সত্যেন বোসের এস্রাজ শুনে বাবা খুব খুব খুশী। বললেন, “তুমি আমার সাথে মাইহার চলে আইসো। শিখাবো যত্ন করে”। সত্যেন বোস বললেন, একটু ভেবে জানাবেন। এবার এই খবর কি করে যে রবীন্দ্রনাথের কানে চলে যায়। সত্যেন বোসের মতন ছেলে বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে সংগীত চলে যাবে পুরোপুরি, এটা তাঁর কেমন যেন লাগলো। জগদীশের কাছে তিনি শুনেছিলেন যে সত্যেনের ভিতরে পোটেনশিয়াল কি রকম। আর সত্যেন যত ভালোই এস্রাজ বাজান না কেন, তার থেকেও বেশী ভালো অঙ্ক আর ফিজিক্স করতেন। রবি ঠাকুর তাই সরাসরি বাবা আলাউদ্দিনের সাথে দেখা করে সব খুলে বললেন, "দেখুন আপনি হয়ত সত্যেনের থেকে আরো ভালো সংগীতের ছাত্র খুঁজে পাবেন, কিন্তু ওর থেকে ভালো বিজ্ঞানী এই বাংলা হয়ত পাবে না" ... ...
চার্লি দুটি ছবি দেখালেন – বাবা মায়ের সঙ্গে তিন ছেলে মেয়ের, সুখের দিনের। তারপরে বললেন, এদের ঘর সংসার ছিল, বাড়ির সামনে পরশে গাড়ি না হোক, কাজ চালাবার মতন যান ছিল, আই ফোন না হোক, সস্তার চিনে আন্দ্রয়েদ ফোন ছিল। আপনার আমার মতন জীবন ছিল। বাবার কাছে খারকিভ স্টেশনে বিদায় নিয়ে এসেছে, সে বিদায় কি সাময়িক? কে বোঝাবে এই শিশুদের? ধন্য এই মায়েরা যারা বাঘিনীর মতো ছেলে মেয়েদের আগলে সামলে অদৃষ্টের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন (চ্যালেঞ্জিং দি ডেস্টিনি)। ... ...
ড্রেসনার ব্যাঙ্কে ট্রেনিঙের সময় কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো যারা কিশোর বয়েসে সারা রাত শুনেছেন শত্রু বিমানের, অ্যান্টি এয়ার ক্র্যাফট গানের, বোমার আওয়াজ। ভোরের আলো ফুটলে দেখেছেন নিজেদের, পাড়া পড়শির বাড়ির চাল, দেওয়াল উড়ে গেছে। রাস্তায় কলের পাইপ ফেটে জলের ফোয়ারা বইছে। সকাল হতেই শহরের পথে পথে পৌর সভার দমকল বাহিনী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কলের মিস্ত্রিরা বেরিয়ে পড়েছেন, পাইপ সারাচ্ছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ করেছেন। নুরেমবেরগের হেলমুট বলেছিলেন বেলা নটার ভেতরে কলে জল আর ঘরের বিদ্যুৎ বাতি চালু হয়ে যেতো। জন জীবন প্রায় স্বাভাবিক! আমেরিকানরা দখল নেওয়ার পরে বোমায় বিধ্বস্ত নুরেমবেরগে এক মাস কলের জল বা বিজলি বাতি কোনটাই পাওয়া যায় নি। ... ...
মুসলিমদের আজান এসেছে বেদুইনদের সঙ্গীতের ভিতর দিয়ে। সেই ১৯৫০-৬০ এর দশকে জর্ডনের মরু অঞ্চলে বেদুইনদের রহস্যময় জগতের সঙ্গে পরিচিত হবার সূত্রে এবং বেদুইনদের গান-বাজনা শোনা ও রেকর্ড করার পর সঙ্গীত- সংগ্রাহক দেবেন ভট্টাচার্যের এমনটিই মনে হয়েছিল। ঈদের আগে রমজান মাসের এক সকালে এমন এক উপলব্ধির কথা জানতে পেরে বেশ চমকিত হলাম। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা আলি জাকেরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গের অবতারণা। জাকেরও বলেছিলেন, আজানের সুরের ভিত্তি আহির ভৈরবী। সেই সময় দেবেন ভট্টাচার্যের রেকর্ড করা বেদুইন সঙ্গীতের একটি অংশ পেলাম ইন্টারনেট আর্কাইভে। সেটি শুনলে ভ্রম হয় যেন আজানের ধ্বনি। ১৯৫৫ সালের গ্রীষ্মে বিবিসির-র এক কমিশনড প্রোগ্রামে ইউরোপ থেকে প্রায় লঝ্ঝড়ে একটি মিল্কভ্যানে এক বাঙালি যুবক যুগোস্লাভিয়া, গ্রিস, ইতালি, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, জর্ডন, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ১২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ছ' মাস বাদে ভারতে আসেন বিভিন্ন দেশের গান রেকর্ড করতে করতে। সঙ্গী ছিলেন আর্কিটেকচারের ইংরেজ ছাত্র কলিন গ্লেনি আর ফরাসি সাংবাদিক হেনরি অ্যানভিল। দেবেনের রেকর্ডিংয়ের বিচিত্র সম্ভারের কিছু নমুনা শুনলেই বোঝা যায়, জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি সারা বিশ্বের খ্যাত-অখ্যাত শহর, গ্রাম, পাহাড় বা মরুপ্রান্তরে কাটিয়েছেন। এভাবেই আন্তর্জাতিক স্তরে দেবেনের পরিচিতি গড়ে ওঠে এথনোমিউজিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে। বিশ্বের বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীতের অপূর্ব ঐতিহ্যের হদিস প্রকৃতপক্ষে দেবেনই প্রথম দুনিয়ার মানুষকে দিয়েছিলেন। তার আগে নানা দেশের লোকসঙ্গীতের সমৃদ্ধ ভান্ডারের অস্তিত্ব সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে কার্যত কোন ধারণাই ছিল না। যাঁকে নিয়ে আজও সমান ভাবে গর্ব করার কথা আমাদের দুই বাংলার মানুষেরই, ভাবতে অবাক লাগে এমন এক আশ্চর্য বাঙালিকে নিয়ে হাল আমলে কোন চর্চা নেই। ... ...
কৈশোর থেকে যৌবনের উড়াল। বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় স্বজন-বান্ধব-পরিচিতি। বদলে যায় সময়। বদলে যায় জীবন, পুর্ব-লালিত ধ্যান ধারণা। সবার নয়, কারোর কারোর। এ বদলের ছাপ আবার সবসময় বাইরে পড়ে না। তাই আশেপাশের অজান্তেই ঘটে যায় অদল-বদল। আর কখনো কখনো এই বদলের কেন্দ্রে থাকে একটি জড়বস্তু। একটি শিক্ষাস্থান। খিড়কী থেকে সিংহদুয়ারের জীবনে খোলা হাওয়া। বদলের ক্যাটালিস্টও। জীবনে বদলই ধ্রুব। জ্ঞানীরা তাই বলেন। তবু কতটা সহজ হয় এই অন্তর-যাত্রা? কতটা মূল্য দিতে হয়? ... ...
শুধু মুষ্টিবদ্ধ ঊর্ধগামী হাতের ছবিই যে রাজনীতি বোঝায় না, নিম্ন রাখা ভিক্ষাপ্রার্থনাকারী হাতও যে চরম রাজনীতির ছবি হতে পারে, বড়সড়ো জিজ্ঞাসা চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে রাষ্ট্রের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি । ... ...
প্রথম দলকে আপনি রোজ চোখে দেখেন, মুখ চেনেন, কিন্তু প্রায় কারোরই নাম জানেন না। দ্বিতীয় দলকে আপনি প্রায় কখনোই দেখতে পান না, জীবনে কখনো পাবেনও না – কিন্তু তাদের নাম আমি, আপনি সবাই জানি। কারণ, এই এক শতাংশ দেশবাসীর হাতে আছে দেশের মোট সম্পদের ৭০ শতাংশ। আর তার পরের ধাপের কুড়ি শতাংশ ভাগ্যবানের হাতে আছে প্রায় উনিশ শতাংশ সম্পদ। তাহলে হাতে রইল কি? পেনসিল? না দাদা – এগারো শতাংশ। ভাগীদার কজন? দেশের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ ... ...
ক্রমশ কত কিছু শিখলাম। আমরা মফঃস্বল গঞ্জের ছেলেপুলেরা বুলি বলতে বুঝতাম মুখে যা ফোটে বা ফোটেনা। ওর মানে যে দলবদ্ধভাবে পিছনে লাগা, সে জানতে বহুদিন সময় লেগেছিল। কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া বলিওনা, এ অবশ্য জানা ছিল, কিন্তু তারপরেও এলাকায় তিনজন বাপির একজন ছিল কালা-বাপি, আরেকজন মোটা-বাপি, তৃতীয়জন ল্যাংড়া-বাপি (নাম বদলে দিলাম, কী দরকার)। এ সবই শারীরিক বৈশিষ্ট্যসূচক। কালার শ্রবণযন্ত্রে একটু সমস্যা ছিল, ল্যাংড়া ঠিকঠাকই হাঁটত, কিন্তু কোনো সময়ে খেলতে গিয়ে মনে হয় চোট পেয়েছিল। তখন এশিয়াডের ম্যাসকট বাচ্চা হাতি আপ্পু খুব হিট। প্রত্যেক ক্লাসেই থাকত নিজস্ব একটি আপ্পু। আমাদেরও ছিল। এই দুর্মর রাজনৈতিক সঠিকত্বের যুগে বোঝা কঠিন, যে, ওগুলো কেবলমাত্র বৈশিষ্ট্যবাচক ব্যাপার ছিল। রোগা-মোটা-কালো-ফরসা-কালা-টেকো -- এই সব নিয়েই পৃথিবী, যে যেমন, সবাই, যাকে বলে, ডিফারেন্টলি কেপেবল। তা বলে সব কিছু ভারি নিষ্পাপ ছিল এমন না। বুলির সবচেয়ে কাছাকাছি প্রতিশব্দ ছিল ক্ষ্যাপানো। সেও হত বিস্তর। পচা (আবারও নাম পরিবর্তিত) বলে একটি লোক, কেন কে জানে পুই-পুই শব্দটা শুনলেই খুব রেগে যেত। ইট-পাটকেল অবধি ছুঁড়ে মারত। তাকে দলবেঁধে ছেলেপুলে "পচা পুই পুই" বলবেই। অনুচিত জেনেও বলবে। বদামি যাকে বলে। এর চেয়ে ছোটো আকারেও "ক্ষ্যাপানো" হত। "লেডিস" ছিল ছেলেদের ক্ষ্যাপানোর একটা মূল মন্ত্র। মানে, ব্যাটা মেয়েলি। আরেকটা ছিল "লেডিস ফিংগার"। এর সঙ্গে মেয়েদের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু ঢ্যাঁড়োশ না বলে যে কেন ইংরিজিতে বলা হত, জানা নেই। ... ...
১৯১২ সালে তৃতীয় বারের জন্য ইংল্যান্ড যান প্রফুল্ল রায়। এডিনবাবা ইউনিভার্সিটি-তে কি সব সেমিনার এবং আলোচনা ছিল। সেদিন কাজ শেষ করে বেরিয়ে খুব চা তেষ্টা পেয়ে গেল প্রফুল্ল রায়ের। এডিনবারাতে শুধু চায়ের দোকান পাওয়া খুব চাপের – সামনের এক বার-এ ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন সেখানে কফি সার্ভ করে কিনা ওরা। হ্যাঁ বললে, তিনি তখন জিজ্ঞেস করলেন কফি পাওয়া গেলে, চা-ও পাওয়া যাবে কিনা? ইংল্যান্ডে তখন চা পান বেশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। প্রফুল্ল রায়কে অবাক করে এই পাব মালিক বলল চা পাওয়া যাবে। পাবে বসে প্রফুল্ল রায় তাঁর ব্যাগ থেকে বের করলেন ড্যানিয়্যাল অলিভারের ১৮৬৯ সালে লেখা বই “ফার্ষ্ট বুক অফ ইন্ডিয়ান বোটানি” – কারণ তিনি তখন হাত দিয়েছেন ভারতীয় ভেষজ ইত্যাদি নিয়ে কিছু গবেষণায়। একমনে পড়তে পড়তে চা-য়ে চুমুক দিচ্ছেন, এমন সময় শুনলেন এক সাহেব জিজ্ঞেস করছে, “উড ইউ মাইন্ড ইফ আই জয়েন ইউ”। ... ...
দক্ষিণ পশ্চিম ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়াতে আছে ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। পৃথিবীর দশটির একটি। তেরো বছরের মেয়ে একাতেরিনাকে (ক্যাথরিন) নিয়ে অলিয়েনা ঝাপোরিঝিয়া থেকে ট্রেনে দু রাত্তির কাটিয়ে পোল্যান্ড পৌঁছেছিলেন। একটি ক্যাথলিক গিরজেতে তিন রাত্তির বাসের অনুমতি পাওয়া গেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ ভিসার খোঁজ নেই। এবার কোথায় যাবেন? কিছু বন্ধু বান্ধবের সূত্রে খবর পান সুইডেনের গোয়েটেবর্গে সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। ... ...
তখন সারা ভারত জুড়ে চলছে ডিস্কো জ্বর, ফলতঃ বিডিও-কে ঘেরাও করা হল একদিন এই দাবী জানিয়ে যে বোম্বে থেকে বাঙালীর ছেলে ডিস্কো সম্রাট বাপ্পি লাহিড়ি-কে আনা হোক। সে সব দাবী শুনে বিডিও তো কোন ছাড়, স্থানীয় হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিদের মাথায় হাত পড়ে গেল! আমাদের দৌড় বলতে হাওড়া ব্রীজ পেরিয়ে চিৎপুরে যাত্রা পার্টি খুঁজতে যাওয়া পর্যন্ত! এখন বোম্বে থেকে আর্টিষ্ট কিভাবে আসবে কেউ বুঝতে পারছে না! ... ...
একদিকে ইতিহাসের একঘেয়ে গল্প - অন্যদিকে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, একটু হাসাহাসি হলে মন্দ হয় না। ফচকে এই নাটকটি আশা করি হাসির হাল্কা স্পর্শ দেবে আপনার মনে। ... ...
পোল্যাণ্ডের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালকদের অন্যতম আন্দ্রে ভাইদার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের শেষ দুটি ছবি ছিল বায়োপিক। প্রথমটি পোল্যাণ্ডের বিখ্যাত সলিডারিটি আন্দোলনের নেতা লেখ ওয়ালেসাকে নিয়ে। দ্বিতীয়টি পোল্যাণ্ডের আভাঁ গার্দ চিত্রশিল্পের এক পুরোধা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। এই দুটি ছবি শুধু সময়ের দলিল নয়-- জীর্ণ , প্রাণহীন এবং মানবিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক তথাকথিত সমাজতন্ত্রের ধারণার বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষেও বটে। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের নির্মাণ যদি ঘটাতে হয় তাহলে এই ভুলগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, তাদের ধিক্কার জানানো ঠিক ততটাই জরুরী ,যতটা জরুরী এই মুহূর্তে বিকল্প সমাজব্যবস্থা নির্মাণের পথে যাত্রা। আন্দ্রে ভাইদার এই ছবি দুটি আমাদের সেই সুযোগ করে দেয়। ... ...
সেদিন নৈহাটি থেকে বেশ দেরী করেই আনন্দবাজারের অফিসে ঢুকলেন সমরেশ বসু। দেশ পত্রিকার সেকশনে ঢুকতেই সাগরময় ঘোষের সাথে দেখা। সাগরবাবু মাত্র কিছু দিন আগেই দেশ-এর সাব-এডিটরের দায়িত্ব থেকে প্রধান সম্পাদক হয়েছেন। তবে সাব-এডিটর থাকা কালীনও দেশ-র বেশীর ভাগ সিদ্ধান্তের পিছনে সাগরবাবুই ছিলেন শেষ কথা। সমরেশ বাসুর সাথেও তাঁর চেনা শুনে বহু বছর ধরেই – আজ পুরী, কাল কুম্ভ মেলা, পরশু কেঁদুলি – এই সব জায়গায় সমরেশ বাবুকে ঠেলেঠুলে তিনিই পাঠাতেন লেখা বের করার তাগিদে। ... ...
নীলরতন বাবু বয়েসে প্রায় বছর কুড়ি বড় ছিলেন বিধান রায়ের থেকে। ভালোবেসে তিনি বিধান রায়কে ‘বিধে’ বলে ডাকতেন আর একদম ভাইয়ের মত ভালোবেসে তুই বলেই সম্বোধন করতেন। সেই ভালোবাসা ছিল রেসিপ্রোক্যাল – কুড়ি বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও বিধান রায় ডাকতেন ‘নীলুদা’ বলে। প্রথম থেকে আলাপের পরেই নীলরতন বাবু বুঝে গিয়েছিলেন যে বিধান রায় খুবই প্রতিশ্রুতিবান ছাত্র এবং কালে কালে খুব নামকরা ডাক্তার হবে যদি ঠিক ঠাক গাইড করা যায়। তাই তিনি নিজে থেকেই বলেছিলেন, “বিধে, সময় পেলেই বিকেলের দিকে আসিস হাসপাতালে আমার রুমে। রাউন্ড দেবার আগে তোর সাথে চা খেতে খেতে বিশেষ কেস গুলো নিয়ে আলোচনা করব”। তা এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করেন বিধান রায়! তাঁরও শেখার আগ্রহ প্রচুর, প্রায় প্রতিদিন সময় পেলেই ছুটতেন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজে – যাকে আপনারা আজকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ বলে চেনেন। ... ...
পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির খবরকেও ছাপিয়ে দেশজুড়ে এখন লোকজনের প্রাত্যহিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে লেবুর অস্বাভাবিক দাম। গতমাসেও যেখানে কুড়ি টাকায় অন্তত ছটি লেবু পাওয়া যেত, সেই লেবুই এখন অবিশ্বাস্য ভাবে বিকোচ্ছে আক্ষরিক অর্থে সোনার দামে। একে তো গত ১২১ বছরে এত গরম নাকি মার্চ মাসে পড়েনি, তাই তৃষ্ণায় ছাতি ফাটা ধনী-দরিদ্র সব মানুষের সামান্য চাহিদা একটু লেবু জল। চাহিদা যখন আকাশচুম্বী লেবুর যোগান তখনই অন্যান্যবারের তুলনায় সবচেয়ে কম। লেবু এখন রাতারাতি বিলাস সামগ্রী। লেবুর দাম কমানো এখন বুঝি কেবল ভগবানেরই হাতে! সেই বিশ্বাস সম্বল করে বারাণসীতে তন্ত্র সাধনার জাগ্রত দেবী আদিশক্তির মন্দিরে তাই এগারোটি লেবু বলি দেওয়া হয়েছে। আজ হঠাৎ লেবু বিলাসিতার পর্যায়ে চলে যাওয়ায় স্মরণ করা দরকার, একেবারে গোড়ার দিকে রোমে লেবু ছিল ধনীদের কাছে বিরাট মর্যাদার প্রতীক। ঐতিহাসিক পম্পেই শহরের নানান মন্দির, প্রাসাদ, বাড়ি ও স্থাপত্যের দেওয়ালে খচিত ফ্রেস্কো পেইন্টিংয়ে লেবু চিত্রিত আভিজাত্যের চিহ্ন হিসেবেই। প্রাচীন গ্রিসে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে লেবুর ব্যবহার ছিল। গুপ্তচরবৃত্তি, অবৈধ প্রণয় বা যুদ্ধের ক্ষেত্রেও লেবুর ভূমিকা চাঞ্চল্যকর। প্রবাদ প্রতিম প্রেমিক ক্যাসানোভা ও তাঁর শতাধিক প্রণয়ীর সম্ভোগে জন্মনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার ছিল লেবু। কিংবদন্তিতুল্য জেনেরাল টমাস 'স্টোনওয়াল' জ্যাকসন রণক্ষেত্রে যাবার আগে লেবু চুষতেন। সেই থেকে তাঁর পরিচিতি বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান লেবু-প্রেমিক হিসেবে। ... ...
কেবল সিরিয়া ইরাক আফঘানিস্তান নয়, আপন দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে উৎপীড়িত অন্য অনেক দেশের মানুষজন ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কিছু এসেছেন এল সালভাদোর থেকে। বিগত তিরিশ বছর যাবত সেদেশে চলেছে গ্যাং ওয়ারফেয়ার, বিভিন্ন দলের মধ্যে সশস্ত্র লড়াই। শাসন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সে দেশের সঙ্গিন আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সালভাদোরিয়ান শরণার্থীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার কথা ব্রিটিশ সরকার বিবেচনা করছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা হচ্ছে দেশের নানা জায়গায়। তাঁদের কেস খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ... ...
তা ব্রজেন বাবু হেল্প করলেন। উনার কথাতেই অন্নপূর্ণা যাত্রা অপেরা ডেকে পাঠালো অরুণ কুমারকে একদিন। অরুণকুমার গিয়ে দেখলেন একদমই নতুন ধরণের যাত্রা – নাম “শের আফগান”। সেখানে আলি কুলী খাঁ-য়ের চরিত্রে অভিনয় করছে কম বয়সী, কিন্তু তুখড় একজন ছেলে। সেই ছেলেই পরে শান্তিগোপাল নামে বাংলার ঘরে ঘরের নাম হয়ে ওঠে। অরুণের জন্য ওঁরা ভেবেছিলেন কুতুবউদ্দিন কোকা-র চরিত্র। তবে চরিত্রে ফাইন্যাল করার আগে যাত্রার পরিচালক অরুণকুমারকে টেষ্ট করে নিতে লাগলেন – একটা অন্য কোন যাত্রাপালা থেকে বড় ডায়লগ তাঁকে পড়তে দিলেন, আরো বললেন অভিনয় করে দেখাতে। ... ...