এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 783412.157.89.253 | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪377728
  • বড়ই উপভোগ করিতেছি। ভাষা ও প্রকাশভঙ্গী অতীব প্রশংসনীয়। পাঠকালে মনোমধ্যে বিচিত্রভাব খেলিয়া যাইতেছে- এক টি ষড়যন্ত্রের আভাস পাইতেছি কখনও-যৌথ বা একক।
  • £ | 457812.254.9002312.25 | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৮377729
  • খদ্যোৎ মানে জোনাকী জানতুম। এখানে পড়ে মনে হচ্ছে অন্য কিছু।
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১৩377730
  • Edited.

    #নরকনন্দিনী ~১০ম ভাগ~
    পত্রটি পাঠ করিয়া শুষ্ক, ও চিন্তিত আননে সতীশের হস্তে তাহা পুনঃপ্রদান করিয়া রায়বাহাদুর সেইস্থানেই ভূমির উপর বসিয়া পড়িলেন। সতীশ তাহা দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া হাঁহাঁ করিয়া উঠিল, "ওকী কাকাবাবু, অমন ভূঁয়ে বসলেন কেন! ওরে ছোটু, ইদিকে শীগগির জলচৌকিটে আন!"- ভূস্বামী তাহাকে ইঙ্গিতে আশ্বস্ত করিলেন। তাঁহার পশ্চাতে দণ্ডায়মান বটুকলাল পাইক কিন্তু অভ্যাসবশত বুঝিল, হুজুরের সহসা কোন জটিল চিন্তার বিষয় উপস্থিত হইয়াছে, এবং তাঁহার একছিলিম তামাকুর ব্যবস্থা সে সঙ্গ করিয়াই আনিয়াছিল। গড়গড়াটি সে কেবলমাত্র আগাইয়া দিতে যাহিবে, এমন সময় রায়বাহাদুর অকস্মাৎ গাত্রোত্থান করিয়া বলিলেন, "চল বটকু, বেরোই।" এপর্যন্ত রায়বাহাদুর ও সতীশের একত্রে যাহিবার যোজনা হইয়াছিল বলিয়াই সহসা রায়বাহাদুরকে এরূপে স্বীয় গতিপথ বিচ্ছিন্ন করিতে দেখিয়া সতীশ প্রথমে কিঞ্চিৎ আহত হইলেও, পরক্ষণেই বুদ্ধিমান যুবক চিকিৎসক বাবুর সহিত ভূস্বামীর পৃথক, নিভৃত সাক্ষাতের প্রয়োজন অনুধাবন করিয়া, ও ভূস্বামীর পদমর্যাদা ও বয়োজ্যেষ্ঠতার সম্মানের নিমিত্ত তাঁহার গন্তব্য বা কার্যসূচি সম্পর্কে আর অধিক প্রশ্ন করিলোনা। একবার শুধু তাঁহাকে গমনের পূর্বে কিঞ্চিৎ ফলমিষ্টান্নাদি দিয়া জলপান করিতে অনুরোধ করিলে রায়বাহাদুর তরুণের স্কন্ধে একরূপ সস্নেহ সান্ত্বনা ও সন্তুষ্টিসূচক মৃদু চপেটাঘাত করিয়া, সতীশকে সঙ্গ না লহিয়াই একাকী, নিজ দলবলসমেত সেই গৃহ হইতে বিদায় লহিলেন। অতঃপর হুজুরের নির্দেশে পালকি গঞ্জাভিমুখে ধাবিত হইল।
    যে সময়টুকু যাবৎ চিকিৎসকবাবুর দাওয়াখানায় বসিয়া রায়বাহাদুর আসন্ন বিস্ফোটক তথ্যসংবাদাদি শুনিবার নিমিত্ত ব্যাকুল উৎকণ্ঠার সহিত প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, তার মধ্যই অপরদিকে দিগন্তে দিননাথ অস্তাচলে গিয়াছেন, ও চরাচরে সন্ধ্যা নামিয়াছে। দাওয়াখানায় একটি বড়মাপের গ্যাসবাতি জ্বলিয়া ঘনায়মান অন্ধকারকে দূরীভূত করিতেছে। চিকিৎসক বাবুর কম্পাউন্ডার ও একাধারে ভৃত্যস্থানীয় মনোময় ব্যতীত দাওয়াখানায় বর্তমানে অপর কাহাকেও না দেখিতে পাহিয়া রায়বাহাদুর কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হইলেন। তবে কি আজিকে কোনোই রোগী হয় নাই!
    কিয়ৎক্ষণ পূর্বে মনোময় চিকিৎসক বাবুর বাটীমধ্য যাহিয়া তাঁহাকে নাকি রায়বাহাদুরের আগমন সংবাদ দিয়া আসিয়াছে। দাওয়াখানার উপরতলাতেই তাঁহার গৃহ।' শালা জোচ্চোর ডাক্তার খুব দুপয়সার পসার করেচে যাহোক, দোতলা বাড়ি হাঁকিয়েচে', রায়বাহাদুর মনে মনে বলিলেন। যদিও চিকিৎসক যদুনাথ সেন তাঁহাকে পত্রে স্বগৃহেই আমন্ত্রণ জানাইয়াছিল, তথাপি বিনা খাতিরসম্ভাষণে সে অপরিচিত বাটীতে পাদপ্রবেশ করিতে জমিদারবাবুর রুচি হইলনা। সহস্র হউক, এ পরগনার বৃহদাংশ তাঁহার জমিদারির অধীনস্থ। তিনি প্রকৃত মান্যব্যক্তির ন্যায়, সঙ্গস্থ পালকি ও দলবল, অনুচরবর্গকে দাওয়াখানা হইতে কিঞ্চিৎ দূরে রাখিয়া আসিয়া নীচতলায় অবস্থিত দাওয়াখানাতেই অপেক্ষা করিতেছিলেন।
    দাওয়াখানার বৃহদাকৃতি ওয়ালক্লকের প্রহরনির্দেশক কাঁটাটি যখন সন্ধ্যা প্রায় সাতটা ছুঁই ছুঁই, তখন মনোময় কম্পাউন্ডার আসিয়া যেন একপ্রকার মিচকা হাসিয়া বলিল, "ডাক্তারবাবু এয়েচেন। আপনাকে ভেতরে ডেকেচেন আজ্ঞে।" রায়বাহাদুর অন্যমনস্ক হইয়া বসিয়া নানা চিন্তা করিতেছিলেন। সহসা যেন তাঁহার ঘোর কাটিল। বক্ষমধ্য হৃদপিণ্ডটি যেন মূহুর্তে ধড়াস করিয়া লাফাইয়া উঠিল এবং ধমনীর রক্তপ্রবাহ তৎক্ষণাৎ দ্রুততর হইয়া উঠিল। কেন!! ডাক্তার কী বলিবে এই ভয়?! রায়বাহাদুর নিজ স্নায়ুমণ্ডলীর এই অস্বাভাবিক আচরণ নিজেও বুঝিলেননা। মনোময় তাঁহাকে 'ওইদিকে,' বলিয়া ডাক্তারের কক্ষটির দিক নির্দেশ করিয়া দিলো। আলো আঁধারির প্রভাবে মনোময়ের মুখটি ভারি এক অপার্থিব ও রহস্যাবৃত ধরণের লাগিতেছিল। রায়বাহাদুর তড়িঘড়ি যদুনাথ ডাক্তারের চেম্বার অভিমুখে চলিলেন। যদুনাথবাবুর চেম্বারের দ্বার ভিতর হইতে আলতোভাবে রুদ্ধ ছিল। করাঘাত করিতে যাইতেই ভিতরদিকে খুলিয়া গেলো। "আসুন আসুন জমিদারবাবু, গরীব ডাক্তারের দাওয়াখানায় পদধূলি দিলেন, কি সৌভাগ্যি।" এ কক্ষে একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও ম্রিয়মাণ গ্যাসবাতি জ্বলিতেছিল। হয়তবা অদ্য ডাক্তারবাবুর তেমন কোন রোগী দেখিবার কার্য ছিলনা বলিয়া তিনি আর অধিক আলো জ্বালিবার প্রয়োজন অনুভব করেন নাই, ভুস্বামী ইহা বুঝিলেন। যদুনাথ ডাক্তার স্বয়ং তড়িঘড়ি কুরসি ছাড়িয়া উঠিয়া আসিয়া শশব্যস্তভাবে জমিদার পাঁচকড়ি লাহাকে তাঁহার কাঠের টেবিলের বিপরীত দিকের, তাঁহার সম্মুখস্থ রোগী বসিবার মধ্যমাকৃতির বেঞ্চখানিতে এরূপ সমাদরে বসাইলেন যেন সিংহাসনে বসাইতেছেন। ইত্যবসরে জমিদারবাবু তীক্ষ নজরে যদুনাথ ডাক্তারকে জরিপ করিতে লাগিলেন। ব্যক্তি দীর্ঘাঙ্গ, এবং সুগঠিত, মেদহীন কায়ার অধিকারী। কিন্ত কৃশকায় নহে। চক্ষু দুইটি অত্যুজ্জ্বল এবং ধারালো। খড়্গ নাসিকার দুইপার্শ্বে তাহারা দুই শাণিত ছুরিকার ন্যায় অবস্থান করিতেছে। ইহার অবয়ব দেখিয়া ইহার চিন্তাপ্রবাহের গতিপথ কোনোমতেই নির্ধারণ করা যায়না। আবার ইহাকে নিরস্ত্র বা নির্ধন বলিয়া কোনোমতে এরূপ দুর্বল বা অসহায় বলিয়াও বোধ হয়না, যে কোনো পরিস্থিতিতেই লেঠেল বা ভাড়াটে খুনি পাঠাইয়া সাবাড় করিবার কথা কল্পনা করা যাহিতে পারে। "আহা, ডেকে এনে বড় কষ্ট দিলুম আপনাকে, তাইনা জমিদারবাবু!"- এরূপ সবিনয় সৌজন্যের ধাক্কায় ডাক্তারকে হত্যার কল্পনা শুরু হইবার পূর্বেই হোঁচট খাইয়া ভাঙ্গিয়া যাওয়ায়, মনেমনে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইলেও মুখে সে ভাব আনিতে দিলেন না পাঁচকড়ি জমিদার। এখানে আসিবার পূর্বে যে ভয় বা উৎকণ্ঠা অনুভব করিয়াছিলেন তাহা পূর্বেই অনেকাংশে অন্তর্হিত হইয়াছে। আপাতত সেইস্থানে একপ্রকার বিরক্তি জন্মাইয়াছে। লোকটা নিশ্চয় একটা ধূর্ত বিশেষ, তাহাতে সন্দেহ নাহি। একটা আকস্মিক মৃত্যুকে অবলম্বন করিয়া ও একটা মিথ্যা, স্বকপোলকল্পিত কাহিনী বানাইয়া, এবং তাহাকে মৃত পুরোহিত মহাশয়ের শেষ বয়ান বলিয়া চালাইয়া জমিদারবাবুকে ভয় খাওয়াইয়া কিছু কপর্দক কামাইতে চাহে। "হ্যাঁ, এবারে বলুন দিকিনি ডাক্তারবাবু, কী বলবেন। শেষদিনটেয় কী বলেচিলেন ঠাকুরবাবা?! কী দেকেচিলেন আমার বাড়িতে?"- রায়বাহাদুরের কন্ঠে অধৈর্য পরিস্ফুট হইয়া উঠিলো। গ্যাসবাতির ফ্যাকাসে রঙের হালকা আলোয় যদুনাথ ডাক্তারের চক্ষুদুইটি আরো উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। তাঁহার অবয়বের একাংশ কিন্তু তদ্যাপি অন্ধকারাবৃত ছিল। ধীরে ধীরে ডাক্তারের ওষ্ঠপ্রান্তে একরূপ বিচিত্র হাস্য প্রস্ফুটিত হইল। যদুনাথ সরাসরি বলিলেন, "ঠাকুর মশায় বলেচিলেন, আপনাদের মন্দিরের ঠাকুরের সোনার সিংহাসনে ঠাকুরের আসনে একটা ছোট্ট খুকী বসেচিলো। যেইনা ঠাকুর মশায় ব্যস্ত হয়ে তাকে ধরতে গেলেন, অমনি সে তুড়ুক করে দেওয়ালে চড়লো।"- ব্যস, এই অবধি শুনিয়াই রায়বাহাদুর তেলেবেগুনে জ্বলিয়া উঠিলেন। "মানে?!! বলো কি হে তুমি ডাক্তার!! বাচ্চা বসেচিলো, আবার দেওয়ালে চড়লো?!! তাই বললেন ঠাকুরবাবা?!! বলি তুমি কি সন্দের পর গাঁজা টাজা টানো নাকি হে?!"- উত্তপ্ত রায়বাহাদুর এরূপ উৎকট মস্করায়, আর সামান্য ডাক্তারের তাঁহার সম্মুখে ফাজলামি করিবার ধৃষ্টতা দেখিয়া যে ক্রোধে একেবারে রুদ্ররূপ ধারণ করিয়াছিলেন তাহা পাঠককে বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাহাতে যদুনাথ ডাক্তারের কোনো ভাবান্তর হইলোনা। তিনি শান্তভাবে হাসিয়া বলিলেন, জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না। আপনাকে বরঞ্চ হাতেকলমে দেকাই, দেকুন।"- এইকথা বলিয়া তৎক্ষণাৎ, রায়বাহাদুরের দুই নশ্বর চক্ষুর সম্মুখে ডাক্তার যদুনাথ সেন সম্মুখস্থ খাড়া দেওয়ালখানি বাহিয়া কৃকলাসের ক্ষিপ্রতায় তাহাতে আরোহণ করিতে লাগিল। তাহার হস্তপদগুলি যেন সরীসৃপের স্বাচ্ছন্দ্যে দেওয়ালের গাত্রে অচ্যুতভাবে সংযুক্ত রহিলো ও সড়সড় করিয়া উপরের দিকে উঠিতে লাগিলো। আরোহণকালে মধ্যমধ্য সে পশ্চাতে ভূস্বামীর দিকে মস্তক ঘুরাইয়া তাহার শ্বেতশুভ্র ক্ষুদ্রাকৃতি অসীর ন্যায় ধারালো দন্তগুলি খিঁচাইয়া একপ্রকার হিংস্র হাসি হাসিতে লাগিলো। ইতোমধ্য তাহার দুই চক্ষুর মণি অবলুপ্ত হইয়াছে, ও সেই স্থানে দুইটি হরিতাভ আলো খদ্যোতের ন্যায় জ্বলিতেছে। আর পাঁচকড়ি লাহা? তিনি যেন কোনো অজানা মন্ত্রে আচ্ছন্ন, মুগ্ধবৎ হইয়া, চিত্রার্পিতের ন্যায় সেইস্থানে বসিয়া এই দৃশ্য অবলোকন করিতে থাকিলেন। অবশেষে যদুনাথরূপী সরীসৃপ তাহার দীর্ঘ অমানুষিক জিহ্বা বাহির করিলো। অতি প্রাচীন মহাবৃক্ষের কোনো দীর্ঘায়ত উপশাখা, কিংবা ঝুরির ন্যায় উহা প্যাঁচালো, সর্পিল হইয়া ভূস্বামীর দিকে আগাইয়া আসিতে থাকিলো।~ক্রমশ~
  • £ | 457812.254.9002312.25 | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৫৪377731
  • এইবার খদ্যোৎ ঠিকঠাক হয়েছে।
    কিন্তু ইনি সরীসৃপরূপী যদুনাথ। উল্টাটি নহেন।
  • amit | 340123.0.34.2 | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১৬377732
  • গল্পের টাইম লাইন গুলো কি একটুখানি অফস্কেল হয়ে যাচ্ছে ? আগের পর্বে আছে পালকি বেহারা রা এবং ভৃত্যেরা ভোরবেলা রায়বাহাদুরকে এসে সংবাদ দিলো পুরোহিত মশায়ের অপমৃত্যু ঘটেছে। সাথে সাথেই রায়বাহাদুর নায়েবমশায় কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, প্রথমে পুরোহিত মশায়ের বাড়ি, তারপর গঞ্জে চিকিৎসকের বাড়ি গন্তব্যে।

    এর আগের পর্বগুলো পড়তে মনে হয়েছে গঞ্জ খুব বেশি হলে সামান্য কয়েক ঘন্টার রাস্তা , নাহলে পুরোহিত মশাইকে পালকি করে পাঠানো হলো কেন ? রায়বাহাদুরের এটুকু যেতে যেতেই সন্ধে হয়ে আসাটা একটু কেমন লাগলো। আরো কিছুতে বা গোলযোগে আটকে পড়ে সন্ধে হয়ে গেলে হয়তো আরো ঠিক ঠাক হতো।
  • ..... | 127812.51.783412.243 | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৫377733
  • ওগো তারপর কি হলো?????
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:১৩377734
  • @£ প্রথমবার দুটি শব্দের স্থান সোঅপিং এর জন্য দুঃখিত। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ পাঠক। কিন্তু যদুনাথরূপী সরীসৃপ যে সরীসৃপরূপী যদুনাথই তা এখনো গল্পে প্রকাশ হয়নি। তাই ও বাক্যাংশটুকুর ব্যবহার ইচ্ছাকৃতই ধরুন। সরীসৃপ কিন্ত সর্বদা পার্থিব সরীসৃপও না হতে পারে। পুনশ্চ ধন্যবাদ।
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৯377735
  • @amit প্রথমেই অশেষ ধন্যবাদ জানাই আমার কল্পিত কাহিনীর স্রোতে এমনভাবে মিশে যাওয়ার জন্য। সময়ের হিসাবে এদিক ওদিক গরমিল খুঁজে পাওয়া গেলে অত্যন্ত দুঃখিত। তবে যেহেতু যাত্রার গতি মনুষ্য পদচারণ অথবা ধাবন গতির উপর নির্ভর, এবং পথও সুগম নয়, সেহেতু পথে বিভিন্ন অসুবিধা এবং যাত্রী এবং পালকিবাহকদের পথিমধ্যে বায়োব্রেক, এবং যাত্রাবাহিনীর নিকোটিন ব্রেক ইত্যাদির কথা ও সময় অপচয়ের কল্পনা করতে বাধা নেই। তারপরেও ভুলত্রুটি বা গরমিল চোখে লাগলে তার জন্য পাঠকববন্ধুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করি। ধন্যবাদ।
  • Amit | 9003412.218.0145.48 | ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১১377736
  • তুলে রাখলুম এইটা। পরের পর্ব কবে আসবে ? প্লিজ জলদি লিখে ফেলুন ।
  • SD | 238912.65.90045.4 | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৩৫377738
  • তুললাম, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
  • শঙ্খ | 2345.110.9004512.3 | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৪২377739
  • দুহপ্তা না পুইলে লেকা আসবেনি এজ্ঞে। নরকবেটি মা ঠাইরেনের হুকুম।
  • রিভু | 780112.0.892323.218 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭377740
  • তুললাম। ফেবু তে লোক জন কেঁদে কেঁদে হন্যে হয়ে যাচ্ছে লেখার জন্যে ।
  • ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য | 2345.110.233412.22 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩377741
  • #নরকনন্দিনী~ ১১ নং ভাগ~
    রায়বাহাদুরের দুই ভয়বিমূঢ় নেত্রের নিষ্পলক দৃষ্টির সম্মুখে উহা তাঁহার কণ্ঠদেশ প্রদক্ষিণ করিয়া তাহা সবে প্যাঁচাইয়া ধরিতে উদ্যত হইয়াছে, এমন চরম মূহুর্তে বাহিরের দরোজায় একটা শোরগোল শুনা যাহিল। কাহারা সমবেত পদশব্দে ভিতরে প্রবেশ করিয়া ভূস্বামীর নাম ধরিয়া ডাকাডাকি, চেঁচামেচি শুরু করিল। তাহারা সকলে ডাকিতে ডাকিতে, খুঁজিতে খুঁজিতে দ্রুত সেই ডাক্তারের কক্ষে প্রবেশ করিল, এবং পাঠকগণকে বলিলে তাঁহারা হয়ত বিশ্বাস করিবেন না, ভিতরে ভূমিতে অচৈতন্যরূপে পতিত একাকী রায়বাহাদুর ভিন্ন কাহাকেও পাহিলনা। ডাক্তার যদুনাথ সেন, কম্পাউন্ডার মনোময়, ছিদাম, বটুক ও অন্যান্য পাইক-বেহারাগণ সকলেই সে দলে ছিল। ত্রস্তব্যস্ত হইয়া রায়বাহাদুরের অচেতন দেহ ভূমি হইতে উত্তোলিত করিয়া তাঁহাকে বেঞ্চে শোয়াইয়া মুখমণ্ডলে ও মস্তকে জলের ছিটা দিয়া, ডাক্তারবাবুর স্মেলিং সল্ট ঘ্রাণ করাইয়া প্রাথমিক শুশ্রূষা কীরূপে করিল, এবং তদপশ্চাৎ কীরূপ ঝঞ্ঝাট করিয়া তাঁহাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হইলো তাহার বিস্তারিত বিবরণে যাহিবনা। কিন্তু মোটের উপর ঘটনাটি কী ঘটিয়াছিল তাহার কতকটার আভাষ পাঠককে দান করা আবশ্যক। সে রাতে কার্যত দাওয়াখানা অর্ধদিবসে বন্ধ হইয়া গেলেও যদুনাথ ডাক্তার ও কম্পাউন্ডার মনোময় অকস্মাৎ পার্শ্ববর্তী পল্লীর একটি স্বচ্ছল গৃহের কিঞ্চিৎ সঙ্কটাপন্ন রোগী দেখিবার কল পাহিয়া সেস্থানে গিয়াছিল। ফিরিতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব হয়। অপরদিকে প্রভুর বিলম্ব দেখিয়া রায়বাহাদুরের বেহারাদি লোকেরা মনে করিয়াছিল তিনি বুঝি চিকিৎসকবাবুর সহিত সাক্ষাতেই কালাতিপাত করিতেছেন, তবু তাহারা ঈষৎ চিন্তিত ও চঞ্চল হইয়া সদ্য একবার দাওয়াখানার ওদিকে গিয়া খবর লহিবে ভাবিতেছে, এমন সময় তাহাদের সম্মুখ দিয়া তাহারা ডাক্তারবাবু ও কম্পাউন্ডারবাবুকে বাটী অভিমুখে গমন করিতে দেখে। অর্থাৎ তিনি এযাবৎ গৃহের বাহিরে ছিলেন। তবে প্রভু কাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতেছেন! তাহাদিগের চিন্তা ও সন্দেহের উদ্রেক হয়, ও তাহারা তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকবাবুকে নিজদলের পরিচয় দিয়া তাঁহার সঙ্গ নেয়। যদুনাথ সে দিবসের অপরাহ্নে বা বৈকালান্তে ভূস্বামীর আগমনের সম্ভাবনার কিঞ্চিৎ আন্দাজ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার ধারণা ছিল যে তাঁহার বার্তানুরোধ মাফিক রায়বাহাদুর আসিলে তাঁহার গৃহেই আসিবেন। এবং তদ্রূপ তিনি স্বগৃহে বলিয়াও রাখিয়াছিলেন, যে রায়বাহাদুর আসিলে যেন তাঁহাকে উত্তমরূপে সমাদর জানাইয়া যদুনাথের গৃহে বসিয়াই তাঁহার প্রতীক্ষা করিতে বলা হয়। কিন্তু ভূস্বামীকে যে অবস্থায় পাহেন তাহা তাঁহার কল্পনায় ছিলনা। যেক্ষণে তাঁহারা বাহির হইয়াছিলেন, দাওয়াখানার প্রবেশদ্বারখানি বাটীর দিক হইতে আসিয়া দাওয়াখানার ভিতরদিক হইতে তালা ও অর্গল দ্বারা উত্তমরূপে বন্ধ করিয়া গিয়াছিলেন। যদুনাথের বাটীতে প্রবেশমাত্র না করিয়া ভূস্বামীপ্রবর তাহা বাহির হইতে খুলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলেন কীরূপে? বাটীমধ্য পরিবারের কেহই তো তাঁহার আগমনবার্তা পাহে নাই। তাই বাটীমধ্য হইতে কেহ আসিয়া খুলিয়া দিবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও পরিলক্ষিত হইলনা। ভূস্বামী নিশ্চয় কোনরূপ বলপ্রয়োগ বা পদাঘাতপূর্বক, ভিতর হইতে রুদ্ধ দাওয়াখানার দরোজা ভাঙ্গিবার চেষ্টা করিবেননা! কেনই বা অমন করিবেন, আর যদি করিয়াও থাকেন, তবে অর্গল বা দরোজা বা তালার কোনো ক্ষতি হয় নাই কেন!! পুনশ্চ, শূণ্য দাওয়াখানায় ভূস্বামী একাকী কী করিতেছিলেন?! তিনি অচৈতন্য হইলেন কীরূপে?! এমতে বহু প্রশ্ন সকলের চিত্তেই পঙ্গপালের ন্যায় ঝাঁক বাঁধিয়া বারে বারে অনুপ্রবেশ করিতেছিল। তাহার অন্ততঃ কতকগুলিরও উত্তর যিনি দিতে পারিতেন সেই রায়বাহাদুর পাঁচকড়ি লাহা ততোক্ষণে সদর হাসপাতালের শয্যায় মূহুর্মুহু চেতনা হারাইতেছেন ও পুনরায় লাভ করিতেছেন, এবং কতকটা চেতনা হইলেই অসংলগ্ন সব প্রলাপবাক্য বকিতেছেন। সাহেব ডাক্তার সকল পরীক্ষা করিয়া বলিলেন, তেমন বড় কোন ব্যাধি বা আঘাতের নমুনা এযাবৎ পাওয়া যাহে নাই। সম্ভবতঃ কোনোকিছু দেখিয়া বা শুনিয়া প্রবল মানসিক আঘাত, অর্থাৎ 'শক্' পাহিয়াছেন। তা যাহা হউক ইতোমধ্য জমিদারপত্নী সংবাদ পাহিয়া হাসপাতালে ছুটিয়া আসিয়াছেন ও স্বামীর নিমিত্ত অত্যন্ত কাতর হইয়া কান্নাকাটি করিতেছেন। ভূস্বামী নামী লোক। অতএব কেহ না বলিলেও সদর হাসপাতালে রাষ্ট্র হইয়া স্থানীয় মানুষের মধ্য জানাজানি হইয়াছে। যদুনাথ ডাক্তারের সামাজিক স্তরে কিঞ্চিৎ প্রাথমিক জেরাও হইয়া গিয়াছে। তাঁহারই দাওয়াখানাটিতে এমন ঘটনা, সুতরাং তাঁহার দায়িত্বই সকলের চাহিতে অধিক। থানাপুলিশের আশঙ্কায় তাঁহার আননখানি মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু যাহা হউক বিধুসুন্দরী দেবী অবগুণ্ঠণের অন্তরাল হইতে সম্ভ্রান্ত গৃহের কর্ত্রীর উপযুক্ত মহিমায় ডাক্তারসাহেবের সহিত কথাবার্তা বলিয়া তাঁহাকে একপ্রকার বিশ্বাস করাইলেন যে, পতিদেবের শরীর নানা দায়িত্ব ও দুশ্চিন্তার তাড়নায় প্রথম হইতেই এমত খারাপ হইয়াছিল যে অকস্মাৎ অসুস্থ বা অচৈতন্য হওয়া আশঙ্কার কথা হইলেও কল্পনাতীত নহে। কতকটা নিজ চিকিৎসার প্রয়োজনেও রায়বাহাদুর ডাক্তার যদুনাথ সেনের চেম্বারদর্শনে যাহিয়াছিলেন, বেচারা যদুনাথ যদি ভূস্বামীকে তাঁহার সচেতন অবস্থায় সাক্ষাৎ করিতে পাহিতেন তবে তাঁহার শারীরিক দুর্বলতার জন্য তিনি উত্তম ঔষধপথ্যই লিখিয়া দিতেন সন্দেহ নাহি। এই মূহুর্তে অসুস্থ স্বামী কতকটা ধাতস্থ হইলেই তাঁহাকে লহিয়া তিনি গৃহাভিমুখে ফিরিতে চাহেন। রায়বাহাদুরের বিশ্রামের অতি প্রয়োজন। স্বামী কতকটা সুস্থ হইলে পর কালক্ষেপ না করিয়া কলিকাতায় তাঁহাকে ভূস্বামিনীর পিত্রালয়ে লহিয়া গিয়া পিতৃকুলের চিকিৎসক এক বড় ডাক্তারকে দেখাইবেন। সে নামজাদা বিশেষজ্ঞের নাম শুনিয়া খোদ ডাক্তারসাহেবও আপাতদৃষ্টিতে চমৎকৃত হইলেন। এমত বিভিন্ন নিপুণ বিচক্ষণতার বাক্য প্রয়োগ করিয়া বিধুসুন্দরী আনুষঙ্গিক ঝঞ্ঝাটের তৎকালিক নিষ্পত্তি করিয়া স্বামীর উপযুক্ত পত্নী হইবার পরিচয় দিলেন।
    যাহা হউক, এ যাত্রায় রায়বাহাদুর বাঁচিয়া যাহিলেও তাঁহার মানসিক সন্তুলন তদ্যাবধি কিঞ্চিৎ দোদুল্যমান রহিয়াছিল। তিনি কী করিয়া দাওয়াখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন বা কী দেখিয়া অচৈতন্য হইয়া পড়িয়াছিলেন তাহা সমস্ত রাত্রির মধ্য কোনমতেই স্মরণ করিতে পারিলেননা। থাকিয়া থাকিয়া কিছু অসংলগ্ন বাক্য বলিতেছিলেন বলিয়া ডাক্তার তাঁহাকে এক কড়া ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করিয়া নিদ্রাচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছিলেন। যাহা হউক, প্রহর দুইয়ের মধ্য নিশান্ত হইবার ঠিক পূর্বেই বিধুসুন্দরী দেবী সঙ্গস্থ ভৃত্য ও পরিচারিকাগণের সহায়তায়, ও ডাক্তারসাহেবের একপ্রকার অনিচ্ছাপূর্বক সম্মতিতেই অর্ধজাগ্রত রায়বাহাদুরকে লহিয়া তাঁহাদের পালকিতে উঠাইলেন। যদুনাথ ডাক্তার রাত্রিব্যাপী জাগিয়া হাসপাতালের অপেক্ষাগৃহে বসিয়া বসিয়া কিঞ্চিৎ নিদ্রিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। বিধুসুন্দরী সহকারী ডাক্তারবাবু ও নার্সদিগকে বলিয়া যাহিলেন, চিকিৎসক বাবুকে জাগাইয়া আর অধিক ক্লেশ দিবার প্রয়োজন নাহি। তিনি ইতোমধ্যই যথেষ্ট বিড়ম্বিত ও শ্রান্ত হইয়া আছেন। তিনি নিদ্রা সম্পূর্ণ করিয়া উঠিলে পর তাঁহাকে তাঁহাদের বিদায় সংবাদ দিলেই চলিবে। সনার্সগণ ইহা শুনিয়া আশ্চর্য হইয়া ডাক্তার সাহেবের মুখপানে তাকাইয়া সেখানে কী দেখিলেন বলিতে পারিনা, তাঁহারা কেমন একপ্রকার নিরুত্তর ও নীরব হইয়া গেলেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেব নিরুত্তর রহিলেও শিকারি মার্জারের ন্যায় সতর্ক ছিলেন। তিনি অভিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত ও ধর্মভীরু খ্রিষ্টান। তাঁহার ডাক্তারি ইউনিফর্মের পকেটে ছোটো বাইবেল ও কণ্ঠদেশ আবেষ্টনকারী প্রলম্বিত চেনে লাগানো ক্ষুদ্র ক্রসখানি সর্বদাই আত্মগোপন করিয়া থাকিত। তিনি বিধুসুন্দরী ও তাঁহার সঙ্গীগণের প্রবেশকাল হইতে গমন ইস্তক সে দ্রব্যগুলি তাঁহার অন্তরাত্মার কোন গোপন ইঙ্গিতে একবারও স্পর্শচ্যুত করেন নাই। কিন্তু এইবারে তাঁহারও শেষ অস্ত্র প্রয়োগের মূহুর্ত উপস্থিত হইয়াছে। জলদগম্ভীর স্বরে তিনি পার্শ্ববর্তিনী বঙ্গদেশীয়া সিস্টারকে আহ্বান করিলেন, "মিস বসাক, নাউ।" অত্যন্ত দ্রুত প্রায় ক্ষিপ্রগতিতে একটি জবাপুষ্পের মাল্য নির্দিষ্ট মন্ত্রোচ্চারণের সহিত উড্ডীন হইয়া আসিয়া রায়বাহাদুরের কণ্ঠে পুষ্পাঞ্জলির ন্যায় পড়িল। কক্ষে যেন বজ্রপাত হইল। একী! এত দ্রুত, চক্ষের পলকে কোথায় গেলেন রায়বাহাদুরের ধর্মপত্নী!! কোথায় লোকজন? কোথায় কে?!! নিষ্ক্রমণদ্বারের নিকট শুধুমাত্র, যেন সদ্যজাগ্রত, বিমূঢ় রায়বাহাদুর, ও ডাক্তার সাহেব ব্যতীত মোট পাঁচ কম্পিতহৃদয়, হতভম্ব ডাক্তার ও নার্স। ~ক্রমশ~
  • amit | 340123.0.34.2 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:০৮377742
  • এক নিঃস্বাসে পরে ফেললুম। আবার পরের পর্ব কবে আসবে ?
  • রিভু | 450112.191.564523.191 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪০377743
  • ইন্দ্রলেখা এটা ফেবু গ্রূপেও দিয়ে দেবেন? সেখানে লোকজন হত্যে দিয়ে পড়ে আছে।
  • pi | 4512.139.122323.129 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৫377744
  • রিভু, এই লিন্কটা গ্রুপে দিয়ে দে না!
  • ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য | 2345.110.125612.154 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:০৭377745
  • রিভু গুরুর ফেবু গ্রুপে তো রাত্রেই দিয়ে দিয়েছি এটা।
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৭377746
  • #নরকনন্দিনী~ ১২ নং ভাগ~
    ডাক্তার সাহেব অবস্থার গতি অনুধাবন করিয়া দ্রুত রায়বাহাদুরের নিকট আসিয়া তাঁহার স্কন্ধদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরিয়া না ফেলিলে হয়ত পাঁচকড়িবাবু ভূপতিত হইতেন। সকলে মিলিয়া ভূস্বামীকে ধরাধরি করিয়া লহিয়া গিয়া পুনরায় তাঁহার নির্দিষ্ট শয্যায় শয়ন করাইয়া দিলেন। নার্স তাঁহাকে গেলাসে করিয়া ধূমায়িত দুগ্ধ প্রদান করিলেন। অতঃপর কক্ষে চিকিৎসক যদুনাথ সেনের আবির্ভাব হইল। ডাক্তারসাহেব হাসিয়া পাঁচকড়িকে বলিলেন, "বাবু, দ্যের কামস ইয়োর সেভিয়র। আপনার প্রকৃঠ ঠ্রাটা যঢুনাট আসিয়া পড়িয়াছেন, আর অঢিক চিন্ঠা খরিবেন না।" তদ্যাপি ভয়জর্জরিত, কম্পিতহৃদয় পাঁচকড়ি বিস্মিত ও মূঢ়বৎ তাঁহাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিলে পর, ডাক্তার থমাস বেকার চক্ষুর ইঙ্গিতে যদুনাথের অনুমোদন লহিয়া সবিস্তারে পাঁচকড়িবাবুকে সকল বৃত্তান্ত বুঝাইয়া বলিলেন। তাহার সারমর্ম এই যে যদুনাথের দাওয়াখানায় যে রহস্যময় পরিস্থিতিতে ভূস্বামী অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিলেন, তাহাতে যেমন প্রারম্ভে হাসপাতালে আসিয়া যদুনাথকে অনেকের সন্দেহ ও অনুসন্ধিৎসার কেন্দ্রে পড়িতে হয়, তদ্রূপ তিনিও প্রথম হইতেই স্বীয় অন্তরে কিছু আশঙ্কা ও সন্দেহ পোষণ করিতেছিলেন যাহা তিনি প্রথম হইতেই গূঢ় রাখিয়াছিলেন, এবং কিঞ্চিৎ উপযুক্ত প্রমাণাদি না সংগ্রহ করিয়া কাহাকেও জানান নাই। হাসপাতালে আনয়ন করিবার কালে রায়বাহাদুরের কন্ঠাবেষ্টনকারী উত্তরীয়টি স্খলিত হইয়া পড়িয়াছিল, এবং যদুনাথ তাহা সযত্নে উত্তোলন করিয়া সঙ্গ করিয়া লহিয়া চলেন। সদর হাসপাতালের অতি নিকটে এক তন্ত্রসিদ্ধ যোগী পুরুষের আশ্রমে তাঁহার ও তাঁহার পরিবারের যাতায়াত ছিল। হাসপাতালে পঁহুছিয়া ভূস্বামীর ভর্তির ব্যবস্থাদি করিয়াই তিনি সর্বপ্রথম সেই উত্তরীয় লহিয়া যোগীবাবার আশ্রমে যান। তত্র মহাপুরুষকে প্রণামপূর্বক তাঁহাকে সে উত্তরীয়টি আগাইয়া দিয়া সবে ভূমিকা সহকারে সকল ঘটনার বিবরণ দিতে যাহিতেছেন, কি সেই যোগীপুরুষ সেই উত্তরীয়খানি টানিয়া লহিয়া সক্রোধ ঘৃণায় দূরে নিক্ষেপ করিলেন। উত্তরীয়টিতে যে বায়ু লাগিয়াছে, তাহার দুর্গন্ধ সাধারণ মনুষ্য না পাহিলেও সেই মহাযোগী তান্ত্রিক উত্তমরূপেই পাহিয়াছিলেন। তিনি উত্তরীয় স্পর্শ করিয়াই ইহা বহনকারী দুর্ভাগা মনুষ্যটির জীবনের উপস্থিত বিড়ম্বনা ও বিপদসকলের সম্বন্ধে সম্যক অবগত হইয়াছিলেন। তিনি যদুনাথকে বলিলেন, "বেটা, দিব্যি তো বদ্যিগিরি করে খাচ্চিলি, একী আপদে জড়ালি বল দিকিনি! এ হতভাগা যে সাক্ষাৎ সেকানকার রাজাকে ঘরে পুষেচে। এর যে গুষ্টিনাশ হতে চলিচে রে! এ কলঙ্কের ছায়া যে তোর ঘরেও সুড়সুড়িয়ে সেঁদিইচে রে। এবার তো সব্বোনাশ!" একথা শুনিয়া যদুনাথ চরম বিচলিত হইয়া পড়িলেন। তাঁহার চক্ষুর সম্মুখে তাঁহার দুই শিশুকন্যার মিষ্ট আনন দুইটি ভাসিয়া উঠিল। তিনি তৎক্ষণাৎ যোগীবাবার পদপ্রান্তে পড়িয়া তাঁহার করুণা ভিক্ষা করিলেন, এবং তাঁহাদের সকলের এই আসন্ন অমঙ্গল হইতে পরিত্রাণের উপায় বলিবার জন্য যোগীবাবাকে আকুল অনুরোধ করিতে লাগিলেন। অবশেষে যোগীর প্রাণে অত্যন্ত করুণর সঞ্চারই হইয়া থাকুক, অথবা তিনি তাঁহার সাধকের কর্তব্য স্মরণ করিয়াই হউক, "আঃ মোলো যা, করিস কী, পা ছাড় দিকি বাপু" বলিয়া যদুনাথকে তাঁহার চরণ আকর্ষণ হইতে নিবৃত্ত করিয়া, ও তাঁহাকে কিঞ্চিৎ আশ্বাসপ্রদানপূর্বক ক্ষণকালের নিমিত্ত ধ্যানমগ্ন হইলেন। কিয়ৎক্ষণ পশ্চাৎ চক্ষু উন্মীলন করিয়া সম্মুখস্থ কালীমূর্তির পদপ্রান্তে পতিত একটি জবামাল্য উত্তোলন করিলেন, ও তাহাতে লঘুস্বরে মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে গঙ্গাজলের ছিটা দিয়া সেই মন্ত্রঃপূত পুষ্পমাল্যটি যদুনাথের হস্তে দিয়া তাঁহাকে অতঃপর করণীয় কিছু নির্দিষ্ট কার্যসূচি বুঝাইয়া দিলেন। যদুনাথ মাল্য লহিয়া হাসপাতালে ফিরিয়া ডাক্তার সাহেবকে একান্তে ডাকিয়া তাঁহাকে সকল তথ্যাদি জানাইতে একপ্রকার বাধ্য হইয়াছিলেন, যেহেতু প্রধান চিকিৎসক মহাশয়ের অবগতি ও সম্মতি ব্যতীত রোগীর উপর এরূপ কোনো ধর্মীয় প্রহরা রাখা সম্ভব ছিলোনা । যাহা হউক, ধর্মবিশ্বাসী, নিষ্ঠাবান খ্রিস্টধর্মাবলম্বী থমাস সাহেব যদুনাথকে নিরাশ তো করেনই নাই, উপরন্তু পরম সহায়তা করিয়াছেন। অবশ্য সেবামূলক কার্যাদি ও দানধ্যানের নিমিত্ত সদরের গীর্জায় ও নিকটবর্তী স্থানগুলিতে তাঁহার সুনাম ছিল। রায়বাহাদুর সকল শুনিয়া কিয়ৎকাল স্তম্ভিত হইয়া থাকিলেন, অতঃপর স্বীয় বস্ত্রপ্রান্ত দ্বারা দুই চক্ষু হইতে উদ্গত অশ্রুবিন্দু মার্জনা করিয়া দুই হস্তে একবার যদুনাথ, ও একবার থমাস বেকারের দুই হস্ত করজোড়ে আবেষ্টন করিয়া বাষ্পাকুল কণ্ঠে তাঁহাদিগকে বারংবার ধন্যবাদ প্রদান করিতে করিতে অবশেষে কহিলেন, "ডাক্তারসাহেব, যদুনাতবাবু, এ জীবনকালে তেমন ভালো কাজ তো কিচু করেচি বলে মনে পড়েনা; তবে কোন পুণ্যির জোরে আপনাদের মত মহৎ, সাধু পুরুষদের সঙ্গ পেলুম, উপকার পেলুম!! আপনাদের এ ঋণ কেমন করে শুদবো তা ভেবে পাইনে! এ বিপদ হতে যদি নিস্তের পাই, কথা দিচ্চি আপনাদের সেবাকার্যে সাহায্য, দানধ্যান করেই বাকি দিনকটা কাটিয়ে দেবো। গরীব প্রজাদের উপর অত্যেচার, জোরজুলুম তো কম করিনি। এসব হ'ল আমারই সব অপকর্মের ফল, যা একন সবাইকে ভোগ করতে হচ্চে। আমি বুজিচি এবার, সেদিন মদনমোহন ঠাকুরও কেন আমার দিকে মুক ফিরিয়ে আমার মন্দির ত্যাগ করে গেলেন। তিনি আগে থেকেই রুষ্ট। আমি যে বড় খারাপ মানুষ! আমার, কি আমার পরিবারের রক্ষে তিনি কেন করবেন? আমি এবার সব বুজিচি। আমার চেতনা হয়েচে। যদুনাতবাবু, কোতায়, নে চলুন আমায় যোগীবাবার কাচে। তেনের পায়ে পড়বো আমি। যা পাচিত্তির বলেন, করবো। আমার পরিবার, পুত্তুরদের বাঁচান তিনি। চাই কি মরতে হয়, আমি মরি।" কহিতে কহিতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ রায়বাহাদুরের কণ্ঠস্বর আরো অধিক অশ্রুবিজড়িত, আর্দ্র হইয়া আসিল। যদুনাথ ও থমাস সাহেব মিলিয়া তাঁহাকে যথোচিত সান্ত্বনা ও আশ্বাস দিয়া ধাতস্থ করিয়া কিঞ্চিৎ বিশ্রাম দিলেন। অতঃপর যদুনাথ ভূস্বামীকে সঙ্গ করিয়া তাঁহার যোগীবাবার নিকট লহিয়া যাইলেন। যোগীবাবার আশ্রমে প্রবেশ করিতেই যদুনাথের পশ্চাতে পাঁচকড়িবাবুকে দেখিয়া সে সিদ্ধপুরুষ অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন। তাঁহার গম্ভীর হাস্যধ্বনি আশ্রমের প্রাকারগাত্রে প্রতিহত হইয়া চতুর্পার্শ্বে মন্দ্রিত হইয়া উঠিল। "এ কাকে আনলিরে ব্যাটা বদ্যি? একি সেই হারামজাদা পাঁচকড়ি জমিদার, নাকি কলে পড়া ইঁদুর!" রায়বাহাদুর সেই মেঘমন্দ্র, গম্ভীর, ভীষণ কণ্ঠস্বর শুনিয়া প্রথমে শিহরিত, পরে থতমত,সন্ত্রস্ত হইয়া গুটিগুটি যোগীবাবার আসনের নিকট যাহিয়াই "উদ্ধার করুন বাবা" বলিয়া ত্বরায় তাঁহার পদপ্রান্তে একেবারে সাষ্টাঙ্গে প্রণত হইয়া লুটাইয়া পড়িলেন। বিশাল জটাজুটধারী, রক্তচক্ষু, গাঢ় শ্যামবর্ণ সন্ন্যাসীর মুখপানে তিনি তখনো ভালো করিয়া চাহেন নাই। কিন্তু হঠাৎ কর্ণে শ্রবণ করিলেন, "ওরে ওট ব্যাটা পাঁচু। খুব হয়েচে। ওট দিকিনি এবার।" এবার জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর যেন পাঁচকড়ির কর্ণে ঈষৎ মোলায়েম এবং কেমন যেন বহুদিনের পরিচিত লাগিলো।তিনি চকিতে চমকাইয়া মুখ তুলিয়া একবার সন্ন্যাসীর মুখপানে চাহিয়াই "ছোটকাকা" বলিয়া অস্ফুট এক চীৎকার করিয়া উঠিলেন। যোগীবাবাও তাঁহার আপাত কাঠিন্যের সুউচ্চ দৃঢ় প্রাচীরের কোথায় যেন একটু ছোট ছিদ্র করিয়া ঈষৎ করুণামিশ্রিত নয়নে পাঁচকড়িকে দেখিলেন। পাঁচকড়ি যখন দ্বাদশ বৎসরের বালক তখন তাঁহার ছোটকাকা দু' কড়ি, ওরফে বলাই লাহা গৃহত্যাগী হইয়াছিলেন। জনশ্রুতি ছিলো এই, যে বলাই লাহা সংসারত্যাগী হইয়া কোনো এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছেন। আজি দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বৎসরকাল পর খুড়া-ভাইপোর মিলন হইল। পাঁচকড়ির জমিদারিতে যখন হইতে প্রবেশ ও বসত করিতেছেন, সন্ন্যাসী বলাই লাহা ভ্রাতুষ্পুত্রের বৈষয়িক উন্নতির আলোচনা যত্রই শুনিতেছেন, তত্রই প্রশংসা অপেক্ষা অত্যাচারী ও দাম্ভিক ভূস্বামী হিসাবে তাহার নিন্দাই অধিক শুনিতেছেন ও অপ্রসন্ন হইতেছেন। কিন্তু আজি এতকাল পরে ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাক্ষাৎ করিয়া তিনি অধিকক্ষণ অন্তরের কটুভাব বজায় রাখিতে পারিলেন না, এবং অবশেষে তাঁহার সন্ন্যাসীসুলভ ক্ষমাসুন্দর হৃদয়ে বিপন্ন ভ্রাতুষ্পুত্রের প্রতি করুণা ও আর্দ্রভাব জাগিয়া উঠিল। "মা তোকে ঠিক সময়ে আমার কাচে এনেচেন। তোর ও তোর পরিবারের মঙ্গল হোক পাঁচু। তোর সুমতিও জেগে উটুক" বলে পাঁচকড়ির মস্তকে তাঁহার করতল রাখিয়া বলাই সন্ন্যাসী তাঁহাকে স্নেহাশীর্বাদ করিলেন। পাঁচকড়ি তাঁহার খুল্লতাতের পদযুগল জড়াইয়া ধরিয়া যুগপৎ আনন্দ এবং অনুতাপের অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিলেন। ~ক্রমশ
  • শঙ্খ | 671212.206.012323.42 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৬377747
  • বাহ। পে ব্যাক টাইম।
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:১৮377749
  • 'ইন্দ্রলেখা ক্লিওপেট্রা ভট্টাচার্য, লিখছেন নরকন্দিনী। বাংলায় মন্দ ভুতের অভাব পূরণে ইনি হয়ত একদিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন। খুবই পাকা হাত, জমাটি লেখা'

    - ভাটে লিখেছিলাম, বাংলা সাহিত্যে মায়াবী, ভাল ভুত তাও পাওয়া যায় (ত্রৈলোক্যনাথ, উপেন্দ্রকিশোর, শীর্ষেন্দু ইঃ) কিন্তু মন্দ, পাজি ভুত বিরল, এই প্রসঙ্গে। এখানেও থাক।

    বড় ভাল লিখছেন। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসুক।
  • Indralekha Bhattacharya | 2345.110.454512.27 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫১377750
  • #নরকনন্দিনী~১৩ নং ভাগ~

    অপূর্ব এই পারিবারিক মিলনদৃশ্যের সাক্ষী রহিলেন বিস্মিত ও চমৎকৃত যদুনাথ সেন। যাহা হউক, একসময় সকল ধাতস্থ হইলে যোগী তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্রকে পার্শ্বে কুশাসনে, ও যদুনাথকে সম্মুখস্থ এক অতিথির আসনে উপবেশন করাইয়া এক যজ্ঞ আরম্ভ করিলেন, ও যজ্ঞশেষে নির্বাপিত কুণ্ড হইতে ভস্ম লহিয়া পাঁচকড়ির ও স্বীয় ললাটে তিলকের ন্যায় লেপন করিলেন। অতঃপর তাঁহার সাধনসামগ্রী দ্বারা পরিপূর্ণ ঝোলা হইতে একটি নাতিদীর্ঘ ছুরিকা বাহির করিলেন। তাহার বৃন্তটি রৌপ্যনির্মিত। যজ্ঞস্থলের তৈলসিন্দুর লহিয়া নিম্নস্বরে মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে যোগীবাবা তাঁহার দক্ষিণহস্তের অনামিকার শীর্ষভাগ দ্বারা ছুরিকার জিহ্বায় এক বিন্দু অঙ্কন করিলেন। অতঃপর উহা যথাক্রমে স্বীয় ও পাঁচকড়ির 'ললাটে ছোঁয়াইয়া পাঁচকড়ির হস্তে ঊহা প্রদান করিলেন। রায়বাহাদুর কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হইয়া খুল্লতাতের দিকে তাকাইলে পর যোগী কহিলেন, "ওরে পাঁচু, এই ছুরিটেই একন তোকে আর তোর পরিবারকে শয়তানের হাত থেকে রক্কে করবে। এইটে তোকে ওই খুকীর বুকে, বা পেচুন দিক হতে, তার পিটে গেঁতে দিতি হবে। তবে খবোদ্দার, সেসময় যেন তোর কানে কোনো কাকের ডাক না যায়। তেমন ভয় হলি, কানে তুলো গুঁজি এ কাজ করবি। চাই কি আঘাত করার মূহুর্তে যদি ভয় হয়, যদি তার চোকে চোক না রাকতে পারিস, তবে চোক বুঁজি নিবি। তবু এ কাজ ঠিকমতো হওয়া চাই। হত্যের পর তার শরীর আপনা হতেই মাটিতে মিলিয়ে যাবে। তাই একবার মা কালীর নাম নে, ছুরির কোপ মারতি পারলে আর কোনো চিন্তে নাই।" রায়বাহাদুর ইহা শুনিয়া কিয়ৎক্ষণ হতভম্ব হইয়া একবার ছুরিকার দিকে, একবার খুল্লতাতের দিকে চাহিতে লাগিলেন। তৎপরে শুষ্ক ও দ্বিধাজড়িত কন্ঠে যোগী খুড়াকে প্রশ্ন করিলেন, "অর্থাৎ ও খুকীটাকে আমি খুন করবো?! কিন্তু তারপর?! তার বাপ কি জানতে পারলে আমায় ছেড়ে দেবে? সে বামুন যদি পুলিশ চৌকিতে যায়?! তকন তো আরেক ঝামেলায় পড়বো, ছোটকাকা!" ইহা শুনিয়া সন্ন্যাসী মৃদু হাসিলেন। তাহার পর পাঁচকড়ির স্কন্ধে হাত রাখিয়া কহিলেন, "ওরে পাঁচু, ও খুকী যে কোনো খুকী নয়, কেবল মাটির গর্ভ হতে উটে আসা তালতাল অন্দোকারের মালিক, তা বুজিসনি একুনো?! অন্দোকারের আবার বাপ মা কে রে!! এ ছুরি যে আলোর ছুরি। আলো পড়লিই সব অন্দোকার কেটি যাবে। অন্দোকার তোর পরিবারের মাতায় চেপিচে। তাই সে তোকে খুকীর বাপের মিছে গপ্পো বানিয়ে বলিচে। আর দেরী করিসনি। আরো বড় ক্ষতি হওয়ার আগে এ অন্দোকারের ভূতকে ঘাড় হতে নামা পাঁচু। সর্বমঙ্গলা কালী মা তোর মঙ্গল করবেন। কিচু ভয় নেই।

    ~ ক্রমশ~
  • শঙ্খ | 2345.110.125612.139 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২৯377751
  • অতি অল্প হইলো।
  • সুকি | 348912.82.2323.227 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৩৪377752
  • এ লেখা খুব ভালো হচ্ছে।
  • de | 90056.185.673423.57 | ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৪377753
  • একটু বেশী করে লিখুন না প্লীজ - এতো ভালো হচ্চে -
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০১377754
  • #নরকনন্দিনী~১৪ নং এবং অন্তিম ভাগ~
    সাধক খুল্লতাতের নিকট এইরূপে বরাভয় লাভ করিয়া পাঁচকড়ি অন্তরে কথঞ্চিৎ হৃত সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়া পাইলেন, এবং কার্যসাধনের সকল বিধি পুনরায় উত্তমরূপে শিখিয়া লহিয়া যদুনাথকে সঙ্গ লহিয়া একবার হাসপাতালে ফিরিয়া সেথায় ডাক্তারসাহেবের কাছ হইতে বিধিমতে বিদায় ও ডিসচার্জ লহিয়া, অপেক্ষমান পালকিবেহারাগণকে ডাকিয়া লহিয়া সকলকে লহিয়া আপন ভদ্রাসন, অর্থাৎ চম্পাবনি অভিমুখে রওয়ানা দিলেন। তবে যাইবার পথে যদুনাথকে একেবারে তাঁহার দাওয়াখানার নিকট সসম্মানে নামাইয়া দিয়া, তাঁহার নিকট বিনয়বচনে বিদায় লহিয়া তবে যাহিলেন। যদুনাথও প্রকৃত সুহৃদের ন্যায় তাঁহাকে সর্বকার্য সতর্কভাবে করিতে ও স্বয়ং সাবধানে রহিতে বারংবার অনুরোধ করিলেন। বাটিতে পঁহুছিয়া রায়বাহাদুর দেখিলেন তাঁহার পত্নীসমেত সকলেই পূর্বেই বটুক বেহারার মুখে প্রায় সকল সংবাদ পাহিয়া অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া তাঁহার প্রতীক্ষায় রহিয়াছে। কিন্তু যেইহেতু তাঁহার সেইদিবসই দ্বিপ্রহরের মধ্যে আসিয়া পড়িবার তেমন স্থির কোনো সূচি ছিলনা, সেইহেতু কিঞ্চিৎ বিস্ময় মিশ্রিত হওয়ায় বাটির আনন্দ দ্বিগুণ হইল। ইতোমধ্য পিতার অসুস্থতার সংবাদ পাহিয়া রায়বাহাদুরের দুইটি পুত্রই কলিকাতার মাতুলালয় হইতে কনিষ্ঠ মাতুলের সহিত গৃহে আসিয়া পড়িয়াছে। তাহাদিগকে দর্শন করিয়া, ও আলিঙ্গন করিয়া ভূস্বামীর বক্ষ দীর্ঘদিন পর অতিশয় শীতল ও হৃদয় উৎফুল্ল হইল। তাহাদিগকে নিকটে বসাইয়া নানা কুশল খবর লহিতেছেন, এমন সময়ে বিধুসুন্দরী আসিয়া স্বামীর পদধূলি লহিয়া তাঁহার নিকট এক বৃহৎ কাংস্যনির্মিত পানপাত্রে বেলের শরবৎ রাখিলেন। পুত্রদুইটি মাতাপিতার বাক্যালাপের অবসর দেখিয়া তাঁহাদের নিকট আজ্ঞা লহিয়া অপর কক্ষে যাহিয়া তাহাদের নবলব্ধ দত্তক শিশুভগিনীটিকে লহিয়া খেলাইতে গেলো। খুকীটি ইতোমধ্যই তাহাদের পরম আদরের নয়নের মণি হইয়া উঠিয়াছে দেখিয়া পাঁচকড়িবাবুর ললাটে গভীর চিন্তার যে ঈষৎ কুঞ্চন খেলিয়া গেলো বিধুসুন্দরী তাহা দেখিতে পাহিলেন কিনা তাহা বুঝা গেলোনা। বিধুসুন্দরী স্বামীর নিকটে বসিয়া প্রগাঢ় প্রেমময় কণ্ঠে কেবল একথা সেকথা, সকল কথা সবিস্তারে জিজ্ঞাসা করিতেই ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। পাঁচকড়ি আপাত স্নেহভাবে ও প্রশ্রয়ের সহিত, আবার যথা সাবধানে, খুল্লতাত-নির্দেশিত সূক্ষ্ম আবরণ ও অন্তরাল বজায় রাখিয়া পত্নীর সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়া যাহিতেছিলেন। এইরূপে মিলনে, ব্যবধানে তিনি পরিবারের সহিত দুই দিবস অতিবাহিত করিলেন। দুই পুত্রের সঙ্গ পাহিয়া তাঁহার মন যত বিগিলিত হইতে ছিলো, অপরদিকে তাহাদিগের সুরক্ষা চিন্তায় মস্তিষ্ক ততোই সন্ত্রস্ত, সতর্ক ও উৎকণ্ঠ হইয়া উঠিতেছিলো। কিন্তু যাহা হউক উপযুক্ত তিথি-নক্ষত্র ও বারের সহাবস্থানের রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষায় পাঁচকড়ির আরো দুইতিনদিন কাটিয়া গেলো। অবশেষে এলো সেই অমোঘ ও মোক্ষম দিন ও প্রহর। সেইদিবস বিধুসুন্দরী রসুইকক্ষে কিঞ্চিৎ ব্যস্ত রহিয়াছিলেন। দুইটি পুত্র অনেকদিনপরে গৃহে মাতার নিকট আসিয়া এটা ওটা খাইবার জন্য বাইন করিতেছিল। তাহাদের মুখে উত্তম ও রুচিকর নানাবিধ ব্যঞ্জন-মিষ্টান্নাদি তুলিয়া দিবার নিমিত্ত তাহাদিগের মাতাও ততোধিক উন্মুখ হইয়া থাকিতেন। খুল্লতাত-নির্দেশিত আনুষঙ্গিক পূজাবিধি পাঁচকড়ি বিধুসুন্দরীর ও অন্য সকলের চক্ষুকর্ণের অগোচরে, সম্পূর্ণ একান্তেই সম্পন্ন করিয়াছিলেন। রসুইকক্ষটি ভিতরবাড়ি হইতে সামান্য পৃথক অবস্থানে ছিলো। ভিতরবাড়িতে যে কক্ষটিতে দুই খোকা গৃহে আসিলে রাত্রিকালে তাহাদিগের মাতার সহিত শয়ন করিত, খুকীটিকে সেইখানেই একটি দোলনা টাঙ্গাইয়া শয়ন করানো হইয়াছিল। পাঁচকড়ি এযাবৎ আপন হৃদয়ে রুদ্ধশ্বাস উৎকণ্ঠা এবং অটলসঙ্কল্প থাকিয়া নির্ধারিত পথে অগ্রসর হইয়া যাইবার মরিয়া প্রয়াস, এই দুই বিপরীতধর্মী অনুভূতির সঙ্ঘাতে অত্যন্ত জর্জরিত, ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। তাঁহার চরম লক্ষ্যকে উত্তমরূপে একটিবার নিরীক্ষণ করিয়া লহিবার অবকাশও তিনি পাহেন নাই। অদ্য তাঁহার শিকারের প্রস্তুতি যখন একপ্রকার সমাপ্ত হইবার মুখে, তখন কীরূপ এক ইচ্ছা হওয়ায় তিনি খুকীর শয্যাপার্শ্বে আসিয়া ক্ষণকালের নিমিত্ত তাহাকে দেখিয়া লহিয়া কার্যের সুযোগ ও অসুবিধাদি পরিমাপ করিয়া লহিবার মানসে লঘু পদক্ষেপে আসিয়া সে কক্ষে উঁকি দিলেন। তৎক্ষণাৎ তাঁহার বুকের সমস্ত রক্তপ্রবাহ যেন একলহমায় থমকিয়া থামিয়া গেলো। খুকীর দোলনার প্রান্ত ধরিয়া তাহার শিয়রে ও কে দাঁড়াইয়া আছে!! সেই তীর্যক, সুন্দর, ঘনপল্লবিত নেত্রদ্বয়, সেই ঈষৎ স্ফূরিত, পেলব ওষ্ঠাধর, সেই কুঞ্চিত, পিঙ্গল, স্কন্ধের উপর অবিন্যস্তভাবে পতিত অবগুণ্ঠনহীন কেশরাশি! সুন্দর গ্রীবা, চিবুক ও দুই গভীর চক্ষের দৃষ্টিতে সেই ব্রীড়াহীন, উদ্ধত ভাব লহিয়া রায়বাহাদুরের দিকে একদৃষ্টে তাকাইয়া দাঁড়াইয়া আছে কুসুম! না না! তা কী করে হয়! তাকে তো শ্রাবণমাসের সেই রাত্রে তিনি নিজের হাতে..শিহরিয়া উঠিয়া রায়বাহাদুর তড়িঘড়ি তাঁহার পরিহিত ফতুয়াটির পকেটে সযত্নে রক্ষিত খুল্লতাতপ্রদত্ত দেবীর জবাপুষ্পটি স্পর্শ করিয়া পুনরায় চাহিতেই কুসুম অন্তর্হিত হইয়াছে। চক্ষুর ভ্রম! মায়া! কল্পনা! পাঁচকড়ি কাঁপিতে কাঁপিতে সেই কক্ষ ত্যাগ করিলেন, এবং আপন কক্ষে পঁহুছিয়া ধপ করিয়া পালঙ্কে স্বীয় শয্যাপ্রান্তে বসিয়া হাঁপাইতে লাগিলেন। কিন্তু তিনি অধিক অবসর পাহিলেননা। কারণ মুহূর্তকাল মধ্যই বৈঠকের বড়ঘড়িতে ঢঙ ঢঙ করিয়া দ্বিপ্রহর দুইটার ঘণ্টা বাজিল। অর্থাৎ হত্যার লগ্ন লাগিল। রায়বাহাদুর যন্ত্রচালিতের ন্যায় উত্থিত হইয়া তাঁহার ফতুয়ার অন্তর্দেশে, কটীতে বাঁধা ধুতির খুঁটে গুঁজিয়া রাখা ছুরিকাটির বৃন্তদেশ দৃঢ়্মুষ্টিতে ধরিয়া টানিয়া বাহির করিয়া ছুরিকা হস্তে খুকীর শয়নকক্ষের উদ্দেশে ধাবমান হইলেন। খুল্লতাত বলিয়াছেন লগ্ন লাগিলে পর একমুহূর্ত প্রতীক্ষা না করিতে। খুকীর শয্যার ঠিক সম্মুখে তাহার চক্ষুতে চক্ষু রাখিয়া এক দাঁড়াইয়া মনে কালীনাম জপিয়া দুইহস্তের দৃঢ়সংবদ্ধ মুষ্টিতে ছুরিকা ধরিয়া একবার তাহা উপরে উঠাইয়া যেমন কোপ দিতে যাহিবেন, অমনি সেই মানবশিশু তাঁহার দিকে কেমন একরূপ বক্র, বিদ্রূপপূর্ণ হাস্যের সহিত চাহিয়া অবিকল কাকের ন্যায় কা কা করিয়া ডাকিয়া উঠিল। আতঙ্কিত রায়বাহাদুরের কর্ণে তাহা যেন কোনো নরকোত্থিত আদিম অশুভ হুঙ্কারের ন্যায় প্রবেশ করিয়া তাঁহার দুইকর্ণে তালা লাগাইয়া দিলো। তৎক্ষণাৎ বজ্রপাতের শিকার ব্যক্তি যেমন অন্তিমকালে মৃত্যুস্বরূপা সৌদামিনীর তীব্র আলোকের ঝলক দেখিতে পায়, ঠিক তেমনই খুল্লতাতের তাঁহাকে বলা কাকের ডাক শ্রবণসম্পর্কীয় নিষেধাজ্ঞা তাঁহার মনে এক ঝলক তুলিয়া যাহিল। কিছুসময় পূর্বে তাঁহারই হস্তে বিশবৎসর পূর্বে নিহতা, তাঁহার অতীতপ্রণয়িণী কুসুমবালাকে দেখিয়া ভীত, বিভ্রান্ত হইয়া তিনি কর্ণে তুলা গুঁজিতে বিস্মৃত হইয়াছিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এক ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ানুভবে বুঝিয়া গেলেন যে, তাঁহার কার্যে বিঘ্ন পড়িয়াছে। ইহা বুঝা মাত্র ভয়ে দুইচক্ষু মুদ্রিত করিয়া, শরীর ও মনের সর্বশক্তি প্রয়োগ করিয়া তাঁহার দুইহস্তে ছুরিকা যেমন স্থিরলক্ষ্যে, উদ্যত অবস্থানে থমকিয়া থামিয়া গিয়াছিল, তথা হইতেই সোজা তড়িৎবেগে নিম্নে আনিয়া শিশুর বক্ষদেশে কোপ মারিলেন। কিন্তু আঘাতের সঙ্গ সঙ্গ যে আর্তনাদ ধাইয়া আসিয়া তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল তাহা কোনো শিশুর নয়। দুই বিস্ফারিত, আতঙ্কিত চক্ষু মেলিয়া পাঁচকড়ি দেখিলেন শিশুর শরীরের উপরে তাহাকে আবৃত করিয়া উপুড় হইয়া লুটিয়া পড়িয়া আছেন বিধুসুন্দরী। ছুরিকা তাঁহার পৃষ্ঠদেশে, একেবারে মেরুদণ্ডে গাঁথিয়া গিয়াছে। রুধিরের নদী বহিয়া যাহিতেছে। ও চারিপার্শ্ব হইতে গৃহের লোকজন, দুই পুত্র, দাসদাসী গণ আতঙ্কিত কণ্ঠে হাহাকার ও আর্তনাদ করিতেছে। আশ্চর্য! বিধু কখন ছুটিয়া আসিয়া তাহার খুকীকে বাঁচাইতে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল তিনি তো দেখেন নাই। জ্ঞান হারাইয়া ভূপতিত হইবার পূর্বে পাঁচকড়ি দেখিলেন, বিধুসুন্দরীর রক্তস্নাত হইয়া যেন দ্বিগুণ আনন্দে সে খুকী তাঁহার দিকে চাহিয়া দুই চক্ষু মটকাইয়া খিলখিল হাসিতেছে, এবং হস্তপদ নাড়াইয়া খেলিতেছে। তাহার পর পাঁচকড়ির চক্ষুর সম্মুখে সকল অন্ধকার হইল।
    পাঠকগণ যদি অদ্যাপি এইকাহিনীর শেষাংশ শ্রবণ করিবার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে তাঁহাদিগের শান্তির ন্যায় এইটুকুও বলিয়া দিই, বিধুসুন্দরীর হত্যার দায় হইতে রায়বাহাদুর এযাত্রা আর বাঁচিতে পারেন নাই। তাঁহার শ্বশুরমহাশয় কোনরূপ অন্তর্ঘাত সন্দেহ করিয়া, এবং দুই দৌহিত্রের মুখ চাহিয়া আদালতে জামাতার পক্ষ লহিলেও তাঁহার সমর্থনে রায়বাহাদুরের তেমন উপকার হয় নাই। তাঁহার মানসিক ভারসাম্য গভীর আঘাতে বিনষ্ট হইয়াছিল, এবং বাকরুদ্ধ হইয়াছিল। আআত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি কোনো কথাই কহিতে পারেন নাই। মোটের উপর বিচারের শেষে ইংরাজের আদালতে তাঁহার ফাঁসি হইল। আতঙ্কিত বিহ্বল দাসদাসীগণ ও সদ্যমাতৃহারা শোকস্তব্ধ, হতভম্ব দুই পুত্রের দ্বারা রায়বাহাদুরের রক্ষার্থে কোন কথা বানাইয়া তোলা সম্ভব হইলনা। ভূস্বামীর ফাঁসির পর তাঁহার জমিদারির সকল দায়িত্ব, ও দুই মাতৃপিতৃহারা নাবালক পুত্রের সাবালক হওয়া অবধি তাহাদের অভিভাবকত্বের সম্পূর্ণ ভার তাহাদিগের মাতুলালয়ের উপর আসিয়া পড়িল। কর্তা ও কর্ত্রী উভয়েরই মৃত্যু হওয়ায় গৃহের অধিকাংশ দাসদাসী বিদায় লহিল। কেবল দুই চারিজন পুরাতন ভৃত্য ও দাসী রহিয়া গেলো, যাহাদের বেতনাদি মাস যাহিলে নায়েবমহাশয় মাতুলপক্ষের অনুমোদন লহিয়া প্রেরণ করিতেন। মাতুলগণ সপ্তাহান্তে আসিয়া কাছারীর কার্য ও হিসাবপত্র দেখিতেন। কিন্তু অনাথ খুকীটির দায়িত্ব তাঁহারা লহিতে চাহিলেননা। অভিভাবকহীন শূণ্যগৃহেও তাহাকে রাখা অসম্ভব। জমিদারপুত্র দুইটি শিশুটিকে পালন করিবার উপযুক্ত বা হইলেও তাহারা দত্তক শিশুভগ্নীটিকে ভালোবাসিয়া ফেলিয়াছিল। অতএব সকলে যুক্তি করিয়া নায়েবমহাশয়ের দূরসম্পর্কের এক নিঃসন্তান ভগ্নী ও ভগ্নীপতিকে শিশুটি দত্তকরূপে প্রদান করিলেন। এইভাবে শিশুটিরও মঙ্গলসাধন হইল, আবার এমন একটি পরিচিতির বৃত্তের মধ্য সে রহিল যেখানে ভূস্বামীপুত্রগণ ইচ্ছা করিলেই তাহাকে দেখিয়া আসিতে পারিবে। সহস্র হউক সে কন্যাটি তাহাদের পরলোকগতা মাতার একটি অতি প্রিয় স্মৃতিচিহ্ন ব্যতীত নহে। সকল বিধি সাঙ্গ হইল। পুরাতন স্মৃতি ভুলিয়া যে যাহার জীবনচর্যায় পুনরায় ব্রতী হইল। শুধুমাত্র দুইটি বিসদৃশ ব্যাপার ঘটিল এই, যে, ইহার মাস খানেক পশ্চাৎ হইতে মাত্র এক এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইটি মানুষের রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হইল। আর দুই সপ্তাহের মধ্য আর একটি তৃতীয় ব্যক্তি যেন ধরাধাম হইতে চিরতরে অন্তর্হিত হইয়া গেলো। তাহারা হইল, যথাক্রমে চিকিৎসক যদুনাথ সেন, সন্ন্যাসী বলাই লাহা, এবং তৃতীয় স্থানে সদরের ডাক্তারসাহেব থমাস বেকার। তাঁহার সন্ধান তো আর কেহ কোনোদিনই পাহিল না।
    ~~~সমাপ্ত।
  • amit | 340123.0.34.2 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৪377755
  • দারুন টুইস্ট হলো শেষে, একদমই এরকম কিছু একটা ভাবতেই পারিনি। পুরো গল্পটা তো দারুন হয়েছেই, কিন্তু এ রকম ভাষার ওপর অসাধারণ দখল এর জন্য লেখিকা কে কুর্নিশ রইলো। বিশেষ করে চরিত্র গুলোর মুখে মুখে যে কথা গুলো উনি বসিয়েছেন, ১৫০ -২০০ বছর আগের এটাই বোধহয় বাংলার গ্রামে গঞ্জে অবিকল কথ্য ভাষা ছিল, মানে পুরোনো বই পত্তর পড়ে অল্প যেটুকু মনে হয় আমার। অনেকে আরো ভালো জানবেন।

    অনেক দিন পরে একটা ধারাবাহিক গল্প এতো আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে করে পড়া হলো। আরো তাড়াতাড়ি পর্বগুলো এলে হয়তো আরো ভালো লাগতো, কিন্তু ভালো গল্পের জন্য একটু অপেক্ষা করাই যায়।

    আরো লেখার আশায় থাকলাম।
  • Du | 237812.58.121212.106 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৬377756
  • মাস্টার গল্পকার। সাধু সাধু!!
  • রিভু | 450112.191.564523.191 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১১377757
  • একটু তাড়াহুড়োয় শেষ হলো যেন। কিন্তু সত্যিই খুব ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে করে পড়েছি।
  • ..... | 342323.233.6712.3 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:০৯377758
  • সিকোয়েল আসবে?
  • Indralekha Cleopatra Bhattacharya | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৪০377760
  • সকল পাঠককে জানাই অশেষ ধন্যবাদ ও ভালোবাসা। আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও অনুপ্রেরণা না পেলে এধরণের একটি প্রজেক্ট কিছুতেই সুষ্ঠুভাবে বহন বা সম্পন্ন করতে পারতামনা। নরকনন্দিনীর চলার পথ সুগম ছিলোনা। শুধু আপনাদের অনুপ্রেরণাতেই এ গল্প এতদূর টানতে পেরেছি। সিকোয়েল লেখার কথা হয়ত আগামীদিনে ভাববো। এভাবেই সর্বদা পাশে থাকার অনুরোধ করি। ভালোবাসা পুনশ্চ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন