এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অন্য যৌনতা

  • অসম্পূর্ণ বিভাজন

    প্রান্তিকা * লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৩ | ২১৭৮ বার পঠিত
  • ‘সমাজ’এর চরিত্রটা বড় জটিল। কিছুটা অস্পষ্ট, কিছুটা উন্মুক্ত আবার কিছুটা পাঁচমেশালি। অলিখিত কিছু বাঁধা ধরা নিয়ম। কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আবার কিছু স্থানে অচল। ‘সমাজ’এর কল্যাণে এই সকল সামাজিক বিধান কারা রচনা করে গেছেন, তার ধারণা আমার নেই। ভারত, বহু ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নিয়ে গঠিত একটি দেশ। সহস্র কোটি ভারতীয় এবং হাজার রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে আমাদের আভ্যন্তরীণ সামাজিক নিয়ম কানুনের কিছু পার্থক্য থাকলেও কিছু অলিখিত বিধান আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলি। শুধু আমরা ভারতীয়রা নয়, পৃথিবীর প্রতিটি উন্নত, অনুন্নত দেশে এই নিয়ম পালন হয়- একটি মানুষের প্রাথমিক পরিচয় দান, পুরুষ অথবা নারী। এবং এই ‘পুরুষ’ বা ‘নারী’ পরিচয়ে স্বীকৃতি দেবার পর চলে আসে আসল জটিলতা বা অন্য ভাবে বললে ‘যত দিন পৃথিবীতে তোমার জীবন আছে, কি ভাবে তুমি সেই জীবনটাকে যাপন করবে’। আমি কী পোশাক পরবো, কী কাজ করবো, কী ভাবে হাঁটবো-চলবো, ভাববো, কথা বোলব, কি স্বপ্ন দেখবো, কী আশা রাখবো, কাদের সাথে মেলামেশা করবো, কার সাথে শোয়ার ঘরে ঢুকবো...আমার সমস্ত, সমস্ত জীবনটা নির্ভর করছে আমার প্রাথমিক পরিচয়ের উপর, আমি পুরুষ না কি আমি নারী? আর আমার প্রাথমিক পরিচয় সেই দিনই ডাক্তারবাবু আমার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে দিন আমি আমার মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম সূর্যের তাপ পেয়েছিলাম। ডাক্তার বাবু কী ভাবে জানলেন? জেনেছেন আমার যৌনাঙ্গ দেখে। ভাবতে অবাক লাগে, অবাকের চাইতেও বেশি অস্বস্তি লাগে, একটি সদ্যোজাত শিশুর যৌনাঙ্গ ঠিক করে দিয়েছে তার সম্পূর্ণ জীবন অতিক্রম করবার পদ্ধতি। সে কী পোশাক পরবে, কী ধরণের খেলা খেলবে, সে তার সময় রান্না ঘরে কাটাবে নাকি বাইরে বেরিয়ে উপার্জন করবে।
    যদি বুঝতাম বয়ঃসন্ধি কালে আমি কি জটিলতার মুখোমুখি হবো, তাহলে হয়তো গর্ভ থেকে বার হতাম না। হলেও, ঐ সদ্যোজাত অবস্থায় আপ্রাণ চেষ্টা করতাম নিজের যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখতে যাতে কেউ আমার জীবন নির্ধারণ না করে, আমাকে হিসাবের মধ্যে না ফেলে।

    ছোটবেলা থেকে আমি আমার বাড়িতে দুটি ভাগ দেখে এসেছি। মা, বোন, কাকিমা, বৌদিদের নিয়ে একটি ভাগ, অপরটা বাবা, কাকা, দাদাদের। প্রথম ভাগ দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতে কাটান, ছোটদের দেখাশুনা করেন, রান্না করেন, ঘর গোছান, দ্বিতীয় ভাগের আদেশ বা সাধারণ গুরুগম্ভীর কথা পালন করে চলেন। প্রথম ভাগের মনোরঞ্জন, দুপুর বেলা উঠোনে বসে পান চিবোতে চিবোতে অন্য বাড়ির ছেলে মেয়েদের প্রেম বা দাম্পত্য জীবন নিয়ে হিসাব কষা, আর রাত্রিবেলা টিভির সামনে সবজি কাটতে কাটতে বাংলা সিরিয়াল দেখে যুক্তিহীন বিশ্লেষণে ডুবে যাওয়া।

    দ্বিতীয় ভাগ, দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটান, উপার্জনের জন্য দৌড়ান, কেউ অফিসে যান তো কেউ ব্যাবসা করেন। যারা উপার্জন করেন না তাঁরা সাইকেল বা বাইকে চড়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভবঘুরের মতন বেরিয়ে পড়েন। দ্বিতীয় ভাগের মনোরঞ্জন, পাড়ার মাঠে ঘাটে ক্রিকেট ফুটবল খেলা, সাঁতার কাটা, রকে বসে তাস পেটানো আর আই পি এল হোক কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলার স্কোর শুনে হিসাব কষা। প্রথম ভাগের পোশাক, অল্প বয়স্কাদের জন্য রঙবেরঙের ফ্রক, বিবাহ যোগ্যাদের জন্য সালোয়ার আর বিবাহিতাদের সাড়ি। দ্বিতীয় ভাগ, হাফ/ফুল প্যান্ট, সার্ট বা গেঞ্জি।

    এতে আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমার বাড়ির এই দুই ভাগ তাঁদের পছন্দ মতন জীবনযাপন করেন, এক একটা দিন কাটান। উল্লেখযোগ্য ভাবে তাঁরা যখন সদ্যোজাত ছিলেন সেই সময় তাঁদের যৌনাঙ্গ যে সামাজিক নিয়মের নির্দেশ দিয়েছিল বয়স এগোবার সাথে সাথে তাঁদের ব্যাবহার আচরণ, তাঁদের মানসিকতা সেই নিয়মে ভালো মতন খাপ খেয়ে যায়। কেউ তাঁদের উপর জোরজবরদস্তি করে সামাকিজ নিয়ম কানুন চাপিয়ে দেননি। আমার মা নিজের ইচ্ছায় শাড়ি পরেন, রান্না করেন, বাড়িতে থাকেন, বউমা-শাশুড়ির সিরিয়াল দেখেন। আমার বোন স্বেচ্ছায় সাজগোজ করে, লিপস্টিক লাগায়, চুড়ি পরে। আমার বাবা দাদারাও নিজেদের ইচ্ছা, নিজেদের মানসিকতার অনুকূলে নিজেদের আচার ব্যাবহার প্রকাশ করে থাকেন। তাঁদের শরীর ও মানসিকতা একই সমান্তরালে চলেছে। কোন অনিয়ম নেই, কোন জটিলতা নেই, কোন বিস্ময়সূচক প্রশ্ন নেই, সমাজ খুশি। গেঁড়াকল পেঁচিয়েছে আমার বেলায়, আমার শরীরের সাথে আমার মন কোন অংশ থেকে কোন ভাবেই একই সরল রেখায়ে হাটতে পারেনি।

    আমার যৌনাঙ্গ ভিত্তিক সামাকিজ বিধানের সাথে আমার মন মানসিকতা খাপ খায়েনি। কেন খাপ খায়েনি, তা আমি নিজেও জানি না। আমার আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছেদ, আমার খেলাধূলার পছন্দ, আমার পছন্দসুলভ কাজকর্ম, এমন কি আমার ভালোবাসার সঙ্গী পছন্দ করবার চাহিদা আমার যৌনাঙ্গ ভিত্তিক সামাকিজ পরিচয়কে, সামাজিক বিধানকে প্রচণ্ডভাবে বিরোধিতা করে। আমার শরীরের সাথে আমার মনের দ্বন্দ্ব কবে থেকে শুরু হয়ছে আমি জানি না। আমি ছোটবেলায়ে রংবেরঙের ফ্রক পরতাম, আমাকে মেয়েদের পুতুল দেওয়া হত, মেলা থেকে ছোট ছোট রান্না-বাটি দেওয়া হত খেলার জন্য। আমার বাবা মা দিতেন আমার বাচ্চা মনটাকে খুশি করতে। তাঁদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, তাঁদের একটা বাচ্ছা ‘মেয়ে’ হয়েছে, সমাজ তাঁদের জানিয়েছিল বাচ্চা মেয়েরা এই সব পেলে খুশি হয়। আমার বাবা মা, আমার বাড়ির লোক আমার প্রতি সেই সকল ব্যবহার করে গেছেন যে ব্যবহার তাঁরা সমাজ থেকে শিখেছেন, সমাজ থেকে জেনেছেন। কিন্তু আমি শিখতে পারিনি, বুঝতে পারিনি। সময় এগোনোর সাথে সাথে পুতুল আর রান্না বাটির প্রতি আমার কোন মোহ থাকল না। দাদাদের ব্যাট বল প্রচণ্ড ভাবে হাত ছানি দিয়ে ডাকতো। রঙবেরঙের ফ্রক পরে যখন আয়নার সামনে দাঁড়াতাম নিজেকে কেমন যেন কিম্ভূত মনে হত। দাদাদের ছোট হয়ে যাওয়া প্যান্ট সার্ট বেছে নিতাম। উঠোনে কিত্‌কিত্‌ খেলার চাইতে মাঠে ঘাটে ছেলেদের সাথে খেলতে পছন্দ করতাম। সাজাগোজা কিংবা মেকআপ বক্সের ধারে কাছে আমি যেতে পারিনি। রূপকথার বই পড়ে আমি নিজেকে কখনো ‘রাজকুমারী’র সাথে তুলনা করতে পারি নি, আমি নিজেকে সব সময় ঐ সাদা ঘোড়ায় চাপা রাজকুমার ভাবতাম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার আচরণ পালটাতে লাগল; ‘পালটাতে লাগলো’ বলার চাইতে আমার আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ আমার যৌনাঙ্গভিত্তিক সামাজিক পরিচয়কে প্রচণ্ড ভাবে প্রশ্ন করতে লাগলো। আমি কে? ‘পুরুষ’ না ‘নারী’?

    আমি নিজেকে ‘পুরুষ’ হিসাবে দেখে এসেছি। আমার হাবভাব, দৃষ্টিভঙ্গি সবই পুরুষসুলভ। নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য আমি যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছি তার কোনটাই কৃত্রিম নয়। আমার মন থেকে যে আচরণ বেরিয়েছে, যে ভঙ্গি আমার কাছে সহজ মনে হয়ছে, যে পোশাকে আমার নিজেকে দেখে আমার পছন্দ হয়ছে আমি তাই করেছি, তাই পরেছি। এই সব পছন্দ অপছন্দ কখনোই আমার যৌনাঙ্গ দেখে প্রকাশ পায়নি, প্রকাশ পেয়েছে আমার মন থেকে। কিন্তু সমাজ যখন তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে আমার জামা-কাপড়, পোশাক ভেদ করে আমার শরীরটাকে দেখল তখন আমি একজন মানসিক রুগী ছাড়া সমাজের কাছে আর কিছু পরিচয় পেলাম না।

    ছকে বাঁধা জীবনে আমি পারিনি মানাতে। আমি যা চাই, যা পছন্দ করি তা সমাজ পছন্দ করে না। কারণ আমার মন বললেও আমার শরীরের গঠন অনুযায়ী আমার জীবনযাপনের পদ্ধতি সমাজের বাঁধাধরা নিয়মকে আঘাত করে। এক জনের শরীর দেখে তাকে বিচার করা সমাজের কাছে যতটা সহজ, এক জনের অবয়বহীন মানস দেখে তাকে বিচার করা ততটাই কঠিন। আমার শরীরটা একজন নারীর। সমাজ চায় না আমি ছোট করে ছেলেদের মতন চুল রাখি। আমার বিনুনি বাঁধা উচিত। আমি কোন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাতে সমাজের কিছু আসে যায় না। আমাকে নিয়মের মধ্যে থাকা উচিত। সমাজ চায় না আমি জিন্স প্যান্ট পরি, আমার পোশাক হওয়া উচিত সালোয়ার আর শাড়ি। সমাজ চায় না আমি সাইকেল-বাইক চালাই, চায় কারুর বাইকের পিছনে আমি বসি। সমাজ চায় না আমি বাড়ির বাইরে বেরোই, কাজ করি। চায় আমি রান্না বান্না আর সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের দেখাশুনা করি। চায় না আমি মাঠে ঘাটে গিয়ে খেলাধূলা করি, শরীরচর্চা করি। চায় আমি বাড়ির উঠোনে স্কিপিং করি আর শাহ্‌রুকের রোমান্টিক ফিল্ম দেখি। চায় না আমি কোন ‘নারী’কে সঙ্গিনী হিসাবে বেছে নি। কারণ শরীরের উপর ভিত্তি করে যে সকল নিয়ম কানুন গড়ে উঠেছে, এ সব কিছু তারই অংশ বিশেষ। মন বা মানসের কোন স্থান এখানে নেই। ছত্তিরিশটা বছর ধরে মোটা কাপড়ের নীচে শরীরটাকে আষ্টেপৃষ্টে ঢাকা দিয়ে বাড়ির বাইরে বার হই, লোকের সাথে মিশি। বাড়ি ফিরে বিবস্ত্র হয়ে আয়নার সামনে যখন দাঁড়াই, কুঁকড়ে যাই। যাঁরা আমাকে চেনেন জানেন তাঁদের কাছে আমি কোন আলোচনার বস্তু না, কিন্তু যাঁরা আমাকে চেনেন না, আমাকে নতুন দেখলেন তাঁরা শুধু আমাকে বিস্ময়সূচক দৃষ্টি নিয়ে আপাদমস্তক পরীক্ষা করে গেলেন। আমি চলে গেলে পিছন থেকে কিছু অস্পষ্ট কথা শুনতে পাই, ‘এটা কে? ছেলে না মেয়ে?’

    আমার এসব আর গায়ে লাগে না। অনেক বছর পেরিয়ে গেছি। অনেক কিছু শুনেছি, দেখেছি। এখন এই সব সামান্য কিউরিওসিটি যখন শুনি, তখন আমার ভিতর থেকে শুধু একটু মুচকি হাসি বেরোয়। আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে ‘নারী’ করতে অনেকে চেষ্টা করেছেন। কেউ আমাকে ভালো মতন বুঝিয়েছেন, কেউ আমাকে ধমক দিয়েছেন। রাস্তা ঘাটে পান বিড়ির দোকানের ছেলেরাও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, ‘যতই প্যান্ট পরে ছেলে সাজো মুততি হবে বইসাই’। পাড়ার দিদিমা জ্যেঠিমারা বুঝিয়েছেন, ‘মাইয়া হইয়া এমন ক্যান সাজো? এত ছেলেদের সাথে কিসের ভাব। কেউ যদি চাইপা ধরে পারবা? বাচ্চা তোমারেই বইতে হবে। তখন বুঝবা। সময় আছে, শুধরে যাও’। আমি শুধরাই নি। আর বোধহয় শুধরাবোও না। একটা সময় সমস্ত দিন নিজেকে ঘরের মধ্য আটকে রাখবার পর আমি নিজেকে গ্রহণ করেছি। আমার বাবা মা আমার পরিবার আমার জন্য আনাচে কানাচে অনেক খোঁচা মার্কা কথা শুনেছেন, কিন্তু তাঁরাও আমাকে গ্রহণ করেছেন। আর আমার বন্ধুরা, যারা আমাকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে, তারা আমার পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে রাখা আমার অপছন্দের শরীর দেখে আমাকে বিচার করে না।

    কলোনি এলাকায়ে বেড়ে উঠেছি। আমার বাবা মা, বোন দাদা, আমার বন্ধুদের কোন ভারি পড়াশোনার ডিগ্রি নেই। বেশির ভাগই উচ্চমাধ্যমিক পার হতে পারে নি। আমারও পড়াশোনা বেশি দূর এগোয় নি। আমি নিজেই স্বেচ্ছায় স্কুল ছেড়েছি। আমার জীবনের সব চাইতে বড় ভুল। আমার সহ্য শক্তি হেরে গেছিল, আমি নিজেকে শান্ত করতে পারি নি। বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। বাড়ির কাছেই আমি একটা সরকারি মেয়েদের বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়তাম। আমি ছোটবেলা থেকে নিজেকে ‘ছেলে’ হিসাবে দেখে এসেছি। আমার হাবভাব, চালচরন, কথাবার্তা সব কিছুই ছেলেদের মতন। আর আমার এই সব কিছু আমার স্কুলের টিচারদের কাছে ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। যখন তখন আমাকে নিয়ে আলোচনা করতেন, একটু সুযোগ পেলেই ক্লাসে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে আমাকে প্রচণ্ড আপত্তিকর ভঙ্গিতে উপদেশ দিতেন। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। দুবছর ধরে ক্লাসের যে বান্ধবীকে আমার ভালো লাগতো তাকে লাভ লেটার দিই। সে প্রচণ্ড অপমান করে আমাকে, সারা স্কুল জেনে যায়। চিঠিটা সোজা চলে যায় টিচারদের কাছে। গার্জিয়ান কল। পরদিন মা আসেন আমার সাথে। অনেক কথা হয়, অনেক কথা। আমি সেই সময় মিশে যাচ্ছিলাম মাটিতে। আমার ইতিহাসের টিচার এসে মার সামনেই বললেন, ‘জামা কাপড় খোলো, দেখি তুমি ছেলে কি মেয়ে’। আমি আর পারি নি সহ্য করতে, টেবিলের উপর রাখা পেপারওয়েট ছুড়ে মারি। তার মাথা ফেটে গেছিল। সঙ্গে সঙ্গে টি সি লেটার পেলাম।

    আমি আর অন্য স্কুলে ভর্তি হতে চাইনি। আমার বাবা মাও আমাকে কোন জোর করেননি। এই ঘটনার পর অনেক দিন নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছিলাম। কারু সাথে মিশতে পারতাম না। আমার ভিতর কনফিডেন্স ছিল না। কয়েক মাস পর আসতে আসতে বেরিয়ে আসলাম ঘর থেকে। আমার পাড়ার কিছু বন্ধুরা সেই সময় ছোট খাটো ব্যবসা করতো। আমিও যুক্ত হলাম। বাড়িতে বসে সেল করতাম, মেয়েদের ক্রিম, লিপস্টিক। নিজে পরতাম না, বিক্রি করতাম। এর আরও কিছু ছোট ব্যবসায় ঢুকলাম। বেশির ভাগই সাপ্লাই ছিল। আমার দাদা তখন কার্বন পেপারের ব্যাবসা করত। আমাকে ডেকে নিল। সময় কাটতে থাকল। আমার বাবা প্রথম প্রথম আমার প্রতি বিমুখ ছিলেন। আমার বাবা মাছের ব্যবসা করেন। যখন দেখলেন আমি অল্পস্বল্প উপার্জন করতে পারছি, উনি নিজের ব্যাবসার সাহায্যের জন্য একদিন আমাকে ডাকলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘কাজের চাপ আছে, আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবি?’ সেই দিনটা ছিল আমার কাছে সব চাইতে আনন্দের দিন। যে সব লোকদের সাথে সাধারণ ঘরের মেয়েরা কথা বোলতে সংকোচ বোধ করে, আমি সেখানে মানিয়ে গেলাম। বাবা ব্যস্ত থাকলে নির্দ্বিধায়ে আমাকে অর্ডার নিতে পাঠাতেন।

    এই ছোটখাটো সেলসের ব্যবসার ভিতর দিয়ে আমি অনেক লোকের সাথে মিশলাম, অনেকে চিনলাম। কেউ খুব বড়লোক, কেউ গরীব। কেউ খুব শিক্ষিত, আবার কেউ কখনো স্কুলেই যায়নি। সবাই এক রকম হয় না। এঁরা প্রথমে জানতে চেয়েছেন আমি ছেলে কি মেয়ে, কিন্তু জানবার পর কেউ আর আমাকে নিয়ে  কিউরিওসিটি দেখাননি। আলোচনা করেন নি। আমি অনেক বন্ধু পেয়েছি। ছেলে, মেয়ে মিলিয়ে অনেক। আমার হাবভাব, চালচলনে এদের কোন অসুবিধা হয় না। যখন এদের কোন দরকার হয় তারা আমাকে সাহায্য চেয়ে জানায়। আমার সাহায্যের প্রয়োজন হলে এরা এগিয়ে আসে। আমার ছেলে বন্ধুরা আমাকে ডাকে আড্ডা মারতে, সিগারেট মদ খেতে। আমার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমার কখনো মনে হয়না, আমি শারীরিক দিক দিয়ে মেয়ে। রকবাজ ছেলেরা নিজেদের ভিতর যে সমস্ত গল্প করে, তারাও আমার সাথে সেই কথা বলে। আমার মেয়ে বন্ধুরা আমার সাথে ফ্লার্ট করে, আমাকে নন-ভেজ এস এম এস পাঠায়। ভালো লাগে।

    এর মধ্যে আমার অনেকগুলো প্রেম হয়। আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করে মেয়েদের প্রপোজ করতে। কিছু মেয়েরা আমাকে রিজেক্ট করে, কেউ কেউ অ্যাকসেপ্ট করে। অনেক প্রেম ভাঙে, কিছু ভাঙে বাড়ির চাপে। না, সেই আগের মতন অপমান কেউ আমাকে করে নি। হাসিমুখে আমার সাথে কথা বলে, আমাকে রিজেক্ট করে। রাস্তা ঘাটে দেখা হলে তারা আমার সাথে ভালো ভাবে কথাও বলে।
    এত বছর ছোটখাটো কাজ করে যে পয়সা জমিয়েছিলাম, আরও কিছু টাকা এর-ওর কাছ থেকে কিছু ধার নিয়ে একটা স্ন্যাক্‌সের দোকান খুলি বছর চারেক আগে। মোটামুটি বেশ চলে। আমি আমার পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

    সমাজের এই সব অলিখিত বিধানের সাঁড়াশির চাপ শুধু মাত্র আমি বা আমার মতন মানুষজন ভোগ করে না। কখন কার ঘাড়ে এই সকল নিয়মকানুনের খাঁড়া কোপ মারে তা জানা মুশকিল। সমাজের বুদ্ধিজীবীরা বলেন মেয়েদের এগিয়ে আসা উচিত। পড়াশোনা কাজকর্ম সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের সমাজ সত্যিই কি তাই চায়! আমার মেয়ে বন্ধুরা বেশির ভাগই গরীব ঘরের। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও বেশি দূর না। তারা ছোট ছোট কোম্পানিতে কাজ করে রোজগার করে। তারা রোজগার করে নিজের জন্য লিপস্টিক নেলপালিস কেনার জন্য নয়, সংসার চালানোর জন্য। কারুর বাবা নেই, কিংবা অসুস্থ বাবা মা, কেউ নেই রোজগার করবার, কারুর দাদাভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। আমার এক বান্ধবী একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। এক গয়নার দোকানে সে কাজ করে। তার বাবা খাওয়াদাওয়া করছে না। আমি জানতে চাইলাম কেন? সে বলল, সমাজের কিছু সামাজিক প্রাণী তার বাবাকে খুব অপমান করছে, ‘বাবা হয়ে মেয়ের পয়সায় খাও, লজ্জা করে না’, সেই সঙ্গে আমার বান্ধবির রোজগারের পন্থা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়ছে।

    আসতে আসতে আমি বুঝতে পেরেছি, ‘সমাজ’ কী! সমাজ বহুমুখী। এই লোকগুলি সমাজ না, সমাজের একটা অংশ মাত্র। সমাজে কিছু কিছু লোক থাকে যাদের ‘পান থেকে চুন খসলেই’  মহাভারত হয়ে যায়ে। আবার কিছু কিছু লোক আছেন যাদের ‘মহাভারত’ হলেও কিছু যায় আসে না। শুধু মাত্র প্রথম ভাগের লোকের সাথে মিশে ‘সমাজ’কে সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।

    যাঁরা আমার মতন অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তাদের বলব কিছু লোকের কথা শুনে অন্ধকার ঘরে নিজেকে আটকে রাখলে হয়তো এমন অনেক বন্ধু হারাবে যাদের কিচ্ছু আসে যায় না তুমি কী, তুমি কেমন। সমাজ তোমাকে অপমান করবে, হয়তো অপমানের ভাগটা বেশি থাকবে, কিন্তু কিছু কিছু সমাজ তোমাকে সম্মান করবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তুমি কিছুই পাবে না। সব কিছু নিয়েই সমাজ। সব ধরণের মানুষদের নিয়ে সমাজ। এই সমাজের সাথে যত মিশবে, তত জানবে। আর এই মেলামেশার প্রথম ধাপটা শুরু হয় নিজের পরিবার থেকে। বাবা মাকে সুযোগ দেওয়া উচিত যাতে তাঁরা তোমাকে চিনতে পারেন, বুঝতে পারেন। অনেক ব্যঙ্গ আসবে, অনেক প্রশ্ন আসবে। এই সকল প্রশ্নের উত্তর হয় তো তোমার কাছে নেই। যেমন আমি জানি না আমি কেন নারীর খোলসে পুরুষ হয়ে আছি। আমি এমন অঞ্চলে বসবাস করি যেখানের লোকেরা ‘হরমোন’ আর ‘হারমোনিয়াম’ এক অর্থে জানে। তাঁদের আমি কী করেই বা বোঝাবো! আমি এই রকমই। এটাই আমার, আমাদের আসল পরিচয়। আর আমি-তুমি কিছুই না শুধুমাত্র এই বহুমুখী সমাজেরই একটা ছোট্ট অংশ।

     

    *  লেখকের ইচ্ছানুসারে নাম পরিবর্তিত


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৩ | ২১৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • rivu | 85.102.68.137 (*) | ৩১ মে ২০১৩ ০৭:২৬76566
  • এই সময়ের জন্যে খুব দরকারী লেখা।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 (*) | ৩১ মে ২০১৩ ০৭:৪১76567
  • খুবই পজিটিভ লেখা। এই লেখা যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। আরো কতজন হয়ত ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসে আছেন। তাদের সাহস জগতে পারে এই লেখা।
  • kk | 78.47.250.76 (*) | ৩১ মে ২০১৩ ০৯:৫২76568
  • ভালো লেখা। ভালো লাগলো।
  • pi | 78.48.231.217 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০১:৪২76579
  • চান্দু মিঁঞা, এটি কাল্পনিক নয়।
  • জয়ন্ত | 127.194.80.218 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৩:৪৬76580
  • এইতো, তিনি যা হতে চান তাই হবার চেষ্টা। তাকে তো অন্য কিছু বানানো যাবে না। সমাজ সেটা বুঝে নিলেই পারে। তিনি তো স্পেশাল কিছু খাতির যত্ন চাইছেন না। আর স্কুল শেষ না করলে পরিপক্ক ভাষা ব্যবহার করা যাবেনা, এটা ভাবার কী আছে বুঝলাম না।
  • phutki | 122.79.40.38 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৩:৫৩76569
  • সোজা সাপটা। কঠিন লড়াই। এক এক জন করে এগিয়ে আসছেন আর রাস্তাটা তৈরি হচ্ছে। ধন্যবাদ লেখার জন্য।
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.215.85 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৩:৫৮76581
  • ভাবার তো যথেষ্ঠই আছে। ঘরে ঘরে স্কুল না শেষ করা মানুষের এমন ভাষা করায়ত্ব আর যেই দেখে থাক, আমি দেখিনি। তবে ব্যতিক্রম (রবিঠাকুর) তো থাকতেই পারে, তাও তো লিখেছি। তবু এটা ব্যতিক্রম বলেই ধরব। অন্ততঃ আমি। আর কারো কথা আমি লিখিনি। আমার কথাই লিখেছি।
  • sosen | 125.241.16.178 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৪:০০76570
  • প্রচুর ঘ্যানঘেনে লেখার থেকে এ অনেক জরুরি লেখা ছিল এই মুহূর্তে। চতুর্দিকে এক মৃত একাকীত্বকে নিয়ে টানাটানি, কল্পিত বা সত্য ঘনিষ্ঠতার বিবৃতি, মাইক ও মিডিয়ার শকুনিদৃষ্টি, শ্মশানের খাটে শক্ত বালিশে অনাদরে নড়তে থাকা তাঁর মাথাটির ছবি বার বার টেনে নিয়ে আসছে আমার চোখের সামনে, আর গা গুলিয়ে উঠছে। না, এই নিয়ে কোন কথাই বলতে ইচ্ছে করছিল না এতক্ষণ ।বাংলার তৃতীয় থেকে অমীমাংসিত যৌনতার স্বর রোজদিনের যাপনে পৌঁছে দেওয়ার বাহক হারিয়ে গেলেন এমনটাই যখন ভাবছি, তখন প্রান্তিকার এই লেখা হাতে মশাল তুলে নেওয়ার অনুভূতি জাগায়। ব্যক্তিমানুষের স্বরকে মর্যাদা দেওয়ার লড়াই , যৌনতা, ধর্ম, রং নির্বিশেষে চলতে থাকবে, ছোট ছোট গন্ডিতে , তার পর জুড়ে গিয়ে একদিন ঢেকে নেবে কি এই দেশকে-ও ?

    আশা রইলো, প্রান্তিকা।
  • | 24.97.104.128 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৪:০৩76571
  • খুব ভাল লাগল।

    এই সাহস এই শক্ত আত্মমর্যাদাবোধ সাহস যোগাক, পথ দেখাক আরো অনেককে।

    আমার সমস্ত শুভেচ্ছা আপনার সাথে থাকুক প্রান্তিকা।
  • | 24.97.104.128 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৪:০৯76572
  • প্রান্তিকার লেখাটা যে যোগাড় করেছে তাকেও অনেকটা ভাললাগা। এরকম সাহস আর আত্মমর্যাদাবোধের গল্প আরো আসুক। আমি জানি, বিশ্বাসও করি এরকম গল্প আরো অনেক লড়ইয়ের গল্প, সাহসের গল্প আছে আমাদের আনাচেকানাচে, তাদের মেইনস্ট্রীম মিডিয়া 'নেই' করে দেয়।

    আরো আসুক এখানে।
  • চান্দু মিঁঞা | 233.233.77.20 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৪:১৯76573
  • এটি সত্য ঘটনা না কাল্পনিক তা কি কোথাও লেখা আছে। কাল্পনিক হলেও বক্তব্যের গুরুত্ব কমছেনা।
  • siki | 132.177.209.250 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৪:৪৭76574
  • দ কে ক।
  • চান্দু মিঁঞা | 127.193.32.27 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৫:২৩76582
  • জানিনা প্রান্তিকা নিয়মিত লেখেন কিনা? যদি তা না হয় তাহলে মানতেই হবে ওর ভাষা আশ্চর্য রকমের পরিণত এবং চাইব উনি ওনার চোখে দুনিয়াটা কেমন দেখছেন তাই মাঝে মাঝে লিখুন।
  • Swati s | 132.167.210.209 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৬:০৩76575
  • খুব ভালো লেখা হয়েছে।
  • Subroto Mukherjee | 47.228.105.155 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৬:২৯76583
  • জানিনা আমার লাইফটাইমে হবে কিনা কিন্তু আশা করি অদূর ভবিষ্যতে প্রান্তিকারা নিজের নামে লিখতে পেছপা হবে না ৷
    আশীর্বাদ করি (আমার প্রায় ডবল বয়স আপনার থেকে, তাই সাহস করে লিখলুম) আপনি আপনার নিজের মতো করে সুখেশান্তিতে থাকুন ৷

    এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও ৷ Grab the bull by its horn.
  • I | 24.99.211.199 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৬:৫৩76584
  • ভালো লাগলো। লিখুন বা না লিখুন, নিজের মত করে নিজের জীবনকে যাপন করুন। আমি আপনারই মত একজন প্রান্তিকাকে খুব কাছে থেকে চিনি, সে আমার বড় স্নেহভাজন; এক এক সময় পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আপনি -ই সে কিনা। স্নেহহাত রইল মাথায়।
  • মৌমিতা ঘোষ | 24.99.7.68 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৭:৫৬76585
  • এই সব লেখা পোড়তে ভালো লাগে টাইম পাস হিসাবে, হট টপিক হিসাবে। এই লেখার মধ্যে সাহস, আত্মমর্যাদা, লড়াই-- বাজে কথা। নেট ওয়ার্ল্ডে ফিকশান নাম নিয়ে নন-ফিকশান লিখে কাদের সাহস জোগানো !! অবয়বহীনের স্পেস চাইয়া যেন আকাশবাণীর লিফলেট, হেঃ । জাস্ট সিমপ্যাথি। অনার কিলিং'এ অনার নেই, মুখোশ পড়ে প্রাইড প্যারেডে প্রাইড নেই, তেমনি ছদ্দ নামের আড়ালে কোন বাস্তব নেই। যিনি লিখেছেন তিনি নিজের লেখায় কতটা সাহস পেয়েছেন, অনুপ্রাণিত হয়ছেন !! ঋতুপর্ণ বলেছিলেন-- সবাই পারেনা, সবার দ্বারা হয় না।
  • suvendu das | 130.144.167.103 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ০৯:০১76576
  • children are properties of parent as well as the society they belong to...economics play a vital role in identity crisis...suicides in adolescence...in a large number happens every year...due to so many dreams been shattered due to a unstable fragile future dream been shattering down...complicated topic...Lesbian Homo Trans sexual Bi -sexual...LGBT was never and never be an easy topic to deal with...read
    human are animals not born free not even free at death
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.179.215 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ১০:০৩76577
  • সময়োপযোগী লেখা। ভাল লেখা। শুধু একটা ব্যাপারে মন খুঁত খুঁত থেকেই যাবে। যদি কেউ বলেন, আমি পাশের বাড়ির মেয়েটা(ছেলেটা)-র হয়ে লিখেছি। তাকে খুব কাছ থেকে চিনি বলে লিখতে পারলাম, তো ঠিক আছে। যে স্কুলিং শেষ করেনি, তার হাতে এত পরিপক্ক ভাষার ব্যবহার মন মানতে চায়না। তবে রবীন্দ্রনাথ তো ওরিয়েন্টাল সেমিনারি থেকে বিতাড়িত হয়ে আর পড়েন-ই নি। সেরকমও হতে পারে। ভাল লাগল লেখাটা।
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.179.215 (*) | ০১ জুন ২০১৩ ১০:১৬76578
  • আমি আর একটু কিছু যোগ করতে চাই। আমাদের অল্পবয়সে,আমাদের পাড়ায় একটা বাড়ির তিনতলায় এক ভদ্রলোক ভাড়া থাকতেন। তিনি ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। সাইকেল চালিয়ে বহু দূর দূর কাজে যেতেন। সাদা সার্ট আর পাজামা পরতেন। দুটো বুকপকেটে প্রচূর কাগজপত্র আর প্লায়ার্স, টেস্টার ইত্যাদি ভরে রাখতেন। আমরা মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস-ও করতাম। এত কাগজ কিসের? উনি কথা বলতেন কম আর যা বলতেন, ভাঙা গলায়।

    একদিন এক বাড়িতে অন্ধকারে ঢুকেছেন না জানিয়ে। আমারই এক বন্ধু চোর ভেবে পেছন থেকে জাপটে ধরেছে। তার পর ছি ছি একি করলাম, বলে দৌড়ে বেরোল। উনি তার পর লজ্জায় আমাদের পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেলেন।
  • sch | 126.203.162.196 (*) | ০২ জুন ২০১৩ ০৬:১৯76586
  • মৌমিতা আপনার " ছদ্দ নামের আড়ালে কোন বাস্তব নেই" কথাটা পড়ে একটু অবাক লাগল ? লেখিকার নাম প্রান্তিকা না হয় যদি জ্যোৎস্না জোয়ারদার বা তমালিকা তলাপাত্র হতো -আর শেষে ওই নাম বদলের বাক্যাবন্ধটি না থাকত আপনি কি খুব উজ্জিবীত হতেন ? তার মানে আপনি কি বলতে চাইছেন যে ঋতুপর্ণের মতো উচ্চতায় না পৌঁছে কেউ নিজের অভিজ্ঞতা লিখতে পারবেন না ? সেলিব্রিটি হওয়া প্রি রিক্যুইজিট ?

    গুচ তে দ-দি'র "ভাগড়পাড়া স্কুল থেকে..." বা সোসেন দিদির "ফেসবুক থেকে কিছু পুরনো লেখা..." দুটোই তাদের নিকে বের হয় - যাদের সাথে ওনাদের ব্যক্তিগত কোনো কম্যুনিকেশান নেই তারা ওদের পুরো নাম জানেন না ...তা বলে কি কথাগুলো মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে - অবাস্তব হয়ে যাচ্ছে ?

    বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু ... করবেন কি না আপনার ব্যাপার
  • maximin | 69.93.245.146 (*) | ০৫ জুন ২০১৩ ১০:০৭76587
  • খুব সুন্দর লিখেছেন। প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।
  • নির্মাল্য | 213.110.243.21 (*) | ০৬ জুন ২০১৩ ০১:০৫76588
  • Albert Nobbs সিনেমাটা দেখেছেন কি? রূপঙ্কর সরকার-এর ওই ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিটির মত এক চরিত্র কে নিয়েই। দেখতে পারেন। imdb লিংক : http://www.imdb.com/title/tt1602098/
  • Born Free | 168.144.176.250 (*) | ০৬ জুন ২০১৩ ০১:২০76589
  • বাহ। খুব খুব ভালো লেখা। থ্যান্ক ইউ।
  • aranya | 154.160.226.53 (*) | ২৮ জুন ২০১৩ ০৯:১৯76591
  • আগে মিস করে গেছিলাম। ভাল লাগল লেখাটা, খুবই ভাল লাগল।
  • তাতিন | 132.252.251.244 (*) | ২৮ জুন ২০১৩ ১১:৫৮76590
  • "তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। দুবছর ধরে ক্লাসের যে বান্ধবীকে আমার ভালো লাগতো তাকে লাভ লেটার দিই। সে প্রচণ্ড অপমান করে আমাকে, সারা স্কুল জেনে যায়। চিঠিটা সোজা চলে যায় টিচারদের কাছে। গার্জিয়ান কল।"
    আচ্ছা, কোএড স্কুলে কোনও ছেলে এই কেস খেলে তো গার্জিয়ান কল, স্যারেদের প্যাঁদানি সবই হতো
  • আরে_আমি_miiiiiiiiiim | 127.18.231.36 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৪৯76592
  • সে রকম মাথাওয়ালা একজন ঈশ্বর থাকলে নিশ্চই শরীর আর মনের এমন বৈপরীত্য দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করতেন না ।প্রকৃতির খেয়ালেই "ভুল মন" বা "ভুল শরীর" (যাই বলি না কেন) নিয়ে জন্মায় কেউ কেউ ।খুব মেয়েলী ( I mean,প্যানপ্যানানি) স্বভাবের একটি মেয়েতো চাইলেই tomboy হয়ে যেতে পারে না । তাহলে সমাজের মানুষেরা কেন ছেলে স্বভাবের মেয়েটিকে খামোকা দোষারোপ করে?
    আবার এটাও মনে হচ্ছে,আমাদের সমাজের স্বাভাবিক (!) মেয়েগুলো যদি কর্মে আপনার মত হত ! ইস্ ...দেশটাই বদলে যেত (আমাদের দেশও কিন্তু...বাংলাদেশ..হা হা হা ..) আর হ্যা,

    " আমার মেয়ে বন্ধুরা আমার সাথে ফ্লার্ট করে, আমাকে নন-ভেজ এস এম এস পাঠায়। ভালো লাগে।"
    ------এই লাইনটা পরে খুব মজা পেয়েছি।

    যাই হোক, লেখাতো দেখছি ভয়াবহ ( :o ) পরিপক্ক । আচ্ছা ! আপনি বর্ণিত ব্যবসাসমূহের ব্যবসায়ী নাকি -----?...সেই সন্দেহ কিন্তু রয়েই গেল...(হি..হি..হি..)
  • cm | 127.247.112.160 (*) | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০১:২৩76595
  • তার কারণ পচ্চিমবংগে আমরা অন্যের হাঁড়ির খবর নিয়ে বড্ড বেশি মাথা ঘামাই। চেন্নাই-এর মোড়ে মোড়ে দিবারাত্র আড্ডা দিতে দেখেছেন?
  • শামীমা মিতু | 192.160.122.78 (*) | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:১৮76593
  • অসাধারন একটা লেখা
  • dd | 132.167.8.211 (*) | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ১২:৪৪76594
  • জাস্ট জানাই।

    চেন্নাইতে গতো বছোরেও যখন চাকরী করতাম,...... আমার সহকর্মী ছিলো উত্তর প্রদেশী হিন্দীভাষী মুসলমান দুই সমকামী কলীগ। এর থেকে মাইনরইটি চেষ্টা করলেও খুঁজে পাবেন না।

    এরা স্বচ্ছন্দে ছিলো। যদ্দুর দেখেছি। সমাজের বাইরে করে দেয় নি। পার্সেকিউশন ছিলো না। বুলিং ছিলো না। অ্যাকদম না।

    তখোন মনে হতে আর এখনো মনে হয়। প্রচন্ডো কনসার্ভেটিব সেন্নাইতে এরা নিজেদের মতোন আলাদা হয়ে টিঁকে থাকতে পারছে। কিন্তু সাধের পচ্চিম বংগে বোধয় পারতো না।

    দেখুন। যাস' একটি এগজাম্পলেই কতোগুলো তর্কের ফ্রন্ট খুলে দ্যালাম। হিন্দু/মোছোলমান। পচ্চিম বংগো/প্রবাসী, স্ট্রেইট/হোমো। দক্ষিন/উত্তোর ভারোত।

    ইগনোর করুন টোটালি অথবা সামলান। এবারে সামলান।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন