এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • তারাময়ী রাত্রিকথা

    Angana
    অন্যান্য | ১৮ আগস্ট ২০০৭ | ৩১৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Angana | 131.95.121.132 | ২৪ আগস্ট ২০০৭ ২৩:৩৩392865
  • সেটাস প্রায় ধরে-ধরে অ্যাড্রোমেডাকে,এমন সময় আকাশ থেকে বাজপাখির মতন ঝাঁপ দিয়ে কে যেন পড়ে এসে সেটাসের পিঠের উপরে।
    সেটাস "ধরি ধরি মনে করি ধরিতে পারিনা" কীর্তন গাইতে গাইতে পাথুরে দ্বীপ হয়ে জেগে থাকে ইথিওপিয়ার সমুদ্রকুলের কাছে।
    আসলে হয়েছে কি তখন গ্রীসের এক তরুণ বীর যুবরাজ পার্সিউস গর্গনবধ সেরে বাড়ী ফিরে যাচ্ছিলেন,জুতায় ডানা লাগানো ছিলো বলে উড়ে উড়ে যাচ্ছিলেন।কোমরবন্ধে বাঁধা ছিলো গর্গন মেডুসার মাথা,সেই মাথায় চুলগুলো সব সাপ আর চোখদুটির দিকে তাকালেই যেকোনো জীব পাথর হয়ে যায়। পার্সিউস নিজে মেডুসাকে বধ করার সময় আয়নার মধ্যে তাকিয়ে তাকিয়ে কায়্‌দা করে করেছিলেন,কাটামুন্ডুর দিকেও তাকান নি,অন্যদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অস্বচ্ছ আবরণে সাবধানে ঢেকে রেখেছিলেন মাথাখানা।
    উড়ে যাবার পথে দেখেন ইথিওপিয়ার কূলে কিকান্ড হচ্ছে! এক সুন্দরী তরুণী হতে চলেছে এক জলজন্তুর খাদ্য! কি সব্বোনেশে ব্যাপার! তিনি পত্রপাঠ দুম করে নেমে পড়লেন সেটাসের পিঠে।আর মেডুসার সেই মাথা এখন সেটাসের চোখের সামনে নিয়ে ফটাস করে দিলেন খুলে।ব্যস! আর যায় কোথা! সেটাস পাথর হয়ে গেলো।
    দ্রুত এবারে অ্যাড্রোমেডার পাশে গিয়ে ওর শেকল টেকল চটাং পটাং করে খুলে ফেলে জিগালেন,""তাড়াতাড়ি কও তো দেখি কান্ডটা কি! বেশী ফ্যানাবে না,সময় বেশী নেই,খুব টাইট স্কেজুলের মধ্যে আছি।টু দ্য পয়েন্ট বলে যাও।""
    অ্যাণ্ড্রোমেডা একেবারে টু দ্য পয়েন্ট বলেদিলেন,দশ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেলো।
    পার্সিউস অ্যাড্রোমেডাকে নিয়ে পাহাড় থেকে নামলেন,রাজপ্রাসাদে এলেন,রাজা রাণী কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত,পার্সিউস বললেন,""চটপট আমার সঙ্গে অ্যান্ড্রোমেডার বে দিন।গ্রীসে ফিরেই অনেক কায়্‌দা করে রাজত্বলাভ করতে হবে আমার।বেশী দেরি করার সময় নেই।""
    সেফিউস ক্যাসিওপিয়া কিন্তু কিন্তু করছিলেন এমন তাড়াহুড়া করে বিদেশীর সঙ্গে মেয়ের বে দিতে,ওদের সমাজ সংস্কৃতি....মেয়ে কি মানিয়ে নিতে পারবে...হ্যানো ত্যানো
    পার্সিউস ক্ষেপে গিয়ে বলে,বের করবো নাকি মেডুসার মাথাখান?
    না না বাবা,আমরা কি তাই বলেছি। তোমার মতন বাবাজীবন পাওয়া খুব ভাগ্যের ইত্যাদি ইত্যাদি...
    চটপট বিয়ে হয়ে গেলো।পক্ষীরাজে চড়ে বাড়ী ফিরলেন পার্সিউস। সঙ্গে সদ্যলব্ধ স্ত্রী অ্যান্ড্রোমেডা, রাণীর মতন রাণী।

  • Angana | 131.95.121.132 | ২৫ আগস্ট ২০০৭ ০০:০৫392866
  • আমাদের পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে যেমন আফ্রিকার দক্ষিণাংশ বা দক্ষিণ আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড থেকে আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় ছায়াপথের পাশে দুখানা হাল্কা মেঘের মতন জিনিস-লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড আর স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউড। এরা আদতে ক্লাউড নয়, এরা আমাদের মিল্কি ওয়ের দুখানা অনুচর গ্যালাক্সি, ছোটো ছোটো দুই গ্যালাক্সি, বিশাল মিল্কিওয়ের মহাকর্ষীয় টানে বাঁধা পড়ে ঘুরে চলেছে চারিপাশে।এরা স্পাইরাল গ্যালাক্সি নয়,এরা ইরেগুলার গ্যালাক্সি,নির্দিষ্ট টাইট আকার নেই,অনেকটা এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চেহারা।
  • Angana | 131.95.121.132 | ২৫ আগস্ট ২০০৭ ০০:২১392867
  • ১৯৮৭ সালে লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড হঠাৎ সংবাদ শিরোনামে। কেন? সেখানে এক বিরাট সুপারনোভা বিষ্ফোরণ, দুনিয়া জুড়ে অ্যাস্ট্রোনমাররা আনন্দে উদ্বেলিত, এরকম সুযোগ তো সহসা আসে না।কত কত ভালো ভালো অবজার্ভেশন করা হয়েছিলো সেই সুযোগে। ঐ বিখ্যত সুপারনোভাটি প্রথম চিলির অব্জার্ভেটরি থেকে দেখেন আয়ান শেলটন,তারপরে বাকীরা দেখেন,বহু রকম দুর্লভ পর্যবেক্ষণ ও মাপামাপি হয়,এই সুপারনোভার নাম দেওয়া হছে 1987A।ঐ সময়ে পাওয়া তথ্যমালা নিয়ে মূল্যবান গবেষণা চলছে এখনো।

  • angana | 131.95.121.132 | ২৫ আগস্ট ২০০৭ ০২:৩৬392868
  • অনেকেই জানেন যে সুপার নোভা হলো ম্যাসিভ বিরাট নক্ষত্রের জীবনের শেষপর্বে এসে হঠাৎ প্রচন্ড বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া,নক্ষত্রদেহের প্রায় সমস্ত বস্তু ছড়িয়ে পড়ে মহাশূন্যে ঐ বিস্ফোরণের ধাক্কাতেই।
    আমরা যে তৈরী হয়েছি কার্বন,অক্সিজেন,সোডিয়াম পটাশিয়াম,সালফার-এইসব মৌলগুলো দিয়ে,তারা নক্ষত্রদেহের ভেতরেই জন্মেছে প্রচন্ড তাপে চাপে ফিউশন প্রক্রিয়ায়,তারপরে ঐরকম সুপারনোভা বিষ্ফোরণেই ছড়িয়ে পড়েছে।
    তাই আমাদের সৃষ্টির জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী ঐরকম এক বা একাধিক সুপারনোভা এক্সপ্লোশন। সাগান সায়েব তাই কইতেন, যে আমরা, পৃথিবীর সব জীবেরাই আসলে নক্ষত্রধূলি।
  • tay ei kathaa | 203.193.153.39 | ২৭ আগস্ট ২০০৭ ১৮:২৩392869
  • কিন্তু সুপার্নোভা ফাটিবার আগে ক্যান লোহা পর্যন্ত যায়?ক্যান সোনা হয় না?

  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ২৭ আগস্ট ২০০৭ ১৮:৩১392870
  • ক্যাডা জানি কইতাছিলো যদি ২৬ আলোকবর্ষ দূরে একখান সুপারনোভা দমাস কইরা ফাটে,তয় আমাগো ওজোনমন্ডলের অদ্দেকই নাকি উইড়্যা যাইব।এতো জোর এরা পায় কৈত্থে?ভাবলেই চেতন উইড়্যা যায়।
  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৮:৪৬392871
  • পাশের কোন একটা গ্যালাক্সিতে শুনলাম,দুইখান এমুন সুপারনোভার অবশ্যাষ পাইছে যাদের নাকি নতুন কেলাশে ভর্তি করন যায়।কি অগো লাম দিছে-DEM L238 and DEM L249.হ্যারা কেমুন?

  • tan | 131.95.121.132 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৯:০৩392872
  • নাম যহন ডেম দিয়া দিসে, তাইলে কি আর কম জাঁহাবাজ হইবো?
  • angana | 131.95.121.132 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ২০:৫৬392873
  • কৃত্তিকা(Pleiades) তারকাপুঞ্জটি আছে বৃষরাশিতে(Taurus),বৃষের পিঠের কাছে উজ্বল-অনুজ্বল মিলিয়ে অনেক তারার ঘনসন্নিবিষ্ট একটা ঝাঁক, খালিচোখে ছয়-সাতটি তারা দেখা যায়। তাই দেশেগাঁয়ে একে অনেকসময় সাতভাই তারাপুঞ্জও বলে।
    দূরবীণে এই পুঞ্জে সাতের অনেক বেশী তারা দেখা যায়,এই ধরনের তারাপুঞ্জকে বলে মুক্ত নক্ষত্রপুঞ্জ,open cluster, গ্লোবুলার ক্লাসটারদের সঙ্গে পার্থক্য বোঝানোর জন্য।
    গ্লোবুলার ক্লাসটাররা যেমন প্রাচীন তারাদের নিয়ে তৈরী, এরা তা নয়। এই কৃত্তিকা নবীন তারাদের সমাহার,একে তারাদের সূতিকাগৃহও বলা চলে, এখানে মহাকাশীয় ধোঁয়া গ্যাস ইত্যাদির মধ্য থেকে তারা তৈরী হচ্ছে।যেগুলো জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে,তাদের তারা হিসাবে দেখা যায়, যারা এখনো জ্বলতে শুরু করে নি,তারা লুকিয়ে আছে ধোঁয়াগ্যাস ইত্যাদির আবরণের মধ্যে।একদিন এইসব গ্যাসবলের কেন্দ্রে ঠিকঠাক তাপ ও চাপ এসে গেলে এরাও শুরু করে দেবে নিউক্লিয় সংযোজন প্রক্রিয়া,তা থেকে তৈরী হবে শক্তি, সেই শক্তি ছাড়া পাবে আলো ও তাপরূপে, আমরা নতুন তারা হিসাবে দেখতে পাবো তাকে।

  • angana | 131.95.121.132 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ২১:২৬392875
  • কৃত্তিকা তারাপুঞ্জটির সৌন্দর্য্য অতি আশ্চর্য্য।কেমন একটা রহস্যাবরণ জড়ানো ঝিকিমিকি রূপ। এইজন্যেই বোধহয় একে নিয়ে নানা দেশে নানা গল্পকথা।
    গ্রীকদের গল্পে এরা অ্যাটলাসের মেয়েরা, আকাশে বন্দিনী হয়ে আছে।
    ভারতীয় গল্পে এরা ছয় ঋষির পত্নী, সেই অগ্নি - স্বাহার ভুলে কেন জানি এনারা অভিশপ্ত হলেন আর পতিসঙ্গচ্যুত হয়ে দূরে গিয়ে রইলেন আকাশে। শুধু অরুন্ধতী অভিশপ্ত হন নি, তিনি সপ্তর্ষিমন্ডলে বশিষ্ঠের খুব কাছেই থাকতে পান।
    নিউজীল্যান্ডের মাওরিদের গল্পটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সুকুমার রায়ের "ভাঙা তারা" গল্পে সেই উপকথা পাবেন। মাওরি গল্পে এই কৃত্তিকার জায়গায় ছিলো এক মস্ত বড়ো তারা-ঝকঝকে উজ্বল সেই তারা ছিলো আকাশপরী মাতারিকীর তারা। এত সুন্দর এত উজ্বল সেই তারা যে লোকে সবসময় অন্য সব তারা বাদ দিয়ে মাতারিকীর তারাই দেখতো। অন্যসব আকাশপরীদের তা দেখে ভারী হিংসে হতো।তারা সবাই মিলে গাছেদের দেবতা তানের সঙ্গে চক্রান্ত করে একদিন মাতারিকীকে আক্রমণ করলেন,গন্ডগোলের মধ্যে মাতারিকীর সাধের তারাখানি গেলো টুকরোটুকরো হয়ে ভেঙে। সেই ভাঙা টুকরোগুলোই আকাশের একজায়গায় জ্বলছে নক্ষত্রপুঞ্জ হয়ে আর দখিন হাওয়ায় কার যেন দীর্ঘশ্বাস। সমুদ্রকন্যা, যে কিনা মাতারিকীকে বাঁচাতে চেয়েছিলো, যুদ্ধের সময় লুকিয়ে রেখেছিলো, সে আজো জলের মধ্যে সেই তারাদের ছায়া নিয়ে খেলা করে।দখিনা হাওয়ার দেশের সব সমুদ্রে সমুদ্রে বেড়ানো ধীবরেরা ভালোবাসেন এই তারাপুঞ্জকে।
  • angana | 131.95.121.132 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০১:৪০392876
  • তারায় তারায় ছাওয়া রাত্রি ছিলো আমাদের একদিন,দিনও ছিলো সূর্য,মেঘ আর বৃষ্টির ছন্দে ভরা। আকাশ ছিলো আমাদের ঘড়ি, আমাদের ক্যালেন্ডার, আমাদের দিকনির্দেশক কম্পাস,আমাদের সমস্ত শুভ উৎসব শুরু হতো আকাশের পঞ্জী দেখে,শেষও হতো সেই দেখেই।সূর্যচন্দ্রতারা সাজানো সেই দিবারাত্রিজুড়ে অনন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে নিশ্চয় হয়ে জেগে থাকতো আকাশের নক্ষত্ররা,ওদের দিয়ে তৈরী সব আকার আকৃতিগুলো-সূর্যের চলার পথের রাশি গুলি, চন্দ্রের চলার পথের নক্ষত্ররা,আর উত্তরে দক্ষিণে দুই ধ্রুবতারা স্থির হয়ে রইতো দিনেরাতে-ঘুরে যেতো পৃথিবী,দিন থেকে রাতে রাত থেকে দিনে আবার। মহাসাগরীয় স্রোত আমাদের ক্ষুদ্র মাঝারি জেলেডিঙিগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে।
    তারপর একদিন সেই জীবন আমরা হারিয়ে ফেললাম,আমাদের ঘড়ি এসে গেলো,ক্যালেন্ডার এসে গেলো,কম্পাস এসে গেলো।
    শুধু আকাশ হারিয়ে গেলো ধূলা আর ধোঁয়া আর কটকটে বৈদ্যুতিক আলোর আবিলতায়।
    নতুন যুগে নতুন করে আবার আকাশের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছি আমরা,কারণ আমরা যে একদিন মধ্যদিনের ধূলার ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে তাঁর প্রসারিত হস্ত চুম্বন করে বলেছিলাম,"তারাহীন হয়ে আমি বাঁচতে পারবো না।" আমরা যে সত্যিই নক্ষত্রধূলি!!!
    ধোঁয়াধূলাবারুদগন্ধী আলোকদূষণে ভরা বাতাবরণ পার করে টেলিস্কোপ তুলে দিয়েছি মহাকাশে, সে বিশ্বাসী বন্ধুর মতন আমাদের ছবি পাঠিয়ে যায়--হাজার হাজার ছবি, গভীর মহাকাশের গ্যালাক্সিপুঞ্জ,অপরূপ সে সুষমা!
    ""বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা/বাজে অসীম নভোমাঝে অনাদি সুর/ জাগে অগণ্য রবিচন্দ্রতারা...""

  • angana | 131.95.121.132 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:৩৯392877
  • এই ফাঁকে "উত্তরমুকুট" মানে "করোনা বোরিয়লিস" নক্ষত্রমন্ডলটির গল্প বলে নিই ছোট্টো করে।
    কন্যারাশির উজ্বল চিত্রা তারার থেকে একটু উত্তরে সরে গেলে আরেক উজ্বল তারা দেখা যায়-স্বাতী।এই স্বাতীর থেকে আরো খানিক উত্তরে উজ্বল নীল তারা অভিজিৎ।
    এই অভিজিৎ আর স্বাতীর মাঝে রয়েছে উত্তরমুকুট মানে করোনা বোরিয়লিস। এই করোনা বোরিয়ালিসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গভীর মহাকাশের এক গ্যালাক্সি ক্লাস্টার-আবেল ২০৬৫ ক্লাস্টার।পরে এইসব গ্যালাক্সি ক্লাস্টার আর কসমোলজিতে এদের থেকে কি জানা গেলো তা নিয়ে দুচার কথা হবে।
    এখন এই উত্তরমুকুটের গল্প শোনা যাক। উপকথায় এটি ক্রীটের রাজকন্যা আরিয়াড্‌নের মুকুট,আকাশে নক্ষত্রমন্ডল হয়ে জেগে আছে এই মানবকন্যার মুকুট। দেবতা ডায়োনিসাসকে বিয়ে করে দেবীত্বে উত্তীর্ণা হয়েছিলেন একদা প্রেমিকের দ্বারা পরিত্যক্তা এই নারী।
    আরিয়াডনে ছিলেন ক্রীটের রাজা মিনোসের মেয়ে। রাজা মিনোসের ছেলে আথেন্সে গিয়ে নিহত হয়।রাজা পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে আথেন্স আক্রমণ করেন।যুদ্ধ কিছুকাল চলার পরে সন্ধি হয়, সন্ধিচুক্তিতে ছিলো আথেন্স প্রতি বছর কিছু তরুণ তরুণীকে ক্রীটে পাঠাবে, এরা আর আথেন্সে ফিরে যাবে না।
    এরা মিনোসের রাজ্যে ল্যাবিরিন্থের ভিতরে থাকা অর্ধ ষাঁড়-অর্ধ মানব মিনোটরের খাদ্য হতো।এদের এক এক করে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো গোলোকধাঁধায়।গোলোগোকধাঁধা থেকে বেরুবার রাস্তা কারুর জানা ছিলো না।
  • angana | 131.95.121.132 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:৫২392878
  • এই গোলকধাঁধা বা ল্যাবিরিন্থ বানিয়েছিলেন বিখ্যাত প্রকৌশলী ডিডালাস,ইনি তখন ক্রীটেই অবস্থান করছিলেন পুত্র আইক্যারাসকে নিয়ে। এদের পরে কি হলো তাই নিয়েও বিরাট গল্প আছে।
    সেকথা অন্য কোথাও হবে। এখন আরিয়াডনের গল্পে ফিরে আসি।
    একবার আথেন্স থেকে আসার তরুণ তরুণী দলের মধ্যে এসে উপস্থিত হলো রাজপুত্র থিসিউস। প্রাসাদের জানালা থেকে তার তরুণ বীরমূর্তি দেখে হৃদয় হারালো রাজকন্যা আরিয়াডনে।এই অসাধারণ তরুণ এই এত অল্প বয়সে প্রাণ হারাবে এইভাবে? সে মেনে নিতে পারলো না, কিছু একটা করতেই হবে।
    সে প্রথমে পরামর্শ চাইলো ডিডালাসের। ল্যাবিরিন্থ থেকে পথ চিনে বেরিয়ে আসার উপায় কিছু আছে কিনা আর মিনোটরকে যুদ্ধে হারানো সম্ভব কিনা। ডিডালাস জানালেন সবই সম্ভব, তবে খুব কঠিন।আর ব্যাপারটা খুব গোপণে সারতে হবে,জানাজানি হয়ে মিনোসের কানে উঠলে সাড়ে সব্বনাশ। সপুত্র ডিডালাস আর আরিয়াডনে সবাই জল্লাদের হাতে! যে রাজা মিনোটরের মতন গুন্ডা পোষেন, তিনি কি আর যে সে?
    পরামর্শ টরামর্শ সব হলো,গোপণে আরিয়াডনে দেখা করলো থিসিউসের সঙ্গে। থিসিউসকে সে দিলো মন্ত্রপূত এক তরবারি আর খানিকটা গুলিসুতো। ধাঁধায় ঢুকে থিসিউস এই সুতো ছাড়তে ছাড়তে এগোবে, পরে মিনোটরকে মন্ত্রপূত তরবারির সাহায্যে বধ করে ফের সুতো গোটাতে গোটাতে ফিরলেই আর বাইরে আসার পথ ভুল হবে না।বাইরে এসেই সেই সমুদ্রবন্দরে আগে থেকে ঠিক করে রাখা জাহাজে চড়ে দেশে ফিরে যেতে পারবে রাত্রির অন্ধকারেই।
    থিসিউস নিলো সব বুঝে। তারপরে বললো, কিন্তু রাজকুমারী, একসময় জানাজানি হবেই সব। তখন তোমার কি হবে?
    আরিয়াডনে বলে, আরে ধ্যাৎ, তোমার কি হবে!আগে নিজে তো বাঁচুন!
    থিসিউস অবাক হয়ে যায়, বিদেশিনী নিজের প্রাণ বিপন্ন করে তাঁকে বাঁচাতে চায়!
  • angana | 131.95.121.132 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৮:১২392879
  • কথামতোই সব কাজ হলো।বীর থিসিউস মোনোটরবধ সমাপ্ত করে রাজকন্যার গুলিসুতো গোটাতে গোটাতে নির্ভুল রাস্তা ধরে গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে এলেন।বাইরে রাজকন্যা দাঁড়িয়ে ছিলেন উদ্বেঅগ নিয়ে,থিসিউসকে অক্ষত বেরিয়ে আসতে দেখে নিশ্চিন্ত হলেন।
    থিসিউস আরিয়াডনেকে নিয়ে দৌড় দিয়ে সমুদ্রবন্দরে চলে গেলেন।জাহাজে চেপে বসলেন তাকে নিয়ে,গ্রীসে ফিরে ওকে বিয়ে করবেন কইলেন।
    কিন্তু মাঝপথে এক দ্বীপে নেমে হাওয়া খেলো দুজনে, দ্বীপের সুন্দর বালুবেলায় তারার আলোর নীচে বসে রইলো, মিঠে মিঠে গল্প করলো,একসময় ক্লান্ত আরিয়াডনে ঘুমিয়ে গেলো।
    জেগে উঠে আরিয়াডনে আতংকিত,কেউ নেই।থিসিউস তাকে এই দ্বীপে ফেলে জাহাজে করে গ্রীসে পালিয়েছে! ঝেড়ে ফেলে গেছে তাকে পথের কাঁটার মতন। এই কি মানুষ জাত? এই মানুষের কৃতজ্ঞতা? প্রাণ বাঁচানোর এই কী পুরস্কার?
    আরিয়াডনে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেললো। সেই জনমানবহীন দ্বীপে গুহায় আশ্রয় নিলো সে।কন্টকগুল্ম থেকে ফল আহরণ করে দিনান্তে একবার আহার আর ঝর্ণার জলপান আর রাত্রে তারাময় আকাশের দিকে চেয়ে প্রার্থনা-এই করে দিনরাত কেটে যেতে লাগলো তার!
    একদিন সে সন্ধ্যেবলা সে প্রার্থনায় বসেছে সবে,দেখে এক অসাধারণ রূপবান উজ্বল চেহারার পুরুষ সমুদ্রতীর থেকে হেঁটে এলো কাছে! আরিয়াডনে চলে যাচ্ছিলো, সে ওকে ডাকলো,পরিচয় দিয়ে বললো সে দেবতা ডায়োনিসাস। সে আরিয়াডনেকে বিবাহ করতে চায়।
    আরিয়াডনে প্রমাণ চায় সে যে সত্যি দেবতা,মানুষ নয়,কি প্রমাণ?
    প্রমাণ দিতে রাজী হয় ডায়োনিসাস। আরিয়াডনের মুকুট খুলে নিয়ে ছুঁড়ে দেয় আকাশে, সেটা তারামন্ডল হয়ে যায়। এই করোনা বোরিয়লিস আরিয়াডনের সেই মুকুট,উত্তরমুকুট হয়ে জ্বলছে আকাশে।
  • kd | 59.93.240.86 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৯:৪৪392880
  • ভাই অঙ্গনা, 'অঙ্গনা' মানে কি? নামটি এই টইএর বিষয়ের মানানসই?

    ট্যানকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলতো, উঠোনের স্ত্রীলিঙ্গ :))
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৩:৫৪392881
  • আরিয়াডনের গল্পটার আরেকটা সামান্য আলাদা রূপও আছে। সেটাতে দেখা যাচ্ছে, প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে ভেনাস বর দেন, যাতে আরিয়াডনের প্রেম অক্ষয় হয়, অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা হয় যে, কোন দেবতাই তার স্বামী হবেন। দেবত্বের পরীক্ষায় পাস করে জুপিটারপুত্র ডাওনিসাস যখন আরিয়াডনকে বিয়ে করেন, তখন উপহারস্বরূপ রত্নখচিত ঐ মুকুট দেন। পরে আরিয়াডনের মৃত্যুর পরে আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া হয় সেই মুকুট, আরিয়াডনের স্মৃতি নক্ষত্রমণ্ডল হয়ে অমরত্ব পায়।
    তারাদের নিয়ে বিভিন্ন দেশের উপকথার গল্পে অদ্ভুৎ যোগসূত্র পাওয়া যায়। সে যাই হোক, গল্প চলতে থাকুক নিজের পথে, ওভার টু অঙ্গনা..:-)
  • angana | 131.95.121.132 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০২:৫০392882
  • কেডি, অঙ্গনা বহুকাল আগে এই নিয়ে BL এ লিখতো, তখনো GL শুরু হয় নি। এখন সেই লেখাগুলোর মডিফাইড ভার্সন এখানে দিচ্ছে।
    হেমা বলেও আরেকজন ওখানে তখন লিখতেন, শীঘ্রই তিনিও আসবেন অন্য টইয়ে।
    :-))))
  • kd | 59.93.212.227 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০২:৫৮392883
  • BLই বা কী, GLই বা কী?

    মানে 'অঙ্গনা' নামের সঙ্গে এই টইএর লেখার কোন সম্বন্ধ নেই?

    যাক্‌গে যাক্‌, উত্তর দেওয়ার দরকার নেই, বরং লেখাটা চালাও।
  • angana | 131.95.121.132 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৩:০৩392884
  • আজকে অগস্ত্য তারাটির কথা বলবো। এই তারাটি আকাশের অন্যতম উজ্বল তারা,আছে দক্ষিণের আকাশে। উজ্জলতায় লুব্ধকের পরেই এর স্থান। ইংরেজীতে একে বলে ক্যানোপাস।
    এটি খুব বড়ো তারা,সুপারজায়ান্ট তারা, আমাদের সূর্যের চেয়ে ২০,০০০ গুণ বেশী উজ্জল, আছে ৩১০ আলোকবর্ষ দূরে।
    এই তারাটি আছে ক্যারিনা নক্ষত্রমন্ডলে,ক্যারিনা নাম আগে ছিলো না,ক্যারিনা আর অন্য দুটি নক্ষত্রমন্ডল মিলিয়ে তখন বলা হতো আর্গো নাভিস। পরে সর্বসম্মতিক্রমে যখন অ্যাস্ট্রোনমাররা আকাশকে ৮৮ টি কনস্টেলেশানে ভাগ করলেন,তখন ক্যানোপাস বা অগস্ত্য স্থান পেলো ক্যারিনা নক্ষত্রমন্ডলে।
    আর্গোনাভিসকে নিয়ে গ্রীক উপকথায় একটি সুন্দর গল্প আছে।

  • angana | 131.95.121.132 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৩:৩৬392886
  • আর্গোনাভিসের গল্প আসলে জেসনের গল্প আর মেদেয়ার গল্প। আবার এ গল্প স্বর্ণময় মেষচর্মের গল্পও। এগল্প ক্ষমতলোভী এক রাজা আর তার পথের কাঁটা ভ্রাতুষ্পুত্রকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের গল্পও।কিন্তু এইসব ছাপিয়ে এই গল্প বীর তরুণদের সমুদ্র অভিযানের গল্প-কত নতুন নতুন দেশ, নতুন নতুন মানুষ,নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতা তাদের-কত বাধাবিঘ্ন, যেমন হয় আরকি এইসব ক্ষেত্রে, সেসব পেরিয়ে জেসনের সফল হয়ে আসার গল্প।
    এই গল্পের সঙ্গে থিসিউস আরিআডনের গল্পেরও মিল আছে একজায়্‌গায়, এখানেও বিদেশিনী রাজকন্যা মেদেয়া অপ্রত্যাশিতভাবে সাহায্য করেছিলো জেসনকে।তবে জেসন মেদেয়ার গল্প প্রাথমিকভাবে মিলনান্তক,পরে অবশ্য অনেক দু:খজনক ঘটনাও ঘটেছিলো।
    গল্পে ফিরে যাই এবারে।
  • angana | 131.95.121.132 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৪:০৭392887
  • জেসন ছিলো থেসালির যুবরাজ।কিন্তু রাজ্য তখন তার এক কাকার হাতে,জেসন সেকালের বিখ্যাত জ্ঞানী ও বীর বৃদ্ধ সেন্টর চীরনের কাছে শাস্ত্র ও শস্ত্রশিক্ষা করে।দেশে ফিরবার সময় হলো একসময়। এদিকে সে ফিরতেই কাকা তাকে "অজানি দেশের নাজানি কি"আনবার দায়িত্ব দিলেন।মানে কলচীজ থেকে স্বর্ণময় মেষচর্ম আনতে হবে।সে প্রায় অসম্ভব এক টাস্ক।
    জেসন কিন্তু রাজী হলো,বন্ধুবান্ধব অন্যান্য গ্রীক বীরদের নিয়ে সে উঠে পড়লো জাহাজে,এই জাহাজই হলো আর্গোনাভিস,অভিযানকারীরা সবাই হলেন আর্গোনট। এদের মধ্যে বড়ো বড়ো সব বীর ছিলেন, হেরাক্লেস, পোলাক্স ক্যাস্টর অর্ফিউস-এরা সব ছিলেন।
    অনেক দেশ টেশ পরিয়ে কলচীজে(বর্তমান জর্জিয়া) গিয়ে পৌঁছলো জাহাজ। সেখানকার রাজার কাছে গিয়ে বক্তব্য নিবেদন করতেই রাজা কঠিন এক টাস্ক রাখলেন জেসনের সামনে।দুই ষন্ডাসুরকে বধ করতে হবে আর এক জমিতে ড্রাগনের দাঁত পুঁততে হবে।

  • angana | 131.95.121.132 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৪:১৯392888
  • জেসন চিন্তিতভাবে ভাববার সময় চেয়ে ফিরে এলেন আর্গোনাভিসে।বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন এমন সময় অপ্রত্যাশিত দিক থেকে সাহায্য এলো।রাজকন্যা মেদেয়া ছিলেন যাদুকরী ও চন্দ্র-মন্দিরের নারী পুরোহিত।তিনি সাহায্য করতে চাইলেন জেসনকে। মন্ত্রপূত অস্ত্র টস্ত্র দিলেন, মন্ত্রপূত আরো অনেকসব জিনিস দিলেন।
    পরদিন জেসন রাজার কাছে গিয়ে বললো সে রাজী। তারপরে সে ঐ আগুন ছাড়ানো দুই ষাঁড়কে দিয়ে জমি চষলো,জমিতে ড্রাগনের দাঁত পুঁতলো।অসংখ্য অসুর উঠে এলো জমি থেকে। মেদেয়া আগেই সাবধান করে দিয়েছিলো, জেসন আড়াল থেকে পাথরের টুকরো ছুঁড়তে থাকলো। অসুরেরা এইসব পাথর কোথা থেকে আসছে বুঝতে না পেরে ক্ষেপে গিয়ে নিজেরা নিজেরা লড়াই করে মরলো।
    এরপরে জেসন গেলো গোল্ডেন ফ্লীস আনতে। সেখানে এক নিঘুম ড্রাগন পাহারা দিতো। মেদেয়ার দেওয়া যাদু ভেষজের প্রভাবে সেই ড্রাগন ঘুমিয়ে পড়লো। বিনা কালক্ষেপে স্বর্নময় মেষচর্ম নিয়ে চম্পট দিলো জেসন।
    দৌড়াতে দৌড়াতে সমুদ্রতীর,দূর থেকে আর্গোর আলো দেখা যাচ্ছিলো। সঙ্গে মেদেয়াকেও নিলো।
    এরপরে আরো অনেক কান্ড হলো,গ্রীসে ফিরে জেসন ও মেদেয়ার বিয়ে হলো।

  • angana | 131.95.121.132 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০০:৩১392889
  • কাহিনী গড়িয়ে চলে। সুখ ও দু:খের কুসুমে রতনে গাঁথা মালার মতন মানুষের জীবন, এর উপরে জেগে থাকে অতন্দ্র তারারা। তারায় তারায় জেগে থাকে নানা গল্পকথা,জেগে থাকে ছোটো বড়ো সুখ ও দু:খ,হারানো ও ফিরে পাওয়া।
    রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে অলিন্দে দাঁড়িয়ে নিঘুম মানুষ চেয়ে থাকে ঐ তারাদের দিকে-মানুষের কত যন্ত্রণার সাক্ষী ঐ তারারা।কত মানুষ এসেছে গেছে,কত যুগের পর যুগ চলে গেছে,কত বদলে গেছে সব, ঐ চিরন্তন তারারা জেগে আছে প্রেমনত দৃষ্টি মেলে।
    ঐ নিঘুম মানুষের চক্ষুতারকায় জেগে আছে ঐ দূরের তারা-
    ""পৃথিবী চায় নি যারে /মানুষ করেছে যারে ভয়- /অনেক গভীর রাতে তারায় তারায় মুখ ঢাকে/তবুও সে...
    কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়/তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে একা জেগে রয়...
  • angana | 131.95.121.132 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:৪২392890
  • লুব্ধক তারাটি আছে কালপুরুষের পায়ের কাছে, ক্যানিস মেজর নক্ষত্রমন্ডলে। ইংরেজিতে এই তারাকে বলে সিরিয়াস। এটি রাতের আকাশে দেখা তারাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী উঙ্কÄল।আছে প্রায় সাড়ে আট আলোকবর্ষ দূরে।অর্থাৎ ওর আলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে সময় লাগে সাড়ে আট বছর। ওর যে চেহারা দেখছি এখন, তা আসলে ওর সাড়ে আট বছর আগের চেহারা।এই বিস্ময়ভরা মহাবিশ্বে এমনই হয়, যে কাল অতীত হয়ে গেছিলো, সেই কালের বস্তুও আমরা দেখতে পাই। যে যত দূরে তার আলো তত দেরিতে এসে পৌঁছায় বলে যে যত দূরে তার তত আগের চেহারা দেখতে পাই আমরা।
    ঐ যে অ্যান্ড্রোমেডা নক্ষ্‌ত্‌রমন্ডলের কথা বলেছিলাম,তার মধ্য দিয়ে দেখা যায় আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী গ্যালাক্সি(মিল্কি ওয়ের অনুচর গ্যালাক্সি দুটো বাদ দিলে) অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সিকে।এটা আছে ২২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে। এর যে চেহারাটা আমরা দেখছি সেটা বাইশ লক্ষ বছর আগের চেহারা! বাইশ লক্ষ বছর আগের জিনিস দেখতে পাচ্ছি।সেও আবার নিকটতম!!!!!
    আরো দূরে তাকালে আরো আগের জিনিস দেখতে পাবো,কোটিও কোটি বছর আগের সব প্রাচীন জিনিস!আশ্চর্য নয়?
    যাই হোক, যেকথা বলছিলাম।লুব্ধক বা সিরিয়াস।এই তারাটিকে বারে বারে উল্লিখিত দেখা যায় প্রাচীন মিশরের নানা উপকথা লোককথা ও পবিত্র লিখনে।লুব্ধক ওদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৮:২৩392891
  • অ্যান্ড্রোমিডার শুধু ঐ একটি গ্যালাক্সির কথা বলে ছেড়ে দেওয়াটা বোধহয় ঠিক নয়,অ্যান্ড্রোমিডা বা দেবযানী মন্ডলের গভীরে ১৫ খানি গ্যালাক্সি এ যাবৎ খুঁজে পাওয়া গেছে।পৃথিবী থেকে ২২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা Great Andromeda galaxy M31-এর আয়তন আর ঔঙ্কÄল্য যেহেতু সবচেয়ে বেশী তাই ওর আলোয় ঢাকা পড়ে থাকে সবাই।M31কেই প্রদক্ষিণ করে ঐ সব বামনাকৃতি গ্যালাক্সি ,ওদের নাম-M32,M110,Andromeda I,Andromeda II,... এমনি করে Andromeda Xপর্যন্ত।
    সবচেয়ে আশ্চর্যের হল Andromeda IXগ্যালাক্সিটি,আমাদের রাতের আকাশের চেয়ে ১০০ গুণ নিÖপ্রভ।আবিষ্কারের সময় হইচই পড়ে গিয়েছিলো যে, আকাশের অন্ধকারতম বস্তু খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।২০০৪ সালে'স্লোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভে"(SDSS)এর বিশেষ নক্ষত্র দীপনমাত্রা বিশ্লেষন পদ্ধতিতে ঐ অভূতপূর্ব আবিস্কার সম্ভব হয়।কিন্তু বছর ঘুরতেই ২০০৫ সালে কন্যা রাশিতে(constellation Virgo)পাওয়া গেলো এক আরও আশ্চর্যের বস্তু-VIRGOHI21-যার শরীরের সমস্ত তারা মৃত।Andromeda IX-এ তাও সামান্য আলো ছিল।কিন্তু এ যে এক বিস্ময়কর মৃত্যুর জগৎ।আকাশের বুকে এক মৃত্যুর দলিল।আর কোন গ্যালাক্সির ভবিতব্য কি এমন হবে ? প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে গেল জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান।
  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৮:৩১392892
  • দু:খিত,আমার আগের লেখাটিতে অ্যান্ড্রোমিডার ১৪ টি গ্যালাক্সির মধ্যে ১২ টির নাম দিয়েছি,বাকি দুটির নাম-NGC147,NGC185।মজার ব্যাপার হল,পিতা-পুত্র উইলিয়াম হার্শেল-জন হার্শেল এ দুটির আবিষ্কর্তা।

  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৮:৪৮392893
  • যেহেতু কালপুরুষের পায়ের কাছের লুব্ধক তারার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা"বৃহৎ কুকুরমন্ডলী"(Constellation Canis major) নিয়ে কথা হচ্ছে,তাই ওখানের একটা আবিষ্কার নিয়ে একটু বলি।২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে ফরাসী,ইতালীয়,বৃটিশ এবং অস্ট্রেলীয় জ্যোতির্বিদদের একটি দল ওখানে আবিষ্কার করে বসলেন এক নতুন গ্যালাক্সি।আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪২০০০ আলোকবর্ষ দূরে,আর আমাদের সৌরজগৎ থেকে ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে।এত কাছে গ্যালক্সি!!অন্য জ্যোতির্বিদেরা তো বিশ্বাসই করতে চান না-"মেপে দেখো দূরত্ব ঠিক কিনা?কি করে বুঝলে ওটা গ্যালাক্সি? ওটা যে আমাদের ছায়াপথের ভেতরে থাকা কোন নক্ষত্রপুঞ্জ নয়-তার কি প্রমাণ?"-হেন হাজারো প্রশ্ন।
    কিন্তু শেষে নানারকম আলোকে পর্যবেক্ষণের পর মেনে নিতে হল-না সত্যি ওটা গ্যালাক্সি,আর ওর দূরত্ব সত্যি সৌরমন্ডল থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ।
    কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখলেন-সে গ্যালাক্সির "গভীর গভীরতর অসুখ এখন"।কেন? কেন?

  • angana | 131.95.121.132 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৯:২৯392894
  • আমাদের মিল্কি ওয়ের মহাকর্ষীয় আকর্ষণে ওটা আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছে,তাই না? মিল্কি ওয়ে ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে?
  • angana | 131.95.121.132 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৪:১২392895
  • সূর্যের নিকটতম প্রতিবেশী নক্ষত্রটি আছে সেন্টরাস নক্ষত্রমন্ডলে,নাম প্রক্সিমা সেন্টরি।এটি আল্ফা সেন্টরি নামের তারাদলের মধ্যে একটি। সেন্টরাসকে আমাদের উত্তর গোলার্ধ থেকে দেখা যায় না প্রায়, যারা দক্ষিণ গোলার্ধে আছেন, আকাশ খুঁজে দেখতে পাবেন আমাদের সূর্যের নিকটতম তারাকে।
    এই নিকটতম তারা আছে চার আলোকবর্ষ দূরে। আলো যা কিনা সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল চলে যায়,সূর্য থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে সাড়ে আট মিনিটেই, সেই আলো প্রক্সিমা সেন্টরি তারা থেকে ছুটতে ছুটতে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় চার বছর পরে। কিন্তু এ মহাবিশ্বে তেমন কিছু বেশী দূরত্ব নয়।আমাদের গ্যালাক্সিতে যেসব তারারা ঘূর্নীবাহুগুলোর মধ্যে আছে, তাদের মধ্যে গড় দূরত্ব সর্বদাই এইরকম।
    কোটি কোটি তারা ছড়িয়ে আছে মিল্কি ওয়ের ঘূর্নী বাহুগুলোতে, ঘণীভূত গ্যাস থেকে তারাদের জন্ম হয়েছে,কারুর কারুর চারিপাশে গড়ে উঠেছে গ্রহজগৎ। কেন্দ্রের কাছে তারা অনেক বেশী, সেখানে তারাদের গড় দূরত্ব আরো কম। তারায় তারায় ঘেঁষাঘেঁষি কান্ড সেখানে।
    আমাদের এই বিরাট ঘরখানি, এই ছায়াপথ বা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি, প্রায় ৪০০ বিলিয়ন বিভিন্ন ধরনের তারা, বিশাল বিশাল মহাজাগতিক মেঘ,নেবুলা, ক্লাস্টার এইসব নিয়ে ঐ গভীর মহাকাশের ঘননীল বুকে ক্ষুদ্র তিলের মতন জেগে আছে।এমন গ্যালাক্সি আছে আরো বহু বহু বিলিয়ন।

    পরিষ্কার আকাশ, ধোঁয়াধুলো আলোকদূষণ কিছু নেই এমন এক জায়গায় অবাবস্যা রাতে আকাশের নীচে গিয়ে দাঁড়ালে কিরকম লাগবে? ঐ বর্ণনার অতীত সৌন্দর্য্যকে পৃথিবীর কোনো ভাষায় কোনো ভাবেই কি প্রকাশ করা যায়? শুধু দুচোখ ভরে দেখে, শান্ত হয়ে চুপ করে বসে সমস্ত সংবেদনে গ্রহণ করলেও এর কতটুকু আমাদের অনুভবযোগ্য?

    মনে পড়ে এক জন্মান্ধ পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদের কথা। ডক্টর কেন্ট কুলার্স। সেটি(SETI) মানে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্সে জড়িত ছিলেন ও আছেন ভদ্রলোক।
    তারার নীচে চক্ষু পেতে দিয়ে ঐ দিব্যবিভার তীব্র মাদক পান করতে করতে অবাক মনে ভেসে ওঠে সেই ব্যক্তির কথা।কোনোদিন আকাশকে সে দেখে নি! ঐ তারাদের দেখে নি! ঐ ধোঁয়া ধোঁয়া ওড়নার মতন ছায়াপথ দেখেনি,ঐ হাল্কা অ্যান্ড্রোমিডার ছাপটুকু দেখে নি! অথচ সে শুধু কানটুকু মেলে দিয়ে খুঁজে চলেছে সংকেত আর সংকেত! কিছু কি আসে ঐ বিশাল গভীর বুকের ভিতর থেকে? এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা নাকি আমাদের সঙ্গী আছে? ঐ বহুদূরের তারাদের আশেপাশের গ্রহে গ্রহে চলছে কি তাদের জীবনের তরঙ্গ?

  • tay ei katha | 203.193.153.39 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৩:৩১392897
  • হ্যাঁ ,ঐ ক্যানিস মেজর ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সিটার সম্পর্কে দু-একটা কথা বলি।ওতে মাত্র ১০০ কোটি তারা আছে,যেখানে আমাদের ছায়াপথে ১০০০০ কোটি তারা।তাই ছায়াপথের এত কাছে থাকায় ও গ্যালাক্সির অবস্থা সঙ্গীন।ছায়াপথের মহাকর্ষীয় বলের টানে ওর দফারফা অবস্থা।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন-ওর শরীরের ১ শতাংশ নাকি ইতিমধ্যেই খেয়ে ফেলেছে ছায়াপথ।এ কেমন মাৎস্যন্যায় মহাকাশের বুকে!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন