এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Izhkevich | 238912.66.4556.212 | ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৪380258
  • রিভিউ আছে সোমবার। দুটো মিটিয়েছি, আরেকটা বাকি। ঘুম উড়ে গেছে। শেষ হোক।
  • Shn | 90045.206.89.235 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৫৪380259
  • এই যা:! আবার অপেক্ষা!
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৫৪380260
  • সম্পূর্ণ নির্জনতা চান? টোটাল সলিটিউড? যেখানে অন্য ট্যুরিস্ট এসে লাফালাফি করবে না...শুধু আপনি, আপনার অল্প কয়েকজন সঙ্গী, ক্যামেরা, বই? মৌচুকী ক্যাম্প একেবারেই তাই। যে একদিন বা দুদিন এখানে থাকবেন, আপনার সঙ্গী বলতে (সঙ্গে যারা আছে তারা বাদ দিয়ে) চারপাশের জঙ্গল, বেশ কিছু পাখি, ঝিঁঝিঁপোকার ডাক, সন্ধ্যেবেলা আলো দেখে ধেয়ে আসা দলে দলে পোকা, দুটো হৃষ্টপুষ্ট কুকুর, আর বুদ্ধ - মানে মৌচুকীর কেয়ারটেকার। টুরিস্টের ভিড় নেই, মেমোরেবিলিয়ার দোকান নেই, গাড়ির আওয়াজ নেই...নিশ্ছিদ্র নিশ্চুপ নির্জনতা।

    পাখির সীজনে গেলে - মানে আরেকটু শীত পড়লে - আপনি হেঁটে হেঁটে পিছনের পাহাড়টায় উঠতে পারেন - পাখির ছবিশিকারীদের স্বর্গ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে পূবদিকে ভুটান পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। আর যদি আরেকটু অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছে থাকে, তাহলে যে পাথরবসানো রাস্তায় উঠেছেন, সেই পথ বেয়েই নেমে যেতে পারেন পনেরো কিলোমিটার মতন দূরে মূর্তি নদীর ওপর একটা ছোট ঝরনার ধারে - জায়গাটার নাম ওরা দিয়েছে "রকি আইল্যান্ড", বা পিকনিক করে আসতে পারেন রিভার ক্যাম্পের কাছে মূর্তির ধারে। আর যেতে পারেন যুগলে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় না nth মধুচন্দ্রিমার জন্যে - ঠকবেন না গ্রান্টী।

    আমরা গেছিলাম ল্যাদ খাবো বলে। আর আমার সুপ্ত ইচ্ছে ছিলো একটু pampered হওয়ার। ঋতিকে বললাম - রোজ তো আমি তোদের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে স্কুল যাবার জন্যে তৈরী করি, এই কদিন না হয় তোরা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি, ব্রেকফাস্ট খাওয়াবি, ঘুরতে নিয়ে যাবি...ঋতি শুনে এক কথায় উত্তর দিলো - "আহ্লাদী":-)

    সেদিন মৌচুকী পৌঁছে দেখলাম দোতলা কাঠের বাড়িটায় নীচের তলায় দুটো ঘর খালি, দোতলায় একটা ফ্যামিলি রয়েছে - তারা পরের দিন ফিরে যাবে। নীচের দুটো ঘরের মাঝখানে খাবার জায়গা। তিনবেলা খাবার পাবেন - সকালে ব্রেকফাস্ট, দুপুরের লাঞ্চ, রাতের ডিনার। এর মাঝে চা পেয়ে যাবেন চাইলে। নীচের ঘরে জিনিসপত্র রেখে একটু আশপাশটা দেখতে দেখতেই দুপুরের খাবার ডাক পড়লো। সাধারণ খাওয়া - ডাল, ভাত, তরকারি আর ডিমের ঝোল, কিন্তু পরিমাণ দেখে চক্ষু চড়কগাছ। বুদ্ধ মনে হয় খোদ আবদুর রহমানের হাতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। একটা পেল্লায় ক্যাসারোলে ভাত, প্রায় সেরকমই বড় পাত্রে ডাল/তরকারি...ডিমের ঝোলে ডিমের সংখ্যা অবশ্য মাথাপিছু দুটো করে। খাবার দেখিয়ে বুদ্ধ বললো - কম পড়লে বলবেন, আরো দিয়ে যাচ্ছি। খাওয়া শেষে দেখলাম ভাতের ক্যাসারোলের ওপরের ১/৩ কমেছে মাত্র, ডাল প্রায় যেমনকার তেমনি রয়ে গেছে, তরকারি - মানে তেলতেলে আলুভাজাটাই পুরো শেষ, আর ডিমের ঝোলটা। বুদ্ধকে জানিয়ে দিতে হল যে ভাত/ডালের পরিমাণটা একটু কম হলেই ভালো...

    দুপুরে বাংলো খালি হয়ে যায় - বুদ্ধ আর ওকে সাহায্য করে বাচ্চামতন একটা ছেলে - ওরা নীচে ওদের গ্রামে যায়। একা থাকার অভ্যেস না থাকলে সেই সময়টা মনে হবে ভূতের বাড়িতে বসে আছেন। আলো পড়ে আসে তাড়াতাড়িই, পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘ নামে - আস্তে আস্তে অল্প অল্প দেখতে পাওয়া ভুটান পাহাড় পুরো মেঘে ঢেকে যায়। নীচে কয়েক কিলোমিটার দূরে গ্রামটার ছোট ছোট বাড়িগুলোও চলে যায় মেঘের আড়ালে। কিছুক্ষণ পর বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠলে মেঘের মধ্যে দিয়ে আবছা আলোটা দেখা যায়। আর দেখা যায় উল্টোদিকের পাহাড়ের গায়ের বাড়িগুলোর আলো।

    বারান্দায় বসে বই পড়ছিলাম, উঠে আলোটা জ্বালাতে হল। আর তার কিছুক্ষণ পরেই দলে দলে পোকা ধেয়ে এলো। প্রথমদিকে কত রকমের পোকা সেটা গোণার একটা ক্ষীণ চেষ্টা করেছিলাম - অল্প সময়ের মধ্যেই হাল ছাড়তে হল - কারণ পোকার সংখ্যা আর তার রকমের সংখ্যা হাতের বাইরে ততক্ষনে। বুদ্ধ এসে চা দিলো, তারপর আবার বই পড়া বা বকবক করা - কাজ বলতে এই। ছেলেমেয়ে কিছুক্ষণ বই পড়লো, কিছুক্ষণ মোবাইলে গেম খেললো। ওপরের পরিবারের লোকজনের সাথে দুটো চারটে কথা হল চা খাওয়ার সময়...

    রাতের খাবারের সময় সেই একই হাল - দুপুরের মত। রুটি কটা লাগবে তা আর বলা হয়নি - অতএব খান পঁচিশেক রুটি এসে হাজির। সাথে আবার তেলতেলে আলুভাজা, ডাল আর চিকেন। অল্প ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া, সাথে গরম রুটি, ডাল ইত্যাদি - রোজকার দুটো রুটির লিমিট পেরিয়ে সেদিন মনে হয় খান আশ্টেক খেয়ে ফেলেছিলাম। রান্নাও এখানে ভালোই করে, আর মুরগীটাও পোলট্রির পানসে মুরগী নয়...

    ন'টা বাজতেই পাহাড়ে মাঝরাত হয়ে যায়। নিঝুম অন্ধকারে চারপাশে ঝিঁঝির ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। ও হ্যাঁ, দোতলায় পায়ে চলার জন্যে কাঠের মেঝের ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ ছাড়া।

  • de | 90056.185.673423.51 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০১380261
  • বাঃ, কি সুন্দর বাড়িটা!
    আমারো বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করচে- কবে যে সময় হবে!
  • | 453412.159.896712.72 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১২:১০380262
  • আহা যেতে হবে।
    এহে আমার সেই টেমি চাবাগানে এক্ললা থাকার গপ্পোটা লেখা হয় নি।
  • avi | 7845.11.458912.184 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৪380263
  • মৌচুকি বুক করে কোত্থেকে? wbfdc সাইটে দেখতে পাচ্ছি না যে।
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৫৩380264
  • https://wbsfda.gov.in/index.html

    মৌচুকি ক্যাম্প বলে রয়েছে। লাটাসামসিং এরিয়ায়।
  • avi | 7845.11.458912.184 | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:২৭380265
  • ওহো, এই সাইটটায়। বাহ, অনেক ধন্যবাদ।
  • dd | 90045.207.90045.148 | ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১২380266
  • বাঃ, বেশ হচ্ছে। চলুক। চলুক।

    তবে অ্যাতো উদাস সময়, নির্জন প্রকৃতি, চূড়ন্ত ল্যাদ গরীমা - ভয় হয় প্রবন্ধ লেখক না এইবার কবিতা লিখতে শুরু করেন।
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০৫380143
  • দ্বিতীয়দিন থেকে একটু বোর লাগা শুরু হল - একেবারেই কিছু করার না থাকলে যা হয়। আকাশটা একটু ভালো থাকলে পিছনের পাহাড়টায় ঘুরে আসা যেত, কিন্তু সেও গুড়ে বালি। অগত্যা বই আর ঘুম, ঘুম আর বই। মাঝে সকালে পুরী-সবজি, দুপুরে ডিমের ঝোল, ডাল আলুভাজা আর ভাত, রাতে রুটি আর দেশি মুরগীর ঝোল। এর মধ্যে দোতলায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা চলে গেলেন। ফোর্সের একটা ভাড়ার গাড়ি এসে নিয়ে গেলো। তখনই শুনলাম - নিজের গাড়ি নিয়ে ওপরে আমরাই প্রথম যাত্রী।

    সেদিন বিকেল থেকে ঋতিরও মুখ একটু ভার। কী ব্যাপার? না পরের দিন ওই রাস্তায় নামতে হবে, তাই একটু...ওই আর কী...পেট গুড়গুড় করছে। আরে তুই তো নর্থ সিকিমও ঘুরে এলি - তখন তো বলিসনি। জানলাম তখনও নাকি ভয় ভয়ই করেছিলো। তা আমি যে পরের বার গাড়ি নিয়ে অরুণাচল যাবো - তুই যাবি না? সোজা উত্তর - না।

    পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলতে তুলতে ন'টা বেজে গেলো। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো - তাই দেরী না করে নামতে শুরু করলাম, আবার ওই পাথর মোড়া রাস্তায়। নামার সময় আর অত চিন্তা নেই - একবার উঠেছি যখন, রাস্তা জানা হয়ে গেছে, অজানা কোথাও যাচ্ছি না আর। তবে সাবধানতাটা বেশি, কারণ নিউটনসায়েবের থিওরি, আর প্রাকৃতিক নিয়ম। নামার আগে বলেছিলাম একটু ভিডিও করে রাখতে - সেও করা হল, অপেক্ষকৃত কম দুলুনি যেখানে সেখানে। দুলতে দুলতে, লাফাতে লাফাতে অবশেষে নীে ফের ফারি বস্তি...মোমোর দোকান ইত্যাদি।

    গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটু নীচের দিকের রাস্তা ধরে হেঁটে রিভার ক্যাম্পও ঘুরে এলাম। আসল রিভার ক্যাম্প, যেটা মূর্তির ধারেই চিলো, সেটা বন্ধ হয়ে পাহাড়ের গায়ে একটা নতুন রিসর্ট হয়েছে। নদীর ধারটা এখন পিকনিক স্পট। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা লোকজন সান্তালেখোলা অবধি নিজেদের গাড়িতে এসে ফারি বস্তি থেকে লোকাল ভাড়ার গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে যান।





    সান্তালেখোলার পর্ব শেষ। এখান থেকে আমরা যাবো পানঝরা - চাপড়ামারি রিজার্ভের ভিতরে। যে রাস্তায় এসেছিলাম, সেই পথেই ফিরলাম - এক দুবার একটু রাস্তা জিগ্গেস করতে হল বটে, কিন্তু মোটামুটি ঠিকভাবেই সেই সামসিং চাবাগানের মধ্যে এসে পড়লাম। এর পরেই মূর্তি ব্রীজ, আর তারপর নয়াবস্তি পেরিয়ে আরেকটু গিয়েই চাপড়ামারির গেট। গেটে সমস্ত কাগজ দেখাতে হল, নামধাম এন্ট্রি করতে হল, তারপর ঢুকলাম জঙ্গলের মধ্যে। জঙ্গলের বাইরের রাস্তা আর জঙ্গলের ভিতরের পরিবেশের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। নিঝুম জঙ্গলেস শুধু পাখির ডাক আর ঝিঁঝিপোকা - গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে অল্প আলো এসে পড়ছে - ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। রাস্তাটা একতা গাড়ি যাওয়ার মতন, কোথাও কোথাও পাশের ঝোপঝাড় গাড়িতে ঠেকে যায়। নীচে গাড়ির চাকা গিয়ে গিয়ে দুটো সমান্তরাল মাটির লাইন হয়ে রয়েছে, তার মাঝখানে ঝোপঝাড় যে কে সেই - গাড়ির নীচে নানারকম বাজনা বাজায় - খসখস - খুট - টুংটাং...

    কিলোমিটার খানেক গিয়ে ফরেস্ট বাংলো - সরকারি এলাকা, তার মধ্যে একটা ওয়াচটাওয়ার (যেখানে আমরা বিকেলে আসবো)। বাংলোটার সামনে দিয়ে বাঁদিক ঘুরে আরো ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরো আড়াই তিন কিলোমিটার গিয়ে চাপড়ামারির ঠিক বাইরে একটা খালি জমিতে পানঝরা রিসর্ট। কাঠের তৈরী চারটে না পাঁচটা কেবিন, সামনে একটু লন - সেখানে বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করতে পারে, তার পরেই পাঁচিল, আর একপাশে ইলেক্ট্রিক ফেন্স - হাতি আটকানোর জন্যে। সামনে দিয়ে মূর্তি নদী চলে গেছে, কোনের দিকটায় মূর্তির ওপর রেলব্রীজ আর গাড়ি চলার ব্রীজ।

    মোটের ওপর জায়গাটা বেশ সুন্দর। একেবারে জঙ্গলের মধ্যে নয় বটে, কিন্তু জঙ্গলের গায়েই। ইলেক্ট্রিক ফেন্স মানে হাতি বা অন্য জন্তু চলে আসার ইতিহাস রয়েছে। টুরিস্ট বলতে সেই মুহুর্তে শুধুই আমরা। কটেজগুলোর মাঝে একটা কমন বারান্দাওয়ালা রান্নাঘর কাম খাবার জায়গা কাম রিসেপশন। সেখানে কাগজপত্র দেখাতে আমাদের দুটো কটেজ খুলে দিলো। সান্তালেখোলায় ঠান্ডা আর ল্যাদ কাটিয়ে কেউই চানটান আর মাথায় আনেনি। এখানে গরমজল পেয়ে আগে চান, তারপর আবার গরম গরম ভাত-ডাল-আলুভাজা আর বড়সড় মাছ। খাবার দেওয়ার সময়েই বলে দিলো সাড়ে তিনটে নাগাদ ওয়াচটাওয়ারে চলে যেতে, তারপর সাড়ে পাঁচটায় ট্রাইবাল ডান্স হবে রিসর্টে, সাথে চা আর পকোড়ার স্ন্যাক্স।





  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:১৬380144
  • ও, একটা কথা লেখা হয়নি।

    ফারি বস্তিতে নেমে ঋতিকে বল্লাম - এই তো দ্যাখ, কেমন সুন্দর নেমে এলাম। এবার অরুণাচল যাবি তো? ঋতি উত্তর দিলো - আগে আমাকে "আনস্ক্র্যাচড" অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দাও, তারপর ভাববো।

    অথচ, এর আগে চিলিকা, পুরী, সাতকোশিয়ার সময় এত ভাবনা ছিলো না। অবিশ্যি সেও বছর পাঁচেক আগের কথা।
  • | 670112.193.015623.66 | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:২২380145
  • পোস্তাওলা বাড়ি!
    আমার মামাবাড়িতে আগে এমনি পোস্তা ছিল আরো চওড়া দুই মানুষ বসার মত।
    কদ্দিন বাদে এ দেখলাম।
  • সিকি | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৫১380146
  • পোস্তা কী?
  • শঙ্খ | 340112.242.90090012.194 | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:৫২380147
  • বাড়ির রোয়াক বা রক।
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৪380148


  • চাপড়ামারি কিন্তু বেশ পুরনো। ব্রিটিশ আমলে একে ন্যাশনাল রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চাপড়ামারি ওয়াইল্ড্লাইফ রিজার্ভ নামটা চালু হয় ১৯৪০ নাগাদ, আর ১৯৯৮ সালে একে ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর চাপড়ামারি নামটা এসেছে "চাপড়া" - এক ধরণের ছোট মাছ, যেটা কিনা এই এলাকায় অজস্র ("মারি") পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায়? প্রধাণতঃ হাতি। চাপড়ামারি বিখ্যাত হাতির জন্যে। তাছাড়া ভারতীয় বাইসন (বা গৌড়), লেপার্ড, হরিণ, শুওর ইত্যাদি পাবেন কপালে থাকলে, আর অনেক পাখি - অনেক রকমফের তাদের। যেমন ধরুন - ড্রঙ্গো, বা ফিঙে - সে কলকাতায় বাড়ির সামনে ইলেক্ট্রিক তারের ওপরেই বসে থাকতে দেখেছি (ইদানিং অবশ্য কমে গেছে)। কিন্তু র‌্যাকেট-টেইলড ড্রঙ্গো - তাদের ন্যাজে দুটো আলাদা লম্বা পালক - এসব শুধু এদিকেই পাবেন।

    এসব খবর পেলাম ফোন ঘেঁটে। সাড়ে তিনটের সময় গাড়ি নিয়ে গুটি গুটি গিয়ে হাজির হলাম ওয়াচটাওয়ারের কাছে। সেখানে একটা বড় বোর্ডে বড় বড় করে লেখা রয়েছে কী কী ধরণের গাছ আর জন্তুজানোয়ার চাপড়ামারির অধিবাসী। ওয়াচটাওয়ারের সামনে একটু ফাঁকা জায়গা, তারপর তারের বেড়া (সম্ভবতঃ ইলেক্ট্রিক ফেন্স), তারপর একটা জলাজমি, তারপর একটা সল্ট লিক্‌ আর ওয়াটার হোল। তাওয়ার থেকে ওয়াটার হোলটা দুশো মিটার মতন হবে হয়তো। টাওয়ারটা তিনতলা - মানে মাটির ওপরে একটা লেভেল, তার ওপর আরেকটা। আমরা সোজা ওপরে চলে গেলাম...কেউ কোত্থাও নেই...দূরে জলাটার ওপাড়ে খান কয়েক বাইসন (গৌড়) কাদার মধ্যে ঝিমোচ্ছে, সেগুলোর কয়েকটার পিঠের ওপর খান কয়েক বক বসে (সম্ভবতঃ পোকা খাচ্ছে)।

    জঙ্গলের সমস্যা হল এইসব জন্তু জানোয়ারগুলো ওই দূরে দূরেই থাকে। ঠিকঠাক ইকুইপমেন্ট না থাকলে ওই দূর থেকে দেখেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। আর যদি ভালো কোয়ালিটির ছবিটবি তুলতে চান, তাইলে পেল্লায় লেন্স ঘাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। মুশকিল হল এই ধরনের লেন্স শুধু এই নেচার ফটোগ্রাফিতেই কাজে আসে, আর আমার সেদিকে খুব একটা আগ্রহ কখনোই ছিলো না বলে এসব লেন্সও আমার নেই। তবে ওয়াচটাওয়ারে উঠে মনে হল না এনে বোকামো হয়েছে। আমার ২৪-৭০মিমি লেন্স দিয়ে কিস্যু হবে না। অন্ততঃ ক্লাবের কারো কাছ থেকে একটা ৮০-৪০০ বা নিদেনপক্ষে ৭০-২০০ ধার নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তা এখন আর আপশোস করে কীই বা হবে এই ভেবে ওই ২৪-৭০ দিয়েই অল্প সল্প চেষ্টা করলাম। বিশেষ কিসুই হল না। বিশেষ করে খান কয়েক ধণেশ (হর্নবিল) খালি এদিক ওদিক করছিলো - ওগুলোর ছবি তুলতে পারলে কাজের কাজ হত...



    দিব্যি বসেছিলুম ওয়াচটাওয়ারে একখান মাদুর পেতে। হঠাৎ গোঁ গোঁ করে বেশ কয়েকটাই জিপসি ধেয়ে এলো বাইরের দিক থেকে। আর সেগুলো থেকে পিল পিল করে লোক। জিপসিপিছু ছজন মতন - কাজেই শ-খানেক বা আরো বেশি লোক তো হবেই। তারা এসেই খুব হন্তদন্ত হয়ে টাওয়ারের সামনে ফাঁকা জমিটাতে নেমে পড়লো - খুব হইচই - মোবাইলে ছবি, সেল্ফি স্টিকে মোবাইল লাগিয়ে দুশো মিটার দূর থেকে ভিডিও তোলার প্রচেষ্টা, সেটা হয় না বলে আরো খানিক হইচই, অবশেষে দুদ্দাড় করে টাওয়ারে ওঠা, টাওয়ারে খানিক ভূমিকম্পের এফেক্ট...আমরা না, মোটামুটি হাঁ হয়ে বসে আছি তখন...মানে ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে। ওয়াচটাওয়ারটা ফরেস্ট বাংলোর পাশেই, আর সেই সময়ে বাংলোর সামনে কিছু কাজ হচ্ছিলো - তার কিছু খুটখাট আওয়াজও ছিলো - যদিও সেই আওয়াজটা জঙ্গলের অ্যাম্বিয়েন্সে বেখাপ্পা ঠেকছিলো না। হঠাৎ, টাওয়ারের তলা থেকে বাজখাঁই গলায় কেউ চেঁচিয়ে উঠলেন - "আমরা মাল দিয়ে দেখতে এসেছি, তোরা এরকম আওয়াজ করলে আর জানোয়ার আসবে?"

    দুশো মিটার দূরে ওয়াটার হোলটায় চারটে বাইসন ছিলো, দুটো উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা দিলো।



    আরো অনেক কিছুই হচ্ছিলো। টাওয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে নীচে কারো উদ্দেশ্যে (তারস্বরে) বলা - এই আমার একটা ছবি তুলে দে তো, বা এর উল্টোটাও। স্টর্ক জাতীয় পাখি দু একটা হেঁটে বেড়াচ্ছিলো জলায় - সেগুলো দেখিয়ে "ওই দ্যাখ বাবু, ওই দ্যাখ - হর্নবিল"। একটা ময়ূরী জলার পাশে আসার চেষ্টা করছিলো - তার পেখম না থাকায় এমনই সমবেত দুঃখ হল, এ ময়ূরীটা লজ্জা পেয়ে আর এলোই না।

    সবুজ পোশাক পরা কয়েকজনকে দেখে বুঝলাম এরা ফরেস্ট গার্ড। তাদের কাছে জানলাম - এইসব গাড়িগুলো ডেইলি টুরিস্টদের গাড়ি। এঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ডুয়ার্স বেড়াতে এসে চালসা/মালবাজারের হোটেলে থাকেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট সকালে দু ঘন্টা আর বিকেলে দু ঘন্টার সাফারি চালায়, সেই টিকিট কেটে এঁরা জঙ্গলে ঘোরেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ ছিলো জঙ্গলে কী কী করা যায় আর কী কী করা যায় না সেগুলো বুঝিয়ে দেওয়া - সেটা হয় বলে মনে হল না। কারণ যা যা করার কথা নয় - উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরা থেকে শুরু করে চেঁচামেচি, হইচই, সেল্ফি স্টিক - সমস্তই হচ্ছিলো, এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে। আর একটা কাজ তো অবশ্যই করা উচিৎ - গাড়ির সংখ্যার ওপর একটা লিমিট রাখা। কারণ বিরক্ত হয়ে যখন নেমে এলাম, তখন অন্ততঃ খান পঁচিশেক জিপসি ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।

    নেমে আসাটা অবশ্য বোকামো হয়েছিলো - কারণ সেই যে ট্রাইবাল নাচের কথা বলেছিলাম - সেটা এই ডেইলি টুরিস্টদের প্যাকেজেরই অংশ। অত গাড়ির মিছিল সব গিয়ে পৌঁছলো পানঝরাতেই। আমরা পৌঁছে দেখি তখনই সামনের লনটা পুরো ভর্তি। টাওয়ারে থেকে গেলে সেখানটা খালিই পেতাম, হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়ালে হাতির দেখা পেলেও পেতে পারতাম...

    যাই হোক - ভিড়ের মধ্যে আর নাচ দেখতে যাইনি, বরং বাংলোর সামনে রকে বসে চা আর পকোড়া খেয়ে গল্পসল্প করলুম। যখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে (এবং সব টুরিস্ট ফিরে গেছে), আমি একটু বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম - তখন হঠাৎ কসম্‌সে বলছি - টায়ার ফাটার মত একটা আওয়াজ এলো উল্টোদিকে নদী পেরিয়ে জঙ্গলের দিক থেকে, আর তার পরেই "আঃ" করে একটা চিৎকার - বাজি ফেলে বলতে পারি সেটা মানুষের গলার, আর আওয়াজটা বন্দুক জাতীয় কিছুর। তারপরেই বড় বড় টর্চের আলো ওদিক থেকে দেখা যেতে লাগলো। পানঝরার কেয়ারটেকার দুজন বল্ল হাতি এসেছে সম্ভবতঃ, যদিও ওদের টর্চের আলো (সাথে আমার সাথে আনা বড় ক্যাম্প লাইটের আলো) দিয়েও কিচু দেখা গেল না। ওদিকের আলোগুলো কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে আবার নিভে গেলো। কী হয়েছিলো বুঝলাম না, তবে পরের দিন দেবাশিসের সাথে কথা বলে মনে হল চোরাশিকারের ঘটনা হলেও হতে পারে - ওদিকে বেশ কয়েকটা জঙ্গলের সিকিউরিটির দায়িত্ব এখন এসএসবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কারণ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ছড়াচ্ছে - এবং এসএসবির মুখের আগে গুলি চলে। ঠিক কী হয়েছিলো সেদিন, তা হয়তো কখনোই জানতে পারবো না - পরের দিন কাগজ বা লোকাল লোকের মুখেও কিছু শুনিনি, তবে যতবার ব্যাপারটা মনে পড়ে, ততবারই চোরাশিকারের ধারনাটাই আরো গেঁথে বসে।

    যাই হোক, পানঝরায় আমাদের এক রাতেরই থাকা ছিলো। জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে রাখলাম। পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে যাবো - গৌহাটি যাওয়ার রাস্তা ধরে জলদাপাড়া পেরিয়ে মেন্ডাবাড়ি/চিলাপাতা।
  • | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:২৬380149
  • চিলাপাতা মনে হয় শিলিগুড়ি থেকেও গিয়ে ঘুরে আসা যায় বেলাবেলি, তাই না?
  • Izhikevich | 781212.194.9003423.214 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:১৬380150
  • সকালের সাফারিটা পাবে না। বিকেলেরটা পেতে পারো। তবে মেন্ডাবাড়ির ক্যাম্পটায় একরাত থাকলে ভালোই লাগবে।
  • I | 785612.40.5623.2 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪০380151
  • চাপড়ামারি কেমন লাগলো? ওখানে একটা গরুর গাড়ির ভ্রমণ আছে শুনেছিলাম যে?
  • Izhikevich | 238912.66.90056.95 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:১৩380152
  • লিখবো। রিভিউয়ের আগে কদিন তুমুল প্রেশারের ফলে কয়েকদিন ধরেই পিঠে আর ঘাড়ে একটা খচখচে ব্যথায় একটু কাবু করে দিয়েছে। আজ ছুটি নিলাম বাধ্য হয়ে।
  • | 453412.159.896712.72 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৪380154
  • না সাফারি নেব না হয়ত। অ লিখেছ, ঐ অত ক্যাঁওম্যাও সহ্য হবে না। বুনু বলল এমনিই গড়ি নিয়ে গড়গড়িয়ে ঘুরে আসা যায় না।
  • | 453412.159.896712.72 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৫380155
  • গাড়ি নিয়ে
  • Izhikevich | 238912.66.90056.95 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৭380156
  • চিলাপাতা লিখি, তারপর ডিসাইড কোরো। সে অন্য জিনিস। চাপড়ামারির মত ক্যাঁওম্যাও নেই।
  • avi | 7845.11.0134.198 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:১৩380157
  • দমুদি, বেলাবেলি ঘুরে আসার মহৎ কাজে অংশীদার লাগলে অবশ্য জানাবেন। :)
  • | 453412.159.896712.72 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৩২380158
  • অতি অবশ্যই। লোকাল উদ্যমী ছেলেপুলেদের সাহায্য আমার অবশ্যই চাই।
  • avi | 7845.11.1289.229 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৩380159
  • উত্তরবাংলার উইকেন্ড নামে একটা টই খুলব। প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক ঋতুতে ভ্রমণ নিয়ে। ঘোরা, দেখা, থাকা, খাওয়া, গেলা। প্রতিবারেই কিছু নতুন পাই। যেমন দার্জিলিং থেকে ঘুম আসার একদম পাহাড়ের রিজ ধরে একটা ওল্ড মিলিটারি রাস্তা আছে। সেটায় আগে কখনও আসি নি। হিলকার্ট রোডের সব জ্যাম ইত্যাদি বাইপাস করে আজ এলাম। মিডো, পাইন বন, আর্মির কংক্রিট চাঙ্ক - সব মিলিয়ে একটা দারুণ অভিজ্ঞতা সন্ধের মুখে। এগুলো জমাতে হবে।
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৩380160
  • শেষ হয়ে আসছে বেড়ানোর দিন। পানঝরা থেকে আমরা যাবো মেন্ডাবাড়ি - সেখান থেকে আবার ফেরা শুরু। বহুদিন পরের বেড়ানোটা এখনো অবধি দিব্যি হয়েচে। আমাদের প্রথমবার ডুয়ার্স আসা - এখনো বোর হতে হয়নি কোথাও।

    আলিপুরদুয়ার থেকে মোটামুটি কুড়ি কিলোমিটার দূরে, জলদাপাড়ার পাশেই চিলাপাতা ফরেস্ট, হাসিমারা থেকে খুবই কাছে। এর মধ্যেই কোদাল বস্তির পাশে হল মেন্ডাবাড়ি জাঙ্গল ক্যাম্প - ডুয়ার্সের মধ্যে আরো একটা ইকো টুরিস্ট রিসর্ট। সময়মত গেলে আর কপালে থাকলে ক্যাম্পে বসেই আশেপাশে বুনো জন্তুজানোয়ার দেখতে পাওয়া যায় - কারণ চিলাপাতা রেঞ্জটা জলদাপাড়া আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে একটা ন্যাচারাল করিডরের কাজ করে। এখানে যেতে হলে আপনাকে চাপড়ামারি ছাড়িয়ে নাগরাকাটা, বানরহাট, বীরপাড়া পেরিয়ে যেতে হবে হাসিমারা। হাসিমারা গুরদোয়ারা পেরিয়ে আরেকটু এগোলেই চিলাপাতার শুরু। যাওয়ার পথটা জলদাপাড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে সোজা গৌহাটির দিকে, দুধারে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য চা-বাগান। মাঝে কথা হয়েছিলো এই রাস্তাটাকে ৪-লেন হাইওয়ে বানানোর - তাতে চা-বাগান তো নষ্ট হতই, আরো অনেক গাছ কাটা পড়তো - এমনকি জলদাপাড়ার গায়েও হাত পড়তো। কাজও শুরু হয়ে গেছিলো - নানা জায়গায় সেই কাজের চিহ্ন দেখতে পাবেন। কিন্তু পরিবেশের চাপে ভাগ্যক্রমে এই প্ল্যান বাতিল করে অন্য একটা রাস্তাকে চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। বেঁচে গেছে অনেকটা জঙ্গল। জানা নেই যদিও কতদিনের জন্যে - সভ্যতা ক্রমশ ডুয়ার্সের দিকে হাত বাড়ানো শুরু করেছে বেশ কিছুদিন হল...



    চাপড়ামারি থেকে হাসিমারা লাগলো ঘন্টাখানেক। দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু ৪০ কিলোমিটারের স্পীড লিমিট বাঁধা রয়েছে গোটা পথেই। হাসিমারা এয়ারবেস এর কাছেই রাস্তার ধারে দেবাশিসরা দাঁড়িয়েছিলো। ওরাও যাবে আমাদের সাথে মেন্ডাবাড়ি। বাকি পথটা দেবাশিসই চিনিয়ে নিয়ে গেলো আমাদের আগে আগে গিয়ে।

    পিচমোড়া রাস্তা থেকে হঠাৎই একটা কাঁচা রাস্তা ঢুকে পড়েছে বাঁদিকে জঙ্গলের মধ্যে - সেই রাস্তা ধরতেই চোখের সামনে দৃশ্য পুরো বদলে গেলো। চিলাপাতায় ঢুকলে চাপড়ামারিকে মনে হবে ঝোপঝাড়ের চেয়ে অল্প বড় কিছু। একইভাবে গাড়ি চলে চলে দুটো সমান্তরাল দাগ হয়ে রয়েছে - সেটাই রাস্তা। দুধারে ঘন জঙ্গল, গাড়ির গায়ে ছোঁয়া দিয়ে যায়। চাকার দাগদুটোর মধ্যেকার ঝোপঝাড় আরো অনেক ঘন। রাস্তার পাশেই খানায়েক ময়ূর খেলে বেড়াচ্ছে - গাড়িদুটোর দিকে একবার তাকিয়ে ফের খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। চলতে চলতে এসে পড়লাম কোদাল বস্তির সামনে। একটা ছোটো খাল পেরোতে হয়ে - আগে জলের মধ্যে দিয়েই পার হতে হত, কিছুদিন হল একটা কাঠের সাঁকো বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে একটা খোলা জায়গায় দুটো বাড়ি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর একটা কাঠের গোল বাড়ি - সেটা খাওয়ার জায়গা। দুটো দোলনা রয়েছে খেলার জন্যে। আর ওই চত্ত্বরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে আরো কয়েকটা ময়ূর। চারপাশে তারের উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা, পাশেই ছোটো গ্রামটা, আর বড় বড় গাছে ঘেরা চারদিক...অসংখ্য পাখি, বিশেষ করে টিয়ার মেলা...বাইরে গ্রামের দিকটায় একটা কুনকী হাতি দাঁড়িয়ে কান নাড়িয়ে চলেছে, বড় নয়, বাচ্চা একটা। গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে - তার ঢাকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। হাতিটা যেন সেইটা শুনেই মাঝে মাঝে দুলে উঠছে, যেন নাচছে।


    (বাড়িটার ছবি তুলতে ভুলে গেছি, তাই ট্রিপ অ্যাডভাইসর থেকে একটা ছবি দিলাম)

    বাড়িটার দোতলায় (নাকি একতলাই বলা উচিৎ) দুটো বড় ঘর আছে - ডর্মিটরি টাইপের। এক একটা ঘরে পাঁচ ছয়্জন থাকতে পারে। ঘরগুলো বিশেষ মেন্টেইন হয় না - কারণ মেন্ডাবাড়ির গ্ল্যামার কোশেন্ট কমই বলা চলে। ঠিক luxurious জায়গা তো নয়। বাথরুমের অবস্থাও খুব ভালো নয় - একটু ভাঙা ভাঙা। কিন্তু চলে যায়। ইন ফ্যাক্ট, এরকম জঙ্গলের মধ্যে ঝাঁ চকচকে ঘরদোর বেমানানই লাগতো হয়তো।

    [আর একটা বাড়ি আছে এখানে - সেটা আরেকটু উন্নত বলা যায়, কারণ এসি মেশিন বসানো রয়েছে - বছর দুয়েক আগে রাণিমা পদধূলি দিয়েছিলেন বলে বসানো হয়েছিলো। ভোল্টেজ এতই কম যে সে মেশিন বিশেষ চলেই না।]


    (এই ছবিটা নর্থ বেঙ্গল টুরিজমের সাইট থেকে দিলাম)

    দুপুরের খাওয়া অ্যাজ ইউজুয়াল - ভাত, আলুভাজা, ডাল, তরকারি আর একটা ডিমের ঝোল। সেদিন আমরা আটজন, পরিমাণও সেই অনুপাতে। রাঁধুনী আর কেয়ারটেকার দেবাশিসের পরিচিত - সেই কারণে, নাকি দেবাশিসের বক্তব্য অনুযায়ী গাঁজার ধুমকিতে - কে জানে - আট জনের জন্যে দুই ডজন ডিম! ডিমখোড়ের মধ্যে পড়ি আমি, সুমনা আর দেবাশিস...তাতেও একটা/দুটো এক্সট্রা হলে কথা ছিল - আটটা ডিম বেশি - ভাত খাওয়ার পর কোনোমতেই শেষ করা সম্ভব নয়।

    খাওয়াদাওয়া শেষে বেলা পড়ে আসার আগে দুটো গাড়িতে রওনা দিলাম জয়ন্তী নদীর দিকে। হাইওয়ে ধরে কিছুদূর গিয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভের সীমানা। তার মধ্যে দিয়েই চলে গেছে হাইওয়েটা সোজা ভুটান সীমন্তের দিকে। শুধু গেট পার হওয়ার আগে টিকিট কাটতে হয় - টোলও বলা যায়। কালো চকচকে পিচঢালা রাস্তা, দুপাশে বেশ ঘন জঙ্গল। কিন্তু যদি জন্তুজানোয়ার দেখার ইচ্ছে থাকে, এই পথে সেই ইচ্ছে পুরো সফল হবে না, কারণ শ'য়ে শ'য়ে মোটরগাড়ি আর মোটরসাইকেল যাচ্ছে এই রাস্তায়। এমনকি বাসও। পাখির ডাক শুনতে পাবেন - যদি না জঙ্গল কাঁপিয়ে কোনো বাইক চলে যায়। কিছু পাখি দেখতেও হয়তো পাবেন। দু একটা ছোটখাটো জন্তুও হয়তো - যেমন হরিণ (আমরা পেলাম একটা বার্কিং ডিয়ার)। তার বেশি কিছু চাইলে এখানকার সাফারি ছাড়া উপায় নেই।



    এই পথটা জঙ্গলের মধ্যে দুভাগ হয়ে একটা ভাগ চলে যায় জয়ন্তী নদীর দিকে। সেখানে বিকেলের দিকে যেন মেলা বসে যায়। নদী পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা ওয়াচটাওয়ার আছে - কিন্তু সেখানে যেতে চাইলে জিপসি জাতীয় গাড়ি নেওয়াই ভালো। আমরা হয়তো পেরিয়ে যেতে পারতাম বিআরভি নিয়ে, কিন্তু দেবাশিসদের ছোট গাড়ি, এগজস্টে জল ঢুকে গেলে চিত্তির। তাই নদী না পেরিয়ে নদীর ধারেই কিছুটা সময় কাটানো হল।

    নদীর খাতটা বেশ চওড়া - হয়তো বর্ষার সময় পুরো ভরে যায়। পুজোর সময় জল শুধু মাঝে অল্প কিছুটা, বড়জোর তিরিশ ফুট। নুড়িপাথরে মোড়া খাত, জুতো খুলে নদীর জলে নামলে টের পাবেন যে সেটা পাহাড় থেকে নেমেছে। উল্টোদিকে আবছা নীলচে ভুটান পাহাড় দেখা যায়। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর পক্ষে বেশ ভালো জায়গা, শুধু একমাত্র আপদ গাদা গাদা মোটরসাইকেল, আর তাদের স্টান্টবাজি। নুড়িপাথরের মধ্যে চাকার গ্রিপ ভালো ধরে না, তাই হাতের কাছে অফরোডিং এর সাইট হল এইটা...বাইক নিয়ে গোঁ গোঁ অরে জলে নামছে, নদীর মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার গোঁ গোঁ অরছে, তারপর আবার উল্টোদিকে ফিরে যাচ্ছে - এইটাই ওদের স্টান্ট। এর মধ্যে আমরা কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে, নদীর পাথর কুড়িয়ে ব্যাংবাজি করে ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে ফেললাম। তারপর সন্ধ্যে নামতে আবার বক্সার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মেন্ডাবাড়ি অবধি।





    মেন্ডাবাড়িতে আজ আমাদের প্রথম আর শেষ রাত্রি। ডুয়ার্সেও শেষ রাত্রি। শুধু বাকি রয়েছে পরের দিন ভোরবেলার সাফারি। চাপড়ামারির মত চিলাপাতায় কিন্তু অত বেশি সংখ্যক গাড়ি আসে না। ভোর পাঁচটায় আর বিকেল তিনটের সময় মেন্ডাবাড়ি থেকে দুটো, চিলাপাতা বাংলো থেকে চারটে - এই ছ'টা গাড়িই একসময় জঙ্গলে ঢুকতে পারে। সেরকমই একটা জিপসি আমরা বুক করে রাখলাম পরের দিন সকালের জন্যে।

    রাতে খাওয়ার (ঠিক ধরেছেন, রুটি আর চিকেন) পর বারান্দায় গল্প করছি। হঠাৎ নিস্তব্ধ জঙ্গল খানখান হয়ে গেল টিন পেটানোর আওয়াজে। সাথে তুমুল জোরে ঢাকের আওয়াজ, আর লোকজনের চেঁচামেচি। পাশের কোদাল বস্তি পুরো জেগে গেছে। কারণ বাংলোর ঠিক পাশের জঙ্গলে হাতি এসেছে। যদিও টর্চ ফেলেও আমরা কিছু দেখতে পাইনি। বাংলোয় সার্চলাইট থাকলে হয়তো দেখা যেত, হয়তো যেত না। শুনলাম হাতি চাইলে প্রায় নিঃশব্দেই যাওয়াআসা করতে পারে - কেউ টেরটিও পাবে না। আধ ঘন্টা টিন পেটানো, ঢাক, চিৎকারের পর সব শান্ত হল। আমরা ঘুমোতে চলে গেলাম। ভোর পাঁচটায় গাড়ি এসে যাবে।
  • সিকি | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫০380161
  • পড়ছি।
  • শঙ্খ | 2345.110.785612.250 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:১৯380162
  • ভালোলাগছে। চলুক
  • de | 90056.185.673423.56 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:২৯380163
  • কি সুন্দর নদীটা আর তার মধ্যে বাচ্চাগুলো!
    আপনাকে কি " হেসে ফেল্লে লজেন্স দেবা হবে না" বলা হয়েছিলো?
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৪380165
  • এইটা মানে ভয়ানক ইসে ব্যাপার। ইদানিং বাড়িতে মাঝেমাঝেই প্যাঁক খাই। কোনো কারণে হাসি হাসি মুখ করলে বা হাসলে, "দাদাভাই, এই দ্যাখ বাবা হাসছে" বা "ও ঋতি, শিগ্গির দেখে যা, বাবা হাসছে"...

    কীইইইই মুশকিল সব ব্যাপার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন