এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নারীদিবসঃ ২। ‘ঘরকন্যা’দের বেতনক্রম

    তির্যক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ৭৬৪০ বার পঠিত
  • হ্যাঁ, নারীকে নিয়েই কথা আসে সারাবছর, অজস্র কথা। জীবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যায় নানারঙের কথা। সেইসব কথার পিঠে চড়ে আসে ভাবনারা। প্রশ্নেরা। ঘুরে বেড়ায় আলগোছে। নারীদিবসের আশেপাশে এইসব ভাবনাগুলো জমাট বাঁধে, মাথায় চড়ে বসে।  আমাদের তাগাদা দেয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নিতে। আর সেই পুরোনো পড়া পুরোনো ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই কোথাও কোথাও নতুন কথাও জুড়ে যায় জায়গামত। এবারের পুরোনো পড়া ঝালানোর সময়েই পড়লাম স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘ঘরোয়া’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ই মার্চ)। খোদ নারীদিবসে দাঁড়িয়ে একজন নারীই যখন মেয়েদের ‘গুছিয়ে সংসার করার মোহে’র দিকে আঙুল তোলেন, তখন একটু ধাক্কা খেতে হয় বইকি, মানে এইটা ঠিক পুরোনো পড়ার সিলেবাসের মধ্যে ছিল না তো বরং (এই সাংবাদিকের লেখা) যেসব পুরোনো পড়া মনে পড়ে যায়, সেখানে উনিই সওয়াল করে এসেছেন মেয়েদের ঘরোয়া কাজের মূল্যায়নের পক্ষে; সারামাসের রান্নার লোকের মাইনের সঙ্গে বা বারো ঘন্টার আয়ার মাইনের সঙ্গে ড্রাইভার বা মিস্ত্রীর মাইনের একেবারে সোজাসুজি তুলনা করেছেন। তাহলে কি দুটোই সত্যি ! এইখান থেকে শুরু হয়ে যায় আমাদের লেখাপড়াশোনা যার সরল অর্থ হল আজকের পড়ার মধ্যে নতুন ও পুরোনো সবরকমের কথাই থাকবে, নারী ও আনাড়ি সকলের কথাই নামে ও বেনামে থাকবে।


     


    মেয়েলী ও ঘরোয়া


    তবে মেয়েদের যাবতীয় ‘মেয়েলী’ কাজকারবারের মূল্যায়নের কথা উঠলে প্রথমে একতরফা চাট্টি কথা শুনতেই হবে। কারণ সোজা কথাটা হল, যুগ যুগ ধরে যেসব কাজ মেয়েরাই পেরে এসেছে আর করে এসেছে সংসারে সেগুলোকে যথেষ্ট মূল্যবান বলে কেউ ভাবেন নি আর তার কোনও স্বীকৃতিও সেভাবে দেননি। বাড়ির পুরুষটি বাইরে কাজ করেন, তাঁর কাজটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর বিশ্রাম এমনকি তাঁর বিনোদনটিও গুরুত্বপুর্ণ। কিন্তু বাড়ির মহিলাটিকে ‘হাউসওয়াইফ’ থেকে ‘হোমমেকার’ যে নামই দিন না কেন তাঁর কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন, আর কতটুকু স্বীকৃতি দিয়েছেন, সে প্রশ্নটা এবার নিজেকেই করুন। সেটা কাপড়ে সূক্ষ্ম ফোঁড় তুলে নকশা তোলাই হোক কি রোজকার থোড়-বড়ি-খাড়ার মধ্যে থেকেই বিচিত্র পদের রান্না হোক, বা বড়ি-আচার-উলবোনা-আলপনা থেকে ঘরদোর পরিপাটি সাজিয়ে রাখা্র নিপুণ ঘরকন্না হোক। ভেবে দেখেননি এই কাজগুলোও নেহাৎই প্রয়োজনভিত্তিক নয়, এদেরও কিছু নান্দনিক মূল্য আছে, এদের পেছনেও কিছু চিন্তা-ভাবনা-সৃজনীশক্তি খরচা হয়, যা সকলের ক্ষেত্রে ঠিক একইরকম নয়। অর্থাৎ ওই যে সর্ষেবাটা-মোচাকাটা থেকে শুরু করে সুগোল ধপধপে লুচি সমেত যা যা আপনি ‘আহা মায়ের হাতে কি চমৎকার হত !’ ভেবে এখন আপ্লুত হয়ে পড়েন, আর ভাবেন ঠিক মায়ের মত কেউ পারে না, ভেবে দেখবেন যখন নিয়মিত সেগুলো পেয়েছেন, তখন সেগু্লো কতটা দামী ভেবেছিলেন, আর তার জন্য  মাকেই বা তখন কতটুকু ধন্যবাদ দিয়েছিলেন ? আর আপনার ঘরে যে মহিলা ‘মায়ের মত’ পারেন না, তিনি যা যা পারেন সেটাই বা এখন কতটুকু মনো্যোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন ? তিনি সারাদিন বাইরে না গিয়ে ঠিক কি কি করেন, বিশ্রাম পেলেন কিনা বা ইচ্ছে থাকলেও কি কি করে উঠতে পারলেন না, সে খবরই বা কতটা রেখেছেন ? খেয়াল করলে দেখবেন দুদিনের জায়গায় তিনদিন একঘেয়ে রান্না খেতে হলে বা ঘরদোর অপরিস্কার বা অগোছালো থাকলে আপনারও ভালো লাগছে না, লাগার কথাও নয়। তখন আপনিই বলে উঠছেন (উচ্চগ্রামে কিম্বা মনে মনে) ‘সারাদিন কি যে করে’। কিন্তু যখন সব কিছু ঠিক ঠিক চলে তখনও মনে করেন ‘সারাদিন তো ঘরেই থাকে...’ অর্থাৎ ঘরের কাজটা ঠিক যেন কোনও কাজই নয়। আপত্তিটা এখানেই। 


    না, এই আলোচনায় কর্মরতা মেয়েদের কথা এখনই আনছি না। আর মনে রাখতে বলছি যে এই লেখা একটা বিস্তৃত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে লেখা যেখানে মেয়েরা মূলতঃ ঘরের কাজ করেন এবং সব ঘরের সব কাজই করেন। তাই যে সব উচ্চশিক্ষিত নেটিজেন এই লেখা পড়ছেন আশা করব তাঁরা নিজের পরিবারের সঙ্গে মিল না পেলেই এই সব কিছুকে যেন কষ্টকল্পনা ভেবে বসবেন না। 


    যে কথা বলছিলাম, এই আলোচনা মেয়েদের ওপর সংসারের চাপ নিয়ে নয়, চাপ পুরুষের ওপরও কিছু কম নয়। শ্রম বন্টনের নিয়ম মেয়েরা (বা যিনি ঘরে থাকেন) তিনি ঘরের কাজ করবেন, এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু সেই কাজকে এবং সেই সম্পর্কিত দক্ষতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়াটা যে এক রকমের অজ্ঞতা, সেটাই এখানে বলবার কথা। মেয়েরা যে স্রেফ ‘হৃদয়তাপের ভাপে ভরা ফানুস’ তাদের হি-হি হাসি কিম্বা চোখের জল, সকলই নেহাৎ অকারণ, তাতে বিশেষ মনোযোগ না দিলেও চলে, এই ধারণা বংশানুক্রমে চারিয়ে গেছে সমাজে। মেয়েদের শাড়ি-গয়নার আলোচনাই হোক বা রান্নাবান্না বা শাশুড়ি-ননদের নিন্দে, সবই শুধুমাত্র ‘মেয়েলী’ বলেই যেন তা ছেলেদের গাড়ির ‘মডেল’(উভয় অর্থেই) বা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আলোচনা কি অফিসের বসের / সহকর্মীদের নিন্দেমন্দ থেকে ইতরগোত্রীয়। অথচ যে যে জগতে থাকে সে তো সেই জগতের কথাই আলোচনা করবে, কোন জগতটাই তো মিথ্যে নয়, অর্থহীনও নয়, এর মধ্যে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ আসছে কোথা থেকে ? সেসব কেউ ভেবে দেখে না। এমনকি মেয়েরাও না।


     


    বাইরে আসা


    হ্যাঁ, ভেবেচিন্তেই বললাম। মেয়েলী গুণপনাকে এই যে পাইকারী হারে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, এই অবহেলা পেতে পেতেই একটা সময়ে মেয়েরাও নিজেদের ‘মেয়েলী গুণ’গুলোকে (এবং মেয়েলী কাজগুলোকে) মূল্যহীন ভাবতে শুরু করেছে। ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’র কথা ভাবতে শুরু করেছে যার একমাত্র অর্থ হল বাইরে বেরিয়ে ‘পুরুষের মত’ উপার্জন করা। আজ যে মেয়েরা চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ-পঞ্চাশের কোটায়, তারা যে একদিন সংসারের প্রয়োজনে নয়, নিজের প্রয়োজনেই দলে দলে বেরিয়ে এসেছিল, তার একটা কারণ কিন্তু এই যে তাদের শিশুকালে অনেকেরই মায়েরা ভেবেছেন তাঁর মেয়ে যেন তাঁর জীবন না পায়। অর্থাৎ শুধুমাত্র সংসারের ‘থ্যাঙ্কলেস জব’-এই মেয়েরা আটকে থাকুক সেটা মেয়েরাই (মানে মায়েরাই) চাননি, চেয়েছেন যে কাজ অর্থমূল্যে বিচার হয় সেইরকম কিছু করতে। যার ফল হল আজকের কর্মরতা মহিলা প্রজন্ম, যাঁরা সংসার ও চাকরী মোটামুটি নিপুণভাবেই সামলে নেন কিন্তু হয়তো ওই তথাকথিত ‘মেয়েলী’ কাজগুলোর জন্য খুববেশী সময় দিতে পারেন না। একটা সময় অবধি যেটা অলিখিত নিয়ম ছিল, অর্থাৎ মেয়েরা শুধু ঘরের কাজ করবে, সন্তানের দেখাশোনা করবে, সেটা নিঃসন্দেহে খুব খারাপ ছিল। সেই নিয়ম চুলোয় গেছে, মেয়েরা স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করছে, নিজের বিদ্যেবুদ্ধির সদব্যবহার করছে, এর কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু এইখানে এসে একটা প্রশ্ন খুব তীব্র হয়ে ওঠে, স্বাধীন হতে গেলে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে বাইরে এসেই কাজ করতে হবে কেন ? বাইরে কাজ করেন না যে মহিলা, তিনি কি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নেই ? যাঁর নিরন্তর সেবা বা পরিষেবাটুকু বাদ দিয়ে তাঁর সংসার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, তিনি বাইরে না বেরোনো অবধি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন এমনটা ভাবতে পারেন না কেন ! তার মানে শুধু বাইরে বেরিয়ে উপার্জন না করা অবধি একজন নারী যথার্থ স্বাধীন হচ্ছেন না, তাঁর গুণাবলীর এমনকি মতামতেরও কোনও মূল্য থাকছে না, যদিচ তিনি গৃহকর্ম দ্বারা সংসারকে একরকম ধারণ করেই আছেন। এতদ্বারা গৃহকর্মের মূল্যের যে অবনমন হচ্ছে ব্যাপারটা কি সত্যিই ততটাই অর্থহীন ? দারুণ রান্না বা সেলাই করতে পারা, ঘর সাজাতে পারা, গান গাইতে পারা, এইসবের কি সত্যিই কোনও মূল্য নেই ! 


    হ্যাঁ, ততটাই অর্থহীন না হলেও ততটাই মূল্যহীন, যতক্ষণ না সেটা অর্থমূল্যে বিচার হচ্ছে। না হলে এত বছরে এত কিছু বদলে গেল কিন্তু কেউ শুধু সংসারের কাজ করাকে একটা পেশা হিসেবে দেখতে শিখল না কেন ? আর যিনি নিজে সংসারের উনকোটি কাজ করে চলেছেন, তিনিই বা কেন ‘আমি কিছু করি না’ জাতীয় হীনমন্যতায় ভোগেন ? কেনই কোন মহিলার স্বামী ঘরের কাজ করলে তিনি সেটা স্বীকার করতে লজ্জা পান ? আমি বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত বাড়ির মহিলার কথা জানি, যাঁরা শুধু ‘নিজের হাতে রোজগার’ করার তাগিদে কেউ দিনের শেষে ব্লাউজে বোতাম পরাচ্ছেন, কেউ কোন কোম্পানীর প্রসাধন সামগ্রীর এজেন্সী নিয়েছেন, কেউ কোন ব্যাঙ্কের জনসংযোগ বাড়াবার জন্য ফোন করছেন। এই কোন কাজই তাঁদের বিশেষ পারদর্শীতার চর্চার জন্য নয়, ভালবেসে করা কাজ নয়, এই কাজ করে যা হাতে আসে তা সংসার খরচে বিশেষ সুবিধে ঘটাবার মত নয়, কিন্তু সেটা তার ‘নিজের রোজগার’। সেইটুকু রোজগারের সময় বার করার জন্য তাঁরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, স্বামী-ছেলেমেয়েদের কাছে হয়তো নানারকম কথাও শোনেন, কিন্তু তাঁরা জানেন এইটা ছেড়ে দিলে তাঁর নিজের উপার্জন কিছু থাকবে না। স্বামীরা হরদম বলবেন ‘তুমি কাজটা ছেড়ে দাও, ওইটুকু টাকা আমিই তোমায় দেব’, কিন্তু আসলে তা দেবেন না। কারণ গৃহশ্রম অ-মূল্য নয়, মূল্যহীন। সেইটুকু উপার্জন না করতে হলে সেই মহিলা হয়তো সেই সময়ে নিজের শখেই কিছু সেলাই করতেন, নতুন কিছু রান্না করতেন, ঘর সাজাতেন, বা গান নিয়ে বসতেন, কিন্তু সেই ‘মেয়েলী’ কাজের কোনও অর্থমূল্য নেই, তা তাঁকে স্বাভাবিক মুক্তি দিতে পারেনি, তাই তাকে বিসর্জন দিতে হল স্রেফ উপার্জনের চাপে। অথচ সেই মেয়েদের হাতের তৈরী বড়ি-আচার-নাড়ু-পিঠে বা হাতে সেলাই করা আসন-কাঁথা-সুজনিই আপনি কিনে আনছেন মেলা থেকে, কিঞ্চিৎ গর্বিত হয়েই দেখাচ্ছেন সবাইকে, তখন তা অবশ্যই ‘মূল্যবান’।


     


    আসল কথাটিঃ বেতনক্রম


    যাঁরা ভাবছেন এইবার ঝোলা থেকে বেড়াল বেরোল বলে, তাঁদের সবিনয়ে জানাই, এক্কেবারে ঠিক কথা ভেবেছেন, এই বেড়ালটিকে যথাস্থানে বের করার জন্যই অর্থাৎ গৃহশ্রমকে সবৈতনিক করে তোলার দাবীকে যুক্তিযুক্ত ও যাথাযথভাবে পেশ করার জন্যই এত গৌ্রচন্দ্রিকা। একান্ত বাসনাটি হল যে এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ‘সলিড’ চিন্তাভাবনা হোক। কারণ এই বিষয়টা নিয়ে মূলতঃ কথা ছোঁড়াছুঁড়িই শুনতে পাই, কিন্তু গঠনমূলক বাস্তবসম্মত কিছু প্রস্তাব অন্ততঃ আমার চোখে পড়েনি। বরং এই প্রশ্ন উঠলেই সবাই গেল গেল রব তোলেন যেন এই বিষয়টির পণ্যায়ন হলেই সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে, গৃহকর্ম যে ভালোবাসার বিনিময়মূল্যে দেওয়া-নেওয়া হয় তা নষ্ট হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন গায়ক, লেখক, বিজ্ঞানী, শিল্পী সবাই যদি পারিশ্রমিকের বিনিময়েই ভালোবাসার কাজ করে থাকেন তবে ঘরের কাজের ক্ষেত্রে আলাদা হবে কেন ? উপরন্তু গৃহকর্ম সবৈতনিক হলে মেয়েদের এই ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’র জন্য বাইরে বেরোনোর দরকার কমবে আর সংসারের কাজে সময় দেওয়া বা ভালবাসাও বাড়বে বই কমবে না। তবে হ্যাঁ, কারণে অকারণে ‘রোজগার তো করতে হয় না, তাহলে বুঝতে!’ বলার কু-অভ্যেসটা আপনাকে ছাড়তে হবে। সত্যি বলতে কি ৫২ গুন ৭ দিন সংসারের ‘ভালবাসার দাবী’ যাঁরা মেটাচ্ছেন দিনের শেষে তাঁদের মুখে ‘ভূতের বেগার খাটার’ হতাশা তো কখনো না কখনো বেরিয়েই আসে, তাই মনকে চোখ না ঠেরে তাঁর প্রাপ্যটা স্বীকার করেই নিন না ! 


    তবে বেতনের পরিস্কার একটা কাঠামো থাকা দরকার। এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে এটা তার বেতন, উপহার বা হাতখরচা নয় আর স্বামী এখানে দাতা নয়। যে ভাবে স্বামীর অবর্তমানে তার পেনশন স্ত্রীর কাছে আসে, ডিভোর্সী স্ত্রীর কাছে খোরপোষের টাকা আসে, তেমনিই যেকোন বিবাহিত পুরুষের বেতনের একটা অংশ তার স্ত্রীর কাছে আসবে যেটা ঘরের কাজ করার জন্য তাঁর বেতন, তাঁর নিজস্ব উপার্জন। তিনি যদি ঘরের কাজের জন্য পরিচারিকা রাখতে চান তো সেই বেতন থেকেই পরিচারিকার মাইনে হবে। (ফলে পুরুষটিও কিছুটা শান্তি পাবেন এই ভেবে যে তাঁর অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে)। কিন্তু এছাড়া সেই টাকা মহিলাটি কিভাবে খরচ করবেন, কি কিনবেন, কাকে দেবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। মহিলাটি চাকরী করলে এই বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, সে ক্ষেত্রে ঘরের কাজ তাঁরা দুজনে ভাগ করে করবেন না ‘আউটসোর্স’ করবেন, সেটা নিজেরা ঠিক করবেন। তবে হিসেব মত ‘আউটসোর্সিং’-এর খরচ দুজানেরই দেওয়া উচিৎ। এই পদ্ধতি মেনে চললে যে মহিলা নিজের হাতে সব করেন এবং যিনি সব কাজের জন্যই কাজের লোকের ওপর নির্ভর করেন তাঁদের মধ্যে নিজস্ব উপার্জনের ভিত্তিতে একটা তফাৎ থাকবে, সেটাও যুক্তিযুক্ত। আর যদি কোন সংসারে মহিলাটি বাইরে কাজ করেন, এবং স্বামীটি ঘরে থাকেন, তবে একইভাবে তাঁর বেতনের একটা অংশ তাঁর স্বামীর কাছে বেতন হিসেবে আসবে, সেটাও কোনোভাবেই ‘বৌ-এর পয়সায় খাওয়া’ হিসেবে বিবেচ্য হবে না। 


    এই লেখায় ভুল বোঝার বহু সুযোগ আছে, সে সব মাথায় রেখেই লিখছি। এই লেখা থেকে কেউ যদি মেয়েদের চাকরী করার বিরোধি বা মেয়েদের গৃহকর্ম অভিমুখী হবার দরকারী জাতীয় কোন বার্তা পান তো সেটা নেহাৎই লেখকের বোঝানোর ত্রুটী। এমনকি এই লেখা সরাসরি নারী-পুরুষ মেরুকরণের কোনো ধারণাকেও প্রশ্রয় দিচ্ছে না। সাধারণভাবে মহিলারাই গৃহকর্ম করেন বলে এখানে বার বার মহিলাদের কথাই আসছে কিন্তু এর মূল উপজীব্য হল গৃহকর্ম। গৃহশ্রমকে একেবারেই গুরুত্বহীন ভাবার যে সামাজিক নির্মাণ সেটা এবং তার প্রভাব (মূলতঃ মেয়েদের ওপর) নিয়ে এই লেখায় একটু চিন্তাভাবনা করার চেষ্টা হয়েছে। যে মেয়েরা বাইরে কাজ করতে চান, নিজেকে প্রমাণ করতে চান করুন, কিন্তু যারা জমিয়ে সংসার করতে ভালবাসেন তাঁরাও যেন নিজের পায়ে না দাঁড়াবার হীনমন্যতা থেকে বেরোতে পারেন। আর সে জন্য তাঁদের নিজস্ব মেয়েলী গুণপনাগুলোকে বিসর্জন দিতে না হয়। 


     


    বিপদসঙ্কেত


    এই পদ্ধতি একেবারে ত্রুটিহীন এমন দাবী করা যায় না এবং সমস্ত পদ্ধতির মতই এখানেও কিছু ধোঁয়াশাপূর্ণ জায়াগা থাকবে, সেগুলোও একটু ভেবে রাখা ভালো। যেমন কোন কোন কাজ ঠিক গৃহশ্রমের মধ্যে পড়বে, সেটা ঠিক করাই সবচেয়ে কঠিন। যাঁরা ব্যাবসা করেন তাঁদের স্ত্রীরা বেতন কিভাবে পাবেন বা গৃহবধুটি যদি কাজের ক্ষেত্রে বাড়ির অন্যন্য সদস্যের (শাশুড়ি, ননদ)সাহায্য নেন তবে বেতন ভাগাভাগি কি ভাবে হবে সেটা নিয়েও পরিস্কার করে কিছু ঠিক করা মুস্কিল । তাছাড়া গৃহ-পরিষেবা ক্রয়যোগ্য হলে পুরুষটির দাবী হয়তো বেড়ে চলবে, উল্টোদিকে মেয়েদের ‘পারব না’ বলার সুযোগ কমে যাবে। এতে মেয়েদের ওপর চাপ কার্যতঃ বেড়ে যেতেও পারে। তবে আমার ধারণা একটা মানুষ কতটা ‘ডিম্যান্ডিং’ হবেন সেটা কিছুটা তাঁর চরিত্রগত। যিনি এমনিতে নিজের টুকিটাকি কাজ করে নেন, শুধুমাত্র স্ত্রী মাইনে পাচ্ছে বলেই নিজে জলটুকুও ঢেলে খাবেন না, এমনটা হবার কথা নয়। আর তেমন হলে সেই প্রতিবাদ মহিলাটিই করবেন, তিনি তো স্বাবলম্বী। 


    তবে ওই যে কথা বলা আছে ওই ‘ঘরোয়া’ প্রবন্ধে, যে মেয়েদের চুটিয়ে সংসার করার এক তীব্র আকর্ষণ, সেটা কিন্তু সমস্যার আর একটা দিক। ওই ‘ঘরোয়া’ বিষয়ে কথা বলেছিলাম অনেকের সঙ্গে, দেখা গেল পুরুষেরা অনেকেই রে-রে করে উঠলেও লেখাটার সঙ্গে মেয়েরা (ব্যক্তিগত অভজ্ঞতার মাপে) বিভিন্ন মাত্রায় একমত, মানে এই সংসারের ঝুল ঝাড়া-কাপড় কাচা-পর্দার সঙ্গে চাদরের রঙ মেলানো (কাজগুলো ঠিক এইই নয় সব সময়, বদলে যায় এক নারী থেকে অন্য নারীতে) এতে মনে প্রসারতা বাড়ুক না বাড়ুক মেয়েদের কাছে যে এগুলো খুব জরুরী এবং সেই জরুরী ভাবাটা মেয়েদের এগিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেটা মেয়েরা কেউ  সরাসরি অস্বীকার করতে পারছেন না। এই কাজগুলো চলনসই ঘরনের অর্থকরী হয়ে উঠলে মেয়েরা অনেকেই হয়তো বাইরের জগতের ‘চ্যালেঞ্জিং’ কাজে সেভাবে দলে দলে এগিয়ে নাও যেতে পারেন। আবার যেহেতু স্বামীর বেতন থেকে স্ত্রীর বেতন হচ্ছে, তাই স্ত্রীকে চাকরী করতে না দেওয়াটা স্বামীর অধিকারের মধ্যে পড়ে যেতে পারে (মানে স্বামী সেটা ভেবে ফেলতে পারেন !)। সেটা কি তথাকথিত ‘নারীমুক্তি’র বিরোধী হয়ে উঠবে বা বাইরের জগতে যে নারী-পুরুষ সাম্য আস্তে আস্তে গড়ে উঠছে, তাকে টাল খাইয়ে দেবে ? বিশেষ করে ততটা অর্থকরী নয় এমন যে কাজগুলো মূলতঃ সময় কাটাবার জন্যই মেয়েরা করে থাকেন, যেমন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুকল্যাণেরই তো কাজ বেশীর ভাগ, সেসবও যদি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, সেও তো খুব ভালো হবে না ! অনেক সময় মেয়েরা প্রথম দিকে কাজের জগত থেকে সরে দাঁড়ালেও, সংসারের চাপ কিছুটা কমলে আবার কাজের জগতে ফিরে আসতে চান, বেতনক্রম চালু হয়ে গেলে সেই তাগিদটাও কমে যাবে না তো ! 


    তবে এইসব প্রান্তিক সমস্যার কথা ভেবে তো কেন্দ্রীয় সমস্যাটাকে দুরে সরিয়ে রাখা চলে না। আসলে একটা পদ্ধতি বাস্তবায়িত হতে শুরু না করলে তার ত্রুটিগুলো বোঝা যায় না, সমস্যাগুলোরও মোকাবিলা করা যায় না। তাই সাহস করে মেয়েদের বেতন দেওয়াটা চালু করে না ফেললে কিচ্ছু বোঝা যাবে না। তাই আসুন আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করি, কারণ আজকের আলোচনাই কালকের তুলোধোনা (বিরোধি-পক্ষকে) হয়ে উঠবার ক্ষমতা রাখে !


    পুনশ্চঃ আগেই বলেছি এই লেখা আসলে অনেকের লেখা। অনেকের মতামত, বক্তব্য শুধুমাত্র গুছিয়ে তোলা, তাই একে বলা যায় আসলে লেখা-পড়া-শোনা। এই বিষয়টা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, জোরদা্র তক্কাতক্কি যাই হোক সব সেই অ্যাকাউন্টেই জমা ড়বে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ৭৬৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 101.185.27.126 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৮86230
  • পাই-এর সাত নম্বর প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • কল্লোল | 125.242.191.217 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৫86223
  • খুব জরুরী। এসব কথা আগেও বলা হয়ছে। কিন্তু যথেষ্ট বলা হয় নি। আরও হোক।
    এই কথাগুলো বলতে বলতেই আজ আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে করতে শিখছে। এখন লজ্জা করে ভাবতে কিন্তু স্বীকার করতে আজ আর লজ্জা নেই, আমরা আমাদের অল্প বয়সে (প্রচুর "বিপ্লব" ফাটিয়েও) নির্লজ্জ রকমের "পুরুষ" ছিলাম।
  • একক | 24.99.77.240 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫86231
  • এটাতো দক্ষিনপন্থী আর বামপন্থীর খিচুড়ি মডেল :P

    খেয়াল করে দেখুন এখানে মিনিমাম ওয়েজেস ব্যাপারটা আর সেন্ট্রাল প্ল্যানিং এর
    পার্ট থাকছেনা । ম্যারেজ ইস আ প্রাইভেট কন্ট্রাক্ট ।এবার দুজন কন্ত্রাক্তী নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিচ্ছে ক্যাশ ইনফ্লো-র কত পার্সেন্ট কিভাবে ভাগ হবে । একজন বাইরে চাকরিজীবি আরেকজন 'ঘরের চাকরি' করেন । দুজনের ই রোজগারের একটা অংশ এসেট এ ঢোকা উচিত । আবার যে যেমন ইনফ্লো আনছেন বাইরে থেকে সেটাই ঠিক করে দিচ্ছে ইটারেশন এর ফার্স্ট ইনপুট কী । যদি কেও দশ হাজার মাইনে পান তাহলে রুটি-তক্কারি বানাবার জন্যে মাস গেলে পাঁচশো দেবেন ।যদি কেও পঞ্চাশ হাজার পান তাহলে হয়ত দুহাজার ।"বাজারে " কত রেট্ সেটা দাবি করে লাভ নেই কারণ আন্ডার কন্ট্রাক্ট আমি পার্সেন্টেজ পাব বা হওয়াতএভার নীগশিযেতেদ । এবার সেটাও যেহেতু আমার "রোজগার" তাই তার একটা অংশ এসেট এ দেবো । ইটারেশন চলতে থাকবে । নো মিনিমাম ওয়েজ । নায়দার ওপেন মার্কেট । কারণ ওপেন করতে গেলে স্বামীর রোজগার কমে গেলেই তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাওকে খুঁজতে হবে যেভাবে আমরা লসে চলা/শেয়ার পরে যাওয়া কোম্পানি ছেড়ে নতুন কোম্পানি খুঁজি । বাস্তবে এটা কদ্দুর সম্ভব ? খিচুড়ি পাকালে এই হয় :)

    এটা বাস্তবে করতে গেলে "ঘরকন্যা" দের এক্সপিরিয়েন্স কাউন্ট করতে হবে । মানে আমি দশ বচ্ছর অমুকের ঘর সামলেছি বলে একজন ফ্রেশার কন্যার চে ম্যারেজ এর বাজারে বেশি যোগ্য । একমাত্র সেটা হলেই মিনিমাম ওয়েজেস না থাকলেও থ্রু মার্কেট কম্পিটিশন একটা জায়গা আসবে যেখানে কন্যারা নিজের শ্রমের মর্যাদা পেতে পারেন । আর নইলে এই ক্লোস্ড সিস্টেম কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে একটা খিচুড়ি ব্যবস্থা হবে যেটা আরও বেশি শোষণ প্রমোট করে । ভার্জিনিটি কমপ্লেক্স ভুলে যান , সেক্স হোক বা শ্রম সবকিছুকে এক্সপিরিয়েন্স /পারফরম্যান্স দিয়ে মাপুন তাহলে যা চাইছেন তাই হবা ।
  • shatadal | 223.108.105.253 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৩86232
  • এরকম করলে হয় না? চাকরি না করা স্পাউস বাইরে অন্যের ঘর-সংসার সামলানোর কাজ করলে যে টাকাটা পেত, অন্ততঃ তার অর্ধেক অন্য স্পাউসকে দিতে হবে। না হলে, সে বাইরে হাউসকীপিং-এর কাজ করবে এবং মাইনের অর্ধেক সংসারের ফান্ডে দেবে। এটা একটা মার্কেট বেসড সমাধান হল।

    শুধু এক্সপিরিয়েন্সের ওপর মাইনে নির্ভর করলে মুশকিল। সেটা তো সরকারী চাকরি হয়ে গেল।
  • একক | 24.99.77.240 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩০86233
  • এই "দিতে হবে" র মানে কী ? :) স্টেট ডিফাইনড না প্রাইভেট কন্ট্রাক্ট ডিফাইনড ?
    যদি স্টেট ডিফাইনড হয় তাহলে এটা প্রচুর অসন্তোষ ও শেষ অবধি করাপশন এর জন্ম দেবে । অসন্তোষ এর কারণ অর্ধেক টাকা আমি কেন দেব ? পুরো ইনফ্লো তো প্রথমে কন্ট্রাক্ট ফান্ড এ ঢুকছে । সেখান থেকে দিস্ত্রিবিউশোন ।"আমি" কিস্যু দিচ্ছি তিচ্চি না । এবার যে যতটা ঘরের কাজ /বাজার করা ইত্যাদি করছে সেভাবে মাইনে পাচ্ছে ।পারফরম্যান্স যদি পুওর হয় ,লুচি যদি না ফোলে তাহলে ফান্ড এর এসেট ভেঙ্গে তার স্যালারির এক্সপেন্ডিচার এ কনভার্ট করব ক্যানো ?
    আলটিমেটলি ,স্টেট যদি এরকম ৫০% স্যালারি হিসেবে দেওয়া নিয়ম করে তাহলে তো একচুয়ালি মজা ।দুজনেই যখন দেখবে যে একজনের রোজগার কম -আরেকজনের লুচি ফোলেনা ....তখন একচুয়ালি সাঁট করে নিয়ে কাগজে কলমে টাকার ভাগ দেখাবে মেয়েটির দিকে বেশি । কিউমিউলেতিভ ট্যাক্স কমে যাবে :)

    "অন্যের ঘর-সংসার সামলানোর কাজ করলে যে টাকাটা পেত"
    কীকরে বুঝবে কত পেত ? মার্কেট ওপেন না করে আবার মার্কেট বেসড সমাধান হয় নাকী ।এক্সপিরিয়েন্স কাউন্তেবল হওয়ার জায়গাটাই ঝামেলার । শুধু এক্সপিরিয়েন্স নয় । একাডেমিক্স+এক্সপিরিয়েন্স । যা যে কাজের জন্যে দরকার ।সরকারী চাকরি হবে তখনি যখন এক্সপিরিয়েন্স টা অন্য কোম্পানি কাউন্ট করছেনা । কাউন্ট করলে তো সরকারী হবেনা :) অনেক জায়গাতেই দেখেছি এই "ঘরকন্যা দের ওয়েজেস " নিয়ে গরম গরম বক্তৃতা হয় । ওপেন ইব্যলুএশোন ,এক্সপিরিয়েন্স কাউন্ট এগুলো তুললেই তারপর আলোচনা আর এগোয় না :(
  • dc | 132.164.235.68 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২86234
  • হুঁ ওপেন ইভ্যালুয়েশনের প্রস্তাব আসলে ভারী মুশকিল।
  • shatadal | 119.163.234.5 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৩86235
  • না না, ওপেন মার্কেটে আবার স্টেট ইন্টারভেনশন কেন? সহজ কথা হল যে টাকাটা হাত খরচা চাই সেটা ওপেন মার্কেটে হাউসকীপারের মাইনের অর্ধেক পর্য্যন্ত হওয়া রিজনেবল। ওয়ার্কিং স্পাউস যদি সেটা না দেয় তো অন্যজন বাইরে হাউসকীপারের চাকরি করে রোজগার করে নিক। মাইনের অর্ধেক সংসারের ফান্ডে দিয়ে ওয়ার্কিং স্পাউসকে বলুক একজন হাউসকীপার এমপ্লয় করতে।
  • Ekak | 229.64.73.76 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৩86236
  • শতদল
    সেক্ষেত্রে তো আপনি "ঘরকন্যা " দের মডেল থেকে বের করে দিয়ে হাউসমেড দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন । হাউসমেড রা ওপেন মার্কেটের পার্ট ।নো প্রবলেম ।হাউসমেড এর খরচ দুজনের যৌথ রোজগার থেকে আসছে ।কিন্তু সেক্ষেত্রে এই "ঘরকন্যা দের বেতনক্রম" ব্যাপারটাই আর থাকছেনা তাই না ? :)

    আর যদি বলেন ,নো দ্য "ঘরকন্যা" ইস সাপোসড টু পে দ্য ফুল এমাউন্ট অফ মেইড'স স্যালারি ,দেন আগেইন ঘরকন্যার ওয়েজ কী হওয়া উচিত সেটা নিয়ে ওপেন ইব্যলুএশোন এর প্রশ্ন উঠবে ।
  • PT | 213.110.243.22 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৪86224
  • "গৃহশ্রমকে সবৈতনিক করে তোলার" ব্যব্স্থা ইউরোপের কিছু দেশে চালু আছে। সেখানে "স্বামীর বেতন থেকে স্ত্রীর বেতন" জাতীয় হাওয়া গরম করার ব্যাপার নেই। গৃহশ্রমকেই সরাসরি মর্যাদা দিয়ে সম্মানমূল্যের ব্যব্স্থা করা হয়।
    এমনকি কোন কোন ফেলোশিপে স্পাউসের জন্য আলাদা সম্মানমূল্যের ব্যবস্থা থাকে।
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৭86237
  • কতগুলো প্রশ্ন মাথায় আসছে।
    ধরে নিচ্ছি ঘরকন্যা বিয়ে করে বরের বাড়ী সংসার করতে এলেন। এঁকে ঘরভাড়া ইলেকট্রিসিটির বিল, এসমস্ত দিতে হচ্ছে না, খাবার দাবারের খরচ কাপড় জামার খরচও বরই দিচ্ছেন, অসুখ বিসুখে ওষুধ ডাক্তার, সমস্তই বরের অ্যাকাউন্টে। এখন ইনি যদি সংসারের কাজের জন্যে (যে শ্রম তিনি দিচ্ছেন সর্বক্ষণ) পারিশ্রমিক পান, তবে সেই অর্থ থেকে তো ওপরের জিনিসগুলোর জন্যেও ব্যয় করা দরকার, না কী?
    সংসার খরচের যে টাকা তিনি বরের থেকে পাচ্ছেন, সেইটে থেকেই তিনি কিন্তু বাড়ীতে "কাজের লোক" এর বেতন দেন। মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখেই বলছি। রান্নাবান্না করা ও সংসার ম্যানেজ করা ধরে নিচ্ছি এঁর কাজের এরিয়া। বেতন যদি নিতেই হয়, তবে এটা কি মাথায় রাখা যায় না, যে এঁর ভরণপোষনের জন্যেও এঁর বরের রোজগারের একটা অংশ খরচ হয়? সরাসরি হাতে গুনে ক্যাশ টাকা নয়, কিন্তু ওভারহেড তো আছেই। ধরে নিচ্ছি নিঃসন্তান এঁরা। এখন সন্তান থাকলে, সন্তান প্রতিপালনের জন্যেও যদি বরের কাছ থেকে বেতন চান, তখন আরো দুটো কথা থাকবে।
    ঘরকন্যার এমপ্লয়ার যদি তাঁর বর হন, তবে পারফর্মেন্স অনুযায়ী বেতন বাড়বে কমবে। সেই পারফর্মেন্স ভালো রাখা কিন্তু কঠিন কাজ। সমস্ত সময় মন জুগিয়ে চলতে হবে, সমস্ত কাজ ভালো হওয়া চাই, এমপ্লয়ারকে খুশী রাখা চাই। ঝগড়াঝাঁটি মনকষাকষি না হওয়াই বাঞ্ছনীয় (অ্যাপ্রাইজালে তার ছাপ পড়তে কতক্ষন?), এমনকি যে কাজের জন্যে বেতন পান না / যে কাজ বেতনের চুক্তিতে নেই - সেই কাজেও বরকে সন্তুষ্ট করে চলতে হবে। বর বৌয়ের সম্পর্ক যদি এমপ্লয়ী এম্‌প্লয়ার সম্পর্কে পর্যবসিত হয়, তখন কেমন হবে কে জানে। অবশ্য হতেই পারে। সমাজে চাহিদা থাকলে নিশ্চয় হবে। এ নতুন কোনো গল্প নয়, অন্ততঃ তিরিশ বছর আগেই এই ধরণের প্রস্তাব/আলোচনা শুনেছিলাম। এখনো এই আলোচনা চলছে, মানে এই টপিক হারিয়ে যায় নি, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় নি।
    এই বেতন কি ট্যাক্সেবল্‌ ইনকাম হবে? স্বামীস্ত্রীর জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, লাইফ ইন্‌শিওরেন্স (এবং নমিনি), স্ত্রীর নামে স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়, এসমস্তর কী হবে?
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২১86238
  • খানিকটা বর্ডারলাইন প্রস্‌টিটিউশান* গোছের লাগছে। এইচার ডিপার্টমেন্ট কী বলবে? হ্যাভিং অ্যা পার্সোনাল/ইন্টিমেন্ট রিলেশন উইথ ইয়োর এম্‌প্লয়ী/সাবর্ডিনেট?

    *প্রস্‌টিটিউশান একটি মহৎ পেশা (শিক্ষকতা, কুলিগিরি, ডাক্তারী, ম্যানেজারি, এইসবের মতো) ধরে নিয়েই।
  • shatadal | 204.150.168.79 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২১86225
  • স্বামীর বেতনের একটা অংশ (ধরে নিচ্ছি শতকরা হিসেবে) স্ত্রীকে বেতন হিসেবে দিলে একটা সমস্যা আছে। যে ভদ্রলোক কম রোজগার করেন তার স্ত্রীর মাইনে যিনি অনেক রোজগার করেন তার স্ত্রীর মাইনের থেকে কম হবে। সে প্রথম জন যদি খুব নিপুন গৃহকর্ত্রী হন এবং অন্যজন যদি গৃহকর্ম ভাল না বোঝেন তাহলেও।

    দক্ষতার সাথে আয়ের এমনকি তত্ত্বগত সম্পর্ক না থাকলে সেটাকে সিরিয়াস অর্থে চাকরি বলা যায় না।
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২৭86239
  • চাকরি যদি হয়, তবে প্রপার এম্‌প্লয়মেন্ট কন্ট্র্যাক্ট খুব জরুরী। জব স্পেসিফিকেশন, ওয়ার্কিং আওয়ার। পেনশন স্কীম, রিটায়ারমেন্ট এজ? আন্‌এম্‌প্লয়মেন্ট বেনিফিট? ডিসেবিলিটি? নাম্বার অফ হলিডেজ? সিক ডেজ? উইকেন্ড কি ফ্রী? ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স? ম্যাটার্নিটি লীভ? ওভারটাইম? অন্‌ কল অ্যালাওয়্যান্স? ট্র্যাভেল এক্স্‌পেন্স? ব্লু কলার জব যেহেতু, ইউনিয়ন? মিনিমাম কোয়ালিফিকেশন?
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২৯86240
  • নোটিস পিরিয়ড? সেটা কি ডিভোর্সের সঙ্গে রিলেটেড?
  • dc | 132.164.235.68 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৫০86241
  • আমি একটা কুটিল প্রশ্ন করে দিয়ে যাইঃ ধরা যাক বর ঘরের কাজের জন্য দশ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন। এবার অন্য একটি মেয়ে এসে বরকে বল্লো, তুমি আমাকে ন হাজার টাকা দাও আর বৌটাকে ভাগিয়ে দাও, আমি ন হাজারে সব ম্যানেজ করে নেবো। বা অন্তত বর এরকম একটা গল্প শোনালো। তখন কি হবে? ফ্রি মার্কেট কম্পিটিশনের শর্ত মেনে কি বৌকে ন হাজারেই রাজি হতে হবে, নাকি বরের নাকের ওপর নোটিশ সেঁটে বেরিয়ে যাবে?
  • shatadal | 202.99.124.96 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৫৫86242
  • একক, প্রথম কথা হল আমি মেইড বলিনি, হাউসকীপার বলেছি। অর্থাৎ ঘর সামলাতে যা যা লাগে তাই।

    এবং আপনি যেটা বললেন তার পর, সেটাই আমার পয়েন্ট। ওপেন মার্কেট সলিউশনে গেলে ঘর-কন্যার সমস্যাটাই থাকে না। স্রেফ উবে যায়।

    হাউসকীপারের মাইনে একজন পার্টনার পুরো দেবে কেন? অর্ধেক অর্ধেক ভাগ হবে। দুই পার্টনারেরই চয়েস থাকবে অর্ধেক টাকা দেওয়া, অর্ধেক নিজে খেটে করা ও অর্ধেক পেড হাউসকীপার দিয়ে করানো, অথবা পুরোটা নিজে খেটে করা ও অন্য পার্টনারের থেকে হাত খরচ হিসেবে অর্ধেক মাইনে নেওয়া। ইভ্যালুয়েশন তো সহজ। কেউ যদি পার্টনারের কাজে খুশি না হয় তাহলে সে বলতেই পারে তুমি ফোটো, আমি বাইরে থেকে অন্য হাউসকীপার চাই। তুমি যেভাবে পার (বাইরে চাকরি করে) তার মাইনের অর্ধেক দাও।
  • shatadal | 47.157.195.83 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:০৮86243
  • "কতগুলো প্রশ্ন"র প্রশ্নগুলো খুব ইন্টারেস্টিং। সহজ কথা হল ইকুয়াল রাইটের কথা বললে রেসপনসিবিলিটিও ইকুয়াল হওয়া উচিত। সেটা খারাপ নয়। কিন্তু ইকুয়াল রেসপনসিবিলিটি বললে এটা আর বলা চলে না যে আমি ঘরে থাকতে চাই, যদি না অন্য স্পাউস সেটা এগ্রি করে। ইকুয়াল রেসপনসিবিলিটি বললে আর্থিক রেসপনসিবিলিটিও অর্ধেক নিতে হবে। অথবা স্পাউসকে এমন কিছু একটা দিতে হবে যাতে সে আর্থিক রেসপনসিবিলিটি পুরোটা নিতে আপত্তি করবে না। সেটা অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন ঘরের দায়িত্ব পুরো নেওয়া, বা অসাধারণ রূপবান/বতী হলে বলা সেক্স ইজ হোয়াট আই ট্রেড ইত্যাদি। মোটের ওপর অনেক কিছুই হতে পারে, যতক্ষণ সেটা দুপক্ষের সম্মতিতে হচ্ছে।
  • একক | 229.64.73.76 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৪86244
  • শতদল
    ডে টু ডে কেস ধরে ভাবুন ,তাহলেই বুঝবেন ওপেন মার্কেট সলিউশন কেন ওপেন ইব্যলুএশোন ছাড়া হয়না ।

    ধরা যাক আমার বউ সত্তর হাজার পায় ।আমি বিশ । বউ বলল বড় কমিউনিটি হাউসিং এ থাকবো । সেখানে হাউসকিপার এর মাইনে বেশি ।তিন চারটে ঘর । হাউসকিপার মাসে পনের হাজার নেয় । আমাকে সাড়ে সাত দিতে হবে ।
    কেন দেব ? আমি মাত্র বিশ হাজার মাইনে পাই ।এত বড় ঘরবাড়ি সবকিছুই আমার স্টেটাস-এর তুলনায় বেশি ।খামোখা সাড়ে সাত হাজার খরচ করব কেন ?
    এই একই সমস্যায় বউ ও পরতে পারে । তখন কী হবে ? এই সমান-সমান ভাগ টাইপের লজিকগুলোর তো এটাই ফ্ল্য । তখন একটাই রাস্তা থাকবে বিশ+বিশ চল্লিশ হাজারের লাইফস্টাইল লীড করা ।বাকি ক্যাশ ইনফ্লো ধরা হবেনা ।সেটা যার এক্সট্রা টাকা সে বাইরে ডিসবারস করে আসুক ।আর নইলে আমাকে কে প্রমান করতে হবে হওয়াত এক্সট্রা ভ্যালু আই এম এডিং টু এনজয় এক্সট্রা ফেসিলিটি উইদৌত এডিং এনি এক্সট্রা ক্যাশ :) সেই ঘুরেফিরে পারফরম্যান্স ইব্যলুএশোন আসবে ।

    ওপেন মার্কেট সোজা না ।ম্যারেজ একটা ক্লোস্ড নেচারের কন্ট্রাক্ট ।সেখানে বেতনক্রম চালু করলুম আর সমাধান হয়ে গ্যালো বা আদ্ধেক-আদ্ধেক টাকা দাও গল্প শেষ ....উঁহু গল্প অনেক জটিল :)
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২০86245
  • শতদলের "সেক্স ইজ হোয়াট আই ট্রেড" হলে তো সেটা হাউজকীপিং থাকছে না, সেটারে কয় প্রস্‌টিটিউশান (মেল বা ফিমেল)।
  • shatadal | 198.138.1.229 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২১86246
  • একক, ঠিক সেই কথাটাই বললাম তো। ফেয়ার সিস্টেমে দুজনেই অর্ধেক দায়িত্ব নেবে, আর্থিক দায়িত্ব সমেত। কেউ যদি অর্ধেক দায়িত্ব না নিতে পারে তাহলে হয় দুজনকে এগ্রি করতে হবে যে তাদের জয়েন্ট লাইফস্টাইল যে কম রোজগার করে তার মত হবে। অথবা যে কম রোজগার করে তাকে অন্যভাবে ভ্যালু অ্যাড করে অন্যজনকে পুষিয়ে দিতে হবে। এ না হলে সিস্টেম ফেয়ার হয় না।

    সামারি, ম্যারেজ ইনহেরেন্টলি আনফেয়ার সিস্টেম। কেন না সিস্টেমটা ক্লোজড।
  • shatadal | 198.138.1.229 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৫86247
  • আরে নামে কি যায় আসে। তুলনায় বেশী সুন্দর স্পাউস সেভাবেই তো ভাবে অনেক সময়। তাকে প্রস্টিটিউশন বললে আমার আপত্তি নেই।

    ধরুন এক স্পাউস অন্য স্পাউসের খরচ বহন করছে। এই টাকাটা যদি ঘরের কাজ করে (বা অন্য কোন নন সেক্সুয়াল সার্ভিস দিয়ে) পুষিয়ে দেয়, তাহলে সেটাকে তো প্রস্টিটিউশনই বলবে? মানি ইন এক্সচেঞ্জ অফ সেক্স।
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩২86248
  • এককের 22:44:23 IST পোস্টের তর্ক বিবাহিত জীবনে চলে না। প্রচুর প্রচুর ডিভোর্স এই টাকার গ্রাউন্ডেই হয়। তুমি অ্যাতো রোজগার করো তাই তুমি বেশি দাও, আমি কম ইনকাম করি আমি কম দোবো - এই লেভেলে তর্ক চলে এলে ইকুয়ালিটি থাকে না সে সংসারে। সেখানে চাপা ক্ষোভ জমা হবেই। সামাজিক সুবিধে থাকলে ডিভোর্সও হবে আগে বা পরে। সামাজিক অসুবিধে থাকলে বিয়েটা টিঁকে থাকবে নামেই - ভালোবাসা থাকবে না।
    সমস্তটাই টাকার হিসেবে হয় না জীবনে। বিশেষ করে সংসার করতে গেলে। তা সে বিয়ে করে সংসার হোক, কি বিয়ে না করা সংসার। পারষ্পরিক বোঝাপড়া, ভালোবাসা, একের অন্যের প্রতি মমত্ববোধ, এগুলো আগে। সবার আগে। আমি খেটে মরছি- এই বলে চেঁচাতে পারি, ঝগড়া করতে পারি, কিন্তু স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে মাইনে করে চাকরিতে রেখেছে - এতা সংসারের মধ্যে হলে সে কেমন হবে জানি না। অনেকটা জীবন তো পেরিয়ে এলাম। এবাবে ভাবতে এখনো পেরে উঠিনি। হয়ত নতুন প্রজন্মের বিবাহিত জীবন এভাবেই চলবে। যে সংসারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা রয়েছে (সামান্য ঝগড়াঝাঁটির কথা বলছি না), সেই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই ধরণের। আমি এত দিচ্ছি (শ্রম) সংসারে কিন্তু বিনিময়ে তার মূল্য পাচ্ছি না - এই লেভেলে জিনিস যখন নিয়মিত লেভেলে চলে আসে, তখন বেতন দিয়েও কিছু হবার নয়। সেই সম্পর্ক ভেঙ্গে গিয়েছে ভেতরে ভেতরে।
  • একক | 229.64.73.76 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩৬86249
  • ক্লোস্ড বলেই সমস্যা । একচুয়ালি কে কাকে টাকা দিচ্ছে এটা কোনো সমস্যা নয় । ফ্যামিলি ফান্ডে ক্যাশ ইনফ্লো আসছে তার থেকে স্যালারি কত ভাগ হবে এইত গল্প। এবার ইব্যলুএশোন না থাকলে ভাগ করবেন ক্যামনে :( ক্লোসড সিস্টেমে কোনো ইব্যলুএশোন সম্ভব না ।

    এরকম যদি হত যে একজন মহিলা যিনি পরপর দুটি পরিবারে পাঁচ ও সাত বচ্ছর সার্ভিস দিয়েছেন তাঁর যোগ্যতা কাউন্টেড হচ্ছে তাহলে আলাদা কথা । বেটার পে প্যাকেজ পেলে তিনি আপনাকে বিয়ে করতে পারেন । এবং এই প্রতিযোগিতাটা থাকলে তখন আপনি যার সঙ্গে অলরেডি বিবাহিত সেও একটা দাবি জানাতে পারে যে অমুকের সমান যোগ্যতা নিয়ে আমি কম পাচ্ছি । টাকা বাড়াও নইলে ছেড়ে দেব ।

    এটা সম্ভব নয় বাস্তবে ।বিকস অফ সেক্স বিইং ইন্টিগ্রাল পার্ট অফ ম্যারিটাল কন্ট্রাক্ট । আমরা সেক্স এর ক্ষেত্রে এক্সপিরিয়েন্স কম থাকলে তাকে বেশি পয়েন্টার দি ।যাতে আমাদের সেক্সুয়াল পারফরম্যান্স অন্য কারো সঙ্গে তুল্য/প্রতিযোগিতার সম্মুখীন না হয় । এটা নারী-পুরুষ উভয়েই করে । কাজেই আমরা বেসিকালি চাই এমন রেডিমেড সঙ্গী যে গৃহকর্মে এক্সপিরিয়েন্সড কিন্তু যত কম সেক্সপিরিয়েনসড হয় তত ভালো । এই ফ্যালাসি টা না কাটালে ম্যারেজ কে ওপেন মার্কেট সিস্টেমে ফেলার চেষ্টা একদম মাঠে মারা যাবে ।
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩৯86250
  • "কাজেই আমরা বেসিকালি চাই এমন রেডিমেড সঙ্গী যে গৃহকর্মে এক্সপিরিয়েন্সড কিন্তু যত কম সেক্সপিরিয়েনসড হয় তত ভালো ।"

    হি হি। আপনার স্যাম্পল সাইজিং এর গন্ডী কি ভারত? তাহলে অবশ্য ঠিকই আছে। ;-)
  • achintyarup | 127.194.34.32 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৪০86251
  • বাপরে বাপ! এই টইটা (মতামত সহ) ছেপে একবার বের কল্লেই হয়
  • একক | 229.64.73.76 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৪৬86252
  • 'কতগুলো প্রশ্ন' এবার গোলপোস্ট সরাচ্ছেন :)

    "বেতনক্রম" নিয়ে যখন কথা হবে তখন ঐসব নন -ট্যানজিবল পয়েন্টার যথা ইমোশন-বোঝাপড়া ইত্যাদি এনে লাভ নাই । একদম রিয়েল টাইম ইব্যলুএশোন দরকার ।আর প্রতিযোগিতার জায়গা খোলা রাখা দরকার ।

    আর যদি এরকম হয় ভাই দুজনে মিলে বা একজন চাগরি কচ্চি .........যতটা সম্ভব হাতখরচ রাখো ....আমিও বেশি সিগারেটে ওরাবনা ..তুমিও বিউটিপার্লার কম যাও....দুজনে মিলে চালানো নিয়ে তো কথা..............দিস ইস কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট মডেল।

    আমার কোনটা নিয়ে আপত্তি নাই ।মিলিয়ে ঘ্যান্ট করা নিয়ে আপত্তি আছে :)
  • pi | 37.62.135.195 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৪৬86226
  • এই নিয়ে আগে কিছু লেখালেখি হয়েছিল। কিছু প্রশ্ন আছে।

    ১।গৃহশ্রমের মূল্য অবশ্যই আছে ধরে নিয়েই লিখছি। এক্ষেত্রে যিনি গৃহশ্রম দিচ্ছেন, তিনি তো'নিজের' পরিবার সংসারের জন্যই সেটা দিচ্ছেন, মানে সেটা 'নিজের' গৃহের জন্যই। 'নিজের' কথাটার উপর জোর দিচ্ছি। একজন অন্যের পরিবারের/সংস্থার জন্য শ্রম দান করলে যতটা বেতন পেতে পারে, নিজের পরিবারের জন্য করলে কি ততটাই প্রাপ্য? কারণ এই শ্রমের বিনিময়ে মেয়েটির পরিবার, যেটি তার নিজের পরিবার এবং সেই বাবদ সে নিজেও লাভবান হচ্ছে।

    ২। এই মডেলে দাদু, দিদা নাতিনাতনির দেখাশুনা করলেও কি বেবিসিটিং এর পারিশ্রমিক পাবেন ?

    ৩। ঘরের রোজগেরে পুরুষ ঘরের কোন কাজ করলে সেই বাবদ তিনিও কিছু মূল্য পাবেন? মানে সেটা তিনি নিজেই নিজের জন্য বরাদ্দ করবেন ?

    এই তিনটে প্রশ্ন থেকে মনে হয়, এভাবে ভাগাভাগি কি সত্যি সম্ভব ? আমার মনে হয়, এই কাজ বাবদ মূল্য ধরে দেবার থেকে একটা কোন মিউচ্যুয়াল আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং থাকলে ভাল হয়।

    এবার আরো ক'টা প্রশ্ন।

    ৪। স্বাতী ভট্টাচার্যর লেখা পড়ে একটা কথা মনে হয়েছিল, এই কাজগুলোকে হয় ছোটো করা হবে, নয়তো গ্লোরিফাই। এই দুটো এক্সট্রিমেই যেতে হবে কি ? তির্যকের লেখায় অবশ্য এই দুয়ের মধ্যে কিছুটা ব্যালেন্স টা পেয়েছি।

    ৫। এই কাজগুলো 'মেয়েলি', এটা কাঁচা বায়োলজি না সামাজিক নির্মাণ ? এই 'মেয়েলি' কাজগুলো কি অনেক ছেলেরও করতে ভালো লাগতে পারেনা ? মানে বলতে চাইছি এই ভালো লাগাটা মেয়ে পুরুষ দুজনের ক্ষেত্রেই যে কাঁচা বায়োলজি হতে পারে,সেকথাটা আসেনা, ঘরটা মেয়েদের, বাইরে পুরুষদের এটা সামাজিক নির্মাণ বলেই মনে হয়। মেয়েদের বেলায় সেটা সানি, সেটা নিয়ে অনেক কথা হয়, মেয়েদের বাইরে বেরোতে হবে, তাই নিয়ে অনেক দাবিদাওয়া ওঠে, কিন্তু উল্টোটা কেন ওঠে না ?
    মেয়েদের ঘরের কাজই করতে হবে, এটাই মেয়েদের কাজ, মেয়েরা এটাই ভালো পারে, এই কখনো স্বাভাবিকতার দোহাই, কখনো মহত্বের আলখাল্লা পরানো, কখনো বাধ্য করা .. এই নানা ফর্ম কি আসলে সামাজিক নির্মাণ নয়, যার আরেকটা পিঠ হল, ছেলেদের বাইরে কাজ করতেই হবে, ওটাই পুরুষালি, ওসব ছেলেদেরই মানায় বা ঘরের কাজ ছেলেদের মানায় না ?
    মেয়েদের গৃহশ্রমকে সম্মান ( গ্লোরিফিকেশন বলছিনা, যথাযোগ্য মর্যাদা) দিতে হবে, এই দাবি না তুলে গৃহশ্রমকে সম্মান দেবার কথা ওঠে না কেন, হাউজহাজব্যাণ্ড না হবার পিছনে যে সামাজিক চাপ আছে, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না কেন ? প্রশ্ন রইলো।

    ৬। এটার সাথেই গৃহশ্রম সবার ভালো লাগতেই হবে, বা ভালো না লাগলেও সবাইকে করতেই হবে, এই পয়েন্টটাও পিছু পিছু চলে আসে। মানে নারী পুরুষ যাঁরা ভাগাভাগি করেন না, তাঁদের অনেককে বলতে দেখেছি, দুজনেই কি সব কাজ ভাগাভাগি করে করবে না ? যদি কারুর ভালোলাগে, কারুর না লাগে, তাহলে ভাগাভাগিটা অধাআধি চুক্তি করে হওয়া ভাল, না ভালোলাগার ভিত্তিতে ? আর কারুরই ভাল না লাগলে আউটসোর্স করা ..

    ৭। আউটসোর্সের কথাই যখন এল, তখন একটা প্রশ্ন আসছে। এই গৃহশ্রমের জন্য মেয়েদের যতটা 'বেতন' ধার্য দাবি করা হচ্ছে/হবে, গৃহপরিচারক/পরিচারিকার ( সহায়হ/ সহায়িকা বলা হয়তো বেটার) জন্যও তত বেতনের দাবি উঠবে তো বা উঠছে তো ?
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৪৯86253
  • ও আবার কেমন কথা? গোলপোস্ট সরাচ্ছি মানে? ঠিক কোনখানে অসঙ্গতি বলুন? ভেগ কমেন্ট করে কী হবে?
  • shatadal | 172.247.72.213 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৫৭86254
  • 22:55:32

    উফফ। ওটা "পুষিয়ে দেয়" র বদলে "পুষিয়ে না দেয়" হবে।
  • কতগুলো প্রশ্ন | 188.83.87.102 (*) | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৫৯86255
  • স্বামীস্ত্রীর মধ্যে এম্‌প্লয়ার এম্‌প্লয়ী রিলেশনশিপেই তো আমার আপত্তির কথা জানিয়েছি। আরো অনেকগুলো প্রশ্ন ছিলো বেশ কিছু পোস্ট আগে। সেগুলোর উত্তর পেলাম কই? ;-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন