কৈশোর থেকে যৌবনের উড়াল। বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় স্বজন-বান্ধব-পরিচিতি। বদলে যায় সময়। বদলে যায় জীবন, পুর্ব-লালিত ধ্যান ধারণা। সবার নয়, কারোর কারোর। এ বদলের ছাপ আবার সবসময় বাইরে পড়ে না। তাই আশেপাশের অজান্তেই ঘটে যায় অদল-বদল। আর কখনো কখনো এই বদলের কেন্দ্রে থাকে একটি জড়বস্তু। একটি শিক্ষাস্থান। খিড়কী থেকে সিংহদুয়ারের জীবনে খোলা হাওয়া। বদলের ক্যাটালিস্টও। জীবনে বদলই ধ্রুব। জ্ঞানীরা তাই বলেন। তবু কতটা সহজ হয় এই অন্তর-যাত্রা? কতটা মূল্য দিতে হয়? ... ...
আচার্য শান্তরক্ষিত। স্রোংচান গামপোর পরবর্তী একশো বছরে বৌদ্ধ ধর্ম আবার হারিয়ে যেতে বসেছিল তিব্বতের বুক থেকে। রাজা ত্রিসোং দেচেন আমন্ত্রণ জানালেন নালন্দার অধ্যক্ষ আচার্য শান্তরক্ষিতকে। উদ্দেশ্য বৌদ্ধ ধর্মকে রাজপ্রাসাদের বাইরে তিব্বতের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। ... ...
ঝড়ে ভেঙে পড়া মহীরূহর মতই - নেমে আসে কোন কোন মৃত্যু... ... ...
‘’আপকা পেমেন্ট হো গয়া স্যার,’’ কাউন্টারের ভদ্রলোক জানালেন। মানে ? কে করল আমাদের পেমেন্ট ? ভদ্রলোক যাঁকে আঙুল তুলে দেখালেন, তাঁকে আমরা অনেকক্ষণ আগেই দেখেছি বসে আছেন একটা সোফায়। উনিই হলেন অমুক বাবু। আমরা অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে, উনি উঠে দাঁড়ালেন। একটু হাসাহাসি হল এই নিয়ে যে প্রায় পাশাপাশি আধ ঘণ্টা থেকেও আমরা কেউ কাউকে চিনতে পারিনি। পারার অবশ্য কথাও নয়, আমরা একে অন্যকে কোনও দিন দেখিনি। ... ...
“শুয়োরের বাচ্চা জনগণ, / বছর বছর নির্বাচন?” --সব তো হল। বোমা বাঁধা, কামানের গোলা, এক ঘুসিতে একটা ছেলের ঠোঁট ফাটিয়ে দেওয়া, বই পোড়ানো, স্যারের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া; আর কিছু বলার নেই? ... ...
(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি।) ... ...
টুরিস্ট-ম্যাপের বাইরে অজানা এক জায়গায় হানা দেওয়ার কাহিনী... ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
সেদিন বুঝেছিলাম সিঁদুর নিয়ে স্বীকৃতির যে চাহিদা মনে মনে লালন করি যা নিয়ে আগের দিন অত মনখারাপ, তা আসলে বহুগামিতার মাঝে ভালবাসার স্বীকৃতি । এ সমাজে বহুগামিতা অনেক বেশি সহজ, না আছে আইনি দায়, না আছে সন্তানধারণের দায় না আছে সামাজিক দায়। শুধু মাত্র মনটাই সব নয়, আজকের কুসুমদের শরীর দিয়েও তো ভালবাসা মেলে না। সুখের লাগি প্রেম চাইলেও প্রেম মেলেনা শুধু সুখ চলে যায়। তাই ভালবাসার মানুষকে শুধুই ভালবাসায় আগলে রাখা যায় নিজের মধ্যে এ বিশ্বাস আনা বড় কঠিন। তবে কোথাও যেন একটা জেদ তৈরী হচ্ছিল মনে মনে। কেউ জানতে চাইলে চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়াটা ততদিনে অভ্যেস হয়ে গেছে। কোলকাতার আশে পাশে কাজ করা সংগঠনগুলোর সাথেও একটা বন্ধুত্ব হয়েছে কাজের সুত্রে। রিকির সূত্রে আলাপ হয়েছে সমকামী মহিলাদের নিয়ে কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সংগঠন "স্যাফো" র সাথে। বইমেলায় হাতে এসেছে স্যাফোর প্রকাশিত "স্বকন্ঠে" পত্রিকা। ওদের দেখেছি সারা বইমেলার মাঠ ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে তাদের কাছে "স্বকন্ঠে" পৌঁছে দিতে কতটা কষ্ট করতে হচ্ছে। অনুভব করতে পারছি ক্রমশঃ ভালবাসার জন্য জীবনের জন্য প্রতিটা মানুষের পথ চলা। আর সে পথে শরিক হয়ে গেছি নিজের অজান্তেই। ... ...
এই ডবল ডোজের গোবর খেয়ে মহাভারতের শুদ্ধতা না হয় ফিরিয়ে আনা গেল, কিন্তু বাংলার পোড়া পেটের শুদ্ধতা বাঁচে কি করে? অফিসের ক্যান্টিনের খাবার টিফিন হিসেবে চলতে পারে, কিন্তু কালা ছোলে (আলকাতরার মধ্যে চাট্টি সেদ্ধ ছোলা ফেলে দিলে যেমন দেখায়) দিয়ে লাঞ্চ? অনেকে যেমন খায়, তেমনি পেপসি বা কোকাকোলা সহযোগে? নাঃ, অমন সাঙ্ঘাতিক ফিউশন আমার চলবে না। অতএব তিন কোর্সের লাঞ্চ চালু করলাম – ভাত, ডাল আর অমলেট। আমার আর তথাগতর সঙ্গেই এই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এক বাঙালি – দাশগুপ্ত। কালা ছোলে দিয়ে লাঞ্চ করতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তাঁকে আমার মেনু সাজেস্ট করেছিলাম। তিনি নাক সিঁটকে বললেন, “অমলেট! সেটা তো লোকে ব্রেকফাস্টে খায়”। ... ...
কৈশোর থেকে যৌবনের উড়াল। বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় স্বজন-বান্ধব-পরিচিতি। বদলে যায় সময়। বদলে যায় জীবন, পুর্ব-লালিত ধ্যান ধারণা। সবার নয়, কারোর কারোর। এ বদলের ছাপ আবার সবসময় বাইরে পড়ে না। তাই আশেপাশের অজান্তেই ঘটে যায় অদল-বদল। আর কখনো কখনো এই বদলের কেন্দ্রে থাকে একটি জড়বস্তু। একটি শিক্ষাস্থান। খিড়কী থেকে সিংহদুয়ারের জীবনে খোলা হাওয়া। বদলের ক্যাটালিস্টও। জীবনে বদলই ধ্রুব। জ্ঞানীরা তাই বলেন। তবু কতটা সহজ হয় এই অন্তর-যাত্রা? কতটা মূল্য দিতে হয়? ... ...
একদিন বিবিসিতে দেখলাম, দুটো প্লেন মিলে ১১০ তলার দুটো বাড়িকে মাটিতে মিশিয়ে দিল। লো-অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা রাখা। তাতে বারবার ধরা পড়ছে, কালো আর ছাই-ছাই ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আমেরিকা, বিল্ডিংদুটো রংমশালের ফুরিয়ে আসার মতো নেমে আসছে। ... ...
তামারবুন্ডু থেকে চান্ডিল ইতিমধ্যেই একটা দল কাজ করছে, নতুন কমরেডরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। তারপর এই দুটো গ্রুপ চান্ডিল থেকে আলাদা হয়ে যাবে। একটা গ্রুপ চান্ডিল থেকে দলমা পাহাড় হয়ে পুরুলিয়ার বরাবাজার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে। তারা বরাবাজার থেকে বলরামপুর, বান্দোয়ান এলাকায় কাজ করবে এবং সেফ করিডোর তৈরি করবে। অন্য গ্রুপটা চান্ডিল থেকে দলমা হয়ে ঘাটশিলা যাবে, সেখান থেকে কাঁকড়াঝোড় হয়ে বেলপাহাড়ি ঢুকবে। ... ...
করোনাকালীন ধারাবাহিক - সাদাটে একটা আলো ঘুরছিল। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে মিলিয়ে যাচ্ছে।কোথা থেকে শুরু কোথা থেকে শেষ, কিছুই বোঝা যায় না। তীব্রতা মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছে ।আবার খুব কমে যাচ্ছে।একটা ঝিঁঝির ডাকের মত যেন।সামনে কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মাঝেমাঝে বিদ্যুতের চমক যেন।চিড়িক দিচ্ছে মাথার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে চোখে যন্ত্রণা ।হাত পায়ে জোর নেই কোনো। পাশ ফেরার ক্ষমতাহীন। ... ...
সুবীর কুমার বসুকে কেউই চিনবেন না। সুবীর বসু কখনো কখনো আমার সঙ্গে বিকেলে হাঁটতে বেরোতেন। শেষ বয়সের কুঁচকে যাওয়া, চকচকে চামড়া, টলোমলো পা। হাত ধরে ধরে কিছুটা নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে আনতাম আবার। যাওয়াতেও যে তাঁর খুব আপত্তি ছিল, এমন নয়; আবার ফিরেও আসতেন লক্ষ্মী হয়ে, কিচ্ছুটি না বলে। ... ...
শুক্তোর সব আনাজ আগে ভেজে নেওয়া হয়। শুকনো লঙ্কা, জিরে, পাঁচফোড়ন দিয়ে আদাবাটা, সর্ষে বাটা, চিনেবাদামবাটা, চারমগজ বাটা দিয়ে কষা হয়। এবারে ভাজা আনাজ দিয়ে কষে জল, নারকেল দুধ, নুন, মিষ্টি দেওয়া হয়। নামানোর আগে ভাজা লঙ্কাগুঁড়ো, ভাজা সর্ষের গুঁড়ো, চিনেবাদাম গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে শুক্তোয় ঝাল মশলার প্রাবল্য বেশি। অথচ ছোটবেলা থেকে ছড়া পড়েছি, ছি ছি ছি, রানী রাঁধতে শেখেনি। শুক্তুনিতে ঝাল দিয়েছে অম্বলেতে ঘি। এবাড়িতে অম্বলেতে ঘি না পড়লেও শুক্তোয় এত লঙ্কা দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম প্রথমদিকে। ... ...
ফচকেমির গল্প ... ...