্ধটা করবে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হল না। নয় জনের সভায় চার-শূন্য ভোটে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল। একেই আমরা বলেছিলাম, কলিযুগের এক অভিমন্যুবধ পালা।
    অঙ্কে মিলছে না? বেশ বুঝিয়ে দিচ্ছি। উইলসন আর ডেভিড সাহেবের কলেজের নিয়ম অনুযায়ী ভোটাধিকার নেই। বাকি সাত জনের মধ্যে তিনজন কোনো দিকেই ভোট দেয়নি। সুতরাং . . .
    আরও চমক বাকি আছে।
    কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সময় তার যোগ্যতা অথবা আবশ্যকতা দেখা হয়। আর, এখানে যে সিদ্ধান্ত হল তাতে লেখা রইল, “Resolved that the measure of Mr. Derozio’s removal be carried into effect with due consideration for his merits and services.”
    উইলসন তাঁর প্রিয় সহকর্মীর জন্য এইটুকুই করতে পেরেছিলেন। ডিরোজিওর চাকরি কেড়ে নিলেও তাঁকে কলেজের খাতায় শিক্ষক হিসাবে অসম্মানিত করা গেল না। তিনি পরদিন তাঁকে ডেকে নিজে থেকেই পদত্যাগ করতে বললেন। তাতে খানিকটা অন্তত সম্মান বাঁচবে। ২৫ এপ্রিল ডিরোজিও পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিলেন। উইলসন আবার একটা চিঠি লিখলেন ডিরোজিওকে। তাতে তিনি ডিরোজিওর বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে উত্থাপিত নৈতিক অভিযোগগুলি লিখে পাঠালেন। তার উত্তরে ২৬ এপ্রিল সকালে উইলসনের উদ্দেশে একটা ব্যক্তিগত চিঠি লিখে তাতে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত তিনটি অভিযোগের যে জবাব দিলেন তা যে কোনো যুগের যুক্তিবাদী আন্দোলনের পক্ষে এক মূল্যবান দলিল হিসাবে গণ্য হতে পারে।
    সেই দলিল থেকে দু চার কথা আমরা এখানে পরে পাঠ করব আমাদের বিদ্যাবুদ্ধিতে শান দেবার জন্য। আপাতত দেখে নেব, তিনি হিন্দু মাতব্বরদের চালটা কতটা ধরতে পেরেছিলেন। উইলসনকে লেখা চিঠির শেষ দিকে তিনি লিখলেন, “আমাকে একথা বলার জন্য মাফ করবেন, এই [পরিচালক]দের দৃঢ় লক্ষ্য ছিল আমাকে যেভাবেই হোক বিতাড়িত করা, আর সেটা বাইরে কাউকে খুশি করার জন্য নয়, তাঁদের নিজেদের অন্ধতাকেই প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আমার ধর্মবোধ এবং নৈতিক আচরণ খুঁটিয়ে বিচার করলে আমার বিরুদ্ধে বিচারসভা বসানোর কোনো সুযোগই থাকত না। এইজন্যই তাঁরা ভেবেছেন, তদন্ত করে সুবিধা হবে না, বরং মেজাজ দেখিয়ে রাগারাগি করে আমাকে কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়াই ভালো। যে নোংরা রাস্তায় কাজটা তাঁরা করেছেন, তাতে তাঁদের মূল উদ্দেশ্যটা স্পষ্টতই ধরা পড়ে গেছে; কেন না, মেজাজ হারিয়ে ফেলায় তাঁরা এমনকি সাধারণ সৌজন্যটুকু দেখাতেও ভুলে গেছেন।”
    অন্ধবুদ্ধির এটাই সমস্যা। তা শুধু জ্ঞানের প্রশ্নে যুক্তিতর্কের প্রশ্নে নয়, সৌজন্যের প্রশ্নেও মানুষকে অন্ধ করে রাখে। সেই কতকাল আগে সোক্রাতেস বলেছিলেন, “জ্ঞান আর নৈতিকতা অবিচ্ছেদ্য।” তাই যদি হয়, তবে তো তার উল্টোটাও সত্য—“অজ্ঞতা আর নীতিহীনতাও পরস্পর অবিভাজ্য।” হিন্দু কলেজের সেদিনকার ঘটনায় তারই একটা যেন লাইভ শো অভিনীত হয়েছিল।

    ।। ৫ ।।
    ডিরোজিও বেশিদিন বাঁচেননি। চাকরি খোয়ানোর আট মাসের মাথাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১। তখন তাঁর বয়স মাত্র বাইশ বছর আট মাস। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কলকাতার বুকে এক স্থায়ী স্পন্দন সৃষ্টি করে রেখে গেলেন। এবং সেটা শুধু তাঁর শিক্ষকতার গুণ-মান বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়। সে তো ছিলই। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তাঁর আরও বহুমুখী প্রতিভার নানা দিক। কবিত্ব, সাংবাদিকতা, সেখানেও তাঁর মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন। এবং তার মধ্যেও ছিল প্রখর যুক্তিবাদ, মানবতান্ত্রিকতা, বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি, আধুনিক জীবনবোধের আলোকদীপ্ত উদ্ভাস।
    সেও তাঁর ওই বাইশ বছর আট মাসের এক সংক্ষিপ্ত জীবনের দুচার প্যারাগ্রাফেই।
    এবার সেই প্রসঙ্গ।
    এই যুক্তিবাদের আলোকেই তাঁর চোখে ভারতবর্ষ হয়ে উঠেছিল তাঁরও স্বদেশ, দেশজননী। তাঁর কবিতায় সেই বাণী ফুটে উঠেছিল এক অনায়াস ভঙ্গিমায়, যা আপন অন্তরের অনুভূতি থেকেই একমাত্র উঠে আসা সম্ভব। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, সেকালে কলকাতার বিদেশিরা কেউ ভারতবর্ষকে স্বদেশ বা প্রিয় দেশ হিসাবে দেখেননি, দেখতে পারেননি বা দেখতে চাননি। তাঁদের ভারত নিয়ে লেখা কবিতায় ভারত ধরা পড়েছিল অতিথি অথবা শাসকের চোখে। অন্যদিকে, ১৮২৭ সালে, যখন এমনকি উচ্চশিক্ষিত বাঙালিরাও ব্রিটিশের অধীনে একটা মোটামুটি সম্মানজনক চাকরি পেলেই বর্তে যাচ্ছিল, যখন নবজাগরণের প্রথম প্রতিনিধি উচ্চশিক্ষিত ও বহু-অভিজ্ঞ রাজা রামমোহন রায়ের পক্ষেও ব্রিটিশ রাজের অধীনতায় সৌজন্যে ও বদান্যতায় ভারতের উন্নতির বাইরে আর কোনো উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের ছবি দেখা বা আঁকা সম্ভব হয়নি, সেই সময় প্রায়-কিশোর এই যুবকের পক্ষে কীভাবে আরও বেশি দূর দেখা সম্ভব হয়েছিল তা ভাবলে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। ইংরেজিতে লিখলেও ডিরোজিওই প্রথম কবি যিনি ভারতবর্ষকে তাঁর জন্মভূমি হিসাবে সাদরে ও সরবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন।
    ড্রামন্ডের স্কুল থেকে পাশ করে তিনি কিছুদিন ভাগলপুরে ছিলেন। সেখানে গঙ্গার ধারে বসেই তাঁর কবিপ্রতিভার স্ফূরণ হয়। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে এসে যে পত্রিকা প্রকাশ করেন (১৮২৬) তার নাম দেন ‘ইন্ডিয়া ম্যাগাজিন’। তার আগে ‘ইন্ডিয়া গেজেট’-এ তাঁর শিক্ষা বিষয়ক একটি প্রবন্ধ বেরয়। তাতে তিনি লেখেন, “I was born in India and have been bred here. I am proud to acknowledge my country and to do my best in her service.” এই অধিকারের জোরেই তিনি মুক্তবুদ্ধির অনুরোধে একই সঙ্গে ঘোষণা করেন, “Even love of country shall not hinder me from expressing what I believe to be right.” ১৮২৬ সালে তাঁর যে প্রথম কাব্যগ্রন্থ (Poems) বেরয় তার প্রথম কবিতার নাম ছিল ‘Harp of India’। আবার ‘জঙ্গিরার ফকির’ কাব্যেরও উৎসর্গপত্রে প্রদত্ত কবিতাটির নাম হল ‘To India, My Native Land’। এগুলিই ভারতীয়দের দ্বারা রচিত প্রথম স্বদেশপ্রেমের কবিতা। তাঁর মৃত্যুর পরে পরবর্তী দেশপ্রেমাত্মক কবিতার জন্য এই দেশ জননীকে অনেক দিন হাপিত্যেস করে বসে থাকতে হবে।
    একইভাবে, আমরা অবাক হয়ে যাই তাঁর পূর্বোক্ত গাথা-কাব্য (ballad) ‘জঙ্গিরার ফকির’ পাঠ করে বা তার সম্পর্কে শুনে। কাব্য গুণ? না, নিশ্চয়ই তা মধু কবি বা রবি ঠাকুরের ধারে কাছে আসে না। যদিও, আমার মতে, তাঁর সাথে পরবর্তী দিকপালদের তুলনা করা একটু কঠিন, কেন না, তিনি লিখেছেন ইংরেজিতে, বাংলাতে নয়; এবং পঞ্চাশ থেকে আশি বছর আগে; তা ছাড়া, বয়সের কথা তো মাথায় রাখতেই হয়। ডিরোজিওর শ্রেষ্ঠত্ব এই জায়গায় যে, প্রথমত, এর বিষয়বস্তু খুবই অভিনব। ১৮২৮ সালে বসে একজন যুবক দেখাতে চাইছে হিন্দু নারী ও মুসলমান পুরুষের মধ্যে সার্থক প্রেমের যথার্থতা। তদানীন্তন সমাজ বাস্তবে এই ছবি দেখতে না পেলেও কবির চোখে ছিল আকাঙ্ক্ষা, হয়ত একদিন এই স্বপ্ন সার্থক হবে। মানুষ মানুষকে তার ধর্ম ভাষা বা জাতি দিয়ে নয়, মনুষ্যত্ব দিয়ে বিচার করবে।
    দ্বিতীয়ত, এর মধ্যে আছে তৎকালীন হিন্দু সমাজের সতী বা সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে হৃদয় গুমড়ানো এক ব্যথার আভাস। কাব্যের নায়িকা নলিনী যখন বিধবা হয় তাকে ধরে নিয়ে আসা হয় সতী হতে, স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় “হাসিমুখে” অগ্নিমৃত্যু বরণ করতে। সেইখান থেকে ফকির তাকে উদ্ধার করে, শ্বশুর-পরিবার ও সমাজপতিদের হাত থেকে ছিনিয়ে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তাকে বিয়ে করে সে ঘোষণা করে, “আজ থেকে আমার আর কোনো ধর্ম বিশ্বাস নেই। আমি আর আল্লাহ নবী বা অন্য কোনো ঐশ্বরিক শক্তির কাছে প্রার্থনা জানাব না। আমার প্রেম শ্রদ্ধা ভালোবাসা সব শুধু তোমাকে ঘিরে।” কবির নিজের অননুকরণীয় ভাষায়,
    Henceforth I turn my willing knee
    From Allah, Prophet, Heaven to thee!
    হয়ত সাহিত্যের ছাত্ররা মনে করতে পারবে, এর সঙ্গে তুলনীয় মানবাত্মার জয়গানে মুখরিত আর এক বিশ্ববিশ্রুত রুশ সাহিত্যিক দস্তয়েভস্কির সৃষ্ট নায়কের বচন। সে তার প্রেমিকা, সমাজের পতিতা, এক নারীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করায় বিস্মিত সেই নারীকে বলেছিল, “This is not to you, Sonia; this is to the suffering humanity in you”। কিন্তু এই অসাধারণ বাক্যটি যে সুবিখ্যাত উপন্যাসের সংলাপ (Crime and Punishment), তা রচিত হবে আরও প্রায় চার দশক পরে (১৮৬৬), এটা মনে রাখলে এর মাহাত্ম্য আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে সক্ষম হব। আবার এও লক্ষ করতে হবে, কবি ডিরোজিও একই সঙ্গে এখানে বিধবা বিবাহের পক্ষেও সমর্থন জ্ঞাপন করতে চেয়েছিলেন।
    তৃতীয়ত, আমরা জানি, অনেক পরে অনেক ব্যাপারে উন্নততর আঙ্গিকে কাব্য সৃষ্টি করেও পরবর্তী প্রতিভাবানদের কারোর কলমেই হিন্দু সমাজের এই সব দুষ্ট ক্ষতের উপর আঁচড় পড়েনি। তাঁরা যা রচনা করেছেন তার মূল্য কোনোভাবে ঊন-জ্ঞান না করেও বলতে পারি, হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও নবজাগরণের কালের চেতনার নিরিখে এরকম কয়েকটি সূক্ষ্মতর বিন্দুতে আজও প্রথম, একক ও অনন্য আসনটিতে সমাসীন।
    বুদ্ধিমুক্তির সুবাদে প্রাপ্ত উচ্চতর চেতনার আলোকেই তিনি আরও কিছু ক্ষেত্রে অনন্য মানবতাবোধের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কলকাতায় তখন বেশ জাঁকজমক সহকারে দাস ব্যবসা চলছিল। কোনো রাখঢাক নয়। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দাসদাসী বেচাকেনা হত। বহু নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণও টাকা দিয়ে হাট থেকে দু-চারটে কিশোরী দাসী কিনে এনে সংসার ও শয্যা সেবার আয়োজন করত। তখন কিন্তু তাদের জাতঘাট স্পর্শদোষ বিচার করার প্রয়োজন হত না। বিভিন্ন সংবাদপত্রে এসব খবর মাঝে মাঝেই ফলাও করে ছাপা হত। ঊনবিংশ শতাব্দের শুরুতে যে সমাজ সংস্কার তথা ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, রাজা রামমোহন রায় যার পুরোধা, তাতে কখনও এই দাসবাণিজ্য নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারিত হয়নি। ডিরোজিওই প্রথম তাঁর এক কবিতায় এর বিরুদ্ধে সমকালের বিবেকে নাড়া দিলেন। লিখলেন,
    How felt he when first was told
    A slave he ceased to be,
    How proudly beat his heart, when first
    He knew that he was free! … ইত্যাদি।
    ডিরোজিওর সমর্থনে রামমোহনের কোনো প্রতিভাষণ নেই। কেন নেই তা এক অন্যতর গবেষণার বিষয়। তার মধ্যে কতটা রায়ের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা, আর কতটা তাঁর আন্দোলনের সীমারেখার সমস্যা, তার চুলচেরা বিচারের জায়গা এটা নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ করি, এই সদ্য যুবক রামমোহনের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে দ্বিধা করেন না। সতীদাহপ্রথা নিবারক আইন প্রবর্তিত হলে তিনি তাতে আনন্দ ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্ররা সেসময় অন্যান্য বিষয় নিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে তিনি তাদের শাসন করেন এই বলে, “কেন বাজে কথায় সময় নষ্ট করছ? জান না আজ কী শুভদিন?” তিনি নিজে মনের খুশিতে একখানা কবিতা লিখে ফেললেন, যাতে বললেন,
    Hark! Heard ye not? The widow’s wail is o’er,
    A rising spirit speaking peace to man.
    ‘জঙ্গিরার ফকির’ কাব্যে এক পাদটীকায় তিনি লেখেন, “ইউরোপে অনেকেই এরকম একটা বিভ্রান্তিতে ভোগে যে, যে হিন্দু বিধবা স্বামীর চিতায় পুড়ে মরতে যায়, সে খুব মহত্ত্ব ও ভক্তির জোরে কাজটা করে। মন তুষ্ট করা এই বিভ্রান্তি দূর করতে চাইলে তাতে বাহবা পাওয়া যাবে না, তবু যে তা করবে সত্যের খাতিরেই করবে। বাস্তব ঘটনা হল, উৎসাহ প্রদর্শন করা তো দূরের কথা, সতী এক চরম দুঃখজনক দৃশ্যের প্রতিমূর্তি, এবং যারা দেখে তাদের মধ্যে কুসংস্কার ও পুরোহিততন্ত্রের অত্যাচারের বিষাদময় ছবিই পরিদৃশ্যমান হয়ে ওঠে।” যাঁরা এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তাঁদের প্রতি সমর্থন জানিয়েও তিনি এক অসাধারণ সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন, “একদল মানুষ মানবপ্রেমিক দৃষ্টিতে সহমরণপ্রথা বিলোপের জন্য চেষ্টা করছেন; কিন্তু তাঁরা যেন এই অসুখী মহিলাদের বৈধব্যের জীবনে এক-আধটু সুখ শান্তি থাকে তা দেখেন, নাহলে সতীপ্রথার অবলুপ্তি তাদের জীবনে আশীর্বাদ না হয়ে তাদের বেঁচে থাকাকেই অসহনীয় দুঃখে ভরিয়ে তুলবে।” আবার পাঠককুলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এসব জরুরি কথা যিনি লিখছেন, তাঁর বয়স তখন মাত্র উনিশ বছর।
    কাব্য চর্চার পাশাপাশি ডিরোজিও সাংবাদিকতাও করেছেন। খুব কম বয়স থেকেই। ভাগলপুর থেকে কলকাতায় এসে তিনি কিছুদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে সহ-সম্পাদক (ইন্ডিয়া গেজেট) ও পরে সম্পাদক (হেসপেরাস) হিসাবে কাজ করেছেন। সেইসব কাগজে সম্পাদকীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। আবার তাঁর রচনায় অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণে তিনি সেই সম্পাদকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। একইভাবে হিন্দু কলেজের চাকরি চলে যাওয়ার পরেও তাঁকে দেখি একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করতে এবং অনেক দিন ধরে চালাতে। ১৮৩১ সালে একটি দৈনিক পত্রিকা চালাতে কী ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হত এবং সেই সব সমাধান করে যিনি পত্রিকাটি প্রায় এক বছর চালিয়েছিলেন তাঁর বয়স তখন কত তা আর একবার পাঠকদের মনে করতে বলি। কেন না মানুষটার মানসিকতা ও মনের জোর বুঝবার জন্য এইসব তথ্য খুব জরুরি উপাদান। স্বভাবতই এইসব পত্রপত্রিকায় তিনি কী ধরনের বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখতেন তা নিশ্চয়ই আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেকালে কলকাতার বুদ্ধিজীবী মহলে তিনি যে নিজের একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে ফেলতে পেরেছিলেন তার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তাঁর এই সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক ভূমিকা।
    তাঁর এই বহুমুখী সামাজিক ভূমিকা তাঁর ছাত্রদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল। তাঁর অনেক ছাত্রই পরবর্তী জীবনে সেদিনকার সমাজে নানা ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে গেছেন। এখানেও তিনি একক এবং অনন্য। রাজা রামমোহন রায় তাঁর ব্রাহ্ম আন্দোলনকে একটা সুসংহত সাংগঠনিক রূপ দিতে পেরেছিলেন, একথা সত্য। এই জন্যই তা ভারতীয় সমাজে একটা স্থায়ী ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল। এবং আজ একথা সকলেই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন যে ভারতীয় নবজাগরণের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে যার যাই বক্তব্য থাকুক, বা তা নিয়ে এদেশে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, তার মধ্যে নব্বই শতাংশ ব্যক্তিত্বই এসেছিলেন ব্রাহ্ম আন্দোলনের নানা সূত্র ধরে। এমনকি, একটু পরেই আমরা আর একজন যে মুক্তবুদ্ধির অগ্রগামী সেনাপতিকে জানতে চাইব সেই অক্ষয় কুমার দত্তও সেই আন্দোলনেরই এক অন্যতম সৃষ্টি। কিন্তু তবুও দুঃখের সাথে একথাও মেনে না নিয়ে উপায় নেই যে রামমোহনও এইরকম যোগ্য ও শক্তিশালী শিষ্যবাহিনী তৈরি করে যেতে পারেননি।
    রামতনু লাহিড়ী (১৮১৩-৯৮), কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮১৩-৮৫), রসিককৃষ্ণ মল্লিক (১৮১০-৫৮), রাধানাথ শিকদার (১৮১৩-৭০), রামগোপাল ঘোষ (১৮১৫-৬৮), কমবেশি সকলেই পরবর্তী জীবনে তাঁদের কৈশোরের গুরুর আদর্শকে বহন করে নিয়ে গিয়েছেন। আপস করেননি। মাঝপথে হাল ছেড়ে দেননি। কৃষ্ণমোহন ১৮৩১ সালেই একটি ইংরেজি পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন, নাম Enquirer। তার কিছু দিন পরেই রসিক কৃষ্ণ মল্লিক ও দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী বের করলেন ‘জ্ঞানান্বেষণ’ নামে আর একটি পত্রিকা। নামেই মালুম পত্রিকাগুলির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী হতে পারে। তাঁদের অনেকে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় স্কুল খুললেন। অভিভাবকদের সঙ্গে তাঁদের লড়াই অব্যাহত রইল। অন্যদিকে, রামমোহনের অধিকাংশ অনুরাগী রামমোহনের শিষ্যত্ব গ্রহণের অল্প দিনের মধ্যেই আপস করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রসন্ন কুমার ঠাকুর ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেও ১৮৩১ সালে বাড়িতে মহা ধূমধাম সহকারে দুর্গাপূজা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই বছরেই ব্রাহ্ম সভার মাঘোৎসব উদযাপন উপলক্ষে অসংখ্য দরিদ্র ব্রাহ্মণ বিদায় করা হয়েছিল। তাও সমস্ত ব্রাহ্মণকে সমানভাবে দক্ষিণা দেওয়া হয়নি। ব্রাহ্মণত্বের পদমর্যাদা অনুসারে কেউ পেয়েছে ১৬ টাকা, আবার কেউ ২ টাকা মাত্র। ডিরোজিও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই সমস্ত দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) মূর্তিপূজা বাদ দিয়ে হিন্দুয়ানির জাতিভেদ সহ সমস্ত আচারবিচার কুসংস্কার ব্রাহ্মমতের অন্তর্ভূক্ত করে ফেলেন। আরও পরে কেশব চন্দ্র সেন (১৮৩৮-৮৪) শেষ জীবনে পৌত্তলিকতার কাছেও আত্মসমর্পণ করে রামকৃষ্ণ (১৮৩৬-৮৬)-কে অবতার ঘোষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ভাগ্যিস সেই বিদ্রোহী ফিরিঙ্গি যুবকের চোখ তার অনেক আগেই মুদ্রিত হয়েছিল! অক্ষয় দত্ত বা প্রফুল্ল রায়ের মতো আজীবন আপসহীন চরিত্র ব্রাহ্ম আন্দোলনে বেশি হয়নি। সেই তুলনায় বাইশ বছরের পরমায়ুতে ডিরোজিওর শিষ্য-ভাগ্য ঈর্ষণীয়!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ আগস্ট ২০১৬ | ১৭৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 125.187.34.132 (*) | ২৩ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৫৮55729
  • খুব ভালো লাগছে এই সিরিজটা। মন দিয়ে পড়ছি। পরে প্রশ্ন করবো।
  • Ranjan Roy | 192.69.74.122 (*) | ২৩ আগস্ট ২০১৬ ০৮:২৬55730
  • একই কথা। এমন গভীরে গিয়ে তথ্য তুলে এনে সেগুলোকে সুচিন্তিত ভাবে সাজিয়ে লেখা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন