এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কোলাজ কলকাতা ৬, পাড়ার নাটক

    Soumit Deb লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৩ অক্টোবর ২০১৫ | ১৬৪১ বার পঠিত
  • পৃথিবীর একমাত্র অডিও ভিস্যুয়াল মিডিয়াম যেটায় সিন আর বিহাইন্ড দা সিন দুটোই অডিয়েন্স একসাথে দেখতে পায় আর উপভোগ করে।

    অন্যভাবে বলাযায় ভুল ও ভুলে যাওয়ার গল্প যে কলায় সবচাইতে মনোগ্রাহী উপাদান তাকে বলে হয় পাড়ার নাটক।

    পাড়ার নাটক পাড়ার বিভেদ গুলো ধুয়েমুছে গোটা বিষয়টাকে ডোভার লেনের মত সিরিয়াস করে দেয়। যে মেয়েটাকে দিনে দুবার দেখতে পাওয়ার দুর্লভ সুযোগে চন্দ্রবিন্দু ধরা এবার তারই হাত ধরে ডায়াগল মনে রেখে আবার থ্রো! ইয়ার্কি? তা ওপর জাত খচ্চর বন্ধুকুল।সালারা দাঁড়িয়ে থাকবে উংয়ের সামনে। চোখচুখি হলে হাসি না পেলেও হাসবে আর…থাক। বরং স্টেপ গুলোতে আসা যাক। তিন স্টেপে পাড়ার নাটক মঞ্চস্থ হয়।

    স্টেপ একঃ সিলেকশনঃ

    সংঘের জ্যাঠুদের সাথে তরুনদের একটা ফ্রন্টেয়ারের পর মাঝারী বয়সের কাকুরা তরুন লিডার কে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে বলে বড় হয়ে গেছিস বাক্যে সিগারেট আর লজ্জা অফার করে বাকশুন্য করে দিয়ে নিজেদের পছন্দের নাটকটা বাছিয়ে নেন। পাড়ায় যে ভদ্রলোক বিশেষ বেরোন না, টুর্নামেন্টে আপাম্পায় হন, বসে আঁকোর জাজ তাকে ঠিক করা হয় ডিরেক্টর। কারন কস্মিনকালে কেউ কখনও তার অভিনয় না দেখে থাকলেও সব্বাই জানে এককালে ওনার নামে টিকিট বিক্রি হত। নোংরামি টা নিতে পারেন নি বলে সওব ছেড়ে ছুড়ে দিয়েছেন।

    হাসির নাটক ছাড়া পাড়ায় জমেনা অতএব পোস্টারে নোটিশ বোর্ডে দেওয়ালে সব্বার আগে “দমফাটা” লেখা হয়ে যায়। অভিনেতা সিলেকশটা তাই অন্যরকম। যে কোনো খেলাধুলায় ভালো না সে দারুন অভিনয় করে তাই লিড, যে ভালো ব্যাট করে সে পাড়ার দাদা, যার চেহারা সবচাইতে খারাপ তাকে সেই দাদার একটা হম্বি-তম্বিওয়ালা সাকরেদের রোল দেওয়া দেওয়া হয় যে অকারনে গোটা নাটক জুড়ে হাতা গোটায়। যে সমচাইতে বেসি হাসাতে পারে সে চাকর। পাড়ার সেকেন্ড সুন্দরী নায়িকা। কারন প্রথম সুন্দরীর সামনে পরীক্ষা আর নাচ ও করছে তাই তাকে পাওয়া যায়না। বাকি চরিত্র গুলোও ওই পদ্ধতি অনুসারেই।

    স্টেপ দুইঃ রিহার্সালঃ

    এলিয়েন লুকিয়ে রাখার জায়গাটাতেও বোধহয় এত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়না যতটা পাড়ার নাটকের রিহার্সালের ক্ষেত্রে হয়। ধমকানো যায় এরকম হাফ-প্যান্ট ফ্রক থেকে শুরু করে সংঘ-ঠিত নিচের তলারা (যারা পাড়া টুর্নামেন্টে বলবয়, ক্যারামে চান্স পায়না)। কাউকে জানতে দেওয়া হয়না ভেতরে ঠিক কি চলছে (কাউস্নিলার হলে অন্য কথা)। যদি কোনো কিশোর চরম ভাগ্যবশত একদিন সিঙ্গাড়া এনে দেওয়ার সুযোগ পেলো তো ব্যাস, সেইদিনটায় গোটা দুনিয়াটা শুধু তার।

    ভেতরে অন্য জিনিস। যে সবচাইতে ছোট রোল পেয়েছে সে সব্বার আগে সমস্তটা মুখস্থ করে ফেলে নীরব প্রতিবাদে জানিয়ে দেয় তার কদর কেউ করলো কেউ করলো না। বয়সে যে সবচেয়ে ছোট সে আসে সব্বার আগে আর নায়িকা সব্বার পর। হাসির সিনে সব্বাই হেসে ফ্যালে। কিছুতেই পারফেক্ট হয়না। আর যার ডায়ালগে সব্বাই হাসে যে অসম্ভব কনিফিডেন্সে মুখটা নিরীহ করে বলে “হয়েনি”? একথা সেকথায় ডিরেক্টরের “আমরা যখন…” ঘটনাবলী মনে পড়ে যায়। তারপর তাঁর স্মৃতিচারনায়, দাপুটে কিংবদন্তীদের সাথে তার সখ্যতার গল্পে, কিভাবে ম্যানেজ দিয়েছিলেন সেই ডায়ালগে, আর সব ছেড়েছুড়ে দেওয়ার আত্মত্যাগে সক্কলে হাঃ মুগ্ধ হয়ে যায়।

    এমনিতেই মেয়েদের নাচের রিহার্সালের পর নাটকের ক্লাবঘর পাওয়ার যায়, তারপর এই সমস্ত ঘটনা প্রবাহ, চা-মুড়ি, যাতে মুড়ি না পড়ে থাকে তাই সিঙ্গাড়া গুলো দিয়েই মুড়িটা মেখে ফেলার জিনিয়াস আইডিয়া, সেগুলো থেকেও শুধু সিঙ্গাড়া টুকরো বেছে খেয়ে নেওয়ার সুপার জিনিয়াস টেকনিক, ও কিন্তু দারুন গান ও করে অনুরোধে নায়িকার প্রায় পায়ে পড়া, তারপর তার কয়েকদিন ধরেই ভেঙ্গে থাকা গলাতেই নিখুঁত সুরে তব অসীমে শুনে তাজ্জব বনে যেতে যেতেই রাত হয়ে হয়ে যায়। ফলে রিহার্সালে আর কিছু না হোক নিখাত আনন্দ হইতে কেউই বঞ্চিত হয়না।

    স্টেপ দিন মঞ্ছস্থঃ

    টেনশন একদম তুঙ্গে। স্টেজ রিহার্সালে করা সমস্ত ভুল রিপিট না করার জন্য সবচাইতে বেশি করে সেগুলো মনে রাখা, বাড় বার আউড়ানো এসসস্ত তো আছেই। এরপর দু-এক জনের কস্টিউম পাওয়া যাচ্ছেনা। যেটা বলা হয়েছে ধুতি নিয়ে এসেছে থান। ডিরেক্টরের সাথে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছে না। কিচ্ছু না করেও সবচাইতে বেশি বকুনি খাচ্ছে সবচাইতে কমবয়েসী যে সে। কোনো রকমে সমস্ত কিছু মেক-আপ দিয়ে দিয়ে মেকাপ। ডিরেক্টর ভদ্রলোকের বন্ধু। সব্বাই প্লাস্টিকে চা খাচ্ছে উনি কাপে। অভিনেতারা নিজেরাই অবাক ঘেমে যাচ্ছে নিজেদের দেখে।

    সব নাচ শেষ। সব্বার মা কাকিমা এক্কেবারে ফ্রন্টে। যারা এই নাটকের তুমুল্ল বিরোধতা করেছিলো তারাও উইংয়ে এসে একবারে মন থেকে বলছে “একদম ঘাবড়াস নি বাবা, খুব ভালো হবে”। যতই বকা-ঝকা করুন নিজের ছেলে পাঠ করছ দেখতে সমস্ত গম্ভীর বাবা-রা একটু দূরে বিকেকানন্দ পোসে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর “এবার অনুষ্ঠানের জন্য এতক্ষন সব্বাই অপেক্ষা করছেন, নাটক…অংশগ্রহনে…আলো নিবে যায়। প্রথমে ভুল তারপরে ঠিক ট্র্যাক চালিয়ে দেওয়া হয়, এবার মঞ্চ আলো করে যেই, যেইইইই আসুক, তাকে ওই পোষাকে দেখে হাসির হুল্লোড়ে নাটক শুরু, আর একাবারে বুক বাঁ দিক থেকে দেওয়ার হাততালির শব্দে শেষ হয় সে বছরের পাড়ার নাটক

    কার্টেন কলটা জাস্ট নিমিত্ত। এই সাফল্যে ডিরেক্টর পিকনিক ঘোষনা করেন যেটা কোনোদিন হয়না কারন কেউ একসাথে সময় বের করতে পারেনা। দেখা যায় ওপর আশা ছিলোনা সে মেরে বেরিয়ে গেছে। চাকরের অভিনয় সবচাইতে ভালো হয়। নায়িকে অভিনন্দন জানায় না এরকম পুরুষ পাড়ায় নেই। আড্ডা হুল্লোড়, প্রম্পটারের শব্দ ডায়ালগের আগে ভেসে আসার মজা, কয়েকটা দিন পাড়ায় হীরো হয়ে ঘোরার গ্যারান্টি, বাচ্চাটার মন খারাপ, এবার থেকে আব্র সন্ধাবেলা পড়তে বসতে হবে, দাদা-দের বকুনি দিদিদের আদর আবার সেই সামনের বছর। এই সমস্ত কিছুর মনে সামিল করে সব্বাই বাড়ি চলে যায়। পড়ে থাকে শুধু মঞ্চটা। মন মেলে চাইলে দ্যখা যাবে ডিরেক্টর ভদ্রলোক শেখাচ্ছেন কি করে চিল চিৎকার মাইক ধরতে হয়, আলো দিতে হয় আর দর্শক কে পেছন দ্যাখাতে নেই। কারন দা শো মাস্ট গো অন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৩ অক্টোবর ২০১৫ | ১৬৪১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    Lookআচুপি - Soumit Deb
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 116.51.29.1 (*) | ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৫70096
  • বাঃ।

    হুবহু একই "পাড়ার নাটক" - চলে সবার পাড়ার। পড়লেই মনে হয় ,আরেঃ, এ তো আমাদের পাড়ার কথাটাই লিখেছে।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৫:৪৮70097
  • '
    পৃথিবীর একমাত্র অডিও ভিস্যুয়াল মিডিয়াম যেটায় সিন আর বিহাইন্ড দা সিন দুটোই অডিয়েন্স একসাথে দেখতে পায় আর উপভোগ করে।

    অন্যভাবে বলাযায় ভুল ও ভুলে যাওয়ার গল্প যে কলায় সবচাইতে মনোগ্রাহী উপাদান তাকে বলে হয় পাড়ার নাটক।'

    ঃ)

    তবে বহু পাড়ায়, হাউসিং এই কিন্তু ছেলেদের আর মেয়েদের নাটক আলাদা হয়। কাকিমা, কাকুদেরও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন