এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখি - দূরবীন

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ২৭৬ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    দূরবীন



    অনেক দূরের জিনিষ দেখতে পাওয়া আর তার ফলে যে সব তথ্য যোগাড় হল তাই দিয়ে অতীতের বিভিন্ন সম্ভাব্য ছবি ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক মহাকাশ গবেষণা আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কত রকমের তরঙ্গের ব্যবহার, কত রকমের দূরবীন, কত মাপজোক। অনেকে নিজের দরকারে বা শখে একনলা কি দোনলা দূরবীন কেনেন, ব্যবহার করেন, সাজিয়ে রাখেন। আমি এ পর্যন্ত যে দু-তিনটি কিনেছি, নিতান্ত মামুলি, খেলনার বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। হারিয়েও গেছে তারা। তবে অন্য একটি দূরবীন মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। স্মৃতির দূরবীন, ফেলে আসা জীবনের ছবি দেখতে। কতটা অতীত দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, যেন ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা। যা ঘটেছিল তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, যতটা পারা গেল।

    আর পাঁচটা দিনের-ই মত এক সকাল। আবার এক রকম নয়-ও। শরীর ভালো নেই। শুয়ে শুয়ে বই পড়া চলছে। বাবা এসে কোলে তুলে নিল।
    – চল।
    – কোথায়?
    – স্কুলে।
    বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যাওয়ার পরে কি হয়েছিল পরিস্কার মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে একটা ছিল নীচু বেঞ্চ আর একটা উঁচু। বাবা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে উঁচু বেঞ্চ-টার উপর বসিয়ে দিল। ঘরে আরো অনেক বাচ্চারা রয়েছে। তারা সব নীচু বেঞ্চে বসে আছে। জ্বর হয়েছে বলে আমার মাথাটা সোজা রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই কারো দিকে বিশেষ তাকাতে পারছি না। একসময় কেউ একজন সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। কতকগুলো প্রশ্ন। মনের আনন্দে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে গিয়েছিলাম। আর কখনো অত আনন্দে অত নিশ্চিন্তে কিছু লিখিনি। জ্বর একটু কমেছে তখন; বাবা বাড়ি ফিরেছিল কাঁধে বসিয়ে নিয়ে। ফিরে খুশীতে ফেটে পড়েছিল। মা-র কোলে আমায় তুলে দিতে দিতে জানিয়েছিল ভর্তির পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। হাসি আর আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বাড়িতে।

    খুব ভাল লেগেছিল সেদিন। বুঝতে পারিনি যদিও, প্রথম হওয়া কাকে বলে, কি করে হতে হয়। কিন্তু ভাল লেগেছিল খুব! তার পর সারা জীবন ধরে বুঝে চলেছি প্রথম হওয়া কাকে বলে বা আরো ঠিক করে বললে – প্রথম না হওয়া কাকে বলে। সেই প্রথম-বারের পর আর প্রায় কখনোই কোন কিছুতে প্রথম হইনি। দেশভাগের ফলে সর্বস্ব খুইয়ে, উদ্বাস্তু হয়ে চলে এসে, একটা অজানা ভূখন্ডে মাথা উঁচু করে চলার লড়াই লড়তে থাকা বাবা সবসময় আশা করে গিয়েছে এইবার, এইবার তার এই প্রথম সন্তান এই পরীক্ষাটায় প্রথম হবে। সেই আশা তাকে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে, সমস্ত ঝড় সামলে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আর সেই আশার চাপে চাপে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া, সমস্ত পরীক্ষা আমার কাছে চিরকালের মত বিষ হয়ে গেছে।

    তারপরেও কত জনের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে এইখানে এসে পৌঁছেছি। এই দেশে আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যে মা-বাবা এখানে এসে প্রায় বছর খানেক আমাদের সাথে কাটিয়ে যেতে পেরেছিলেন। দু-কামরার ভাড়ার ঘরে পাঁচটি মানুষের পরস্পরে বিশ্বাসে ভালোবাসায় সে যে কি আশ্চর্য কয়েকটি মাসের দিন যাপন। বিরাট লম্বা ম্যারাথন দৌড়ের শেষে সফল মানুষ যেমন নিশ্চিন্ত, তৃপ্ত আহ্লাদে ঘুরে বেড়ায়, তার মুখে চোখে যে আলো ঘুরে বেড়ায় বাবার চোখে মুখে সেই আলো। নানা ঢেউয়ের প্রতিকূলতায় আর কোনদিন তাদের এখানে নিয়ে আসতে পারিনি। একবার তাদের কাছ থেকে চলে আসার সময় ট্যাক্সির পাশে দাঁড়িয়ে বাবা হঠাৎ করে বলল, “আর কখনও দেখা হইবে না, তাই না।” জানালার অন্য পাশে গাড়িতে বসা আমি এক দন্ড স্তব্ধ হয়ে থেকে না-না-তা-কেন ইত্যাদি। আর দেখা হয়নি। বাবার মুখে তখনও হাসি কিন্তু চোখের সেই অদ্ভুত দৃষ্টি আমি আজও পরিষ্কার দেখতে পাই। কোন আনন্দ যে কি ভাবে চিরবিষাদ হয়ে যায়!

    কিছু আনন্দ আবার অদ্ভুত চল ধরে। এক সময় সেটা হয়ে ওঠে লজ্জার। তার পরে সেটা হয়ে যায় একটা স্নেহের ব্যাপার। এই যেমন ছাগলের গু, আমরা বলতাম ছাগলের লাদি, সেই লাদির ব্যাবসা।

    ক্লাস ওয়ান-এ পড়ি। এক বন্ধু শেখাল কি করে খাতার আয়তাকার সাদা পাতা ছিঁড়ে বর্গাকার করে নিয়ে এবার চার কোণা থেকে দুই কর্ণ বরাবর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ফালি দিয়ে, চার ত্রিভুজ-এর আলাদা হয়ে যাওয়া আট কোনার একটা ছেড়ে একটা করে পেঁচিয়ে নিয়ে এসে কাগজের মাঝখান-টায় তলা থেকে কাঠির মাথায় বাঁধা একটা তার ঢুকিয়ে এনে সেই তারের মাথায় ঐ চার কোনা গেঁথে দিলেই চমৎকার একটি চরকি তৈরী হয়ে যায়! মুস্কিল হল ত্রিভুজের কোনারা তারের বন্ধন থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এইখানে এল আমার অসামান্য কারিগরী দূরদৃষ্টি। বাড়ির রোয়াকে বসে কাজ চলছিল। একটি ছাগল সামনের রাস্তায় লাদি ফেলতে ফেলতে চলে গেল। ব্যাস! আমি একটি লাদি এনে তার-এর মাথায় গেঁথে দিলাম। আমার যন্ত্র তৈরি, ব্যাবসা চালু হয়ে গেল!

    আমায় এনে দিতে হত দুটো কাগজ। একটা দিয়ে খরিদ্দারকে চরকি বানিয়ে দিতাম, আর একটা নিজের জন্য রেখে দিতাম। যারা কাগজ আনতে পারতনা তাদেরকে আমার জমান কাগজ থেকে বানিয়ে দিতাম। বিনিময়ে চানাচুর ঝুড়িভাজা ইত্যাদি। আমাদের কারিগরি বাহিনী ছাগলের লাদি কুড়িয়ে আমাদের বাড়ির ভিতরের উঠানে এনে জড় করত। সকলে মিলেই লাভের অংশ ভাগ করে নেয়া হত। এই করে আমাদের একটা দল-ও তৈরী হয়ে গেল। তারপর যা হয়! ব্যাবসা বেশী বড় হলে আইন রক্ষকদের নজরে পড়ে যায় – পরিবেশ দূষণের দায়ে মা আমাদের ব্যাবসাটা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিল। সেই যে আমার ব্যাবসায় চোট খাওয়া শুরু হল, বাকি জীবনের সমস্ত বাণিজ্য উদ্যোগেই আমি সেই ধারা বজায় রেখে এসেছি।

    দিনে দিনে দলটা বেশ বড় হয়ে গেল। ক্লাসে মনিটর বনে গেলাম। আঃ! নেতা হওয়ার স্বাদ-ই আলাদা!। নেতাগিরির প্রথম পাঠেই যা বোঝার বুঝে গেলাম – ছাড় দিতে হবে। আমায় টিফিন খাওয়ালে ক্লাসে অঙ্ক-খাতার মধ্যে লুকিয়ে গল্প বই পড়া যাবে। একবার জল খেয়ে এসে পরে পরেই বাথরুম? হবে। গিয়ে ফেরার নাম নেই? ঠিকাছে। কিন্তু সেই পুরানা কিসসা। ক্রিটিকাল সাইজের থেকে বড় হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ ঢিলা মেরে যায়। মনিটরী-টা গেল। সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নেতাগিরির ঐ শেষ। তারপর থেকেই আমজনতা।

    এই আমজনতা কথাটা অনেক পরে জেনেছি। তার আগে আম আর জনতা আলাদা আলাদা করেই জানতাম। এবং জনতা কথাটার মানে জানতাম জনতা স্টোভ। আমাদের সেই জনতা স্টোভটি একেবারে ঝকঝক করত। মা-বাবা দুজনেই খুব গোছানো মানুষ ছিল। এই যন্ত্রটি দুজনেরই প্রচুর স্নেহ পেয়েছিল। যদি মানুষের ছানা হত তা হলে প্রবচন অনুসারে ও অবশ্যই কালে কালে বাঁদর হয়ে উঠত। স্নেহ না করে অবশ্য উপায়ও থাকত না। বাবা যখন কাজ শেষ করে ঘরে ফিরত আমার তখন রাতের খাওয়া শেষে এক প্রস্থ ঘুম হয়ে গেছে। কোন কোন রাতে আধো-জাগা চোখে দেখতাম মা ঐ স্টোভে তার আর বাবার জন্য খাবার গরম করছে। ছুটির দিন সকালে বাবা স্টোভটা যথা সাধ্য খুলে ফেলত। তারপর আবার এক এক করে জুড়ত। আর জোড়বার আগে দশটা, নাকি অন্য কোন সংখ্যার, ঠিক মনে পড়ছে না, পলতে, কিংবা সলতের প্রত্যেকটির পোড়া অংশ একটি ভারী কাঁচি দিয়ে ছেটে ফেলত। সবকটি পলতেকে এমন নিখুঁত মাপে ছাঁটা হত যাতে স্টোভের চাবি ঘুরিয়ে যখন পলতে ওঠা-নামা করে জ্বালানোর জন্য প্রস্তুত করা হবে, সব কটি পলতের মাথা একই উচ্চতায় থাকবে। তা না হলে হয় ছোট পলতের নীচে নেমে থাকা আগুনের তাপ যথেষ্ট হবে না, প্রার্থিত ফল মিলবে না। “পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” অথবা, বড় পলতের উপরে উঠে থাকা আগুন পাত্রের তলা পুড়িয়ে কালো করে দেবে। একজনের অতিরিক্ত প্রকাশ, বেতাল চলন পুরো দলের ছন্দ পতন ঘটিয়ে দেবে। তবে সব পলতে সমান ভাবে ছাঁটলেও পলতেগুলো নিজেরাই ভালো মানের না হলে ঠিক মত কাজ হত না। এই সমস্যাটা বেশি করে প্রকট হয়ে উঠেছিল পরের দিকে। বাজারে ভালো মানের পলতে পাওয়া যেত না। সেই সাথে আর একটা সমস্যা হয়েছিল ভাল মানের কেরোসিন পাওয়া যেত না।

    অন্য যে স্টোভটি মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হত সেটির এই রকম পলতের সংকটা ছিল না – প্রাইমাস স্টোভ। কিন্তু সেটা জ্বালানোর কাজ বাবা নিজে করত। সেটির খুঁটিনাটি এবং তরিবৎ আরও বেশি ছিল। সেই যন্ত্রে জ্বালানি তেলকে পাম্প করে মাঝারি তাপের একটি অংশের মধ্য দিয়ে বইয়ে তাকে গ্যাস বানিয়ে তারপর সেই গ্যাস জ্বালিয়ে অনেক বেশী মাত্রার তাপ বানানো হত। শোঁ শোঁ আওয়াজ করে গনগন করে জ্বলত। বাবা বেশ যত্ন করে বোঝাত তেলকে গ্যাস করে জ্বালানোর এই কৃৎ-কৌশল। যত আগে থেকে সম্ভব বিজ্ঞানে উৎসাহী করে তোলা। পরবর্ত্তীতে বেঁচে থাকার রসদ জোটানোর লড়াইয়ে বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করতে না পারলে বাঁচার লড়াই কঠিনতর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই স্টোভে ভালো মানের কেরোসিন পাওয়ার গুরুত্ব তুলনায় বেশি ছিল। কম মানের জ্বালানি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জঞ্জাল তৈরি হয়ে যেই পথ দিয়ে তেল গরম হয়ে গ্যাস হয়ে বেরিয়ে আসবে সেটা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। বাবার নিয়মিত কাজ ছিল একটা লম্বা ধাতব পাতের এক প্রান্তে লাগানো একটি অত্যন্ত সরু পিন দিয়ে ঐ নির্গমন পথের ছিদ্রটি জঞ্জাল্মুক্ত করা। জীবিকা অর্জনের এক পর্যায়ে মাস স্পেক্ট্রোমেট্রির কিছু কাজ করার সময় এই পিনের কথা মনে পড়ত খুব।

    আমরা বড় হয়ে যাওয়ার পর এই প্রাইমাস স্টোভের নতুন মডেলে জ্বালানি তেলের পাত্র স্টোভ থেকে আলাদা করে দিয়ে উপরে দেয়ালে সুবিধা মত জায়গায় আটকে দেওয়া হল। পাত্রের তেল অভিকর্ষের টানে একটা নল বেয়ে নীচের গরম করার অংশের মধ্যে চলে এল। প্রাইমাস স্টোভের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা – পাম্প করা, আর দরকার নেই। এই নতুন মডেল তার কাঠামোর দিক থেকে আরও সরল এবং ব্যবহারের পক্ষে আরও সহজ। তাই জনপ্রিয়তাও পেল প্রবল। দেখলে মনে হয়, কত সহজ বিকল্প, আসতে লেগে গিয়েছিল অনেক যুগ।

    জনতা নিয়ে বকবক করা হল, এবার তা হলে আম নিয়ে দু-এক কথা।

    দমদম ক্যান্টনমেন্টে মাত্রই দু’কামরার ভাড়ার ঘরের জীবন ছিল। কিন্তু খাবারের কোন কমতি ছিল না। ফলে গরমের দিনে চৌকির তলার একটা বড় অংশ আম-কাঁঠাল-লিচুদের দখলে চলে যেত। বাজার থেকে কেনা হত, আবার কাশিমপুরে মামাদের বাগান, সেখান থেকেও আম আসত। আমি না ছিলাম খাদ্য রসিক, না ছিলাম চারপাশের জীবন খুঁটিয়ে দেখায় ইচ্ছুক। ফলে বিভিন্ন নামের আমের কার কি মহিমা এই ব্যাপারে অনেকেই যে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন আমার দ্বারা সেটা সম্ভব নয়। কায়দা করে বাক্যি ঝেড়ে এঈ অক্ষমতাকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছি মাঝে মাঝে। কিন্তু কোন আম স্বাদে-গন্ধে কেমন, কোন আম খেয়ে কেমন আনন্দ পেয়েছি সেই তালিকার পাতা আজও সাদাই রয়েছে। শুধু কিছুটা দাড়ি বুড়োর কারণে আর কিছুটা আমের নিজের বিশাল আকারের কারণে ফজলিকে ভোলার উপায় নেই। দেশ ছাড়ার পর আর কখনও ফজলি আম খেয়েছি কি? মনে করতে পারছি না। কিন্তু, ঠিক মত আম পেলে একটি শৈশব স্মৃতি এখনও মাঝে মাঝে ঝালিয়ে নিই। লম্বা সরু আম, দুই হাতের তেলোয় চেপে চেপে ঘুরিয়ে তুলতুলে করে ফেলে বোঁটার উল্টো দিকে দাঁতে কেটে সরু ছিদ্র করে সেখানে থেকে চোঁ চোঁ করে তরল আম টেনে নেওয়া, আহা, হামিনস্ত, হামিনস্ত, হামিনস্ত, স্বর্গ এখানেই।

    আম খাওয়ার যে কত রকমের মজা ছিল! কাঁচা আমের সরু সরু ছিল্কা নুন, তেল, লঙ্কা, দিয়ে - লিখতে গিয়ে জিভে চল আসছে। কাঁচা আমের খোসা ছাড়ানোয় বড় মাপের ঝিনুকের খোলার একেকটা পিঠ পাথরে ঘষে ঘষে ক্ষইয়ে ফেলে উপবৃত্তাকার ফাঁকের যে ব্লেড তৈরি করা হত, হয়ত নিজে পারতাম না বলেই, সেইটে তখন আমার কাছে কারিগরী উৎকর্ষতার চরমত্বের দাবিদার ছিল। পরে এই মার্কিন মুলুকে এসে তাকেই ধাতুর নির্মাণে নানা ছাঁদে, নানা রুপে 'পীলার' নামে দেখতে পেলামা। আমের প্রাচুর্য ছিল। বেশ কিছু আম শুকিয়ে আমসি করে রেখে দেওয়া হত। আমের টক, পোড়া আমের সরবৎ, কাঁচা এবং চিনিতে আর মশলায় জারানো, সরু ঝিরি ঝিরি এবং বড়ো বডো ফালির আমের আচার আর দত্তপুকুরে মামার বাড়ি গিয়ে আমসত্ত্ব খাওয়া। বড়ো ফালির আমের আচার বানাতে আমের টুকরোগুলোর গায়ে খেজুর কাঁটা দিয়ে প্রচুর ফুটো করে তারপর সেই আম সিদ্ধ করা হত। বাড়িতে নারকেলের কাঠি আর খেজুর কাঁটার বান্ডিল সব সময় মজুত থাকত। আমকাহন হল কিছু। আরো কত ফলেদের কত সব স্মৃতি। লিখব হয়ত কোনদিন। আজ এখানেই থামি।





    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | ২৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অভিজিৎ চক্রবর্তী। | 103.240.99.50 | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৬530284
  • অসীম উৎসাহে তরতর করে লেখা টি পড়ে গেলাম। স্মৃতি র ঝাঁপি উল্টিয়ে লেখক  যে মনোগ্রাহী স্মৃতি চারণ করেছেন, তা হৃদয়-মন উভয় কেই অভিভূত করে তোলে। অধীর আগ্রহী হয়ে থাকলাম পরবর্তী লেখা র জন্য। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১০530285
  • অভিজিৎ চক্রবর্তী। | 103.240.99.50 | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৬
    অনেক ধন্যবাদ আর আহ্লাদ জানালাম। পরের সংখ্যা আশা করি আর সাতদিন বাদে।
  • অভিজিৎ চক্রবর্তী। | 103.240.99.50 | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৪530286
  • ঠিক আছে
  • kk | 2607:fb91:14d4:884b:5053:45f8:14de:db12 | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪১530304
  • নস্টালজিয়া জিনিষটার সাথে আমার খুব একটা বন্ধুত্ব নেই। কিন্তু ঝরঝরে লেখার গুণে একটানে দিব্যি পড়ে গেলাম। লেখকের চোখ দিয়ে বুঝতেও পারলাম ঘটনাগুলো। সেখানে শুধু দেখা নয়, অনুভব করাও। অনুভূতিগুলো ছুঁতে কোথাও কোনো অসুবিধা হলোনা। এই লাইনটা -- "তার পর সারা জীবন ধরে বুঝে চলেছি প্রথম হওয়া কাকে বলে বা আরো ঠিক করে বললে – প্রথম না হওয়া কাকে বলে।" বিশেষ করে মনের মধ্যে ঢুকে গেলো। এটা নিয়ে অনেক ভাবার আছে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০০:১৩530309
  • অনেক ধন্যবাদ কেকে!
    নস্টালজিয়া আমারও যে খুব ভালো লাগে তা নয়। কিন্তু তাকে এড়াতেও পারি না। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১০530342
  • খুব সুন্দর লাগল। এই প্রথম হওয়া না হওয়া, বিজ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহী করে তোলার চেষ্টা, শেষ বার বলা আর হয়তো দেখা হবেনা , এই অংশগুলো ভীষন ভাবে নাড়া দেয় পড়ার সময়। আসলে স্মৃতি সততই সুখের নয়, তবু সেগুলো কুড়িয়ে বাড়িয়ে চলাই বোধয় নস্টালজিয়া। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩৭530343
  • ধন্যবাদ রমিত। 
    স্মৃতি সততই সুখের নয় - একদমই তাই। তবে অনেকগুলো আবার সুখেরও বটে। সমান করে ছাঁটা জনতা স্টোভের ফিতে বা হাতের মুঠোয় তরল আমের উৎস - চয়ৎকার স্মৃতি, আজও আনন্দ দেয়। নস্টালজিয়া তাই হয়ত আমাদের নেশার মত জড়িয়ে রাখে।
  • সমরেশ মুখার্জী | ১২ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪০530523
  • "নেতাগিরির প্রথম পাঠেই যা বোঝার বুঝে গেলাম – ছাড় দিতে হবে।" 
     
    সার সত্য।
     
    মনিটর হোক বা মিনিস্টার - পাতি হোক বা প্রাইম - "এইটা" দেবার ক্ষমতা‌র স্বাদ‌ই আলাদা। বিনিময়ে - ছাড়ের মাত্রা অনুপাতে - টিফিন বা দেদার পাওয়ার নেশা অনন্য। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন