এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 232312.174.567812.196 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:০৯380225
  • তামিল নাড়ুতে তাহলে এই উপদ্রব নেই, অন্তত শুনিনি। চেন্নাই-ব্যাঙ্গালোর রাস্তায় আরামসে ১০০ তে স্পিড ওঠানো যায়, চেন্নাই-পন্ডি রুটেও বেশীরভাগটা ৮০-৯০ তে রাখা যায়। অন্যান্য কয়েকটা রুটেও তাই।
  • de | 4512.139.9001212.171 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৬380226
  • মাহাতে রাত্তিরের দিকে আরামসে ১২০-৩০ চালানো যায় - কেউ ধরে না - হাইওয়েতে আমার অ্যাভারেজ ১০০-১২০ - তার বেশী যাই না। আর শহরের রাস্তায় তো ষাটের ওপর ওঠাই যায় না -
  • সিকি | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৫৭380227
  • সেথায় রাস্তার ধারে স্পিড লিমিট লেখা বোর্ড থাকে না?
  • | 670112.193.230123.106 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২০:১০380228
  • পুণে ব্যাঙ্গালোর হাইওয়ে যে আসলে মুম্বাই ব্যাঙ্গালোর হাইওয়ে সেখানে দিনেও ৯০-১০০ তে দিব্বি চলে। হ্যাঁ ঘাট এলে তাতে টার্ন গুলোতে ধীরে চলার কথা লেখা থাকে বা ক্কচিৎ কদাচিৎ স্পীড লিমিটও থাকে। তা বাদে সব ওই ১০০+

    তা লোকে হাইওয়েতে স্পীড তুলবে না তো কি বাড়ির ছাদে স্পীড তুলবে!?
  • r2h | 015612.129.5667.65 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৪৫380229
  • ঝড়খালি থেকে ফেরার পথে আমরা স্পিডিং টিকিট খেয়েছি, তবে কাকুতি মিনতি করে স্পট ফাইনের ওপর দিয়ে গেছে।

    আমি অব্শ্য অখুশি হইনি। যে দেশের হাইওয়েতে আরবিট ট্রাক উল্টো লেন ধরে, লোকজন হুপ করে রাস্তা পেরোয়, শিল্পপতিরা ফর্মুলা ওয়ান খেলে, সেই দেশে বেশী স্পিড তুলনায় বেশী বিপদ।

    এই দুঘন্টায় দাঁড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ বটে, যদিও সব সময় হয়না, কিন্তু ডিসিশন ভুল হয় খুব লম্বা সময়ের পর। ঘন্টা ছয়েক টানা চালিয়েছি, কিন্তু একটা সময়ের পর গতি নিয়ন্ত্রন বিষয়ে বৈরাগ্য আসে, মনে হয় দুর ছাই, দিই আরেকটু চাপ। তখন একটু চা সিগারেট।

    আমি গাড়ি চালাতে মোটে ভালোবাসিনা, কিন্তু গাড়ি চালানোর গল্প পড়তে খুব ভালোবাসি।
  • থানোসাসুর | 342323.176.1212.106 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৫৫380230
  • লিমিট লেখা না থাকলে ন্যাশনাল স্পীড লিমিট বাই ডিফল্ট। এ ছাড়া, রাজ্যগুলোর নিজস্ব লিমিট আছে। গুগুল করলেই পাবেন।

    স্পীড তোলার জন্য বরং এনএফএস ভালো। হাইওয়েতে রেকলেস চালানোর চেয়ে।
  • dc | 232312.174.567812.196 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২১:২০380231
  • সিকি, বোর্ড থাকলেও সেসব কেউ পাত্তা দেয়না - তামিলরা ভয়ানক বাজে গাড়ি চালায়। তবে শুনেছেন নিশ্চয়ই, আমাদের প্রিয় প্রধানসেবক ন্যাশনাল হাইওয়েতে স্পিড লিমিট বাড়িয়ে ১০০ করে দিয়েছে যাতে আমরা আরও তাড়াতাড়ি প্রগতির পথে এগোতে পারি।
  • থানোসাসুর | 781212.194.9002323.227 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২১:২৭380232
  • দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ৮০ এর বোর্ড লাগানো আছে।
  • থানোসাসুর | 781212.194.9002323.227 | ০১ নভেম্বর ২০১৮ ২২:২২380233
  • ২-লেন স্টেট হাইওয়ে (মানে একটা যাওয়ার, একটা আসার) - যেখানে মিডিয়ান বলতে একটা লাইন - সেখানে অনেক জায়গাতেই মিডিয়ান আঁকা আছে ওভারটেকিং রুল অনুযায়ী। কিন্তু খুব কম লোককেই দেখলাম সেগুলো মানছে। আদৌ কজন জানে সেটাই ভাবার বিষয়। গাড়ী বাড়ছে, গাড়ী চালিয়ের সংখ্যাও, কিন্তু অ্যাওয়ারনেস? কালও ছিলো না, আজও নেই, কালও হবে না।
  • সিকি | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৪২380235
  • না। শুধু ক্লাচ গিয়ার অ্যাক্সিলারেটার অপারেট করতে জানলেই এ দেশে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামা যায়। দুই বা চার, যে কোনও চাকার গাড়ির জন্যেই এ ভয়ঙ্কর সত্যি।
  • থানোসাসুর | 781212.194.452323.232 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৩৬380236
  • কাল ফিরে পড়তে গিয়ে মনে হল (আর ফীডব্যাকও পেলাম) - ওই রাতে ক্যানাল রোড ধরা গোঁয়ার্তুমি হয়েছে। বিশেষ করে ফ্যামিলিসহ। আসলে গুগুল ওই রাস্তা দেখিয়েছে, আমি উত্তর বঙ্গের ব ও চিনতুম না। আর আসলে তো বিকেল বিকেল পৌঁছে যাবারই কথা ছিলো।
  • de | 90056.185.673423.54 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১১:০৭380237
  • আম্মো তো ডিসির মতো জানতাম ন্যাশন্যাল হাইওয়েতে ১০০ স্পিড লিমিট - প্লাস মাইনাস ২০ হোলো এরর বার -

    রাস্তার ধারে তো আশি-টাশি কিছু লেখা থাকে হবে -
  • de | 90056.185.673423.54 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১১:১১380238
  • আমার মতো ছাপোষা লোকেরা নিয়ম-টিয়ম মেনেই গাড়ি চালিয়ে থাকি - বিশেষত আমাদের এদিক্কার রাস্তায় প্রভূত পরিমাণে ঘাট রোড এবং টানেল - তাদের নিজস্ব নিয়ম অবশ্যই আছে -

    বেশীর ভাগই সময়েই মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ, অডি এদেরই নিয়ম ভাঙ্গতে দেখি -
  • de | 90056.185.673423.54 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১১:১৫380239
  • পব, বিহার, ওড়িশা, অসম এসব স্টেটের তুলনায় মাহা, গুজরাত, কর্ণাটক ইঃ তে রাস্তার অবস্থা অনেক ভালো - অনেক জায়গাতেই মাল্টি-লেন হাইওয়ে - সেখানে ১০০+ খুবই স্বাভাবিক গতি -
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১১:১৬380240
  • আশি লেখা থাকলে ৮৮ ম্যাক্স লিমিট। ১০% এরর - খুব জেনারাস হলে (সারা পৃথিবীতেই এইটা সত্যি)। নেহাত এখানে ইমপ্লিমেন্টেশন নেই। নর্থ বেঙ্গলে হচ্ছে তার কারণ আছে - অ্যাক্সিডেন্ট তো শুধু গাড়ি বা মানুষের নয়, ওদিকে গাদা গাদা অ্যানিমাল ক্রসিং এলাকা আছে। এমনকি ট্রেনের গতিও বেঁধে দেওয়া আছে, তাতেও হাতি মরছে। একটা দাঁতালের গল্প বলবো পরে - চিলাপাতায় এটাকে দেখেছি, কিছু ইতিহাস আছে।
  • de | 90056.185.673423.54 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১১:২২380241
  • অ্যানিমাল ক্রসিং থাকলে ২০-৩০ স্পিড লিমিট - এটা সর্বত্র সত্যি -
  • dc | 127812.61.014523.79 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০১380242
  • আমি ফ্যামিলি নিয়ে চালালে সাধারনত হাইওয়েতে ৯০ রাখি, একেবারে ফাঁকা রাস্তা থাকলে ১০০র কাছে। তবে কমাস আগে কেরালা গেছিলাম কয়েকটা বন্ধু মিলে, তখন হেব্বি ফুর্তিতে চালিয়েছিলাম। তাছাড়া যাওয়ার আর আসার তাড়াও ছিল।
  • de | 90056.185.673423.54 | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:২৪380243
  • রামেশ্বরম থেকে কন্যাকুমারীর রাস্তা -আহা, পুরো স্বর্গ - ১২০-৩০ হামেশাই লোকে চালায় -

    এছাড়াও সাউথ কেরালার রাস্তাঘাট খুবই ভালো -
  • | 2345.107.5667.179 | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ১১:০৮380244
  • হেঁইয়ো
  • থানোসাসুর | 781212.194.782323.24 | ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০380246
  • এখন তো ছুটি, আর কে না জানে, বাড়িতে কাজের চাপ অনেক বেশি।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৫৪380247
  • যখন বয়স অল্প ছিলো, অ্যাড্রেনালিন হু হু করে বইতো, তখন এগারো ঘন্টায় আটশো মাইল (কিলোমিটার নয়, মাইল) চালিয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখতে গেছি। এখন নেহাৎ প্রয়োজন না থাকলে ২০০০ আরপিএমের ওপর উঠি না, তেলের দাম বড্ড বেশি:-p

    যাই হোক, রাত সাড়ে এগারোটায় প্রায় টলতে টলতে, (আর গাড়ির বাকিরা ধুঁকতে ধুঁকতে) টিলাবাড়ি পৌঁছে আর কিছু নজর করার অবস্থা ছিলো না। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখলাম কমপ্লেক্সটা বেশ বড়। মানে বেশ ভালোই বড়। সাজানো বাগান, পাথরের ফোয়ারা, বড় পার্কিং লট, মিউজিয়াম, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। কটেজগুলোর যা সাইজ, একটায় অনায়াসে চারজন থাকা যায়, কিন্তু ব্যবস্থা এবং নিয়ম করে রেখেছে দুজনের। বছর দুয়েক হল তৈরী হয়েছে এই কমপ্লেক্সটা, উত্তর বঙ্গে ট্যুরিজম বাড়ানোর জন্যে, যদিও, ফরেস্ট লজ বলতে যা বোঝায় টিলাবাড়ি একেবারেই সেরকম নয়, বরং গরুমারার জঙ্গলে এতটা জায়গা নিয়ে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স একটু বাড়াবাড়ি (এবং বেখাপ্পা) ঠেকেছে। জঙ্গল এলাকার বাইরে হলে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। ক্যামেরা আর বের করতে ইচ্ছে করছিলো না - হাতের কাছে মোবাইল ছিলো, তাতেই এদিক ওদিক কয়েকটা ছবি তুলে রেখেছিলো জনতা, ডকুমেন্টেশনের জন্যে (হোয়াটস অ্যাপের দৌলতে রিয়েলটাইম খবরাখবর যায় বিভিন্ন জায়গায়)।

    আরো একটা জিনিস দেখে ছেলেমেয়ের খুব মজা - রাতে যেখানে গাড়ি রেখেছিলাম, তার পাশে একই মেক/মডেল/ট্রিম এবং কাছাকাছি রেজিস্ট্রেশন নম্বরের আর একটা গাড়ি, শুধু রঙটা আলাদা।









    ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি - তার লিস্টে বেশ কিছু নাম থাকলেও পুরী-তরকারি আর টোস্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেলো না। খেতে খেতে আলাপ হল অন্য গাড়িটার লোকজনের সাথে - তাঁরা কলকাতার সেটা তো অবভিয়াস - যাবেনও সান্তালেখোলা - তবে থাকবেন রিভার ক্যাম্পে (আমরা পাহাড়ের ওপর মৌচুকি জাঙ্গল ক্যাম্পে), তারপর যাবেন "পারেন" আর "জলদাপাড়া"।

    স্নানটান সারতে সারতে দেবাশিস ফোন করলো - পানঝরা, সান্তালেখোলা, মেন্ডাবাড়ির কাগজপত্র সব ওর কাছে আছে - ও এসে দিয়ে যাবে। আর আসছেই যখন, তখন পানঝরার রাস্তাটা চিনিয়ে দিয়ে যাবে, কারণ গুগুল ম্যাপে শুধু চাপড়ামারির গেটটা দেখা যায় - সেটাও একটু এদিক ওদিক ঘুরে। দশটা নাগাদ চেক-আউট করলাম। এসব সরকারি গেস্ট হাউজে এখন চেক-আউটের সময় একটা করে গিফট-প্যাক দিচ্ছে (রুম পিছু একটা) - বাঁশের পেনদানি গোছের কিছু, আর একটা চকোলেট।

    এর মধ্যে দেবাশিসও এসে গেল, সাথে পুরো পরিবার - স্বাতী (দেবাশিসের বৌ, আর যমজ ছেলেমেয়ে)। এই ফাঁকে পরিচয়টা দিয়ে রাখি - দেবাশিসের সাথে আমার আলাপ আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাবে। মধ্যমগ্রামে থাকতো, পেশা ছিলো পড়ানো - স্কুলে টুলে নয়, পুরো টিউশনি। অবসরে ছবি তোলা। ক্লাবের একজনের মেয়েকে পড়াতো, তাই ক্লাবে সবাই "দেবুস্যার" বলেই ডাকে। ভালোই ছিলো, হঠাৎ একদিন কী খেয়াল হল - কলকাতা/মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দিয়ে চিলাপাতায় রওনা দিয়ে দিলো - সেখানেই থাকে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, জমি কিনে ফার্মিং করে, আর ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা। ভালোই চলে - ইদানিং পাহাড়ে (মানে সিকিম) আর জঙ্গলে (মানে ডুয়ার্সে) ভালো পরিচিতি হয়ে গেছে। লোক খুবই ভালো, শুধু মাথাটা...মানে মাঝেমাঝেই বেশ আজগুবি দাবীদাওয়া করে থাকে...মাসখানেকে হিমালয়কে চক্কর দেওয়ার মতন।

    টিলাবাড়ি থেকে বেরোতে পৌনে এগারোটা বাজলো। তেল নিতে হবে - গেলাম চালসার দিকে। সেখান থেকে আবার ঘুরে মূর্তি রিভার ক্যাম্পের পাশ দিয়ে একটা সরু ব্রীজ পেরিয়ে চাপড়ামারির রাস্তায় উঠলাম। আগের দিন রাতের মত অন্ধকারে হাতড়ানো নয় আর - দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ একটা হরিণও...এরা মাঝেমাঝেই লাফিয়ে রাস্তায় চলে আসে বলে এই পুরো এলাকাতেই স্পীড লিমিট বাঁধা। বেশ জোরে পাখির ডাক শোনা যায়। আর একটা কনস্ট্যান্ট উঁচুতারে ঝিঁঝিঁর ডাক - আমাদের কলকাতা শহরতলির ঝিঁঝিঁর চেয়ে অনেকটাই অন্যরকম।
  • থানোসাসুর | 891212.185.5678.71 | ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:১৬380248
  • ** সাথে পুরো পরিবার - স্বাতী (দেবাশিসের বৌ), আর যমজ ছেলেমেয়ে **
  • | ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:২১380249
  • আমাদের ২০১৬ তে তিনটে করে পাপোশ দিয়েছিল গোরুমারা আর লাটাগুড়ি বাংলোতে। খান ছয়েক পাপোশ একলপ্তে পেয়ে গিয়ে আমরা খুবই অবাক ও খুশী হয়েছিলাম।
  • সিকি | ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৩৫380250
  • আমায় কেউ কিসু দ্যায়নাই। একবার চাইবার পরে রামপুরে হিমাচল ট্যুরিজমের এক হোটেল হিমাচল ট্যুরিজম লেখা চিরুনী দিয়েছিল।
  • গবু | 2345.110.454512.9 | ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৫৮380251
  • ততঃ কিম? নাকি উইকেন্ডে আসবে?
  • চল্লিশমার্ক | 891212.185.5678.71 | ১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:০৯380252
  • দুপাশে চাপড়ামারির জঙ্গল ফেলে রেখে কালো কুচকুচে পিচ ঢালা কুমানি রোড চলে গেছে সাম্তালেখোলার দিকে। দু চোখ যদি খোলা রাখেন, পাশের জঙ্গলে হঠাৎ করে হরিণ দেখে ফেলতেই পারেন। আর পাখি তো অগুণতি, তেমন তাদের রকমারি ডাক। কলকাতা স্টাইলে জানলা বন্ধ করে এসি চালিয়ে গাড়ি চালালে এসব কিছুই মিস করে যাবেন - তাই জানলা খুলে গাড়ি আস্তে চালান - পরিষ্কার হাওয়ার সাথে জঙ্গলের গন্ধ নাকে এসে ঢুকবে। গাড়ির স্টিরিওটাও বন্ধ রাখুন - বরং এই জঙ্গলের গান শুনুন - হরেক রকমের পাখির ডাক, অন্ততঃ তিন চার রকমের ঝিঁঝিঁর ডাক, হাওয়ার ধাক্কায় লম্বা গাছের পাতার ঝিরিঝিরি আওয়াজ...

    সিপচু শহীদ বলিদান পার্ক ছাড়িয়ে আরো কিছুটা এগোলে পড়বে খুনিয়া মোড় - একটা তেমাথা। ডানদিকের রাস্তা চলে গেছে ঝালং এর দিকে, আপনি ঘুরবেন বাঁদিকে - নয়া বস্তির দিকে। নয়া বস্তিতে পড়েই দেখবেন জিটিএ এলাকায় এসে গেছেন। আর একটু এগিয়ে একটা তেমাথায় প্রায় হেয়ারপিন বেন্ড (রাস্তা প্রায় ভাঙাই এখানে) ঘুরে নেমে যাবেন মূর্তি নদীর দিকে। একটা সরু ব্রীজের ওপর দিয়ে নদী পেরিয়ে শুরু ডুয়ার্স অঞ্চলের চা-বাগান - এইটাই সামসিং। সরু রাস্তা চা-বাগানের মধ্যে ঘুরে ঘুরে অল্প ওপরের দিকে উঠে গেছে - রাস্তার দুপাশে একটু কালচে সবুজ পাতাওয়ালা চা-গাছ (দেশের যাবতীয় সিটিসি চা সাপ্লাই যায় ডুয়ার্সের এইরকম চা-বাগানগুলো থেকেই), আর ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে প্রচূর পাথর - সম্ভবতঃ মূর্তি নদীর সাথে বয়ে এসেছিলো কোনোকালে। শুনলাম খুব সকালে এখানে আসতে পারলে অল্প দূরে ভুটান পাহাড়ের পিছন থেকে অসামান্য সূর্য্যোদয় দেখা যায় - যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। আর থাকে নানা রকমের পাখি - যদি আপনার পাখির ছবি তোলার শখ থাকে...



    সামসিং চা বাগান পেরিয়ে পর পর কয়েকটা ছোট গ্রামের মধ্যে দিয়ে ঘুরে ঘুরে রাস্তা চলে গেছে সান্তালেখোলার দিকে - চেনা না থাকলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, তাই মাঝে মাঝেই মোড়ের মাথায় জিগ্গেস করে নিতে হচ্ছিলো - বিশেষ করে এক দুই জায়গায় রাস্তার কাজের জন্যে ডাইভার্শন থাকায় - এবং তার ফলে বার দুয়েক অফরোডিং ও করতে হল। দেবাশিসের ছোট গাড়িতে চারজন ছিলো বলে এক জায়গায় তিনজনকে নেমে গাড়ির ওজন কমিয়ে গাড়ি পার করতে হল। একটু বেশি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হওয়ার দরুণ আমরা বেঁচে গেলাম।

    কিছুদূর এগোতেই পড়বে ফাড়ি বস্তি - ছোট্ট একটা গ্রাম। রাস্তা এখানেই শেষ - মানে বাইরে থেকে আসা এমনি গাড়ির। সামনে একটা গেট রয়েছে যেটা পেরোতে হলে আপনার কাছে হয় সান্তালেখোলা রিভার ক্যাম্প বা মৌচুকি ফরেস্ট বাংলোর বুকিং থাকতে হবে। বা যদি নদীর ধারে পিকনিকে যেতে চান, বা পাহাড়ের পথে হাইকিং করতে চান - হেঁটে যেতে পারেন, না ওখানে কিছু মারুতি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে - তাদের ভাড়ায় নিতে পারেন। গাড়ি নিয়ে গেট পেরোতে গেলে আপনার কাছে কাগজ থাকতেই হবে।

    তখন প্রায় বারোটা বাজে বলে একটা ছোট দোকানে বসে আমরা একটু মোমো আর চা খেলাম। আর একটা দোকান নজরে পড়লো - যার সামনে বড় ফ্লেক্স লাগানো - ছবিসহ - কবে যেন "তিনি" এখানে এসে মোমো আর চা খেয়ে দাম দিয়েছিলেন!!!

    তারপর দেবাশিসদের টাটা করে রওনা দিলাম ফরেস্ট বাংলোর দিকে।

    গেট পেরিয়ে রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে নেমে গেছে নীচে - নদীর ধারে রিভার ক্যাম্পের দিকে, আর একটা সরু ইঁট পাতা রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের গা বেয়ে - সেইটাই ধরতে হবে আমাদের।

    এখানে আগে একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি। সান্তালেখোলা রিভার ক্যাম্প বুক না করে মৌচুকি বুক করার ছোট একটা কারণ আছে। আগে, বহুদিন ধরে বহুবার বিলেতের লেক ডিস্ট্রিক্ট বা স্কটিশ হাইল্যান্ডস বা আমেরিকায় রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কের পাহাড়ি রাস্তা গাড়ি নিয়ে চষে ফেলেছিলাম, এমনকি আমেরিকায় যেটাকে হায়েস্ট মোটোরেবল রোড বলে - রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে - প্রায় সাড়ে বারো হাজার ফুট উঁচু - তাও। কিন্তু এই গাড়ি নিয়ে পাহাড়ে যাবো শুনলেই চেনাজানা প্রায় সকলেই হাঁ হাঁ করে ওঠেন - পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো কী মুখের কথা ইত্যাদি বলে - তাঁদের কাছে লেক ডিস্ট্রিক্ট/স্কটিশ হাইল্যান্ডসের রাস্তা কলকেই পায় না একেবারে। তা হাত মকশো করার জন্যে (বরং বলা ভালো হাত যে মকশো যে করাই আছে সেটা দেখানোর জন্যেই) মৌচুকি যাওয়া, রিভার ক্যাম্পে না গিয়ে। একটুখানি অফরোডিং। একটুখানি প্রমাণ।

    পাহাড়টা বিশেষ উঁচু নয়, পাশে গভীর খাদও নেই। যেটা আছে সেটা হল না-থাকা একটা রাস্তা। গুগুল ম্যাপে এখনো যদি দেখেন, দেখবেন ফাড়ি বস্তি থেকে একটা ডটেড লাইন উঠে গেছে মৌচুকি অবধি। কিছুদিন আগে অবধিও এই পথে গাড়ি যেত না। ইদানিং পাথর ফেলে একটা রাস্তা বানানো হয়েছে - চড়াইটাও মন্দ নয় - জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে এই পাথর ফেলা পথ উঠে গেছে প্রায় সাত কিলোমিটার। গাড়ি চলবে দুলে দুলে, ঝড়ের নদীতে নৌকোর মত। সামান্য অসাবধান হলেই হয় চাকা পাথরে ঠেকবে, বা গাড়ির তলায় জানান দেবে - মোবিল ট্যাঙ্ক ফেটে গেলেই চিত্তির। পথে বিশেষ অসুবিধা আর কিছু নেই - মুশকিলটা হল ওটাই রাস্তা কিনা সেইটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওই গ্রেডিয়েন্টে আর অসমান পাথরের মধ্যে ফার্স্ট গিয়ারের ওপরে গাড়ি উঠবে না, আর কাজেই যেতে হচ্ছে বেজায় আস্তে - মানে সাত কিলোমিটার পেরোতে ঢের সময় লাগবে। কাউকে জিগ্গেস করার উপায় নেই, কারণ কেউ কোত্থাও নেই, আর মোবাইলও মৃত। বেশ খানিকটা ওঠার পর (ততক্ষণে গাড়ির মধ্যে পিনড্রপ সাইলেন্স - শুধু বাইরে ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই - দুটি চ্যাটারবক্সই একেবারে সুইচড অফ) একটা দুটো বাড়ি চোখে পড়লো - রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে এখানে। নেমে গিয়ে ডাকাডাকি করে একজনকে পেলাম - জানতে পারলাম রাস্তা ঠিকই আছে, আরো কিছুটা ওপরে উঠতে হবে, মানে প্রায় পাহাড়টার মাথায়। নিশ্চিন্ত হয়ে এগোতে এগোতে দুটো বাঁক পেরোতেই দেখি একটা গেট (মানে ওই লেভেল ক্রসিং এর গেটের মত) আর তাতে তালা বন্ধ। আর ওপর দিকে দেখা যাচ্ছে সবুজ কাঠের দোতলা একটা বাড়ি - ওইটাই ফরেস্ট বাংলো।

    খেয়েছে। এবার আবার কাকে ডেকে তালা খোলাতে হবে? একটু এপাশ ওপাশ ঘুরে কাউকে না দেখে বাধ্য হয়ে বার দুই তিন হর্ন বাজালাম। সাথে সাথেই বাংলোর একটা কোণা থেকে দুটো মুন্ডু বেরিয়ে এলো। অত দূরে চেঁচালে শোনা যাবে না মোটে, তাই হাত নাড়িয়ে ইশারা করাতে একজন মিনিট কয়েকের মধ্যে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে চলে এলো। বুকিং রয়েছে জানাতেই খুল যা সিম সিম...আর খান তিনেক মোড় ঘুরতেই একটা ফাঁকা জায়গা, তার মধ্যে সবুজ দোতলা কাঠের বাড়িটা।



    (ফিরে আসার পরে একটা জিনিস খেয়াল করলাম - মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো বলে একটা সিনেমাও আছে। অজানা একটা জঙ্গলে তিনটে ছেলের প্যারানর্মাল অভিজ্ঞতা নিয়ে - সেটা নাকি একটা কুড়িয়ে পাওয়া হ্যান্ডি-ক্যাম থেকে বের করা। টুক করে সিনেমাটা দেখে ফেলতে পারেন। মৌচুকির গল্পে পরে আসবো।

    https://www.imdb.com/title/tt7855306/)
  • | 670112.193.673412.6 | ১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০০380253
  • মৌচুকি নামটা ভীষণ সুন্দর, শুনেই যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু গাড়ি ছাড়া হেঁটে ওঠা যায় না? এই অফরোডিঙের ঠ্যালায় হিমালয়ের প্রচুর নদীর পরিবেশ বিপন্ন। পাহাড়ও যাবে এমনি করে।
  • চল্লিশমার্ক | 891212.185.5678.71 | ১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০৩380254
  • যায়। মাত্র সাত কিলোমিটার রাস্তা। একটা রুকস্যাকে জিনিস নিয়ে উঠে যাওয়াই যায়।
  • | 453412.159.896712.72 | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১০:২২380255
  • তারপর?
  • | ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৩৯380257
  • ওরে লেখাটা তো শেষ করোওওওও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন