এই গাঁয়ে ‘কানা’ বোলে তো পন্ডিত রাধেলাল। ওর একটা চোখ অন্যটির চেয়ে ছোট, তাই ‘গঁজহা’র দল ওকে কানা বলে ডাকে। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হল- এক হিসেবে আমাদের সবকিছুই প্রাচীন ঐতিহ্য — কেউ বাইরে, মানে অন্য রাজ্যে, যাবে তো কথায় কথায় বিয়ে করে নেবে। অর্জুনের সঙ্গে চিত্রাংগদা আদি উপাখ্যানে তাই হয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রবর্তক রাজা ভরতের পিতা দুষ্যন্তের সঙ্গেও তাই। যারা আজকাল ত্রিনিদাদ কি টোবাগো, বর্মা কি ব্যাংকক যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও ঠিক ওইসব হচ্ছিল। এমনকি আমেরিকা বা ইউরোপে গেলেও একই হাল। সেই হাল হল পন্ডিত রাধেলালের। ... ...
কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ... ...
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিনেই সারা দুনিয়া ববাসীরের বাজি রেখে সারিয়ে তোলার দম্ভের সামনে নতজানু হল।চারদিকে ওই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। রঙ্গনাথ হতভম্ব, একই বিজ্ঞাপন একটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে! কাগজটি রোজ সকাল দশটা নাগাদ শিবপালগঞ্জে পৌঁছিয়ে লোককে জানান দেয় যে স্কুটার ও ট্রাকের সংঘর্ষ কোথায় হয়েছে, আব্বাসী নামক তথাকথিত গুন্ডা ইরশাদ নামের কথিত সব্জিওলাকে তথাকথিত ছুরি দিয়ে কথিত রূপে কোথায় আঘাত করেছে। ... ...
শিবপালগঞ্জ গাঁ বটে, কিন্তু বসেছে শহরের কাছালাছি বড় রাস্তার ধারে। অতএব বড় বড় নেতা ও অফিসারকুলের এখানে আসতে কোন নীতিগত আপত্তি হওয়ার কথা নয়। এখানে শুধু কুয়ো নয়, টিউবওয়েলও আছে। বাইরে থেকে দেখতে আসা বড় মানুষেরা তেষ্টা পেলে প্রাণসংশয় না করেই এখানকার জল খেতে পারেন। এইসব ছোটখাট অফিসারের মধ্যে কোন না কোন এমন একজন দেখা দেন যে তাঁর ঠাটবাট দেখে স্থানীয় লোকজন বুঝে যায় যে এ এক্কেবারে পয়লা নম্বরের বেইমান। ... ...
দূরবীন সিংযের একটি বৈশিষ্ট্য হল উনি কখনও কারও ঘরে সিঁদ দিতেন না, সোজা পাঁচিল টপকে ঢুকতেন। উনি সুযোগ পেলে যেকোন রাজ্যে পোলভল্ট চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন। গোড়ার দিকে টাকাপয়সার টানাটানি হলে কালেভদ্রে পাঁচিল টপকাতে যেতেন। পরের দিকে এ’ধরণের কাজকম্মো কখনো সখনো শুধু নতুন চ্যালাদের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং দেবার জন্যে করতেন। সে যুগে চোর শুধু চোরই হত, আর ডাকাতেরা ডাকাত। ... ...
ছাতের কামরাটি সংযুক্ত পরিবারের পাঠ্যপুস্তকের মত সবসময় খোলা পড়ে থাকে। ঘরের কো্নে একজোড়া মুগুর, মানে সরকারিভাবে ঘরটার মালিক বড়ছেলে বদ্রী পালোয়ান। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও নিজেদের ইচ্ছেমত ঘরটার ব্যবহার করে থাকে। মহিলারা নানান কিসিমের কাঁচের বয়াম ও মাটির পাত্রে নানাধরণের আচার ভরে ছাতে রোদ খাইয়ে বিকেল হবার মুখে ঘরটার মধ্যে ভরে দেন। ছাতে শুকুতে দেয়া কাপড়চোপড়েরও একই হাল। ... ...
অ্যাডমিন, পর্বগুলোর লিংক পাশাপাশি করে দেবেন, প্লীজ। ... ...
হিন্দি গদ্যরচনার একটি শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম। ব্যঙ্গাত্মক শৈলীতে লেখা। আজও গোবলয়ের সামাজিক রাজনৈতিক মূল্যবোধে কতটু্কু পরিবর্তন হয়েছে সে বিচারের ভার পাঠকের উপরে। ... ...
আমাদের যেতে হবে আরও দু’কোশ পথ। এর মধ্যে যত গাঁয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছি সেখান থেকে ভিড় এসে মিছিলে পা মেলাচ্ছে। কেউ কেউ চালির উপরে ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাল রাত্তিরে বৃষ্টি হয়ে রাস্তায় একটু কাদা। এখন মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে কড়া রোদ্দূর । আমাদের পিঠে কপালে চিট চিট করছে ঘাম। কিন্তু আমরা তোয়াক্কা করছি না । এখনও অনেক পথ বাকি। আমার চোখে জল নেই। আমি জানি যে রমেনের আর কিছু চাওয়ার ছিল না । ... ...
করোনাকালীন প্রথম ও দ্বিতীয়র পরেও অনেক কথা থেকে যায়। মাথায় ভোরের শিশিরের মত তারা টুপটাপ ঝরে পড়ে। আকন্ঠ পান করে নিতে চাই এ দেশের কথা। অতীত ও বর্তমান। ... ...
এদিকে সংগঠনের মধ্যে অন্য চিন্তা দানা বাঁধছে। সবাই টের পাচ্ছে যে একটি সর্বভারতীয় পার্টি ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে। তাহলে আমরা কি বাদ পড়ে যাব? এরা, মানে মিথিলেশ, দীপক, সুকান্ত রমেন ও আরও কয়েকটি ইউনিট বলতে শুরু করল যে আমরা ডাকাতিতে বিশ্বাস করি না । ক্যাল-আপে বিশ্বাস করি না । আমাদের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক লাইন চাই। আমরা সশস্ত্র গণ -সংগঠন গড়তে চাই । আমরা অবিনাশের বা ওল্ড গার্ডের সঙ্গে মুখোমুখি বসতে চাই । ... ...
আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী ১৯৬৮র শীতের শেষে ময়দানে মুক্তমেলার আয়োজন করলেন। এক রোববার। জানা গেল কোথায় তুষার রায় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে তাঁর কবিতা ""ব্যান্ড মাস্টার'' পড়ছেন। সমরেশ বসু গান শোনাচ্ছেন দেখে সুনীল গাঙ্গুলী বলছেন আমিও গান গাইব। পাবলিক উৎসাহ দিচ্ছে—চালিয়ে যাও মহারাজ! কোথাও একটি আলাদা ভীড়ের সামনে কোন বাউল পল্লীগীতি গাইছে। কোথাও থিয়েটার ক্যাম্প বলে একটি নাটকের দল ভিয়েৎনাম নিয়ে নাটক করছে। ... ...
ফেরারি ফৌজের রোল কল? ডেকচিতে ফুটন্ত ভাত উথলে উঠেছে। বিজনদা উঠে গিয়ে ঢাকনা তুলে দুটো ভাত টিপে আবার চাপা দিল। --আর দু-তিন মিনিট; তার পরেই নামিয়ে দেব। ... ...
“শুয়োরের বাচ্চা জনগণ, / বছর বছর নির্বাচন?” --সব তো হল। বোমা বাঁধা, কামানের গোলা, এক ঘুসিতে একটা ছেলের ঠোঁট ফাটিয়ে দেওয়া, বই পোড়ানো, স্যারের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া; আর কিছু বলার নেই? ... ...
বেড়ালের মুখে সুকান্ত আর চারুদার কথা? হাত বাঁধা হলে কি হয়, পা তো খোলা। আর বেড়ালটা বেশ কাছে ঘেঁষে এসেছে। সজোরে চালানো লাথিটা খাটের লোহার পায়ায় একটু ছুঁয়ে গেল। না, বেশি ব্যথা লাগে নি। কারণ লাথিটা--মনে মনে যেমনই ভেবে থাকি না কেন-- 'সজোরে' চলে নি। পায়ে কোমরের পাওয়ার হাউস থেকে সেই শক্তিটা এল না। আর বেড়ালটা জানলার তাকে উঠে গা-জ্বালানো মুচকি হাসি হাসতে লাগল। বলল-- লক্ষ্মীছেলে! ... ...
বেড়ালটা আবার এসেছিল।কাল রাত্তিরে। জানলা দিয়ে দিব্যি গলে চলে এল। আমার খাটের পাশে ওষুধপত্তর ও নার্সের চার্ট রাখা ছোট সাদামত বিধবা টেবিলটার ওপর কেমন যেন অলস ভঙ্গিতে উঠে বসল। আমাকে দেখতে লাগল। পিত্তি-হলুদ চোখ। আমি হাত নেড়ে তাড়া দেব, সে সুযোগ নেই।হাত জোড়া আছে খাটের পাশে স্ট্যান্ড থেকে ঝোলানো রক্তের বোতলে। ব্লাড ট্রানসফিউশন। আগের কেমো হয়ে যাওয়ার পর প্লেটলেট কাউন্ট নাকি কমে গেছে ... ...