এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রাষ্ট্রভাষা বনাম মাতৃভাষা: জনজীবনে বাংলার অবস্থান। 

    Skd Nath লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৫৭৬ বার পঠিত
  • প্রাণিজগতের সকল বর্গের মধ্যে কেবল মানুষকে স্বাতন্ত্র্যতা দান করেছে ভাষা। ভাষার প্রশ্নেই সে স্বাধীনতা দাবি করার পুরোহিত্য লাভ করে। আবার জাতিতে জাতিতে ভাষাই তাকে আলাদা করে তোলে। তাই ভাষার প্রশ্নে সচেতন মানুষ মাত্রই প্রতিক্রিয়াশীল।


    বাঙালির জাতীয়তাবোধ গঠনে পাটাতন হিসেবে কাজ করেছে বাংলা ভাষা। বিশেষত ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের রাজপথের আন্দোলন মূলত ভাষাকেন্দ্রিক। কঠিন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পাকিস্তান আন্দোলনে সফলতা লাভের পরপরই এই অঞ্চলে পুনরায় জনস্ফূর্ত আন্দোলন তাই বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে।


    সাধারণের কাছে যদিও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, প্রক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া এবং সফলতা একটি মীমাংসিত বিষয়, ভাষার উদ্দেশ্য, প্রবাহমানতা, ব্যবহার, ব্যবহারবিধি এবং উপযোগিতার প্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের কাটাছেঁড়া আবশ্যক।


    নিঃসন্দেহে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির অতীব গর্বের বিষয়। বাঙালির জাতীয় আন্দোলনসমূহে বিশেষত স্বাধীনতা সংগ্রামে এই আন্দোলনের ভূমিকা অনবদ্য। মূলত নবগঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল হিসেবে এই আন্দোলন অবিসংবাদিতভাবে প্রতিষ্ঠিত। ভাষা আন্দোলনের এই দিকটি সরিয়ে রেখে যদি আমরা একটু ভিন্নদিক থেকে দেখার চেষ্টা করি তবে এখনও অনেকগুলো বিষয় নিয়ে একাডেমিক-বুদ্ধিজীবী মহলে তর্ক চালু রয়েছে। যেমন- বর্তমানকালেও পাকিস্তান আন্দোলনে নিজেদের বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রাখা গোষ্ঠী নিরন্তর প্রশ্ন এবং অভিযোগ তুলে যাচ্ছেন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রে ভাঙার পেছনে মূলত রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নই জোরালো ভূমিকা রাখে। তাদের মতে উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়াই উচিতব্য যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা না হওয়া সত্ত্বেও হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করেছে।


    উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা- এমন বক্তব্যই ছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর। যদিও তিনি উর্দুতে পারদর্শী ছিলেন না। তাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবি করা জনগোষ্ঠীকে এই পক্ষ জিন্নাহর সাথে বেইমানীর দায়ে অভিযুক্ত করে থাকেন।


    হিন্দি ভারতের দাপ্তরিক ভাষা হলেও রাজ্য ভিত্তিতে আঞ্চলিক ভাষাসমূহের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবুও হিন্দির বিরুদ্ধে এখন অবধি সোচ্চার রয়েছেন দক্ষিণভারতের জনগোষ্ঠী। আর আসামে তো ১৯৬১ সালের ১৯ মে ১১ জন যুবক অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে প্রাণদান করেন। তাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন যদিও বাঙালির গর্বের বিষয়, ভাষা প্রশ্নে একক আন্দোলন নয়।


    রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি আদায়ে আপামর জনতা তৎকালে রাজপথে নামে। কারণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার লাভের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার বিকল্প নেই- এমনটাই বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা বিশেষজ্ঞের মত। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে এমনটাই প্রচলিত আছে যে ভাষা সংগ্রামীরা মূলত মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার জন্যই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ইউনেস্কোর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান জনসাধারণের মনে এই বয়ান আরও দৃঢ় করে তোলে। আদতে ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। আর নয় বলেই রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, আমলারাসহ প্রায় প্রত্যেক বাঙালি-ই মনে করেন যে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করা সমাপ্ত হয়েছে, এখন আর কোনো দায়িত্ব অবশিষ্ট নেই। তাই শিক্ষার মাধ্যম, আদালতে ব্যবহার্য ভাষা, ভাষার প্রবাহমানতা, আলাপ-আলোচনার ভাষা ইত্যাদি প্রশ্নে সবাই এক রকম উদাসীন থাকে।


    তাবৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুনিয়ায় প্রধানতম ভাষা এখন ইংরেজি। আর ধ্রুপদী ভাষা হওয়ায় গ্রিক, ল্যাটিন নিজেদের সনাতনী অবস্থান ধরে রাখতে পারছে। কিন্তু ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা পঞ্চমে থাকা সত্ত্বেও জ্ঞান-বিজ্ঞান হতে শুরু করে বিশ্বসাহিত্য, শিল্প-কলাসহ ভাষাভিত্তিক বিষয়াদিতে বাংলার হিস্যা অতি নগণ্য।


    কেবল বাংলা পড়তে পারা একজন  যখন ইংরেজিতে লেখা বিজ্ঞাপন, দিকনির্দেশনা, প্রতিষ্ঠানের নামসহ তাবৎ শব্দ, বাক্য দেখেন তখন তার অনুভূতি নিশ্চয়ই ইংরেজি প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা "আলোকিত গোষ্ঠীর" চেতনায় ধরা দেয় না। তাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা, মাতৃভাষা বাংলা ইত্যাদি শব্দবন্ধ নিয়ে বিশদ আলোচনায় সামিল হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায় সমাপ্ত হয়েছে। এবার জীবনঘনিষ্ঠ  কাজকর্মে মাতৃভাষা বাংলার প্রয়োগ নিয়ে সকলকে কলমপথে নামতে হবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন