এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • থ্যাঙ্কিউ স্যার

    সোমনাথ দাশগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৭৯ বার পঠিত
  • দ্যাখেন তো ওই বিষন্ন গ্লিসারিন জবজবে টিভি সিরিয়াল আর স্টেনগানের প্রদর্শণী কিছু ধ্বজামার্কা সিনেমা। কেন, কার্গিল ধামাকায় মিডিয়া যখন ধূপধুনো জ্বেলে "ওং মিলিটারায় নমস্তুতে" জপছিল তখন তো মশাই আপনি করজোড়ে নতজানু, পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে আরতি করতেও বাকি রাখেননি। স্কুলের কচিমাত্রেই তখন অনিবার্য স্লোগান : ভারতীয় সেনা, দেশপ্রেম আর বন্দেমাতরম। এই ক'বছরেই সব ভুলে সাফ! ক'টা পুলিশ ঠেঙিয়েছে বলে ছি ছি করছেন? আরে ছো:। পুলিশ কি একটা মানুষ হল? সহবতের একটা ক্র্যাশ কোর্স কলকাতা পুলিশে জন্যে যে অবিলম্বে দরকার সে কথা ভেবেছেন? বর্ষবরণের রাত। লোকে পয়সা দিয়ে বিকিনি উৎসব দেখতে গেছে, একটু ফুত্তি করবে না! অভিজাত বার, নাইট ক্লাব, ডিস্কো থেক যারা অ্যাফোর্ড করতে পারে, পুলিশ তাদের ভেবেছেটা কি? ফুটপাতে জোড়ায় হাঁটতে দেখলে সিঁদুর স্ট্যাম্পের অভাবে রোমিওগিরির ছাপ্পা মারা আর পার্ক-পুকুরপাড় থেকে চুমু-উদ্যত চ্যাংড়া ধরে ধরে পুলিশের কনফিডেন্স লেভেল কোথায় উঠেছে? মুড়ি মিছরি আলাদা করতে পারে না, জামার কাপড় দেখলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জালছাপ বুঝতে পারে না, গোঁফ দেখলে মাথার-পিছনে-জ্যোতির্বলয় : মিলিটারি চিনতে পারে না - এদের দিয়ে কি হবে? হাডুডু খেলার পক্ষেও তো ভুঁড়ির ওজন ডিসকোয়ালিফাইং।

    আর একতিরিশে ডিসেম্বরের রাত, একটু আধটু দুষ্টুমি হবে না? মুম্বাইয়ের খবর রাখেন না? এই যে জনা দশ-পনের ছেলে মিলে কি-যেন-নাম মেয়েটার জামা টামা ছিঁড়ে দিল, আর তার বয়ফ্রেডকে পেঁদিয়ে দিল। তবে? এই যে ইন্ডিয়া গেটে বিদেশি কাপল-এর মেয়েটাকে "পিছন থেকে অসভ্যতা" করল একজন, তারপর আর একজন, তারপর প্রায় কুড়ি জনের দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল - হয়নি এসব? আর এ তো প্রতি বছরই হচ্ছে। হামেশাই হচ্ছে। সেই সেই চর্যাপদের সময় থেকে কাহ্নপাদ না ভুসুকুপাদ ঢ্যাঁড়া পিটছেন - আপনা মাংসে হরিণা বৈরি টৈরি বলে। অ্যাশলের মা বাপ তো অপারেশন করিয়ে যৌনাঙ্গ, যৌন হরমোন সব হাটিয়েই দিলেন - মানসিক জড় মেয়ে বড় হলে কি হতে পারে : আশঙ্কায়। অবিশ্যি সারা জীবন শিশু থেকে গেলেও যে ফেমিনা প্রজাতির বিশেষ ছাড় নেই নয়ডার মর্দলোগ তার ভরপুর প্রমাণ দিয়েছেন। সে যাই হোক। এতে আর নতুন কি? এ তো সম্বৎসরের ফেনোমেনা। একদল বিকিনি উৎসব করবেন, টু পীস পরে পিটুইটারি লক্‌লক্‌ হরমোন স্রোতে ভেজাবেন, আর সেই আইসক্যাণ্ডি দেখে বর্ষবিদায় উপভোগ করতে আসা ন্যাকাষষ্ঠীর দল একটু ছোঁয়া লাগলেই পুলুশ পুলুশ আর্তনাদ শুরু করবে এটা পাতি ভণ্ডামো নয়? তাও ছুঁয়েছে কে? না, দেশের গৌরব, রাষ্ট্রের আদর্শ, ন্যায়ের পরাকাষ্ঠা মিলিটারি। জানেন মিলিটারি অনুশাসন? জে পি দত্তের সিনেমা দেখুন। বউ-টউ ফেলে রেখে কি কষ্টে আদর্শ আর দেশসেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ এই বীরতার প্রতিমূর্তিরা সদ্য ফিরেছেন কাশ্মীর আর সিয়াচেন থেকে। ভাবতে পারেন? জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে ....ইত্যাদি ইত্যাদি .... তাঁদের রোজকার পথ চলা। এমন দ্বিতীয় ঈশ্বরের স্পর্শে রোমাঞ্চিত না হয়ে যারা সিকিউরিটিকে নালিশ করে, তাদের অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি? সারা বচ্ছর জানপ্রাণ বাজি লাগিয়ে দেশসেবা করে, একটা দিন, আহা, ওরা এসেছিলেন পার্কস্টীটে বিকিনি উৎসব দেখে প্রোমোশন সেলিব্রেট করতে, আর কাণ্ডজ্ঞানহীন পুলিশ ধরে নিয়ে গেল থানায়? তো ক্যাল খাবে না? বন্দুকের বাটের গুঁতো খেয়ে ছটা সেলাই আর বেল্টের মার তো পাতি ব্যপার। বেশ হয়েছে।

    তাছাড়া মিলিটারি, ব্র্যাকেটে ঈশ্বর, করেছেনটা কি? ধর্ষণ? না। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় খুন? না। পুলিশের কি পেনাল কোডটুকু ও পড়া নেই, যে এটুকু বাদ দিয়ে বাকি সব খুচখাচ কাজ কম্মের স্বাধীনতা মিলিটারিকে দেশের আইন ব্যবস্থাই দিয়ে রেখেছে? আর প্রসিডিউরাল আদব কায়দাকেই বা তারা কাঁচকলা দেখায় কোন সাহসে? হোক না প্রাকনববর্ষের রাত, পুলিশের দায়িত্ব হল অভিযুক্ত মেজর আর ক্যাপটেনের পাশে মোলায়েম দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু ফোর্ট উইলিয়ামে ফোন করা। বোঝা : এ রাতে আর্মি হায়ার অথরিটিও উৎসব করছেন, এনজয় করছেন। তাই যতক্ষণ না কেউ ফোন তোলেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ক্রমাগত ট্রাই করে যাওয়া। সামান্যতম ধৈর্য নেই, নিয়ে চলে গেল থানায়? মিলিটারির একটা ইজ্জৎ নেই? হাড় গুঁড়ো করে দেওয়া উচিৎ। এই সব একলা-পেলেই-রোয়াব-দেখাবো-অ্যাটিচুডের মুখে দিল তো নুড়ো জ্বেলে? তিনগাড়ি ভর্তি ২০ জন সশস্ত্র ইউনিফর্মড মিলিটারি। ওফ্‌। হিরোইজমের ফ্লুরোসেন্ট তসবির। থানা-ফানা জাস্ট ভেঙে, পুলিশগুলোর থোতা মুখ আক্ষরিক ভোঁতা করে, চলে তো গেল বন্ধুকে নিয়ে? আরে এরা বর্ডার ফর্ডার তৈনাৎ করে দিচ্ছে! পুলিশের বোঝা উচিৎ কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে, কোথায় খাপ খুলেছে। আবার বেড়ে আঁতেলের ন্যাকামো কত, না, অন্য বন্দীদের কেন ভাগানো হল! ভাগাবে না তো কি? এ তো বোঝাই যাচ্ছে সে রাতে যাদেরকে পুলিশ ধরেছে সবই তালকানা ডিসিশন। একতিরিশে ডিসেম্বরের রাতে শহরবাসী যা খুশি তাই করবে। জাস্ট যা খুশি তাই। এরাতে নিরুদ্দেশ সংবাদ দায়ের করতে থানায় এলেও মহিলারা রেডি থাকবেন "অসভ্যতা" মেনে নেবার জন্যে। তার মধ্যে বেরসিক নাক গলানো আর বে-এক্তিয়ার অ্যারেস্ট কপচানো যে নেহাত সিনিকতা পুলিশের সে শিক্ষা হয়েছে কি? দুর্গম প্রান্তর থেকে কর্তব্যপালন করে আসা সেনানায়কদের এসব সামান্য শরীর ছোঁয়াছুয়ি আনন্দ-ঠাট্টাকে শহরের ফিমেল দের প্রশ্রয় দিতে হবে। শিভালরি দেখাতে এলে মার খাবে সিকিউরিটি।

    নজন সেনা পাঁচজন যাত্রীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেবেন উত্তরপ্রদেশে। ভুলভাল পার্কিং করে কলকাতা এয়ারপোর্টের কর্মী ঠ্যাঙাবেন এক জওয়ান আর তার অফিসার। ব্যারাকপুরে দুজন অফিসার ইভ টিজিং করবেন আর ৫০ জন জওয়ান এসে বেধরক ক্যলাবে প্রতিবাদী জনতাকে, মাসে দুমাসে মনিপুরে কাশ্মীরে খবর পাবেন ধর্ষণ ও গণধর্ষণের। এসব আপনাদের মেনে নিতে হবে, কারণ আপনাদের রাতের নিশ্চিন্ত ঘুম সীমান্তে তাঁদের, ঈশ্বরের সেকেণ্ড জেনারেশনের অতন্দ্র দেশপ্রেমের করোলারি। তাই কোরাসে বলুন : "থ্যাঙ্কিউ স্যর"।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন