এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১১:৪৬380192
  • দুটো রিভিউ জমা দিতে হবে, তাড়া দিচ্ছে। সেগুলো সেরে আসছি।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৩৯380193
  • ঝটকা সামলে লরি ড্রাইভার আর চা-দোকানীর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম সেইটা হল এই রকম -

    আমরা ভাগলপুর থেকে পঁচিশ কিলোমিটার মত দূরে। সামনে দুটো রাস্তা আছে - এক, ওই পথেই এগিয়ে ভাগলপুর হয়ে মোকামা পৌঁছে গঙ্গা পার হওয়া - সেক্ষেত্রে আরো অনেকটা পশ্চিমে যেতে হচ্ছে, ফের আবার পূবদিকে ঘুরে পূর্ণিয়া যেতে হবে; আর দুই, কিছুটা পিছিয়ে বাঁদিকে গোড্ডা বলে একটা জায়গার ডিরেকশন পাওয়া যাবে - সেই রাস্তা ধরে গেলে পাকুড় পেরিয়ে ধূলিয়ানে গিয়ে ফের ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪ (গুগুলের বক্তব্য অনুযায়ী ন্যাশনাল হাইওয়ে ১২) পাওয়া যাবে। সেই রাস্তা কিছুদিন আগে অবধি বন্ধ ছিলো, সদ্য খুলেছে, আশা করা যায় আমরা পেরিয়ে যেতে পারবো। এছাড়া উপায় হল দুমকা অবধি ফেরৎ যাওয়া - মানে আরো অনেক বেশি উল্টো পথে ঘোরা আর সময় নষ্ট। দেবাশিসকে ফোন করলাম - ও শুনে গোড্ডার রাস্তাটাই সাজেস্ট করলো। ম্যাপে দেখলাম - ধূলিয়ান প্রায় ১৬০ কিলোমিটার, লরি ড্রাইভার বললো ঘন্টা চারেক লাগতে পারে। গুগুল ম্যাপও দেখলাম বলছে সাড়ে চার ঘন্টা। অর্থাৎ, সেদিন সকালে বেরনোর সময় যে দূরত্বটা ছিলো ৫০০কিলোমিটার (বারো ঘন্টার ড্রাইভ), সেইটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৭৩ কিলোমিটার, প্রায় আঠারো ঘন্টার জার্নি! কিন্তু উপায় তো নেই। ছিলো রুমাল, হয়ে গেলো একটা বেড়াল।



    অগত্যা গাড়ি উল্টোদিকে ঘুরলো। যে জায়গাটায় আমরা পৌঁছেছিলাম, সেটার নাম হাতপুরৈনী (Hatpuraini/हातपुरैनी)। উল্টোপথে কিছুটা গিয়ে পড়লো পঞ্জওয়ারা/গোড্ডার রাস্তা। আরো এক প্রস্থ লোকজনকে জিজ্ঞেস করে ঢুকে পড়লাম - সেটা সম্ভবত স্টেট হাইওয়ে ৮৪।

    লরি ড্রাইভার কেন "আশা করছিলো যে আমাদের গাড়ি চলে যাবে" সেটা বোঝা গেল খানিকটা। সেই প্রথমবার গাড়ি নিয়ে চিলিকা গেছিলাম যখন, তখন স্থানীয় লোকজন পুরী যাওয়ার একটা শর্টকাট বাতলেছিলো - সেই পথে গিয়ে হাল বেহাল হওয়ার যোগাড় হয়েছিলো সেবার - খানাখন্দ ভর্তি, আর একদিন ধরে রাস্তা বাঁধানোর কাজ চলছে - রাস্তার দুটো দিকের উচ্চতার মধ্যে ফুটখানেকের তফাৎ। এও একই অবস্থা। কিছুদূর পরে পরেই ডাইভার্সন - সেটা নীচে কালভার্টের তলা অবধি নেমে গর্ত পেরিয়ে আবার ওপরে উঠছে - এর মধ্যেই বাস, অটো (সেও জাম্বো অটো), লরি, কনস্ট্রাকশন ভেহিকল - সবই চলছে। গতিক নাই, আমরাও চল্লুম। গোড্ডা পেরিয়ে রাস্তাটা ঠিকঠাক হল। তখন আমরা ঢুকছি সুন্দরপাহাড়ি বলে একটা জায়গায়...

    সুন্দরপাহাড়ি জায়গাটা বেশ মিষ্টি মতন। ঝাড়খন্ডের এই অঞ্চলটা হল রাজমহল পাহাড়ের অংশ - সাঁওতাল পরগনা বললে আরো চেনা লাগবে। ছোটনাগপুর মালভূমির কাছাকাছি হলেও দিব্যি সবুজে ঢাকা, রুক্ষ নয়। হয়তো গঙ্গার অববাহিকার মধ্যে থাকার কারণেই। ঋকের প্রিয় সাবজেক্ট ছিলো ভূগোল - গড়গড়িয়ে কিছু রানিং কমেন্টারি দিয়ে গেলো - রাজমহল পাহাড়ের এই পাহাড়গুলো জুরাসিক আমলের, অগ্নুৎপাতের কারণে তৈরী, সাঁওতাল পরগনার উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রয়েছে, এখানেই গঙ্গা তার গতিপথ বদলে দক্ষিণ থেকে পূর্বদিকে যাওয়া শুরু করে; পাহাড়ের ওপরদিকে থাকে পাহাড়িয়া উপজাতিরা, আর নীচে উপত্যকা অঞ্চলে সাঁওতালরা - যাদের জীবিকা চাষবাস।

    রাস্তাটা এখানে বেশ নির্জন। উল্টো দিক থেকে কচ্চিৎকখনো দু একটা গাড়ি আর রাস্তার পাশের ঘন শালবনে শুকনো পাতা বা কাঠ কুড়োতে আসা কিছু সাঁওতাল মেয়ে ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, নিঝ্ঝুম জঙ্গল দুপুরে ঘুমিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে একটা উঁচুনীচু রাস্তা এগিয়ে গেছে - মাঝে মাঝেই চড়া বাঁক...

    সুন্দরপাহাড়ির পরে জোলো, যোগেশ্বর, লিটিপাড়া, হিরণপুর পেরিয়ে পাকুড়। পাকুড়ে এসেই রাস্তাটা কেমন আবার ঘিঞ্জি হয়ে গেলো। গাদা গাদা লরি, অটো, বাস। মাঝে মাঝেই লম্বা লরির লাইন। এদিকে সেদিন আর আমাদের হাতে সময় নেই বলে উল্টো লেন দিয়েই মাঝে মাঝে এগোচ্ছি। বাজার মত একটা জায়গা পেরিয়ে আরো কিছুটা যেতেই দেখলাম সামনেই হাইওয়ে - ন্যাশনাল হাইওয়ে ১২ (বা ৩৪) - যেখান থেকে আমাদের আবার বাঁদিকে হাইওয়ে ধরে চোলে যেতে হবে ফারাক্কার দিকে।

    ওই মোড় থেকে ফারাক্কা আরো আঠারো কুড়ি কিলোমিটার মত। কিন্তু ওখান থেকেই ৪-লেন হাইওয়ের বাঁ দিকের পুরোটাই বন্ধ করে লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে। শ'য়ে শ'য়ে, বা হাজারে হাজারে। ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটে বাজে, টিলাবাড়ি আরো প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার...
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৪৭380194
  • ফারাক্কায় আপাতত ওয়ান-ওয়ে একটা সিস্টেম চালু করেছে। আধ ঘন্টা করে মালদার দিক থেকে আসা গাড়ি ছাড়া হচ্ছে, আধ ঘন্টা করে দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার গাড়ি। সেটা ছাড়াও, এনএইচ ৩৪ (বা ১২) তেও চতুর্দিকে কাজ হচ্ছে, ফলে অনেক ডাইভার্সন, খোঁড়াখুঁড়ি। যেমন, ফারাক্কায় ঢোকার আগে একটা ব্রীজ পেরোতে হয় - টেম্পোরারি ব্রীজ - সেটাও ওয়ান ওয়ে, কিন্তু সেখানে দুদিকে গাড়ি আটকানোর জন্যে কেউ নেই। ইন ফ্যাক্ট, আমাদেরই ব্রীজে কিছুদূর উঠেও পিছিয়ে আসতে হল - কারণ উল্টোদিকে বাস উঠে এলো - আর জানেনই তো, হাইওয়েতে (আসলে ভারতের সব রাস্তাতেই) সাইজ ম্যাটারস - রাইট অফ দ্য ওয়ে (right of the way) বস্তুটি এখানে নেই।

    ঘটনাচক্রে, এবং কিছুটা এদিক ওদিক দিয়ে নাক গলিয়ে (সচরাচর এই কাজগুলো নিজে করি না, কিন্তু সেদিন লাটাগুড়ি পৌঁছনোর জন্যে যা থাকে কপালে করে চালাতে হয়েছে) একটা আধ ঘন্টার ফ্লো-এর মধ্যে ঢুকে ব্যারেজে উঠে পড়লাম। এইবার পুরো ব্যারেজটাই ঢিকির ঢিকির। প্রায় আড়াই কিলোমিটারের ব্যারেজ - যতক্ষণ লাগলো, হেঁটে গেলেও মনে হয় তার চেয়ে কম সময়ে পৌঁছে যেতাম। তবে লোকে কেন ফারাক্কা ব্যারেজের রাস্তাকে গাল দেয় সেটা স্পষ্ট বোঝা গেল - মানে ওখানে ঠিক রাস্তা মলে কিছু নেই। অসংখ্য উঁচুনীচু পিচের বাটিকে কেউ যদি সিমেন্ট দিয়ে জুড়ে রাখে তাহলে যা হবে, ফারাক্কার অবস্থা তাই। আসলে গর্ত দিয়ে তৈরী বললেই হয়। লীলা মজুমদারের টংলিং এ যেমন সেই পাঁউরুটি দেখে বলেছিলো - পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কতগুলো ফুটো জুড়ে জুড়ে তৈরী...

    এর কিছুদিন আগেই মাঝেরহাট ব্রীজ ভেঙে পড়েছে - অতএব, চতুর্দিকে সাজো সাজো রব (গত সাত বছরে কী করছিলেন সেই প্রশ্ন করা যায় না) - তাই ফারাক্কার একটা লেন বন্ধ করে পিচের লেয়ার খুঁড়ে তোলা হচ্ছে, অন্য লেন দিয়ে ওয়ান ওয়ে সিস্টেমে গাড়ি চলছে। শামুকের মতন গতিতে গড়াচ্ছে বললেই ভালো। আড়াই কিলোমিটারের ব্রীজ পেরোতে প্রায় আধ ঘন্টা। তুমুল ধুলো - জানলা খুলবেন তার উপায় নেই। রাস্তার পাশে রেললাইনের ধারে সংখ্যা লেখা রয়েছে - সম্ভবত মাইলস্টোন। কড়িকাঠ নেই বলে সবাই সেইগুলো গুণতে গুণতেই সময় কাটালো...কী আর করবে। এর মধ্যে দুটো ব্যাপার চোখে পড়লো।

    এক - লরি রাত ন'টার পরে ছাড়ার কথা হলেও, ওই দুপুরেও কিছু লরি ফারাক্কা পেরোচ্ছে। কীভাবে পেরোচ্ছে আন্দাজ করার জন্যে নকুলদানা নেই।

    আর দুই - পিচের লেয়ার কাটা হচ্ছে বড় পাওয়ার ড্রিল দিয়ে, তুমুল আওয়াজ আর ভাইব্রেশন। সেফটি রুল অনুযায়ী (এটা সুমনা দেখেই বললো, কারণ ওদের নানা দেশের কনস্ট্রাকশন প্রোজেক্ট হ্যান্ডল করতে হয়) ওই পাওয়ার ড্রিল কোনো মানুষের মিনিট পাঁচেকের বেশি একটানা ধরে থাকার কথা নয় - মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হয়। একাধিক লোকের পালা করে কাজটা করার কথা। এখানে হেলথ অ্যান্ড সেফটির এই নিয়মের কথা হয় কেউ জানে না, বা খরচ বাঁচানোর জন্যে নিয়মের তোয়াক্কা কেউ করে না। মানুষ এখানে বড়ই শস্তা।

    শেষমেষ সাড়ে তিনটের একটু আগে ফারাক্কা পেরিয়ে গেলাম; তারপর কালিয়াচক - ট্র্যাফিক জ্যামের জন্যে কুখ্যাত - সেটাও পেরোলাম খুব অল্পই দাঁড়িয়ে। দুপুরে খেতে হবে - সকালের পাঁউরুটি আর বালুসাই অনেকক্ষণ হজম হয়ে গেছে, আর যে পথে এসেছি সেখানে শালের গুঁড়ি ছাড়া খাওয়ার মত কিছু চোখে পড়েনি; তাছাড়া ফারাক্কা পার হওয়ার তাড়াও ছিলো। কালিয়াচক থেকে মালদা অবধি রাস্তা কখনো ভাঙা, কখনো মোটামুটি - আর ঠিকঠাক হোটেল ছাড়ুন, ধাবাও বিশেষ চোখে পড়ে না। তার মধ্যেই একটা ছোট হোটেলে রুটি-সবজি-ডিমভাজা খেয়ে আর ঋক/ঋতির খাবার প্যাক করে (ওরা দুজনে তখন পালা করে পাবজি নিয়ে ব্যস্ত বলে খাওয়ার সময় পায়নি) এগিয়ে পড়লাম। যেখানে সুযোগ পাচ্ছি, স্পীড বাড়িয়ে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করছি - এই জিনিসটাও সচরাচর করি না। মালদায় কতটা জ্যামে পড়বো তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলাম - কারণ দেবাশিসের কাছে ওর অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি আগে। ভাগ্যক্রমে, এবং সম্ভবত ফারাক্কার দৌলতে, মালদায় জ্যামে দাঁড়াতেই হল না প্রায়। মালদা শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূর অবধি রাস্তা ভালো - চওড়া চার লেন - সেখানেও গাড়ি দৌড় করানো যায়।

    তখনো ঠিক করে রেখেছি অন্ততঃ শিলিগুড়ি অবধি চলে যাই। যদি খুবই দেরী হয়ে যায়, শিলিগুড়িতে একটা কোনো হোটেলে দাঁড়িয়ে যাবো, টিলাবাড়ির রিজার্ভেশনটা না হয় নষ্টই হবে। আর যদি মনে হয় পৌঁছে যেতে পারবো, তাহলে টিলাবাড়িতে ফোন করে রাতের খাবারের কথা জানিয়ে রাখবো।

    বেশ কিছুটা রাস্তা একটু জোরে ছুটিয়ে কিছুটা সময় মেকাপ করে ছটার একটু আগে রায়গঞ্জ পেরোলাম। রোড ট্রিপের প্রাইমারি নিয়ম - যে প্রতি দুই থেকে তিন ঘন্টায় একবার দাঁড়ানো - সেদিনের মত ভুলে গিয়ে। ততক্ষণে বারো ঘন্টা পেরিয়ে গেছে আমি একটানা স্টিয়ারিং ধরে আছি - মাঝে ওই এক দু বার চা খেতে দশ মিনিট, আর দুপুরে খাওয়া আধ ঘন্টা বাদ দিলে...
  • সিকি | ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৩২380195
  • আহা, মালদায় জ্যাম পাও নি শুনে বেশ হিংসে হল। ঐ মেডিকেল কলেজের সামনেটা তো একদম মাখন হয়ে ছিল।

    রোড ট্রিপের নিয়ম দু থেকে তিন ঘন্টায় একবার দাঁড়ানো :( আমি সচরাচর ফটো তোলার দরকার না হলে বা তেল ফুরিয়ে না এলে দাঁড়াই না।
  • রোড ট্রিপের নিয়ম | 890112.171.013412.189 | ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪৬380196
  • ওটা করা উচিত।অল্প বয়েসে বুঝ্তাম না, কগনিশানের ওপর চাপ পরে, ড্রাইভিং কোয়ালিটি খারাপ হতে থাকে।
  • থানোসাসুর | 781212.194.013423.112 | ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪৯380197
  • Q: How often should I take a break when driving?

    A: The Highway Code recommends taking a break (of at least 15 minutes) every two hours. Two hours needs to be the maximum period of time without a break from driving i.e. take more frequent breaks if necessary and when you stop for a break change your position i.e. get out of your car, go for a walk.

    http://drivingergonomics.lboro.ac.uk/faq.html
  • amit | 340123.0.34.2 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৩৪380198
  • পুজোর বা দিওয়ালিতে হাইওয়তে আর একটা মেজর উৎপাত হলো গুচ্ছের চাঁদা পার্টি। যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা জ্যাম করে চাঁদা চায়।
  • dc | 232312.174.567812.196 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৫৪380199
  • ব্রেকের ব্যাপারটা জানতাম না। কিন্তু আমি তো টানা চার-পাঁচ ঘন্টা অনেক বারই চালিয়েছি, অসুবিধে হয়নি তো! তবে কখনো কখনো ইসে করার জন্য ব্রেক নিতে হয় অবশ্য।
  • থানোসাসুর | 561212.112.4578.134 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩৬380200
  • একটানা অনেকক্ষণ - চার পাঁচ ঘন্টা বা আরও বেশি - আমিও চালিয়েছি, কিন্তু হাতে অপশন থাকলে এটা এড়ানোই ভালো। এক এক জনের টেনাসিটি এক এক রকম হলেও, শরীর একটা আনপ্রেডিক্টেবল মেশিন, আর রাস্তায় অধিকাংশ অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে ক্লান্তির জন্যে - আর এই ক্লান্তিটা সবসময় বোঝা নাও যেতে পারে। সাধারণতঃ এই জন্যে ঘন্টা তিনেক পর পর আমি দাঁড়াই, একটু চা খাই, ইসে করি...
  • dc | 232312.174.567812.196 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৫০380202
  • ঠিক বলেছেন, এটা মাথায় রাখব। ধন্যবাদ।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১০:২৪380203
  • রায়গঞ্জ পেরিয়ে বালিহারা, মকদমপুর ছাড়িয়ে আসে আলতাপুর। এনএইচ ৩৪ (বা ১২) এখান থেকে সোজা চলে গেছে করণদিঘি ছাড়িয়ে ডালখোলা - এখানে পূর্ণিয়া থেকে আসা এনএইচ ২৭ আর এনএইচ ৩৪ মিশে যাচ্ছে - যেটা কিষণগঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ি যাচ্ছে। এই রুটটা বিহার-পশ্চিমবঙ্গ মিশিয়ে। গুগুল ম্যাপ আমাকে অন্য রাস্তা দেখালো - আলতাপুর থেকে একটা রাস্তা ডানদিকে ঢুকে গেছে - গুগুলের উচ্চারণ বুঝতে পারবেন না, কাজেই যদি কখনো এই রোড ট্রিপে যান, তাই মনে করে রেখে দিন - বোতলবাড়ি-রসখোয়া রোড - চলে যাচ্ছে সাবধান (ভয় নেই - এটা একটা জায়গার নাম), রুদেল, গোয়াগাঁও হয়ে একেবারে ধানতলা - যেখানে রাস্তাটা ফের ন্যাশনাল হাইওয়ের সাথে মেশে। প্রায় সত্তর কিলোমিটার রাস্তা, পুরোটাই উত্তর দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে। প্রথমদিন যে সেকমপুর-সাহাপুর রোড (ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৪) ধরে গুশকরা পেরিয়ে সিউড়ি এসেছিলাম? এই রাস্তাটাও সেরকমই। ধানক্ষেত, মাঠের মধ্যে দিয়ে পাক খেয়ে যাওয়া রাস্তা, মাঝে মাঝে দুপাশে ছোট ছোট গ্রাম পড়ছে, বা খুব ছোট ছোট বাজার - এই গ্রাম বা বাজারগুলোতে ঢোকা আর বেরনোর সময় হয় ছোট ছোট বাম্প, বা ব্যারিকেড - গাড়ির স্পীড কমানোর জন্যে। এই জনপদগুলো বাদ দিলে রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার - শুধু উল্টোদিকের গাড়ির হেডলাইট ছাড়া। অনেকেই আজকাল ডালখোলা এড়ানোর জন্যে এই রাস্তাটা ব্যবোহার করে - কারণ ডালখোলা পুরোপুরি আনপ্রেডিক্টেবল - আধ ঘন্টাতেও পেরোতে পারেন, তিন ঘন্টাও আটকে থাকতে হতে পারে। তবে বড় লরি এদিকে আসে না - ছোট গাড়ি, ছোট ম্যাটাডোর আর কিছু বাস।

    নীচে রুটটা দিয়ে দিলাম।



    কুয়াশা এদিন আরও বেশি। আর তার চেয়ে বড় সমস্যা উল্টোদিকের গাড়ির হাই বীমের হেডলাইট। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমি একবার করে হেডলাইটে ছোট ফ্লিকার মারলে উল্টোদিকের গাড়ির আলোও নেমে আসছে বটে, কিন্তু ঠিক পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে হাই বীম করে দিয়ে। কিছুক্ষণ পরে কারণটা বুঝলাম - নিজে এক দুইবার এক্সপেরিমেন্ট করে। এই কাজটা করে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিকের গাড়ির বাউন্ডারিটা দেখতে পাওয়ার জন্যে - যেটা সাধারণ হেডলাইটের আলোতে চাপা পড়ে যায় - যদিও এইটাও না করাই কাম্য। রাতে এরকম রাস্তায় চালানোর সেরা উপায় (যদি নিজেও যস্মিন দেশে যদাচার না করতে চান) হল উল্টোদিকের গাড়ির মাথার দিকে লক্ষ্য রাখা, আর নিজের বাঁদিকে রাস্তার বাউন্ডারি দেখে গাড়ি চালানো - আমি সাধারণতঃ ডানদিকে অল্প ঘুরে বসি - তাতে কিছুটা সুবিধা হয়।

    সেদিন যদিও অত টেকনিক্যালিটি ভাবার সময় ছিলো না। অন্ধকার নেমেছে, অন্য গাড়ির আলো ছাড়া পথে কোনো আলো নেই, তায় কুয়াশা, তায় বার বার চোখ ঘড়ির দিকে আর মোবাইলে অন করে রাখা গুগুল ম্যাপের দিকে যাচ্ছে। এস্টিমেটেড অ্যারাইভাল টাইম (টিলাবাড়িতে) তখন রাত সাড়ে দশটার কাছাকাছি। থ্যাঙ্কফুলি, টিলাবাড়ি ঠিক জঙ্গলের ভিতরে নয় যে গেট বন্ধ হয়ে যাবে - তাই দেরী হলেও ঢুকতে পারবো। কিন্তু পৌঁছতে পারবো কিনা, সেইটা বড় প্রশ্ন তখনও।

    ঘন্টা দেড়েক লাগলো এই সত্তর কিলোমিটার পার হতে। মাঝে শুধু একবার চা খেতে দশ মিনিট দাঁড়িয়েছি - সেদিনের মত শেষ স্টপ। ঠিক করে রেখেছি একেবারে টিলাবাড়ি পৌঁছে, বা নেহাতই না পারলে শিলিগুড়িতে দাঁড়াবো। এই স্টেট হাইওয়ের একদম শেষের দিকে - যখন গুগুল ম্যাপ বলছে "দুশো মিটার পর ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৭ এ ডানদিকে ঘুরতে হবে" - মানে যে রাস্তাটা ডালখোলা হয়ে এসেছে, সেটাতে। কিন্তু এই দুশো মিটার হেডলাইটের আলোয় যা দেখলাম, সেটা মোটামুটি চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মত। রাস্তা সিম্পলি নেই। হয়তো কোনো কালে ছিলো - শের শাহ এর আমলে - আপাতত পুরোটাই ঢেউ খেলানো পাথুরে জমি। একটা দুটো গাড়ি পেরোচ্ছে সামনে দেখতে পাচ্ছি - উত্তাল নদীতে দুলন্ত নৌকোর মত - রাস্তার বাঁদিক থেকে ডানদিক আড়াআড়ি গিয়ে গর্ত আর পাথরের পাশ কাটাতে কাটাতে।

    [পরে জানা গেছিলো এইটা নাকি বেশ কয়েক বছর ধরে একই রকম হয়ে আছে, প্রতি বর্ষায় আরো একটু করে যন্ত্রণা বাড়ে। এবং বহুবার জানানো সত্ত্বেও কোনো পরিবর্র্তন হয়নি। অনেকে বলে ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত, হাইওয়ে থেকে বাস বা লরি যাতে এই রাস্তায় ঢুকে না আসে, সেইটা নিশ্চিত করার জন্যে। প্রশ্ন হল বাস বা লরির বরং এই রাস্তায় কিচ্ছুটি হবে না - ঘটাং ঘটাং করে পৌঁছে যাবে। চাপ হবে ছোটো গাড়ির। ২০৯মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স নিয়েও একটা জায়গায় সময়মতন আড়াআড়ি কাটাতে না পেরে আমাদেরই গাড়ির তলা একবাস ঘষে গেলো। আরো ছোটো মারুতি ইত্যাদি তো আরোই ঠেকে যেতে পারে খুব সাবধানে না পার হলে।]

    খুব আস্তে আস্তে এই অংশটা পেরিয়ে (একবার ঘষে গেলো, বার দুয়েক গাড়িতে অন্যদের মাথা ঠুকে গেলো...) উঠলাম ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৭ এ, এর পর টার্গেট যতটা সম্ভব সময় মেকাপ করে শিলিগুড়ি বাইপাস ধরা। টিলাবাড়ি তখনও দেড়শো কিলোমিটার। মাঝে রয়েছে ইসলামপুর - আরেকটি বটলনেক।
  • de | 90056.185.673423.53 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১১:২২380204
  • টানা আট-নয় ঘন্টা আমিও চালিয়েছি এবারে-

    হাইওয়েতে কেমন একটা নেশা লেগে যায় - এতোগুলো গাড়িকে পেরিয়ে এলাম - ইসে করার চোটে তারা সব আবার আগে চলে যাবে এটা ভেবেই থামি না - বিশেষতঃ ট্রাকগুলোকে আবার কাটাতে হবে ভাবলেই ল্যাদ লাগে -

    এমনিতেও এদেশে মহিলাদের ব্যবহার্য্য ইসের জায়গা খোঁজাও বড়ো শক্ত -
  • শঙ্খ | 2345.110.234512.214 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৩৩380205
  • আমার মনের কথাটি দে দি সামারাইজ করে দিয়েছেন।
  • b | 562312.20.2389.164 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৩৭380206
  • খি খি।
    অমি হাইওয়েতে ৬০-৭০ ইস্পিড। তাতে যারা এগিয়ে যাওয়ার, এগিয়ে যায়। পিছিয়ে যাওয়ার, পিছিয়ে থাকে।
    ফিফথ গিয়ারে টু আর পি এম রাখলে নাকি ম্যাক্সিমাম ফুয়েল এফিসিয়েন্সি।
    অবশ্য সহযাত্রীদের কাছ থেকে বিস্তর খিস্তি খাই। মোটর গাড়ি না গরুর গাড়ি এসব বলে থাকে
  • | 453412.159.896712.72 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১২:১১380207
  • আমার আবার প্রায় ঘন্টায় ঘন্টায় হিসি পায়, ফলে আমি পেট্রোল পাম্প, রেস্ট এরিয়া দেখলেই ঘন্টা দুয়েকে একবার গাড়ি দাঁড় করাতে বলি। অনেকসময়ই ড্রাইভাররা খুব একটা খুশী হয় না অত ব্রেক নিতে।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১২:১২380208
  • কাছাকাছি পৌঁছে দেখি লম্বা লরির লাইন - দুই তিন কিলোমিটার তো হবেই। তখন ফের সেই উল্টোদিক দিয়ে এগিয়ে দরকারমত আবার ভিতরে সরে এসে (মানে যেসব জিনিস দেখে কলকাতার রাস্তায় এতদিন গালিই দিয়ে এসেছি) ইসলামপুর মোড় পেরিয়ে গেলাম। জ্যামের মূল কারণ রাস্তার ওপর বাজারের মধ্যে পেল্লায় একটা পুজো। দেবাশিস বার দুয়েক ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। আর বলে দিয়েছে ইসলামপুর ছাড়ানোর বেশ খানিকটা পরে, মানে এই তিরিশ কিলোমিটার পরে আসবে টোলগেট। তারপর একটা নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে ডানদিকে ঘুরে ধরতে হবে শিলিগুড়ি বাইপাস - মানে ফুলবাড়ি-ঘোষপুকুর রোড। সেই রাস্তা নিয়ে যাবে গাজলডোবা হয়ে জলপাইগুড়ির দিকে। শিলিগুড়ি এমনিতেই খুব ঘিঞ্জি - দুটি মোটে রাস্তা - সেবক রোড, আর হিলকার্ট রোড - যা কিছু আছে শিলিগুড়ির, সবই এই দুটো রাস্তার ওপর - কাজেই এমনিতেই ভিড়, পুজোর সময় আরোই ক্যাচাল - কাজেই শিলিগুড়ি না গিয়ে বাইপাস ধরে জলপাইগুড়ি যাওয়াই তুলনামূলকভাবে ভালো অপশন।

    এর মধ্যে টিলাবাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা শিলিগুড়ি বাইপাসে পৌঁছে গেছি - আর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে টিলাবাড়ি পৌঁছে যাবো। কিছু খাবারও বলে দেওয়া হয়েছে - ওরা রেখে দেবে - অদিও ইন-রুম ডাইনিং ওদের নিয়মে নেই, তাও কেয়ারটেকার ভদ্রলোক সেই রাতে আমাদের নিরুপায় দেখে সেই ব্যবস্থাই করে রেখেছেন।

    গুগুল ম্যাপ একবারই ভুল রাস্তা দেখালো। আমবাড়ি ক্যানাল রোড ধরার জন্যে এক জায়গায় বাঁদিকে যেতে বলে - সেই রাস্তাটা নেই, সবে তৈরী হচ্ছে। একটা বেড়া দেওয়া রয়েছে - বাইক নিয়ে লোকে সেই বেড়া পেরিয়ে চলে যাচ্ছে - গাড়ি যাওয়ার কোনো উপায় নেই। গাড়ি নিয়ে যেতে হলে আরো একটু এগিয়ে বাঁদিকে রেলগেট পেরিয়ে চলে যেতে হবে গাজলডোবার দিকে। গাজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজ পার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। রাত পৌনে এগারোটায় এই ক্যানাল রোডে আর একটাও গাড়ি চোখে পড়ছে না। হেডলাইটের আলোয় যতদূর দেখা যাচ্ছে শুধু জঙ্গল। এইটা পুরোটাই একসময় বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের অংশ ছিলো - এখন কিছু কিছু জায়গায় জনবসতি হওয়ার ফলে আলাদা হয়ে গেছে জঙ্গলগুলো।

    বৈকুন্ঠপুর মনে পড়ে? ভবানী পাঠক? দেবী চৌধুরানী? এই সেই বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল, আর এইখানেই তিস্তায় (বঙ্কিম যাকে ত্রিস্রোতা লিখেছেন) ভাসতো দেবীর বজরা।

    ঋক আর ঋতিকে গল্পটা বলতে চাইলাম - কিন্তু দুটি চ্যাটারবক্সই তখন অদ্ভুতভাবে চুপ করে গেছে। সারাদিনের ক্লান্তি হতে পারতো, কিন্তু ঋতি যা জানালো তাতে বুঝলাম দুজনেই একটু ভয় পেয়েছে। রাস্তার একপাশে মাঝে মাঝে একটা দুটো চা বাগান দেখা যাচ্ছে, বাকিটা জঙ্গল, অন্যপাশটা শুধুই ঘন জঙ্গল, তার মাঝে কুয়াশা, গাড়ির হেডলাইট ছাড়া আর একটাও আলো নেই - হয় এদিকে কোনো জনবসতি নেই, নয়তো ততক্ষণে সকলের মাঝরাত হয়ে গেছে...বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের একটু বদনাম রয়েছে হাতির জন্যে, যদিও সেটা ওদের জানার কথা নয়। কিন্তু ওই জঙ্গলে, রাতে, যদি গাড়ি খারাপ হয়, বা পাশের জঙ্গল থেকে কিছু বেরিয়ে আসে - এই ভয়ে ঋতি বিশেষ করে খুবই টেনশনে। টেনশন আমারও যে অল্প হচ্ছিলো না তা নয়। গুগুল এদিক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আর কোনো গাড়ি নেই কেন? এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরছিলো - কাটলো রাস্তার পাশে একটা বোর্ডে লাটাগুড়ি ৩০ কিলোমিটার দেখে - এতক্ষণ পরে এই একটা সাইনপোস্ট। তার কিছু পরেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটু দূরে বাঁদিক থেকে আসা গাড়ির আলো চোখে পড়লো - বুঝলাম আর একটা রাস্তার সাথে মিশছি, এবং সেই রাস্তায় গাড়ি যাচ্ছে। এখনো।

    অল্প পরেই গরুমারার সাইনপোস্ট চোখে পড়লো - বুঝলাম প্রায় এসে গেছি। ম্যাপও বলছে আর মাত্র কয়েক কিলোমিটার। অবশেষে, ঘড়িতে তখন বাজে সাড়ে এগারোটা - টিলাবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্সের অফিস বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়ালাম। ভিতরে তখনো দু তিনজন রয়েছে - আমাদের জন্যেই বসে আছে রাত্তির সাড়ে এগারোটায়।

    গাড়ি থেকে নামতেই পা-টা টলে গেলো। সামলে দাঁড়াতেই বুঝতে এতক্ষণের টেনশন ঠিক কতটা ছিলো, আর কীভাবে এতক্ষণ - মানে সেই ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা - মাঝে বড়জোর আধ ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ব্রেক - মানে প্রায় একটানা আঠারো ঘন্টা একই ভাবে গাড়ি চালানোর ফল মাথায় জানান দিচ্ছে...তখনও মাথাটা দুলছে বেশ বুঝতে পারছি, মনে হচ্ছে একটা লাগাতার মোশনের মধ্যে রয়েছি...তখনও মনে হচ্ছে চলছি যেন...একা কি আমারই মনে হচ্ছে? সুমনা জানালো ওরও এই মোশনের অনুভূতিটা হচ্ছে। এর ওপরে আমি তখন চোখে হলুদ ফ্ল্যাশ দেখছি - সারা সন্ধ্যে উল্টোদিকের গাড়ির আলো চোখে পড়ার এফেক্ট - লিটারেলি সর্ষেফুল দেখা যাকে বলে।

    চেকইন করে ঘরে পৌঁছতেই খাবার দিয়ে গেলো - রুটি, আলুভাজা, কপির তরকারি। ক্ষিদেও পেয়েছিলো - গোগ্রাসে খেলাম। তারপরে বিছানায় বডি ফেলতেই সেদিনের মত ব্ল্যাক আউট।
  • dc | 232312.174.567812.196 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১০380209
  • "হাইওয়েতে কেমন একটা নেশা লেগে যায়"

    একদম! একটানা অনেকটা রাস্তা পেরনোর মধ্যে একটা নেশা আছে। আমি অবশ্য b বাবুর থেকে একটু বেশীই স্পিডে চালাই :p

    আর থানোসের অ্যাডভ্ঞ্চারটা জব্বর হচ্ছে কিন্তু!
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১৫380211
  • জ্জিও।

    হ্যাঁ, এই ফুলবাড়ি ঘোষপুকুর বাইপাস দিয়ে আমিও ফিরেছি, সকালবেলায়, সে এক চমৎকার রাস্তা। শিলিগুড়িতে ঢুকতেই হয় না, ফুলবাড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট থেকেই রাস্তা বেঁকে যায়।

    অনেকক্ষণ গাড়ি চালালে হাঁটুতে খিল ধরে যায়, সেইটা টলে যাবার কারণ, আর দুলুনিটা ততক্ষণ ছাড়ে না, যতক্ষণ না ঘুমোচ্ছ। ওটা হবেই।

    আমাকে তো প্রথম দিন ঘুমের মধ্যে ট্রাক তাড়া করে বেড়াচ্ছিল, উরেবাবা।
  • থানোসাসুর | 342323.176.89.10 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১৫380210
  • হ্যাঁ, নেশা তো বটেই। সেই থেকে থ্রিল, অ্যাড্রেনালিন। শেষ কয়েকঘন্টা তার জোরেই চালিয়ে গেছি, আর রিফ্লেক্স। উপায়ান্তর নেই বলে।

    উপায় থাকলে এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • kaa`ndiyaa | 90056.178.1245.144 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:২১380213
  • আঁমি গাঁড়ি চাঁলাতে চাঁই।
  • avi | 7845.11.3490012.112 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৭380214
  • অসুর ওটা ধানতলায় না উঠে একেবারে ইসলামপুরে উঠলে ওই বাজে রাস্তা এড়াতে পারতেন। ডাইনে একদম বাংলাদেশ সীমান্তের পাশ দিয়ে ওই রাস্তা সোজা ইসলামপুর পৌঁছে দেয়। বেঙ্গল টু বেঙ্গল রাস্তা নামে প্রসিদ্ধ। আগে এই পুরো পথে শুনেছি বেশ ছিনতাই হতো। ইদানিং রাতের দক্ষিণগামী বাস ইত্যাদি হামেশাই এই পথে বেঁকে যায়। গাজলডোবা থেকে শেষের অংশটিও এই কারণে প্রসিদ্ধ, চট করে ছোট গাড়ি যেতে ইতস্তত করে, যদিও এখন সবাই বলেন এসব কমে গেছে। প্রসঙ্গত ওই ঘোষপুকুরের কাছে যেখানে বেঁকে গেলেন তিস্তাখালের রাস্তায়, ওখানের নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের একটি অংশ কদিন আগেই ভেঙে পড়েছিল, মাঝেরহাটের কদিন আগে।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:০৫380215
  • বেঙ্গল টু বেঙ্গল কি গোয়ালপোখর হয়ে? ম্যাপ দেখে তাই মনে হচ্ছে। গুগুল ম্যাপ আমাদের তার বাঁদিকের রাস্তাটা ধরে ধানতলায় এনেছিলো (মনে হয় শর্টেস্ট বা ফাস্টেস্ট - এরকম কিছু হিসেব করে)।

    গাজলডোবার পরের অংশটাতে আমার ঠিক এই চিন্তাটাই ছিলো, এতটাই নির্জন। ঠিকই করে রেখেছিলাম - দাঁড়াবো না সেরকম দেখলে।
  • avi | 7845.11.3490012.112 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৫০380216
  • হুঁ।
    মাসকতক আগে একবার ঝালং বিন্দু বেড়াতে গিয়ে ফিরছি। উইকেন্ড। ফেরার পথে বিকেলে রামসাই গিয়ে মেদলা ওয়াচটাওয়ার থেকে গরুমারা এলাকার গণ্ডার বাইসন দেখতে প্রায় সন্ধ্যে হব হব। ক্রান্তি হয়ে গাজলডোবার রাস্তায় ফিরছি। তখন সে রাস্তা ভয়াবহ। উঠছি আলে, নামছি গাড়ায়। আর তার মাঝে চালক বলে যাচ্ছেন, তিনি নাকি সে পথে নিয়মিত ভূত দেখে থাকেন। আর আমি ভাবছি ছিনতাই। :))
  • | 453412.159.896712.72 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৪380217
  • ঐ রাস্তাটায় লোকবসতি বলতে কিছু নেই তেমন। কিছু নির্মীয়মান হোটেল দেখেছিলাম। গত ডিসেম্বোরে শিলিগুড়িতে আধবেলা ফাঁকা থাকায় গজলডোবা থেকে ফেরার পথে সারথি কেশবদা কত্ত গল্প শোনালেন।
  • de | 4512.139.9001212.171 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:০৪380218
  • avi | 7845.11.3490012.112 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০৩380219
  • ওই রাস্তাতেই প্রথম দাঁতাল দেখেছি। আর এক পড়ন্ত বিকেলে, খালের অন্য পারে। তবে নির্জন রাস্তার দিন আর হাতে গোণা। প্রচুর জমি কিনে ফেলা হয়েছে, ভোরের আলো প্রকল্প দাঁড়িয়ে গেলেই মেঘমল্লার সরিয়ে আসবে রিয়াল এস্টেট। তারচেয়ে অসুরবাণী গপ্পোটাই শুনি।
  • শঙ্খ | 2345.110.124512.94 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২০380220
  • আমিও বি বাবুর স্পিডে চালাই, তবে সেটা ধরুন এই গড়িয়া থেকে গড়িয়াহাট গেলুম বা পাড়ার গলি গালা দিয়ে যাচ্ছি, তখন। আর হাইওয়েতে ওই ধরুন গিয়ে ডাবল। এর থেকে আস্তে যেতে গেলে অটোতে চাপি।
    আগে বাইপাস, বাসন্তী হাইওয়েতে বেশ ভালো যাওয়া যেত, এখন শালারা মোড়ে মোড়ে স্পিড চেকার আর বাম্পার লাগিয়েছে।
  • থানোসাসুর | 342323.176.1212.106 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৪380221
  • ডুয়ার্স চত্ত্বরে ভুলেও করবেন না। বেশির ভাগ এলাকায় ৪০ লিমিট। মোবাইল স্পীড চেকার নিয়ে পুলিশ ঘাপটি মেরে থাকে। লাইসেন্স নিয়ে নেয়। বাইরের গাড়ি হলে বাঁশটা বেশি - তখন লাইসেন্স ছাড়ানোর জন্যে দৌড়বেন, না বেড়াবেন?

    যে দেবাশিসের কথা বললাম সে বার পাঁচেক ফেঁসেছে। নেহাত মধ্যমগ্রামের লাইসেন্স হলেও থাকে চিলাপাতায়, তাই ঝক্কি কম পোয়াতে হয়েছে।
  • avi | 7845.11.454512.124 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৮380222
  • ইসলামপুর থেকেই এই বিপদ শুরু হয়ে যায়।
  • থানোসাসুর | 342323.176.1212.106 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৫৩380224
  • মধ্যমগ্রামের রেজিস্ট্রেশন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন