শীতকালে নিমোতে গেলে একটা হালকা করে পিকনিক হবে না সেটা কি আর হয়! আজকাল হাতে সময় কম থাকার জন্য প্ল্যান করে দামোদরের ধারে ইত্যাদি জায়গায় যাওয়া হয় না। যেটা হয় তা হল গ্রামের মধ্যেই কোন একজায়গায় রাতের দিকে রান্না-বান্না, খাওয়া দাওয়া এবং তার সাথে জমিয়ে ভাট।
বয়স হচ্ছে বলে আজকাল আর জিনিস পত্র বাজার করা বা রান্না বা অ্যারেঞ্জমেন্ট কিছুতেই হাত লাগাতে হয় না আমাকে। সব ভার ক্রমে তুলে নিয়েছে জুনিয়ার ছেলে পুলেরা। মানে আমার কাজ কাজ শুধু খাওয়া এবং অনন্ত ভাটে অংশগ্রহণ করা।
আর একটা ব্যাপার আছে – ফেসবুকের এত বেশী প্রসার বেড়ে গেছে আর কি বলব! সবার হাতে সব সময় আপডেট – আমি কেউকেটা কেউ লোক নয়, সেই আমাকেও নাকি ‘ফলো’ করা হয়! এই ফলো করা ফলতঃ অসুবিধাও দেখা দিয়েছে অল্প। আমাকে নিমোর আপডেট দিতে ছেলেপুলে ইতস্তত করছে – সেদিন সন্ধ্যেয় জাঁকিয়ে বসে গল্প শুরু হয়েছে, এমন সময় পুলিশ ভাই বলল, “ওরে বাঁড়া তোরা দাদা-কে আর গল্প শোনাস না! এক্ষুণি গিয়ে ফেসবুকে লিখে দেবে। তারপর আবার নাম না বদলে লিখে আরেকটু হলে আমার চাকরীটা যাচ্ছিল আর কি!” তবে গল্প প্রবাহ রোধিবে কে! সব গল্পই হচ্ছিল – আর শেষে ডিসক্লেমার, “প্লীজ দাদা এটা লিখো না কিন্তু নাম না পাল্টে”।
যাই হোক – এবারে ভাটের মাঝে দুই-খান পরামর্শ দিলাম বাড়ি করার ব্যাপারে। একজনের বাড়ি শুরু হবে তার প্ল্যান নিয়ে আর একজনের ইন্টিরিয়র করবে সেই নিয়ে। বুঝতেই পারছেন আম্র এই সব বিষয়ে পরামর্শ কোন কাজের নয় – তবু ছেলে ভালোবাসে বলে জিজ্ঞেস করে, সেই নিয়ে আলোচনা করা টাইম পাস হয়। এরা সবাই বৈষয়িক ব্যাপারে আমার থেকে অনেক পোক্ত – তাই যা করার সব নিজেরাই ঠিক করব সঠিক ভাবে।
সিমেণ্টের দাম কমেছে বলে ম্যানেজার বলেছে সিমেন্ট কিনে রাখতে। কিন্তু ২৭৫ বস্তা সিমেন্ট কিনে কোথায় রাখা হবে সেই নিয়ে ব্রেন স্টর্মিং হল খানিক। অজয়ের বালি নাকি দামোদরের সেই নিয়েও টানাপোড়েন। আমাদের চেনা যে বালির ব্যবসা করে সে নাকি প্রমিস করেছে চিনির দানার মত দামোদরের বালি দেবে। তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হল “তুই তো বাঁড়া শুধু বালির গাদার উপরে চিনির দানা ছড়িয়ে রেখেছিস – ভিতরের মাল সব কি জানা আছে”। সে ছেলে দাবী করল গাদার ভিতরের দিক থেকে বালি বের করে দেখাবে। এই বলে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে যেমন করে পেট ফাঁসিয়ে মার্ডার করা হয় – তেমন ভাবে বালির ভিতর জিনিস ঢুকিয়ে স্যাম্পেল বের করা হল।
ওদিকে অন্য ভাইয়ের শখ হয়েছে বাড়ির বাথরুমে বিশাল বাথটব বসাবে – সেই ভেবে ১৬*১৪ ফুটের বাথরুম ফেঁদে বসেছে। বাঁশতলার দিকে আট ফুটের জানালা করে সে নাকি বাইরের দিকে তাকিয়ে বাথটবে গলা ডুবিয়ে বসে থাকবে। আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, “সুকান্ত-দা, তুমি এবার শুধু বলো, আমি বাথটবে মাথাটা কোনদিকে করব?”। এর উত্তর অবশ্য খুব সোজা, বললাম, যেদিকেই করিস যেদিকে কমোড থাকবে শুধু সেদিকে মাথা করিস না। বাথটবে শুয়ে শুয়ে যে এলিভেশনে তাকাবি তাতে করে কমোডের কানার তলায় লুকিয়ে থাকা হাগার ছিটে দেখবি কেবল!
এমন আরো নানা বিধ গল্প হল। এক ভাই আবার এর মধ্যে হঠাৎ ট্রিপে ভাইজ্যাগ গিয়েছিল। সেখানে বীচের ধারে অনস্পট হোটেল দেখে ঠিক করতে গিয়ে তাকে নাকি প্রচুর উঁচু-নীচু জায়গায় হাঁটতে হয়েছে লাগেজ নিয়ে। তাই এত গায়ে ব্যাথা হয়েছিল যে পরের দিনগুলোতে সে ভাইজ্যাগ দেখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
এই করতে করতে রান্না হয়ে এল। রান্নার সিম্পল – ভাত, আলু-বাঁধাকপির তরকারি, খাসির মাংস এবং শেষ পাতে নলেন গুরের রসগোল্লা।
কাঠমিস্ত্রী রবি রসুন ছাড়াতে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু অন্যমনষ্ক। কোথায় একটা সোনাঝুরি গাছ দেখে এসেছে - সেটা কি করে কম পয়সায় হস্তগত করা যায় সেই নিয়ে হালকা চিন্তায় আছে বলল।
তবে এবারে তাপস ভাতের ব্যাপারে খুব দাগা দিয়েছিল আমার মনে – বাঁশকাঠি চালের ভার না করে মীনীকিট ব্যবহার করা হয়েছিল! এটুকুই যা দুঃখ রয়ে গেল সেদিনের পিকনিকে!