এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • ইঞ্চিখানেক

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ৫৭২ বার পঠিত
  • “এই পুরো লাইনটা বদলাতে হবে, একটু ঘুরিয়ে লিখতে হবে”
     
    সজীব একটি চিঠির ড্রাফট ঠিক করে দিচ্ছিল টেবিলটা থেকে মাথা না তুলে, অফিসের প্রিন্টারগুলি সব একসাথেই বিগড়েছে মনে হচ্ছে, কালো অক্ষরগুলোকে বুক পেতে নিতে পারছে না পুরোপুরি, সাদা অফসেট কাগজের কোথাও কোথাও রয়ে যাচ্ছে বাড়াবাড়ি রকমের ফাঁক,  কোথাও আবার কালিতে অক্ষরে লেপ্টে-চেপ্টে যাচ্ছে। হেডকোয়ার্টারকে জানাতে হবে বিষয়টা, কিন্তু এমনভাবে যেন দোষটা কারোরই না, যেন মেশিনগুলোই এক নতুন ধরণের ছোঁয়াচে রোগের শিকার।
     
    হঠাৎ একটা মিষ্টি গন্ধে সাড়া দিয়ে উঠল তার মাংসল লেন্স, ঘাড় কাত করে দেখতে পেল তিথীক; টেবিলের ওপার থেকে বাক্য, শব্দ, দাঁড়ি, কমার ভুলগুলি বুঝে নিতে নিতে আবারো তার ইঞ্চিখানেক দূরত্বে এসে পড়েছে। তার ঝলমলে পাতলা ওড়নাটা সজীবের হাওয়াই শার্টের সাথে নিঃশব্দে ধাক্কা খেল বার কয়েক, যখন বলপয়েন্ট কলমটা মুখে পোরা অবস্থাতেই ঝুঁকে পড়তে হয়েছিল সজীবের ধাতব টেবিলে যেখানে মিহি করে পাতা ছিল তার কাগজটা।
     
    সজীব ভার্সিটির পড়াশুনো চুকিয়ে যখন অফিসটির একাউন্টস ডিপার্ট্মেন্টে ঢুকেছিল, তখন ভাবেনি ছ’মাসের বেশী কন্টিনিউ করবে। আরো অনেক কাজের সাথে লজিস্টিক ও মেইনটেইনেন্সও চাপানো হয়েছিল। মেশিনগুলো যখন ক্যাঁ ক্যাঁ করে উঠতো, বয়োবৃদ্ধ রিপেয়ারম্যান চোখ বুঁজে বুঁজে মেশিনটার হাড়মাংস আলাদা করতো আর যারপরনাই হায়হুতাশ করতো মাথা দুলাতে দুলাতে, “দশ কিলোর গাড়িরে একশো কিলো চালাইলে যা হয়!”   
     
    সজীবকে জানানো হয়েছিল সাপোর্টিং হ্যান্ড আসছে; কিন্তু কে ভাবতে পেরেছিল, সে হবে স্কুল বালিকার মত দেখতে,  আর মুখ ফোলাবে কথায় কথায়! তিথী সজীবের সব কাজ নিজেই করে দিতে চাইতো, আর প্রায়ই আটকে যেয়ে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ স্বরে এমন চেঁচাতো যে সজীবকে  গোল্লাছুট লাগাতে হতো। সেদিন কয়েকটা সেলস্‌ সেন্টার পরিদর্শনে বের হচ্ছিল, তিথী যেন ঘরের মেয়েটির মত বায়না ধরল। রেশমী চুলের ঢেউ তার মুখের বিস্তীর্ণ উপকূলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, গোলাপী ঠোঁট দুটো ভিজে সপ্‌সপ্‌ করছিল । সজীব কথা না বাড়িয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশায় উঠে গেল আর তারপর তিথীর দিকে রোমশ হাতটা বাড়িয়ে দিল; কিন্তু তিথী কি কারণে কি মনে করে ইঞ্চিখানেক পিছিয়ে গেল। এরপর রিকশার বাহু ধরে গদিতে  নিজে নিজেই উঠে বসলো, যদিও পুরো পথ জুড়ে একটা ফাঁক রাখল তাদের দুজনের মধ্যে, সেই ইঞ্চিখানেক।
     
    অফিসের মেশিনগুলো আবারো, আরো বেশী করে ঘড়ঘড় করতে শুরু করেছিল, রিপেয়ারম্যান এবার এক টনি ট্রাকে ১০০ টন মাল চাপানোর অভিযোগ দায়ের করলো। তিথী  অবশ্য সজীব ভাইয়ার স্বাস্থ্যের দিকে কড়া খেয়াল রেখে যাচ্ছিল। এইতো সেদিনও গাজরের হালুয়া, আর পাবদা মাছের কারি করে নিয়ে এলো। সজীব গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছিল সেইসব অমৃত, এরপর সজীবের ক্ষুধা ভয়ানক বেড়ে যায়, বুয়ার হাতে খেতে খেতে সে হলুদ হচ্ছিল ক্রমশ। একদিন রোকসানা আপা, যে তাদের দুজনেরই অনেক সিনিয়র - তাকে ডেকেছিল একান্তে কিছু কথা বলবে বলে।  রোকসানা আপা পুরোটা না শুনেই শব্দ করে এমন হাসতে শুরু করলেন যে, আর থামতেই চায় না, ‘আরে ওর দুইটা ছেলে আছে, বড়টা তো ক্লাস ফাইভে উঠবে, কেন, তোমারে …?’
     
    একবারের জন্যও সজীবের মনে পড়েনি, সে তিথীর সুপারভাইজারও ছিল। পরিস্থিতিটা ভাঁজ করতে করতে ঘোলাটে হয়ে আসছিল আকাশ এই মধ্য গগনেই, হঠাৎ বিদ্যুত ঝিলিক দিয়ে গেল সেখানে - একটা কর্পোরেট সিটিং এর শিডিউল বাঁধা ছিল।  হাসির মানচিত্র পুরো মিলিয়ে যাওয়ার আগেই সে শুধোলো রোকসানা আপাকেঃ “একটু সময় দেবেন আমায়?” এরপর রোকসানা আপা যখন ফাইলটার পাতা উল্টাচ্ছিল, আর বুলেট পয়েন্টগুলিতে বিলি কাটছিল তার আঙুলগুলোর আলতো ছোঁয়ায়, সজীব সামনের জানালাটা মেলে ধরলো নতুন বর্ষার হাওয়াটুকু প্রাণ ভরে নিতে।   
     
    মিটিংটা থেকে ফেরার পর থেকেই ঝিমোচ্ছিল সজীব, হঠাৎ আবার সেই গন্ধটা। ‘আজ মেগাপাওয়ারের অফিসে যাওয়ার কথা ছিল, ওদের স্যাম্পলগুলো…’ তিথীর কণ্ঠ ভাঙা ভাঙা, চোখ-মুখ ঘূর্নিঝড়ের কেন্দ্রভাগের মত শান্ত। ওড়নার কোণাটা দিয়ে একটি কিছু বানিয়ে চলেছিল সে, কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছু গিঁটটুর সারি দেখা গেল। সজীব যখন শ্রদ্ধাবনত দৃষ্টি হেনে বললে, “ক্যানসেল্‌ ইট, একই দিনে দু’বার আউটডোর ইমপসিবল্‌!”,  তিথী ঠোঁট দুটোকে চোঙ্গা করে মুখমন্ডলে একটি দুর্বোধ্য কারুকাজ রেখে বিদায় নিল।  এরপর সে তিনদিন অফিস করলো না।
     
    সেদিন মহাখালি প্রজেক্টের কস্ট-ভ্লিউম-প্রফিটটা প্রায় ফাইনাল করে এনেছে সজীব, এমন সময় একটি তীক্ষ্ম চিৎকার ও শোরগোলের শব্দ কানে এল। শব্দের উৎসে ছুটে গিয়ে দেখতে পেল, তিথী ডুকরে ডুকরে কাঁদছে রোকসানা আপার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে। আর আপা তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছেন, চোখে-মুখে বিষ্ময় বিধাত্রীর!
     
    ঘটনা খুবই বালখিল্য। অফিসে একমাত্র তিথীর প্রিন্টারটা কিছুটা কাজ করছিল, দুদিন আগে রোকসানা আপার একটা প্রিন্টের খুব  দরকার পড়েছিল, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছিল, তো  তিথীর ডেস্কটি ফাঁকা পেয়ে সে বসে গিয়েছিল, সম্ভবত সেই সময়ই কিছু সেটিংস বদলে গিয়ে থাকবে তিথীর কম্পিউটারটিতে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে অনেক  শত চেষ্টাতেও ঢোকা যাচ্ছিল না, করাপ্টেড দেখাচ্ছিল। তাকে না জানিয়ে, তার অবর্তমানে, তার পিসিতে ঢোকার বিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে গেলে রোকসানা আপা নাকি ধমকে উঠেছে, “সব কিছুকেই  তোমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি মনে করো নাকি?” আর তারপরই তিথী স্থান ও সময় জ্ঞান হারিয়ে উন্মাদীনির মত চিৎকার করতে থাকে, “হ্যাঁ, আমারই সম্পত্তি, আমি যতক্ষণ অফিসে থাকি, ততক্ষণ সে আমার; লজ্জা থাকলে, আমার জিনিসে আর কখনো হাত দেয়ার চেষ্টা করবে না।“
     
     
    সেদিন কাজ শেষ করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল সজীবের, বের হতে গিয়ে দেখলো, তিথীর ডেস্কে তখনো আলো জ্বলে রয়েছে। কি এক গভীর মনোযোগের সাথে কম্পিউটারের গায়ে খুট্‌খুট্‌ করে চলেছে সে। সজীবের দিকে চোখ পড়তেই ঠোঁটজোড়া নেচে উঠলো, এক অচেনা কথকের ভঙ্গি সেখানে, ধা ধিন ধিন ধা…! ইঞ্চিখানেক দূরত্বে দাঁড়ানো আগাগোড়া অবশ সজীব শুনতে পেল গ্রহান্তর থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ একটি কণ্ঠ, ‘’লক করে দিয়েছি এবার, আর কেউ ঢুকতে পারবে না।“
     
    “এই পুরো লাইনটা বদলাতে হবে, একটু ঘুরিয়ে লিখতে হবে”
     
    সজীব একটি চিঠির ড্রাফট ঠিক করে দিচ্ছিল টেবিলটা থেকে মাথা না তুলে, অফিসের প্রিন্টারগুলি সব একসাথেই বিগড়েছে মনে হচ্ছে, কালো অক্ষরগুলোকে বুক পেতে নিতে পারছে না পুরোপুরি, সাদা অফসেট কাগজের কোথাও কোথাও রয়ে যাচ্ছে বাড়াবাড়ি রকমের ফাঁক,  কোথাও আবার কালিতে অক্ষরে লেপ্টে-চেপ্টে যাচ্ছে। হেডকোয়ার্টারকে জানাতে হবে বিষয়টা, কিন্তু এমনভাবে যেন দোষটা কারোরই না, যেন মেশিনগুলোই এক নতুন ধরণের ছোঁয়াচে রোগের শিকার।
     
    হঠাৎ একটা মিষ্টি গন্ধে সাড়া দিয়ে উঠল তার মাংসল লেন্স, ঘাড় কাত করে দেখতে পেল তিথীক; টেবিলের ওপার থেকে বাক্য, শব্দ, দাঁড়ি, কমার ভুলগুলি বুঝে নিতে নিতে আবারো তার ইঞ্চিখানেক দূরত্বে এসে পড়েছে। তার ঝলমলে পাতলা ওড়নাটা সজীবের হাওয়াই শার্টের সাথে নিঃশব্দে ধাক্কা খেল বার কয়েক, যখন বলপয়েন্ট কলমটা মুখে পোরা অবস্থাতেই ঝুঁকে পড়তে হয়েছিল সজীবের ধাতব টেবিলে যেখানে মিহি করে পাতা ছিল তার কাগজটা।
     
    সজীব ভার্সিটির পড়াশুনো চুকিয়ে যখন অফিসটির একাউন্টস ডিপার্ট্মেন্টে ঢুকেছিল, তখন ভাবেনি ছ’মাসের বেশী কন্টিনিউ করবে। আরো অনেক কাজের সাথে লজিস্টিক ও মেইনটেইনেন্সও চাপানো হয়েছিল। মেশিনগুলো যখন ক্যাঁ ক্যাঁ করে উঠতো, বয়োবৃদ্ধ রিপেয়ারম্যান চোখ বুঁজে বুঁজে মেশিনটার হাড়মাংস আলাদা করতো আর যারপরনাই হায়হুতাশ করতো মাথা দুলাতে দুলাতে, “দশ কিলোর গাড়িরে একশো কিলো চালাইলে যা হয়!”   
     
    সজীবকে জানানো হয়েছিল সাপোর্টিং হ্যান্ড আসছে; কিন্তু কে ভাবতে পেরেছিল, সে হবে স্কুল বালিকার মত দেখতে,  আর মুখ ফোলাবে কথায় কথায়! তিথী সজীবের সব কাজ নিজেই করে দিতে চাইতো, আর প্রায়ই আটকে যেয়ে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ স্বরে এমন চেঁচাতো যে সজীবকে  গোল্লাছুট লাগাতে হতো। সেদিন কয়েকটা সেলস্‌ সেন্টার পরিদর্শনে বের হচ্ছিল, তিথী যেন ঘরের মেয়েটির মত বায়না ধরল। রেশমী চুলের ঢেউ তার মুখের বিস্তীর্ণ উপকূলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, গোলাপী ঠোঁট দুটো ভিজে সপ্‌সপ্‌ করছিল । সজীব কথা না বাড়িয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশায় উঠে গেল আর তারপর তিথীর দিকে রোমশ হাতটা বাড়িয়ে দিল; কিন্তু তিথী কি কারণে কি মনে করে ইঞ্চিখানেক পিছিয়ে গেল। এরপর রিকশার বাহু ধরে গদিতে  নিজে নিজেই উঠে বসলো, যদিও পুরো পথ জুড়ে একটা ফাঁক রাখল তাদের দুজনের মধ্যে, সেই ইঞ্চিখানেক।
     
    অফিসের মেশিনগুলো আবারো, আরো বেশী করে ঘড়ঘড় করতে শুরু করেছিল, রিপেয়ারম্যান এবার এক টনি ট্রাকে ১০০ টন মাল চাপানোর অভিযোগ দায়ের করলো। তিথী  অবশ্য সজীব ভাইয়ার স্বাস্থ্যের দিকে কড়া খেয়াল রেখে যাচ্ছিল। এইতো সেদিনও গাজরের হালুয়া, আর পাবদা মাছের কারি করে নিয়ে এলো। সজীব গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছিল সেইসব অমৃত, এরপর সজীবের ক্ষুধা ভয়ানক বেড়ে যায়, বুয়ার হাতে খেতে খেতে সে হলুদ হচ্ছিল ক্রমশ। একদিন রোকসানা আপা, যে তাদের দুজনেরই অনেক সিনিয়র - তাকে ডেকেছিল একান্তে কিছু কথা বলবে বলে।  রোকসানা আপা পুরোটা না শুনেই শব্দ করে এমন হাসতে শুরু করলেন যে, আর থামতেই চায় না, ‘আরে ওর দুইটা ছেলে আছে, বড়টা তো ক্লাস ফাইভে উঠবে, কেন, তোমারে …?’
     
    একবারের জন্যও সজীবের মনে পড়েনি, সে তিথীর সুপারভাইজারও ছিল। পরিস্থিতিটা ভাঁজ করতে করতে ঘোলাটে হয়ে আসছিল আকাশ এই মধ্য গগনেই, হঠাৎ বিদ্যুত ঝিলিক দিয়ে গেল সেখানে - একটা কর্পোরেট সিটিং এর শিডিউল বাঁধা ছিল।  হাসির মানচিত্র পুরো মিলিয়ে যাওয়ার আগেই সে শুধোলো রোকসানা আপাকেঃ “একটু সময় দেবেন আমায়?” এরপর রোকসানা আপা যখন ফাইলটার পাতা উল্টাচ্ছিল, আর বুলেট পয়েন্টগুলিতে বিলি কাটছিল তার আঙুলগুলোর আলতো ছোঁয়ায়, সজীব সামনের জানালাটা মেলে ধরলো নতুন বর্ষার হাওয়াটুকু প্রাণ ভরে নিতে।   
     
    মিটিংটা থেকে ফেরার পর থেকেই ঝিমোচ্ছিল সজীব, হঠাৎ আবার সেই গন্ধটা। ‘আজ মেগাপাওয়ারের অফিসে যাওয়ার কথা ছিল, ওদের স্যাম্পলগুলো…’ তিথীর কণ্ঠ ভাঙা ভাঙা, চোখ-মুখ ঘূর্নিঝড়ের কেন্দ্রভাগের মত শান্ত। ওড়নার কোণাটা দিয়ে একটি কিছু বানিয়ে চলেছিল সে, কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছু গিঁটটুর সারি দেখা গেল। সজীব যখন শ্রদ্ধাবনত দৃষ্টি হেনে বললে, “ক্যানসেল্‌ ইট, একই দিনে দু’বার আউটডোর ইমপসিবল্‌!”,  তিথী ঠোঁট দুটোকে চোঙ্গা করে মুখমন্ডলে একটি দুর্বোধ্য কারুকাজ রেখে বিদায় নিল।  এরপর সে তিনদিন অফিস করলো না।
     
    সেদিন মহাখালি প্রজেক্টের কস্ট-ভ্লিউম-প্রফিটটা প্রায় ফাইনাল করে এনেছে সজীব, এমন সময় একটি তীক্ষ্ম চিৎকার ও শোরগোলের শব্দ কানে এল। শব্দের উৎসে ছুটে গিয়ে দেখতে পেল, তিথী ডুকরে ডুকরে কাঁদছে রোকসানা আপার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে। আর আপা তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছেন, চোখে-মুখে বিষ্ময় বিধাত্রীর!
     
    ঘটনা খুবই বালখিল্য। অফিসে একমাত্র তিথীর প্রিন্টারটা কিছুটা কাজ করছিল, দুদিন আগে রোকসানা আপার একটা প্রিন্টের খুব  দরকার পড়েছিল, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছিল, তো  তিথীর ডেস্কটি ফাঁকা পেয়ে সে বসে গিয়েছিল, সম্ভবত সেই সময়ই কিছু সেটিংস বদলে গিয়ে থাকবে তিথীর কম্পিউটারটিতে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে অনেক  শত চেষ্টাতেও ঢোকা যাচ্ছিল না, করাপ্টেড দেখাচ্ছিল। তাকে না জানিয়ে, তার অবর্তমানে, তার পিসিতে ঢোকার বিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে গেলে রোকসানা আপা নাকি ধমকে উঠেছে, “সব কিছুকেই  তোমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি মনে করো নাকি?” আর তারপরই তিথী স্থান ও সময় জ্ঞান হারিয়ে উন্মাদীনির মত চিৎকার করতে থাকে, “হ্যাঁ, আমারই সম্পত্তি, আমি যতক্ষণ অফিসে থাকি, ততক্ষণ সে আমার; লজ্জা থাকলে, আমার জিনিসে আর কখনো হাত দেয়ার চেষ্টা করবে না।“
     
     
    সেদিন কাজ শেষ করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল সজীবের, বের হতে গিয়ে দেখলো, তিথীর ডেস্কে তখনো আলো জ্বলে রয়েছে। কি এক গভীর মনোযোগের সাথে কম্পিউটারের গায়ে খুট্‌খুট্‌ করে চলেছে সে। সজীবের দিকে চোখ পড়তেই ঠোঁটজোড়া নেচে উঠলো, এক অচেনা কথকের ভঙ্গি সেখানে, ধা ধিন ধিন ধা…! ইঞ্চিখানেক দূরত্বে দাঁড়ানো আগাগোড়া অবশ সজীব শুনতে পেল গ্রহান্তর থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ একটি কণ্ঠ, ‘’লক করে দিয়েছি এবার, আর কেউ ঢুকতে পারবে না।“

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ৫৭২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন