এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আনসোশাল মিডিয়া

    Soumit Deb লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০১৬ | ২০০৭ বার পঠিত
  • গলাবাজি করতে কে না ভালোবাসে? কে না ভালোবাসে যে তিনি বলবেন আর বাকিরা শুনবে। আরও ভালো হয় যদি তার বক্তব্য যারা শুনছেন তারা সক্কলে মিলে একবাক্যে সায়ও দিয়ে দিলেন। তার সাথে সাথে এ আপ্লুত সায়ও দিলেন যে-এই কথাটাই এদ্দিন আমিও বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারিনি, আহা আপনি যেন স্বাক্ষাত ফ্রয়েড।
    কার না ভালোলাগবে এইরকম একটা মাস সাপোর্ট পেয়ে গেলে তার বক্তব্যের সমর্থনে? বাস ট্রাম মেট্রোয় কারোর সাথে ঝামেলা লাগবার পর সহযাত্রীরা এগিয়ে আসেন আপনার হয়ে, তখন ভালো যে লাগেনা, নিজেকে যে বেশ একটা কেউকেটা বলে মনে হয়না, সেই গল্পখানা যে পরে সেকথা সব্বাইকে গর্ব করে বলেননা একথা বুকের বাঁদিকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা তো? আলবাত ভালো লাগে। একটা স্ট্রেস রিলিফ হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটে বা পাড়ায় সামনের লোকটার অবস্থান,বা গায়ের জোর, বা "ক্লাস" ইত্যাদি আর বাড়িতে প্রিয়জনের সংবেদনশীলতা ইত্যাদি মাথায় নিয়ে তবেই করে ঝামেলা করতে হয়। কিন্তু সোশাল মিডিয়াতে সে সবের বালাই কই? ফলতঃ সোশাল মিডিয়া আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে গালাগাল আখড়া।

    এই যেমন খুশি তেমন বলো কম্পিটিশনে সব্বাই হামলে পড়ে নিজের নিজের অবদমিত সত্ত্বাটা উজ়ার করে দেওয়ার জন্য। একজন হয়তো নিজের সপ্রতিভতার অভাব গোটা নারী/বা পুরুষ জাতের ওপর পুষে রেখেছেন। সামনসামনি বা বিপরীত লিঙ্গের মানুষটাকে এলিয়ান জ্ঞানে কথা বলবার আগেও বিষম খান। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় করলেন কি জ্বালাময়ী একখানা পোস্ট দিলেন হয় পুরষকেগুলোকে গুলি করে মারো বা নারীবাদ মানেই ভড়ং ইত্যাদি মর্মে। ব্যাস, তার উদ্দ্যেশ্যে তিনি সফল। এইবার পক্ষে পড়া কমেন্টে তিনি নিজের ইগো স্যাটিসফাই করবেন আর বিপক্ষে পড়া কমেন্টকে মনের সুখে গালাগাল করবেন। পোস্ট যিনি দিয়েছেন তিনি যদি নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হন তবে ব্রা, পিরিয়েড, প্যান্টি ইত্যাদি ট্যাবু মনে করা শব্দচয়ণে কথাবার্তা চালাতে থাকবেন, আর উল্টোটা হলে লিঙ্গ , বীর্য অক্ষম ইত্যাদি। বেশ কিছু মানুষ তাতে ক্রমাগত লাইক দিয়ে আর ফুট কেটে দু-পক্ষকে উৎসাহ দিয়েই মজা দেখতে থাকবেন। ভার্চুয়ালের বাস্তব প্রাপ্তি ঘটবে একেবারে হাতে নাতে।

    এ সমস্তই অত্যন্ত অসুস্থ মানসিকতার বিরক্তিকর প্রকাশ হলেও এর চাইতেও বেশি ক্ষতিকারক হলো উগ্র পক্ষপাতিত্ব। তর্ক হলো সভ্যতার সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট আবিষ্কার। তর্ক না থাকলে থেমে যেত সমস্তাটা। কিন্তু সোশাল মিডিয়াতে বর্তমানে তর্ক শেষ হয় উগ্র আক্রমনে। তুমি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমকে সম্মান করনো? করবেই বা কি করে, তোমার মায়ের তো আবার দুটো বিয়ে! যেই আমি দেখলাম আমি তর্ক আর যুক্তিতে পেরে উঠবোনা, ব্যাস অমনি উগ্রতার জয় হোক। যা মনে আসে টাইপ করে ফ্যালো, এন্টার মারো, । ক্রিকেট নিয়েই কথা বলা যাক। কিছুদিন আগের ধোনীর সেই ছবিটার কথা মনে আছে? মাথটা একটা বাংলাদেশি ক্রিকেটারের হাতে রাখা? ক্রিকেট দেখুক না দেখুক, ভারতে বসবাসকারী যে কোনো মানুষের ও ছবি দেখলে রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু এটা যে বানিয়েছে সে আসলে আর যাই হোক ক্রিকেট ভক্ত হতে পারেনা, সে শুধুমাত্র এই সুযোগে রাতারাতি কিছুটা নাম কিনে ফেলবার, একটু জনপ্রিয় হওয়ার, জন্য অতটা সময় দিয়ে ওইটা বানিয়েছে, ডেটা খরচা করে আপলোড করেছে, তার আর কোনো কারণ নেই। কিন্তু চিন্তার বিষয়টা হলো সে বুঝে গেছে সবচাইতে ভালো বিক্রি হয় আসলে উগ্রতা। সেটা জাতীয়তাবাদের নামে হোক অথবা ধর্মের বা নিছকই এক ক্রীড়াদলের সমর্থনের নামে। এতো আর এখন থেকে নয়, এ চলে আসছে সেই গ্ল্যাডিয়েটর আমল থেকে।

    এর ফলে হচ্ছে সাধারণের ভেতর ছড়িয়ে পড়ছে একটা কালেকটিভ উগ্রতা। ভারত বাংলাদেশ ম্যাচকে কেন্দ্র করে এই দুই দলের সমর্থকরা একে ওপরকে, বাকি সব্বাইকে অকথ্য গালাগাল করে। কেউ কেউ এই সুযোগটাকেই ব্যাবহার করছেন আবার তাদের ভেতরকার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে খোলাখুলি জায়গা করে দিতে। ভারতে থাকলে কি হবে আদপে তো মুসলিম অথবা হিন্দুগুলো চিরকাল এইকরম ইত্যাদি প্রভৃতি। এখন তো শুনেছি চোদ্দ বছরেই অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয় সোশাল মিডিয়ায়। সেই বয়েসী ধরে কেউ একজন নেও্য়া যাক দেখতে পেলো তার সিনিয়ররা মনের সুখে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী গালাগালে চারপাশ ভরে তুলছে আর সেইটাকেই বাদবাকি সব্বাই বাহ বাহ রবে মাথায় তুলছে, তবে তার ওপর প্রভাবটা কি পড়লো? সে কি অজান্তেই হয়ে পড়লো সেই কালেক্টিভ ঘেন্নাবৃত্তির অংশ? না, হয়ে পড়লো বলা ভুল, করে ফেলা হলো বলা যেতে পারে। আর করলো কারা না যাদের এই সমস্ত কিছুর সাথে কোনো লেনদেন নেই। যাদের লক্ষ কেবল একটাই, পেয়েছি সুযোগ বাড়াবো লাইক, যেটা যেন তেন গালাগালেন। কি করবে বড়জোড় রিপোর্ট করবে, আর সেটা যদি করে তবে তো আর কোনো অসুবিধেই রইলো না জনপ্রিয় হওয়ার পথে।

    এই সহজে জনপ্রিয়তাই আসলে সবচাইতে বেশি ইনটক্সিকেটিং। রেকগনাইজ়ড হওয়ার একটা তুমুল প্রচেষ্টা। পাঁচটা মানুষের মধ্যে আলাদা একটা জায়গা করে নেওয়ার, একটা রেপুটেশনের লোভ। আগেই বলেছি সবচাইতে বড় চিন্তার বিষয়টা হলো এঁরা কিভাবে যেন বুঝে গ্যাছেনতার সবচাইতে সহজতম পথ উগ্রতা কারণ সাধারন মানুষের তলিয়ে ভাবার সময় নেই। ফলস্বরূপ একটা তীব্র ঘেন্না জনপ্রিয়তার পোষাকে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে কোনরকম ভয়ডর ছাড়াই। আর সেটার আকর্ষনে আসল জিনিসটা ক্যামন যেন হারিয়ে যাচ্ছে, কেউ জানতেই পারছেনা যে সে জানতেই পারছেনা। একটা মানুষের ব্যক্তিগত অবস্থান বা পছন্দ আমার পছন্দ না হলেই আমি তার শিল্পী সত্তাকেও গালাগাল করবার অধিকার পেয়ে গেলাম এই ধারণাটাও ওই কালেকটিভ বিদ্বেষেরই ক্রমাগত প্র্যাক্টিসে একরকম আয়ত্ত হয়ে গ্যাছে। সাথে জনপ্রিয়তা ফ্রী পেলে তো কথাই নেই।

    এই প্রবণতা এখন যে পর্যায়ে গ্যাছে তাতে জনপ্রিয় হতে গিয়ে, নিজেকে একটা কেউকেটা ভেবে ফেলে আসলে মানুষ ভাবছে পক্ষ নিচ্ছি কিন্তু নিতে নিতে তা হয়ে উঠছে অন্ধ পক্ষপাতিত্ব। যার সাথে আসল বিষয়ের যোগসুত্র প্রায় নেই বললেই চলে। এই যেমন আমিও বহুবার না তলিয়ে ভেবেই, না কিছু বুঝে শুনেই মুর্খতায় উত্তেজিত হয়ে গালাগাল করে ফেলেছি তর্ক করতে করতে, অকারণে, এমনিই, রেগে ইত্যাদি। আসল সমস্যাটা হচ্ছে এই কাজগুলো আমি আবারো করবো বা করে ফেলোবো, নিজের অজান্তেই। কারণ সেই প্র্যাকটিস বহুদিনের। গ্ল্যাডিয়েটর ফাইট দেখে লোকে মজা পাচ্ছে কমদিন তো আর হলোনা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০১৬ | ২০০৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    Lookআচুপি - Soumit Deb
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গৌতম মিস্ত্রী | 11.39.36.202 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৮:৫৫56030
  • এর উল্টোটাও সম্ভব। প্রথমেই নিজের আডেন্টিটি ক্রাইসিস এর গন্ডির বাইরে বেরোতে হবে। বিতর্কের জন্য নিজেকে সমৃদ্ধ করার এমন সোস্যাল মাধ্যম আর হয় না। আসলে নিজের অবস্থানের স্থবিরতা কাটিয়ে কিছু নুতন কিছু ভাবা কিছু নুতন পন্থার সন্ধান খোঁজার খিদে থাকলে বড় আনন্দের পরিসর এই সোস্যাল মাধ্যম। এতো নিজেকেই আবিষ্কার করা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন