এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঔপনিবেশিক কোলকাতার ফুটবল

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ জুন ২০২৪ | ১০৮ বার পঠিত
  • ঔপনিবেশিক কোলকাতার ফুটবল
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    কোলকাতার ফুটবলের ইতিহাস খুব বেশি প্রাচীন নয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দৌলতে ইংরেজদের পছন্দের আরো অনেক কিছুর মত এই খেলাটিও আমাদের আঙিনায় প্রবেশ করে। ময়দানের পাশে পথ চলতি মানুষজন মাঝে মাঝে অবাক হয়ে দেখত একটা গোলাকার বস্তু নিয়ে সাহেবরা নিজেদের মধ্যে বিচিত্র এক খেলায় মেতে রয়েছে। ধীরে ধীরে সেনা, নৌ অফিসার, বাণিজ্যিক সংস্থার লোকজন, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক এবং ব্রিটিশ রাজপুরুষদের সৌজন্যে কোলকাতার মানুষ খেলাটির সাথে পরিচিত হল এবং উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করল।

    সেকালে উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত বাঙালিরা শারীরিক শক্তি বা ক্ষমতা লাগে এমন কোন খেলাধুলাকে সুনজরে দেখত না। ওই সময়ের দক্ষ জিমন্যাস্ট এবং সার্কাসের শিল্পী কৃষ্ণগোপাল বসাক তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “Performing gymnastics wasn’t considered to be a sign of a good boy. Bodybuilding, wrestling, gymnastics, performing on parallel or horizontal bars were all perceived to be activities of hooligans”.

    একটা সময় পর্যন্ত ইংরেজদের চোখে বাঙালি পরিচিত ছিল এক দুর্বল এবং অলস জাত হিসেবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রের দুটি ধারা বাঙালিদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ধীরে ধীরে পাল্টাতে সাহায্য করে। প্রথমটি হল কুস্তি। ১৮৫৭ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে অম্বিকা চরণ গুহ মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটে বাংলায় প্রথম কুস্তির ‘আখড়া’ স্থাপন করেন এবং তা কিছুটা জনপ্রিয় হয়। পরবর্তী কালে তাঁরই বংশের যতীন্দ্র চরণ গুহ (গোবর গুহ) বাংলার কুস্তিকে বিশ্বের দরবারে পৌছে দেন।

    দ্বিতীয়টি হল সার্কাস, যেখানে জিমন্যাস্টিকস, পশু প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মত নানারকম শারীরিক কসরতের প্রদর্শন হত। প্রিয়নাথ বোসের ‘Great Bengal Circus’ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই পৃথিবীর অনেক কটি দেশে সুনামের সঙ্গে চলেছিল।

    কুস্তি এবং সার্কাস দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে কিছুটা সক্ষম হলেও সর্বসাধারণের মধ্যে চরমভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। সেখানে সুযোগ সীমিত ছিল আর খেলার মধ্য দিয়ে পরাধীন মানুষের শাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি পরাক্রম দেখাবার কোন উপায় ছিল না। ফুটবলের মধ্যে নিহিত ছিল দুটি সমস্যারই সমাধান। তাই প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে আপামর বাঙালি ফুটবলকে আপন করে নিল। এই মর্মে স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও উপদেশ সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে -- "পদাঘাতের বিপরীতে পদাঘাত কেবলমাত্র ফুটবলেই সম্ভব।” এবং "গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরো নিকটবর্তী হইবে।" মহামানবের এমন উপদেশে পরাধীন মানুষ উজ্জীবিত হয়ে ফুটবলের মধ্য দিয়েই পেতে চাইল সংগ্রামের আস্বাদ। তবে আনুষঙ্গিক এবং উদ্ভূত কারণগুলো যাই হোক না কেন, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে কোলকাতার মানুষকে খেলাটি আকৃষ্ট করেছিল, আসন পেতেছিল তাদের ভাললাগার অলিন্দে।

    কোলকাতায় প্রথম নথিভুক্ত ফুটবল খেলা হয় এসপ্ল্যানেডে, ১৮৫৪ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। খেলাটি হয়েছিল ‘ক্যালকাটা ক্লাব অফ সিভিলিয়ান্স’ এবং জেন্টলমেন অফ ব্যারাকপুর’ এর মধ্যে। খেলাকে উপলক্ষ করে এটি আসলে ছিল রাজপুরুষদের সামাজিক জমায়েত। ফলাফলের উল্লেখ কোথাও নেই। এর আগে আর কোন খেলা হয়ে থাকলেও তার কোন হদিস পাওয়া সম্ভব নয় কারণ ফুটবলের এই আদিপর্বে তথ্যের বড়ই অভাব। বিভিন্ন বইপত্র ঘাঁটা ঘাঁটি করে যা পাওয়া যায় তাতেও জায়গায় জায়গায় সন, তারিখের বিস্তর ফারাক।

    এরপর কেটে গেল অনেকগুলো বছর। কোলকাতার মাঠে পরবর্তী ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হল ১৮৬৮ সালে। সেবার খেলা হল ‘ইউটোনিয়ান্স’ এর সাথে ‘অবশিষ্ট’ দলের। এই খেলায় তিন গোলে জেতে ইউটোনিয়ান্স দল। কোলকাতার গভর্নর রবার্ট ভ্যান্সিটার্ট দুটো গোল করেন এবং আর একটি গোল করেন ডব্লু. এইচ. ট্রান্ট। অবশিষ্ট দল গঠিত হয়েছিল আই সি এস দের নিয়ে।
    বছর দুয়েকের মধ্যে ১৮৭০ সালে এসপ্ল্যানেডের মাঠেই অনুষ্ঠিত হল আর একটি ফুটবল খেলা। একদিকে ছিল পাবলিক স্কুলের ইটন, হ্যারো এবং উইনচেস্টারের দল আর অন্যদিকে প্রাইভেট স্কুলের মিস টিনার দল।

    ফুটবল খেলা নিয়মিত চলতে থাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই এক এক করে গড়ে উঠল নানা ক্লাব। স্থাপনার সময় দিয়ে বিচার করলে প্রথমেই আসবে ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবের নাম। কোলকাতার বনেদী সাহেবকুল, যাদের অনেকেই ছিলেন ব্রিটিশ জয়েন্ট স্টক কোম্পানির কেউকেটা, ১৮৭২ সালে এই ক্লাবটির পত্তন করেন। সেই সময় ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ার এর রাগবি স্কুল এর এক ছাত্র ‘উইলিয়াম ওয়েব এলিস’ এর মস্তিস্কপ্রসুত এক খেলা সে দেশের অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে খুব জনপ্রিয়। স্কুলের নামে খেলাটির নামও দেওয়া হয় ‘রাগবি’। এই খেলার সাথে ফুটবলের কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যও ছিল অনেক। বনেদী স্কুল থেকে উদ্ভূত, তাই সে দেশের বনেদীরা একে আপন করে নিয়েছিল। বনেদিয়ানায় টইটম্বুর ‘ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব’এও তাই ফুটবল খেলা অল্পস্বল্প হলেও রাগবিই ছিল প্রধান আকর্ষণ। ১৮৭৬ সালে ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যায়। স্যার মার্টিন ডুরান্ডের প্রচেষ্টায় আবার নতুন করে তৈরি হয় ১৮৮৪ সালে। তখনও ক্লাবটি ছিল রাগবি কেন্দ্রিক। ক্যালকাটা ক্লাব ফুটবল খেলায় মননিবেশ করে ১৮৯৪ সালে।

    সাহেবদের বণিক সম্প্রদায় ১৮৭৮ সালে ফুটবল খেলার জন্য প্রতিষ্ঠা করল ‘ট্রেডার্স ক্লাব’। কিছুকাল পরে বণিক সংঘের প্রধান কর্মকেন্দ্র ডালহৌসি ইন্সটিটিউট এর নাম অনুসারে ‘ট্রেডার্স ক্লাব’ এর নাম বদল করে রাখা হয় ‘ডালহৌসী এথলেটিক ক্লাব’। ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবের কয়েক বছর পরে আত্মপ্রকাশ করলেও ফুটবলের প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটিই কোলকাতায় প্রথম। প্রাচীনতম এই ক্লাবটি আজও টিকে আছে।

    কয়েক বছরের মধ্যেই তৈরি হল ন্যাভাল ভল্যান্টিয়ার্স (পরে নাম পাল্টে হয় ‘ক্যালকাটা রেঞ্জার্স ক্লাব’), হাওড়া ইউনাইটেড এবং আর্মেনিয়ান ক্লাব।

    ১৮৭০ দশক জুড়ে কোলকাতায় নিয়মিত ফুটবলের আসর বসতে থাকে। কিন্তু সে আসরে কুশীলবেরা সকলেই ছিল সাহেব। নেটিভদের সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। অবশ্য তখন স্থানীয় মানুষদের মধ্যে খেলা দেখার অল্পস্বল্প আগ্রহ থাকলেও খেলার আগ্রহ তেমন ভাবে দানা বাঁধেনি।

    বাঙালির ফুটবল খেলার উন্মেষকে কেন্দ্র করে একটা জনশ্রুতি আছে। এক বাঙালি মহিলা রোজ সকালে তাঁর ছেলেকে সাথে নিয়ে গঙ্গায় স্নান করতে যেতেন। যাতায়াতের পথে ছেলেটি দেখতে পেত সাহেবরা গোল মত কি একটা নিয়ে পা দিয়ে লাথালাথি করে খেলছে। একদিন সেই গোল জিনিসটা একেবারে সামনে এসে পড়ল। ছেলেটি কৌতূহল চাপতে না পেরে যান থেকে নেমে ওটিকে হাতে করে তুলে পরখ করে দেখল। আয়তনের তুলনায় নেহাৎই হালকা। মাঠের থেকে একজন সাহেব ‘কিক’ করে বলটা ফেরত দিতে বলায় ছেলেটি পা দিয়ে বলটা ওদের দিকে ঠেলে দিল। সালটা ছিল ১৮৭৭। বলা হয় সেই প্রথম কোন বাঙালির ফুটবলে পা দেওয়া। বাচ্চা সেই ছেলেটির নাম হল নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী। ঘটনাটার এখানেই শেষ নয়। নগেন্দ্র এই বিচিত্র খেলাটায় এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে সত্ত্বর কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করে তাঁর হেয়ার স্কুলের কয়েকজন সহপাঠীকে সাথে নিয়ে চৌরঙ্গীর ‘মেসারস ম্যান্টন অ্যান্ড কোম্পানি’ থেকে বল কিনে নিয়ে এলেন। স্কুলের মাঠে শুরু হল উদ্দাম খেলা। পাশেই প্রেসিডেন্সী কলেজ। কয়েকদিন এইভাবে চলার পর একদিন প্রেসিডেন্সীর অধ্যাপক স্ট্যাকের চোখে পড়ল স্কুলের বাচ্চাদের এই হুড়োহুড়ি। তিনি মাঠে এসে বাচ্চাদের বোঝালেন যে যা তারা ফুটবল ভেবে কিনে এনেছে তা আসলে রাগবি বল। তিনি নিজে একটা ফুটবল কিনে বাচ্চাদের দিয়ে তাদের খেলার নিয়ম কানুন, কৌশল, অত্যন্ত যত্ন সহকারে শেখালেন। অধ্যাপক স্ট্যাক এবং তাঁর সহকর্মী জে এইচ গিলিল্যান্ড এর হাত ধরে বাঙালির ফুটবলে দীক্ষা হল। সেই দীক্ষিত ছাত্রদের অগ্রণী, নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী, পরবর্তীকালে তাঁর সার্বিক অবদানের মাধ্যমে হয়ে উঠলেন কলকাতা ফুটবলের প্রাণপুরুষ।

    কোলকাতার ফুটবলে তখন কলেজের দলগুলির বেশ রমরমা। প্রেসিডেন্সী, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, লা মার্টিনিয়ার, বিশপ’স কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে তখন চুটিয়ে ফুটবল খেলা হচ্ছে। ঘরের মাঠে কেবল নিজেদের মধ্যে খেলাই নয়, প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলেও সাফল্যের ছাপ রাখছে। যদিও এই খেলোয়াড়দের সিংহভাগই ছিল সাহেব, তবু তারই মাঝে কিছু দিশি ছেলেও নিজেদের এলেম দেখাতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্সীর নগেন্দ্রও ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

    স্কুলে থাকাকালীনই গড়েছিলেন ‘বয়েস ক্লাব’। নগেন্দ্রর সহপাঠী ছিল আর এক নগেন্দ্র, চোরবাগানের বিখ্যাত মল্লিকবাড়ির নগেন্দ্রনাথ মল্লিক। দুজনে মিলে মল্লিকদের মার্বেল প্যালেসে তৈরি করলেন ‘ফ্রেন্ডস ক্লাব’। এরপর প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় নিজে তো খেলতেনই অন্যদেরকেও ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করতেন। ১৮৮৪ সালে নগেন্দ্র প্রসাদ এবং আরও বেশ কিছু আগ্রহী মানুষ মিলে গঠন করলেন ওয়েলিংটন ক্লাব। মণি দাস নামে এক খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে সমস্যা হল। ছেলেটি যেহেতু নিচু জাতের তাই কারো কারো মতে তাকে রাখা সম্ভব নয়। কিছু সদস্যের এই নীচ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তিনি এবং আরও অনেকে ক্লাব ছেড়ে চলে আসেন। মতভেদের কারণে এক বছরের মধ্যেই ক্লাবটি উঠে যায়। পরের বছর মিঃ বি. পি. গুপ্তা. প্রতিষ্ঠা করেন টাউন ক্লাব। কয়েক বছরের মধ্যেই কোলকাতা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি ফুটবল ক্লাব। ১৮৮৪ সালেই আর এক দিকপাল সংগঠক উমেশ চন্দ্র মজুমদার ওরফে দুখিরাম বাবু গড়লেন এরিয়ান ক্লাব। প্রথমে বেশ কয়েক বছর ক্লাবের নাম ছিল ‘স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। দুখিরাম সেন্টার হাফে খেলতেন এবং দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু ফুটবল প্রশিক্ষক হিসাবে তাঁর অবদান খেলোয়াড়ের থেকেও অনেক বেশি। জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্ত এরিয়ান ক্লাবই ছিল তাঁর ঘর সংসার।

    এই সময়েই দক্ষিণ কোলকাতায় কালিঘাট হাই স্কুলের শিক্ষক মন্মথ গাঙ্গুলী প্রতিষ্ঠা করলেন ন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েসন ফুটবল ক্লাব। মন্মথ শৃঙ্খলাপরায়ণ মানুষ ছিলেন। তাঁর দলের খেলোয়াড়েরা বুট পরে খেলত। প্রথমদিকে ল্যান্সডাউনের পাশে লখার মাঠে খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করত। পরবর্তীকালে ভুকৈলাশ এবং নাটোরের মহারাজার পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ায় ক্লাবের অনেক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল।

    কোলকাতার অনতিদূরে গড়ে উঠল চুঁচুড়া স্পোর্টিং ক্লাব। কোলকাতার লীগে কোনদিন ঠাঁই না পেলেও সমকালীন ফুটবলের বিকাশে এই ক্লাবের অবদান অনেক। ক্লাবটি শিল্ডে নিয়মিত খেলত এবং একবার চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত উঠেছিল।

    কিছুকাল পরে নগেন্দ্রপ্রসাদ শোভাবাজার রাজবাড়ির সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। খেলা পাগল উদ্যোগী মানুষ, পারিবারিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে কুমার জিষ্ণেন্দ্র কৃষ্ণ দেব এর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৮৭ সালে পত্তন করলেন শোভাবাজার ক্লাব। মণি দাসকে সসম্মানে নিয়ে এলেন তাঁর এই নতুন ক্লাবে। এই মণি দাস এক সময় মোহনবাগান ক্লাবের ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন। কোন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে না পারলেও সেই সময়ের কোলকাতার ফুটবলে ক্লাবটির অনেক ঐতিহাসিক অবদান আছে। নগেন্দ্র প্রসাদ শুধু কোলকাতাতেই নয়, কোলকাতার বাইরেও ফুটবল খেলাকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। তাঁরই সাহায্যে বামাচরণ কুন্ডু তৈরি করেছিলেন হাওড়া স্পোর্টিং। তাঁর হাত ধরে খেলার মাঠে এসেছেন বহু তরুণ।

    প্রায় একই সময় পাশের পাড়াতে তৈরি হল কুমারটুলি ক্লাব। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ক্লাবটির বেশ কিছু সাফল্যের নজীর আছে। এই ক্লাব ১৯১৪ সালে ট্রেডস কাপ জয় করে। ১৯১৭ সালে লীগের দ্বিতীয় ডিভিশনে জায়গা পায়। সেই বছরেই লীগে রানার্স হয় এবং কোচবিহার কাপ জেতে। ১৯২০ সালে শিল্ড ফাইনাল খেলে। ১৯১৭ থেকে ১৯১৯, প্রথম দু বছর রানার্স এবং শেষবার চ্যাম্পিয়ান হলেও কুমারটুলিকে প্রথম বিভাগে উঠতে দেওয়া হয়নি। যোগ্যতা অর্জন করেও তার স্বীকৃতি পায়নি কারণ, প্রথম বিভাগে দুটির বেশি ভারতীয় দল থাকতে পারবে না।

    ১৮৮৯ সালে শুরু হল কোলকাতার প্রথম নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতা, ‘ট্রেডস কাপ’। ওই প্রতিযোগিতার ট্রফিটি দিয়েছিল ডালহৌসি ক্লাব। প্রথম ট্রেডস কাপে তেরটি দল খেলে যার মধ্যে একমাত্র ভারতীয় দল ছিল শোভাবাজার। শোভাবাজারের খেলা পড়েছিল সেন্ট জেভিয়ার্স এর সাথে। প্রথম খেলাতেই অবশ্য সেন্ট জেভিয়ার্স এর কাছে শোভাবাজার ০-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল। তিনটি গোলই করেছিল সেন্ট জেভিয়ার্স এর ছাত্র নরম্যান প্রিচার্ড (Norman Pritchard)। কোলকাতার ফুটবল প্রতিযোগিতায় সেই প্রথম হ্যাট্রিক আর ওই খেলাটি ছিল প্রথম কোন ভারতীয় দলের ইউরোপীয় দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামা। প্রথম ট্রেডস কাপ জেতে ডালহৌসি ক্লাব। ট্রেডস কাপের প্রথম দিকে কলেজ দলগুলির উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ জিতেছে ১৮৯০ এবং ১৮৯৩ সালে, মেডিক্যাল কলেজ জিতেছে ১৮৯৪, ১৮৯৫, ১৯০৩, ১৯০৪ সালে, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ জিতেছে ১৮৯৬, ১৯০১ এবং ১৯০৫ সালে। দেখা যাচ্ছে ১৬ বছরে কলেজ দলগুলি মোট ন বার এই ট্রফি ঘরে এনেছে।

    ১৮৮৯ সালে কোলকাতার মাঠে আগমন হল এমন একটি ফুটবল ক্লাবের যা তৎকালীন বাঙালির ফুটবল অনুরাগকে পৌঁছে দিয়েছিল উন্মাদনার স্তরে। এই উন্মাদনা কালের স্রোতে হয়ে উঠেছিল শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক অভিনব অস্ত্র। মোহনবাগান ক্লাবের জন্ম হল ১৮৮৯ এর ১৫ অগাস্ট, আর ৫৮ বছর বাদে ওই একই দিনে দেশ স্বাধীন হল। কি অদ্ভুত সমাপতন।

    প্রখ্যাত আইনজীবী শ্রী ভুপেন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে উত্তর কলকাতার ফড়িয়াপুকুরে তিন অভিজাত, মিত্র, সেন ও বসু পরিবার এই মোহনবাগান ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। মিত্র পরিবারের প্রধান কিরিটী মিত্রের প্রাসাদ “মোহনবাগান ভিলায়” প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারনে ক্লাবটির নাম হল ‘মোহনবাগান স্পোর্টস ক্লাব’। পরবর্তী কালে অধ্যাপক এফ. জে. রো (F.J. Rowe) এর পরামর্শে নাম হল ‘মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব’। ক্লাবের প্রথম সভা হয় উত্তর কোলকাতার ১৪, বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে। সেই সভায় স্যার ভুপেন্দ্র নাথ মিত্র, গিরিন বসু, রায় বাহাদুর চুনিলাল বসু, ডঃ মনিন্দ্রনাথ বসু, দুর্গাচরণ লাহা (শ্যামপুকুরের মহারাজা), রাজেন্দ্র ভুপ বাহাদুর (কোচবিহারের মহারাজা), শ্রী রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মত বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সভায় পৌরোহিত্য করেন শ্রী ভুপেন্দ্র নাথ বসু এবং তিনিই হন মোহনবাগান ক্লাবের প্রথম সভাপতি। পরবর্তীকালে তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেরও সভাপতি হয়েছিলেন। প্রথম সম্পাদক হন যতীন্দ্র নাথ বসু এবং দলের প্রথম অধিনায়ক হলেন মণিলাল সেন। মণিলাল কেবল ফুটবলই নয়, ক্রিকেটও বেশ ভাল খেলতেন। শোনা যায় বাঙালিদের মধ্যে তিনিই প্রথম হাত ঘুরিয়ে বল করা শুরু করেন। ( শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় -- ক্লাবের নাম মোহনবাগান )

    প্রথম দিকে ক্লাবের খেলাধুলো হত মোহনবাগান ভিলার ভিতরের মাঠে। মোহনবাগান প্রথম ম্যাচ এই মাঠেই খেলে, ইডেন হিন্দু হোস্টেলের ছাত্রদের সাথে। মাঠটি ম্যাচ খেলার পক্ষে ছোট ছিল। শ্যাম পুকুরের মহারাজা দুর্গা চরণ লাহার সাহায্যে ক্লাবের মাঠ শ্যামপুকুরে স্থানান্তরিত হয়। এখন জায়গাটির নাম শ্যামপুকুর লাহা কলোনি। কিছু পরে কোলকাতা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হ্যারি লি (Harry Lee) এর প্রচেষ্টায় শ্যাম স্কোয়ারে হল ক্লাবের পরবর্তী মাঠ। মাঠটিতে এরিয়ান এবং বাগবাজার ক্লাবও খেলত। ১৯০০ সালে মোহনবাগান ময়দানে প্রেসিডেন্সি কলেজের মাঠে খেলার অধিকার পেল। ১৫ বছর ওই মাঠে খেলার পর ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ক্লাবের মাঠটি মোহনবাগানের অধীনে আসে। এই মাঠটি প্রথমে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত ছিল, পরে ময়দানের অন্যান্য মাঠের মত এটিকেও উত্তর- দক্ষিণ করে নেওয়া হয়। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত মোহনবাগান এই মাঠেই খেলে। এখন মাঠটি এরিয়ান এবং ইস্টবেঙ্গলের তত্ত্বাবধানে আছে। ১৯৬৩র পরে মোহনবাগান তার বর্তমান মাঠে চলে আসে। ১৮৯৩ সালে মোহনবাগান প্রথমবার ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কোচ বিহার কাপে। সাফল্য আসেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মোহনবাগান উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য পায় নি।

    নবাবজাদা আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে কলকাতার মুসলমান সম্প্রদায় জুবিলি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আসে ক্রিসেন্ট ক্লাব এবং হামিদিয়া ক্লাব। এগুলিরই উত্তরসূরি হিসাবে ১৮৯১ সালে আত্মপ্রকাশ করে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। নবাব সৈয়দ আমীর হুসেন হলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং নবাব সুজাত আলি বেগ হন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আব্দুল গনি হলেন ক্লাবের প্রথম সেক্রেটারি।

    এক সময় এই ক্লাব নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিয়ে শাসন করেছিল কোলকাতার ফুটবল। প্রথম দিকে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। অবস্থাপন্ন মুসলমানেরা সেই সময় মুসলিম ইনস্টিট্যুটের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কাইজার স্ট্রিটের মাঠে কিছু ফ্রেন্ডলি খেলার মধ্য দিয়ে মহামেডান নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখল। শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে দুবার ট্রেডস কাপে নাম দিয়েছিল কিন্তু ফল তেমন সুখের হয়নি। প্রথমবার প্রথম রাউন্ডে ন্যাশানলের সঙ্গে ড্র করে পরের খেলায় হেরেছিল ৫-১ গোলে। পরের বছর হেস্টিংসের কাছে হারল সাত গোলে। সৈয়দ আনিস হোসেন খাঁয়ের চেষ্টায় ময়দানে বর্তমান কালীঘাট মাঠে খেলার জায়গা পেল মহামেডান ক্লাব। মোহনবাগানের মত মহামেডানকেও সাফল্য পেতে পরের শতাব্দী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

    ১৮৯২ সালে শোভাবাজার ইষ্ট সারে রেজিমেন্টকে ট্রেডার্স কাপে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল। প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে ইউরোপীয় দলকে হারিয়ে শোভাবাজার স্থাপন করেছিল এক অনন্য নজির । এই খেলার বিবরণ দেশের ত বটেই ইংল্যান্ডেরও টাইমস এর মত নামী কাগজগুলোতে ফলাও করে ছাপা হয়।

    স্থানীয় দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্য ১৮৯৩ সালে কোচবিহারের মহারাজা চালু করলেন কোচবিহার কাপ। প্রথমবার জিতল ফোর্ট উইলিয়াম আর্সেনল। দ্বিতীয় বছর ন্যাশনল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বছর আবার আর্সেনল। ১৮৯৭ থেকে পরপর তিনবার জেতে ন্যাশনাল। আর্সেনল ছিল ফোর্ট উইলিয়ামের ভারতীয় শ্রমিকদের দল, যেখানে অবাঙালির সংখ্যা ছিল বেশি। স্বল্পস্থায়ী হলেও আর্সেনল কোলকাতার ফুটবলে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

    ইতিমধ্যে উন্নত মানের আর একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। চিন্তা ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে একটি বৈঠক হল। আলোচনায় বসলেন ডালহৌসি ক্লাবের দুজন প্রতিনিধি, ক্যালকাটা ক্লাবের দুজন প্রতিনিধি এবং শোভাবাজা্রের নগেন্দ্র প্রসাদ। প্রতিযোগিতার রূপরেখা ঠিক করা হল এবং তা পরিচালনার জন্য ১৮৯৩ সালে তৈরি করা হল নতুন সংগঠন, ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে আই এফ এ। সংগঠন প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়, এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার কারণে জন্ম হয়েছিল সংগঠনের। ১৮৯৩ তেই শুরু হল সর্বভারতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা আই এফ এ শিল্ড। শিল্ডের ডিজাইন করেছিল কোলকাতার ওয়াল্টার লক অ্যান্ড কোম্পানি। কৌলীন্য বজায় রাখতে শিল্ড তৈরি হয়ে এল লন্ডনের এলকিংটন কোম্পানি থেকে। মহার্ঘ ওই শিল্ড তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্য করেছিলেন আর্মানী সাহেব এ আপকার, ডালহৌসির জে সাদারল্যান্ড এবং কোচবিহার ও পাতিয়ালার দুই মহারাজা। আই এফ এ গঠনের ক্ষেত্রে নগেন্দ্র প্রসাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, শিল্ডের জন্য মহারাজাদের অনুদান ছিল, তবু সেই কৌলীন্যের কারণেই প্রথমদিকে বেশ কিছু বছর আই এফ এর কার্যনির্বাহী সমিতিতে কেবলমাত্র ইউরোপিয়ান দলগুলির প্রতিনিধিরাই যেতে পারত। ভারতীয় দলগুলির সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রয়োজনে ভারতীয়দের থেকে অর্থ সাহায্য নিতে অবশ্য সাহেবদের কৌলিন্যে ঘা লাগেনি। ক্যালকাটা ক্লাবের সভাপতি হাইকোর্টের জজ ম্যাকফার্সন হলেন আই এফ এ র প্রথম সভাপতি। সম্পাদক হলেন ডালহৌসির এ ব্রাউন। বিস্তর আবেদন, নিবেদন এবং আন্দোলনের পর ১৯০০ সালে প্রথম কোন ভারতীয় প্রতিনিধি আই এফ এর কার্যনির্বাহী সমিতিতে জায়গা পেল। শোভাবাজারের অধিনায়ক কালী মিত্র হলেন আই এফ এতে প্রথম ভারতীয় প্রতিনিধি। এরপর ১৯০৩ সালে জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়ে আসেন ন্যাশনালের মন্মথ গাঙ্গুলী। কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শৃঙ্খলা পরায়ণ এবং সুদক্ষ কর্মী মন্মথবাবুকে আনা হয় দৈনন্দিন কাজকর্ম সুচারুরুপে সামলানর জন্য। ১৮৯৩ থেকে ট্রেডস কাপকে গৌণ প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত করা হল। সিদ্ধান্ত হল যে শিল্ডের খেলোয়াড় কেউ ট্রেডস কাপে খেলতে পারবে না।

    প্রথম বছর পূর্ব এবং পশ্চিম দুটি অঞ্চলে ভাগ করে আই এফ এ শিল্ডের খেলা হয়েছিল। পশ্চিমের খেলা হয়েছিল এলাহাবাদে চারটি ফৌজি দল নিয়ে। কোলকাতায় খেলেছিল নয়টি দল, যার মধ্যে ভারতীয় দল ছিল সবেধন নীলমণি সেই শোভাবাজার। এলাহাবাদের বিজয়ী রয়েল আইরিশ দলের সাথে কোলকাতার বিজয়ী ৫ম আরটিলারির ফাইনাল খেলা হল ডালহৌসি মাঠে। প্রথমদিন ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর দ্বিতীয় দিন আইরিশ দল ১-০ গোলে জিতে আই এফ এ শিল্ডের প্রথম চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করল। কেবলমাত্র প্রথমবারই নয়, ১৮৯৩, ৯৪, ৯৫, পরপর তিনবার শিল্ড জিতেছিল আইরিশ দলটি।

    ১৮৯৪ সালে কলেজের ছাত্রদের জন্য পৃথক প্রতিযোগিতা এলিয়ট শিল্ড শুরু হল। সিংহভাগ বাঙালি ছাত্র নিয়ে গড়া বিশপস কলেজ প্রথমদিকে পরপর পাঁচবার জেতে, এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজও পরপর পাঁচবার জেতে, সি এম এস এবং স্কটিশ চার্চ তিনবার এবং মেট্রোপলিটন দুবার। কেবলমাত্র ইউরোপিয়ান ছাত্রদের জন্য ছিল ক্যাডেট চ্যালেঞ্জ কাপ।

    ১৮৯৬ সালে দ্বিজেন সেন প্রতিষ্ঠা করলেন স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাব। পরে ক্লাবের দায়িত্ব নেন জে.এন. ঘোষ। তিনি খোঁড়া বাবু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ক্লাব ১৯২০ সালে দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার সুযোগ পায়। ১৯২৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে ওঠে ১৯৩৩ সালে আবার নেমে যায়। ১৯৪৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবার প্রথম বিভাগে ওঠে।

    স্বতন্ত্র একটি পরিচালন সমিতির অধীনে ১৮৯৮ সালে শুরু হল কোলকাতা লীগ। তদানীন্তন ফুটবল কর্তারা এমত মত প্রকাশ করেছিলেন যে লীগের খেলা শুরু হলে কোলকাতা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে ফুটবলের আকর্ষণ বাড়বে এবং খেলার প্রসার হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে যাদের মধ্যে খেলার প্রসারের জন্য লীগ শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেই ভারতীয় দলগুলির জন্য লীগের দরজা ছিল বন্ধ। এমনকি ১৯০৪ সালে লীগে দ্বিতীয় বিভাগ শুরু হওয়ার পরেও এর অন্যথা হয়নি। ১৮৯৮ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত এই নিয়ম বলবৎ ছিল। ১৯১১ সালে যুগান্তকারী ঘটনাটি ঘটার পর ১৯১৪ সালে মোহনবাগান এবং এরিয়ান্সকে দ্বিতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ দেওয়া হল। মোহনবাগান সেই বছরেই প্রথম বিভাগে উঠেছিল আর এরিয়ান্স উঠেছিল পরের বছর। দ্বিতীয় বিভাগে মোহনবাগানের জায়গায় সুযোগ পেল শোভাবাজার।১৯১৭ সালে এল কুমারটুলি, গ্রিয়ার, টাউন এবং ওরিয়েন্টালস। ১৯১৯ এ এল জোড়াবাগান এবং ১৯২০ তে এল তাজহাট এবং স্পোর্টিং ইউনিয়ান। পরের বছর তাজহাট টিম তুলে নেওয়ায় সেই শূন্য স্থানে অভিষেক হল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। মজার ব্যাপার হল মোহনবাগান, এরিয়ান্স, মহামেডান এবং ইস্টবেঙ্গল এই চারটি ক্লাবের কেউই কিন্ত দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়ে প্রথম বিভাগে ওঠেনি। হয় কোন দল প্রথম বিভাগ থেকে নাম প্রত্যাহার করেছে অথবা দ্বিতীয় বিভাগে যে দল চ্যাম্পিয়ান হয়েছে তার ‘এ’ দল প্রথম বিভাগে খেলে, এইরকম পরিস্থিতে চ্যাম্পিয়ান না হয়েও সুযোগ পেয়েছে প্রথম বিভাগে ওঠার।

    ১৯৩৪ সালে কোলকাতা ফুটবল লীগ আইএফএ-র অধীনে চলে আসে।

    ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পনের বছরে বেশ কিছু ভারতীয় দলের পত্তন হলেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু খেলায় জেতা ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাফল্যের তেমন কোন নজির নেই।কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল ন্যাশানাল ক্লাব। ন্যাশানল ১৮৯৪ সালে কোচবিহার কাপ জয় করে। এরপর ১৮৯৭ সাল থেকে তারা আবার পরপর তিনবছর জেতে।

    কিন্তু বিংশ শতাব্দীর ঊষা লগ্ন থেকেই এক আধটি করে মণি মুক্তো স্থানীয় ক্লাবগুলির ঘরে আসতে থাকে। ১৯০০ সালে প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে ন্যাশানল অ্যাসোসিয়েশন ট্রেডস কাপ জয় করে। ১৯০২ সালে আবার তারা ট্রেডস কাপ ঘরে তোলে। ১৯০০ সালে মিলিটারির উচ্চপদস্থ অফিসার শৈলেন বসু মোহনবাগানের সেক্রেটারি হন। চাকরি সূত্রে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শৃঙ্খলার দিকে বিশেষভাবে নজর দেন। শুধু তাই নয় তাঁর আমলেই ক্লাব পায় নতুন মাঠ এবং নতুন টেন্ট। তিনি ক্লাবের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হন এবং দলে নিয়ে আসেন দক্ষ খেলোয়াড়। তাঁর প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি, অনতিবিলম্বেই পাওয়া গিয়েছিল ঈপ্সিত ফল। সেই সময় স্বদেশী আন্দোলন চলছে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণে সেই আন্দোলন চরম রূপ নিয়েছে। ময়দানেও উপলব্ধি করা গেল তার উত্তাপ। বুটের বিরুদ্ধে গড়ে উঠল খালি পায়ের অদম্য প্রতিরোধ। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ স্বদেশী আন্দোলনের এই উত্তাল অধ্যায়ের ময়দানে প্রতিফলন ঘটাল মোহনবাগান। ওই সময়টা ছিল মোহনবাগান যুগ। ১৯০৪ এবং ১৯০৫, পরপর দুবার কোচবিহার কাপ জিতল। ১৯০৫ সালে সেবারের আই এফ এ শিল্ড বিজয়ী শক্তিশালী ডালহৌসি দলকে ফাইনাল খেলায় পরাজিত করে গ্ল্যাডস্টোন কাপ জেতে। গ্ল্যাডস্টোন কাপের আসর বসত চুঁচুড়ায়। এই খেলাকে কেন্দ্র করে একটা জনশ্রুতি আছে। ফাইনাল খেলার দিন মোহনবাগান এবং ডালহৌসি দল একই ট্রেনের একই কামরায় শিয়ালদহ থেকে নৈহাটির(নৈহাটি হয়ে চুঁচুড়া) উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।

    মোহনবাগানের খেলোয়াড়েরা শিল্ড জয়ী ডালহৌসি টিমের মাত্র সাতজন খেলোয়াড়কে ট্রেনে দেখতে পেয়ে একটু আশ্বস্ত হয়। তারা ভেবেছিল বাকি তিনজন হয়ত ওদের ‘বি’ দলের খেলোয়াড় খেলবে।। উপস্থিত এক মোহনবাগান সমর্থক কৌতূহলী হয়ে বাকি তিনজনের ব্যাপারে প্রতিপক্ষকে জিজ্ঞেস করায় তারা জানিয়েছিল যে মোহনবাগানের জন্য সাতজনই যথেষ্ট। মাঠে গিয়ে দেখা গেল যে বাকি খেলোয়াড়েরা হাওড়া থেকে ট্রেনে এসেছে। বিকেলে মাঠে নেমে দুর্ধর্ষ ডালহৌসি টিমকে ৬-১ গোলে পর্যুদস্ত করে গ্ল্যাডস্টোন কাপ ঘরে আনল মোহনবাগান। ১৯০৬ সালে সেই সময়ের আর এক ওজনদার প্রতিপক্ষ ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবকে Minto Fete Tournament এ ১-০ গোলে পরাজিত করে। কিন্তু টুর্নামেন্ট কমিটি ন্যাশানল অ্যাসোসিয়েশন এর পি.কে.বিশ্বাস কে খেলানোর কারণে মোহনবাগানকে বাতিল ঘোষণা করে। নিয়মিত যে ফুটবল প্রতিযোগিতা তখন হত এটা তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। সেই সময়ের ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর স্ত্রী দেশের নার্সদের সাহায্যার্থে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। মহৎ উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই খেলায় মোহনবাগানের একজন খেলোয়াড় না আসায় পি.কে.বিশ্বাসকে খেলানোর ব্যাপারে তাই কারো মনে কোন প্রশ্ন জাগেনি। মোহনবাগানকে বাতিল ঘোষণা করার কথা যখন ক্যালকাটা ক্লাবকে জানান হয় তখন তাদের কর্মকর্তা প্রত্যুত্তরে জানান যে, “the Calcutta Football Club was fully satisfied that it had been defeated fairly and squarely by ‘eleven players of Mohun Bagan, not twelve’, and withdrew from the MintoFeteTournament.”

    মোহনবাগান ১৯০৬ থেকে ১৯০৮, টানা তিন বছর ট্রেডস কাপ, ১৯০৭ এবং ১৯০৮এ কোচবিহার কাপ, ১৯০৮ এ গ্ল্যাডস্টোন কাপ এবং ১৯০৯ এবং ১৯১০এ লক্ষ্মীবিলাস কাপ জেতে। এ ছাড়াও ১৯১০ সালে ক্লাব নবাব আহসানুল্লাহ চ্যালেঞ্জ শিল্ড এবং বেঙ্গল জিমখানা শিল্ড জয় করে। সাফল্যের খতিয়ান দেখে ১৯০৯ সালে মোহনবাগানকে আই এফ এ শিল্ড খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে গর্ডন হাইল্যান্ডার্স এর কাছে ০-৩ গোলে পরাজিত হয়। সেই বছরেই লক্ষ্মী বিলাস কাপের ফাইনালে মোহনবাগান এর শোধ তোলে। পাঁচটা ম্যাচ ড্র হওয়ার পর তারা হাইল্যান্ডার্সকে পরাজিত করে। হতাশ এবং ক্রুদ্ধ কিছু হাইল্যান্ডার্স কাপটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়, যদিও অল্প সময় পরেই তা ফেরত আসে। ১৯১০ সালে শিল্ডে মোহনবাগান প্রথম রাউন্ডেই ই বি এস আর এর কাছে হেরে গেল।

    পরের বছর অর্থাৎ ১৯১১ সালে স্বাভাবিক কারণেই মোহনবাগানকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনি। ১০ জুলাই সেন্টজেভিয়ার্স কলেজকে ৩-০ গোলে হারিয়ে মোহনবাগান দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠল। ১৪ জুলাই ভিজে মাঠে রেঞ্জার্স ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে উঠল। প্রথমার্ধে দু গোলে এগিয়ে ছিল মোহনবাগান। বিরতির পর তুমুল বৃষ্টি নামল। ভিজে মাঠে খালি পায়ে দেহের ভারসাম্য রাখা কঠিন হত বলে স্থানীয় দলগুলি কিছুটা সমস্যায় পড়ত। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে রেফারি তিনটে পেনাল্টি দিল। গোলকিপার হিরালাল মুখার্জী একটি পেনাল্টি শটও গোলে ঢুকতে দেয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে রেঞ্জার্স একটা গোল শোধ করেছিল। ভিজে মাঠে যথেচ্ছ শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করেও ইউরোপিয়ান দলটি পরাজয় আটকাতে পারেনি। তৃতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হল মিলিটারি দল ‘রাইফেল ব্রিগেড’এর। অমৃতবাজার পত্রিকা থেকে জানা যায় যে সেদিন ময়দানে প্রায় ৩৫০০০ থেকে ৪০০০০ দর্শক এসেছিল। ওই খেলায় আধিপত্য নিয়ে খেলেছিল রাইফেল ব্রিগেড, কিন্তু হিরালাল মুখার্জীর অসামান্য দক্ষতার কারণে গোলের দরজা খুলতে পারেনি। খেলার গতির বিরুদ্ধে এক ফাঁকে শিবদাস ব্রিগ্রেডের গোলে বল ঠেলে দিয়ে এল। মোহনবাগান পৌঁছে গেল সেমি ফাইনালে। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ মিডলসেক্স। সেমিফাইনালে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। মোহনবাগান একচেটিয়া খেলেও মিডলসেক্সের গোলকিপার পিগটকে একবার মাত্র হার মানাতে পেরেছিল। প্রথম গোল মোহনবাগান খেয়েছিল। রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে দর্শকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। খেলা ড্র হল, পরের দিন আবার খেলা। আবার একচেটিয়া খেলে মোহনবাগান তিন গোলে জিতে শিল্ডের ফাইনালে পৌঁছে গেল। খেলা হবে ক্যালকাটা ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা ইষ্ট ইয়র্কসায়ার রেজিমেন্ট এর সাথে।

    ফাইনাল খেলা হবে ২৯ জুলাই ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবের মাঠে। আইএফএ খেলাটিকে প্রদর্শনী ম্যাচ হিসাবে চিহ্নিত করল। টিকিটের দাম এক টাকা আর দু টাকা। খেলা শুরু হবে বিকেল ৫টায় আর খেলা পরিচালনা করবেন এইচ জি পুলার। মাঠের পূর্ব দিকে ছিল ক্যালকাটা ক্লাবের নিজস্ব বসার জায়গা। পশ্চিম দিকে চুক্তি অনুযায়ী কয়েকশো চেয়ার পেতে দিত আসবাবপত্র নির্মাতা বি এইচ স্মিথ এন্ড কোম্পানি। উত্তর এবং দক্ষিণ দিক খোলা। এই খেলা উপলক্ষে রেলওয়ে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। কেবল কোলকাতা বা মফঃস্বল নয়, বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিহার,আসাম প্রভৃতি প্রদেশ থেকেও বহু লোক এল শিল্ড ফাইনাল চাক্ষুষ করতে। বেলা ২টোর মধ্যেই ময়দান জন অরণ্যে পরিণত হল। টিকিট বিক্রি হওয়া মাঠের ঘেরা জায়গায় আর কত লোক ধরে, আসল ভিড় তো বাইরে। মাঠের খোলা দুই দিক কানায় কানায় ভরে গেল। ফোর্ট উইলিয়ামের দিকের উঁচু জায়গা, কাঠের বাক্স, ঠেলাগাড়ি, পোস্ট, এমনকি আশপাশের গাছের ডালেও কেবল মানুষ আর মানুষ। এর বাইরেও আছে আরও হাজার হাজার মানুষ, যারা সরাসরি খেলা দেখতে না পারলেও খেলার উত্তাপটা উপভোগ করছিল। মাঠের বাইরের লোকেদের খেলার খবর জানাবার অভিনব ব্যবস্থা হয়েছিল। মাঠে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটলেই ভেতরের দর্শকেরা তা ঘুড়িতে লিখে উড়িয়ে দিচ্ছিল। তখনকার সংবাদ মাধ্যমের অনুমান, সেদিন ময়দানে ৮০০০০ থেকে এক লাখ লোক এসেছিল। সেই প্রথম খেলার মাঠে টিকিট ব্ল্যাক হল, ২ টাকার টিকিটের দাম উঠেছিল ১৫ টাকা।

    প্রথমার্ধে শুরুর দিকেই ফ্রি কিক পেল ইষ্ট ইয়র্কসায়ার। জ্যাকসনের ফ্রি কিক সুকুলের গায়ে লেগে গোলে ঢুকে গেল। দীর্ঘশ্বাস পড়ল উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করল মোহনবাগান। শিবদাস আর বিজয়দাস দুই ভাইকে একরকম দেখতে। রেজিমেন্ট দল বাঁ দিকে শিবদাসকে প্রথম থেকেই কড়া নজরে রেখেছিল।দ্বিতীয়ার্ধে তুল্যমূল্য খেলা চলছে। কখনো সাহেবরা চেপে ধরছে, কখনো মোহনবাগান। বিজয়দাস, কানু রায়, হাবুল, অভিলাষ, শিবদাসরা নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে এগোবার চেষ্টা করছে। শিবদাস সুযোগ বুঝে চলে এসেছে ডান দিকে। খেলা শেষ হতে তখন দশ মিনিট বাকি। নিপুণ দক্ষতায় কয়েকজনকে কাটিয়ে শিবদাস গোলের বাঁদিক বরাবর যে শট নিল ক্রেসীর নাগাল এড়িয়ে তা ঢুকে গেল গোলে। ঘুড়িতে লিখে বাইরের বিশাল জনতাকে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হল। শোনা গেল তুমুল হর্ষধ্বনি। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগে শিবদাসের কাছ থেকে বল পেয়ে জোরাল শটে গোল করল অভিলাষ। বাঁধভাঙা উল্লাসের উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত হল জনসমুদ্র। খালি পায়ে একের পর এক বুট পরা শক্তিশালী ইউরোপীয় দলকে ঘায়েল করে প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে শিল্ড জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করল মোহনবাগান। তখন মোহনবাগান দলের একমাত্র সুধীর চ্যাটার্জী বুট পরে খেলতেন। ‘চেষ্টা করলে আমরাও পারি’, এই আত্মবিশ্বাসের উন্মেষ তখনকার অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অক্সিজেনের কাজ করেছিল।

    ইংলিশম্যান পত্রিকায় লেখা হল, “Mohun Bagan has succeeded in what the Congress and the swadeshiwallas have failed to do so far — to explode the myth that the Britishers are unbeatable in any sphere of life.”

    অমৃত বাজার পত্রিকা লিখল, “May God bless the Immortal Eleven of Mohan Bagan for raising their nation in the estimation of the Western people,” সেদিনের ওই দলকে আজও ‘অমর একাদশ’ নামেই স্মরণ করা হয়।

    অমর একাদশ - হিরালাল মুখার্জী, ভূতি সুকুল, সুধীর চ্যাটার্জী, মনমোহন মুখার্জী, রাজেন সেনগুপ্ত, নীলমাধব ভট্টাচার্য, কানু রায়, হাবুল সরকার, অভিলাষ ঘোষ, বিজয়দাস ভাদুড়ি, শিবদাস ভাদুড়ি (অধিনায়ক)।

    শোনা যায় শিল্ড নিয়ে যখন মোহনবাগানের বিজয় মিছিল যাচ্ছিল তখন শিবদাসকে কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “এই ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে কবে যাবে?”। শিবদাস বলেছিলেন, “যেবার আমরা ফের শিল্ড জিতব”। কাকতালীয় হলেও মোহনবাগানের ঘরে দ্বিতীয়বার শিল্ড এসেছিল ১৯৪৭ সালেই।

    মোহনবাগানের খেলোয়াড় রাজেন সেন একদিন একটি কিশোরকে নিয়ে এলেন কর্মকর্তা মেজর শৈলেন বসুর কাছে। ছেলেটি তখন কুমারটুলিতে খেলে। ছেলেটির চেহারা দেখে শৈলেনবাবুর ভাল লাগল। তবে শুধু চেহারা দেখলেই তো হবে না, এলেমটাও দেখতে হবে। পরখ করার জন্য বৃষ্টি ভেজা মাঠে ডালহৌসির বিরুদ্ধে এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সুকুলের পাশে ছেলেটিকে রাইট ব্যাকে নামান হল। পায়ে লম্বা শট আছে ঠিকই কিন্তু খেলা দিয়ে লোককে সন্তুস্ট করতে পারল না। মোহনবাগানের পরের পরে খেলা আগের বছরের লীগ চ্যাম্পিয়ান ব্ল্যাকওয়াচ এর সাথে। ছেলেটি সংকোচের সঙ্গে মাঠে এসেছে, খেলা দেখবে বলে। সুকুল ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন যে, ‘আজ তুমিই খেলবে আমার পাশে’। অনেকেই অবাক এবং অসন্তুষ্ট। ভাবল যে সুকুলের এই সিদ্ধান্তই ক্লাবকে ডোবাবে। খেলা কিছুক্ষণ গড়াবার পরেই দর্শকদের ধারণা পাল্টে গেল। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখল ব্ল্যাকওয়াচের মত জাঁদরেল দলের নামী দামী খেলোয়াড়েরা একবারের জন্যেও সতের বছরের ছেলেটিকে টপকাতে পারল না। ফরিদপুরের ওই কিশোর সেই থেকে টানা প্রায় তেইশ বছর মোহনবাগানের রক্ষণ সামলেছে। তৎকালীন ভারতীয় ফুটবলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই খেলোয়াড়টি হলেন গোষ্ঠ পাল। আপন দক্ষতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন ফুটবলের প্রবাদ পুরুষ। গোষ্ঠ পাল অকপটে স্বীকার করেছেন যে সেদিন অগ্রজ সহখেলোয়াড় সুকুল পাশে না থাকলে তাঁর খেলোয়াড় জীবন বেশিদূর যেত না। ১৯২৪ সালে তিনিই প্রথম ভারতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন।

    ১৯১৫ সালে রংপুরের তাজহাটের রাজা গোপাল রায় তৈরি করলেন তাজহাট দল। অর্থের অভাব ছিল না, তাই নানা দল থেকে খেলোয়াড় জোগাড় করে বেশ শক্তপোক্ত দল তৈরি হল। ১৯১৫ সালে কোচবিহার কাপ ঘরে এল। তাজহাট আবার কোচবিহার কাপ জেতে ১৯১৮ এবং ১৯১৯ সালে। সেই সময়ের বিখ্যাত খেলোয়াড় সামাদ এই ক্লাবের হয়ে কয়েক বছর খেলেছিলেন। কিছুকাল কোলকাতার ময়দান মাতিয়ে রেখে রাজার খেয়ালে তৈরি দল রাজার খেয়ালেই ১৯২১ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শোনা যায় কোলকাতা লীগের দ্বিতীয় বিভাগে ইস্টবেঙ্গলের খেলার পথ সুগম করার জন্য সহানুভূতি বশত মহারাজ নিজের টিম লীগ থেকে তুলে নেন।

    দুখিরাম মজুমদার মাঠের জহুরী ছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় জোগাড় করে এনে তাদের মেজেঘষে তৈরি করতেন। কিন্তু একটু জাতে ওঠার পরেই তাদের অনেকে অন্য ক্লাবে চলে যেত। ফলে ক্লাবে প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি। তবু প্রথম বছরেই কোচবিহার কাপের ফাইনালে ওঠে এরিয়ান দল। ফাইনালে ফোর্ট উইলিয়াম আর্সেনল এর কাছে হেরে যায়। ১৯০৮ সালে কোচবিহার কাপ জেতার মধ্য দিয়ে প্রথম সাফল্য আসে। এরপর ন্যাশানাল এবং মোহনবাগানের পরে তৃতীয় বাঙালি দল হিসেবে ১৯১৩ সালে ট্রেডস কাপ জেতে। জিতলেও এরিয়ান্সকে প্রথমে কাপ দেওয়া হয়নি। অপরাধ, এরিয়ান্স দলের গোলকিপার অ্যানস্টিস ছিলেন ইংরেজ। তাঁর স্থানীয় দলে খেলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যদিও প্রতিবাদ খারিজ হয়ে যায়। এরিয়ান্স ১৯১৬ সালে লীগের প্রথম বিভাগে ওঠে। ১৯৪০ সালে এরিয়ান্সের গৌরবের বছর। মোহনবাগানকে চার এক গোলে চূর্ণ করে শিল্ড জয় করে।

    বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে কোলকাতা মাঠে পূর্ব বঙ্গের বেশ কিছু খেলোয়াড় সুনামের সঙ্গে খেলছেন। মোহনবাগানের শিল্ড বিজয়ী দলের অনেক খেলোয়াড় ছিলেন পূর্ববঙ্গের। এমনকি মোহনবাগানের স্তম্ভ ফুটবলের প্রবাদ পুরুষ গোষ্ঠ পাল ছিলেন ফরিদপুরের লোক। তাজহাট আর স্পোর্টিং ইউনিয়ানও তখন পূর্ববঙ্গের খেলোয়াড়ে পুষ্ট। এরই মাঝে ঢাকা থেকে ওয়াড়ি ক্লাব কোলকাতায় খেলতে এসে লীগ চ্যাম্পিয়ান দল লিঙ্কনস্ এবং মোহনবাগানকে হারিয়ে দিয়ে গেছে। ফলে পূর্ববঙ্গের ফুটবলারদের যোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ওদিকের এত খেলোয়াড় খেললেও তাজহাটের মত দু একটি ক্লাব ছাড়া অধিকাংশ ক্লাবেরই পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন কোলকাতার মানুষেরা। পূর্ববঙ্গ থেকে আগত বিশিষ্ট কিছু ফুটবলপ্রেমী ব্যক্তিত্বের ভাবনায় ছিল কোলকাতা মাঠে এমন একটি ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করা যা হবে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষদের একান্ত নিজস্ব। জোড়াবাগানের সুরেশ চৌধুরি, কুমারটুলির তড়িৎ রায়, ওয়াড়ির নসা সেন এবং অরবিন্দ ঘোষের মত কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি আলাপ আলোচনা করে মনের কোণায় সযত্নে লালিত ভাবনাকে বাস্তবায়িত করলেন। কুমারটুলি পার্কে ক্যালকাটা ইউনিয়ান নামে ছোটদের একটি ক্লাব ছিল। এই ক্লাবটিকে নিয়েই তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। ১৯২০ সালের ১ অগাস্ট ময়দানে আবির্ভাব হল এমন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের, যার প্রভায় একসময় উদ্ভাসিত হল কোলকাতার ফুটবল প্রাঙ্গণ। ভাবনার সাথে সঙ্গতি রেখে ক্লাবের নাম রাখা হল ইস্টবেঙ্গল। অধ্যক্ষ সারদারঞ্জন রায় হলেন ক্লাবের প্রথম সভাপতি। যুগ্ম সম্পাদক হলেন সুরেশ চৌধুরি এবং তড়িৎ ভূষণ রায়। ফুটবল বিভাগের দায়িত্বে এলেন বনোয়ারিলাল রায়। পরে ১৯২৫ থেকে ১৯৪২, দীর্ঘ সতের বছর তিনি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলের প্রথম অধিনায়ক হলেন রমেশ চন্দ্র (নসা) সেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠার পিছনে আর একটি ঘটনার কথা শোনা যায়। কোচবিহার কাপে মোহনবাগানের সাথে জোড়াবাগানের খেলা। সেই খেলায় জোড়াবাগানের দুই নিয়মিত খেলোয়াড় রমেশ(নসা) সেন এবং শৈলেন বসুকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুরেশ চন্দ্র সেন ছিলেন জোড়াবাগানের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁর অনুরোধকেও উপেক্ষা করা হয়। অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সঙ্গী সাথীদের নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পত্তন করেন। এই ঘটনা হয়ত ইস্টবেঙ্গলের আগমনকে ত্বরান্বিত করেছিল কিন্তু তার মঞ্চ অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল।

    তখন শ্যাম স্কোয়ারে হারকিউলিস কাপ নামে সিক্স-এ-সাইড একটি প্রতিযোগিতা হত। প্রতিষ্ঠার বছরে কিছুটা নতুন ক্লাবের প্রচারের উদ্দেশ্যে ইস্টবেঙ্গল প্রতিযোগিতায় নাম দিল। মাঠে আত্মপ্রকাশ করল লাল হলুদ জার্সি। ডিসিএলআই(এ) টিমকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ান হল। এই খেলায় ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছিলেন পূর্ববঙ্গের আদ্যন্ত মোহনবাগানি দিকপাল খেলোয়াড় গোষ্ঠ পাল। ওই একটি প্রতিযোগিতার জন্য তিনি ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে মাঠে নেমেছিলেন। টিকিটের দাম ছিল এক আনা।

    পরের বছর অর্থাৎ ১৯২১ সালে লীগের দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে তাজহাট দল তুলে নেওয়ায় সেই যায়গায় সুযোগ পেল ইস্টবেঙ্গল। তাজহাট দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় ইস্টবেঙ্গলে চলে এল। প্রথম বছর লীগের ২৪টি খেলায় ৩২ পয়েন্ট করে লীগে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। একটিমাত্র খেলায় হেরেছিল। নতুন দল হিসাবে ফলাফল প্রশংসার দাবী রাখে। শিল্ডে প্রথম রাউন্ডেই প্রথম বিভাগের লীগ চ্যাম্পিয়ান দল ডালহৌসির মুখোমুখি হতে হল। তিনদিন খেলা ড্র রাখার পর চতুর্থ দিন বৃষ্টি ভেজা মাঠে ইস্টবেঙ্গল দু গোলে হেরে গেল। বৃষ্টি ভেজা মাঠে খালি পায়ে দেহের ভারসাম্য রাখা বেশ কঠিন হত তাই স্থানীয় দলগুলি সমস্যায় পড়ে যেত। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অনেকদিন পর্যন্ত এখানকার খেলোয়াড়দের বুট পরে খেলায় অনীহা ছিল। খালি পায়ে যে কারিকুরি দেখান যায় বুট পরে তা সম্ভব নয়, এমনটাই ছিল তাদের ধারণা।

    ১৯২১ সালের ৮ অগাস্ট কোচবিহার কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার মোহনবাগানের মুখোমুখি হয়। প্রথম খেলা অমীমাংসিত ভাবে শেষ হলে ১০ অগাস্ট আবার খেলা হয়। সেই খেলায় ৩-০ গোলে হেরে যায় ইস্টবেঙ্গল। গোল করেছিলেন রবি গাঙ্গুলী, পল্টু দাশগুপ্ত এবং এ ঘোষ।

    পরের বছর লীগে এক ধাপ নেমে চতুর্থ হয়েছিল। সেবার শিল্ডে ইস্টবেঙ্গল অসাধারণ খেলেছিল। প্রথম রাউন্ডে আর জি এ কে তিন এক গোলে হারিয়ে দিল। রাইট আউটের আশু দত্ত করলেন দুটি গোল। পরের খেলায় শক্তিশালী কাস্টমস দলের সাথেও এক গোলে জিতে গেল। থার্ড রাউন্ডে প্রতিপক্ষ জামালপুরের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দল। কোলকাতার মানুষ তখন ১৯১১র পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বিধি বাম, বৃষ্টি ধোয়া চরম পিছল মাঠে দু গোলে হেরে গেল ইস্টবেঙ্গল।

    ১৯২৪ সালে ৩৭ পয়েন্ট পেয়ে লীগ চ্যাম্পিয়ান হয় পুলিস। সমান পয়েন্ট পেলেও গোল পার্থক্যে রানার্স হয় ক্যামেরন্স ‘বি’ দল। ইস্টবেঙ্গল ৩২ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় হয়। কাজের সমস্যা হবে এই কারণে পুলিশ দলের কর্তৃপক্ষ প্রথম ডিভিশনে খেলতে অস্বীকার করে। ক্যামেরন্স ‘এ’ দল তখন প্রথম ডিভিশনে খেলছে তাই তারও ওঠার নিয়ম নেই। তৃতীয় দল হিসাবে ইস্টবেঙ্গল দাবী জানাল। সাহেবদের কড়া নিয়ম, প্রথম বিভাগে দুটির বেশি ভারতীয় দল খেলতে পারবে না। আই এফ এর সেক্রেটারি, কাস্টমসের মেডলিকট কোনভাবেই ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম বিভাগে খেলতে দিতে রাজি নয়। ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব এবং রেঞ্জারসের উদারমনস্ক কিছু সাহেব ইস্টবেঙ্গল যাতে প্রথম বিভাগে খেলতে পারে তার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করলেন। আর লড়েছিলেন পঙ্কজ গুপ্ত। আই এফ এ র সভাপতি জাস্টিস ইউয়াট গ্রিভস এর হস্তক্ষেপে ইস্টবেঙ্গল প্রথম বিভাগে জায়গা পেল আর চিরতরে উঠে গেল প্রথম বিভাগে ভারতীয় দলের সংখ্যা নিয়ে যাবতীয় বিধিনিষেধ।

    ১৯২৫ সালের ২৮ মে লীগে মোহনবাগানের সাথে প্রথম সাক্ষাতকারে ইষ্টবেঙ্গল ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। গোল করেছিলেন নেপাল চক্রবর্তী। পরের দু বছর না ভাল না মন্দে কাটল। ১৯২৮ সাল ছিল ইস্টবেঙ্গলের অভিশপ্ত বছর। টিম মোটামুটি ভালই ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মাত্র ন পয়েন্ট পেয়ে সবার নিচে থেকে দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গেল। ১৯২৯ সালে হাওড়া ইউনিয়নের থেকে আট পয়েন্ট কম পেয়ে রানার্স হল। ১৯৩০ সালে লীগের খেলা হয়নি। ১৯৩১ সালে ২২টা খেলায় ৩৭ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়ে আবার উন্নীত হল প্রথম বিভাগে। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

    এর মাঝে ময়দানে এসেছে বেশ কয়েকটি স্থানীয় দল।

    ১৯২২ সালের ইষ্ট ইয়ুথ ক্লাব ছ বছর বাদে নাম বদলে কালীঘাট ক্লাব হল। ১৯৩১ সালে তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান এবং পরের বছর দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়ে প্রথম বিভাগে ওঠে। প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ান ডারহামস থেকে মাত্র তিন পয়েন্ট পিছনে থেকে তৃতীয় হয়।

    ভবানীপুর ইম্পিরিয়াল এবং ভবানীপুর স্পোর্টিং মিলিত হয়ে ১৯২৫ সালে গঠিত হয় ভবানীপুর ক্লাব। ১৯৩৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়। ১৯২৬, ১৯২৭ এবং ১৯২৯ এ কুচবিহার কাপ জয় করে। শেষবার হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। ১৯৩৭ সালে প্রথম বিভাগের লীগে ইস্টবেঙ্গলের সাথে যুগ্মভাবে রানার্স আপ হয়। ১৯৪৮ সালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শিল্ড এর ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে হেরে যায়। ন্যাশনালের উত্তরাধিকারী হিসেবে পেয়েছিল দক্ষিণ কোলকাতার ধনী ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতা।

    ১৯২৫ সালে হরিপদ দত্তর উদ্যোগে স্থাপিত হল জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাব। ১৯৩৩ সালে চতুর্থ বিভাগে এবং এবং ১৯৩৪ সালে তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়। প্রথম ডিভিশনে উন্নীত হতে লেগে যায় ২১ বছর । অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হয়ে এখনও ময়দানে একটি পরিচিত নাম।

    বর্তমানের খিদিরপুর ক্লাব নেপিয়ার ক্লাব হিসাবে ১৯২৮ সাল থেকে লিগে দ্বিতীয় বিভাগে খেলা শুরু করে। ১৯৪৫ সালে চ্যাম্পিয়ান হয় কিন্তু যুদ্ধের জন্য ওঠানামা বন্ধ থাকায় প্রথম ডিভিশনে উঠতে পারেনি। নাম বদলে আবার চ্যাম্পিয়ান হয়ে ১৯৫২ সালে প্রথম ডিভিশনে ওঠে।

    অরোরা ক্লাব ১৯২৮ থেকে তৃতীয় ডিভিশনে খেলে ১৯৩৭ সালে রানার্স হয় দ্বিতীয় ডিভিশনে ওঠে। যুদ্ধের অজুহাতে ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়েও প্রথম ডিভিশনে উঠতে পারেনি।

    বি এন আর ১৯২৯ সালে তৃতীয় বিভাগে খেলতে এসেই চ্যাম্পিয়ান হয়। পাঁচ বছর পরে নেমে যায়। ১৯৩৬ সালে খেলতে হয় চতুর্থ ডিভিশনে। ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে চতুর্থ এবং তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়। ১৯৫২ সালে প্রথম বিভাগে ওঠে।

    রাজস্থান ক্লাব ১৯৩২ সালে চতুর্থ ডিভিশন থেকে খেলতে শুরু করে। ১৯৩৭ সালে রানার্স আপ হয়ে তৃতীয় ডিভিশনে ওঠে। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে ওঠে রানার্স আপ হয়ে। ১৯৪৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম ডিভিশনে ওঠে।

    ইস্টার্ন রেল দল বিভিন্ন নামে (ইবিআর, ইবিএসআর) বহুদিন থেকে কোলকাতার লীগ এবং শিল্ডে খেলেছে। ১৯৪৪ সালে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে প্রথম শিল্ড জয় করে। প্রথমদিকে বেশ কিছুদিন এরা পুরোপুরি ইউরোপিয়ান দল ছিল। পরবর্তীকালে সামাদের মত বেশ কিছু প্রথিতযশা স্থানীয় খেলোয়াড় রেল দলে খেলেছেন।

    শতাব্দীর প্রথম দশকে মহামেডান সাফল্যের মুখ দেখে। ১৯০২, ১৯০৬ এবং ১৯০৯ সালে কুচবিহার কাপ জয় করে। কিন্তু এরপর অনেকটাই সঙ্গতির অভাবে বহুদিন আর কোন সাফল্য আসেনি। ধনী মুসলমানেরা তখন ওরিয়েন্টাল স্পোর্টিং এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে। প্রায় দু দশক পর ১৯২৭ সালে ট্রেডস কাপের ফাইনাল খেলার সুবাদে মহামেডান ১৯২৮ সালে প্রথমবার দ্বিতীয় ডিভিশন লীগে খেলার সুযোগ পায়। প্রথম দু বছর লীগ টেবলের একেবারে নিচে ছিল। ১৯২৮ এ প্লে অফ ম্যাচে সেন্ট জেভিয়ারস কে হারিয়ে টিকে থাকে। হাওড়ার ই আই আর দল উঠে যাওয়ায় পরের বারেও মহামেডান টিকে যায়। ১৯৩০শে লীগ খেলা বন্ধ ছিল। ১৯৩১ সালে জাস্টিস সৈয়দ আমীর আলী সভাপতি এবং প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় আজিজ ক্লাবের সেক্রেটারি হন। আজিজের দক্ষতায় ক্লাবের পুনরুজ্জীবন হয়। ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার সাথে সাথে বাংলার বাইরে থেকে দক্ষ খেলোয়াড় আনতে সচেষ্ট হন। ১৯৩২ সালে নূর মহম্মদ, বিশ্বেশ্বর সিং, প্রেমলালের মত কিছু বাইরের খেলোয়াড় নিয়ে এলেন। এরা পরের বছর চলে গেলেও এল বাইরের আরো অনেক খেলোয়াড়। ১৯৩৩ সালে লীগ চ্যাম্পিয়ন হল কে আর আর (বি) আর মহামেডান হল রানার্স। রানার্স হলেও মহামেডান সুযোগ পেল প্রথম বিভাগে খেলার। ওরিয়েন্টাল স্পোর্টিং অস্তমিত হওয়ায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মহামেডানের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে, এগিয়ে আসে অনেক সাহায্যের হাত। প্রথম বিভাগে ওঠার পর জনসমর্থন আরও বাড়ে। বাইরে থেকে আসে জুম্মা খাঁ, রহমত, মাসুম, মহিউদ্দিনের মত অনেক কুশলী খেলোয়াড়। স্থানীয় অন্যান্য দল থেকেও কিছু ভাল খেলোয়াড় এল যার মধ্যে ছিল এক এবং অদ্বিতীয় সামাদ। দলের অধিনায়ক হল আনোয়ার। আগেই উল্লেখ করেছি যে ওই সময় স্থানীয় খেলোয়াড়েরা খালি পায়ে ছলাকলা দেখাতে সুবিধে হয় বলে বুট পরে খেলতে চাইত না। আজিজ তাঁর দলের খেলোয়াড়দের বুট পরে খেলতে উদ্বুদ্ধ করেন। লীগের শুরু থেকেই দলের ওজন মালুম পাওয়া গেল। ডালহৌসি এবং ক্যালকাটাকে হারাল যথাক্রমে চার এবং তিন গোলে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে ১-২ গোলে হারলেও মোহনবাগানের সাথে ১-১ ড্র হল। ফিরতি লীগে ইস্টবেঙ্গলকে হারাল ৪-২ গোলে। ডালহৌসি এবং মোহনবাগানের থেকে তিন পয়েন্টে এগিয়ে থেকে ২০টা খেলায় ২৭ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে লীগ চ্যাম্পিয়ান হল মহামেডান। মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের এত বছর বাদে আবার এক ভারতীয় দলের মাথায় উঠল বিজয় মুকুট, তাও আবার প্রথম সুযোগেই। এই জয় কেবলমাত্র মুসলমান সমাজই নয়, ভারতের আপামর ফুটবল প্রেমী মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলে দিল। এখানেই শেষ নয়, ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার লীগ জয় করে গোরাদের প্রাধান্যকে দুরমুশ করে দিল। এর আগে একমাত্র ডারহাম লাইট রাইফেল্স পরপর তিনবার লীগ জিতেছিল। ১৯৩৯এ মহামেডান লীগে অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৪০ এবং ১৯৪১এ আবার চ্যাম্পিয়ান হল। এরই মাঝে ১৯৩৬ সালে দ্বিতীয় ভারতীয় দল হিসাবে শিল্ড জয় করে। ফাইনালে জিতেছিল ২-১ গোলে। দ্বিতীয়বার শিল্ড জিতল ১৯৪১ সালে। ১৯৩৯ সালে লাহোরে গিয়ে জয় করে ডি মন্টমোরেন্সি কাপ। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় ভারতীয় দল হিসাবে জয় করে রোভার্স কাপ। ১৯৪০ সালেই রয়াল ওয়ারউইকশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে জিতল ডুরান্ড কাপ। পূর্বে উল্লিখিত খেলোয়াড়েরা ছাড়াও ওই অধ্যায়ে রহীম, হবিব, ছোট নূর, নাসিম, মহম্মদ, সেলিম, ওসমানরা ছিল দলের এক একটা মণি মুক্তো। সময়টা ছিল মহামেডানের স্বর্ণযুগ।

    মহামেডান স্পোর্টিং এর স্বর্ণযুগের খেলোয়াড়েরা :- ওসমান, জুম্মা খান, তাজ মহম্মদ, নাসিম, নূর মহম্মদ, সাবু, মহিউদ্দিন, মাসুম, আকিল আলী, রহমত, রহিম, রশিদ, সামাদ, নূর মহম্মদ (জুনিয়ার) আব্বাস, রশিদ (জুনিয়ার), রহিম।

    সুবর্ণ জয়ন্তী বছরে মোহনবাগান প্রথম লীগ জয়ের আস্বাদ পেল। সে বছর মহামেডান, ইস্টবেঙ্গল এবং কালীঘাট কিছু মতান্তরের কারণে লীগ বয়কট করেছিল। ১৯৩৯ এর পর আবার লীগ পেল ১৯৪৩ এবং ১৯৪৪ সালে। ১৯১১ থেকে ১৯৩৯, এই দীর্ঘ আঠাশ বছর পরে সাফল্যের মুখ দেখেছিল মোহনবাগান। আগেও আসতে পারত কিন্তু পেয়ালাটা কাছে এসেও ঠোঁট স্পর্শ করেনি। প্রথমবার লীগ চ্যাম্পিয়ান হওয়ার আগে, ১৯১৬, ১৯২০, ১৯২১, ১৯২৫, ১৯২৯ এবং ১৯৩৪ সালে রানার্স হয়েছিল এরপর ১৯৪০, ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সালেও রানার্স হয়েছিল। আই এফ এ শিল্ডে ১৯২৩, ১৯৪০ এবং ১৯৪৫ সালে রানার্স হয়েছিল। লীগ বা শিল্ড জয় না হলেও এই আঠাশ বছর ক্লাব যে একেবারে ট্রফি ছাড়া ছিল তা নয়। মর্যাদায় একটু ছোট হলেও কোচবিহার কাপ জিতেছে ১৯১৬, ১৯২৫, ১৯২৮, ১৯৩১, ১৯৩৫, ১৯৩৬, ১৯৪০, ১৯৪১, ১৯৪৪ সাল গুলিতে। লক্ষ্মীবিলাস কাপ জিতেছে ১৯২৮, ১৯৩৭, ১৯৩৯, ১৯৪০ এবং ১৯৪১ সালে। ট্রেডস কাপ ঘরে এসেছে ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৩, ১৯৪৪ এবং ১৯৪৫ সালে।

    ১৯৪২ সালে সহ সম্পাদক জ্যোতিষ গুহ এবং ফুটবল সম্পাদক সুধীর সেন ক্লাবের অনেক আভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে নতুন করে দল গঠন করলেন। এঁদের হাত ধরেই ইস্টবেঙ্গলে এল নতুন যুগ।

    ইষ্টবেঙ্গল প্রথম লীগ জয় করে ১৯৪২ সালে। এরপর আবার বিজয়ী হয় ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সালে। ১৯৪৩ এবং ১৯৪৫ সালে আই এফ এ শিল্ড ঘরে তোলে। ১৯৪৫ সালে লীগ এবং শিল্ড জিতে দ্বিমুকুট জয় হয়। ১৯৪৫ এর শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ১-০ গোলে মোহনবাগানকে হারায়। গোলদাতা ছিলেন কোলকাতায় স্থানীয় দলে খেলা প্রথম বিদেশি এম. পাগসলে। লীগে রানার্স হয় ১৯৩২, ১৯৩৩, ১৯৩৫, ১৯৩৭ এবং ১৯৪৩ সালে। ৪২ ও ৪৪এ শিল্ড রানার্স। ১৯৪৬ সালের লীগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ৩৬টি গোল করেছিলেন এস. নায়ার, যে রেকর্ড আজও অক্ষত আছে। এ ছাড়াও ১৯২৪ এবং ১৯৪২ সালে কোচবিহার কাপ, ১৯৪০ সালে লেডি হার্ডিঞ্জ শিল্ড এর মত তুলনায় কিছু ছোট ট্রফিও জয় করেছিল। ১৯৪৭ সালে ত্রিবান্দ্রমে একটি আমন্ত্রন মূলক প্রতিযোগিতাতেও বিজয়ী হয়েছিল। তবে ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান কেউই কোলকাতার বাইরে ডুরান্ড বা রোভার্স কাপে স্বাধীনতার আগে কোন সাফল্য পায়নি, যা পেয়েছিল মহামেডান। ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক বাড়তে শুরু করে দেশভাগের আগে পরে। ইস্টবেঙ্গল বা পূর্ববঙ্গ এই নামে কেউ কেউ অদ্ভুত একটা টান অনুভব করলেন। ছিন্নমূল মানুষরা ইস্টবেঙ্গল নামটির মধ্যেই ফেলে আসা দেশের ছায়া খুঁজে পেলেন।

    ১৯৪২ সালের ইস্টবেঙ্গলের প্রথম লীগ বিজয়ী দল—
    গোল — নীহার মিত্র, অমিতাভ মুখার্জী।
    ব্যাক — প্রমোদ দাশগুপ্ত, পরিতোষ চক্রবর্তী, রাখাল মজুমদার, অনিল নাগ।
    হাফ ব্যাক — নগেন রায়, আমিন, গিয়াসুদ্দিন, খগেন সেন, প্রশান্ত দাস, শিশির ঘোষ।
    ফরোয়ার্ড — কৃষ্ণা রাও, আপ্পা রাও, সোমানা (অধিনায়ক), সুনীল ঘোষ, সুশীল চ্যাটার্জী, সুহাস চ্যাটার্জী, অসীম ব্যানার্জী, রবি দে, সন্তোষ দত্ত, ফটিক সিং, টবি বোস, পাগসলে, নজর মহম্মদ।

    গোড়ার দিকে কয়েক যুগ স্থানীয় খেলোয়াড়দের নানারকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছে। নতুন খেলায় তারা ছিল বিগিনার, শিক্ষানবীস। ধীরে ধীরে খেলার কায়দা কানুন রপ্ত করে, অন্যান্য প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে দেখাতে শুরু করেছে নিজেদের মুনশিয়ানা। একটা সময় পরে থাবা বসিয়েছে ইউরোপিয়ানদের একচেটিয়া প্রাধান্যে। বহু খেলোয়াড় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবে দক্ষতার সঙ্গে খেলেছেন। সব নাম পাওয়া এবং দেওয়া কোনটাই সম্ভব নয়।

    সেই সময়ের কিছু খেলোয়াড় যাঁরা আজও চর্চিত হনঃ প্রথম দিকের উজ্জ্বল তারকারা —
    গোল - হিরালাল, সুরপতি মুখার্জী, প্রবোধ দাস
    ডিফেন্স - প্রফুল্ল বিশ্বাস, সত্যধেনু ঘোষাল, গিরীশ ঘোষ, অন্নদা দাশ
    হাফ - প্রফুল্ল রায়, ডোঙ্গা দত্ত
    ফরওয়ার্ড - গোবর মুখারজি, ক্ষেত্র মিত্র, হারান পলসাই, হরি চ্যাটার্জী, হুইলার (যার নামে হুইলার শিল্ড) নগেন্দ্র সর্বাধিকারী, চারভাই - রামদাস, দ্বিজদাস, বিজয়দাস, শিবদাস ভাদুড়ি, দ্বিজেন বসু, ছোনে মজুমদা্‌র, তুলসী দত্ত, মোনা মল্লিক, সূর্য চক্রবর্তী, দেবী ঘোষ, সন্মথ দত্ত।

    পরবর্তী সময়ে যাঁরা মাঠ আলো করে ছিলেন - সামাদ, বেচু দত্ত রায়, উমাপতি কুমার, ল্যাংচা মিত্র, মানা গুঁই, বলাইদাস চ্যাটার্জী, আপ্পারাও, আব্দুল হামিদ, নায়ার, মেওয়ালাল, মনি তালুকদার, করুণা ভট্টাচার্য, মজিদ, পরিতোষ চক্রবর্তী, শরত দাস, মোহিনী ব্যানার্জী, অনিল দে, টি আও, সাত্তার, শৈলেন মান্না। (যে নাম অন্যত্র উল্লেখ করেছি সেগুলি আর পুনরুল্লেখ করলাম না)

    আরো দুজনের নাম উল্লেখ না করলে তথ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। প্রথমজন হলেন সন্তোষের মহারাজা মন্মথ নাথ রায়চৌধুরি। দক্ষ প্রশাসক হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল। কয়েকটি বড় সমস্যার সমাধানে তিনি খুব কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯২০র দশকে কিছু সময় তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক এবং সভাপতি ছিলেন। তাঁর সময়েই ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ডিভিশনে ওঠা নিয়ে গোল বাধে। যে কয়েকজনের প্রচেষ্টায় সমস্যার নিরসন হয় তার মধ্যে তিনি এবং পঙ্কজ গুপ্ত ছিলেন অগ্রণী। আই এফ এ তেও তিনি দীর্ঘদিন মুখ্য প্রশাসক ছিলেন। তিনি চেয়ারে থাকাকালীন আই এফ এ দুবার বেশ বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রথমটি হয় ১৯৩৫ সালে, যখন বোম্বাই এবং দিল্লীর নেতৃত্বে বেশ কিছু রাজ্য বাংলা কেন্দ্রিক আই এফ একে মানতে অস্বীকার করে। আই এফ এ তখন ভারতের অন্যান্য রাজ্যকেও নিজের সাথে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দ্বারভাঙ্গায় সমস্ত রাজ্যের ফুটবল প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা হয়। মন্মথ রায়চৌধুরী ছিলেন সেই সভার চেয়ারম্যান। কিন্তু বাংলার বিরুদ্ধে অন্য অনেকেই সোচ্চার হওয়ায় তিনি সভা ত্যাগ করেন। ১৯৩৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বেশ কিছু রাজ্য মিলে তৈরি করল অল ইন্ডিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আই এফ এর খ্যাতি এবং মন্মথনাথের ব্যক্তিগত প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে সিংহভাগ সংবাদপত্র আই এফ এর পক্ষে সওয়াল করে। একই কারণে ক্রীড়া প্রেমী বনেদী রাজপরিবারগুলিও নবগঠিত সংস্থা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়। তখন আই এফ এই ভারতে বিশ্ব ফুটবল সংস্থা এবং ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এর একমাত্র স্বীকৃত সংস্থা ছিল। ইংরেজদের আর্মি স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডও আই এফ এর পক্ষে সমর্থন জানায়। ফলে আর্থিক, সাংগঠনিক, সকল দিক থেকেই নবগঠিত সংস্থা ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তারা বাধ্য হয়ে আই এফ এর সাথে সমঝোতায় আসে, ১৯৩৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন।

    ১৯৩৯ সালে কোলকাতার তিনটি ক্লাব কিছু সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে আইএফএ-র সাথে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথক একটি সংগঠন তৈরি করে। এই তিন ক্লাবের মধ্যে তাঁর নিজের ক্লাব ইস্টবেঙ্গলও ছিল। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ১৯৪০ সালে আবার তিনি ক্লাব কটিকে আই এফ এর ছাতার তলায় নিয়ে আসেন।

    ১৯৪১ সালে আন্তঃ রাজ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মহারাজা সন্তোষের নামে চ্যাম্পিয়ানের ট্রফিটি দেয় আইএফএ। আগের থেকে আকর্ষণ কিছুটা কমে গেলেও সন্তোষ ট্রফি এখনও নিয়মিত হয়।

    দ্বিতীয়জন হলেন পঙ্কজ গুপ্ত। পঙ্কজ গুপ্ত ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। খেলাধুলার জগতের নানান শাখায় তাঁর ছিল অনায়াস বিচরণ। ১৯৩২এর লস এঙ্গেলস অলিম্পিকে তিনি ছিলেন দলের ম্যানেজার। দুবার বিশ্ব ফুটবল কংগ্রেসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। রাশিয়া সফরে তিনি ভারতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার ছিলেন। আর তদানীন্তন হকির সংগঠনে তিনি অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিলেন। ক্রিকেটেও তিনি বেশ কয়েকবার দলের সাথে বিদেশে গেছেন। তিনি আই এফ এর বহুদিন কর্মকর্তা ছিলেন। পঙ্কজ গুপ্ত প্রথমে স্পোর্টিং ইউনিয়ান ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আই এফ এতে আসেন স্পোর্টিং এর প্রতিনিধি হয়ে। ১৯২৪ সালে প্রাচ্য সফরকারি দলে তিনি সহকারী ম্যানেজার হয়ে যান।

    অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন গঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। প্রতিষ্ঠা বছরে তিনি ছিলেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ এবং পরবর্তীকালে সভাপতি হয়েছিলেন। এন সি সি ক্রিকেট ক্লাব গঠন এবং ইডেন গার্ডেনএ স্টেডিয়াম নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৪৪ সালে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য তাঁকে Most Excellent Order of the British Empire (MBE) সম্মান দেওয়া হয়।

    কোলকাতার ফুটবলের প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ইউরোপিয়ানদের একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল। সেটাই স্বাভাবিক কারণ, প্রথম বেশ কিছু বছর তো কেবল তারাই ছিল। ভারতীয়রা সাহেবদের বল খেলতে দেখে আকৃষ্ট হয়ে, খেলার নিয়ম কানুনগুলো একটু আধটু জেনে, বল নিয়ে দৌড়োদৌড়ি শুরু করল তো শেষ পনের বছর। ফুটবলের সবরকম সাজে সজ্জিত হয়ে খালিপায়ের নবাগত নেটিভগুলোকে বাগ মানাতে তাই সাহেবদের তেমন কসরত করতে হয়নি। ১৮৯২ সালে একবারই মাত্র শোভাবাজার যা একটু ছোবল মেরেছিল।

    ইউরোপিয়ানদের মধ্যে পল্টনদের বেশ কিছু শক্তিশালী দল ছিল। ১৮৯৩ এবং ১৮৯৪, পরপর দুবছর শিল্ড পেল রয়্যাল আইরিশ রাইফেলস। ১৮৯৫ সালে পেল রয়্যাল ওয়েলস ফিউসিলার্স। তিনটেই পল্টনদের দল। রয়্যাল আইরিশ রাইফেলস মোট ছয় বার শিল্ড পেয়েছে। গর্ডন হাইল্যান্ডার্স ১৯০৮ থেকে ১৯১০ এবং শেরউড ফরেস্টার্স ১৯২৬ থেকে ১৯২৮ পরপর তিনবার শিল্ড পেয়েছে। ১৮৯৪ সাল থেকে ক্যালকাটা ক্লাব ফুটবলে মন দেয়। প্রথম অসামরিক দল হিসেবে ১৮৯৬ সালে শিল্ড পেল ক্যলকাটা ফুটবল ক্লাব আর ১৮৯৭এ পেল ডালহৌসি ক্লাব। ট্রেডস কাপ প্রথম বছর পেল ডালহৌসি আর পরের তিন বছর পেল মিলিটারি দল। অনেক ইউরোপিয়ান ক্লাব বিভিন্ন সময়ে এসেছে গেছে কিন্তু ক্যালকাটা এবং ডালহৌসি প্রায় পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বছর কোলকাতা ময়দানে সিংহবিক্রমে পদচারণা করেছে। ধারে, ভারে, ইজ্জতে, ক্যলকাটার অবস্থান একটু ওপরে ছিল, ডালহৌসি ছিল পাতি সাহেবদের ক্লাব। ক্যালকাটা ক্লাব লীগ পেয়েছে আট বার এবং শিল্ড পেয়েছে নবার, সেখানে ডালহৌসি লীগ পেয়েছে চার বার আর শিল্ড দুবার। ১৯০০ সালে শিল্ড ফাইনালে ক্যালকাটা ডালহৌসিকে ৬-০ গোলে পরাজিত করে। আই এফ এ শিল্ড ফাইনালে ওটাই এখন পর্যন্ত সর্বাধিক গোল।

    বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে স্থানীয় ক্লাবগুলি একটু আধটু কেরামতি দেখাতে শুরু করলেও ১৯৩২/৩৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান দলগুলি আধিপত্য নিয়ে খেলে গেছে। কেবলমাত্র ১৯১১ ছিল এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ইউরোপিয়ানরা একনাগাড়ে বেশিদিন কোলকাতা মাঠে খুব কমই খেলেছে। হয় চাকরির কারণে বদলি হয়ে যেত নয়ত দেশে ফিরে যেত। তাদের মধ্যে অনেকেই দক্ষতা, নৈপুন্য এবং শারীরিক সক্ষমতার নিখুঁত সমন্বয়ে মাতিয়ে রেখেছিল সেকালের ফুটবল মাঠ। এমনই কিছু খেলোয়াড় হলঃ গোলরক্ষক — বক্সওয়েল, বাকলে, ডিসিলভা। হাফ — কল্ভিন, কোয়েল, বেনেট, ফাইফ, চিজহোম, চার্চিল। ফরোয়ার্ড — জো গ্যালব্রেথ, পার্সি নাইট, ফেন, হোসি। শারমান ব্রাদার্স — ভি শারমান ছিল ফরোয়ার্ড আর এইচ শারমান খেলত ব্যাকে। ডানকান, ব্রাউন, ম্যাকরেডি, ভি কুপার, ইজমে, প্রাইক, বি আর লিন্ডসে, সাদারল্যান্ড, ডেভিডসনরাও দাপটের সঙ্গে খেলে গেছেন কোলকাতা মাঠে।

    তখন নিয়ামক সংস্থাগুলি ছিল পুরোপুরি সাহেবদের দখলে। খেলার মাঠেও মাঝে মাঝে তার প্রভাব পড়ত। রেফারী ও লাইন্সম্যানদের বিচার মাঝে মাঝে পক্ষপাতদুষ্ট হত। সাহেব দলগুলোর যে কেবল রেফারীর অনুগ্রহেই খেলার মাঠে সার্বিক আধিপত্য ছিল এমনটা কখনই নয়। প্রাথমিক পর্বে বেশ কিছুকাল স্থানীয় দলগুলির সাথে তাদের গুণগত পার্থক্য অবশ্যই ছিল। কিন্তু কোন তুল্যমূল্য খেলায় স্থানীয় দলের সাথে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতেই রেফারী এবং লাইন্সম্যানের নিজ নিজ দক্ষতায় ম্যাচটিকে সাহেব দলের অনুকুলে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল। ১৯১১য় অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খাওয়ার পরে ব্যাপারটা আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল। এ নিয়ে স্থানীয় দলগুলির মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, বিস্ফোরণ ঘটল মোহনবাগানের সাথে ডালহৌসির লীগের একটি খেলাকে কেন্দ্র করে। সেদিন খেলার মাঠে রেফারী ক্যামেরন এবং পরবর্তী সময়ে নিয়ামক সংস্থার কর্তাদের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত সকলকে ক্ষিপ্ত করে তুলল।

    অ্যাডভোকেট জেনারাল নৃপেন্দ্র নাথ সরকারের সভাপতিত্বে শ্যামবাজারের বোসেদের বাড়িতে স্থানীয় দলগুলি আলোচনায় বসল। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে আই এফ এর সাথে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে গড়া হবে ইন্ডিয়ান স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। ইংরেজদের সাথে যারা সহযোগিতার পথে চলতে পছন্দ করতেন তাঁরাও এই বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। ক্লাবগুলো চিঠি দিয়ে দলে দলে আই এফ এ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে থাকল। আই এফ এতে তখন ১৪টি ইউরোপিয়ান দলের প্রতিনিধি আটজন আর ১৪০টি ভারতীয় দলের প্রতিনিধি চারজন। মাঠের ঘটনা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কাগজগুলোতে পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক লেখালিখি হল। পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আই এফ এতে বিস্তর আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে অতঃপর কাউন্সিলে দুই পক্ষেরই সাতজন করে প্রতিনিধি থাকবে। ১৯২৯ সালের এই ঘটনার পর থেকে মাঠে খেলা পরিচালনার এবং কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহেবদের একচেটিয়া অধিকার চিরতরে লোপ পেল। সেই সময় কুশলী খেলোয়াড় ধীরে ধীরে কমতে থাকায় সাহেব দলগুলোর খেলার মানে ক্রমাবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল, এই সিদ্ধান্তে তা আরও নিম্নগামী হল। তাতে শেষ পেরেকটি মেরেছিল মহামেডান দল। চল্লিশের দশকে সবরকম প্রতিযোগিতা থেকে হারিয়ে গেল সাহেব দলগুলো।

    স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের ফুটবলে আহ্লাদিত হয়ে উল্লেখ করার মত ঘটনা খুব কমই আছে। যতটুকু আছে তার সবটাই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের তিন দশকে, তারপর কেবলই হতাশা। ফুটবলের ক্রম তালিকায় একশর মধ্যে থাকতে পারাটাই এখন আমাদের কাছে বিরাট গর্বের ব্যাপার। ১৯৫৩ সালে ভারতের এলো রেটিং ছিল ৪৯। বাংলার ফুটবলের দশাও বেশ করুণ। ত্রিশের দশকের মহামেডানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কোলকাতার বড় মাঝারি ছোট সব ক্লাবেই এখন বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়ের ভিড়। কেবল রাজ্যের বাইরে নয়, দেশেরও বাইরে থেকে দলে দলে খেলোয়াড় স্রোতের মত কোলকাতা মাঠকে প্লাবিত করছে। সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় উঠতি খেলোয়াড়েরা। দেশের সামগ্রিক চিত্রও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। এমত পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করা কঠিন।

    ইংরেজদের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক থেকে আরম্ভ করে জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাহেবিয়ানায় দীক্ষিত করে নিজেদের মত করে গড়ে তোলা। তাতে রাজ্যপাট সামলাতে অনেক সুবিধে হবে। ফুটবল আর ক্রিকেট ছিল তারই একটি অঙ্গ। ফুটবলের প্রচার ও প্রসারের মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং বিপ্লবের পথ থেকে যুব সমাজকে বিচ্ছিন্ন করা। দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে এই ভাবনা ডিভিডেন্ড দিলেও ফুটবলে তা অনেক সময়ই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসে ছিল। সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা দূরে থাক, ফুটবলকে কেন্দ্র করেই পরাধীন ভারতবাসীর মনে ধ্বনিত হয়েছিল বিপ্লবের দুন্দুভি।

    মান আমাদের যাই হোক না কেন, অধিকাংশ বাঙালির হৃদয়ে ফুটবল এখনও অনেকটা স্থান দখল করে আছে। ঘটি-বাঙাল, সকলেই ফুটবলের কাঙাল। শোষণ, নিষ্পেষণের জন্য শত ধিক্কারের মাঝেও এই অমূল্য উপহারের জন্য ইংরেজরা কিছুটা কৃতজ্ঞতা অবশ্যই দাবী করতে পারে।

    [email protected]

    তথ্যসুত্রঃ -

    কলকাতার ফুটবল- রাখাল ভট্টাচার্য

    Imperial tool ‘for’ nationalist resistance: The ‘games ethic’ in Indian history -- Boria Majumdar

    SPORTSSTAR -- The Kolkata Derby: They met as early as in 1921! - Amitava Das Sharma, Kolkata 01 April, 2016 14
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন