স্বপ্নের মতো অন্তর্লীন কোন বিষণ্ন পৃথিবীর অধিবাসে সক্রীড়ক ক্লান্ত সময়। সে এক অনাদি নগরী ছিল। নগরী নয়। নগরপল্লী। টিলার পর্য্যঙ্কে স্থাপিত সুভিক্ষ নগরী। ভোগের, ব্যসনের, দ্যূতক্রীড়া ও অত্যুজ্জ্বল পানোৎসবের রাজধনী যে সুভিক্ষ নগরী, তারই বহির্রেখার অন্ধকারভাগে তার অবস্থান। তাই নগরী নয়, নগরতলি। লোকে ডাকে ধরন্ত পল্লী। ... ...
একটা লুক একটা বাসকোর ভিতরে ঢুইকা মরার প্র্যাকটিস করবার নুইছিল। এই সিন দেইখা একটা বিড়ালের বাচ্চা আইগিয়া আইয়া তারে কইল, তুমি মরবার চাউ ক্যা? লুকটা একটু ভুদাই হইল এবং কইল, তুই জানলি ক্যামনে? বিড়াল কয়, তুমার প্যাট্টিস দেইখাই বুজছি। ... ...
একটা বেওয়ারিশ কুকুরছানা, খুব বেশি হলে হয় তো কয়েক দিন বয়েস হবে, পৃথিবী সম্বন্ধে একেবারে অনভিজ্ঞ, ভরা মার্কেটের মাঝে ছোট্ট শরীরটা নিয়ে রাস্তা পার হতে যাচ্ছিল, আর দু'পা চলামাত্র হুড়মুড়িয়ে তার ওপর এসে পড়ল একটা সওয়ারি-বোঝাই রিকশা। পেছনের একটা চাকা চলে গেল কুকুরটার ঠিক গলার ওপর দিয়ে। একটা ক্ষীণ আওয়াজ বেরলো কি বেরলো না তার ছোট্ট গলাটা থেকে, সাথে সাথে বেরিয়ে এল তাজা লাল রক্ত। ছোটো শরীরটা ছটফটাতে লাগল তাতাপোড়া পিচের রাস্তার ওপর। ... ...
নীলের বাড়াবাড়িই। বাড়াবাড়ি তো সবই। বড়বড়ও। এক্স এক্স এল। এক্স এস খুঁজে পাওয়া দায়। আর এদিকে সব এক্সেস। যেদিকে তাকাও। উপরে তাকাও তো এক্সেল কাচা এক্সট্রা হোয়াইট মেঘ। মুখ তুলে তাকাও তো এক্সট্রা হোয়াইটেনিং টুথপেস্টচর্চিত স্মাইল। সামনে তাকাও তো সুপার স্বচ্ছ দরজা। দরজা যে আদৌ আছে তা-ই বোঝা দায়। প্রথম কদিন তো দুর্যোধনবাবুর ইন্দ্রপ্রস্থ ভ্রমণসমদশা। ... ...
এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি'র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমণ করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। ... ...
আমি শরৎ ভালোবাসি, অনেকে বলে শরৎকেই ভালোবাসি। জানালায় উঁকি মেরে অ্যাশট্রের গা ভরা রোদ, চারশো মিলিয়ন ইয়ার রোদও ভালোবাসি। একের পর এক ভালোবাসার ঝাপটায় তিনটে লাইনে পাঁচবার ভালোবাসি। ইয়ার এর কথায় মনে পড়ল অনেক ইয়ার ধরে আমি ইয়ারবাজ ছিলাম। ... ...
মা আসেন প্রতিবছর। মা জানতেও পারেন না দেশের কী অবস্থা, দশের কী হাল। তবুও দেশ ও দশ প্রতি অণুপল শুনতে থাকে মায়ের আগমনের প্রতিধ্বনি। এবার মা আসছেন বদলের বঙ্গে। সেটাই বড়কথা। মায়েরও হাওয়াবদল হবে আশা করা যায়। কিন্তু প্রতিবছরের মত বাজারের দাম বদলায়না। রাস্তাঘাট সারাই হয়না। রাজনীতির অশুভ আঁতাত, খরা-অতিবৃষ্টির টানাপোড়েনে রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি, প্লাসটিক না পেপার, পরীক্ষার পাশফেল, রিসেশান-ইনফ্লেশান চাপানউতোর সবকিছু চাপা পড়ে যায় কৈলাশ এন্ড কোং দের আগমনে। ওবামা-ওসামার উত্থান-পতনে, বিস্ফোরণে, দু:খের যজ্ঞে আহুতি দেয় দেশবাসী। ... ...
উজ্জ্বলকুমার দে চোর। সে যদি আজকে নবীনা সিনেমার ফুটে থাকতো, তাহলে মাজারের পাশের গলি দিয়ে দৌড়ে দশ গলির এক গলির মধ্যে লুকিয়ে পড়তে পারতো। নিদেনপক্ষে যদি যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের সামনে থেকে বক্তিয়ারশা রোডে ঢুকে পড়তো, তাহলেও ধরা না পড়ার একটা আশা ছিলো। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে, যে সে এর কোনওটাই করে উঠতে পারে নি। আর সময়টাও এমন, যে অসময়ে টিউশানি পড়তে আসা ছেলেপিলের বড্ড উপদ্রব। ... ...
খাজুরাহো মন্দিরের দেয়াল থেকে মাটিতে লাফাবার সময়, ঘুরঘুরে পোকার মুখে পাঠানো আদেশ তামিল করার জন্যে, বাতাসের মাঝপথে, নিজেকে পাষাণ মূর্তি থেকে রক্তমাংসের মানুষে পালটে নিয়েছিল কুশাশ্ব দেবনাথ নামে স্বাস্থ্যবান যুবকটি, যে কিনা হাজার বছরেরও বেশি চাণ্ডেলাবাড়ির একজন গতরি, ভারি-পাছা, ঢাউসবুক উলঙ্গ দাসীর ঠোঁটে ঠোঁট, যোনিতে লিঙ্গ, আর স্তনে মুঠো দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল । ... ...
প্রতিদিন খুব ভোরে, কাক ডাকারও আগে নীলিমার ঘুম ভাঙে। দিনের এই সময়টা আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা থাকে, ঘড়ি দেখে বুঝতে হয় ভোর হয়েছে। শীত আসছে, এখন রাত শেষ হতে দেরি হয় খুব। আজকাল ঘুম থেকে উঠে একটা হালকা চাদর গায়ে না দিয়ে বেরোনো যায়না, মফস্বলের এই দোতলা বাড়িটা, তার বাসিন্দাদের মতই সর্বাঙ্গে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ... ...
আজকে ডকইয়ার্ড ভোঁভা - ছুটি। না, ঠিক ছুটি নয়, আজ স্ট্রাইক, অর্থাৎ ছুটিই। প্রায় সাড়ে-ছ বছর কাজ করছি, এই প্রথম এমন স্ট্রাইক হলো। কারণ? ... মারপিট। দুই দলের মধ্যে তুমুল মারপিট হলো গতকাল দুপুরে, আমি দেখলাম। অনেকেই দেখলো, দূর থেকে। মারপিট কেন হয়েছে, সেটা ঠিক জানিনা। বক্সীর দলের কোন ছেলে নাকি তোলাবাজীর তিন হাজার সাতশো টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে (পরে জানা গেছে), সেটা প্রথমে বক্সী ধরতে পারেনি। ভেবেছে বাবলুর দলের সাথে ছেলেটার আঁতাত আছে। ... ...
ওটা আমার রোগ। টাইফয়েডের মতো ভুগি আমি... অফিসে, আড্ডায়, প্রেমে! প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে ঠারেঠোরে শুনিয়ে দিই... এই যে তোমার কেলানো দাঁতের ছুরির ফলা এর ধার আমি জানি! পেছন ফিরলেই ড্রাকুলা হয়ে কামড়াবে আমার পিঠ। এই যে এতো নলেনগুড়ের গন্ধ, কথায় কথায় সব আমি জানি। আমার ঘাড়ে বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস আর তোমাদের শোবার ঘরে ট্রিংকাস-এর উল্লাস! ... ...
হয়তো আমাকে তুমি ততটা মনে রাখোনি কখনো। তোমার ছিল একান্ত গণ্ডীতে বাঁধা এক নিজস্ব জীবন। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারব না কোনদিনও। কারণ আমার সুখের ঘরের চাবিকাঠি ছিল তোমার হাতে, আমার শান্তির পারাবত উড়তো তোমারই হাতের ইশারায় ..! তবু তোমার মত এক নিকটজনকে হারাতে যে কী বেদনায় ছটফট করেছি, তা কেউ বুঝবে না। বড় কঠিন ছিল সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।... পারব কি...? হবে কি...? এমন নানান যুদ্ধ চলেছে মনের মধ্যে, কুরে কুরে খেয়েছে আমায় প্রতি পল। কিন্তু শেষ অবধি সই করেছি তোমার মৃত্যুর পরোয়ানায় ! রাজি হয়েছি অনেক দ্বিধার পর, কারণ দিনে দিনে তুমি হয়ে উঠছিলে দুর্মদ...অসহনীয়...কালান্তক...! ... ...
আমাদের ঘরে জিনিশপত্র স্তূপাকার হয়ে ওঠে। আমি শ্যানেলের পারফিউম, আরমানির শার্ট ও রোলেক্সের ঘড়ি ব্যবহার করতে থাকি নিয়মিত। আমার চামড়া ক্রমশ আরো চকচকে হয়ে ওঠে। চুল হয় ঘন। আর রেশমের মতো কোমল। একদিন অফিস যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে একটি গাড়ির ধাক্কা লাগে। ড্রাইভারের মাথা ফাটে। ও পাঁজরের চারটি হাড় টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। অথচ, আমি অক্ষত থাকি। ও এতে আমার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। অফিসে সবাই আমাকে সম্বর্ধনা দ্যায়। ও কুর্নিশ করে। ... ...
এ সময় বিলের মাঝখান থেকে চাঁদ ওঠে। একটু জলে ভেজা। জলের গন্ধ পেয়ে ঝুপ করে লাফ মেরে ওঠে লবটুলি মাছ। মাছের পেটের কাছে লাল। কাটা দাগ। তাই দেখে বাঁশঝাড় থেকে দুটো পাতা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ঝরে পড়ল। দরিয়াবানু পাতা দুটো কুড়োয়। তক্ষকের ছায়া খসে পড়ে। দরিয়াবানু যত্ন করে ছায়াটি কুড়োয়। আকাশ থেকে শুয়াচান পাখির মায়া ঝরে পড়ে। দরিয়াবানু ঝিমুতে ঝিমুতে মায়াটুকু কুড়িয়ে নেয়। এই মায়ার মর্ম অপার। সোনাবরুর চোখেমুখে এই মায়াটুকু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ধরণী, দ্বিধা হও গো মা জননী। এ প্রাণ রাখি কেমনে। ... ...
ও হ্যঁ¡ আমাদের বাড়ীর পাশে গুরুদয়াল অ¡র উত্তীমলালের খাটাল ছিল। এই দুই যাদবভাই হোলি সিজন মাতিয়ে রাখত। রাত নটা-দশটা থেকে শুরু হত তাদের যাদব-গোষ্ঠীর হোরি-ধুন চৈতি গান ( হা হা গান না ফয়শ) হেঁড়ে গলায় সুরের ভুষ্টিনাশ, তার সঙ্গে ঢোলক ডুম্ডুমাডুমডুম ধ্ম , ঠনঠনাঠন খঞ্জুনি --মাঝে মাঝে পাড়ার নেড়ি কুকুর গুলো ভয়ে উঁউউউউ করে কেঁদে উঠত ( না গানে যোগ দিত, কে জানে) আরও রাত করে শুরু হত নৌটঙ্কি নাচ --কি হুল্লোড়! ছোকরা মেয়ে সেজে নাচত যদিও--তা তাও আমাদের ছোটদের দেখা বারণ ছিল--কারণ ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি বেশ R রেটেড হয়ে উঠত। ঐ খুব চুরি করে জানলা দিয়ে একটু আধটু যা দেখেছি--খুব রাগ ধরত বড়দের ওপর--সবতাতে যে কেন এত না না ছিল, উফ! ... ...
আমি অবশ্য বাইরে বেরোতাম পাড়ার মাতাল দেখার জন্য। আর অন্য কোনদিন দেখতে পেতাম না। আমার বাড়িতে কস্মিনকালে কাউকে মদ খেতে দেখিনি। দাদু সুনীল-শক্তির যুগে কবি হয়েও খেতেন না। (আত্মীয়দের মতে, এটা ওনার জীবনের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ কীর্তি। প্রথমটা হলো আনন্দবাজারে না লেখা) টিভিতে যদিও দেখেছি উত্তম কুমার মদ খাচ্ছেন। রাজেশ খান্না দোলের দিন মদ খেয়ে আকাশে উড়ছেন, নিচে রেখা। শুধু দোলের দিনই মাতালরা কেন দৃশ্য হয়, এটা সেই আমলে একটা ভাববার মত প্রশ্ন ছিল। আমি বাংলা রচনায় এদের কথা লিখতাম। আমি জানতাম মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধতা একমাত্র গির্জার ঘন্টা আর এদের স্খলিত পদক্ষেপেই ভাঙে। তবুও অনেক জানা বাকি ছিল। ... ...
একমুখ ধোঁয়া গাল ফুলিয়ে গিলে ফেলে জবাব দিল দীপ্তেন, হ্যাঁ, বলতে পারিস। আসলে ভুবনেশ্বরের কিছু টিপিকাল ব্যাপার আছে। একেকটা রাস্তার মোড়কে এরা "ছকো' বলে রেফার করে। মানে সাদা বাংলায় চক্। চক্-এর ওড়িয়া হল ছক। আর ওড়িয়ারা তো যে কোনও অ-কারান্ত শব্দের শেষেই একটা করে "অ' লাগায়, তাই ছকঅ। এমনি আছে মেফেয়ার ছকঅ, মানে মেফেয়ার হোটেলের সামনের মোড়, জয়দেব বিহারঅ ছকঅ, ওমফেড ছকঅ, পাটিয়া ছকঅ ইত্যাদি। পাটিয়া চকের মোড়ে সন্ধ্যেবেলায় বাজার বসে, ঐ এলাকার লোকজন সন্ধ্যেবেলায় ওখান থেকেই সব্জিবাজার টাজার করে আর কি। ... ...
ঠাণ্ডা হাওয়ায় প্রতীক কবরস্থানের নিশুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে ঘন ঘাসের উপর। লম্বা লম্বা চারকোলগুলি মাথার চাপে ভেঙে গেছে। নাকে মুখে কালো রঙ লেগেছে। কার্টিস পেপারগুলো হাওয়া হাওয়ায় ফর ফর করে ওড়ে। সঙ্গে ওড়ে দীর্ঘ একটি চুল। চুলে জবাকুসুম। অগ্রভাগ সামান্য বাঁকা। লোটাসের চুল। লোটাস নসু কাকার মেয়ে। স্কুল পাস করেছে। সাইকেলে যায়। ওর লাল দোপাট্টা মল মল করে ওড়ে। হি হি করে হাসে। বলে, আমার নাম লোটাস নয়কো। পদ্ম--পদ্মরাগমণি। পদ্মপুকুরে বাড়ি। তোমার লগে আড়ি। ... ...
একদিন আমার খুব গুলাবজামুন খেতে ইচ্ছে করছিল। দোকানে গিয়ে দেখি একটা বি-ই-ই-ই-ই-ই-গ গুলাবজামুন। এত্ত বড় যে হাতে ধরাই যায় না। দোকানদার আংকল আমায় একটা ল্যাসো দিল। বলল যে - এইটা দিয়ে ওটাকে ধর। কিন্তু তাতেও ঠিকমতো তোলা যাচ্ছে না। দিয়েগো, ডোরা, অ্যালিসিয়া - সবাই ট্রাই করল। কিন্তু তাও পারছে না। তখন ডাকছি - বাবা, বাবা, হেল্প, হেল্প। বাবা তখন কি করল, হারকিউলিস যেভাবে আর্থটাকে ঘাড়ের ওপর ধরে থাকে - সেইভাবে গুলাবজামুনটাকে তুলে ধরল। তখন আমি সেটাকে মাথার উপর নিতে পারলাম। আমাদের তো যেতে হবে দোমার (দিদা) বাড়ি। একটা গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে ... ...