এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  ইতিহাস

  • রাশিয়ায় জাতিভিত্তিক গণউচ্ছেদের ইতিহাস

    সুদীপ্ত পাল
    আলোচনা | ইতিহাস | ০১ মার্চ ২০২২ | ৫৮৫১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (৫ জন)

  • ক্রিমিয়াতে যে তাতাররা একসময় প্রধান ও প্রায় একমাত্র জনগোষ্ঠী ছিল সেই তাতাররা এখন ক্রিমিয়ার জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মাত্র। কীভাবে? জারদের যুগ থেকে ক্রিমিয়ার রুশিকরণ শুরু। তারপর ১৯৪৪ সালের মে মাসের একদিন কয়েক ঘণ্টার নোটিশে প্রায় দু’লক্ষ ক্রিমিয়ান তাতারকে একের পর এক মালগাড়িতে বসিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে উজবেকিস্তানের জনবিরল অঞ্চলগুলিতে। ক্রিমিয়ান তাতারদের স্থান দখল করল রুশরা।

    কৃষ্ণ সাগরের তীরে কাল্মিকিয়া হল ইউরোপের একমাত্র বৌদ্ধপ্রধান প্রদেশ। ইউরোপের একমাত্র স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী হল কাল্মিক – এরা মোঙ্গোলিয় উৎসের মানুষ। ১৯৪৩ সালে বারো ঘণ্টার নোটিশে কাল্মিকিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এক লক্ষ কাল্মিকদের প্রায় প্রত্যেককেই, পাঠানো হয় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে মধ্য সাইবেরিয়ায়। কয়েক দশক পর অবশ্য তারা মাতৃভূমিতে ফেরার সুযোগ পায়। তাদের ১৭৫টি মন্দির ইতোমধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, মারা গেছে উচ্ছিন্ন জনসংখ্যার ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ।

    ১৯৩৭ সালে সাইবেরিয়ার পূর্বপ্রান্তে বসবাসকারী প্রায় দুই লক্ষ কোরিয়ানকে সরিয়ে পাঠানো হয় কাজাকস্তান ও উজবেকিস্তানের জনবিরল অঞ্চলগুলিতে। প্রায় ছ’হাজার কিলোমিটার দূরে। একইভাবে লিথুয়ানিয়ান ও ফিনিশদের রাশিয়ার পশ্চিম প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হল সাইবেরিয়ার পুবদিককার জনবিরল অঞ্চলগুলিতে।

    পূর্বকথা:

    নূতন সোভিয়েত সরকারের জাতি-উচ্ছেদ নীতি কিন্তু পুরোনো জার শাসিত রুশ সাম্রাজ্যেরই ধারাবাহিকতা। ১৮৬৪ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে ককেশাসের সারকেসিয়ান মুসলিমদের ৮০ থেকে ৯৭ শতাংশের বিতাড়ন হয়, যার শিকার হয় প্রায় আট থেকে পনেরো লাখ মানুষ, যার অর্ধেক মারা যায়।

    ঊনবিংশ শতকেই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উচ্ছেদের সূচনা হয়। সেই যুগে রাশিয়ার সামরিক পরিসংখ্যানবিদরা রীতিমত এই নিয়ে গবেষণা করে স্ট্রাটেজি বানাতেন – কোথা থেকে কাকে সরানো উচিত! A. Maksheyev, N. N. Obruchev আর V. A. Zolotarev – এই তিনজন পরিসংখ্যানবিদের কাজ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল। তাঁদের কাজের ধারায় যেটা পাওয়া যায়, সেটা হল “অবিশ্বাসযোগ্যতার ভৌগোলিক অভিমুখ”। এই কাজের জন্য মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – স্লাভিক (রুশ এবং সমজাতীয় ভাষাগোষ্ঠীগুলি) ও অ-স্লাভিক (পশ্চিম ইউরোপীয়, মধ্য এশীয়, ইহুদি, ও ককেশাস পর্বতীয় জাতিগুলি)। তারপর কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে কাদের অনুপাত কীরকম – তার ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়। তারপর হত অবিশ্বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য বানানোর প্রক্রিয়া – মূলত রুশিকরণের মাধ্যমে।

    ১৯৪৪ সালের উচ্ছেদের অনেক আগেই ক্রিমিয়ান তাতারদের সংখ্যা প্রায় একশ’ শতাংশ থেকে চৌত্রিশ শতাংশে নেমে আসে জারতন্ত্রের শেষদিকে (১৮৯৭ সালের আদমশুমারি), আর প্রায় কুড়ি শতাংশে ১৯৩৯ সালের আদমশুমারিতে। সেটা শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে ১৯৪৪-এর উচ্ছেদের পর।

    ১৮৯১ সালে মস্কো থেকে ইহুদিদের তিন চতুর্থাংশকে বিতাড়ণ করা হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জার্মান এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ানদের বিতাড়ন করা হয় – দেশ থেকে নয়, দেশের মধ্যেই মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গের মত অঞ্চল থেকে সরিয়ে উরাল বা সাইবেরিয়ার মত জায়গায় পাঠানো হয়। স্থানান্তরের খরচ উচ্ছিন্ন মানুষের নিজেদের, সেটা বহন করতে না পারলে তাদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে পরিবহন করা হবে। তার পরের চার বছরে পোলিশ এবং ইহুদিদের উপরও কোপ পড়ে। প্রায় তিন লক্ষ ইহুদিকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরবর্তী অঞ্চলগুলোতে পাঠানো হয়। তাদের বাড়ি ও দোকানপাট স্থানীয় লোকেরা দখল করে নেয়।

    বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে বিশ্বযুদ্ধের মাঝে সংঘটিত রুশ বিপ্লবের সময় অবধি ৭৪ লক্ষ মানুষের গণউচ্ছেদ হয়। এদের মধ্যে দশ লক্ষ মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল, আর বাকি প্রায় চৌষট্টি লক্ষ মানুষ ছিল রিফিউজি – নিজের দেশেই রিফিউজি!



    গণপ্রতিস্থাপনের আংশিক মানচিত্র - ১


    নূতন সোভিয়েত ইউনিয়নের উচ্ছেদের কাহিনী:

    বিপ্লব-পরবর্তী রাশিয়া এবং সোভিয়েত গঠনের পরবর্তীকালের গণউচ্ছেদগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় – শ্রেণিভিত্তিক, জাতিভিত্তিক এবং ধর্মমতভিত্তিক। এই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু জাতিভিত্তিক উচ্ছেদ, তবে সংক্ষেপে বলে দিই – শ্রেণিভিত্তিক উচ্ছেদের মূল শিকার ছিল কুলাক (স্বাধীন চাষী) ও কসাক (প্রভাবশালী স্থানীয় যোদ্ধাশ্রেণি) – এই দুই দল।

    ১৯১৯ থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি মূলত স্তালিনের উদ্যোগে এই উচ্ছেদগুলো হয়। ১৯২০-র দশকে কসাক উচ্ছেদ ও ১৯৩০-র দশকে কুলাক উচ্ছেদের দিকে জোর দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩৫ থেকে জতিভিত্তিক উচ্ছেদ শুরু হয়। ফিন বা ফিনিশ জাতি দিয়ে শুরু।

    ‘ইঙ্গরিয়ান ফিন’রা বাস করত ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার জন্য সীমান্ত পরিষ্কার করার নাম করে এদের প্রায় ৩৫০০ পরিবারকে পাঠানো হয় তাজিকিস্তান, কাজাকস্তান ও পশ্চিম সাইবেরিয়ায়। প্রায় একই সময়ে, মার্চ ১৯৩৫ নাগাদ, ইউক্রেন থেকে হাজার দশেক পরিবারকে পাঠানো হয় কাজাকস্তানে, যার বেশিরভাগই ছিল পোল ও জার্মান। এরপর ১৩০০ জন কুর্দকে আর্মেনিয়া ও আজেরবাইজানের সীমান্ত অঞ্চলগুলো থেকে সরানো হয় কাজাকস্তান ও কিরগিজস্তানে।

    এরপর ১৯৩৭ সালে সাইবেরিয়ার পূর্ব দিক থেকে কোরিয়ানদের উচ্ছেদ শুরু হয়। একটা বড় সংখ্যক কোরিয়ান জনগোষ্ঠী এখানে উনবিংশ শতক থেকে বসবাস করছিল। এটা রুশ জমি ছিলও না, মূল রাশিয়া থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। প্রায় ১৬৭,০০০ কোরিয়ান এই অঞ্চলে বাস করত। এছাড়া কয়েক বছর আগে থেকে জাপান নিজের কোরিয়ান মানুষদের বিতাড়ন শুরু করে – যারা পূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের সাখালিন অঞ্চলে চলে আসে। প্রাভদা সংবাদপত্র, যেটি রুশ কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ছিল, সেখানে ২৩ এপ্রিল ১৯৩৭-র পত্রিকায় দাবি করা হয় – পূর্ব সাইবেরিয়ার চিনা ও কোরিয়ান মানুষেরা জাপানিদের চর। এটা একটা প্রোপাগান্ডা ছিল কোরিয়ানদের শত্রু হিসেবে দেখানোর। ২৫ অক্টোবর ১৯৩৭ তারিখে ১২৪টি ট্রেনে প্রায় ১৭০,০০০ মানুষকে কাজাকস্তান পাঠানো হয়। এদের প্রায় পুরোটাই কোরিয়ান, কিছু চিনাও ছিল।

    এই সবক’টি উচ্ছেদের ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়, যে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বা সীমান্ত সুরক্ষার অজুহাত দেওয়া হয়েছিল।

    সোভিয়েতের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি, উপজাতি ও আদিবাসীদের গণপ্রতিস্থাপনের ফলে, স্তালিনের আমলে প্রায় ষাট লক্ষ মানুষের গণউচ্ছেদ হয়েছিল। এই সংখ্যাটা বিশাল, কারণ এরা তুলনামূলক ভাবে ছোট ছোট জাতি, এবং এরা সংখ্যায় খুব বেশি ছিল না। অনেক ক্ষেত্রেই একেকটা জাতির প্রায় কুড়ি থেকে একশ’ শতাংশ মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল তাদের বাসভূমি থেকে। এই ষাট লক্ষ জাতিভিত্তিক উচ্ছেদ ছাড়াও আরো দেড় কোটি মানুষের শ্রেণিভিত্তিক উচ্ছেদ হয়।

    উচ্ছিন্ন জাতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – চেচেন ও ইঙ্গুশ (মোট পাঁচ লক্ষ), ইঙ্গ্রিয়ান ফিনিশ (চার লক্ষ), জাপানি ও কোরিয়ান (মোট ছয় লক্ষ), ইউক্রেনিয়ান (দুই লক্ষাধিক), তিনটি বাল্টিক জাতি (দুই লক্ষ), ক্রিমিয়ান তাতার (দুই লক্ষ), কাল্মিক (এক লক্ষ), আজেরি (এক লক্ষ), বিভিন্ন তুর্কি, তাতার, ককেশাস পার্বত্য জাতি, ইহুদি, বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি, ইত্যাদি।



    গণপ্রতিস্থাপনের আংশিক মানচিত্র - ২



    জাতিচরিত্রের পরিবর্তন আরেকরকম ভাবে:

    উচ্ছেদের পাশাপাশি আরেকটি প্রক্রিয়া একটা অঞ্চলের ডেমোগ্ৰাফি বদলায়। মানুষের আগমন বা আনয়ন। এছাড়া জন্ম ও মৃত্যুহারের তারতম্যও।

    কাজাকস্তানে কাজাকরা জনসংখ্যায় কমতে কমতে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। কারণ ছিল – সোভিয়েতের বিভিন্ন প্রান্তের অন্য জাতিদের বলপূর্বক আনয়ন বা স্বেচ্ছায় কর্মসূত্রে আগমন, যাযাবর কাজাকদের অপসারণ এবং দু’টি বড়মাপের মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।

    ডনবাস অঞ্চল, যার মধ্যে ডনেৎস্ক আর লুহানস্ক – এই দু’টি প্রদেশ আছে, যারা ইউক্রেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং যাকে ঘিরে এখন (২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে) রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে, তার ইতিহাস দেখা যাক। এই ডনবাস অঞ্চল অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি অবধি আংশিকভাবে ইউক্রেনিয়ান কসাকদের (Cossack Hetmanate) অধীনে ছিল আর আংশিকভাবে ক্রিমিয়ান তাতার খানেদের খানাতভুক্ত ছিল। রুশ সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিনের আমলে এই অঞ্চল রুশদের দখলে আসে। শিল্প বিপ্লবের ফলে এই অঞ্চলের কয়লাখনিগুলোর দিকে রুশ নজর পড়ে ও রুশিকরণ শুরু হয়। ১৮৯৭ সালের রুশ সরকারি নথি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যার ৫২% স্থানীয় ইউক্রেনিয়ান আর ২৯% রুশ ছিল।

    সোভিয়েত যুগের তিনটি ঘটনা এই অঞ্চলের রুশিকরণকে আরো জোরদার করে। এক, ১৯৩২-৩৩ সালের হোলোডোমর দুর্ভিক্ষ যাতে ইউক্রেনিয়রা অনেক বেশিমাত্রায় মারা যায় রুশদের তুলনায় (কারণ ইউক্রেনিয়ানরা কৃষিকাজে বেশি যুক্ত ছিল আর স্বাধীন চাষীদের উপরে সোভিয়েত সরকারের কোপ বেশি পড়েছিল যেটাকে dekulakization বলা হয়)। দুই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর পর এই অঞ্চলের পুনর্গঠনের জন্য বেশি বেশি করে রুশদের আনা শুরু হয় রাশিয়া থেকে। তিন, ১৯৫৮-৫৯ সালের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার যা স্কুলগুলো থেকে ইউক্রেনিয়ান ভাষা মুছে দেয় ও রুশ ভাষা চাপানো হয়।

    ২০০১ সালের ইউক্রেনিয়ান আদমশুমারি অনুযায়ী, ডনবাস অঞ্চলের ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ জাতিগতভাবে ইউক্রেনিয়ান, ৪০ শতাংশের কাছাকাছি রুশ। কিন্তু ভাষাগতভাবে চিত্রটা উল্টো। প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ নিজেদের রুশভাষী হিসেবে পরিচয় দেয়।

    মোটকথা, ডনবাস অঞ্চলের রুশিকরণ – যা জারদের যুগে শুরু হয়েছে, আর সোভিয়েত আমলে আরো জোরদার ভাবে হয়েছে – সেটা একটা বড় কারণ ডনবাসের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর রাশিয়ায় যোগদানের দাবির। অতীতের এই রুশিকরণকে কাজে লাগিয়েই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে।

    মোটকথা, কাজাকস্তান বা পূর্ব ইউক্রেনে উচ্ছেদের পাশাপাশি রুশদের আনয়ন বা আগমনের ফলেও জাতিচরিত্রের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মনে রাখতে হবে, যে রুশরা এইসব অঞ্চলে এসেছিল, তারাও অনেকেই শ্রেণিভিত্তিক উচ্ছেদের শিকার ছিল।

    উচ্ছেদের পর:

    উচ্ছিন্ন মানুষদের মৃত্যুহার স্বাভাবিকভাবেই অনেক অনেক বেশি ছিল। দশ থেকে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ অবধি মৃত্যুহার ছিল। জাতিভিত্তিক গণউচ্ছেদের ফলে পাঁচ থেকে দশ লক্ষ মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে কোনো কোনোটিকে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারি ভাবে গণহত্যার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ক্রিমিয়ান তাতার, চেচেন ও ইঙ্গুশদের উচ্ছেদকে গণহত্যার আখ্যা দেওয়া হয়েছে ইউক্রেন, কানাডা, লিথুয়ানিয়া, লাটাভিয়া ও ইউরোপীয় সংসদের তরফ থেকে।

    স্তালিন-পরবর্তী যুগে এই ধরনের গণউচ্ছেদ বন্ধ হয়। কোনো কোনো জাতিকে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার সুযোগও দেওয়া হয়।

    প্রশ্ন আসে, এই উচ্ছেদগুলোর তথ্য কীভাবে বাইরের জগতের কাছে আসে, বিশেষ করে যেখানে উচ্ছিন্ন জাতিগুলোর মধ্যে শিক্ষার প্রসার, প্রচারমাধ্যমের অ্যাকসেস – সবই কম ছিল? আটের দশকের বিভিন্ন রাশিয়ান গবেষকদের গবেষণার মাধ্যমে এগুলো জনসমক্ষে আসে। কেন্দ্রীয় আর্কাইভে কম তথ্য থাকলেও বিভিন্ন আঞ্চলিক সরকারি আর্কাইভে এই বিষয়ে অনেক তথ্য নথিভুক্ত ছিল। এছাড়া সোভিয়েত সরকারেরই বিভিন্ন নথি – যেমন জনসংখ্যার পুরোনো রেকর্ড, আলাদা আলাদা সময়ের মানচিত্র – এগুলো অনেকটাই সাহায্য করে ইতিহাসের পুনর্গঠন করতে।

    এই উচ্ছেদগুলোর পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? রাশিয়া তথা সোভিয়েতের, বিশেষ করে সাইবেরিয়া অঞ্চলের আয়তন তার জনসংখ্যার নিরিখে অনেক অনেক বড়। ঠান্ডার জন্য অনেক অংশই জনবিরল, কিন্তু কাঠের একটা বড় উৎস এই অঞ্চলগুলো। কাঠ উৎপাদনের জন্য এই অঞ্চলগুলোতে বসত তৈরির পরিকল্পনা ছিল, আর দরকার ছিল স্বল্পমূল্যের শ্রমের। কাঠ ব্যবহার করে তৈরি হতে শুরু করল রেললাইন – তার জন্যও সস্তায় শ্রমিক দরকার। কলকারখানার জন্যও দরকার শ্রমিক, তার জন্যেও স্বাধীন চাষীদের পরাধীন বানানো জরুরি ছিল। যে জাতিগুলোর কাছে চাষের জমি ছিল, তাদের জমির দিকে সরকারের নজর ছিল। এছাড়া প্রান্তিক ও সংখ্যালঘুদেরকে শোষণ করাও সহজ। এই জাতিগুলোর অনেকের কাছেই বড় রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে লড়বার মত প্রযুক্তি ও রসদ ছিল না।

    এছাড়া অন্যান্য অজুহাতের মধ্যে ছিল – এই জাতিগুলোর রেড আর্মিতে যোগ না দেওয়ার অভিযোগ (যদিও অনেক রেড আর্মির সদস্য বা তাদের পরিবারেরা বাস্তুহারা হয়েছিল), সীমান্ত খালি করা দেশের নিরাপত্তার জন্য, উচ্ছেদের ফলে খালি হয়ে যাওয়া জায়গাগুলোর পুনর্জনবসতিকরণ, দেশদ্রোহিতার অভিযোগ, স্বাধীন চাষীরা রপ্তানি অতিরিক্ত মাত্রায় করে – এরকম অভিযোগ। স্তালিনের ভয় ছিল, যে প্রান্তিক জাতিগুলি আক্রমণকারী অন্য দেশগুলিকে, যেমন জার্মানি বা জাপানকে, সাহায্য করতে পারে।

    আবার এই উচ্ছিন্ন জাতিগুলোর অনেকেই নিকট অতীতে অন্য প্রতিবেশী জাতিদের শোষণ করেছে – সেটা অস্বীকার করা যায় না, যেমন ক্রিমিয়ান তাতারদের শাসকগোষ্ঠী অর্থাৎ খানেরা ক্রীতদাস ব্যবসায়ে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিল।

    ক্রিমিয়ান তাতারদের মধ্যে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন আমেত খান সুলতান। সোভিয়েত বিমানবাহিনীর একজন ডেকোরেটেড বিমান যোদ্ধা ছিলেন, সোভিয়েতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান দু’বার পেয়েছেন। কিন্তু তাতে কী! তাতারদের উৎখাতের সময় তাঁর পরিবারকেও ছাড় দেয়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা। আমেত খানের মা তাতার, বাবা দাগেস্তানি মুসলিম ছিলেন। শেষ অবধি দাগেস্তানি বংশপরিচয়ের উপর ভিত্তি করে আমেত খান ও তাঁর বাবা-মা কে ছাড় দেওয়া হয়। যাই হোক, আমেত খান নিজেকে তাতার বলেই পরিচয় দিতেন। রাজনৈতিক ভাবে ক্রিমিয়ান তাতারদের পুনর্বাসনের সপক্ষে লড়াই করেছেন, নিজের পাসপোর্টে নিজের ন্যাশনালিটি ক্রিমিয়ান তাতারই লিখে গেছেন চিরদিন, অনেক পারিপার্শ্বিক চাপ থাকা সত্ত্বেও। তাঁর মৃত্যুর পর সোভিয়েত সরকার বরাবরই চেষ্টা করেছে তাঁর স্মৃতির বি-তাতারীকরণ করার। তাঁকে একাধিক জায়গায় দাগেস্তানি হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তার উদ্দেশ্য একটাই – আমেত খানের স্মৃতির বি-তাতারীকরণের মাধ্যমে ক্রিমিয়ার ইতিহাসের বি-তাতারীকরণ করা, যেন তাতাররা ক্রিমিয়ার কেউ ছিলই না!

    স্তালিন-পরবর্তী যুগে এই উৎখাতক্রিয়া বন্ধ হলেও, সবাই নিজের স্বভূমিতে ফেরার সুযোগ পায়নি। যেমন মেসকেটিয়ান তুর্কদের মেসকেটিয়ায় ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়নি, তাদের আজেরবাইজানি বলে চিহ্নিত করে আজেরবাইজানের এক প্রান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাল্মিকরা অনেকাংশেই ফিরেছে কিন্তু আবার নূতন করে গড়ে তুলতে হয়েছে তাদের বৌদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি। ক্রিমিয়ান তাতাররা আংশিকভাবে ফিরেছে, কিন্তু ফিরেছে নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু হয়ে।




    তথ্যসূত্র:

    ১. Against Their Will: The History and Geography of Forced Migrations in the USSR, by Pavel M. Polian (এটি একটি রুশ বইএর অনুবাদ - অনেক খুঁটিনাটি বিশদ এখানে আছে)

    ২. এই উচ্ছেদগুলোর বিষয়ে নিজস্ব উইকি পেজগুলি, বিশেষ করে -
    ক) Population transfer in the Soviet Union
    খ) Historical background of the 2014 pro-Russian unrest in Ukraine




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০১ মার্চ ২০২২ | ৫৮৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:e08b:d433:af2a:cb77 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪০504629
  • আগে এটা হোক তবে ওটা হবে, এই কথাটাই অজুহাত। কলোনি করার প্রায়শ্চিত্তের সাথে কাস্ট সিস্টেমের কোন যোগ নেই। কাস্ট সিস্টেমের যারা ভিকটিম, তারাই কলোনিয়ালিজমেরও বড় ভিকটিম।
     
    • Amit | 59.102.87.212 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৩৬504627
    • অজুহাত কে দিলো আবার ? জাস্ট আগে নিজের ঘরের ময়লা সাফ করে নিলে বেটার। আর যেকোনো ইনভেসিভ চেঞ্জ এ সব দেশের গরিব মানুষ বেশি সাফার করে। 
  • হেঁহেঁ | 139.64.165.176 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪১504630
  • বলেচি না, আম্রিগার ব্যাপারে কাকার থেকে হাইগ্রাউন্ড কেউ নিতে পারবে না। কাকা, আমাগো ট্যাক্সোটাও ভরে দিও।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪২504631
  • ক্ষতিপূরণ দিতে চলেছেন? কীভাবে দেবেন? সরাসরি অ্যাকাউন্টে দেবেন সেই লেজেন্ডারি পনেরো লাখের মতন?
  • ক্যাশ | 169.197.143.22 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৪504632
  • ক্যাশ দেবে। ক্যাশ। হাতে হাতে।
  • Amit | 59.102.87.212 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৬504633
  • সেটাই তো বলছি. যেকোনো চেঞ্জ এই গরিব লোক র বেশি ভোগান্তি হয়। ইউক্রেন এও তাই হবে। আলাদা ​​​​​​​কিছু ​​​​​​​নয়। ​​​​​​​
     
    এবার ইন্ডিয়াতে কাস্ট সিস্টেম এর দৌলতে বটম লেয়ার্স এর লোককে ডিস্ক্রিমিনেট করে করে গরিব করে রাখাটা কি পুরোটা ব্রিটিশ দের দোষ ?
  • S | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৮504634
  • সিরিয়াসলি? আপনারা আমেরিকাতে থাকেন অথচ বহুদিন ধরেই যে রিপ্যারেশনের কথা হচ্ছে, সেসব জানেন না? আইটি, ভিসা, গ্রীন কার্ড, ডলার আইএনার রেটের বাইরেও আমেরিকা আছে। একটু খুঁজে দেখুন।

    তবে আমারও সারপ্রাইজড হওয়া উচিত না। টেক্সাসে কুড়ি বছর থেকেও অনেক উচ্চ শিক্ষিত সাকসেসফুল ভারতীয়কে দেখেছি চাক নরিসের নাম পজ্জন্ত শোনেনি। তাহলে এসব তো কালোদের কথা, যাদেরকে বেশিরভাগ ইন্ডিয়ানরা লোয়ার কাস্টের মতনই ট্রীট করে।
  • S | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৯504635
  • অ্যান্ডর জানেন না যে আমেরিকাতে ট্যাক্স কিকরে দিতে হয়?
  • জয় হিন্দ | 169.197.143.22 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৯504636
  • এব্যাপারেও মোদিজি আপনাদের গোল দিয়ে বসে আছেন। উনি আগেই সাফাই কর্মচারীদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:e08b:d433:af2a:cb77 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫১504637
  • কাস্ট সিস্টেম অবশ্যই ব্রিটিশদের দোষ নয়। কিন্তু কলোনিয়ালিজম ব্রিটিশদের দোষ। ব্রিটিশরা কলোনিয়ালিজমের ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে। কাস্ট সিস্টেমের জন্য ক্ষতিপূরণ তাদের দিতে হবে কেন? 
     
    মনে রাখবেন, কাস্ট সিস্টেম নেই এমন অনেক দেশকেই কলোনাইজ করা হয়েছিল।
     
    • Amit | 59.102.87.212 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৪৬504633
    • সেটাই তো বলছি. যেকোনো চেঞ্জ এই গরিব লোক র বেশি ভোগান্তি হয়। ইউক্রেন এও তাই হবে। আলাদা কিছু ​​​​​​​নয়। ​​​​​​​
       
      এবার ইন্ডিয়াতে কাস্ট সিস্টেম এর দৌলতে বটম লেয়ার্স এর লোককে ডিস্ক্রিমিনেট করে করে গরিব করে রাখাটা কি পুরোটা ব্রিটিশ দের দোষ ?
  • আচ্ছা দাদা | 169.197.143.22 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫১504638
  • আম্রিগাতে যারা থাকে, তারা তিতীয় বিশ্যের লোকেদের ক্ষতিপূরন দেবে না? তাইলে এই দশটা-পাঁচটার হয়রনিটা বন্দ হয়।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫২504640
  • বড় এস, ভারতের কথা বলছিলাম। ব্রাহ্মণেরা ও ক্ষত্রিয়েরা দলিতদের ক্ষতিপূরণ দেবেন এই প্রস্তাব উঠল কিনা!
  • S | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫২504639
  • "এবার ইন্ডিয়াতে কাস্ট সিস্টেম এর দৌলতে বটম লেয়ার্স এর লোককে ডিস্ক্রিমিনেট করে করে গরিব করে রাখাটা কি পুরোটা ব্রিটিশ দের দোষ ?"

    এবার ইন্ডিয়াতে কলোনিয়ালিজমের এর দৌলতে বেশিরভাগ লোককে ডিস্ক্রিমিনেট করে গরিব করে রাখাটা অনেকটা ব্রিটিশ দের দোষ।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫৪504641
  • সেই কারণেই সেই লেজেন্ডারি পনেরো লাখের কথাটা কইলাম।
  • বিল গেটস | 169.197.143.22 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫৬504642
  • বিল গেটস কাকে কাকে ক্ষতিপূরন দেবে সেটাও কয়ে ফেলুন। বেচারা ফকির হয়ে গেলে আবার ওকেই উল্টে ক্ষতিপূরন দিতে হবে।
  • Amit | 59.102.87.212 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫৭504643
  • ওকে. তাহলে সিদ্ধান্তে আসা গেলো সবাই ক্ষমা চাইবে আর ক্ষতিপূরণ দেবে। তো এবার ইমপ্লিমেন্টেশন এ আসা যাক ? শুরুটা কোদ্দিয়ে হবে ? বলি মোদী আর বরিস জনসন কি গুরু পড়েন ? 
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫৯504644
  • বিল নিজেই ক্ষতিপূরণ দাবী করবেন। বলবেন,' আমাকে সবাই দোষ দেন বিনা কারণে। এ তো চরিত্র হনন! মানহানি! সম্মান হরণ ! ক্ষতিপূরণ চাই।'
  • সোন্দর দেশ | 2a03:e600:100::80 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৩:৪৯504645
  • ভারত কত সোন্দর দেশ ছিল। ভারতে আগে সাম্যবাদ ছিল তো। বৃটিশ কলোনিয়ালরা অসাম্য আনল। তার আগে মোগলদের সময় বা ধরুন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যদের সময় সকলের সমান সম্পত্তি ছিল, রাজা-মন্ত্রী-প্রজা সব সমান ছিল, স্বপ্নের দেশ ছিল।

    সতীদাহ বলে কিছু আমাদের দেশে ছিলই না। বৃটিশগুলো ব্যাগভর্তি করে চিকেন পক্সের ভাইরাস, সতীদাহ আর অসাম্য আনল আমাদের দেশে। বদমাইশ পশ্চিমের দল।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৩:৫২504646
  • মোগল আমলের গণশার ফুলুরি ভুলবেন না। ওঃ সে যা দিনকাল ছিল! ঃ-)
  • S | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৩:৫৩504647
  • সতিদাহ প্রথা থামাতে বৃটিশরা এসেছিলো? জানতামই না।
  • সোন্দর দেশ ভারত | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:০০504648
  • শুধু কি তাই।

    আগে ভারতে নারীদের কত স্বাধীনতা ছিল। সব মেয়েরা স্কুল কলেজে যেত। বৃটিশরা এসে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে মেয়েদেরকে ঘরবন্দী করে দিল।

    আগে বিধবা মেয়েদের বিয়ে হত। বৃটিশরা এসে বিধবা বিবাহ বন্ধ করে দিল।

    আগে নিয়ম ছিল আঠারো বছরের আগে বিয়ে হবে না, বৃটিশরা এসে বাল্যবিবাহ চালু করল।

    আগে সংস্কৃত ছিল সাধারণ মানুষের ভাষা, সবাই সংস্কৃতে কথা বলত, ভাববেন না যেন সংস্কৃত শুধু পন্ডিত বা এলিটদের ভাষা ছিল, আসলে প্রকৃত সাম্য ছিল তখন, ধনী-গরীব-জমিদার এসব ভেদাভেদ ছিলই না।

    আগে জাতপাতও তো ছিল না, বৃটিশরা এসেই তো বর্ণাশ্রমের নাম করে জাতপাত দলিত এসব চালু করল।

    বৃটিশদের আগে এক সোন্দর দেশ ছিল ভারত।
  • S | 2a0b:f4c2:1::1 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:০৭504649
  • রিটিশরা ২০০ বছর ভারতে ছিল। ২০০ বছরে যেকোনও দেশে এমনিতেই কিছু সামাজিক পরিবত্তন হয়। রামমোহন আর বিদ্যাসাগর যে বৃটিশ ছিলেন, জানতাম না।
  • Amit | 121.200.237.26 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:০৭504650
  • আর একটা কথা হলো গিয়ে ইন্ডিয়া তো কোনো অসহায় দুর্বল দেশ ছিলোনা যে ব্রিটিশরা এলো আর আম পাড়ার মতো করে দখল করে নিলো  আর কলোনী বানিয়ে ফেললো। সব কিছু ​​​​​​​অত ​​​​​​​সরল ​​​​​​​রৈখিক ​​​​​​​হলে ​​​​​​​তো ​​​​​​​দুনিয়ায় ​​​​​​​কোনো ​​​​​​​সমস্যা ​​​​​​​থাকতোনা। 
     
    কয়েকশো রাজা গজা নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি করছিলো আর বেশির ভাগ ব্রিটিশদের সাথে মিলে পাশেই জনকে টাইট দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। ব্রিটিশরাও ঝোপ বুঝে ভালোই কোপ মেরেছে। 
     
    ব্রিটিশ আর্মির ৯০-% ছিল ইন্ডিয়ান সিপাই। শুধু অফিসার রাঙ্কগুলো ব্রিটিশ। এই যেমন ভীমা করেগাওঁ তে আদিবাসীদের মারাঠা  ব্রাম্মনরা রা জানোয়ারের মতো ট্রিট করতো। তো এরা ব্রিটিশ  আর্মিতে যোগ দিয়ে মারাঠা পেশোয়া দের সাথে লড়েছিল। তো এই আদিবাসীরা কি দেশদ্রোহী ?
     
    সিপাহী বিদ্রোহের সময় বাঙালি আপার ক্লাস -যেমন ঠাকুরবাড়ি মল্লিকবাড়ি থেকে শুরু করে বহু রাজা ব্রিটিশদের সাপোর্ট দিয়েছিলো। বাঙালি বিপ্লবী দের পেছনে লালবাজারের বাঙালি পুলিশ রাই টিকটিকি হয়ে খুঁজে বেড়াতো। তা এতো সব কিলো দরে ক্ষমা চাইতে হলে তো ঠাকুরবাড়ি থেকে চালু করে সেসব বাঙালি পুলিশ অফিসার দের নাতি পুতি কেও  খুঁজে খুঁজে বার করে তাদের দাদুর অপরাধের জন্যে ক্ষমা চাওয়ানো উচিত -তাই না ? 
  • হিজিবিজি | 74.201.73.194 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:১৪504651
  • ইতিহাসে মরালিটি কিছু নেই, মার্কেট অনুযায়ী চলে। যখন তুলোচাষের যন্ত্র এল, তখন কালোদের দাসপ্রথা উঠল। যখন বিজ্ঞান সন্তানধারনের প্রক্রিয়া সহজ করে দিল, তখন নারীকে লেবার হিসেবে কাজে লাগানো গেল, নারী স্বাধীনতা এল। বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ব্রিটিশরা কলোনি ধরে রাখতে পারল না, তখন বেচে দিল, দেশ স্বাধীন হল। এভাবে দেখলে ক্ষতিপূরণ কেউ দেবে না, যদি না মার্কেট ফোর্স বাধ্য করে।
     
    প্রগ্রেসিভ আর রিগ্রেসিভ একই লোকের দুইটা স্টেট। মার্কেট ফোর্সের ঠেলায় রিগ্রেসিভ প্রগ্রেসিভ হয়, আবার প্রগ্রেসিভ রিগ্রেসিভ হয়ে যায়। এছাড়া কিছু না। মহাবিশ্ব মাঝে একখন্ড মার্কেট। সেখানে শিশুরা খেলা করচে। বাকি সব বাল।
  • পুতিন বৃটিশ | 185.107.47.215 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:১৭504652
  • পুতিন কি বৃটিশ? এত গোলাগুলি ছুঁড়ছে যখন ব্যাটা নির্ঘাত বৃটিশ, বা বৃটিশের চামচা, রামমোহন বা বিদ্যাসাগরের মতন।
  • হিজিবিজি | 148.72.165.2 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:২১504653
  • ক্ষমা চাওয়ার হলে খ্রিস্টানিটিতে ঢুকে যেতে পারেন। ওরা অরিজিনাল সীন ব্যাপারটা ঠিক এই এঙ্গেল থেকেই ধরেচে।
  • পুতিন একটি স্বপ্নের নাম | 185.107.47.215 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:২৪504654
  • পুতিন একজন মহান বীর, স্বাধীনতার যোদ্ধা, রাশিয়াকে স্বাধীন করেছেন, বেলারুশকে স্বাধীন করেছেন, এখন ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুতিন এ যুগের চে গেভারা, যিনি আর্জেন্টিনা থেকে গিয়ে লড়তেন অন্য দেশের স্বাধীনতার জন্য। পুতিন একটি স্বপ্নের নাম।
    খুব শীঘ্রই পুতিনের ছবিওয়ালা টি শার্টে ছেয়ে যাবে কলেজ প্রাঙ্গনগুলি, বিশেষ করে প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুর।
  • Amit | 121.200.237.26 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:২৬504655
  • সেতো হিন্দু দের ও আছে মশাই। যে যাই অপরাধ করুক গে , বামুনকে ঠিকঠাক দক্ষিনা ধরে দিলেই প্রায়শ্চিতির হয়ে এক্কেরে অখণ্ড স্বর্গবাস। তবে রেটিং আর সেটিং সব ঠিকমতো হওয়া চাই। 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:e08b:d433:af2a:cb77 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:৩০504656
  • ইমপ্লিমেনেন্ট করাটা খুব কঠিন নয়। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ও করপোরেশনগুলোর ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ফ্রিতে নিয়ে নিলেই হবে। মানে যদি ব্রিটরা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হয়।
     
    • Amit | 59.102.87.212 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০২:৫৭504643
    • ওকে. তাহলে সিদ্ধান্তে আসা গেলো সবাই ক্ষমা চাইবে আর ক্ষতিপূরণ দেবে। তো এবার ইমপ্লিমেন্টেশন এ আসা যাক ? শুরুটা কোদ্দিয়ে হবে ? বলি মোদী আর বরিস জনসন কি গুরু পড়েন ? 
  • Amit | 121.200.237.26 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:৩২504657
  • হ্যা - পুতিনের জোশ আছে বলতেই হবে। ইউক্রেন তো কোন ছাড় , বছরে পাঁচবার যুদ্ধ নয় শান্তি চাই আর সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত ভেঙে দেওয়ার মিছিল করে মৌলালির মোড়ে অবরোধ করায় অভ্যস্ত বাঙালি কেমন ভেজানো মুড়ির মতো মিইয়ে গেছে। 
  • Amit | 121.200.237.26 | ০৪ মার্চ ২০২২ ০৪:৩৬504658
  • ইস-এতো সোজা রাস্তাটা এদ্দিন কেউ বুঝতে পারেনি। দ্যাকেন না যদি এই আইডিয়া টা প্রধান সেবকের দরবারে ডাইরেক্ট পৌঁছতে পারেন। এখানে দেখছেনই  তো দেশদ্রোহী আর ব্রিটিশ চামচায় ভর্তি একদম - এসবের মূল্য বুঝবে না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন