এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মধ্যপ্রপদেশ

    Rupankar Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ মার্চ ২০১৪ | ১৬৪৭ বার পঠিত


  • আজ থেকে তেত্রিশ চৌত্রিশ বছর আগে উমেরিয়ার একটা লোক আমার মাথায় মধ্যপ্রদেশ ঢুকিয়ে দিয়েছিল আর বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভালবাসা। লোকটার নাম জানিনা, সে একজন ময়রা, অবশ্য মধ্যপ্রদেশের মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের ‘ময়রা’ বলে কিনা আমার জানা নেই।

    আমাদের বাংলার নিখুঁতি টাইপের একটা মিষ্টি খেয়েছিলাম তার দোকানে। খুব ভাল লেগেছিল। ভাবলাম জঙ্গল টঙ্গলে খাবার জিনিষ পাওয়া যাবেনা, কিলো খানেক মিষ্টিই নিয়ে যাই বরং। বললাম এটা এক কিলো দিন তো, আরও অন্য কিছু থাকলে তাও দিয়ে দিন এক কিলো করে। ময়রাবাবু বললেন, তা দিচ্ছি, কিন্তু এত কী হবে? বোঝো কান্ড, তোমার দোকানে বিক্কিরি হবে সেটাই তো বড় কথা। কী দিয়ে কী হবে তা জানবার প্রয়োজন আছে, তোমার? আমি বললাম, আমরা জঙ্গলে যাচ্ছি তো, ওখানে খাবার জিনিষ নিশ্চয় পাবনা, তা এতগুলো লোক, খাবার দাবার লাগবে তো, নাকি? মিষ্টিওয়ালা বলল, জঙ্গলে, কোন জঙ্গলে? আমি বললাম, বান্ধবগড়। প্রসঙ্গতঃ সে সময়ে এম পি ট্যুরিজম দপ্তরটাই ছিলনা। আর বান্ধবগড় বলে যে একটা জঙ্গল আছে ভারতবর্ষে, তা খুব কম লোক জানত।

    দোকানদার বলল, সেকি, বান্ধবগড় যাচ্ছেন এখান থেকে মিষ্টি নিয়ে? ওখানে তো দারুণ মিষ্টি পাবেন আর এখান থেকে অনেক সস্তাও। জঙ্গলের মধ্যে মিষ্টি কোত্থেকে আসবে সে প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়াল অন্য একটি প্রশ্ন। এক দোকানদার, যাঁর খদ্দের মোটামুটি গ্রাম্য গরীবগুর্বো মানুষজন, তিনি বেশ ভারি অঙ্কের বিক্কিরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন এবং খদ্দেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন অন্য জায়গা থেকে খরিদদারি করার। না, আমি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছি অনেক। এমন কান্ড কোথাও দেখিনি।

    এক সময়ে মানুষ প্রেমে পড়ত। এখনও শুনি পড়ে, তবে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখি বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন ফিউচার প্ল্যানিং অথবা বায়োলজিকাল ইকনমিক্স। যে সময়ে লোকে সত্যি প্রেমে পড়ত, তখন শোনা যেত কোনও নারী বা পুরুষের কোনও বিশেষ একটি গুণে মুগ্ধ হয়ে অপরজন তার সঙ্গে আজীবন বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। আমারও তাই হ’ল। এমন মানুষ যেখানে পাওয়া যায়, সেই যায়গার প্রেমে পড়ে গেলাম। অসংখ্যবার গেছি এই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে ঢেলে দিয়েছে তার সম্পদরাজি, ইতিহাস উঁকি মারছে পাহাড়ের খাঁজ আর গাছের কোটর থেকে, বন্য আমেজে শিল্প বইছে এক অন্য অকৃত্তিম ধারায় কিন্তু এ সবের ওপরেও আছে এক অমোঘ আকর্ষণ তা ব্যাখ্যা করা আমার সাধ্যের বাইরে। যদিও নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা গ্রাস করে ফেলেছে সেই মুগ্ধতার অনেকটাই, মানুষও বদলে গেছে অনেক, তবু প্রথম প্রেম কি ভোলা যায়? তাই ছুটে যাই বার বার।

    অশরীরি নিবাস

    মাসকয়েক আগে টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজে বেরোল এক খবর। দামোহ্‌ এর সরকারি সার্কিট হাউস বাংলোয় নাকি ভূতের রাজত্ব। একটি রঙীন ছবিও ছাপা হ’ল সেই বাড়ির। লেখা ছিল অনেক কিছুই, সব এখন মনেও নেই, কিন্তু একটা কথা বিশেষ করে লেখা ছিল, তা হ’ল, একা কেউ রাত্রিবাস করেনা সেখানে। করলে ‘অনাথবাবু’-র মত অবস্থা হয় কিনা তা অবশ্য লেখেনি সেই প্রতিবেদনে।

    কয়েক বছর ধরেই জাতীয় পক্ষী দিবস উপলক্ষে পক্ষী প্রেমিকরা একত্রিত হন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। পশ্চিম বাংলার পক্ষীপ্রেমীদের সঙ্গে আমার তেমন পরিচয় নেই আর যাঁদের সঙ্গে আছে, তাঁদের সামনে আমার কৌলীন্যহীন ‘গিয়ার’ নিয়ে দাঁড়াতে সংকোচ হয়। ওখানে কিন্তু অ্যাপারথাইড ব্যাপারটা একদমই নেই, মানুষকে বুকে টেনে নিতে ওঁরা বড়ই আগ্রহী। তাই প্রতিবারই যাই ওই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অজানা পাখির খোঁজে। এবার যখন ডাঃ জগ্‌দীশ জটিয়া (না উনি ডাক্তার নন, পি এচ ডি) সাদর আমন্ত্রণ জানালেন দামোহ্‌ গিয়ে পক্ষীদিবস পালন করার, আমি একপায়ে দাঁড়িয়ে গেলাম সোৎসাহে।

    টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজে খবরটা দিয়েছিল খুব জব্বর সময়ে, মানে যে সময়ে আমি ট্রেনের রিসার্ভেশনের দরখাস্ত করছি। আমি ব্যাপারটা কাগজে পড়েই জটিয়া সাহেবকে ফোন লাগালাম। বললাম, দেখুন আপনাদের সার্কিট হাউস সম্বন্ধে কী সব লিখেছে কাগজে। দয়া করে ওই বাড়িতে আমার থাকার বন্দোবস্ত করবেন না যেন। ভূত অবশ্য আমার দেখা আছে, বেচারিরা কোনও ক্ষতিই করেনা তবু মানুষ মিছিমিছি ভয় পায়। কিন্তু একটা অস্বস্তি তো মনের মধ্যে থেকেই যায়। রাত্তিরে ভাল ঘুম টুম হবেনা, তার চেয়ে বরং আপনি অন্য কোনও অতিথিশালা দেখুন। জঙ্গলের মধ্যে বা কাছে হলে ভাল হয়।

    (লেখাটি কিছুদিন চলবে)





    ভূত কি কম পড়িয়াছে?

    সেটা উনিশশো বিরাশি সাল হবে বোধহয়, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে খাজুরাহো গেছি। তখন ওখানে এমন সারি দিয়ে হোটেল ছিলনা, মন্দিরের চত্বরেও প্রবেশ ছিল অবাধ। ওয়েস্টার্ন গ্রুপের পাঁচিলটা শেষ হওয়ার কিছু পরে ডান দিকে রাস্তা থেকে নেমে যেতে হত বেশ খানিকটা। ঝোপ জঙ্গল পেরিয়ে বেশ খানিকটা যেতেই কিছুটা ফাঁকা যায়গায় ছিল ‘রাহিল’ হোটেল, যদিও আমরা নাম দিয়েছিলাম ‘কাহিল’ হোটেল। সেটি সম্ভবতঃ সরকারি পরিচালনায় চলত। এখন মন্দির চত্বরের উল্টো দিকের রাস্তায়, ডান দিকে, বাঁ দিকে অজস্র হোটেল, তবু নেটে সার্চ করলে রাহিল হোটেলের নাম পাওয়া যায়, সেটি বোধহয় আছে এখনও। এর পরেও বহুবার গেছি খাজুরাহো কিন্তু কাহিল, থুড়ি, রাহিল হোটেলে ওঠা হয়নি আর।

    আমি খাজুরাহো গেছিলাম একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। যদিও তখন কম বয়স কিন্তু আমি ইরোটিকা দেখতে যাইনি ওখানে। ভারতময় ইরোটিকা দেখে দেখে চোখ পচে গেছিল অনেক আগেই। আমি গেছিলাম এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে, সেকথা সুযোগ পেলে লেখা যাবে পরে। এখনও আমি প্রায় প্রতি বছরই খাজুরাহো যাই। একই দিনে তিন চার বার টিকিট কিনে একই মন্দির চত্বরে ঢুকছি খেয়াল করে এক বাচ্চা সিকিওরিটি হাসি হাসি মুখ করে জিজ্ঞেস করল, আঙ্কল, ইয়ে সব মন্দির মে অ্যায়সা কেয়া রখ্‌খা হ্যায় যো আপ ইতনি বার আতে হ্যাঁয়? তার চোখে ছিল রগড়ের ঝলক। বুড়োটার এই বয়সেও এত ‘ইয়ে’ – আমি তার দুই কাঁধে দুই হাত রাখলাম, বেটা ইয়াহাঁ অ্যাইসা কুছ রখ্‌খা হ্যায়, যো তেরি ইতনি ছোটিসি খোপড়িমে নহীঁ আয়েগা। তু ইস বুঢঢেকা আইয়াশি পর হসতে রহ যা পরন্তু টিকেট ফাড় কর মুঝে যানে দে।

    যাই হোক, সঙ্গীরা গেছে মন্দির দেখতে আর আমি গেছি এক রিক্‌সো ভাড়া করে আমার ‘কাজে’। ফিরতে ফিরতে সন্ধে। এবার ওই হোটেলের দোতলায়, আমরা যেখানে ছিলাম, সেই জায়গাটা বেশ অদ্ভুত টাইপ, অনেকটা বুমেরাঙের মত বিন্যাস, পুরো নব্বই ডিগ্রী নয়, কোনাটা একটু গোলচে। এবার বুমেরাঙের দুই বাহুতে দুটো ঘরে আমরা। ডান দিকেরটায় আমি আর সলিল, বাঁ দিকের শেষ মাথায় একটা বড় ঘরে আর সবাই। একটা প্যাসেজ দিয়ে যাতায়াত। সেই প্যাসেজের ওদিকের দেয়ালটা নিরেট, শুধু এক দিকেই ঘরগুলো। প্যাসেজের ঠিক মাঝখানে, অর্থাৎ বুমেরাঙের গোল কোনাটায় ওপরে ওঠবার সিঁড়ি। তার মানে, সিঁড়ির ডান দিকের শেষ ঘরটায় আমরা দুজন আর বাঁদিকের একেবারে শেষ ঘরটায় দেবুদারা। মাঝখানে অন্য ঘর থাকলেও সেগুলো বন্ধ।

    সারাদিন বহুবার ওই প্যাসেজ দিয়ে যাতায়াত হয়েছে। সিঁড়ি আছে, ব্যাস এই পর্যন্তই। পেরিফেরাল ভিশনে সিঁড়িটা চোখে পড়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের দলের কেউই ভাল করে সেদিকে তাকায়নি, তাকাবার প্রয়োজন হয়নি। সেদিন রাত্রে বাঁদিকের ঘরে আসর বসেছে। তাস টাস খেলা হচ্ছে, একটা বাচ্চা ছেলে ছিল, বোধহয় সুপ্রকাশ। সে ছাড়া সবাই বোতল টোতলও খুলে ফেলেছে। আমি ও জিনিষটায় খুব একটা স্বাদ পাইনা। লোকে বলে খুব মস্তি হয়, দু-একবার খেয়ে দেখেছি, কিচ্ছু হয়না। পাশের জন মাতাল হয়ে ভুল বকছে, আমার দেখি কিছুই হচ্ছেনা, শুধু বেশি খেলে ঘুম পায়। তাই আমি আর একদমই খাইনা ওসব। সলিল আমার রুম মেট, সেও ড্রাই, বলল, চলুন এখানে থেকে লাভ নেই আমরা ঘরে যাই। একটু নজরুল গীতি শোনান তো, অনেকদিন আপনার গান শুনিনি।

    - ‘বসিয়া বিজনে কেন একা মনে, পানিয়া ভরণে চল লো গোরি’ এই গানটা শুরু করেই মনে হল, আরে জল ভরা হয়নি তো। ওপরে জল ভরার কোনও জায়গা নেই, নীচে কিচেনে যেতে হবে। দেখি ওদের ঘরে দু একটা বোতল পাওয়া যায় কিনা। সলিল বলল, আপনি বসুন না, বেশ গাইছিলেন, আমি যাচ্ছি। আমি বললাম, নাঃ তুই বস। তুই চলে গেলে গান কি দেয়াল শুনবে? আমিই যাই, উঠে পড়েছি যখন। প্যাসেজের ছাদে লাগানো গত্তের মধ্যে দু খানা টিমটিমে আলো, সিঁড়ির মাথাতেও একটা আছে বোধ হয়, ওইটুকু আলোতে অন্ধকারকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। আমি ঘর থেকে বেশ খানিকটা হেঁটে বুমেরাঙের মোড়ে পৌঁছলাম। এবার ডান দিকে বাঁক নিয়ে ওদের ঘরের দিকে যেতে হবে। এখান থেকে আমাদের ঘরটাও দেখা যাচ্ছেনা, ওদেরটাও না। বেশ একটা ‘ইয়ে’ মতন পরিবেশ। হঠাৎ মনে হ’ল, সিঁড়িতে কিছু একটা আছে।

    আমার এই ব্যাপারটা প্রায়ই হয়। এমন অনেক ঘটনা লিখে রেখেছি আমার ‘ধানাই পানাই’ নামে বইটাতে। সারা দিন তো কতবার গেছি ও পথে। কোনওবার সিঁড়ির দিকে তাকাবার কথা ভাবিইনি, শুধু আমি না, দলের কেউই। কেউ যে ওদিকে তাকায়নি, তা পরে জেনেছিলাম। প্রায়ান্ধকার প্যাসেজে আমি একা। দুদিকের কোনও ঘর দেখা যাচ্ছেনা। মনে হ’ল, সিঁড়িতে কেউ আছে। আমি সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম ওপরে।

    ওপরে একটা ছবি আছে, আমারই তোলা, সেই সিঁড়ির ছবি......

    (চলবে)




    রাহিল হোটেলের সিঁড়ি

    সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে মেঝেতে আটকে গেছে পা, বুকের ধুকপুকি ধুনুরিদের তোষক পেটানোর মতন আওয়াজ করছে, গলার কাছে কী একটা লাফিয়ে উঠে আটকে আছে কণ্ঠনালীতে। তারপর...? এক দু সেকেন্ড পরে ঠাওর হ’ল, সিঁড়িতে যে আছে, সে এখনও আমায় আক্রমণ করেনি। কেন করেনি? আমি আবার বিপদে পড়লেই ভুলভাল নানারকম কথা ভাবতে থাকি, আমার ছোটবেলা থেকে অভ্যেস। হঠাৎ মনে হ’ল, যে আছে, সে মানুষ, না ভুত? যদি মানুষ হয়, নড়ছেনা কেন? যদি ভূত হয়, ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি, ভূতেরা সাদা কাপড় পরে। তার একটা কারণও আছে। অন্ধকারেই জেনারালি থাকেন তেনারা। তো মানুষের চোখে পড়ানোর জন্য সাদা রঙটাই প্রেফার করেন তাঁরা। তো ইনি এমন গাঢ় রঙের রঙীন কাপড় পরে কেন? চিন্তার বিষয়।

    চেঁচিয়ে কাউকে ডাকার কথা মনে হয়নি। দেবুদাদের ঘরের দরজা টাইট করে বন্ধ, তাছাড়া ওটার মুখ অন্যদিকে, চেঁচালেও শুনতে পাবেনা। সলিলও দরজা বন্ধই রেখেছে, তবে চেঁচালে শুনতে পাবে হয়তো, কিন্তু আমার সেকথা মাথায় আসেনি। মাথায় এসেছে অদ্ভুত কতকগুলো অঙ্ক। আসলে বিপদে পড়লেই আমার মাথায় নানারকম অঙ্ক খেলতে থাকে। পরীক্ষার খাতায় কিন্তু খেলেনা, খেললে আজ কোথায় চলে যেতাম, যাকগে। আমি ভাবলাম, প্রথম কথা ইনি ভূত না মানুষ? ভূত হলে তো সাদা কাপড় পরা উচিত ছিল, আর ইন ঈদার কেস, নড়া উচিত ছিল, কিন্তু ইনি ফিক্সড, নড়ছেন না। তারপর কথা হচ্ছে, ঘোমটাটা সন্দেহজনক। ইনি অবশ্যই স্ত্রীলোক, দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু বুন্দেলখন্ডি বা মালওয়ি হলে ঘোমটা মাস্ট তবে ওইরকম হাঁটুর কাছে কাপড় উঠতনা। আর গোন্ড বা বইগা ট্রাইবের হলে, কাপড় মিনিস্কার্টের মত হয়ে যেত, কিন্তু ঘোমটার ব্যাপার স্যাপার থাকতনা। ব্যাপারটা গোলমেলে নয় কি?

    আক্রমণ যখন হয়নি, দু এক ধাপ ওঠা যেতে পারে সিঁড়ি দিয়ে। উনি এক পা নড়লেই আমি এক লাফে পগার পার হব। আরও দু ধাপ ওঠার পর অধিকতর ভয়ানক দৃশ্য। সিঁড়ির মাথায় একটা টিমটিমে বাল্‌বের আলোয় এতক্ষণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলনা, ঘোমটায় ঢাকা মুখটার যতখানি দেখা যাচ্ছে, তা ভয়ঙ্কর। দুই চোখের ওপরের পাতাগুলো নেই, ফলে অক্ষিগোলক বেরিয়ে এসেছে। ঠোঁট দুটিও নেই, তাই দাঁতগুলো সারি দিয়ে প্রকট। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েও ইনি আমার মত একটি নধর খাদ্যকে উপেক্ষা করছেন, কাজটা ভাল হচ্ছে কি?

    আরও কয়েক পা উঠে গেছি ইতোমধ্যে। এইবারে লাফ দিয়ে পালানোর পথ বন্ধ। এখান থেকে লাফ দিলে বারান্দা অবধি পৌঁছবনা, মাঝখান থেকে একটা পা ভাঙবে, দুটোও ভাঙতে পারে। সলিলটাকে ডাকলে হত চেঁচিয়ে। কিন্তু ও যা সাহসী, তাতে অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে গেলে আমারই ঝক্কি বাড়ত বই কমত না। জ্ঞ্যানাটাকে ডাকা যেত, ডাকাবুকো ছিল, কিন্তু ও এখন দেবুদার ঘরে সীল্‌ড। একাই যাই, জয় মা – পৌঁছে গেছি তেনার কাছাকাছি। কে তুমি বাছা অন্ধকারে দাঁত কেলিয়ে ভয় দেখাচ্ছ? হ্যান্ড শেকিং ডিসট্যান্সে এবার আমি। অনেকে নাটকে অর্জুনের রোলে অভিনয় করেছে কলেজে বা ইস্কুলে। আমি দুঃশাসনের রোলটা নিলাম, একটানে তেনাকে বিবস্ত্র করলাম। আসলে আমার ঠিক সে ইন্টেনশন ছিলনা, কাপড়টা এতই আলগা, যে একটু টানতেই হাতে চলে এল।

    ওমা, এর গায়ে তো শ্বেতী ! শ্বেতী মানে, ভিটিলিগোওয়ালা ভূত? মানে ওয়ালি হবে। কিন্তু না-ই বা কেন। মানুষের মত হাত, পা মাথা, সবই যদি থাকে ভূতেদের, তবে ভিটিলিগোই বা থাকবেনা কেন? কিন্তু এই রাত দুপুরে, একা কাহিল হোটেলের সিঁড়িতে একজন বিবস্ত্রা শ্বেতী সমৃদ্ধা নারীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কি শোভন? তার ওপর এনার দাঁত বের করা, চোখ বেরিয়ে আসা খোমা হলেও চেহারাপত্তর বেশ ভালই। বেশ মানে বে-শ।

    (চলছে...)




    দুঃশাসনের সামনে ছিটেল দ্রৌ

    কাপড়টা হাতে নিয়ে কেমন ফিলসফিকাল হয়ে গেলাম। এনার ভাইটাল স্ট্যাট খুবই উত্তেজক কিন্তু চোখের পাতা নেই, ঠেলে বেরিয়ে আসছে গোল ভাঁটার মত চোখ, সারি সারি কোদালে দাঁত যেন কামড়াতে চায় রাক্ষসীর মত, তার ওপর গায়ে সাদা সাদা দাগ। সবচেয়ে বড় কথা, ইনি দেবী না মানবী? থুড়ি, প্রেতিনী না মানবী? এই চেহারা কি শুধু প্রত্যঙ্গের মাপজোকের কারণেই আকর্ষক, না শারীরিক বিকৃতির কারণে বিকর্ষক, মানে পাতি বাংলায় রিপালসিভ? ইনি কিন্তু এখনও নড়েননি, কাপড় খুলে নেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেননি। ব্যাপার কী?

    যেহেতু এঁর কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, তাই সিঁড়ির বাঁকেও চলে এসেছি। ওপরে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ। ওপরের সিঁড়িতে সারি দিয়ে বহু নারী ও পুরুষ, সকলেই ছিটেল, মানে গায়ে ছিট ছিট সাদা দাগ। এঁদের কারো কাপড় খুলে নেবার প্রয়োজন নেই, কেননা সকলেই কাপড় বর্জিত। সব্বোনাশ, এতগুলো শ্বেতীওয়ালা ভূত?

    ব্যাপারটা বোঝা গেল শেষে। এগুলো গোন্ড ট্রাইবালদের মূর্তি। আমাদের কোলকাতার মত মাটির প্রতিমা নয়, তাই চোখের পাতার তলায় মণি আর ঠোঁটের তলায় দাঁত ছিল। এগুলো অধিকাংশই ড্যামেজড, কিন্তু সরকারি মালপত্তর অত সহজে ডিসপোজ অফ করা যায়না, কোথায় গেল, কী হল, তার নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। তাই নীচের লবি থেকে তুলে এনে সিঁড়িতে পার্কিং। বাকিদের নীচ থেকে দেখা যায়না, শুধু যাকে দেখা যায় তার গায়ে একটা কাপড় আলগা করে জড়ানো, তাই একটানে খুলে এল। ওঃ শ্বেতীর ব্যাপারটা? ওটা দেয়ালে রঙ করার এফেক্ট। নীচে একটা ছবি দিচ্ছি, এরা কিন্তু মূর্তি নয়, প্রাণবন্ত শিশু। এরাই রঙ করে বা সে সময়ে করত ওই অঞ্চলে।



    একটা কথা আগে বলা হয়নি, ছবিটা তুলেছি পরের দিন সকালে। রাত্তিরে ওই মূর্তি দেখলে অনেক দুর্বলচিত্ত লোকের ইয়ে হয়ে যেত। খুলে নেয়া কাপড়টাও ঠিক মত পরাতে পারিনি। মেয়েদের কাপড় পরানো অভ্যেস নেই আমার।

    ট্রেনে এক কাকু
    আমার ছেলেকে, ওর ছেলেবেলায় ট্রেনে চাপিয়ে কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেলে, একটা খাতা পেন্সিল দিয়ে দিতাম সঙ্গে। ট্রেনে কী কী দেখলি, কার সঙ্গে আলাপ হল, সব লিখে রাখ। মানে, ডায়ারি লেখার অভ্যস করানো আর কি। তা যেবার তাকে মধ্যপ্রদেশ নিয়ে গেলাম, সেবার পষ্টো মনে আছে, ও লিখেছিল, ‘ট্রেনে একটা কাকু পেলাম, খুব মজার কাকু’।

    আমার কাছে এখন আর ডায়ারি থাকেনা। অবসর নেবার পর কে-ই বা দেবে। তাই কিছু খাতা বা কাগজ সঙ্গে রাখি। আমাকেও তো লিখতে হয় নানা কথা। তা এবার আমিও লিখলাম, ‘ট্রেনে একটা কাকু পেলাম’ – পড়েই সবাই রে রে করে তেড়ে উঠবেন, ইয়ার্কি হচ্ছে, বুড়ো ভাম, সে আবার ‘কাকু’ পেয়ে গেল ট্রেনে? তা এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। অনেকেই আমায় কাকু বলে, অনেকে জ্যেঠুও বলে, দাদুও বলে কেউ কেউ। আমি আবার ‘কাকু’ পেয়ে গেলাম মানে? তখন তাঁরা বলবেন, ও বুঝেছি, কোনও কিশোর, বা যুবক বা যুবতী আপনার সঙ্গে ‘কাকু’ সম্বোধনে ভাব করেছে, আর আপনি তাকে উলটে ‘কাকু’ বলছেন, যেমন নাতিকে অনেকে আদর করে ‘দাদু’ বলে তাইতো?

    না মশাই, সত্যি বলছি, আমি একজন ‘কাকু’ পেয়েছি, জেনুইন কাকু। আমার যখন দশ বছর, তাঁর তখন তিরিশ। আমার যখন কুড়ি, তিনি চল্লিশ। তো কাকু ছাড়া আর কী? একজন পঁচাশি বছরের মানুষ পেলাম, যিনি যাচ্ছেন ইন্দওর, তাঁর ভাগ্নির কাছে। অল্প বয়সে স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে, তাই প্রতি বছরই বেরিয়ে পড়েন, নইলে হাঁফ ধরে যায়। সত্যি বলছি, এঁকে পেয়ে, নিজেকে কেমন জোয়ান জোয়ান লাগছিল।

    (চলবে)

    একজন কাকু ও তিন কাপ চা

    ভদ্রলোককে সামনে পেয়ে যে কী আনন্দ হচ্ছিল তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কথায় বলে না, যে বাবার ও বাবা আছে, তা এখানে দেখা গেল কাকুরও কাকু আছে। তাঁকে আবার আপার বার্থ দেয়া হয়েছে। মোটামুটি ৫৮ বছর পেরিয়ে গেলেই রেলে লোয়ার বার্থ দেয়ার কথা। এখন লোয়ার বার্থ সব ভর্তি হয়ে গেলে কী করা যাবে। ঠিক কথা, কিন্তু উনি সীট পেয়েছেন ক্যুপের ভেতরে। সাইড লোয়ারগুলো সব শেষে অ্যালটেড হয়। ওঁকে কি একটা সাইড লোয়ার দেয়া যেতনা? নিশ্চিতভাবে উনি সিনিয়র সিটিজেন কনসেশন পাওয়ার জন্য আই ডি দেখিয়েই টিকিট কেটেছেন। যদি আর কোনও সীট নাও থাকত, তবে তো ওঁকে অন্যদিনের টিকিট কাটতে বলা উচিত ছিল। কেমন লোক রেলে চাকরি পায়, যে একজন পঁচাশি বছরের লোককে আপার বার্থ দেয়?

    ওঁর নীচের বার্থে একজন মাড়োয়ারি। তিনি এ সি অ্যাটেন্ডেন্ট কে ডেকে বললেন, ভাই কামরায় কয়েকটা সীট ছাড় থাকে সবাই জানে। তুমি যে করে হোক এই বৃদ্ধ মানুষটিকে একটা লোয়ার বার্থ করে দাও। যদি কিছু বখশিশ চাও, তা আমি দেব। আমিও তাল মেলালাম, হ্যাঁ হ্যাঁ বৃদ্ধ ,মানুষকে তো দেখতেই হবে। আমি পঁইষট্টি, মাড়োয়ারিবাবু তেষট্টি, আমাদের কী আনন্দ, সমস্বরে আর একজন মানুষকে ‘বৃদ্ধ’ বলতে পেরে, সবই মায়া।

    এগাড়িটায় প্যান্ট্রি নেই। অতএব যিনি বাড়ি থেকে খাবার আনেননি তাঁর উপোস। এমনিতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। সব জাংশান স্টেশনে হরেক রকম মনোলোভি খাবার পাওয়া যেত কয়েক বছর আগেই। অধুনা কেবলমাত্র আমাদের বাংলা ছাড়া বাইরের সর্বত্র স্টেশনে বাইরের হকার ঢোকা বন্ধ করেছে রেল। তার বদলে রেলের লোগোওয়ালা জামা গায়ে কিছু দুর্বৃত্ত কুকুরেও রিফিউস করবে, এমন খাবার নিয়ে ঘুরছে প্ল্যাটফর্মে। হয় এই খাও , নয় ফোটো। বাইরের হকারের চেয়ে এরা সংখ্যায় কিন্তু বেশি। রেলে নিশ্চুপে অনেক ‘পরিবর্তন’ ঘটে গেছে শেষ কয়েক বছরে। এই দুর্বৃত্তায়ণ নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল, থাক, এখন মধ্যপ্রদেশেই থাকি।

    বিহার পেরোতেই বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আদিগন্ত ঘনঘটা। ইন্দওরের যাত্রীদের বাড়ি থেকে ফোন এল, সেখানেও বৃষ্টি এবং রাতের তাপমান ৮ ডিগ্রী। ভাবলাম ইন্দওরেও যদি এখান থেকে টানা মেঘ থাকে, তবে দামোহ্‌ তেও নির্ঘাত তাই। প্রোগ্রাম তো ভোগে কিন্তু প্রাণে বেঁচে কিরলে হয়, কেননা নীরজ বলে দিয়েছিল, ওয়্যাসা তো ইয়াহাঁ গর্মি আ গয়া, রাত কো পংখা চালু হো গয়া, ফির ভি সুবে যব নিকলেঙ্গে প্রোটেকশন কে লিয়ে এক পত্‌লাসা সুইটর লাইয়ে। সেই পাতলা মত ‘সুইটর’ নিয়েই এসেছি। ভাগ্যি ভাল একটা মাফলার সঙ্গে গরমকালেও থাকে। কিন্তু ৮ ডিগ্রী সামলানো যাবে?

    একটা বড় স্টেশন এল। এখানে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াবে। কিছু খেতেই হবে। কমসাম বা ওই জাতীয় কিছু থাকবে নিশ্চয়। পেটে হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। বাকি সহযাত্রীরা টিপিন বাস্‌কো বের করতেই সেইসব দেখে খিদেটা আরও চাগিয়ে উঠল। নেমে প্রচূর হাঁটাহাঁটি করে এক জায়গায় , অফ অল থিংস, স্যান্ডুইচ পেয়ে গেলাম, ভেতরে মেয়নীস টেয়নীস পোরা। দেশ এগিয়ে চলেছে ভাই, ইউ পি তে স্যান্ডুইচ ? যাই হোক খিদে চাপা পড়ল, এক কাপ চা গিলে, এবার গুটি গুটি কামরার দিকে আসতেই দেখি দরজার পাশে গুটিসুটি কাকু। ইতোমধ্যে অ্যাটেন্ডেন্ট ভায়া কোনও বখশিশ ছাড়াই, আরএসি –র বার্থটা কাকুকে দিয়ে দিয়েছে। কাকু এখন এক তলাতেই। তিনি বললেন, এই ফ্লাস্কটাতে যদি তিন কাপ চা এনে দেন তো বড় উপকার হয়। তা তো হয়, কিন্তু এই শেষ বেলায়? মনে মনে বললাম, এতক্ষণ কাউকে বলতে পারেন নি? কিন্তু কাকু বলে কথা, না তো বলতে পারিনা। আমার সেই সুব্রতদার বাঁদরের গল্প মনে পড়ে গেল।

    (চলবে)

    https://fbcdn-sphotos-h-a.akamaihd.net/hphotos-ak-frc1/t1.0-9/s720x720/1888603_649702578400055_1935335456_n.জ্প্গ
    দু গেলাস চা

    কাকু বললেন, এই ফ্লাস্কটাতে যদি... আমি তো ফ্লাস্ক নিয়ে হাঁটা দিলাম। দোকানটা আমাদের কামরার দরজা থেকে কোনাকুনি। ওখান থেকে হেঁটে কামরায় ব্যাক করতে মিনিট দেড়েক লাগার কথা। দেখলাম খুব ভিড়, মানে চা টা নিশ্চয় ভাল। রেগুলার যাঁরা যান, তাঁরা এসব খবর রাখেন। আমিও রেগুলার, মানে প্রতি বছরেই যাই, তবে এ গাড়িতে নয়, তাই এই ব্যাপারগুলো জানা নেই। দোকানের সামনে যেতেই দেখি দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ ইত্যাদি নানা রকম নোট দু আঙুলের ফাঁকে ধরে লোক চ্যাঁচাচ্ছে, ভাই হমে এক দো, ভাই দো চায় মেরেকো। বাংলায় ‘দাদা আমায় একটা’-ও হচ্ছে। একবার অন্ধ্র প্রদেশের অনেক ভেতর দিকে একটা স্টেশনে বেশ সুবেশিনী, সম্ভ্রান্ত টাইপ এক মহিলাকে বলতে শুনেছিলাম, আচ্ছা, আপনাদের এই প্যাকেটগুলো কত করে? দোকানদার ‘আন্ডুরিন্টু পান্ডুরিক্কা’ টাইপের কিছু বলতে তিনি বললেন, একশ টাকার খুচরো হবে তো?

    তা যাক গে, আমি কনুই টনুই মেরে জায়গা বানিয়ে নিলাম। ওসব ব্যাপারে বাঙালির কাছে বাকিরা ছেলেমানুষ। বললাম, ইসমে (ফ্লাস্কটায়) তিন দেনা অওর মুঝে এক অলগসে। এবার দোকানদার দেখি কাগজের কাপে চা ভরছে, আবার সেই কাপ ফ্লাস্কে ঢালছে, এমনিতে তার আন্দাজ জ্ঞান নেই। আবার এক কাপ ঢেলে অন্য খদ্দের সামলে আর এক কাপ। আমি প্রমাদ গুনলাম। এমনিতেই প্রায় ট্রেন ছাড়ো ছাড়ো, তখন কাকু চায়ের অর্ডার করেছেন। এবার এক কাপ ঢেলে, আবার দম নিয়ে আর এক কাপ ঢালতে গেলে সমস্যা আছে। আমার একটা পুরোন কাহিনী মনে পড়ে গেল।

    সে বছর আট নয় আগেকার কথা। আমার স্ত্রী গত সাড়ে তিন দশক ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য এদিক ওদিক যেতে হত প্রায়ই। সেবার সম্ভবতঃ যাচ্ছিলাম বোম্বে (মুম্বাই) ডাঃ সুনীল জোশিকে দেখাতে। কী একটা স্টেশন মনে নেই, তিনি বললেন, ট্রেনের চা তো জঘন্য, দেখনা বাইরে পাওয়া যায় কিনা। আমি গজগজ করলাম, স্টেশন আসার সঙ্গে সঙ্গে বলবে তো, এতক্ষণ কী করছিলে? যাই হোক দরজার কাছে দাঁড়ানো একটা লোককে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া, কিতনি দের রুকতি হ্যায়? সে খুব কনফিডেন্টলি বলল, দস মিনট( মানে, মিনিট)। আমি নেমে গেলাম চা আনতে। দু কাপ চা কাগজের গ্লাসে সবে নিয়েছি, পেছন ফিরে দেখি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।

    এমনিতে বেশি দূরত্বের এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার পর প্ল্যাটফর্ম পার হয় বেশ ধীরে সুস্থে। ছেড়ে দিলেও যথেষ্ঠ সময় থাকে ওঠার, দৌড়ে নয়, হেঁটেই। অনেক পরে গতি বাড়ায় এরা। সেদিন দেখি আমাদের মুম্বাই মেল লোকাল ট্রেনের মত ছুটতে শুরু করেছে। আমিও ছুটছি দু হাতে চা এর গ্লাস ধরে। চা চলকে পড়ে আমার আঙুল আধপোড়া হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথায় আসছেনা কীভাবে উঠব ট্রেনে। ঠিক এমনি পরিস্থিতিতে আমার এক সহকর্মীর দুই পা অ্যাম্পিউট করতে হয়েছিল, সেই কথাটাই মনে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কম বয়সে কোলকাতায় লাফিয়ে বাসে ওঠার অভ্যাস যদি করেও থাকি, সেটা ডান দিক থেকে, ট্রেন কিন্তু বাঁ দিকে। হঠাৎ দেবদূতের মত দরজায় এক ব্যক্তির আগমণ। তিনি বোধহয় দরজা বন্ধ করতে এসেছিলেন। বিপদে মাতৃভাষা ছাড়া বেরোয় না, বললাম, দাদা, ও দাদা, একটু ধরুন তো – তিনি হাত বাড়িয়ে একটা গ্লাস ধরলেন। অন্যটা নিয়ে আমি হাঁচড় পাঁচোড় করে কোনও মতে উঠলাম। প্র্থম খিস্তিটা তিনিই দিলেন, আরে ভাইয়া, গ্লাস ফেক দেনা থা। আপকো দস রুপাইয়া বচানা থা ইয়া অপনা জীওয়ন ? দ্বিতীয় খিস্তি ছেলের মায়ের ( ওটা রোজই হয়, অভ্যস্ত) ‘এক কাপ চা বড় হয়ে গেল? ট্রেনের তলায় গেলে কী হত? আমি বললাম, বেসিক ভুল, প্রথমতঃ এক কাপ নয়, দু কাপ। তাছাড়া কাপও নয় গ্লাস, কাগজের। দ্বিতীয়তঃ ওই সময়ে বাঁদরের কলার মত হয়ে যায় চায়ের গ্লাস। তিনি বললেন, বাঁদরের কলা আবার কী?

    আমি বললাম, বর্ধমানে কী করে বাঁদর ধরে জান? তিনি শুনতে ইন্টারেস্টেড না, বিড়বিড় করে আর একটা গালি দিলেন। এদিকে সেই প্রাণ হাতে করে আনা চায়ে চুমুকও দিচ্ছেন।

    (চলবে)




    সুব্রতদার বাঁদর

    চায়ের গ্লাস দুটো ফেলে দিলেই অনায়াসে ট্রেনে উঠতে পারতাম। আচ্ছা, অনায়াসে না হলেও অল্প আয়াসে তো পারতাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তে চা-ছাড়া হতে পারলাম না কেন? চা এমন কি দুর্মূল্য বস্তু? এর পরে অন্য কোনও স্টেশনে পাওয়া যেতনা?

    সুব্রতদার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এক গানের আসরে। আমি তখন সদ্য যুবক। আমি ওখানে ছোটখাট পারকাশন ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতাম। উনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন বেশ উদাত্ত গলায়। অদ্ভুত মানুষ, রাত বিরেতে অন্ধকারে টেপ রেকর্ডার হাতে ঢাকুরিয়া লেকে ঘুরে বেড়াতেন ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝির ডাক রেকর্ড করতে। বেয়াল্লিশ বছর বয়সে কলেজ ফেরতা মেয়েদের সঙ্গে ডেকে ডেকে আলাপ করে আড্ডা মারতেন, তবে ঐ অবধিই। আদাড়ে বাদাড়ে বনে জঙ্গলে প্রায়ই দেখা যেত সুব্রতদাকে। তখনও বাংলার গ্রামগঞ্জে প্রচূর জংলা জায়গা ছিল। একবার উনি শোনালেন এক অদ্ভুত গল্প। আমাদের বললেন, বাঁদর কেমন করে ধরা হয় জান? তোমরা নিশ্চয় জান, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রিসাস মাঙ্কি, মানে যেগুলো খেলা দেখায় রাস্তায়, তাদের খুব ডিম্যান্ড? সে সময়ে সত্যিই পরীক্ষাগারে বাঁদরের ডিম্যান্ড ছিল। পরে বোধহয় ,মানেকা গান্ধী ঝামেলা টামেলা করেন।

    আমরা বললাম, কী করে আবার, জাল টাল দিয়ে হবে নিশ্চয়। উনি বললেন, না, শোনো তবে। বর্ধমানের কাছাকাছি এক অখ্যাত জঙ্গলে একবার ঘুরছি ছোটখাট জীবজন্তুর খোঁজে। হঠাৎ দেখি একদল গ্রাম্য চেহারার লোক হাঁটু অবধি ধুতি আর পিরেন পরে, কাঁধে কয়েকটা বিশাল বোঁচকা নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটছে। আমি বললাম, ভাই কোথায় যাচ্ছ তোমরা এইসব বোঁচকা বুঁচকি নিয়ে? তারা বলল, বাঁদর ধরতে। আমরা বাঁদর সাপ্লাইয়ের কাজ করি। আমি বললাম, আমি তোমাদের সঙ্গে যেতে পারি? তারা বলল, আসুন না, আপত্তি কী।

    বেশ কিছুক্ষণ জঙ্গলের মধ্যে হাঁটার পর একটা খোলা জায়গায় এসে পৌঁছলাম আমরা, অনেকটা আধখানা ফুটবল মাঠের মতন। চারিদিকে গাছপালা, মাঝখানটা ফাঁকা। ওদের মধ্যে কয়েক জন ঝোলা থেকে বেঁটে বেঁটে শাবল বের করে মাঠটার চারিদিকে গোল করে গর্ত খুঁড়তে লাগল, অনেকটা পূজো প্যান্ডালের বাঁশ পোঁতার জন্য যেরকম গর্ত করে, সেই রকম। তবে অতটা গভীর না। আমি খেয়াল করে দেখলাম, গর্তগুলো একটা বাঁশ ঢোকানোর মতন বা তার চেয়েও সরু হলেও তার একেবারে নীচেটা কিন্তু বেশ চওড়া, মানে, সরু মুখওয়ালা ফুলদানীর মতন।

    এইভাবে মাঠের চারদিকে একটা বৃত্তের মত কুড়ি পঁচিশটা গর্ত করা হয়ে গেল। এবার তারা ঝোলা থেকে বের করল এক কাঁদি সিঙ্গাপুরি কলা। তারপর একটা বা দুটো করে কলা সব গর্তে ফেলে দিয়ে মাঠের মাঝখানে বসে চিড়ে গুড় ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া দাওয়া সারতে লাগল। কলা বের করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি খেয়াল করেছি, জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা দুটো করে উৎসুখ মুখ উঁকি মারছে। একটু পরে তারা ভয়ে ভয়ে সামান্য এগোয়, আবার পিছিয়ে যায়। লোকগুলো কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই তারা খাওয়া দাওয়া চালাচ্ছে।

    এবার তারা আস্তে আস্তে এল। এক একজন গর্তের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটা বা একাধিক কলা মুঠো করে ধরেছে। তবে কলাগুলো ফেলতেই সেগুলো হরাইজন্টাল হয়ে গেছে, এবার ওপর থেকে টানলেও সরু মুখ দিয়ে বেরোচ্ছেনা। তারা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। লোকগুলোর কিন্তু কোনও ব্যস্ততা নেই, তারা খাওয়া শেষ করে গল্পগুজব করছে, বিড়ি ধরাচ্ছে। আমি বললাম, কী ভাই, ওরা কলা নিয়ে পালাবে তো। লোকগুলো খুব নিরুদ্বেগ গলায় বলল, না বাবু, ওরা ওখানেই থাকবে।

    এবার তারা ধীরে সুস্থে এসে একটা করে বাঁদরকে ধরছে আর ঝোলায় পুরছে। যখন একটাকে ধরা হচ্ছে, তখন পাশেরটা তাই দেখে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বিকট মুখভঙ্গি করছে, তারস্বরে চ্যাঁচাচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে নড়ছেনা। ওরা একটা একটা করে কুড়ি পঁচিশটা বাঁদর ধরে ফেলল। কলাটা ছেড়ে দিলেই সবাই পালাতে পারত, কেউ পালালনা। কলা কেউ ছাড়তে পারেনা, চায়ের গ্লাসও না। ডারউইন সাহেব কি সাধে বলেছিলেন, আমাদের খালি লেজটাই খসেছে।

    কাকুর চা ফ্লাস্কে ভরতে ভরতে আমি খেয়াল করলাম, আর একবার অমন রিস্ক নেয়াটা উচিত হবেনা। আট নয় বছর বয়সও বেড়েছে, লাফ ঝাঁপ করে ট্রেনে ওঠার ক্ষমতাও কমেছে বইকি। আমি বললাম, ব্যস্‌ করো ভাই, ইতনা হি কাফি হ্যায়। দোকানদার বলল, আপ তিন বোলে থে না ? আমি বললাম, না অওর নহী চাহিয়ে। ফিরে এসে দরজার কাছাকাছি আসতেই দেখি দরজায় এক যুবতী। আমার এক হাতে নিজের গ্লাস, অন্য হাতে কাকুর ফ্লাস্ক। আমি কিছু বলার আগেই সে বলল, দিজিয়ে, মুঝে দিজিয়ে। তার হাতে গ্লাস দিতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। কাকুর খানিকটা চা কম আনা হল অবশ্য, কিন্তু ডারউইনের থিওরি প্রমান করার আর সুযোগ দেয়া হলনা, এই যা। তাছাড়া এবার নিজের গ্লাসটা ফেলে দিলেও কাকুর ফ্লাস্ক তো ছাড়তে পারতাম না।

    নিজের এলাকায় ফিরতেই সবাই বলল, আ-হা, উও বুজুর্গ আদমী থোড়া চায় মাঙানেকো বোলে থে মগর জানেওয়ালা কোই নহী মিলা । আমি বললাম, ম্যায় লা দিয়া। তখন পাশে ক্যুপে থেকে একজন পরিষ্কার বাংলায় বললেন, হবেই, বাঙালিকে বাঙালি ছাড়া কে দেখবে। আমি বললাম, না ভাই, বাঙালি বাঙালিকে শুধুমাত্র দেখে প্রবাসে, নিজভূমে তারাই আবার পরম শত্রু। তিনি বললেন, দাদা যাচ্ছেন কোথায়? আমি বললাম, দামোহ্‌। তিনি বললেন, ওখানে তো কেউ বেড়াতে যায়না, চেনা কেউ আছে নিশ্চয়? আমি বললাম, বেড়াতে ঠিক নয়, অন্য একটা কাজে যাচ্ছি।
    - তা উঠছেন কোথায়?
    - সেটাই সমস্যা। বলেছিল সার্কিট হাউসে তুলবে। কিন্তু কদিন আগেই কাগজে পড়লাম, যে দামোহ্‌ সার্কিট হাউসে নাকি ভূতদের আড্ডা। একা রাত কাটালেই নাকি পরদিন অনাথবাবু ( ভদ্রলোকের ‘অনাথবাবু’ পড়া আছে কিনা বুঝলাম না)।
    তিনি বললেন, ঈশ, এমন সুযোগ ছেড়ে দিলেন?

    (চলিবেক)



    ট্রেনের বাঙালি

    ভদ্রলোক বললেন, ঈশ্‌ এমন সুযোগ ছেড়ে দিলেন?
    আমি বললাম, কিসের, অনাথবাবু হওয়ার?
    উনি সম্ভবতঃ গল্পটি পড়েননি, বললেন, না, সার্কিট হাউসে থাকার।
    আমি বললাম, না মানে কাগজে লিখেছে না, যে ওখানে কীসব ভূত টুত আছে, এমনিতে আমার ভয় টয় তেমন নেই। কিন্তু যাই বলেন, একটা অস্বস্তি তো হয়ই। তা ছাড়া ধরুন গিয়ে জোয়ান বয়সে এইসব গপ্পো শুনে ভূতেক্সপ্লোরিং করতে যদি আসতাম, তো ঠিক আছে, সেটাই উদ্দেশ্য, মানে, ভূত দেখা বা তাই নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু আমি এসেছি ছবি তুলতে। এখন রাত্তিরে যদি খটর মটর আওয়াজও হয়, সেটা ভূত না ইঁদুর, তাই বিচার করতেই রাত কাবার। এবার ঘুম চোখে ভোর বেলা বেরোলে ফোকাসিং-এ অসুবিধে হবে, আমার প্রোজেক্ট ভোগে, মানে যে উদ্দেশ্যে এলাম, সেটাই হবেনা। তা আপনি ঐ সার্কিট হাউসের এত খবর জানলেন কী করে?
    তিনি বললেন, আসলে আমি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে আছি। যদিও বাঙালি, আমি কিন্তু প্রবাসী। বাবার ট্রান্সফারেব্‌ল জব ছিল, তাই আজীবনই বাইরে। চাকরিও গোড়া থেকেই মধ্য প্রদেশে । আমি দশ বছর দামোহ্‌ তে পোস্টেড ছিলাম। কয়েক বছর আগে সাগর-এ বদলি হয়েছি।
    আমি বললাম, ও তাই সার্কিট হাউসের গুণগান করছিলেন –
    তিনি বললেন, দাদা অপূর্ব জায়গা। পাহাড়ের মাথায়, চারিদিকে নিসর্গদৃশ্য, ওখান থেকে পুরো দামোহ্‌ শহরটাকে দেখা যায়, ওখানে থাকার সুযোগ কেউ ছাড়ে?
    আমি বললাম, আর ভূত?
    তিনি বললেন, আমি তো কোনওদিন ওখানে থাকিনি, যাঁরা থেকেছেন, তেমন কারোও সঙ্গে কথাও বলিনি। তবে খুব বেশি ভয়ঙ্কর কিছু হলে তো কানে আসত।

    আমি বললাম, সেখানেই তো সমস্যা। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদক লিখেছেন, ওবাড়িটাকে ভূতের জন্য মানুষ এড়িয়ে চলে। তবে একলা না থাকলে, মানে কয়েকজন একসঙ্গে থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু একা কেউ থাকেনা ওখানে।
    তিনি বললেন, ও, তাই বুঝি। কিন্তু যাই বলেন দাদা, আপনি কিন্তু দারুণ জিনিষ মিস করলেন। আর কোথায় বা থাকবেন, হয়তো জঙ্গলের মধ্যে ফরেস্ট লজ টজে দেবে।
    আমি বললাম, তবে তো দারুণ হবে। আমি মশাই নিসর্গের চেয়ে জঙ্গল প্রেফার করব। দেখাই যাক কোথায় দেয়।
    আমার সামনের ক্যুপেতে মাড়োয়ারি দম্পতির ওপরের বার্থে এক বিএসএফ জওয়ান ছিল, কাকুর সঙ্গে বার্থ বদল করে আরও একজন এসেছে। ছেলেদুটোই খুব ভাল, একজন উত্তরাখন্ডের, একজন বিহারের। বিহারি ছেলেটি তো সারাটা জার্নি আমার চটি পরেই ঘরে-বাইরে(ক্যুপে-বাইরে) করে গেল। আমায় বলল, আঙ্কলজি ( আমি আবার ওর কাকু) উতরনেকে সময় বোলিয়েগা। ম্যায় আপকা লাগেজ লেকে চলুঙ্গা।
    আমি বললাম, দরকার নেই বাবা, আমার সঙ্গে এমন কিছু হাতিঘোড়া লাগেজ নেই, তাও সে শুনবেনা। প্রবাসী বাঙালি ব্যাঙ্কবাবু বললেন, দাদা, আমিও যাব আপনাকে নামিয়ে দিতে। ট্রেনটা ঘন্টাদুই লেট ছিল, দামোহ্‌ আসতে আসতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেল।

    ভূতের মার নাকি অনেক রকম। প্রথমটাই খেয়ে গেলাম দামোহ্‌ স্টেশনে। আমার একটা লাগেজ নিয়ে ব্যাঙ্কবাবু নেমেছেন, আর একটা নিয়ে জওয়ান ভাইপো আসছে পেছনে। ক্যামেরার ব্যাগটা কিন্তু নিজের কাঁধেই রেখে, আরে থাকনা, আমি নিজেই পারব,-এই সব বলতে বলতে আমি ট্রেনের কামরা থেকে পা বাড়িয়েছি।

    চশমার দোষ হতে পারে, কেমন করে হ’ল, বুঝলামনা, আমি তিন চার ফুট নীচে পড়লাম বাঁ পায়ের পাতার ওপরে। দামোহ্‌ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটা সেই বৃটিশ আমলের মত, অনেক নীচে, কামরায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। খেয়াল করিনি, সোজা শরীর ছেড়ে দিয়েছি। আশ্চর্য, হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু না পড়ে বাঁ পায়ের ওপর ল্যান্ড করলাম। ওরা হাঁ হাঁ করে উঠল, আমার মনে হল শিরদাঁড়া থেকে দু চারটে নাটবল্টু খুলে পড়ে গেল। আশ্চর্য আমি কিন্তু পড়িনি, ক্যামেরার ব্যাগে অনেক ফোমের প্যাড লাগানো থাকে, তবুও এই ইমপ্যাক্ট সামলাতে পারার কথা নয়। দুটো ক্যামেরা এবং লেন্স ফেন্স অটুট রইল। জওয়ান সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়েছে, বলল, আঙ্কল লাগি তো নহী? কী আর বলব, ব্যাঙ্কবাবু বললেন, খুব জোর বেঁচে গেল আপনার ক্যামেরা ট্যামেরা। কী আশ্চর্য, আপনি দেখতে পেলেন না? যাক ফাঁড়া কেটে গেল, আর কিছু হবেনা।

    (ওপরে সার্কিট হাউসের ছবি)

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ মার্চ ২০১৪ | ১৬৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.125.60 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৫:০৭73714
  • তারপরে??
  • Rupankar Sarkar | 126.203.220.89 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৪৮73715
  • আসছে তো -
  • | 24.97.80.74 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৪ ০২:২৩73716
  • এইটুকু টুকু বাচ্চাগুলো রং/চুনকাম করে? :-(
  • | 24.97.113.76 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৩73718
  • :-D
  • Rupankar Sarkar | 126.203.193.50 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৪ ০৫:২০73717
  • হ্যাঁ, সে সময়ে তো তাই দেখতাম। তাও আবার বাচ্চা মেয়েরা।
  • Rupankar Sarkar | 126.203.182.209 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৪ ০৫:৪৬73719
  • বেশ কয়েকটা টাইপো আছে, ৭ নম্বরে উৎসুখ - উৎসুক । শিরোনামেও একটা 'প' বেশি ।
  • de | 190.149.51.68 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৯:১০73720
  • দারুণ হচ্ছে! চলুক!
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.186.65 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৪ ১২:০১73721
  • কন্টিনিউয়েশনের আইকনটা আজ নেই।
    একদিকে ভালই হ'ল। মধ্যপ্র(প)দেশ নিয়ে বেশিদিন টানতে হবেনা।
    ৯ম পর্ব থেকে নতুন করে শুরু করছি
  • ranjan roy | 24.96.20.172 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৪ ১২:১২73722
  • তখন যে কেন আপনার সঙ্গে পরিচয় হয় নি! শিওর যেতাম, দামোহ্‌ তে, ভূত দেখতে।
  • Rupankar Sarkar | 126.203.186.65 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৪ ১২:২৮73723
  • রঞ্জন, তোমার সঙ্গে পরিচয় তো কবেকার। দামোহ্‌ তো এই সবে টাটকা ঘুরে এলাম। পরের বার চলো, যদি আবার যাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন