কৈশোর থেকে যৌবনের উড়াল। বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় স্বজন-বান্ধব-পরিচিতি। বদলে যায় সময়। বদলে যায় জীবন, পুর্ব-লালিত ধ্যান ধারণা। সবার নয়, কারোর কারোর। এ বদলের ছাপ আবার সবসময় বাইরে পড়ে না। তাই আশেপাশের অজান্তেই ঘটে যায় অদল-বদল। আর কখনো কখনো এই বদলের কেন্দ্রে থাকে একটি জড়বস্তু। একটি শিক্ষাস্থান। খিড়কী থেকে সিংহদুয়ারের জীবনে খোলা হাওয়া। বদলের ক্যাটালিস্টও। জীবনে বদলই ধ্রুব। জ্ঞানীরা তাই বলেন। তবু কতটা সহজ হয় এই অন্তর-যাত্রা? কতটা মূল্য দিতে হয়? ... ...
(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি।) ... ...
আসলে, পণ্ডিতদের পাণ্ডিত্য প্রদর্শনই যখন মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, তখন সহজ কথাগুলিও অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাতে অবশ্যই ষোল আনা লাভ হয় পণ্ডিতদের – মাঝের থেকে, তাঁদের দুর্বোধ্য মধ্যস্থতায় আমাদের মনের মানুষটি অনেক দূরের মানুষ হয়ে পড়েন। বিশ্বের সব ধর্মতত্ত্বেই মধ্যস্থ এই পণ্ডিতরা যদি না আসতেন, সাধারণের জীবনযাপন অনেক রম্য হয়ে উঠতে পারত। ... ...
আম্ফান পরবর্তী করোনাকালীন । সমসাময়িক ভারতবর্ষের কিছু গল্প। আস্তে আস্তে অন্ধকার সরে যাচ্ছিল।ভোর হবার একটু আগে দুধের সরের মতো সাদা অন্ধকার যেন লেগে আছে চারপাশে।বাড়িঘর।গাছপালা।যেন কিছু নেই।পাখির ডাক সাধারণত এই সময় থেকে শোনা যায়।বিশেষ করে এই অঞ্চল বেশ সবুজ।কিন্তু আজ কোনো পাখি ডাকছে না এখন। মৃতের শহর।মৃত্যুনৈঃশব্দের ভোর।একটা অতিপ্রাকৃতিক নৈঃশব্দ্য যেন চেপে বসেছে চারদিকে। শুধু শন শন হাওয়ার তুমুল তাণ্ডব এখনো পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ... ...
এতকাল জীবনের হারিয়ে যাওয়া পুরোনো গল্পগুলোকে খুঁজে বেড়িয়েছি। আজ পরিচিত জগৎ ছেড়ে একার বর্তমানে এসে বুঝেছি পিছনের দিকে হাঁটার কোনো মানে হয় না। তাই এখন আমি আমার নিজের গল্প নিজে তৈরি করছি, এক মধ্যবিত্তের সাধারণ গল্প। আর সেই গল্প কেবল আমার আর কুড়চির, মা আর ছেলের গল্প। সেই গল্প বাবা-চরিত্র বর্জিত। তবু নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভাবি, তার বাবাকে শাস্তি দিতে গিয়ে কুড়চিকে বঞ্চিত করছি কিনা। ভাবতে গিয়ে ফুঁসে উঠি, সে শুধু অরণ্যের সন্তান নয়, সে যে বনবীথিরও সন্তান। তাই সে সবটা বঞ্চিত হচ্ছে না; তার ইতিহাস, তার পরম্পরার একটা অংশ তার অজানা থেকে যাবে হয়তো। না, তাও তো নয়! সময় হলে তার সামনে আসবে কুড়চি। তারপরের সিদ্ধান্ত হবে কুড়চির নিজের, আর বাকিটা ভবিষ্যতের হাতে। ... ...
ভূত আছে না নেই, এই নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনো ধন্দ রয়ে গেছে। আগে একসময় ধন্দ ছিল না, সবাই মোটামুটি শিওর ছিল ভূত হয়। এখন এমন একটা সময় আসছে যখন মানুষ শিওর থাকবে - মোটামুটি - যে ভূত হয় না। এর মাঝামাঝি সময় চলছে এখন।... ... ...
একটা রক্তজমানো চিৎকার অন্ধকারকে খান খান করে দিল। আবার, আবার! তারপর সব চুপ। দু’সেকেন্ড। পকেট থেকে রিভলবার বের করে আমি দৌড়ুতে থাকি যুবরাজের আবাসের দিকে। চিৎকারটা ওদিক থেকেই আসছে, প্রথম আওয়াজটি স্পষ্টতঃ কোন নারী কন্ঠের। ... ...
সে যার যার সঙ্গেই মিল পান, মনে রাখবেন আতঙ্কবাদীদের চেষ্টা থাকে মূলতঃ নিরীহ সাধারণ মানুষ মেরে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা, লোকে বাড়ি থেকে বেরোতে, অফিসে ব্যবসার কাজে যেতে, বাসে ট্রেনে চড়তে ভয় পায়। এর জন্য বিস্ফোরন ইত্যাদির ফলে সরাসরি সম্পত্তি নষ্ট হওয়া ছাড়াও দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সম্ভাব্য মারাত্মক ঘটনার জন্য লোক যে কত ভয় পেতে পারে তা দেখেছিলাম এক বার বাসে, তবে সে কথা পরে হবে। ভয় কাটিয়ে উঠতেই হয়, নইলে জীবন চলে না। এই যে জ্ঞান বিতরণ করছি, সেই আমিও কি ভীত হইনি ? হয়েছি, সুকুমার রায়ের ষষ্ঠীচরণ তো আর নই, নিরীহ বঙ্গপুঙ্গব, জোর ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে লাজপত নগরের বিস্ফোরনের জন্য নয়। দাদাঠাকুরের মত ‘পেট্রিয়ট’ কেস। ... ...
আস্তে আস্তে আমার নাচের প্রতি ভাললাগা যেন আমি রনজয়ের মধ্যেদিয়ে ফেরত পেতে শুরু করলাম। আর তাই আমার হারিয়ে যাওয়া ভাললাগা ভালবাসায় পরিণত হতে সময় লাগেনি।পরের দিন সকালে হঠাৎ করে অমৃতা আমাকে প্রোপোজ করে। আমি হাসতে হাসতে বলি "সবজানার পরেও... " অমৃতা উত্তর দিয়েছিল," তুই তো সৎভাবে স্বীকার করতে পেরেছিস। কতলোক তো বাইসেক্সুয়াল হয়, অন্যকাউকে যদি কখনও বিয়ে করি আর সে সবটা লুকিয়ে রাখে আমার থেকে।" অদ্ভুত একটা বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম সেদিন। এর আগে পর্যন্ত এভাবে কেউ বলেনি, আর তখনও পর্যন্ত আমিও কোনও বিবাহিত সমকামী পুরুষের সম্মুখীন হইনি। ... ...
আচার্য শান্তরক্ষিতকে কোয়ারেন্টাইন্ড রাখা হল জোখাং মন্দিরে। ওদিকে পদ্মসম্ভবের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি কে? ... ...
ছাতের কামরাটি সংযুক্ত পরিবারের পাঠ্যপুস্তকের মত সবসময় খোলা পড়ে থাকে। ঘরের কো্নে একজোড়া মুগুর, মানে সরকারিভাবে ঘরটার মালিক বড়ছেলে বদ্রী পালোয়ান। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও নিজেদের ইচ্ছেমত ঘরটার ব্যবহার করে থাকে। মহিলারা নানান কিসিমের কাঁচের বয়াম ও মাটির পাত্রে নানাধরণের আচার ভরে ছাতে রোদ খাইয়ে বিকেল হবার মুখে ঘরটার মধ্যে ভরে দেন। ছাতে শুকুতে দেয়া কাপড়চোপড়েরও একই হাল। ... ...
ছেলেটাকে বলেছিলাম এই সব টিপস এক জায়গায় নিয়ে একটা বই লিখে ফ্যাল। সে ব্যাটা খুব হাসল, তারপর বলল এ সব খুব গোপন বিদ্যে, আর গোপন বিদ্যের কথা কোনও বইতে লেখা যায় না। আমি প্রতিবাদ করায় এক চোখ টিপে ফিসফিস করে বলল, “চুরি বিদ্যের কোনও মেড ইজি বই-এর সন্ধান জানা আছে না কি দাদা ?’’ ... ...
MistBorn-এর লেখক Brandon Sanderson-কে নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা হবে (প্রচণ্ড ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার মশাই – লালমোহন থাকলে হয়তো ‘হাইলি সাসপিশাস’-ও বলতেন), কিন্তু ওঁর একটা ক্ষমতা নিয়ে অল্প-কথা এই জায়গায় বলতেই হচ্ছে – তা হল ওঁর অসাধারণ ম্যাজিক-সিস্টেম তৈরি করার ক্ষমতা। এই বিশেষ বইটিতে যে সিস্টেমটা ব্র্যান্ডনবাবু বানিয়েছেন, তার নাম অ্যালোমেন্সি। ব্যাপারটা ঠিক কি, তা নিয়ে একটি শব্দও আমার খরচ করার দরকার নেই – বইয়ে বিশদে আছে। এতটাই ডিটেলে, যে এই ধরণের সিস্টেমের অন্তর্গত সামঞ্জস্য সম্পূর্ণ ঠিকঠাক আছে কিনা, তা নিয়ে এদের জন্যে নিবেদিত রেডিট-পাতায় মাইলের পর মাইল তক্কো চলে। ... ...
১১ই মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’ কোভিড-১৯কে অতিমারী হিসেবে ঘোষণা করলো, আর ঠিক দু’ দিন পর, ১৩ই মার্চ আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রক বললেন, কোভিড-১৯ ‘জরুরি স্বাস্থ্যাবস্থা’ নয়। অবশেষে, ১৯শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিলেন দেশের উদ্দেশ্যে। তাঁর সরকার এই সঙ্কটমুহূর্তে কী করতে চলেছে – সে নিয়ে কিছুই খোলসা করলেন না, কিন্তু মানুষদের বললেন বারান্দায় বেরিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে, থালা, বাসন পিটিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের স্যালুট জানাতে। ... ...
কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ... ...
প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্রসাধনায় কল্পিত হয়েছে মানব শরীরের দুটো নাড়ী। শরীরের বামদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘ইড়া’, আর ডানদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘পিঙ্গলা’। বৌদ্ধ সাধনায় এই দুটি যথাক্রমে শুন্যতা ও করুনার প্রতীক। ... ...
আমি তো এসেছি হারিয়ে যাওয়া গল্প খুঁজতে। তার ভেতর কেমন পাশ কাটিয়ে এর ওর ফাঁক গলে এই গল্পটা ঢুকে পড়েছে।তা পড়ুক, ওকে আমার দরকার নেই তেমন, তাই ওকে ফসকান্তি করে সরিয়ে দিলাম। দরকার হলে আবার টেনে আনলেই হবে। পিসির বাড়ির বার দরজায় দাঁড়িয়ে গল্পটার আগের অংশটা ঝালিয়ে নিলাম। সেই যে এক মধুসূদনটাইপ মামা আমার সারাজীবনের ভয় ভাঙালেন, তারপর আমি একেবারে বাঁধা গরু ছাড়া পেলাম যেন। ... ...
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি। যাদবপুর মেয়ে হস্টেল। ... ...