শিবরাম কিন্তু আর এগোল না। নানুকে ফিরে আসতে বললেও সে ফিরছিল না। তবুও শিবরাম তাকে একা ফেলে যেতেও পারছিল না। অগত্যা দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের সম্মতির অপেক্ষা করছিল। এমন সময় তারা দেখল ভাঙা থামের পাশ থেকে কেউ একজন উঁকি মারছে। শিবরাম ভয় পেল ঠিকই কিন্তু কাপুরুষের মত পালিয়ে গেলনা। সে ভাল করে দেখল। একটি মহিলা তার দিকে তাকিয়ে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তার রুপের ছটায় শিবরামের চোখ আঁটকে যাওয়ার জোগাড়। পড়নে দামী শাড়ি, সারা গা ভর্তি চকচকে গয়না। বেশ পরিপাটি করে সেজে সে এসেছে এখানে। ... ...
এইবার শিবরাম মাথা তুলে গড়্গড় করে বলতে লাগল “ আমি প্রতিদিন পড়া করে যাই বাবা। আজ পড়াটা হয়নি। কাল রারণ বধ খেলতে গিয়ে পড়তে বসা হয়নি। তাই পন্ডিত মশাই আমার কান মলে দিল। খুব লেগেছিল আমার। তাও কিছু বলিনি। কিন্তু তিনি আরও একবার…” কথাটা থামিয়ে একবার মাথা চুলকে নিয়ে কিছু একটা মনে করে বলল “ না না, একবার নয়। আরও দু-বার আমার কান মলে দিল। তাই আমিও তার কান মলে দিয়েছি।“ ... ...
আসলে শিবপ্রসাদ রবীন্দ্রনাথকে একেবারেই পছন্দ করতেন না আগাগোড়াই। তার কাছে কবিত্ব কোনদিন পায়রার খোপে বসে হয়না। কবিত্ব করতে গেলে ডানা মেলতে হয়। আর তার কাছে রবি ঠাকুর পায়রার খোপের মধ্যে থাকা সেই পায়রা যে কিনা বাইরে বেরোতে ভয় পায়। শিবপ্রসাদ রমাকান্তের কথায় মুচকি হেসে বলে “ কবি হলেন মাইকেল মধুসূদন, হেমচন্দ্র এরা। আর হ্যাঁ নবীন সেনও বটে। এরা উন্মুক্ত আকাশ নিয়ে লিখত। কারণ, তারা আকাশ দেখেছে। বন্ধ ঘরে কবিত্ব করা যায়না ভায়া। নবীন সেন, ভাগবতগীতা বাংলায় কাব্যানুবাদ করেছিল। পড়েছ?” রমাকান্ত আর কিছুই বলেনা। সে বুঝে গেছে কলকাতার রসগোল্লা থেকে শুরু করে কবি কোনটাকেই এই আলোচনায় জায়গা করে দিতে পারবেনা সে। শিবপ্রসাদের সামনে চাঁচরের সামনে টিঁকতে পারবেনা কলকাতা। তাই সে চুপ করেই থাকে। ... ...
শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মাঝে মায়ের মুখটা যেন ভেসে উঠল। শিবরানী উঠোনে নেমে এসে জোড়ে চেঁচিয়ে বলল “ওই যে, ওই যে মায়ের মুখ। আমার মা আসছে আমার বাড়ি।“ তার চোখে মুখে সেই চেনা আনন্দ। সে প্রতিদিন তার ঠাকুরকে অনুভব করে। কথা বলে। তার ভক্তি বারংবার মা দুর্গাকে তার কাছে টেনে নিয়ে আসে। মায়ের সাথে অনেক গল্প করে শিবরানী। অনেক না বলা কথা মা দুর্গাকে বলে সে। যে কথাগুলো আর কেউ জানেনা। ... ...
লেখাটি গল্প হিসেবে পড়বেন। কিছু খামতি হলে মার্জনা করবেন। মতামতের অপেক্ষায়। ... ...