এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • সব চরিত্র কাল্পনিক

    kanti
    সিনেমা | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ | ৫৫৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 59.93.204.20 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:২২422631
  • না না, আপনেরা ক্কেউ না। য্যানো আমি আপনেদের বড় কেয়ার করি !
  • I | 59.93.207.125 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৩৫422632
  • বেঁচে থাকতে জানাশোনা হয় নি তেমন। মরে যাওয়ার পর ইন্দ্রনীলকে খুঁজতে বেরোতে হল রাধিকাকে। ইন্দ্রনীলের ফেলে-যাওয়া ট্রেইল বরাবর হাঁটতে হাঁটতে যাওয়া। যেন জীবনের ট্রেন থেমে গেছে অবরোধের জন্য, কী-আর করার আছে, চায়ের ভাঁড় হাতে নিয়ে অচেনা স্টেশনে নেমে যাওয়া ছাড়া; আর স্টেশনের পাশ দিয়ে যে ছায়ায়-ঢাকা রাস্তা চলে গেছে, তার মায়ায় পড়ে- যাওয়া ছাড়া। এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়াই যায় অজানা কোনো বনের মধ্যে,অচেনা কোনো নদীর ধারে; শহরে আর ফিরে না গেলেও চলে। ফিরতেই হবে , এমন মাথার দিব্যি কে-ই বা দিয়েছে !

    এমনি করে থেকে গেল রাধিকা। আর জীবন আর মৃত্যু আর নিয়তি মিউজিক্যাল চেয়ার খেলতে লাগল তার ছোট্ট বাগানের সবুজে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে সৌন্দর্য দেখে রাধিকা, স্নেহে ঝুঁটি নেড়ে দেয় খেলাপাগল ফ্রকবালিকাদের। অর্থাৎ কিনা পর্যায়ক্রমে জীবন আর মৃত্যু আর নিয়তি। অ্যাজ ইফ মিউজিক্যাল চেয়ারে কোনো পর্যায় থাকতে আছে।
  • I | 59.93.207.125 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:০২422633
  • কিন্তু ট্রেইলের কথা হচ্ছিল। যে শুঁড়িপথে রাধিকা হাঁটল না কোনোদিন। আর আজ হঠাৎ করে যে রাস্তায় তাকে নামিয়ে দিল জীবনের ট্রেন। সেই পথ ধরে হাঁটলে দিনান্তে কী উপার্জন হয়,- ভালোবাসা? সরলতা, তুমি ভাবো এমন?

    ভালোবাসা আসুক-না আসুক, অবাক-হয়ে যাওয়া তো আসতেই পারে , তাতে তো দোষ নেই ! এই যে রাধিকা জানল, নন্দ'র মা'র সঙ্গে বসে বসে কত গল্প করত ইন্দ্রনীল, যেন দুই বন্ধু; কবিতা লিখেছিল নন্দ'র মা'কে নিয়ে। কবিতা লিখেছিল তো গণেশকে নিয়েও, গণেশ ওদের ইস্ত্রিওলা। জ্বরকে নিয়ে লিখেছিল কবিতা। জ্বর একবার রাধিকাকে জাপটে ধরেছিল। ইন্দ্রনীলের সামনেই। দুজনের মাঝখানে জ্বর, জ্বর তৈরী করে পাঁচিল, জ্বরকে ভালোবেসে কী প্রত্যাখ্যানটাই না করেছিল রাধিকা, ইন্দ্রনীলকে।

    আর আসতে পারে কাঁচের টুকরো। অচেনা রাস্তায় হাঁটতে গেলে, কেননা মাতলামোর মধ্যে অনেকগুলো বোতল ভেঙে-ছড়িয়ে ফেলেছে ইন্দ্রনীল। তাই দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে রাস্তা, ঐ কৌণিক কাঁচখন্ড দিয়ে,রাস্তার কিছুটা অন্তত: । কাঁচ ফুটে যায় পায়ে,মর্মরের ধবলে রক্ত লাগে, সাদায় ও লালে , রাধিকার দুধে-আলতা পা।

    একটা কবিতা লিখেছিল রাধিকা। অচেনা এক পাগলকে নিয়ে। রাধিকার কবিতার সেই পাগলকে ইন্দ্রনীল তুলে নিয়েছিল তার নিজের গল্পে; নন্দ'র মা-কে পড়ে শুনিয়েছিল সে গল্প। রাধিকা জানতেও পারেনি।

    এইরকম সব কাঁচ। ইন্দ্রনীলের কবিতা'র "কাজরী'-রাধিকা জানতে চেয়েছিল-"সে কী আমি'? "না' -বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ইন্দ্রনীল। এমনি সব।

    বেঁচে-থাকার এইসব মাসমজ্জা নিয়ে কবিতাগাছ লেখে ওরা। লিখে চলেছে তো চলেছেই। আর পাঁউরুটির নীল ছাতকুড়োর মত, ভেজা ডালের অর্কিডের মত, পরজীবী সবুজের মত জল পেয়ে লকলকিয়ে কবিতার শিখা লাফ দিয়েছে অনন্তে। পেছনে জীবনের কালো অসীমতা।
  • I | 59.93.207.125 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:৩৪422634
  • "গয়া যাবে?'-বলে রাস্তার মাঝখানে হাত দেখিয়ে দাঁড় করায় একটি বাসকে, রাধিকা। হাতে একটি স্যুটকেস সম্বল। গয়ায় পিন্ড দিতে যাবে ইন্দ্রনীলের।
    আর ঐ সজলতা, সোহিনীর গলার ঐ অলৌকিক আর্তিকে চাকায় মাড়িয়ে গাঢ় হংকিংয়ে গলা পরিষ্কার করে চলে যায় দিনের বাস। শিল্যুয়েটের রাধিকাকে সন্ধ্যার নীলকাজল অন্ধকারের ব্যাকড্রপে একা দাঁড় করিয়ে রেখে। হাতে একটি স্যুটকেস সম্বল। দিনেরই বাস। সন্ধ্যার ছায়া লাগলে পারত না।

    আহ্‌, কী করুণা, কী অপরিসীম করুণা দিয়ে এই দৃশ্যখানি রচনা করেছেন ঋতুপর্ণ! আমার কান্নার বোধ জাগে, কাঁদতে আমি লজ্জা পাইনা, কেননা হলঘরের অন্ধকার, কেউ তো আর দেখতে পাচ্ছে না।

    একা দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মেয়ে। ইন্দ্রনীলকে নিয়ে, শেখরকে নিয়ে, কবিতার পাগল আর পাগলের কবিতাকে নিয়ে চলে গেল দিনের শেষ বাসটি। মেয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে একা, ঐ নীলকাজল দিগন্তের একটু নীচে। হাতে শুধু তার একখানা স্যুটকেস। বেঁচে-থাকার বাদবাকি সম্বল তার মধ্যে। হলঘরের অন্ধকারে কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না।

    "দেখ, নিল না'- বলে বালিকার মত অভিমান করে রাধিকা। কাজরীর কাছে।
  • I | 59.93.207.125 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:৪৯422635
  • কবিতার ক্লাশ শেষ, এবারের মত।
  • pi | 128.231.22.89 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০১:০২422636
  • কবিতার অসাধারণ একটা ক্লাশের শেষে কি করতে হয় ? হাততালি তো দিতে নেই। চুপ করে থাকতে হয় বোধহয়।
  • tkn | 122.173.176.52 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০১:০৯422637
  • হুঁ, কবিতার প্রতি মুগ্‌ধতায় স্তব্ধতায় প্রকাশিত...
  • kc | 89.203.49.18 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০১:২০422638
  • আজকে রাতে আর ল্যাপিটাকে বন্ধ করা হলনা। ঐ সব স্ক্রিন সেভার/শাট ডাউন টাইম সব বাড়িয়ে দিলেম আট ঘন্টার জন্য। যখনই ঘুম ভাঙবে, দেখব কবিতা আমার দিকে চেয়ে আছে, চোখ কচলে আবারো দেখব কবিতাকে, তাকিয়ে থাকবে নিস্পলক, অচঞ্চল, আমিও। আবার ঘুমিয়ে যাব।
  • ranjan roy | 122.168.201.200 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৫:৪৪422639
  • চুপ করে আছি। দিগন্তরেখায় একটি স্যুটকেস হাতে মেয়ে। সন্ধ্যা নামছে, ওদের সিল্যুয়েট। বাসটি কখন মিলিয়ে গেছে। আর কিছু না, ব্যস্‌।
  • I | 59.93.242.191 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:২২422641
  • অন্য একটা লেখা
    (শেষের কিছু ব্যক্তিগত পরে......)
    ---------------------------------

    ব্যালকনিতে বসে আছে রাধিকা। রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রনীল। মরে গেছে ততদিনে। হাতে সিগারেট ছিল কি? আমার মনে পরেনা।
    "আমাকে নিয়ে যাবে, তোমার সঙ্গে?' উৎকণ্ঠিত রাধিকা প্রশ্ন করে। কবির সঙ্গে হাঁটতে উৎসুক কবির বউ। যেন বহুদিন পরে দেশে ফেরা রিকার্ডো রেইস। মৃত কবির সঙ্গে বন্ধুত্ব ঝালিয়ে নিতে আগ্রহী। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন ফার্নান্ডো পেসোয়া। কালো রেনকোট বেয়ে জল পড়ছে। "নিয়ে যাবে, আমাকে, তোমার সঙ্গে?'-রাধিকা প্রশ্ন করে।

    "ছাড়বে , তোমাকে? শেখর?' প্রতিজিজ্ঞাসা করছে ইন্দ্রনীল। সৎভাবেই জানতে চাইছে। কবির বৌয়ের কাছে। যে, ছাড়বে কিনা। সামাজিক সাফল্য,সচ্ছলতা। কেয়ারিং একজন মানুষ, তাকে পাওয়ার লোভ। ছাড়বে কিনা এরা।

    রেলিংয়ের ওপারে রাত্রি ঝাঁ ঝাঁ করছে। মরুরাত্রি। উদাসীন পাথর। গলিত ধাতু। হাড়ের মালা। গন্ধক ও লাভা।
    এপারে দুজন মানুষ। এখনো একসাথে হাঁটবে কিনা মনস্থির করে উঠতে পারেনি। একজন জীবিত। অন্যজন মৃত, যতদূর জানা যায়। মাঝখানে বিচ্ছেদের হু হু হাওয়া।
  • P | 163.244.63.121 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৮:২৩422642
  • ডাগ্‌দার , ডাগ্‌দার ........ তোমার লেখা পড়লে আজকাল ভালো লাগার থেকে রাগ বেশি হয় মাইরী। কেন যে আরো লেখো না।

    তবে এ লেখাটা আগে পড়ে ফেলে ভুল কল্লুম বোধকরি। এইবার সিনিমাটা দেখলে নিগ্‌ঘাত হতাশ হবে :)
  • I | 59.93.195.2 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৩৯422643
  • সবাই তো আর একরকম হয় না। কবি বিনোদ বেরা একজন চাষীমানুষ। সুন্দরবনের বাদায় তিনি আবাদ করেন কৃষিকাজ ও কবিতা। যত্নে তিনি সন্তান বড় করেছেন। তাঁর মাটির বাড়ি। গলে পড়তে পারে বর্ষায় ও জোয়ারে। ধানক্ষেতকে তিনি রক্ষা করেন জোয়ারের লোনাজল থেকে। মাটির বাড়িকে ভরাকোটাল থেকে। সর্বনাশ থেকে।

    সবাই একরকম হয় না। ইন্দ্রনীল রাধিকার কথা সারাদিনে ক'বার ভাবত হাতে গুনে বলা যায়। বাড়িতে রাখা টাকা ও উড়িয়েপুড়িয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফূর্তি করেছে। নন্দ'র মা কী খাবে সেকথা ভাবেনি। ট্যুর সেরে আসা রাধিকা কী খাবে সেকথা ভাবেনি। কী উদাসীনতায় ও মায়ের অসুখের কথা রাধিকাকে জানাতে বেমালুম ভুলেই গেল।

    অথচ সেই নন্দ'র মা'র সঙ্গে কত গল্প করত। যেন দুজন বন্ধু। তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছিল। ওর কবিতার হৃদয়ে তো কাজরী নয়, রাধিকার জ্বরমাখা মুখ বিঁধে বসে ছিল। গোপন জ্বরের মত।
    ও কী সত্যি সেল্ফ-সেন্টার্ড-রাধিকা ভাবে। সর্বনাশের দিকে ও কেন রাধিকাকে হাত ধরে পার করে দিল। যেন খলবলে কালো নদীর ওপরে ভাঙ্গা সাঁকো, তাই পার হয়ে রাধিকা চলে যাচ্ছে শেখরের দিকে। আর সন্তর্পণে হাত ধরে আছে ইন্দ্রনীল। চলো , তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি; সাঁকোর এদিকটা ভাঙা-বলছে। একটু কষ্ট করে মেরামত করতে পারত না?
    আসলে অহঙ্কার। মাথা নোয়ালে তো স্বর্গের ঐশ্বর্য পাওয়া যায়। তাই বলে কী মাথা নোয়াতে হয়? কবিতা নয়। চরিত্র।
  • I | 59.93.195.2 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৫২422644
  • শুধু একবার চেয়েছিল ইন্দ্রনীল, তেমন করে আর কখনো চায়নি। মহালয়ার ভোরে যখন ইন্দ্রনীলকে ফেলে অসুস্থ মা'কে দেখতে জামশেদপুর চলে যাচ্ছে রাধিকা, যেন শিবশ্মশানবাসীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চললেন অভিমানিনী উমা-ইন্দ্রনীল বলেছিল : রাই, যেয়ো না। আজকে যেয়ো না। রেডিওতে তখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বিপাশার আধেক মুখে দুর্গার আদল।

    মৃত্যু দিয়ে রাধিকার জীবনকে দু-টুকরো করে দিয়ে গেল ইন্দ্রনীল। এপারের রাধিকা ওপারের দিকে তাকায়; যেতে বারণ করেছিল বটে ইন্দ্রনীল। তার সেই বারণ মাড়িয়ে চলে তো গেল সে। অহঙ্কারের গলা টিপে ধরে বারণ করেছিল ইন্দ্রনীল। সেই কাঙাল, তাকে একা ফেলে রেখে চলে গেল সে। দিগন্তরেখার একটু নীচে।

    আর এপারে এসে রাধিকা দেখে দেখে ফুলে ফুলে ঢাকা ইন্দ্রনীল। কী মসৃণ গাল, ওর দাড়িটা কামিয়ে দিল কে? It hurts, ঐ মসৃণ গালের অভিমান। আগের জন্মের রাধিকা তো প্রত্যেকবার তাই বলত-It hurts-যতবার ইন্দ্রনীল গালে ঘষেছে ওর না-কামানো গাল। তাই একদিন নেশার ভেতর দাড়ি কামাতে গিয়ে রক্তের আয়োজন করেছিল ইন্দ্রনীল।

    এইসব আর কী! মৃত্যুর হাতে লেখা কাঁটাতার ও ফুলগাছের সেই চিরন্তন কবিতাগুচ্ছ। টুকরো-টাকরা। এক-একজন এক-একরকম।
  • I | 59.93.195.2 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:১৮422645
  • "" যখন জীবনে কিছু নেই- কেন লিখব? নিজেকে কিছু দিতে পারিনি-লেখককে কেন দেব? প্রেমিককে পারিনি দিতে কিছু, যৌনপিপাসুকে দিতে পারিনি, নিরাপত্তাপ্রিয়কে দিতে পারিনি, স্বাস্থ্যলোভীকে দিতে পারিনি-কেন তবে লেখককে দেব কেন? মেয়েকে কিছু দিতে পারিনি। স্ত্রী, মা ও ভাইবোন এবং বন্ধুবান্ধব এবং অজানা দেশের জনসাধারণকেও আমি কিছু দিতে পারিনি। শুধু একজনকে তবে দেব কেন। তাকে তাই বঞ্চিত করেছি। অথচ শুধু তাকেই পারতুম কিছু দিতে। লেখকটিকে।''
    (সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি, ২৫শে মে, ১৯৭৪)
  • I | 59.93.192.99 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১২:২২422646
  • ""আমাকে বলা হয়েছে যে অসুস্থ অবস্থায় কোমায় চলে যাই। সেটা ১৯৯৭। নার্সিংহোমে তিনদিন থাকার পর আমার চেতনা ফেরে। আর ডক্টর কণিকা মিত্রের দারুন চিকিৎসায় এক বৎসরের মধ্যে আমার জীবনের কালমেঘ কেটে যায়। জীবন গিয়েছিল চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার, এবার আমি নিজেকে পৃথিবীর জীব বলে বুঝতে পেরেছি আবার।

    এখন আমি জানতে পারলাম, আমার স্বামী দেশে তার বাড়ির অংশ বিক্রি করে, ঠাকুরপুকুরে আমার চিকিৎসা করেছে। জীজা একা স্কুলে যাতায়াত করেছে।...... আমার স্বামী ফিরেছে রাত্রি নয়টায় ছাত্র পড়িয়ে। তারপর রান্নার কাজও তাকে করতে হয়েছে। এরমধ্যেই সে লেখাও চালিয়ে গেছে।....

    .........দু-তিন বছর আগে আমরা পুরীতে গিয়েছিলাম। একদিন সন্ধ্যা নামবে নামবে, আমরা বীচে ঘুরছি কিন্তু পাশে শৈলেশ্বর নেই। আসন্ন সন্ধ্যায় সমুদ্র তখন ভীষণ রহস্যময়, ওকে দেখলাম একটু দূরে সমুদ্রের সেই রহস্যময় অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে আছে। আমরা যে ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছি সেটা টের পাচ্ছে না। মনে হল নি:সঙ্গ একক এক আত্মা, তার একক সংগ্রামের চিত্রটির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে ওর সমস্ত জীবনের একক যাত্রাপথের কথা। হয়তো ভাবছে জীবনের প্রত্যাখ্যানগুলির কথা। কিছু কি চেয়েছিল ও পৃথিবীর কাছে? আমি যতদূর জানি উত্তরটা, না। ওর জীবনের সমস্ত বেদনা সেইদিন ওর চোখেমুখে ফুটে উঠতে দেখেছিলাম। কিন্তু কতটুকু আমি ওকে চিনি? কতটুকুই বা আমি দেখেছি? ও তো কোনোদিনই আমাকে ওর ভেতরে ঢুকতে দেয় নি। কে জানে সেটাই হয়তো ওর দুর্বলতা কিংবা সেটাই হয়তো ওর শক্তি। ও কারুরই নয় ও কেবল নিজের।........''

    ("নিজেকে পৃথিবীর জীব বলে বুঝতে পেরেছি আবার': সুনিতা ঘোষ-শৈলেশ্বর ঘোষের স্ত্রী।)
  • I | 59.93.192.99 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১২:৫০422647
  • না, কবিতা নয়। অমরত্ব নয়। আমি মানুষের কাছে এসে বসলাম। বড়সড় কোনো বসা নয়। জড়োসড়ো হয়ে বসা বরং। যেমন করে বসলে বিশ্বজগতের কাছে লজ্জা পেতে হয়। একটি অভ্যাস ও ভালোবাসার মেয়ে, ছোট্ট একটা বাচ্চা, দুটো মানুষ বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, একটা মাথাগরম মেলানকলিক-এসবের জন্য আমি লজ্জা মাথা পেতে নিলাম। এসবের জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করলাম। যেন কেউ সেধেছিল।

    আমি কবিতাগাছের ডালে ঢেলা বাঁধতে গিয়ে দেখেছি ঐ মনোকামনা বৃক্ষ, ভ্রষ্ট যুবকদের ঐ হৃদয়বট কীভাবে নিদারুণ ঝুরি নামিয়ে গিলে খেয়ে যাচ্ছে একের পর এক জনপদ, ধানমাঠ। আমি মানত না করে ফিরে এসেছি। লাল কাপড় আমি ঝোলাইনি ঐ সর্বনাশের ডালে। আমি ফিরে এসেছি সজলতার কাছে।

    না, অলকানন্দা নয়। এ আমাদের পড়শী জল। আমাদের ছোট নদী। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি। জল পড়ে ঐ মৃৎ-পিরিচে। পাড়ের কাশ-কুশবনে ক্কচিৎ খেলে যায় বাংলাভাষা, বৃষ্টিভেজা। আর আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে। বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।

    এছাড়া আর কোনো শান্তি নেই; কোনো অশান্তিও না।

    (শেষ)
  • h | 203.99.212.224 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৭:০৭422648
  • ইন্দোর লেখা পড়লে মাইরি, মাঝে মাঝে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। মালটা জালি জানি, তবু।
  • eeshwar | 122.166.83.56 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২১:১৪422649
  • না:, ইন্দোবাবুকে একটা থ্যাংকস দিতেই হয়।

    ইতি

    আশীর্বাদক

    ঈশ্বর
  • AB | 135.214.40.162 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৪:৫১422650
  • আমি আবার অন্যভাবে..., মানে অনেকগুলি ইশ্বরের লিস্টে ইন্দ্র কেও ধরে নিয়েছি...

    কারণ এরকম মাল ভগবান ছাড়া নামানো যায় না
  • P | 163.244.62.138 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৭:৫১422652
  • এই লেখাটা আর একবার পড়ব বলে আজ ডেস্কলাঞ্চ কল্লুম। "জল পড়ে ঐ মৃৎ-পিরিচে। পাড়ার কাশ-কুশবনে ক্কচিৎ খেলে যায় বাংলাভাষা , বৃষ্টিভেজা।"
    হাড়মাসমজ্জায় জড়িয়ে গেল কথাগুলো।
  • ranjan roy | 122.168.211.104 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৩৭422653
  • ইন্দোডাক্তার!
    শৈলেশ্বর ঘোষ কি হাংরি জেনারেশনের সেই কবি, যিনি কবিতার জন্যে জেলে গিয়েছিলেন? যিনি শঙ্খ ঘোষ সংকলিত জীবনানন্দের ওপর বিখ্যাত প্রবন্ধের বইটায় একটা অসাধারণ মূল্যায়ণ করেছেন?
    হিন্দমোটরে স্কুল শিক্ষক ছিলেন,? রিটায়ার করে বরানগরে থাকেন?
    যদি উনি হন, ওনার পুরনো লেখা হিন্দমোটরে ভায়রার বাড়িতে জোগাড় করিয়েছি। বড়দিনের সময় কোলকাতায় গেলেই পেয়ে যাবো।
  • I | 59.93.245.209 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৪০422654
  • হ্যা, রঞ্জনদা।
  • a x | 143.111.22.23 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৪১422655
  • কবিতার জন্য জেলে?
  • I | 59.93.245.209 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৫০422656
  • ""ক্ষুধিত প্রজন্ম ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম আসামী শৈলেশ্বর ঘোষ গ্রেফতার হন ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ ; রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কবিতায় অশ্লীলতার দরুন।''

    মলয় রায়চৌধুরীর লেখা থেকে তুললাম।
  • Arpan | 122.252.231.12 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৫৪422657
  • এইটা তো হাংরি জেনারেশনের গল্প তাই না? মলয় ও তার দাদা সমীর দুজনেই অশ্লীলতার দায়ে গ্রেফতার হন। মল্যের বোধহয় কিছুদিন জেল হয়।
  • Arpan | 122.252.231.12 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:৫৪422658
  • * মলয়ের
  • I | 59.93.245.209 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০০:০৪422659
  • কি খাটায় !

    ""আমাদের বন্ধু সতীন্দ্র ভৌমিক একটা ৪ পৃষ্ঠার হাংরি লিফলেট বের করে ১৯৬৩তে,.... এই ঘটনার কয়েকমাস আগে "ঘোড়ার সংগে ভৌতিক কথাবার্তা'র বেশ কিছু অংশ বেরিয়ে গেছে। সতীন্দ্র ঐ কবিতার ৮ নং অংশটা ঐ লিফলেটে ছাপে। ... বাড়িতে আগুন লেগে গেলে বাড়ির লোকজনের মধ্যে যে ত্রাস দেখা দেয়, প্রতিক্রিয়াটা হল সেরকম। সাহিত্য-সংস্কৃতির তো বটেই, একেবারে সামাজিক গর্জন শুরু হয়ে যায়।পুলিশ প্রথমে কফি হাউসে পরে আমার বাসা পর্যন্ত ধাওয়া করে। আমাকে সাবধান করে দেয়। পুলিশের কাছেই জানতে পারি কয়েকটি গার্লস কলেজ থেকে বিরাট প্রতিবাদ হয়েছে এবং সাহিত্য জগতের অনেকেই ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়েছেন। শক্তি এই "অশ্লীল' কবিতার ভয়ে হাংরি বন্ধ করে দেয়। শক্তির বড়ো সাগরেদ মলয় চুপচাপ হয়ে যায়।(এরা সকলেই অর্থাৎ শক্তি, উৎপল, সন্দীপন, মলয় ইস্তাহার কেন্দ্রিক হাংরিকে "মজা করেছিলাম' - এইভাবেই দেখেছে।)''

    শৈলেশ্বর ঘোষ-একটি সাক্ষাৎকার।
  • vikram | 83.71.238.44 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৪:৪২422660
  • এই শেষ পোস্টটি খুব জরুরি। লোকের মন দিয়ে পড়া উচিত। এই ব্যাপারগুলো হল আসল।
  • ami | 202.54.252.201 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১৩:৩৭422661
  • আমি ছবিটা দেখেছি, শেষ দিকটা হজম করতে বেশ বেগ পাচ্ছিলম, কিন্তু "ঈ" এর লেখা পোরে আবার দেখতে ইচ্ছে করছে
  • Sudipta | 122.169.132.36 | ১৯ অক্টোবর ২০০৯ ১১:০১422663
  • এই লেখাটা দুর্দান্ত হয়েছে যদি-ও, এমনকি লেখাটা পড়েই সিনেমাটা দেখেছি, আর খারাপ লাগেনি; কিন্তু এক জায়গায় স্টার থ্যাটারের হলে আমরা চার ছ্যাবলা পাবলিক বিপাশার একটি অসহ্য ন্যাকা ডায়ালগ শুনে হ্যা হ্যা করে হেসে দিয়েছিলাম :))

    "ঘোষো না..it hurts" , বলার কি কায়দা! বাপস!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন