এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • মশা সম্বন্ধে যে দু চার কথা আমি জানি

    ঈপ্সিতা
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৩৮২ বার পঠিত

  • ও আমার সেই ছোটোবেলার বন্ধু। আমরা একসাথেই বড়ো হচ্ছিলাম। আমি দুই তিন চার ক্লাস পেরোচ্ছিলাম আর ও দোতলা, তিনতলা, চারতলা। আমরাও থাকতাম চারতলায়। তো চারতলায় যখন ও ও চলে এলো, তখন তো আমায় আর পায় কে! কে আবার ? বন্ধু ! বাড়ালে হাত বন্ধু পাওয়া যায়... হ্যাঁ, যায় বই কী !
    যখন তখন এক ছুটে চলে আসতো আমাদের বাড়ি। আর আসামাত্র আমি দুহাত দিয়ে জাপটে ধরতাম ওকে। চোখ বুঁজে গন্ধ নিতাম।
    ভারি সুন্দর একটা গন্ধ ছিলো ওর শরীরে। সারা শরীরে মাখতাম সেই গন্ধ। হাত, মুখ, মাথা সব ডুবিয়ে দিতাম ওর শরীরে আর আমার শরীর জুড়ে তখন ও, গন্ধ হয়ে জড়িয়ে।
    এমনকি, এমনকি, ওর সাথে পালাবার ছক অব্দি কষে ফেলেছিলুম। আর তারপর তো সে কী বিপত্তি !

    বেশ দেখতে ছিলো। লম্বা, ছিপছিপে। তবে, সকলের থেকে যেটা আমাকে টানতো, সে ছিল ওর রং। সকলের থেকে আলাদা। চোখকাড়া ঔজ্জ্বল্য নেই তাতে, মনকাড়া ত্বক ও মোটে মসৃণ নয়। তবে,উজ্জ্বল, মসৃণ হলে, তবেই সে সুন্দর, একথা ঐ লাক্স সাবানের অ্যাডের কপিরাইটার লিখে গেছে বলেই মানতে হবে নাকি!
    হ্যাঁ, সকলের থেকে আলাদা ছিল ওর পাতার রং। ইউক্যালিপটাস পাতার রং টা কী সুন্দর না! আমার ইউক্যালিপটাসের পাতার। আমার ছোটবেলার সেই ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়ির ছোট্ট বাগানে বড় হওয়া ইউক্যালিপটাসের, আমার সাথে বড় হওয়া। হাওয়া, একটু জোরে হাওয়া দিলেই লগবগে মাথা নিয়ে ঢুঁ মারতো বারান্দার গ্রিলে। পুরো একটা ছাগলছানা। শিং টাই যা গজায় নি। আমার অবশ্য গজিয়ে গেছিলো। দাদা বলতো। আমার ঐ ইস্কুলের লাল ফিতে বাঁধা পুঁচকি বেণীজোড়া দেখলেই দাদা টেনে দিয়ে বলতো, কিরে ছাগলী, ঘাস টাস ঠিকঠাক পাচ্ছিস তো? শিংএ এই লাল ফুলটা বেশ মানিয়েছে। আর আমি মা মা করে কান্না জুড়তাম। ম্যা-É¡- অ্যা- ম্যা-অ্যা-অ্যা, দাদা ভ্যাঙচাতো, শিঙ দুটো টেনে দিয়ে।
    এ প্রসঙ্গে বলে নেওয়া ভালো, ছাগলীর আদি অকৃত্রিম পোস্টটা কিন্তু আমার ছিলোনা। সে ছিল আমার মামাতো দিদির। আমার থেকে গোণাগাঁথা এক বছর পাঁচ মাস দশ দিনের বড় দিদিকে দাদা ডাকতো ছাগলী, আর আমাকে পাগলী। যেখানে সেখানে যখন তখন যাদের তাদের সামনে আমাদের পাগলী-ছাগলী বলে ডাকাটা আমরা কেউই পছন্দ করতাম না। এ নিয়ে মা বাবাদের কাছে প্রতিবাদ, নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক দু:খ প্রকাশ ও ক্ষোভ বিনিময়,সে সবই ছিল। তবে, ঐ আর কি, সে নামে আমার আপত্তি থাকলেও তার মাত্রা তেমন ঘোরতর কিছু ছিলোনা। পাগল বলতে তো চিনতাম গুপ্ত ডাক্তারকাকুর ছোট ছেলেকে। প্রায় সারাদিনই হাউসিং এর এ গলি সে গলি দিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতো। ছায়াসঙ্গী ছিল একপিস নেড়ি। খুব দাঁত ক্যালাতো, দেখা হলেই। এমনকি দেখা না হলেও। আর খুব কথা বলতো, একা একাই। তা, এ এমন কী আর মন্দ ছেলে ! পাগলী কাউকে দেখিনি, নিশ্চয় এরকম ই কেউ হবে। ও হ্যাঁ, চুলও বিলকুল আঁচড়াতো না। তা, সে তো চুল আঁচড়াতে আমারো মোটে ভালো লাগতো না। লাগবেই বা ক্যানো, যা লাগতো! শ্যাম্পু পরবর্তী বাবাসাঁইসম সে কেশবাহারে সিঁধুতে গিয়ে একাধিক চিরুনির অব্দি ঘাড় মটকেছে। সেবার যখন ও তিনতলা ছাড়ালো, সেবার ই প্রথম ওর কাছে বাসা নিলো কাকেরা। খুব লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে আমাকে দেখাতে এসেছিল। তো, আমিও হেবি রেলা নিয়ে বলেছিলুম, ফু:, কাকের বাসা ? সে তো আমার ও আছে !
    কিন্তু বিপত্তিও বেঁধেছিল এই কথা বলতে গিয়েই। সামনের ফ্ল্যাটের বাবলিদির মা আমার মা কে বল্লেন, দিদি, আপনারা সারাদিন বাড়িতে থাকেন না, মেয়েটাকে কিন্তু একটু নজরে রাখা দরকার। দুপুরবেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা টথা বলে। নাকি পাগলের মত একা একাই কথা বলে! বোঝো, তালে একেই কি বলে পাগলামি? গুপ্তকাকুর ছেলে যে ঐ নেড়ির সাথেই সুখ দু:খের কথা কয়ে বেড়ায়, এ নিয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম, আর আরো নিশ্চিত হয়েছিলাম, পাগলী ব্যাপারটা মোটেও তেমনি অবমাননাকর নয়।
    পাগলী ডাক নিয়ে তাই খেপিনি কখনো।
    কিন্তু কে ভেবেছিল, প্রাণাধিকপ্রিয় দিদিই শেষমেশ আমার এমনি সর্বনাশটা করবে! আমার অবর্তমানে একদিন দাদাকে কীসব ভুজুং দিয়ে নামদুটো বদলাবদলি করে নিল! ছাগলীর পিণ্ডি চাপলো এই হতভাগিনী বুধিয়ার ঘাড়ে। শুরু হল তার দু:খের দিন। পরে অনেক ভেবেছি, এই যে পাগলী হওয়া নিয়ে আমার তেমন সমস্যা ছিলোনা, অথচ ছাগলী শুনলেই আমার অমনি তিড়িং বিড়িং লাফানি, ম্যা ম্যা করে চীৎকার ,এটার প্রকৃত মনস্তাত্বিক কারণটা কী হতে পারে বটে? পাগলী, আফটার অল, স্টিল, মানুষ তো বটে। তবে কি মনুষ্যেতর প্রাণী হতেই আপত্তি ছিল আমার? না:,তাই বা কেন ? এই যে লোকে আমাকে বকবকানির জন্য কাবলীওয়ালার মিনি আর তার থেকে টেনে মেনি , পুসি কত কী কইতো, তাতেও তো দুখ পাই নাই কখনো। বাঁদর, হনুমান বল্লেও না। গাধা বল্লে খারাপ লাগার কারণটা পষ্ট। কিন্তু ছাগলে তো আর গাধামি করে না! ছাগলের ডাকটা তেমন ভাল লাগতো না ঠিকই, কিন্তু আমি যখন রেওয়াজ করতে বসে মধ্যম আন্দোলিত করতুম, তখন দাদা ভ্যাংচাতে শুরু করলে এমন কিছু দোষ দেওয়া যেতনা। আমার গানের দিদিমণি যখন তানকারি শেখাতেন, শুনে শুনে আমারো তো অনেকটা অমনি ই লাগতো! তবে ছাগলী ডাকে এত যে কেন খেপতাম! ছাগলের অমনি ছাগল ছাগল চেহারার জন্য কি? না মনে হয়। তেল চুকচুকে লোম চকচকে চেহারা ছাড়াও ছাগলের ফেসকাটিং টা আমার তেমন মন্দ লাগতো না। বিশেষত: সাইডফেসটা বেশ কিউট ই! বেশ আব্রাহাম লিঙ্কন লিঙ্কন। চোখগুলোর মধ্যেও একটা সুরমায়ী সুর্মায়িত টাচ আছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সৌন্দর্য সম্বন্ধে এসমস্ত রিয়েলাইজেশনই কিন্তু আমার নিতান্ত নিজস্ব। কে যে বলে মৌলিকতা এক অলীক প্রকল্প!।দেশে- বিদেশে ছাগ সুন্দরী প্রতিযোগিতার হিড়িক তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে। মিস লাটভিয়া 'গ্র্যাটজিলিয়া 'কে দেখতে মাঠে উপচে পড়ছে ভীড়, পেজ ওয়ানে উঠে আসছে সে ছবি, অভিজাত 'নাজদী' বংশীয় ছাগ কন্যাদের জন্য কে বা শেখ আগে বিশহাজার পাউণ্ড দান করিবেন তাই নিয়ে কাড়কাড়ি, আর বিশ্বছাগসুন্দরীর জন্য তো ....
    তাইলে ?
    অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমার ঐ বিরূপতার একটা কারণ বের করেছি। নাম, এই নামেই সব কিছু আসে যায়। অন্তত আমার তো যায়ই। খারাপ লাগার কারণসমূহ নিয়ে নানা থিয়োরী আমার আছে, বহুবিধ উদাহরণ সহযোগে সেটাকে সাবস্ট্যানশিয়েট ও করেছি আমি। কিন্তু সে হবে পরে কখনো বিস্তারিতে বলা যাবে ক্ষণ। একটা কথা বলতে বসে এত বিষয়ান্তর আমার মোটে পছন্দ নয়। এককথায় মূল সিদ্ধান্তে আসি, ছাগলকে খারাপ লাগা , আমার ধারণা,তার নামের কারণেই। ছাগলী ,এই শব্দটা,ভালো করে ভেবে ,মানে শুনে দেখলে ,এই শব্দটা ইটসেল্ফ কি কানে ও মনে একটা অশ্রদ্ধার ভাব উৎপাদন করেনা ? পাগলী কিন্তু করেনা। কমন গলি কেটে দিয়ে হাতে পড়ে থাকে ছ। হ্যাঁ, আমার ধারণা, বিশেষ বিশেষ বর্ণোচ্চারণ কর্ণপটাহে যে বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সির আন্দোলনের জম্ন দ্যায়, তা ঐ কানের মধ্যে হাতুড়ি ,পেরেক ইত্যাদি হাড় ঠুকেটুকে ককলিয়ায় কয়েল অডিটারি স্নায়ু বেয়েটেয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যে দরজায় খটখটায়, সেটা খুল্লেই একটা বিচ্ছিরি লাগা বেরিয়ে পড়ে।

    যাইহোক, আরেকটু বড় হয়ে এই ডাকে আর অতটা খেপতাম না। বড় হয়ে গেছিলাম বলে কি ? উঁহু। আসলে তখন ব্যাকরণ বই পড়ে জেনে গেছি যে,পাঁঠার স্ত্রীলিঙ্গ ছাগল। স্ত্রীলিঙ্গের আবার স্ত্রীলিঙ্গ কি ! অতএব ছাগলী বলেও কিছু হয় নাকি!! আর, অস্তিত্ববিহীন কোনো কিছুকে বড় জোর ভয় পাওয়া যায়, তার জন্য কষ্ট থোড়াই পাওয়া যায়! আরো কিছু দিন পরে গুয়াহাটির এক মিউজিয়মে গিয়ে এক পশু চামড়ার সামনে ' ছাগলী' লেবেল দেখে দাদার ডাকে খেপা উচিত কি উচিত না এ নিয়ে আবার একটু কনফিউজড হয়ে গেছিলাম অবশ্য। কিন্তু তারপর পর ই তো দাদা চাকরি করতে কত দূর চলে গেল। বছরে একবার দেখা হলে আর চুল টানতো না, ছাগলীও বলতো না।
    আমিও দুম করে বড় হয়ে গেলাম।

    উফ্‌ফ! আমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। শিয়ালদা যেতে বাইপাসের রুট ধরেছি ! এখন ফিরবো বল্লেই ফেরা যায় নাকি ! কী যেন বলছিলাম ? হ্যাঁ, হাওয়া দিলেই গ্রীলের ফাঁক দিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়তো ও । চুলগুলো যখন আরো একটু ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া হলো, তখন, আমি গ্রীলের জানলাটা পুরো খুলে দিতাম। বাস। পুরোপুরি ও আমার ঘরে। আমার বুকে। নাকে। চোখে। মুখে। মাখামাখি ওর গন্ধ।
    আমি দুহাত দিয়ে জাপটে ধরতাম ওকে। চোখ বুঁজে গন্ধ নিতাম। হাওয়া দিতো, ফিসফিসিয়ে ।
    আর, অমনি অবস্থায় ওর সাথে বকবক বকবক করে যেতাম। আমার সারাদিনকার গল্প। আমার ইস্কুলের নতুন সাজুনি দিদিমণির গল্প। আমার সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে জামাইয়ের গল্প। সেইযে কেমন বুদ্ধি করে আমার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই করে নিলুম, নিজেরটি তো রইলোই, সাথে টুক করে একটা এক্স্‌ট্রা পুতুল জুটে গেল! বলতাম, আমার অকালে পরিপক্ক হয়ে ওঠা বান্ধবীদের সাথে পাড়ার তিন চার ক্লাস উঁচু দাদাদের চিঠি চালাচালি নিয়ে কানাকানি হওয়া গপ্পো, ফিসফিসিয়ে।
    তবে বাবার মতন ও আমায় তুবড়ি কিম্বা বকবকী সিং নাম দ্যায়নি। নাম বরং আমিই একপিস দিয়েছিলুম। লগবগি সিং। জিম স্লিম টি্‌লমের অত চল টল হয়নি তখনো, পুরানো দিনের মানুষ আমি, ওর ঐ লিকপিকে ডালপালা আর লতপতানো পাতা দেখে ঐ নামটাই মনে এসেছিল।
    একটা ফেসে ভিলেনর কাঁটাও জুটেছিল আমাদের গল্পে। ওর তিনতলার বাসিন্দা কাক দম্পতি। ঐ বায়স ফ্যামিলির ওভারপ্রোটেক্টিভ হবু মাতা পিতার সাথে আমাদের একটা পারিবারিক শত্রুতার বাতাবরণ তৈরি হয় একসময়। বারান্দায় আমাদের কারুর চরণচিহ্ন পড়তো কি পড়তো নি, ইউক্যালিপটাসের ডাল থেকে সো-ও-জা ডাইভ মেরে আমাদের বারান্দার গ্রীলের বাইরের তাকে এসে বসে শ্রীমান কাক্কেশ্বর চোখ পাকিয়ে বলতেন, ক্ক:। আর দু'পা এগোতাম যদি, তো, গ্রীল থেকে ঝুলে ঝুলে ও আরো নানাবিধ সার্কাসীয় কসরৎ সহযোগে ভয় দেখাতে দেখাতে চোখগুলো আরেকটু বড় বড় করে আরেকটু জোরে জোরে বলতেন, ক্ক: ক্ক:। অথচ বাবু কিন্তু জাতে মোটে দাঁড়কাক নন। আরে, আর কিছুনা,একটু গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা আর কি। তা,এই দ্রিঘাংচু ওয়ান্নাবিকে ভয় ফয় পেতাম না তা নয়। পাবো না? কাপড় মেলতে হোক কি আচার শুকাতে , গ্রীলের বাইরে হাত দিতে না দিতে কিছু বোঝার আগেই তো জুটতো ঠক করে এক ঠোক্কর।
    অবিশ্যি প্রতিবেশীর সাথে এহেন বৈরিতায় কেবলি ওদেরই দায়ী করলে অনৃ¤তভাষণের খুচরো পাপ হয়ে যাবে। অলরেডি কিছু হয়ে গেছে, বাড়িয়ে আর কাজ নেই। ডিম কিম্বা ছানাপোনা নিয়ে পশু-পাখিরা একটুআধটু এরকম করে থাকে, সে সবার ই জানা, কিন্তু এদের এই বিনা প্রোভোকেশনে সদাসর্বদা রণং দেহি আচরণে বাড়ির লোকজন বেশ বিস্মিতই হয়েছিল। তখন চেপে গেসলুম, কিন্তু আজ বড় খচখচাচ্ছে,না:, কনফেশনটা করেই ফেলি। সে ছিল গ্রীষ্মাবকাশের কোনো এক বোরিং মধ্যাহ্নবেলা,তেতে ওঠা ধোঁয়াটে নীল আকাশে চিলের চক্কর কাটা দেখা ছাড়া যখন আর কোনো কাজ ই নেই, না পড়া কোনো গল্পের বই নেই,বসে বসে সাবাড় করার মত হজমিগুলি কি গাঠিয়ার কোনো স্টক ও নেই, বাড়ির দেওয়ালে একটা সারি পিঁপড়ের লাইন অব্দি নেই, যে মাঝখানের কিছু পিঁপড়েকে এদিক ওদিকে সরিয়ে দিয়ে ঐ লাইন ভাঙ্গা নিয়ে ওদের সাথে আমার অধ্যবসায়ের র্টক্কর দেবো । কিম্বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের কৌটোর বাইরে ওদের ভুখা মিছিল দেখে বায়োলজি বই দেখিয়ে দেখিয়ে ওদের বোঝাতে বসবো, ওরে তোদের তো হাড়গোড় ই নেই, কী হবে ক্যালসিয়াম খেয়ে! বেসিন দিয়ে উঠে আসেনি একটাও আরশোলা, যার সঙ্গে ফুলফোর্সে খোলা জলের তোড় দিয়ে যুদ্ধ করবো, যতক্ষণ না আরশোলটাকে উল্টে ফেলতে পারি কিম্বা এই বেসিনের ঝাঁঝরি দিয়েই ব্যাক টু পাতাল করাতে পারি। না: কেউ কোত্থাও নেই। সেই কাকেরা ছাড়া। শুরু করলাম টিপ প্র্যাকটিশ। বারান্দার টব থেকে মাটির ঢেলা নিয়ে। লক্ষ্য, ঐ তা-রতা কাকের তেল চুকচুকে ডানা। নভিশের টিপ তো, কোনো মিসাইল ই প্রায় তাঁদের পালকগ্র স্পর্শ তক করতে পারতো না অথচ , কাণ্ড দ্যাখো ! এই নিয়ে চিল চিৎকার করে কাক পরিবার হাউসিং মাথায় করতেন! আর কী আর বলবো, কাকগুলো একেবারেই গাধা ছিল। সত্যিকারের ঢিল তো আর মারিনি রে বাবা, নেহাতই মাটির কুচোকাচা ঢেলা, তাতেই তাঁদের মুচ্ছো যাবার দশা। কে বোঝাবে এসব ! বোঝে না এবং কদিন ধরে আমার এই প্র্যাকটিশ চলার পরেই ওরা ঐরকম একটা অল আউট ফিয়ার্সলি অ্যাটাকিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ফেলে। তারপর ঘৃতাহুতি দিয়েছিল, আমার ঐ অভ্যেস, হাওয়া দিলেই ইয়্‌ক্যালিপটাসকে বারান্দায় টেনে আনতাম, কানের সাথে সাথে ওদের বাসাও চলে আসতো আমার হাতের অনেক কাছে। তখন তো আরো ই চিল্লামিল্লি জুড়ে দিত !
    বলাই বাহুল্য এর ফলে আমার সাথে ইউক্যালিপটাসের অ্যাপো খুব ই ব্যাহত হচ্ছিল। ভয়ের চোটে বারান্দায় পা ই রাখতে পারি না, তারপর তো বাকি সব! ছটফটিয়ে মরছিলাম পুরো। উদ্ধার করল মা। অত্যন্ত ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাথে একটু একটু করে ভাত ( এবং নানাবিধ তরিতরকারী, মাছ মাংস ) ছড়িয়ে ছড়িয়ে একটু একটু ভাব জমানো। তবে জমে গেছিলো। একেবারে ক্ষীর স্টেজে চলে গেসলো। তখন অন্য জানলাতেও মাকে দেখতে পেলে সোহাগ করে সে কী মিঠে ডাকের চেষ্টা! তবে মাইরি বলছি, তেমন মধুর না হলেও বেশ সুরেলাই ছিল সে ডাক। অনেকটা , অনেকটা , ঐ ঊষা উত্থুপের গলার মত বলা যেতে পারে। আর সুরটা , অনেকটা, ঐ কু- উ-কু- উ র আন্দোলনের স্টাইলে ক-অ-ক-অ। তাদের আবার একটু পায়া ভারীও হয়েছিল। ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয়, সেই দেখেছিলুম। মাংস বা মাছ কি তরকারী মাখা ভাত না হলে তাঁদের মুখে রুচতো না। বলা বাহুল্য, মায়ের মেয়ে হিসেবে তারপর আমাকেও একদিন মাপ করে দিয়েছিল। আমাকে তখন আর পায় কে! ইউক্যালিপটাস , কাক মা বাবা, তাদের ডিম, আমার দাদা-মা-বাবা, সে আমাদের তখন ভরা সুখের সংসার।
    শুধু ডিম ই না, ওগুলো ফুটে ছানাগুলো বেরুলো যখন, তাদের প্রথম উড়তে শেখার টার্গেট সেট করা হয়েছিল, বাসা থেকে আমাদের বাসা। আমাদের বারান্দার সেই তাক।

    তবে, আসল কথাটাই তো এখনো বলিনি। ওতে আর আমাতে মিলে সেই যে ছকটা কষেছিলাম। পালাবার।
    হাওয়া যেদিন খুব বেশি দিতো, আর খুব এলোমেলো , খুব ঘন ঘন আসতো আমার কাছে, আর এদিকে এসেই আবার পালাই পালাই করতো। ও করতো, এমন না। কিন্তু হাওয়া অমনি করে টানাটানি করলে ও বেচারাই বা আর কি করে !
    তো, আমরা ফন্দি আঁটলাম, এরপর যেদিন খুব হাওয়া হবে, ও আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। আমি তো একপায়ে খাড়া! মানে, আমাকে এরপর খালি দ্বিতীয় পায়ের ভারটাও মাটি থেকে তুলে নিতে হবে। বাস। তারপর ই হাওয়া কি সাথ সাথ, হাওয়া কি সঙ্গ সঙ্গ , ও সাথী চল ,মুঝে লিকে সাথ চল তু , ইউহি দিন রাত চলতু! পুউ®রো ঐ সীব-হেমা আকা সীতা কেস। সে সেভাবে দেখতে গেলে আমিও তো সীতা ই। ঈপ্সিতা।
    আমরা কোথায় কোথায় যাবো , তারও প্ল্যান হয়েছিল। এক তো, আমার নেমন্তন্ন ছিলো কাকের বাসায়, ঐ পাঁচ খানা ছানা ঐ পুঁচকি বাসায় কিকরে যে ফিট করে , সে চাক্ষুষ করার শখ আমার অনেকদিনে। তার পরের গন্তব্য , ওপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ। ওর ঐ মধ্যিখানের শ্যাওলা শ্যাওলা অন্ধকারের রহস্য এক্সপ্লোরেশানটা আমার এজেণ্ডায় অনেকদিন।
    আর তার্পর, স্যাট করে আমি নেমে পড়বো , হাউসিং এর পাঁচি®লের লাগোয়া ঐ পাবীদের বাড়ির ছাদে। অনেকদিন ধরে ওদের বাড়ি যাবার শখ আমার। আমার খুব ধারণা, ওদের পাগড়ির নীচে টাক থাকে। সেইটি ভেরিফাই করা দরকার।
    তা, এক ঝড় বাদলের দিনে, যেরকম দিনে কবি বলে গেছেন , তারে বলা টলা যায়, আমি তার সাথে গৃহত্যাগ করবার মনস্থ করলাম। মোটামুটি রেডি। টেক অফ হবো হবো। রেডি, স্টেডি , অনিমা ( ওটা যে অন ইওর মার্ক, সে আমি জেনেছিলুম অনেক বাদে, তদ্দিনে ট্রেনের টিটি র ফুল ফর্ম ও জেনে গেছি আমি ) ....গো ...বলার সাথে সাথে ই আমার শিংএ টান। । দাদা , বারান্দায় ।
    আমাকে ঐ রেডহ্যান্ডেড পাকড়ানোর পর, আর যা যা হবার হলো। মার মাথায় পড়লো বাজ,বারান্দার গ্রীলে পড়লো তালা, আর আমার পিঠে পড়লো আট দশ ঘা।
    তবে এহেন ভাঙা প্রেমের গপ্পের নটেগাছ সেখেনেই মুড়ায় নি। গাছটাকেই মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, কদিন বাদে। কি, না, ও ধাক্কা মারলে নাকি ফ্ল্যাটবাড়ি দুর্বল হতে পড়ে, ওর শিকড় ছড়ালেও। কোথায় কোন কাগজে বেরিয়েছে। ইউক্যালিপটাসের হাওয়াটাও নাকি ভাল নয় ! সে ও কোনো পণ্ডিতে কয়ে দিয়েছে। বোঝো! তবে, আসল ব্যাপার ছিলো অন্য, সে আমি ঠিক ই বুঝেছিলাম। সেই কাক। আমাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে কি হবে, জগতে তো আর শত্রুর অভাব হয় না ! ইউক্যালিপটাসের কাকেদের নতুন শত্রু হলেন তিনতলার গুপ্তকাকু। ডাক্তার গুপ্ত না। ডক্টর গুপ্ত। এই শত্রুতার সঠিক কারণ ঠিক কেউ ই বলতে পারেনি, খোঁজার চেষ্টাও কেউ তেমন করেনি, কারণ ওনার সাথে প্রায় জগতময় জীবেরই শত্রুতা ছিল। সে ওনার পাশের বাড়ির ন্যাড়াকাকু হোক কি পাড়ার নেড়িরা। দিনেদুপুরে কুত্তাদের চিল্লামিলি কানে এলেই আমরা টের পেয়ে যেতুম, গেট খুলে ড:গুপ্ত বেরুলেন।
    এবার হয়েছিল কি, উনি বাড়ির বাইরে গেলে ই কাক বাবা এসে টক করে ওনার টাকে একটা নক করে যেতো। ওদেরকে উদ্বাস্তু করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই গাছটাকে কাটার যত বাহানা। যত সব আলবাল রিসার্চের বালস্য বাল তথ্য যোগাড় করে এনে ডক্টর সাহেব বাকি সকলকে ঘাবড়ে দিলেন। এতটাই যে, এ প্রস্তাবে ফ্ল্যাটবাড়ির সকলেই সায় দিয়ে দিলো। আমি আর মা বাদে।
    একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি ওকে কাটা হচ্ছে। তখন অলরেডি দোতলা অব্দি কাটা শেষ। হাত পা ছড়িয়ে বসে গেছিলাম ওখানে। কেঁদেওছিলাম খুব, অবভিয়াসলি! কিন্তু কী আর হল কেঁদে! কেউ থোড়াই কিছু শুনলো!
    ঐ নড়বড়ে ডানার আধো আধো ছানাগুলো ও আর বাঁচেনি।
    কাক মা বাবা অবশ্য তার পর ও আমাদের বাড়ি আসতো। ঐ বারান্দার তাকে। খেতে নয়। এমনি ই। চুপচাপ বসে থাকতো , আর ক্কচিৎ কদাচিৎ টেনে টেনে ধীরে ধীরে বলতো, ক। ক।
    খুব কল্পনাপ্রবণ হলে হয়তো ঐ ডাকে শুনে ফেলতাম, কই ? কই ?

    দু'বছর আগে বাড়ি গিয়ে আমার ডায়রিটা খুঁজে পেলুম। না: এই ডায়রিটা সেই বয়সের আগেই শেষ হয়ে গেছিল, যে বয়সে ডায়রি লিখে লুকিয়ে রাখার দরকার পড়ে। যেখানে তখনো আমার কোনো গুপ্তকথা জমা হয়নি। 'এই সপ্তাহে দুদিন ইংলিশ ওয়ার্কবুক আনিনি বলে প্রীতিদি আজ আমাকে ক্লাসের বাইরে বের করে দিয়েছেন, বাড়িতে কাউকে বলিনি শাস্তির কথা, এই কথাটা আমি অনেক বড় হয়ে, কলেজে উঠে মা কে বলবো। ' কিম্বা, ' নতুন কেনা গন্ধ রবারটা আজ হারালো। পরশু দিন জলের বোতলের মুন্ডিটা হারিয়েছি বলে মা কী বকলো। রবারের কথাটা বলবো না। অনিন্দিতার একটা এক্সট্রা আছে, ওটা দেবে বলেছে।' নানারূপ দোষকম্ম নিয়ে এধরণের নির্দোষ,নিরিমিষ্যি কথাবার্তা ছাড়াও তাতে একটা কবিতা খুঁজে পেলাম। আমার জীবনে লেখা হাতেগোণা ক'খানি কবিতার প্রথমটা। বেশ অশ্রুগদগদ এক কবিতা। ইউক্যালিপটাস আর কাকেদের নিয়ে।

    সে যা হোক, ইউক্যালিপটাস ও কাককথা তো ফুরোলো, আর এদিকে, কাণ্ড দেখো ! আমার কথা তো শুরুই হয় নি !!
    পাঠকবর, আমাকে ক্যালানোর প্ল্যান করছেন কি ? না:,আর মোটে তিষ্ঠোতে বলব না। তবে এই ব্যাপারটা বুঝতে হবে, বকবক করে যাবার মত অনন্ত সময় বা অভ্যাস কোনোটাই আমার নাই। মশা ভানতে এই ইউক্যালিপটাসের গীত আমি এমনি এমনি থোড়াই গাইতে বসেছি। ইউক্যালিপটাসের কথা তো মনে পড়ে গেল, ঐ খবরটা পাবার পর । ট্‌র্‌পক্যল মেডিসিনের ড: হাটি জানিয়েচেন কলকাতাধামেও মহামারী আসন্ন। ডেঙ্গু । ম্যালেরিয়া তো ফি বছরে কালিপুজোর পরেই তিথি ধরে আসা বাঁধা অতিথি। এবার মশা কানেকশনটা বোঝা যাচ্ছে ? আরে, ডেঙ্গু কিসে হয় শুনি ! মশা ! ও:, বোঝা গেল না ? ইউক্যালিপটাস কানেকশনটা ? আরে এই মশা মারতে এই যে মিউনিসিপ্যালিটি এই এত্ত এত্ত কামান দেগে বেড়ায়, তার থেকে হয়তো অনেক বেশি কাজ হতো ইউক্যালিপটাসের তেল মেখে বসে থাকলে! ঐ গন্ধে ডেঙ্গুর ( এমনকি ম্যালেরিয়ার ও ) মশা আর ত্রিসীমানা,চতুষ্পার্শ,দশদিকে একটা বিশেষ ব্যাসার্ধের মধ্যে ঘেঁষবে না। অন্তত গত কয়েকবছরের রিসার্চ তো তাই বলছে। মার্কেটে যেগুলো রমরমিয়ে পাওয়া যায় ? আরে সেসব ই তো সিন্থেটিক কেমিক্যাল, ঐ ডি ই ই টি , পিকারেডিন। রীতিম্‌তন ঘড়ি ধরে বসে থেকে দেখানো হয়েছে যে, ইউক্যালিপটাসের তেল খুব অ্যাগ্রেসিভ মশাদের তাড়িয়ে রাখে চার থেকে সাত ঘণ্টা , আর একটু নিরীহ গোছের মশা হলে তো কথাই নেই, গোটাগুটি বারো ঘণ্টার জন্য নিশ্চিত লক্ষণরেখা। আর এই সময় সীমাগুলো অন্যদের চেয়ে বেশি। বল্লে হবে ? তার উপর অন্যগুলোর মত পচা গন্ধ ( ঐ গন্ধে শুধু মশা না, মানুষের ও ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি উপ্‌ক্রম হয়) নাই, টক্সিসিটির ভয় নাই (ডি ডি ই টি হইতে সাবধান, কারণ তা গিয়ে সটান বাসা বাঁধতে পারে স্নায়ুতন্তুর মধ্যেও ), পরিবেশের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নাই ( হার্বাল, হেন্স বায়োডিগ্রেডেবল) । এসবের জন্য মার্কেটে এই ইউক্যালিপটাস তৈলের প্যাচ নিয়ে 'বাই বাই মসকিউটো' নামধারী প্রোডাক্ট ও চলে এল !

    যাহোক, সব কানেকশন ই তো বোঝা গ্যালো, আমি যে মশার কথা বলতে খামোখা খামোখা ইউক্যালিপটাসের কথা ব্যাখ্যান করি নাই, সেও বোঝানো গ্যালো, কিন্তু , আমার সাথে মশার কানেকশন ? সেটা কি বোঝা গ্যালো ? মানে, মশা নিয়ে দু চার কথা আর কে না জানে , কিন্তু মশা নিয়ে যাহা জান লিখ, স্পেসিফিকালি এই অধমের উপরই এইরূপ আদেশ বর্ষণ ক্যানো?
    ক্যানো , ক্যানো, ক্যানো ?
    এই তো আমার ছোটোবেলার প্রায় সব খাতা উপুড় করেদিলুম, তাতে কাক আছে, পিঁপড়ে আছে, আরশুলাও আছে, কয়েকটা না খোলা খাতায় টিকটিকি , সাপ , ব্যাং সেসব ও পাওয়া যাবে। কিন্তু মশা ! ঢুনঢতে রহে যাওগো। তবু একটাকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইউক্যালিপটাসময় জীবন ছিল বলেই বোধহয়।
    কিন্তু তাইলে এভ মশার লেখা নিয়ে অবিরত আমার কাছে পিন পিন করা ক্যানো?
    ক্যানো? ক্যানো? ক্যানো? ( এই স্থলে প্রতিটা ক্যানোর তালে তালে তালবাদ্য সহ ক্যামেরাকে জুম করে ধুতি শার্ট ও গগলস পরিহিত সুমেরু মুখোপাধ্যায়ের উপর ফোকাস করার বড় প্রয়োজন ছিল )

    কী না, আমি আর মশা নাকি সমার্থক! আর ট্র্যাজেডি হল, এই কথাটা আমি ছাড়া আর সবাই বলে। ফার্স হল, নিজেকে ঘরের শত্রু প্রমাণ করে দেবার কস্টেও লোকে আমার টেস্টিমোনিয়াল দ্যায়, গৃহপালিত মশা !!
    উফ্‌ফ !
    গ্রহ-নক্ষ্‌ত্রা¡দির অবস্থানের কী কু-কম্বিনেশনক্ষণে ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেছিলুম রে ভাই!
    ম্যালেরিয়া বলতে লোকের মশার কথা মনে পড়বে না, এরকম কোনো ধারণা পোষণ করে রাখি নাই বটে, বরং না মনে পড়লে একটু দু:খ ই পেতাম। রস সাহেবের হয়ে। কলকাতাবাসীদের নেহাত আত্মবিস্মৃত, অকৃতজ্ঞ জাতি মনে করতুম। কিন্তু তাই বলে ম্যালেরিয়ার গবেষণা বলতেও লোকে বুঝবে আমি মশার কারবারী ,এতটা ভাবি নাই। যত বলি, ওরে, মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয় বটে, কিন্তু মশা তো কামড়ায় এই অধম মনুষ্যপ্রজাতিকেই। আর সেই যে একবার মশক শরীর থেকে বাসা বদল করলো প্যারাসাইটগুলো,তারপর তো সেই এখেনেই গেঁড়ে বসা। ভাড়াটে ও বলা যায় না, পুরো জবরদখল কেস। কৃতজ্ঞতার লেশমাত্তর নাই, গৃহস্বামীর কল্যণ অকল্যাণ বলেও যে একটা ব্যাপার আছে, সেই বোধটাই নেই! আর এসেই একেবারে পাড়া কাঁপিয়ে ছাড়ে।। তা কায়দা করে ফিরিতে আহার, নিদ্রা এসব ই এই মনুষ্যদেহে সম্ভব হলেও মৈথুন, না: ঐ টি এখানে হবার জো নেই। আমাদের রক্ত গরম কিনা। বেশ একটু এসি এসি এনভায়রনমেন্ট না হলে তাঁদের মুড আসে না মনে হয়। সেজন্যই ঐ মশাদের হোটেল। শুধু মৈথুনই না, এই মশকগৃহে তারা আরো অনেককিছু করে। এই যেমন পক্ষী,মাউস,মনুষ্য ও কপি কুলে সংক্রমিত হতে পারার মতন করে নিজেদের প্রস্তুত করে তোলে। আর ঐজন্য ই বোধহয়, ওখানে কোনোরূপ বাওয়াল দেওয়া নাই, মাস্তানি ভুলে প্যারাসাইটরা সেখানে এক্কেরে সু-সিটিজে্‌নন বাবুমশায়। লিভ এন্ড লেট লিভ। মশাদের তো ম্যালেরিয়া হয়ই না! মশা-অরি তো কেবল আমাদের। আমাদের মত ম্যালেরিয়ায় মরা তো দূরস্থান, মশাদের রোগের কোনো উপসর্গই দেখা যায় না! ( ল্যাবে ঠিকঠাক স্পিসিসের মশাকে ঠিক্‌ঠাক প্যারাসাইট স্পিসিসবাহী রক্ত না খাওয়ালে অবিশ্যি এরকম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ঘটে না অনেকসময়ই ) তবে হ্যাঁ, ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটবাহী মশারা নাকি বেশি বেশি করে কামড়ায় আর বেশি বেশি করে রক্ত চোষে, ওদের লালায় কি যেন এক প্রোটীন কমে যায় , তাই। এখন বেশি ক্ষণ ধরে বসে থাকলে তো বেশি বেশি করে চড় চাপড় খাবেই লোকজনের কাছে এবং বেশি বেশি করে মরবে। মরেও। আবার ভাববেন না যেন, এ আমি বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলুম। সেজন্য যে এরা বেশি মরে, তাও রিসার্চ লব্ধ তথ্য। বল্লে হবে ? সে তো রিসার্চ আরো আরো কত কত কথা বলছে। সেসব এখন বলবো থোড়াই। পরে কখনো। এখন বড্ড হাঁপিয়ে গেছি।
    এটুকুও বলা, সে কেবল এই মিথটা ভাঙ্গার জন্য,যে, ম্যালেরিয়া মানেই শুধু মশা না। আর আমি মানে তো নাই।
    ছবি- সুমেরু মুখোপাধ্যায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৩৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন