এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • উদয়ন ঘোষ - লেখা ও কিছু ম্যাজিক

    Somnath
    বইপত্তর | ২১ আগস্ট ২০০৭ | ১০৮৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • lcm | 138.48.127.32 | ২৭ অক্টোবর ২০১২ ০৩:৪১392536
  • মুকুলেশের মা... ---- স্মার্ট শার্প স্টাইলিশ লেখনী, কিন্তু কনটেন্ট ভূষি...
  • aka | 85.76.118.96 | ২৮ অক্টোবর ২০১২ ০০:০৪392537
  • সত্যিই খাজা। কোন গল্পই দাঁড়াল না। পড়ে টড়েই কইলাম। তবে হ্যাঁ ভাষাখানি ভালো বলে ৫৪ না কত পাতা পড়তে কষ্ট হল না।
  • .... | 127.194.192.9 | ২৯ অক্টোবর ২০১২ ২০:৫৫392538
  • জারী বোবাযুদ্ধ - জানুয়ারী - ২০০৪ - যারা নেশা ধরিয়েছিল অথবা অনেক মাটির তলে যেই মদ ঢাকা ছিল
    জারী বোবাযুদ্ধ - জানুয়ারী ২০০৫ - নীল সুখ (উদয়ন ঘোষ)

    এই দুটো নভেলেট নিয়ে একটা বই বেরিয়েছিল "দুই কন্যা" নামে। বইটা এখন আর পাওয়া যায় না। লালা-দাকে ধরলে পত্রিকার সংখ্যা দুটো পাওয়া যেতে পারে।

    জারী বোবাযুদ্ধের জানুয়ারী ২০০৯ সংখ্যাটাও দেখছি কিনেছিলাম, তাতে সুবিমল মিশ্রের উপর ক্রোড়পত্র করেছিল ওরা। সেখানে উদয়ন ঘোষের একটি চিঠি আছে "হাড়মড়মড়ি-র পাঠপ্রতিক্রিয়া জানিয়ে। আর উদয়নের একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে ২০ পাতা জুড়ে। এছাড়াও উদয়ন ঘোষের আরো একটি লেখা ঃ মৃত্যুর হাতে করাত ঃ বেয়ারিম্যান ঃ সেভেনথ সিল ও রয়েছে সেটায়।

    সৈকতদার কোনটা চাই জানিও।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৭:৫৯392539
  • এইটায় চাল্লাইন না লিখলে ওমনাথ, শৌভ এবং সর্বোপরি ঈশ্বর পাপ দেবেন। কারণ যদিও উদয়ন আমার প্রিয়তমাসু নন, কিন্তু তাঁকে স্টোরিটেলারের পর্যায়ে নামিয়ে আনা মেনে নিতে পারছিনা। অতএব, নেহাৎই তাৎক্ষণিক এই চাল্লাইন লিখেই ফেলা যাক। বলাবাহুল্য, এ আমার ব্যক্তিগত পাঠের গপ্পো। উদয়নের কোনো মূল্যায়ন করার দাবী, ইচ্ছা কিছুই নেই।

    আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে সমান্তরাল লেখালিখির খোঁজ করতে শুরু করেছিলাম, তাদের কাছে পাঁচটি নাম ছিল অবশ্যপাঠ্য। গদ্যে। সন্দীপন, দেবেশ রায়, অমিয়ভূষণ, কমলকুমার, এবং অতি অবশ্যই উদয়ন ঘোষ। এঁদের মধ্যে সন্দীপন, অমিয়ভূষণ এবং কমলকুমারকে পদবী ছাড়া ডাকা হত, বাকিদের পদবী সহ। কেন ফ্র্যাঙ্কলি জানিনা। সন্দীপন, কিংবা কমলকুমারে কী একটা ছন্দ আছে? আর উদয়ন কি ঘোষ ছাড়া ভাল্লাগেনা? কে জানে।

    তা, শুধু পদবী থাকা বা না থাকা নয়, এঁদের পাঁচজনের লেখালিখিতে দুস্তর তফাত। মিল একটাই, যে, এঁদের কারোরই লেখায় ঠিক গপ্পো পড়িনি কখনও, মূলতঃ গদ্য পড়েছি। এ শুধু কনটেন্ট-ফর্মের ব্যাপার নয়, এই পাঁচজনের দুনিয়াতেই ভাষাটাই আখ্যানের বিকল্প। বা বিকল্প আখ্যান। যে গপ্পো আমারে অমৃত দেবেনা, তাহা লইয়া কী করিব, এই হল যেখানে বীজমন্ত্র।

    কিন্তু এতো লেখার মানে নেই, যেহেতু চাল্লাইন লিখব বলেছি। বীজমন্ত্রটি এক হওয়া সত্ত্বেও এঁরা সব্বাই আলাদা। বাকিদের কথা থাক, উদয়ন ঘোষ কোথায় আলাদা? আমার মতে অগোছালোপনায়। সেটা কেয়ারফুল কিনা, সে অন্য প্রশ্ন। আমি সেখানে ঢুকবনা। আমি শুধু জিনিসটাকে খুঁটিয়ে দেখতে বলব। মানে, আমি যেভাবে দেখেছি।

    যদি আপনি সন্দীপন পড়েন, দেখবেন, কি অসম্ভব মমত্ব একেকটি টুকরোর উপরে। এতটাই, যে, একই টুকরো সন্দীপন বিভিন্নভাবে মিনিমাম পাঁচবার বলতে পছন্দ করেন। :) এ নিয়ে শঙ্খ ঘোষের ভারি চামৎকার একটা লেখা আছে। নাম-ধাম মনে নেই। তবে ওমনাথের কাছে নিশ্চয়ই আছে। যদি দেবেশ রায় পড়েন, ওই গাব্দা বোরিং ন্যারেটিভেও দেখবেন, কি যত্ন, কি পারিপাট্য। একই কথা নানাদিক থেকে বলে বলে গুষ্টির তুষ্টি না করে দিতে পারলে দেবেশ রায়ের শান্তি নেই।

    লেখা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, বাকিদের কথা আর বললাম না। সোজা উদয়ন ঘোষে ঢুকি। এদের বিপরীতে উদয়ন ঘোষ যদি দেখেন, দেখবেন, জাস্ট ছেড়ে দেওয়া। যেন একেকটা প্যারাগ্রাফ লিখে, কি লিখতে পারতাম দেখ, বলা। আর তারপরেই, ধুস, কি হবে এত লিখে। একে আপনি ল্যাদ বলতে পারেন, মিতব্যরিতা বলতে পারেন, যা খুশি বলতে পারেন। আমি বলব, পারিপাট্যের অভাব।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৮:১৬392540
  • ওমনাথ এখানে অনেক গপ্পোগাছা তুলেছে। অতো দরকার নেই। স্রেফ মুকুলেশের মা দেখুন। এখানে জাস্ট আভাসের মতো কতগুলো আখ্যানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, নজর করলেই দেখতে পাবেন।

    ধরুন গন্ধ। কারিগরিটি লক্ষ্য করুন। এই নিয়েই আস্ত একটা আখ্যান হতে পারত। সেটা ধরুন এরকমঃ

    "মেয়েদের বুকের গন্ধে আজকাল বমি পায়। শৈশবে মায়ের বুকের দিকে যতবার ছুটে যেতে চাইতাম, মা অন্য একজন পুরুষকে ডেকে আনত। সে ধরে ছুঁড়ে ফেলত। তার গায়ে পেশীর গন্ধ ঘামের গন্ধ। ঘামের গন্ধেও আজকাল বমি পায়।

    খাবার দেখলেও গা গুলিয়ে ওঠে। জন্ডিসের সময় সেদ্ধ মাছ দিত নিয়ম করে। খাবি না মানে? সেই মাছের গন্ধ সারাজীবন নাকে থেকে গেছে। এমনকি জ্যান্ত মাছের খলবল দেখলেও মনে হয় গলা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। হড়হড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে হিলহিলে মাছ আর বেরিয়ে আসছে বমি হয়ে।"

    পাঠক লক্ষ্য করুন, প্রথম প্যারাটি উদয়নের হলেও, দ্বিতীয়টি আমার। একান্তই আমার। গপ্পোটা এই লাইনে আমি লিখেই ফেলতে পারি, কেউ বলবেও না, আমি ঝেড়েছি। সত্যিই ঝাড়িনি। কারণ আখ্যানটি আদপেই উদয়ন ঘোষ লেখেননি। ওখানে শুধু সুতোটি ছেড়ে দিয়ে গেছেন। দেখ শালা এটাও লিখতে পারতাম। কিন্তু লিখলাম না। এরকম একটা ভঙ্গীতে।

    এইটা উদয়ন ঘোষের অগোছালোপনা। কিসের গপ্পো, কার কি। এরকম একটা ভাব। স্রেফ মুকুলেশ পড়লেই এইসব ছেড়ে যাওয়া সুতোর দঙ্গল পাবেন। সিঁড়ির নিচের কেন্নোর মতো তারা টুপটাপ ঝরে পড়েছে এখানে সেখানে। গুছিয়ে রাখার বালাই নেই।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৮:২৩392541
  • এবার, এতে করে কি লাভ হল, সে অন্য প্রসঙ্গ। এইটাই টেকনিক হতে পারে। স্রেফ অভ্যাসও হতে পারে। ভালো বা মন্দ হতে পারে। সে তক্কে আমি ঢুকবো না। ঢোকার মানেও নেই। কিন্তু কথাটা হল, উদয়ন ঘোষ এই। তিনি ফেলে ছড়িয়েই রাখবেন। মুকুলেশের মা কি হইতে পারিতেন, সেটা আর শেষ অবধি জানা যাবেনা। ও নিয়ে কমপ্লেন করে লাভ নেই। :)
  • i | 147.157.8.253 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৮:২৬392542
  • এই অগোছালোপনা, এই সব সুতো ছেড়ে রাখা-এরে আমি কই পাঠকের স্পেস। আম পাঠক তাহারে ভালোবাসেন না- এইই বুঝেছি সার।
  • সিধু | 141.104.245.196 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৮:৩১392543
  • এটা ইন্টারেস্টিং অবজার্ভেশন।

    এভাবে ভাবিনি
  • swati | 194.64.38.52 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ০৯:৫৬392544
  • আম্মো পড়িবারে চাই, কিন্তুক একটা সুতাও খোলে না-----
    কি যে করিঃ(
  • .... | 127.194.205.102 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১১:০১392546
  • স্বাতীকে,
    4shared এ একটা অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিন প্লীজ। যাকে বলে রেজিস্ট্রেশন বা সাইন আপ। তাহলে সেখান থেকে নামাতে অসুবিধে হবে না।
    আর মিডিয়াফায়ারে রাখা মুকুলেশের মা নামাতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কি অসুবিধে হচ্ছে জানালে, এখানে বা ভাটিয়ালিতে যতটুকু সম্ভব করতে পারি।

    CBZ বা CBR পড়ার খুব ভালো বিনামূল্যে বিতাড়িত সফটওয়ার নামাতে পারেন নিচের লিংক থেকে (ডানদিকে ডাউনলোডের নিচে দেওয়া ভার্সানে ক্লিক করে)

    http://www.cdisplayex.com/post/2010/12/21/Version-1.8-available
  • সৈকত | 212.54.74.119 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৬:৩৩392547
  • সন্দীপন নিয়ে শঙ্খ ঘোষের ঐ লেখাটার কথা বলল ঈশান যেখানে সন্দীপন যুব কংগ্রেসীদের কাছে আগের রাতে মার খেয়ে , পরের দিন শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে এসে, ওনাকে, ওর স্ত্রীকে এবং ওনার মেয়েকে ঘটনাটা বলেন? কিন্তু প্রতি বলাতেই ঘটনাটা একটু করে বদলে যায়। আর ক' বছর পরে, 'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি' লেখাটায় ঐ ঘটনাটা রাণার জীবনে উঠে আসে, কিন্তু সেখানেও বিশ পাতার ব্যবধানে ঐ মার খাওয়ার কারণটা বদলে যায়। প্রথমে বলা হয়, রাণা জানতই না যে সে কেন মার খেয়েছিল, কারণ মদের ঘোরে ছিল, আর বিশ পাতা পরে বলা হয়, যে রাণার আল-ফাল কথা বলা স্বভাব বলেই মার খেয়েছিল কারণ সে "আমি কংগ্রেসীদের ইয়ে মারি" বলে ফেলেছিল।

    সিদ্ধার্থ সন্দীপনকে নিয়ে যে লেখাটা লিখেছিল, এই ঘটনাটা উল্লেখ করে আমার একটা ছোট লেখার ইচ্ছে ছিল। বিশেষ ইচ্ছে হয়েছিল, যখন দেখলাম সিদ্ধার্থ লিখেছে যে কিশোরী মেয়ের পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ব্যাপারটা "কুকুর সম্বন্ধে ..." লেখায় এবং "রিক্তের যাত্রায় জাগ"-তে একই রকম ভাবে লেখা হয়েছিল। কদাপি নয়, এরকম একটা বক্তব্য রাখার ইচ্ছে ছিল।
  • সৈকত | 212.54.74.119 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৬:৪০392548
  • সোমনাথ,

    "দুই কন্যা" নামে একটা লেখা তো পড়েছি মনে হয়, বোবাযুদ্ধ-তে। নাকি "নীল সুখ"। এগুলো দরকার নেই। তোমার লিস্টে অতনু-কে নিয়ে কী কোন লেখা আছে? "তনু অতনু সংবাদ" দেখেছিলাম মনে হয়। ওটা আমার চাই।
  • ?? | 127.194.193.117 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৪১392549
  • সে কি কথা? তনু অতনু সংবাদ তো সমরেশ মজুমদারের লেখা। বইয়ের লিস্ট তো টইয়ের প্রথম পোস্টে।
  • সৈকত | 212.54.74.119 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৫৭392550
  • লেঃ। কিন্তু সোমনাথ যেন এরকমই একটা নাম বলেছিল। "অতনু কথা" চাই না। কিন্তু আর একটা কী যেন বলেছিল ? কী চাপ !! আর এই ?? কি সোমনাথ ? তাও বুঝছি না। কিন্তু সমরেশ মজুমদারের লেখা চাই না, এটা বুঝছি।
  • .... | 127.194.210.109 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৮:৫০392551
  • সৈকতদা,
    তনু - অতনু সংবাদ যদি বলে থাকি তো নিঃসন্দেহে ভুল বলেছি। "বোধ" পত্রিকার শেষে, যদ্দুর মনে পড়ছে উদয়ন ঘোষের সম্পূর্ণ লেখালেখির লিস্ট ছিল। অবশ্যই সেটাও আমার ভুল হতে পারে, বোধিদা হার্ড কপি দেখে বলতে পারবে। এই মুহূর্তে অমৃতমন্থন পড়ছি। প্রথমদিকের "কিম্ভুত" লেখাগুলোর জন্য লিটিল ম্যাগ লাইব্রেরী তো যাবই, লালাদাকে ফোন করে হয়ত উদয়ন ঘোষের বাড়ি ও চলে যেতে পারি।

    "উদয়ন ঘোষের ছোটোগল্প"-এর ভূমিকা পড়লে হয়তো যারা উদয়ন ঘোষের লেখা থেকে "প্লট" খুঁজছেন, তারা আগেই নিরস্ত হতেন। বা যারা উদয়ন ঘোষের গদ্য কে গল্প বা উপন্যাস ভ্রমে লক্ষণ মিলিয়ে নিতে চাইছেন, তারাও। পাঠপ্রবেশক লেখার সময় আমারই হয়তো লিখে দেওয়া উচিত ছিল, এখন যখন বোঝা গেল, এখনই লিখে দিই, তারই বয়ানেঃ

    ভূমিকা/লেখালেখি
    ===========

    লেখালেখি আমি করি বটে, তবে সে প্রসঙ্গে এক অক্ষরও লেখালেখির সময় এখনও আসেনি। যেভাবে সুনীল, শীর্ষেন্দু প্রমুখেরা লেখক এমনকি শঙ্খ ঘোষ যেমন আমি তেমনি। তবু যা করেছি অর্থাৎ ঐ লেখালেখি, সে-সব, বলতে কি মোটেই আমার নিজস্ব লেখালেখি নয়। আমার প্রাত্যহিকির সঙ্গে তার কোন মিল নেই। আমার স্বভাবের সঙ্গেও না। জয় যখন রানাঘাটে থাকত, তখন মনে হত সে প্রকৃতই কবির জীবন যাপন করছে। আমার জীবন-যাপন মোটেই লেখকের মত নয়। আমার স্ত্রী, মেয়ে, আত্মীয়স্বজন আমাকে লেখক বলে ভাবেন না। তারাই তো আমাকে সারাক্ষণ দেখছেন, অথচ তাদের চোখে আমি মোটেই লেখক নই। পরন্তু স্ত্রী-মেয়ে কেউ কেউ আমার আচরণ দেখে অথবা অপরের সঙ্গে আমার বোঝাপড়ার ব্যাপারে আমার মোদে ওফ োন্দু্ত দেখে বলেন, এই তুমি লেখক – তোমার প্রতিষ্ঠা হবে না।

    বলা বাহুল্য, প্রতিষ্ঠা আমার হয়নি।

    কতকগুলি হাস্যকর ব্যাপারও আছে। এই যেমন, খুব কাছে থাকেন, অথচ আত্মীয় নন। রক্তের সম্পর্ক নেই অথচ সুখে-দুঃখে পাশে আছেন, এমন সহকর্মী জানেন ভালোই আমি মাঝে মধ্যে লিখি, আমাকে গল্প বলেন – উদ্দেশ্য এই, ঐ গল্প শুনে আমি যাতে গল্প লেখার প্লট পাই। গল্প বলার পর দিন থেকে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকেন, কি শুরু করলেন? মাস খানেক পিছনে লাগার পর একদিন হয়ত হতাশ হয়ে বললেন, দূর মশাই, আপনার দ্বারা কিস্যু হবে না, একটা গল্প লিখতে ছ মাস লাগে! হাতে প্লট পেয়েও লিখতে পারেন না?

    এই প্লট, পাঠক, আমি বাস্তবিক বুঝি না। যেমন বুঝি না কনটেন্ট এবং তার সহদর সেই শৌখিন মেজাজি ফর্ম।

    অধ্যাপনার সূত্রে ছাত্রদের নম্বর পাইয়ে দিতে ঐ প্লট, পিপল, কনটেন্ট, ফর্ম নিয়ে সজ্ঞা অনুযায়ী বিস্তর কথা বলেছি কিন্তু কোন প্রকৃত লেখককে দেখিনি, ঐ সবের ধারে কাছে যেতে। আমার গদ্য পড়ে হয়ত বললেন, আপনার ফর্ম ভারি অদ্ভুত। আপনি বড় ফর্ম-সচেতন। আপনার গদ্যে কনটেন্ট থাকে না তেমন, থাকলেও তাকে আপনি ডেলিবারেটলি ভেঙ্গেচুরে দেন – আর সেটাই আপনার ফর্ম।

    এ সব শুনলে, বিশ্বাস করুন, আমি বোকা হয়ে যাই। কিছু বুঝতে পারি না। তথাকথিত গল্প লেখক আমি – কিন্তু গল্প লিখি কি না এ নিয়ে আমার গভীর সন্দেহ আছে। লোকে বলেনও দূর মশাই, আপনার গল্পে গল্প খুঁজতে হয়রাণ হতে হয়। তাছাড়া গল্প হবে সরল, শুনলে বা পড়লেই বোঝা যাবে অফ্তের অল্ল গল্প তো – কিন্তু মশাই আপনার গল্প সহজে বোঝা যায় না। গল্প থাকে না বলেই বোঝা যায় না। বিশ্বাস করুন, এও আমি বুঝি না ভাল। …।।আরো বিপাকে পড়ি যখন শুনি, আপনার একটি গল্পে অসংখ্য গল্প থাকে, গল্পকে আপনি ভৃত্য করে রাখেন, গল্প নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেন, তাদের নানা কাজে খাঠান।

    সর্বাপেক্ষা বিপদে পড়ি যখন শুনি আপনার স্টাইল সন্দীপনের মত – সন্দীপন আমাকে সম্প্রসারিত করেন।

    গদ্য তো মুখের ভাষা – আর আমি তো মুখের ভাষাতেই লিখি বলে ভাবি। আমার আর সন্দীপনের মুখের ভাষা এক নয়। সন্দীপনের মুখের ভাষা তথা গদ্য কত অত্ত্র্তিভে – তুলনায় আমার মুখের ভাষা কত ্লুম্স্য - আর আমার গদ্য, আমার চিঠি যারা পড়েন তারা জানেন ভাল, কত এলোমেলো, মোটেই স্মার্ট নয়।

    অথচ শুনি, উদয়ন ঘোষের গদ্য কত স্মার্ট। শুনে শুনে এক সুয় মনে হয় আমি কি উদয়ন ঘোষ? তাছাড়া আমি তো উদয়ন ঘোষের মতো বধ্যভূমিতে যাই না। ন্যাড়া বেলতলায় যায় ক-বার। বুদ্ধিমান হলে ঐ একবার। আমি তো বুদ্ধিমান। আমার বড় মেয়ে বলে, বাবা ম্যানেজার। ম্যানেজার অর্থে – ম্যানেজ করি ভাল – আর তারই নাম তো বুদ্ধি – কি, বুদ্ধিমান পাঠক, ঠিক বলছি তো? স্ত্রী বলেন, চতুর। চাতুর্যের দ্বারা কোন মহৎ কাজই করা যায় না। আমি কি কোন মহৎ কাজ করি? অতএব আমি চতুর। চাতুর্যের দ্বারা লেখালেখি হয় কি? হয় না। অবশ্য লেখালেখি আদৌ কোন মহৎ কাজ নয়। স্ত্রী বলেন, তোমাদের সাহিত্য পলিউটেড। পাঠক বলেন, উদয়ন ঘোষের গল্পে প্রায়সই প্রতিশ্রুতি থাকে। কমিটেড। জীবনাশ্রয়ী।।…।।শুনে ভাবি, আমি কি উদয়ন ঘোষ?

    উদয়ন ঘোষকে দেখি পোকা পিঁপড়ের কামড় খেয়ে পড়ে আছে ফক্সহোলে আন্ডারগ্রাউন্ডে। আমি তো সিকিওরড সার্ফেসেই থাকি। আমি কি উদয়ন ঘোষ?

    ভোরে আমি উঠি। ঘর প্রায় অন্ধকার থাকে। কিছু আলো না ফুটলে আমি লিখতে বসতে পারি না। আলো জ্বালি না ঘরের।

    গান শুনি। স্পষ্ট দেখি, উদয়ন ঘোষ চেয়ারে বসে – চৌকির উপর এলোমেলো ছড়ানো বই, ইনফরমেশন নোটস ও ক্যাসেট প্লেয়ার – দেখি, গানের ভিতর দিয়ে উদয়ন ঘোষ ভুবন দেখছেন। …দেখে ভাবি, আমি কি উদয়ন ঘোষ? আমার স্ত্রী, মেয়ে, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী সকলেই জানেন, আমার গানে ‘গ’ অর্থাৎ ‘গা’ এবং ‘গলা’ কিছুই নেই। অথচ টের পাই উদয়ন ঘোষের ভিতর। বাহির ছেড়ে ভিতরেতে, ঐ গান, অন্তঃপুরের তুমুল ঝড় তুলেছে। সে ঝড় অবশ্য শান্ত। টের পাওয়া যায়। তার হাওয়া আমার গায়ে লাগে না। তার শব্দও পাই না কোনো। সেই নৈঃশব্দ্য – ঐ নৈঃশব্দ্যে আমি স্পষ্ট দেখি শব্দ ভাঙ্গছেন। কেউ না বললেও আমি জানি কে তার বুকে বাঁশি বাজায়। তাকে আমি চিনি না। মাঝে মাঝে আমি টের পাই, সেও এক চিরস্তব্ধতা যেখান থেকে শব্দ, সেই সূত্রে বাঁশি এসেছিল। আমি কতজনকে জিজ্ঞেস করি ঐ চিরস্তব্ধতা কি – ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির কেউ তা সঠিক বলতে পারেন না।

    “নানান নামে ভোলায় তারা, নানান দ্বারে বেড়াই ঘুরে।”

    পাঠক বলেন, উদয়ন ঘোষ বলে কেউ নেই। আছেন জীবনানন্দের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, গানের রবীন্দ্রনাথ – বধ্যভূমির ডস্টয়ভস্কি, গ্যাম্বলার ডস্টয়ভস্কি। না বুঝে, কেবল মনটাজে ফেলিনি। বেয়ারিম্যান। ডীপ-এ না গিয়ে কামুর প্লেগ, কাফকার মেটামরফোসিসের কিছু ইমেজ। এহেন কমেন্টের সঙ্গেও আমার মিল নেই। কেননা ও-সব কিছুই আমার তেমন করে পড়া নেই।

    স্ত্রী বলেন, ৩৫ বছর ধরে তোমাকে দেখছি, তুমি কখন পড়লে কামু-কাফকা-ডস্টয়ভস্কি – হ্যাঁ জীবনানন্দের কবিতার প্রথম পংক্তির তালিকা পড় আর হ্যাঁ, রবীন্দ্রসঙ্গীত শোন। দিনরাত তো দেখি তর্ক করো।

    পাঠক বলেন, উদয়ন ঘোষের গল্পে তর্ক নেই। কেবল শান্তনু অবনি অথবা স্বপন। পাঠক, বিশ্বাস করুন, আমি ঐ তিন জনকে আদৌ দেখি নি কোনোদিন। আমার আচরণও ঐ তিন জনের মতো না। শান্তনুর মতো অত সাবমিসিভ আমি নই, অবনির মতো আমি অত উচ্চ পদেও আমি নেই, স্বপনের মতো স্যাক্রিফাইসও আমার নেই।

    প্রকৃতই উদয়ন ঘোষের লেখালেখি আমার লেখালেখি নয়। আমি সহবাসের পর স্বার্থমগ্ন হই। উদয়ন ঘোষকে দেখি সে তখন প্রবৃত্তির সঙ্গে দাবা খেলে। তাকে স্পষ্ট দেখেছি, সূর্যোদয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে। সে সূর্য দেখেছি নিকশ কালো হিম।

    আমারও নাম উদয়ন এবং শ্যামলি নামে বাল্য সখা ছিল, কিন্তু উদয়ন ঘোষের সদ্যজাত শ্যামলি-উদয়ন কথা একেবারে ভিন্ন বস্তু – পাঠক জানেন।

    উদয়ন ঘোষকে আমি হাড় হতে দেখেছি, হাড় হাভাতেও হতে দেখছি আর আমি উদয়ন চর্ব-চোষ্য খাই। দুপুরে খাভার শেষে প্ল্যান করি রাত্রে কি খাব। তাজ হোটেলে একদিন খাবো বলে ভাবি।

    স্ত্রী বলেন, খেয়ে খেয়ে তেল বেড়েছে তোমার – ঐ তেলে লেখা হয় না। দেখুন আমি কতো মোনোগ্যামিক, স্ত্রিবাক্যে লেখালেখি করি না আর – কিন্তু উদয়ন ঘোষকে দেখেছি কালেক্টিভ ম্যারেজের কথা বলতে। আমি কি পারি ঐ সব লিখতে? বস্তুত চিঠি ছাড়া। অ্যাপ্লিকেশান করা ছাড়া আর এই লেখাটি ছাড়া আমার প্রকৃতই লেখা হয় না।

    আসলে উদয়ন ঘোষ অতনু। সে লিখেও ছিল অতনুর কথা। টের পেয়েছি, সে কেবল তার পূর্বপুরুষ ভাবে – আদিকালেরও আগে পুরুষ ছিল না কেউ – কেউ ছিল না – কিছু ছিল না, সে টের পায়। অথচ সে বহুকামী। শান্তনু অবনি ও স্বপনের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে দেখেছি। চোখের পাতা সামান্য কাঁপেনি – আমি কি পারবো?

    সে হত্যাকারী। শব্দকে হত্যা করে। উপমাকে হত্যা করে। রূপকল্পকে হত্যা করে। গল্পকে হত্যা করে।

    জীবনকে হত্যা করে। এবং এই সব হত্যা করে সে অমর হতে চায়। যদিও মানুষ মরণশীল, উদয়ন ঘোষ অমর হতে চায়।

    না, তার কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা লেখার, জানি না। এও জানি না, লেখাকে সে সামাজিক কর্তব্য মনে করে কি না। লেখালেখি কি আত্মরতি, এও সে জানে বলে মনে হয় না। কেবল বুঝি, উদয়ন ঘোষ আসলে ‘সে’ – যার কোনো কিছুতে ‘গা’ নেই – তাই ্রিমে করতে চায় – কেননা পুনিশ্মেন্ত পেতে চায় সে – পুনিশ্মেন্ত পেলে সে তার শরীর টের পাবে, ভাবে। ভেবে সে অন্ধকারে লীন হয়ে যায়।

    পাঠক আমাকে ক্ষমা করুন, আমি তার লেখালেখির কিছু জানিনা – কেবল জানি, তার সাগরেও ক্রমশ লবণ জমছে – একদিন তার সব সমুদ্রের জল লবণ হয়ে যাবে।

    প্রকৃতই অনেক লবণ ঘেটে পাওয়া গেছে এ মাটির ঘ্রাণ। সে সুবাদে তার গদ্য হয় – আমি সে মাটি চিনি না, বিশ্বাস করুন। তাই জানি না, ঐ লেখালেখি অথবা কেন লিখি।
  • .... | 127.194.210.109 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৯:০০392552
  • মোদে ওফ োন্দু্ত = mode of conduct
    অফ্তের অল্ল = after all
    অত্ত্র্তিভে = attractive
    ্লুম্স্য = clumsy
    ডীপ = Deep
    পুনিশ্মেন্ত = punishment
    ্রিমে = crime
  • a x | 118.207.193.38 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৯:১২392553
  • অমিয়ভূষণের লেখালেখি কি কোথাও আছে বা সোমনাথ তুলেছে? পড়তে চাই।
  • .... | 127.194.210.109 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৯:১২392554
  • আরেকটি সমালোচনা তুলছি, ক্রিটিক না স্তুতি না রি-রীডিং সে প্রসঙ্গে না গিয়েই, জাস্ট সব এক জায়গায় রাখর জন্যে।

    অবস্কিওর উদয়ন বনাম নতুন উষার উজ্জ্বল উদয়ন !
    ===============================
    ---------------------------------------অর্জুন সেন

    মানুষ উদয়ন ঘোষ সম্পর্কে লিখতে হলে প্রথমেই লিখতে হয় তিনি একজন লেখক ছিলেন। আর তখনই, এক নিশ্বাসে লিখতে হয় তিনি একজন কমিউনিস্টও ছিলেন। তাকে নিয়ে লিখতে হলে পক্ষে-বিপক্ষের কথা অনিবার্যভাবে এসে যায় কারণ কমিউনিস্ট উদয়ন ঘোষ, মানুষের পক্ষে ছিলেন, এবং তাদের বিপক্ষে ছিলেন যারা এই সুন্দর পৃথিবীটাকে ব্যক্তি মালিকানার লোভে হাইজ্যাক করে মানুষকে, এবং সাথে সাথে এই পৃথিবীর সকল প্রাণীর বেঁচে থাকাকে বিপর্যস্ত করে ধ্বংসকারী এক উৎপাদন ও সমাজ ব্যবস্থার হর্তা কর্তা হয়ে বসে আছেন। যারা সবই নিজের সাম্রাজ্য মনে করে আসলে লুন্ঠনকেও লিগাল ইনকামে পরিনত করেছেন।

    তার প্রতিটি লেখাই ছিল এক যুদ্ধ ঘোষনা অথবা এক অঘোষিত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। মানুষের পক্ষ নিয়ে অমানবিক যা কিছু তার বিপক্ষে। ঐ বন্দুকের নল থেকেই একদা তার গদ্যের সৃষ্টি হয়। তার পেন ছিল যেন এক বন্দুক যার ঘোড়া টিপে তিনি লেখা সৃষ্টি করতেন। তার প্রতিটি শব্দ, বাক্য, গদ্য বা পদ্য ছিল অমানবিকদের হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে কামান দাগা।

    তিনি শিক্ষকও ছিলেন। বাংলার অধ্যাপক হয়ে অধ্যাপনার সূত্রে ছাত্রদের নম্বর পাইয়ে দিতে প্লট, পিপল, কনটেন্ট এবং ফর্ম নিয়ে সংজ্ঞা অনুযায়ী বিস্তর কথা নিজের জীবদ্দশায় বলেছেন কিন্তু নিজের লেখালেখির মধ্যে দিয়ে আসলে, এই সব প্লট, কনটেন্ট এবং তার সহোদর সেই শৌখিন মেজাজি ফর্মকে ডেলিবারেটলি ভেঙেচুরে, শব্দকে হত্যা করে, উপমাকে হত্যা করে, রূপকল্পকে হত্যা করে, গল্পকে হত্যা করে, জীবনকে হত্যা করে অমর লেখা সৃষ্টি করে বহু মানুষকে লিখতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন কিভাবে লেখন শৈলীতে ডায়ালেক্টিকাল হয়ে মানুষের পক্ষ নিয়ে লিখতে হয় অমানবিকদের বিপক্ষে। শিখিয়েছেন কিভাবে এক একটি শব্দ একএকটি বুলেট হতে পারে যা মৃত্যু ঘটায় অমানবিক মনন ও কৃষ্টির, জন্ম দেয় এক মানবিক সাহিত্য-সংস্কৃতির।

    বাংলা এবং বাংলা সাহিত্যে পন্ডিত ছিলেন তিনি কিন্তু সমাজ বিজ্ঞান বা অর্থনীতিতেও অনেক পন্ডিতের ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন কারন তাত্তিক কমিউনিস্ট হিসাবে তাকে এই সব বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করতে এবং সদা সজাগ থাকতে হত ঐ অনিবার্য কারনেই। তাই তিনি কমিউনিজমেরও শিক্ষক ছিলেন এবং নিজে হাতে তৈরী করেছেন বহু কমিউনিস্ট। ঐ কমিউনিস্ট হবার সুবাদেই প্রচুর পান্ডিত্য ও গভীর গবেষণার ভিত্তিতে তিনি যখন ‘বাংলা সাহিত্যে রাজ সভার প্রভাব’ শিরোনামে তার পিএইচডি থিসিস জমা করলেন তা প্রত্যাক্ষিত হল অশ্লীলতার দায় – তখনই আবার হাতে নাতে প্রমাণ পেলেন সাহিত্য আর রাজনীতির গভীর সম্পর্ক।

    প্রিয় পাঠক ক্ষমা করবেন যে মানুষ উদয়ন ঘোষকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বারংবার তার লেখালেখি এবং তার কমিউনিজমের কথা লিখতে হবে, কমিউনিস্ট কচকচির কথা লিখতে হবে, পক্ষে-বিপক্ষের কথা লিখতে হবে। মানুষ উদয়ন ঘোষ সিকিউরড সার্ফেসে থাকলেও, লেখক উদয়ন ঘোষ বিপক্ষের গোলাগুলির মাঝে পোকা পিঁপড়ের কামড় খেয়ে পড়ে থাকতেন ফকস্‌হোলে আন্ডারগ্রাউন্ডে।

    লেখক উদয়ন ঘোষ, নাকি মানুষ উদয়ন ঘোষ, যিনি আদ্যন্ত পলিটিক্যাল অ্যানিমাল তাই কমিউনিস্ট উদয়ন ঘোষ, গুলিয়ে যায় কারন তিনি আদ্যন্ত ডায়ালেকটিকাল, হাড় হতে দেখতে পেতেন, হাড় হাভাতেও দেখতে পেতেন। স্পর্শকাতর হাংরিদের আখের গোছানোর সারমর্মহীন গরীব-প্রেম বা প্রীতি নিয়ে লিখতে গিয়ে রাগে তার রগ ফুলে যেত। হাংরিদের এই স্পর্শকাতরতা নিয়ে তার লেখা পড়লে পরিষ্কার হয়ে যায় পেটি বুর্জুয়া মানে কি, আর এই পেটি বুর্জুয়া সাহিত্য-সংস্কৃতিই বা কি। তার সেই লেখা একবার পড়েই চিনতে শিখি কে শত্রু আর কে মিত্র, অন্তত সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে, লেখালেখির জগতে।

    তিনি হাড় হাভাতেদের দেখতে পেয়েও চর্ব-চোষ্য খেতেন, দুপুরে খাবার শেষে প্ল্যান করতেন রাত্রে কি খাবেন। তাজ হোটেলে একদিন খাব বলে ভেবেছিলেন এবং খেয়েওছিলেন হাড় হাভাতেদের মত যারা কখনই চর্ব-চোষ্য খেতে পাননা। তিনি শেখাতেন কমিউনিস্ট হওয়া মানে সব মানবিক প্রবৃত্তির উর্দ্ধে গিয়ে, সব গ্রিভান্স ভুলে গিয়ে, তার প্রিয় স্বপনের মত স্যাক্রিফাইস করা নয়, কারণ হাড় হাভাতে কমিউনিস্টদের প্রকৃত অর্থেই কিছুই নেই, তাই স্যাক্রিফাইস করার বা হারানোরও কিছু নেই। তাদের শুধু চাইবার আছে, পাওয়ার আছে, ছিনিয়ে নেওয়ার আছে। কমিউনিস্টরা রসগোল্লা খেতে চায় কারন তারা মালিক হতে চায় এই গোটা পৃথিবীর সকল সম্পদের। ব্যক্তি মালিকানা, এবং বর্তমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্ট্যাটাস কুয়ো মেনে নিয়ে ইলেকশনের পর ইলেকশনে গরিবদের বোকা বানিয়ে তাদের, ঐ গরিবদেরই, “গনতান্ত্রিক” অনুমতি নিয়ে শোষন চালিয়ে যাওয়ার রাজনীতি যারা করেন তারা কখনই “কমিউনিস্ট” হতে পারেননা, বিপ্লবী তো নয়ই।

    তিনি শেখাতেন বিপ্লব মানে কিছু মানুষের ভালো থাকা ও আর সকলের খারাপ থাকার বিরুদ্ধে একটি অভিযান, একটি রক্তাক্ত, হিংসাত্মক যুদ্ধ। বিপ্লব হল গরিবদের ঐ ভাল থাকা কিছু মানুষের চামড়া গুটিয়ে তাই দিয়ে জুতো বানানোর এক ধরনের ইচ্ছা তাই বিপ্লব কোনো প্রদর্শনী অথবা ম্যাজিক নয়। বিপ্লব কোনো রুমালের এমব্রয়ডারিও নয়।

    তিনি শেখাতেন On Contradiction পড়। জানবে যেখানেই অন্ধকার, সেইখানেই আলো আসবেই একদিন। জানবে, এ দুনিয়ায় যেমন মরুভুমি আছে, তেমনি আছে সমুদ্র। তেমনি মালিক আছে, আর আছে গোলাম। Antagonistic। ঐসব relation আদ্যন্ত antagonistic। একই পয়েন্টে থিসিস – অ্যান্টিথিসিস।

    তাই তিনি লিখেছেন Spring thunder। নকশালবাড়ি। History is linked to the class struggle. It is never neutral – never above the battle। আমি ঐ শ্রেণী সংগ্রামে যাব, যাদুকর, আমি দেশব্রতী হব, আর ম্যাজিক না, এবার real reality-কে ধরব। এই যে দেশের মানুষ বলে, জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। এই যে সে বল্ল, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। এ সবের পর সে যে স্বপ্ন দেখে কেড়ে খাবার – তা magic নয়? তোমার নকশালবাড়ি magic reality নয়?

    তার লেখালেখিই ছিল তার কমিউনিস্ট প্র্যাকটিস তাই তিনি পেশাদারি লেখক কোনোদিনই হতে পারেন নি, জনপ্রিয়তো নয়ই কারণ জনপ্রিয় ঘুম পাড়ানো পপ সাহিত্য সংস্কৃতি যারা করেন তাদের লেখালেখির শ্রেণি চরিত্র আমাদের, হাড় হাভাতেদের, মেহনতি মানুষের জানা আছে। যারা পেশাদারি লেখালেখি অথবা সাংবাদিকতা করতে গিয়ে হা হুতাশ করেন যে শত শোষনেও এই হাড় হাভাতেদের, এই কমিউনিস্টদের কেন এত অভিযোগ আছে, কেন তাদের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল তাদের শুধু গ্রিভান্স আছে (বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বপন দাসগুপ্ত একটি বড় পত্রিকায় ইদানিং লিখেছেন) এবং স্বপ্ন দেখেন যে গরিবরা তাদের সব শোষন সংক্রান্ত গ্রিভান্স ভুলে এনটারটেইনিং জনপ্রিয় সাহিত্য সস্কৃতিতে মশগুল হয়ে বিপ্লব ভুলে থাকবেন, যাদের আপসেও নেই আপত্তি বলে রুজি রোজগারের জন্য রফা করেছেন দুহাতের আঙুলগুলো বেচে দিয়ে তারা কখনই কমিউনিস্টদের কথা বলতে পারবেন না, হাড় হাভাতেদের পক্ষে গিয়ে নিজেদের কলমকে বন্দুক হিসাবে ব্যবহার করে শব্দ, বাক্য, ফর্ম ও কনটেন্ট দিয়ে অমানবিক ব্যক্তি মালিকানার দালালদের উপর দফায় দফায় কামান দাগতে পারবেন না।

    উদয়ন ঘোষ তাই কোনোদিনও, শত আহ্বান ও প্রলোভন সত্তেও, বড় পত্রিকায় লিখে পেশাদারি লেখক হবার চেষ্টা করেননি। তার মুখে শুনেছি একবার তার লেখা ছাপা হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার কোন নির্দিষ্ট লেখায় কি কি পরিবর্তন করলে তা ছাপার উপযুক্ত হবে শোনানো হয়। ঐ রাজনৈতিক কনটেন্ট ছেটে বাদ দিলেই তা ছাপার উপযুক্ত হবে শুনে তিনি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, তুরন্ত সে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তার অনেক গুণমুগ্ধ পাঠক তাকে অনেক বার বলেছেন আপনি কেন বড় কাগজে লেখেন না, আপনি কেন আপনার বই প্রকাশে অনাগ্রহী, ইত্যাদি, ইত্যাদি। অনেককে অনেক রকম উত্তর দিলেও আসল কারণ ছিল বড় কাগজের মানব-বিরোধি, কমিউনিজম-বিরোধি জনপ্রিয়, মনমাতানো ও এনটারটেইনিং (যাকে কেউ কেউ কমার্শিয়াল লেখা বলেন) লেখালেখি তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি লেখক কিন্তু তিনি কমিউনিস্টও এবং সে, উদয়ন ঘোষ, কোনোদিনও কমিউনিজম বাদ দিয়ে লেখার কথা ভাবতে পারেননি। লেখা বেচে নিজের আখের গোছাতে পারেননি। অথবা ঐ আখের গোছানোর জন্য লেখালেখি করেননি।

    তবুও তিনি কি সত্যিই প্রতিষ্ঠান বিরোধী? এই বিষয় বিতর্ক উঠেছে বহু, এমনকি তার গুণমুগ্ধ লিটিল ম্যাগের পাঠক-লেখক-সম্পাদক মহলেও। বেশ মনে পড়ে, একবার তো তাকে ডেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রিতিমত বিচার সভাই বসিয়ে দিলেন এক দল পাঠক-লেখক-সম্পাদক। যথেষ্ট প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা না করার দায় তাকে তারা দোষী সাব্যস্তও করলেন। তিনি কোনোদিনই বুকে প্ল্যাকার্ড ঝোলানো, ইংরাজিতে যাকে বলে wearing on one’s sleeves বামপন্থায় অথবা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় বিশ্বাস করতেন না। তার বামপন্থা অঘোষিত, তার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতাও অঘোষিত, তার সামাজিক ও রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বা লেখালেখির মধ্যে দিয়ে কোন সামাজিক কর্তব্য পালন করাটাও ছিল অঘোষিত। কারণ তিনি মনে করতেন এই সব ঘোষনা করাটাই এক ধরনের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা, এক ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যা শেষ অবদি সেকটারিয়ান, যা স্বপক্ষের সৈন্যদের মধ্যেই বিভাজন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, বাম ঐক্যের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

    তাই তার লেখালেখির মধ্যে শুধুমাত্র অঘোষিত পক্ষ নেওয়াই ছিল, বিপক্ষের বিরুদ্ধে; এবং‌, সেই সৃষ্টির মধ্যে ছিল না কোন তকমা আঁটা রাজনৈতিক দলের নির্ধারিত চিন্তা, তা সে যত বৈপ্লবিকই দল হোক না কেন কারণ তিনি বুঝতেন যে কোন এক বা একাধিক নেতার চিন্তা তা যদি প্রকৃত অর্থে from the masses, to the masses প্রক্রিয়ায় উঠে না আসে তা’হলে তা আসলে সবসময়ই সেকটারিয়ান। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রয়োজনে বুকে তকমা আটা রাজনৈতিক দলের ধামাধারি করে রিয়ালপলিটিকের নোংরা জল ঘাটতেও পিছপা হননি তিনি। আরএসএস (ভাবা যায়?), আরএসপি থেকে শুরু করে সিপিআই, সিপিআইএম এবং শেষে সিপিআইএমএল সব রাজনৈতিক ঘাটের জল খেয়েছিলেন তিনি তার দিন বদলের তৃষ্ণা ও ক্ষুদা মেটাতে। এত ঘাটের জল খেয়েও কবীর সুমনের লাইন তার নিজস্ব স্বভাবের চিরাচরিত প্রথায় নিজের লেখায় পাঞ্চ করে আমাদের জানালেন পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনো গেল না।

    কমিউনিস্ট উদয়ন ঘোষও তাই মার্কস সাহেবের মতই সর্বক্ষন doubt করতেন সবকিছুকে। তার লেখায় জানিয়ে দিলেন সিএমকে (চারু মজুমদারকে অথবা যার সাব-টেক্সট হল সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনীতিকে) বিজ্ঞানমনস্ক না হলে পৃথিবীকে বদলানো যায় না। নিজের লেখায় ডকুমেন্ট করলেন সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনীতির দুই পরিনতি – একদিকে পংকজদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিভ্রান্তি, অন্যদিকে অর্জুনদের ক্রিটিক সেই সব রাজনীতি সরবস্ব রাজনীতির যা কিনা অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক কাঠামোকে না ভেঙ্গে শুধুই রাজনৈতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। টের পেতে শুরু করলেন যে দিন বদলের প্রশ্নটা আদৌ শুধুই রাজনৈতিক নয় । পারিবারিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে অপরিবর্তিত রেখে বা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল তা বন্দুকের নল দিয়েই হোক বা ব্যালট বাক্সের বুলেট দিয়েই হোক কিছু মানুষের ভাল থাকাকে অপরিবর্তিত রেখে দেয়।

    বিজ্ঞান মনস্ক ছিলেন বলেই, গুরু হয়েও শিষ্যের মতামতকে গুরুত্ব দিলেন। আমি এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রন্থটিতে এই নতুন মতকে শুধু ডকুমেন্ট করলেন কারণ তখনও তার নিজের সব doubt সম্পূর্ণভাবে যায়নি। এই পংকজ-অর্জুনদের বিভ্রান্তিকারী যাতায়াতে উন্মাদ হয়ে চলে গেলেন লুম্বিনি পার্কে। কিন্তু পাঠককে বলে যেতে ভুললেন না যেন সে, পাঠক, ঐ অর্জুনের লেখা critically পড়েন।

    পরবর্তিতে স্বপনের ম্যাজিক রিয়ালিটি গ্রন্থে ফিরে আসলেন নতুন উদ্যমে, বিভ্রান্তিকারি উন্মাদনা কাটিয়ে উঠে। স্বভাবসিদ্ধভাবে জীবনানন্দের লাইন তুলে এনে লিখলেন তৃতীয়-চতুর্থ-আরো সব আন্তর্জাতিক গ’ড়ে-ভেঙে-গড়ে দীপ্তিমান কৃষিজাত জাতক মানব এসে যায়। মহান সিংহও আসে যায় অনুভাবনায় স্নিগ্ধ হয়ে। যদিনা সূর্যাস্তে ফের হয়ে যায় সোনালী হেঁইয়ালি – এই doubtটুকু পোষন করেও আবার নিয়ে আসলেন অর্জুনের সেই দলিল। এবার কিন্তু নিজেই ব্যাখ্যা দিলেন, ছোট ছোট টিকায় দলিলের কথায় কথায়। অর্জুনের positive বাক্যের শেষে উপসংহারে বললেন তবেই anti-people রাষ্ট্র মুছে যাবে, তার তল্পিতল্পাও মূল্যহীন হয়ে যাবে, তার সবরকমের রঙ-বেরঙের মাতব্বরি, ক্ষমতার লোভ, কিছু মানুষের কেবলি ভালো থাকা, বাকি মানুষদের কেবলি হেমন্তের অবিরল পাতার মতো উড়ে যাওয়া – সব শেষ হবে। শেষ হবার নয় মানুষের এই অবিরাম সুখানুসন্ধান!

    অধ্যাপনা করেও, মহান কমিউনিস্ট তাত্তিক নেতা হয়েও, লেখক উদয়ন ঘোষ অথবা কমিউনিস্ট উদয়ন ঘোষ আজীবন কাটালেন ছাত্র হয়ে। ছাত্রদের থেকেও শিখে, যেখানেই শেখার কিছু আছে সেখান থেকেই শিখে। নোবেল পাওয়ার পরও মার্কোয়েজের লেখা পড়ার সুযোগ হয়নি তার, উদয়ন ঘোষের। কিন্তু এই অধমের প্ররোচনায় যখন ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড পড়লেন, দেখা গেল কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি মার্কোয়েজ গুলে খেয়েছেন। শুধু তাই নয়। একেবারে আত্মস্থ করে নিজের করে নিয়েছেন। নিজেও চিরকালই লিখতেন ঐ ম্যাজিক রিয়ালিটি কিন্তু এবার যেন একেবারে সচেতনভাবে তাই করতে লাগলেন। কবির সুমনের ক্ষেত্রেও তাই। যুবাদের আড্ডায়, বিশেষত যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে তখন সুমন সবে নাম কিনতে শুরু করেছে – বৃহত্তর শ্রোতা বা পাঠকের কাছে তখনো পৌঁছায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অনুষ্ঠানের noise-এ ভরা distorted রেকর্ডিং শুনেই টের পেয়ে গেলেন সুমন একটি খনি – শব্দের খনি – বাক্যের খনি - লিরিকের খনি। নিজের উদ্যোগেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, বন্ধুত্ব পাতালেন। পরবর্তি সব লেখায় সুমনের লাইন আর তার, উদয়ন ঘোষের, বাক্য মিলে মিশে একাকার হয়ে যেতে লাগল।

    অবশ্য এই কাজটি তিনি চিরকালই করে এসেছেন। অন্যের বাক্য নিজের বাক্যের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে এক অদ্ভুত গদ্যের সৃষ্টিকার তিনি। যে গদ্য একাধারে পদ্যও বটে। যে গদ্য পদ্যেরই মত দ্ব্যর্থক বা নিঃসন্দেহে একাধিক অর্থক। টেক্সট এবং সাব- টেক্সটের এক আশর্য খেলা – একই বাক্যের পরতে পরতে অনেক কন্টেন্ট। লেখা কখন নেহাতই পেটি বুর্জুয়া আত্মরতি আর কখন কমিউনিস্ট কামান দাগা তা গুলিয়ে যায়। তেমনি গুলিয়ে যায় কোন বাক্য তার আর কোন বাক্য মাওসে তুং, লিন পিয়াও, সরোজ দত্ত, চারু মজুমদার, বিনয় মজুমদার, প্রতুল মুখপাধ্যায়, সুমন চট্টপাধ্যায় (কবীর সুমন), জয়দেব, রাসেল সাহেব, ড্যানিয়েল বেল, শেলী, শেকস্পিয়ার, জীবনানন্দ, মরগ্যান, রবীন্দ্রনাথ, কডওয়েল, ডস্তয়ভস্কি, অর্জুন সেনের, অথবা কোন ইমেজ কাফকা, কামুর, কোন মন্টাজ ফেলিনি, বেয়ারিম্যান, আইজেনস্টাইন, ঋত্বিকের, তাও গুলিয়ে যায়। খুব সচেতনভাবে ব্যবহার করলেও তিনি বিনীতভাবে জানিয়েছেন অজ্ঞাতসারে আরো অনেকের বাক্য তার বাক্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রচনায়। বিধগ্ধ লেখকের পাঠককেও বোধহয় বিধগ্ধ হতে হয় না হলে সেই লেখকের লেখা থেকে যায় শুধুমাত্র আকর্ষনীয় গদ্য, সেই লেখার ফর্ম ও কনটেন্টের প্রকৃত মূল্যায়ন অথবা বলা ভালো appreciation বা পূর্ণ উপলব্ধি করা অসম্ভব হয়ে যায়।

    অনেকে বলেন উদয়ন ঘোষ নাকি obscure লেখক, তাকে বোঝা যায় না।

    নিজেই লিখেছেন তথাকথিত গল্প লেখক আমি – কিন্তু গল্প লিখি কিনা এ-নিয়ে আমার গভীর সন্দেহ আছে। লোকে বলেনও, দূর মশাই, আপনার গল্পে গল্প খুঁজতে হয়রান হতে হয়। তাছাড়া গল্প হবে সরল, শুনলে বা পড়লেই বোঝা যাবে after all গল্প তো – কিন্তু মশাই আপনার গল্প সহজে বোঝা যায় না। গল্প থাকে না বলেই বোঝা যায় না। বিশ্বাস করুন, এও আমি বুঝি না ভালো। …আরো বিপাকে পড়ি যখন শুনি, আপনার একটি গল্পে অসংখ্য গল্প থাকে, গল্পকে আপনি ভৃত্য করে রাখেন, গল্প নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেন, তাদের নানা কাজে খাটান।

    আমার বিনীত মতে উদয়ন ঘোষ এতটুকুও obscure লেখক নন। তার লেখা জটিল হতে পারে, ভুল বললাম – তার লেখা অবশ্যই জটিল কিন্তু obscure নয় কারণ তিনি খুব স্পষ্টভাবেই একটি গল্পই লিখেছেন সারা জীবন – যা আসলে গল্প নয় স্বপ্ন – রিয়ালিটি নয়, ম্যাজিক রিয়ালিটি, বাস্তব নয় কল্পনা -যে গল্পে আছে শুধু একটি স্বপ্ন, একটি কল্পনা – একদিন আসবে, একদিন আসবে যেদিন ধনীর পিঠের চামড়া দিয়ে গরীবের জুতো তৈরি হবে – ঐদিন আসছে। ঐদিন আসছে।

    কিন্তু বিনয় মজুমদারের মতই তিনি বিশ্বাস করতেন শুধুমাত্র যা আছে তা কল্পনায় দেখাই সম্ভব, এর বিপরীতভাবে যা সব কল্পনা করি তাই সব আছে। তাই তার কল্পনালোকের স্বপন অথবা বিপ্লব কল্পনালোকের সব প্রাণীদের মতই জীবিত – মানুষরা তাদের দেখতে পায় কল্পনালোকে, স্বপ্নলোকে, ইহলোকে। তিনি বলতেন লেখার সময় মাইনর পয়েন্ট থকে মেজর পয়েন্টে যেতে হয় এবং তা করতে হয় সিনেম্যাটিকভাবে – মনটাজের সাহায্যে। তাই তার একটি গল্পে অসংখ্য গল্প থাকে – মাইনর পয়েন্টও থাকে আবার তার থেকে মেজর পয়েন্টও থাকে। অথচ কাটা কাটা মনটাজের বিভিন্ন দৃশ্যকে ব্যবহার করে তিনি ঐ একটি গল্পই, যা কিনা আসলে স্বপ্ন, মানুষকে স্পষ্টভাবে, এতটুকুও obscurity না এনে, দেখিয়ে যান। গল্পকে তিনি ভৃত্য বানিয়ে রাখেন, গল্প নিয়ে যা ইচ্ছে করেন, তাদের নানা কাজে খাঠান – মানুষকে ঘুম পাড়ানোর গান শোনাতে নয় – দিন বদলের রঙিন স্বপ্ন দেখাতে।

    আর ঐ কারণেই তার লেখায় যত জটিলতা। বহুকামী হয়েও মোনগ্যামিক থেকে স্ত্রিবাক্যে লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে – যে স্ত্রীবাক্য আসলে সেই মুচলেকা যা নকশালবাড়ির সময় তাকে পুলিসকে দিতে হয়েছিল এই বলে যে তিনি আর কখনই সার্ফেসে দিন বদলের স্বপ্ন দেখাবেন না – কি করে সহজভাবে লেখালেখি করবেন? পরিবার বাঁচিয়ে, নিজের পিঠ বাঁচিয়ে, আখের গুছিয়ে কি আসলে লেখালেখি করা যায়? ওনার লেখালেখি, যা হল কমিউনিস্ট গণফৌজের অগ্রণী অংশের ধনীদের উদ্দেশ্যে এবং স্ট্যটাস কুয়োর বিরুদ্ধে কামান দাগা, আন্ডারগ্রাইন্ডে গিয়েই করতে হয় – যেখানে সার্ফেসের সহজ সরল আনায়েস নেই – যেখানে আছে আন্ডারগ্রাউন্ডের কঠিন, জটিল, বিপজ্জনক অস্তিত্ব।

    তিনি জানতেন চতুর গেরিলা যোদ্ধার মত কামাফ্লাইজের আড়াল থেকে কামান দাগতে হবে। শব্দ ও বাক্যের আকর্ষনীয় শৈলিতে, একই পয়েন্টে থিসিস আর অ্যান্টিথিসিসের সর্বাত্মক উপস্থিতিকে ব্যবহার করে সার্ফেসে গল্প-গদ্যের কামাফ্লাউজ গায়ে চড়িয়ে তাকে অবিরাম লিখে যেতে হয়েছে কিছু আদ্যন্ত কমিউনিস্ট ও আদ্যন্ত বিপ্লবি অর্থাৎ কিছু আদ্যন্ত রাজনৈতিক দলিল। এই লেখা আন্ডারগ্রাউন্ডের ফকসহোল থেকে। তাই অবস্কিওর।

    পেটি বুর্জুয়া নান্দনিক সাহিত্য-সংস্কৃতির দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে উদয়ন ঘোষ একজন দূর্বোধ্য লেখক। কিন্তু যাদের এখনো পালটে দেবার স্বপ্ন যায় নি তাদের উদয়ন ঘোষের লেখায় সেই স্বপ্নকে দেখতে পেয়ে চিনে নিতে এতটুকুও অসুবিধা হবার কথা নয় – এতো সেই ১০,০০০ বছরের পরিচিত গায়কের একঘেয়ে গান যা শুনে শুনে কান পচে গিয়েও সেই পচা কানেই আরেকবার, বারংবার শুনতে ইচ্ছে করে – পালটে দেবার স্বপ্ন যে আমাদের এখনো গেল না।

    উপসংহারে বাকি থাকে আর একটাই কথা। সেই একঘেয়ে একই পয়েন্টে থিসিস আর অ্যান্টিথিসিস – বাস্তববাদের মাঝে আধ্যাত্মিকতা – যিশুখ্রীষ্ট, গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর অথবা চৈতন্য দেবের ধর্মীয় কথা বলতে গিয়েও যেখানে নাস্তিক উদয়ন ঘোষ বলে ফেলেন মানব ধর্মের কথা। তিনি যখন ইতিহাস ঘেটে প্রমাণ দেন যে এই ধর্মীয় ব্যক্তিরা আসলে কতটা মানুষের পক্ষে এবং ভগবানের বিপক্ষে, তাদের প্রকৃত ধর্ম আসলে কতটা বস্তুবাদি আর বিপরীতভাবে যা সব বস্তু তা সব স্পিরিচুয়াল তখন প্রশ্ন জাগে কমিউনিজম কি ত’হলে আধ্যাত্মিক? বস্তু কি স্পিরিচুয়াল?

    পদার্থ বিজ্ঞানিরা কি বলেন? তাদের ভাষায় যখন বলেন বস্তু হল wave-particle duality এবং বস্তুর ধর্ম হল principal of uncertainty – ধরা গেলে ছোঁয়া যায় না – আবার ছোঁয়া গেলে ধরা যায় না – অর্থাৎ, বস্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে – তাহলে বস্তু কি spirit? দ্বান্দিক বস্তুবাদিরা যদি শুধু এক তরফা বস্তুই দেখতে পান, অন্তর্নিহিত স্পিরুচুয়াল দিকটা তাদের অদেখা থেকে যায় তা’হলেও উদয়ন ঘোষকে এবং তার লেখালেখিকে বোঝা অসম্ভব। অথচ যারা সর্বক্ষণ স্মরণে রাখেন যে সর্বত্র, সব সময়, সব স্থান, কাল ও পাত্রে একই পয়েন্টে থিসিস আর অ্যান্টিথিসিস উপস্থিত আছে, তাদের কাছে উদয়ন ঘোষের লেখা জলের মত স্বচ্ছ, খোলা আকাশের মত প্রাঞ্জল।

    লেখক উদয়ন ঘোষ হয়ত obscure, avant garde অথবা বিপরীতভাবে post-modern, দুর্বোধ্য। কারণ আমাদের কোনো কিছুতেই ‘গা’ নেই – শীতের দুপুরে মিঠে রোদের আদুরে তাপে গাল গল্প পড়লে আমাদের অর্ধশায়িত বোধশক্তিতেও সেই সব গল্প-কবিতা বেশ বুঝতে পারি, ঘুম পাড়ানি কল্পলোকে দ্রুত প্রবেশ করে যাই যেখানে গল্পের গরু গাছে চড়ে। কিন্তু দুর্বোধ্য উদয়ন ঘোষের গদ্য, যে গদ্যে দাঁত ফোটালে দাঁত ভেঙ্গে যায় অথবা ভেঙ্গে যাবার যন্ত্রনার আশঙ্কা থাকে যদিও সে গদ্য প্রকৃত প্রস্তাবে সহজ, সরল, প্রাঞ্জল, সেই গদ্য আমাদের পেটি বুর্জুয়া মনষ্কের প্রাপ্য punishment স্বরূপ নিলে আমাদের শরির টের পেতে শুরু করে, আমরা ভাবতে শুরু করি। তার লেখা পড়ে বেশ টের পাই এখনো আমাদের কোনো সুখ নেই! তখন তার গদ্যের দীপ্তিতে স্পষ্ট দেখতে পাই দিন বদলের দিন এসে গেছে, আসছে, আসবেই! তখন অন্ধকার কেটে যায় আর নতুন উষার উজ্জ্বল উদয়নে আমরা তাকে পরিষ্কার দেখতে পাই!
  • .... | 127.194.210.109 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৯:১৯392555
  • অমিয়ভূষণ দে'জ পাবলিশিং থেকে ১২ টা ভল্যুম বেরিয়েছে। আরো বেরোতে পারে। এই মুহূর্তে খুবই সহজলভ্য অনলাইনে অর্ডার বা শিপিং এর মূল্য ধরে দিলে। অন্ততঃ উদয়ন ঘোষের মত খাটাখাটুনির দরকর নাই - খাটুনি, অর্থাৎ লোকের বাড়ির উই ও পোকায় কাটা বই হাঁটকানো, লিটিল ম্যাগ লাইব্রেরী চড়ে বেড়ানো ও শেষ পর্যন্ত প্রচুর এইরকম ম্যাগাজিনের পাতা স্ক্যান ও জেরক্স করা। তাই, সোমনাথ ও ব্যাপারে কোনো লোড নিচ্ছে না।
  • a x | 118.207.193.38 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ১৯:৩০392557
  • ও।
  • Ishan | 214.54.36.245 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ২০:১৫392558
  • হ্যাঁ, ওমনাথ, ওই লেখাটার কথাই বলছিলাম। তা, তোমার লেখাটা তুমি নামাতেই পারতে। নামালেনা কেন?
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ২১:৪৫392559
  • ভেবে চিন্তে দেখলাম, ঈশানদার কথাটাই ঠিক। উদয়নের সিগনেচার ঝলক দেওয়া বাক্যে, আর হঠাত করে সেটা থামিয়ে দেওয়ায়। মানে চাইলেই লিখতে পারতাম, কিন্তু কি করব, বিড়ি ফুঁকছি-এরকম আর কি

    আরেকটা ব্যাপার আছে। কি সেটা পরে বলব। ধীরে সুস্থে। এখন তাড়া আছে।

    তবে সন্দীপন সম্পর্কে নড়ছি না। ওই, ইনকিলাব ইত্যাদি প্রভৃতি .....
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ২২:০৫392560
  • আমার অনেকগুলো পড়া, একটা বাদে। ওটা পড়ার হেবি ইচ্ছে আছে। স্বপনের ম্যাজিক রিয়ালিটি।

    কেউ একটু আলোচনা করুন না এটা নিয়ে? ...
  • .... | 127.194.195.133 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ২২:৪৬392561
  • লেখা না হোক কিছু একটা হাবিজাবি তো নামবেই যখন পড়া শুরু করেছি শেষ করব বলে। সেটা পুরো পড়াশোনা শেষ করে নিয়ে নামানোই সুবিধের। আপাততঃ খাতায় নোট জমছে।
  • aka | 178.26.203.155 | ৩০ অক্টোবর ২০১২ ২৩:৫৮392562
  • আমারও একটা গপ্পো মনে পড়ল। না বড়সড় কেউ না আমি নিজেই এই গপ্পের নায়ক।

    এগারো ক্লাসের কেমিস্ট্রি পরীক্ষা। তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখলাম মাত্র দেড়খানা প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। আড়াই তিন ঘন্টা ধরে ধীরে ধীরে দেড়খানা প্রশ্নের উত্তর লিখলাম। ঘুরলাম, ফিরলাম, পরীক্ষা শেষে বিড়ি টিড়ি ফুঁকে বাড়ি এলাম। খাতা বেরনোর ঠিক আগে আগে কেমিস্ট্রি স্যার ডেকে পাঠালে। বললে তুই কেন এত ক্যাজুয়াল আকা? যা লিখেছিস কোন জবাব নেই কিন্তু তাতেও ফেল করবি দেড়খানা উত্তর লিখে পাশ করা যায় না। এতকিছু না করে অন্যগুলো করলে তো পাশ করে যেতিস। একটু সিরিয়াস হ। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি খবর্দার বোঝানোর চেষ্টা করি নি যে আদতে আমার পেটে অ্যাটম মারলেও ওর থেকে বেশি বেরত না। পুরো হায়ার সেকেন্ডারি ঐ করেই কেটে গেল আকা তো ইচ্ছে করলেই ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিতে নোবেল পায় কিন্তু ঐ আর কি এত ক্যাজুয়াল।
  • aka | 178.26.203.155 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ০০:০০392563
  • মার্কেটিং ১০১ - ইমেজ মানে ব্র্যাণ্ড তৈরি করুন কই মাছকে সাইকেল বেচতে পারবেন।
  • swati | 76.135.100.194 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ০৪:৫০392564
  • ধন্যবাদ, পড়লাম ....... প্রথমেই যে কথাটা মনে হল পড়ার পরে ---এত অন্যভাবেও লেখা যায় তাহলে!

    পাঠকের জন্য স্পেস নয়, তেপান্তর রেখে গেছেন বলে মনে হল যেন।
  • lcm | 202.12.85.130 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ০৫:২২392565
  • সোমনাথের দুটো পোস্ট খেয়াল করি নি। প্রথমটিতে লেখক নিজের লেখালেখি সম্বন্ধে বলছেন - কে যেন লিখল, স্টাইল - প্রতি ছত্রে স্টাইল পরিস্ফুট।
    পরিচিত মেইনস্ট্রিম লেখালেখির বাইরে এই অন্য ধরনের লেখালেখি গুরুতে তুলে আনার জন্যে ধন্যবাদ। সোমনাথ, সৈকত, ঈশান, এইচ, সিধু... এবং অন্যান্যরা.... যাদের বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন ধরনের লেখায় এত উৎসাহ, এত প্যাশন -- তাদেরকে, ইয়ে মানে.... সাধুবাদ....
  • aka | 85.76.118.96 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ০৬:০৯392566
  • হ্যাঁ এইটা গুড পয়েন্ট ওমনাথকে থ্যাংকু। ওমনাথ না আপালে উদয়ন ঘোষের নামই জানতাম না।
  • lcm | 34.4.162.218 | ৩১ অক্টোবর ২০১২ ০৭:০৬392568
  • একটা কথা যখন মনে হচ্ছে, বলেই ফেলি। আকা বলেছে, উদয়ন ঘোষের লেখা কুলদা রায়ের মতন, বা, ভাইস ভার্সা। আমার মনে হল, উদয়ন ঘোষের লেখা গুরুর অনেকের মতন, এই যেমন ঈশান বা সোমনাথ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন