ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি। যাদবপুর। আশির দশক। ... ...
এই আচমকা বাম্পার যেন কুমারসাহেবের হেলমেট ছুঁয়ে গেল। উনি ডাক করার সময় পেলেন না। ক্রুদ্ধ চোখে কোসলে স্যারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে কেটে কেটে বললেন — তার মানে আপনি ওই ডাইনি দুটোর কথা বিশ্বাস করছেন? ... ...
কোলকাতার কলেজে পড়তে যাওয়া আমার মত মফস্বলি ছেলেকে প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন দিগন্তের সন্ধান দিত।লোকাল ট্রেনের ভিড় কামরায় পুরুষের গা ঘষাঘষি, সাময়িক যৌন ভাললাগা, পাবলিক টয়লেটে পুরুষের যৌনতার হাতছানি থেকে শুরু করে আরও আরও নতুন নতুন মুখের পরিচয় । ক্রমশ বুঝতে পারছিলাম আমি একা নই। শিয়ালদহ থেকে এরকম একদিন হাঁটতে হাঁটতে হাতে পেলাম সানন্দা পত্রিকার পুরানো সংখ্যা ‘রূপান্তর’। এই সংখ্যাটা আমাকে পরিচিত করেছিল আর এক দুনিয়ার। আমার মনে হয় সেক্স-রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি নিয়ে উনিশশো আটানব্বই নিরানব্বই সালে সেই প্রথম কলকাতার বাংলা ম্যাগাজিনের আলোচনা। যে ম্যাগাজিন ততদিনে গুটি গুটি ঢুকে পড়েছে মধ্যবিত্তের অন্দরমহলে। আমার সাজগোজ তথাকথিত মেয়েলিপনা রণ কখনও প্রশ্রয় দেয়নি।সকলের কাছে এই সম্পর্কটাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাত ও । আর বোধহয় সেটাই স্বাভাবিক ছিল অতবছর আগে। আর আমারও কেন জানিনা সবসময় মনে হত, মনে মনে আমি রণর বৌ হলেও আমি তো মেয়ে নই। মনে করতাম যদি রণ বা অন্য পুরুষ মানুষরা আমাকে মেয়েই ভাববে তাহলে তো তারা মেয়েদের কাছেই যাবে। যত বড় হয়েছি তত বুঝেছি সবকিছুই এরকম দু আর দু এ চার হয়না। ... ...
শীতলপাটির মতোই গৃহকোণে সংসারও বুঝি পাততে হয়.. ... ...
মে মাসের শেষের দিকে ইয়াশ নামক সাইক্লোন আসবে শোনা যাচ্ছে।ট্রপিক্যাল ডিস্টার্ব্যান্স। কিন্ত আরো বড় ডিস্টার্ব্যান্স আছে। আড়ালে আবডালে নয়। প্রকাশ্যে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট আসছে। ভোট এলেই সুনন্দিতার ভীষণ টেনশন হতে থাকে। ইতিমধ্যেই ইলেকশন কেন্দ্র করে শীতলকুচিতে ফায়ারিং ও হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। দিনহাটা থেকে শীতলকুচি আর কতটুকু দূর। ... ...
বীরেন শা'য়ের বাড়ীর দুইঘর ভাড়াটে নাকি গিয়ে সাতুদের দোতলায় উঠেছে। এদিকে দাদুদের গোয়ালঘরেও ভালই জল উঠেছে, প্রথমদিন তো লালি আর আকাইম্যা সারাদিনরাত দাঁড়িয়ে রইল। পরেরদিন ভোররাতে লালি কেমন অদ্ভুত আওয়াজ করে ডাকতে লাগল। তখন দাদু গিয়ে ওদের দড়ি ধরে এনে দাদুদের দিকের ভেতরের বারান্দায় তুলল। সে বেচারাদের কি ভয় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে, অর্ধেক সিঁড়ি তো জলে ডোবা, তড়বড় করে আসতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে আকাইম্যা একেবারে দাঁড়িয়ে গেল শক্ত হয়ে, কিছুতেই নড়েচড়ে না। দাদু শেষে ওকে পাঁজাকোলা করে বারান্দায় তুলে দিল। লালি বেচারীর শিগগিরই বাছুর হবে, পেটটা ফুলে একেবারে ঝুলে গেছে, প্রায় মাটি ছুঁইছুঁই। খুব কষ্ট করে বারান্দায় উঠল। বারান্দার কোণায় ছোট গামলা করে ওদের জাবনা দেবার ব্যবস্থা হল। লালি উঠেই সেই যে বসে পড়ল, সারাদিনে আর উঠে দাঁড়াল না। শেষে দাদু আর দিদা সন্ধ্যের আগে অনেকক্ষণ ধরে ছোবড়ার আগুন জ্বালিয়ে লালিকে সেঁক দেওয়ার পরে বেচারী একটু ধাতস্থ হয়ে জাবনায় মুখ দেয়। পরেরদিনটাও লালিরা বারান্দায়ই রইল, তার পরের দিন জল অনেক নেমে গেল; উঠোনে আধহাঁটু, গোয়ালে গোড়ালি ভেজে কি ভেজে না। লালি আর আকাইম্যা আবার গোয়ালে ফেরত গেল। বারান্দায় দুই বোতল ফিনাইল ঢেলে ধোয়া শুরু করল বড়মামীমা। লালির জন্য গোয়ালে একটা ভাঙা দরজা পেতে দেওয়া হল, যাতে শুকনো জায়গায় বসতে পারে। পাড়া থেকে কারা যেন জিটিরোডে গিয়ে ইলেকট্রিক অফিসে খবর দিয়ে এল। এই সময় শুরু হল উঠোনে মাছের আনাগোণা। এদিকে শ্রীপল্লীর মাঠের পেছনের অংশের পুকুরটা ভেসেছে, ওদিকে শ্রীদুর্গা মিলের পুকুর। এই শিউলি গাছের গোড়া বাটামাছের ঝাঁক তো নারকেল গাছের গোড়ায় কইমাছ কানে হাঁটছে। বাবু, সুবীর, রতন, বুম্বারা ছেঁড়া মশারি, গামছা আর মাটির হাঁড়ি নিয়ে হইহই করে সারাপাড়া জুড়ে মাছ ধরে বেড়াচ্ছে। বুড়ীর মা মাসি আজ কাজে এসেছে, পেয়ারাগাছের সামনে থেকে খপ করে একটা মাঝারি সাইজের শোলমাছ ধরে ফেলল। বড়মামীমা মাছ কাটতে কাটতে মা'কে বলে 'কালিয়া করব, ওদের জন্য দেব, আগেভাগেই ওদের ভাত খাইয়ে দিস না দিদি।' ভাই শুনতে পেয়ে মুখ বেজার করে, ও মাছ খেতে একদম ভালবাসে না। ছবিমাসি দিদাকে বলে ‘মাসিমা আফনে রান্ধেন, আফনের রান্ধা কালিয়ার সোয়াদ মুহঅ লাইগ্যা থাহে।' দিদা হাসিহাসিমুখে বলে ‘হ বৌমা তুমি অন্যটি দ্যাহ, মাছটা আমি দেখ্তাসি।' ... ...
কাউন্সেলিং নিয়ে ভাবনা আমার ছিলই নিজের সেক্সুয়্যালিটি নিয়ে বুঝতে পারার সময় থেকেই, আমার প্রথম সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেটা কতটা প্রয়োজন হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম, কেননা অন্য যৌনতা যাপন তখন আজকের মত সবাইকে বলা যেতনা , আজও অনেকেই বলতে পারেনা। এর সঙ্গে যোগ হল এইচ আই ভি যাপন। বুঝলাম আমাদের মত মানুষের পাশে পজিটিভ ভাবে থাকাটা আমার মত পজিটিভ লোকের ভীষণ জরুরি। আর তাই তো মনখারাপ, বিচিং বা কোনও নেগেটিভ ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে সবসময় ভাল থাকার অভিনয় করতে করতে কখন যেন ভালো থাকাটাই অভ্যেস হয়ে গেছে আমার । ভাল থাকা একটা আর্ট। ওটা রপ্ত করলেই হয়। আমি জানি জাতকের গল্পের মত একমুঠো সর্ষে কারও কাছে পাবনা যার খারাপ থাকা নেই। নিজেকে বোঝাই আমার মাথার ওপর বর্ষায় ছাদ আছে, দু'বেলা পেটপুরে খেতে পাই, শীতে গায়ে গরম পোষাক দিতে পারি, তাই বাকী দুঃখ নিয়ে ভাবনাটা বিলাসিতা! ... ...
একদিন সন্ধ্যায় জামবনিতে ঝাড়খন্ড পার্টির এক কর্মী খুন হলেন। প্রায় মাঝরাতে মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারল পুলিশ। পরদিন সকাল থেকে এই নিয়ে উত্তেজনা পুরো জামবনি, বিনপুরে। সকালে অফিসে কিছু কাজ ছিল। তা শেষ করে দুপুরে মেদিনীপুর শহর থেকে রওনা দিলাম জামবনির উদ্দেশে। রাস্তায় যেতে যেতেই ওয়্যারলেসে খবর পেলাম বুদ্ধ ভকতের গুলি লেগেছে। তাঁকে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হল, পরিস্থিতি আজ হাতের বাইরে চলে যাবে। আগের রাতে ঝাড়খন্ডি খুন। আর তার বদলায় আজ বুদ্ধ ভকত গুলিবিদ্ধ! বুদ্ধদেব ভকত তখন বিনপুরের সিপিআইএম বিধায়ক। ... ...
রণজয়ের বৌদি-ই প্রথম যে আমার আর রণর সম্পর্কটা আন্দাজ করেছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলেনি কোনও দিন। রণর তুতো বোনেরাও রণর সাথে সাথে আমাকে ভাইফোঁটা দিত।সবাই মিলে মাঝে মাঝে কখনওসখনও সকলের আড়ালে আমাকে রণর বৌ বলে মজা করতে ছাড়ত না, যা হয়তো আমাকে মনে মনে অন্যরকম সুখ দিত। মনে মনে আমিও যেহেতু রণর বৌ,তাই সংসারের মঙ্গলের দায় তো আমার ওপরেও কিছুটা বর্তায়।সম্পর্কটা শুধু আমরা দুজনের যাপনেই সীমাবদ্ধ থাকলেও অতগুলো বছর আগে তো ওটাই ছিল আসলে আমার সংসার। তথাকথিত ভাবে নিজেকে মেয়ে না ভাবলেও মনে মনে নিজেকে রণজয়ের বৌ ভাবতে কোথাও কোনো অসুবিধা ছিলোনা আমার। আসলে আজও তো অভিধানে অন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাইনা। ৩৭৭ পরবর্তী সমযে আজও তো সমকামী বিবাহের নেই কোনো আইনি স্বীকৃতি। আর অতগুলো বছর আগে সেসব তো কষ্টকল্পনা। ... ...
ফচকেমির গল্প... ... ...
‘স্যার, কিষেণজি ১০-১২ জনের দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’ খবরটা এল ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অফিসে। এক লাইনের ইনফর্মেশন। সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে ফোনটা এল বিনপুরের একটা গ্রাম থেকে। যিনি টেলিফোনটা করলেন, তিনি তাঁর নাম বললেন না। সিআরপিএফের অফিসারকে শুধু বললেন, ‘স্যার, আমি নিজে দেখেছি। কিষেণজি ১০-১২ জনের একটা দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’ ... ...
আইডিয়া নং ৩] দরজা ভেজানো থাকবে। আমাদের যে প্লাস্টিকের বালতি ছিল তাতে অল্প জল ঢেলে তাই দিয়ে দরজা ভেতর থেকে চেপে দেওয়া হবে। বাইরের লোক টোকা না দিয়ে দরজায় হালকা করে ঠেলা দেবে, দরজা আস্তে আস্তে খুলে যাবে। ভেতরের জনের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। ফলঃ সুন্দর ব্যবস্থা, অসুবিধের বিষয় হল সিমেন্টের মেঝের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বালতি সরে যাওয়ার শব্দ পুরো হিচককের ফিলিমের সাউন্ড এফেক্ট নিয়ে আসত। ঘুমন্ত লোক আঁৎকে জেগে উঠত। ... ...
আমষ্টারডাম এমন একটা শহর যেখানে মানুষের থেকে সাইকেল বেশী – মোটামুটি আট লক্ষ লোক বাস করে এই শহরে, আর সেখানে সাইকেলের সংখ্যা প্রায় আট লক্ষ আশি হাজার মত (২০১৪ সালের হিসেব)। আর এই শহরের সবচেয়ে বেশী রিপোর্টেড ক্রাইম কি জানেন? সাইকেল চুরি। নানা বছরের গড় হিসেব বলছে আমষ্টারডামে বছরে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মত সাইকেল চুরি হয়! এবার এই সংখ্যাটা জানার পর আপনার সাইকেল চুরি হলে কি আপনি আর পুলিশের কাছে যাবেন? কি মনে হয়? এত পুলিশ গোটা হল্যান্ডে নেই যে বছরে ৮০ হাজার সাইকেল চুরির কিনারা করবে! ... ...
দুজনে তাড়াতাড়ি কাপড় পরে বাইরে বেরোল। কাপড় পরার মানে এ নয় যে বদ্রী চুড়িদার পাজামা ও শেরওয়ানি পরেছে। ঢিলে লুঙিটা কষে বেঁধে খালি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিয়েছে, ব্যস্। রঙ্গনাথের এখনও ওর মত পরমহংস অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি, তাই গায়ে একটা পাঞ্জাবি চড়িয়ে নিল।দরজা অব্দি যেতে যেতে ওদের চাল এবং হৃৎস্পন্দন দুইই বেড়ে গেল। এতক্ষণে চারদিকে শোনা যাচ্ছে - চোর! চোর! চোর! ... ...
মানুষের শৈশব ও বাল্য চেতনায় যে শিক্ষার বীজ রোপিত হয় – কৈশোর ও তারুণ্যে নিজের মস্তিষ্কের রসায়নে সেই শিক্ষাতেই সে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ খুঁজতে থাকে। কেউ হয় অত্যাচারী এবং বিলাসী রাজা, কেউ মানবদরদী সমাজ-সংগঠক, কেউ দার্শনিক, কেউ দারুণ যুদ্ধবাজ, আর অধিকাংশ হয়, আমাদের মতো থোড়-বড়ি-খাড়া জীবনের অধিকারী। মস্তিষ্কের এই বিশেষ রসায়নের ফর্মুলাটি আজও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ... ...
এটা বিংশ শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষভাগ। কোথায় প্রশাসন, কোথায় সরকার, কোথায় শাসক দল, কোথায়ই বা বিরোধীরা, কেউ জানল না, কেউ টের পেল না বেলপাহাড়ির চাকাডোবা ফুটবল মাঠে যে স্ফুলিঙ্গের জন্ম হল, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে চলেছে গ্রামের পর গ্রামে। এরপর জঙ্গলমহলের একের পর এক গ্রামে নানান দাবি নিয়ে এমন অনেক ম্যাজিক শো হবে, যা থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিটা স্ফুলিঙ্গ আগামী দিনে গণআন্দোলনের চেহারা নেবে। ... ...
স্রোংচান গামপো রাজা হয়ে যখন প্রায় সমস্ত উপজাতিকে নিজের অধীনে এনে এক সার্বভৌম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন তখন অ্যাডমিনস্ট্রেশন প্রয়োজনীয় হল। আগের কাঠের গায়ে দাগ কেটে হিসাবের সময় ফুরল। বহির্দেশের সাথে শুরু হল কূটনৈতিক যোগাযোগ। এবং এই সমস্ত কিছু সঠিক ভাবে অর্গানাইজড ভাবে করার জন্য দরকার হয়ে পড়ল ‘লিপি’। আর ei লিপি তৈরির ভার পড়ল মন্ত্রী তোনমি সম্ভোটের উপর ... ...