দ্য সাইলেন্ট ক্রাই -- কিছুটা আকস্মিক ভাবে হাতে এসে পড়া একটি বই পাঠের এক অত্যাশ্চর্য অনুভব। নোবেলজয়ী জাপানী উপন্যাসিকের এই লেখা পাঠের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল যে তা শুধুমাত্র একটি ভাল বই পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েই থাকে না। আমার স্থান আর কালের বাস্তবতায় জারিত হয়ে, কী এক অদ্ভুত ম্যাজিকে ১৯৬৭ সালে লেখা এক জাপানী উপন্যাস হয়ে ওঠে আমারই শহরের গল্প, যা দেশ-কালের ব্যবধান কে উড়িয়ে দিতে পারে ফুৎকারে, মিলিয়ে দিতে পারে আমার ইতিহাসের সাথে আমার ভবিষ্যৎকেও। ... ...
আজও প্রতি রাতে মা ঢাকায় যান। ভোরবেলা ঘুম ভাঙে তাঁতিবাজরের পয়ঁতাল্লিশ নম্বর বাড়িতে। তারপর বেলা বাড়লে তিরাশি বছরের বালিকাটি যান বাংলাবাজার গার্লস স্কুল। মধ্যাহ্নে ইডেন কলেজ। সন্ধ্যাবেলা আরতির ঘন্টা বাজে রাধানাথ জিউর মন্দিরে, দূরের শাঁখারি পাড়া থেকে ভেসে আসে শঙ্খধ্বনি। আমি হাঁটতে থাকি বুড়িগঙ্গার পাড় ধরে। চলে যাই সিংহল সমুদ্র পেরিয়ে, কাশ্মীর উপত্যকা ভেদ করে, সিরিয়ার ঊষর স্থলভূমির দিকে, পৃথিবীর অগণন শরণার্থী শিবিরের অভিমুখে। ... ...
কৃষ্ণর উল্লেখ কবে কোথায় প্রথম পাই আমরা ? তার পরিচয় নিয়ে তর্ক বিতর্কে পণ্ডিতেরা কি বলেছেন ? ভারতীয় ও বাংলা সাহিত্যে কৃষ্ণকথার ক্রমবিকাশের ইতিহাসটি কেমন ? এসব নিয়েই দু চার কথা এখানে। ... ...
ধারাবাহিক - ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইজ ওভারওয়ার্ক অ্যাকচুয়ালি। সকাল। দুপুর। রাত। যে কোনো সময় মিটিং বসছে। অ্যাকাউন্টস। মার্কেটিং । ম্যানেজমেন্ট । সকাল। দুপুর । রাত। অন্তহীন মিট টু প্রোমোট কনসিউমারিজম। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন ত্রিদিব । ... ...
লোকটা বললো, "কীভাবে বুঝবো সেখানে পৌঁছে? কীভাবে বুঝবো যে এখানেই আমার আসার ছিল?" ঈশ্বর এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। লোকটা দাঁড়িয়ে রইলো খানিক থতমত হয়ে। তারপর, "যাই হোক, একটা ন্যারেটিভ তো পাওয়া গেছে অন্তত" ভেবে হাঁটতে লাগলো ঈশ্বরের রেখে যাওয়া রাস্তা বরাবর ... ...
বোলানিও, যিনি সারা পৃথিবীর পাঠকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন, 'দ্য রিটার্ন' ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর একটি গল্প সংকলন; ২০১০ সালে প্রকাশিত, লেখকের মৃত্যুর সাত বছর পরে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত 'লাস্ট ইভনিংস অন আর্থ' বইটিতে যে গল্পগুলি ছাপা হয়েছিল, তার বাইরেও বোলানিওর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প রয়ে গেছিল; সেগুলি এই বইটিতে স্থান পেয়েছে। ... ...
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কনস্পিরেসি থিওরি ও সেই সংক্রান্ত ডিসকাশন! একদিন আপনি, মানে সুধী পাঠক, দীনের কুটিরে পদার্পণ করলেন এবং ড্রাগন-দর্শনের অভিলাষ প্রকাশ করলেন | আমি আপনাকে গ্যারাজে নিয়ে গেলাম, আপনি বললেন, "ড্রাগন কই?" আমাদের বাড়ির গ্যারাজে একটা ড্রাগন আছে ... ...
ঝাড়খন্ডের আদিম জনজাতির 'হাজারিবাগ চিত্রশৈলী' কে বিপন্নতা থেকে বাঁচিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন একজন মানুষ--তাঁর কথা ... ...
হারিকেন ইসাইয়াস এসে জোর ধাক্কা দিয়ে গেল উত্তর আমেরিকার ইস্ট কোস্টে| বিদ্যুৎবিহীন, নেটওয়ার্ক-বিহীন অবস্থায় আটকে পড়া দুটি ছেলেমেয়ের জীবনে কেমন করে প্রেম জমে উঠলো, আজ তারই গপ্পো| ... ...
করোনাকালীন ধারাবাহিক - সাদাটে একটা আলো ঘুরছিল। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে মিলিয়ে যাচ্ছে।কোথা থেকে শুরু কোথা থেকে শেষ, কিছুই বোঝা যায় না। তীব্রতা মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছে ।আবার খুব কমে যাচ্ছে।একটা ঝিঁঝির ডাকের মত যেন।সামনে কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মাঝেমাঝে বিদ্যুতের চমক যেন।চিড়িক দিচ্ছে মাথার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে চোখে যন্ত্রণা ।হাত পায়ে জোর নেই কোনো। পাশ ফেরার ক্ষমতাহীন। ... ...
দাগ কাটতে গেলে ঝকমক করার দরকার নেই। একথা বিশ্বাস করি বলে আমরা ওসবের কারবারে নেই। ফলে জগৎ জোড়া জালে যখন গিজগিজ করছে জাল-সিরিজ, তখন আমরা, আমরা, গুরুচণ্ডা৯ সদলবলে ও সগর্বে হাঁটছি উল্টো-পাল্টা দিকে। উল্টো দিকে নয়, উল্টোপাল্টা দিকে। দৃশ্যশ্রাব্য আমাদের ভালই লাগে। ঝিম মেরে সিনেমা টিনেমা দেখি, পারলে দু-একটা বানিয়েও ফেলি। কিন্তু আমরা ঋত্বিক ঘটকও নই, যে, পুরোনো জিনিসকে লাথি মেরে "উন্নততর" মাধ্যমে চলে যাবার তাড়া আছে। আমরা উন্নততর বা ওটিটি প্লাটফর্ম কিসুই নই, নিজেদের তালে চলি। আমরা তাই সিরিজ বা সিরিয়াল নয়, নিয়ে এসেছি চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিককে। স্রেফ অক্ষরে। প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি শনিবার। আমাদের ওয়েবসাইটে। ... ...
আমি কেন আই-ফোন কিনলাম? এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা, অমৃতার চাপে পড়ে! প্রশ্ন উঠতে পারে, অমৃতা তাহলে আই-ফোন কিনল কেন? পরিপার্শ্বের চাপে পরে? পিয়ার প্রেসার? স্টেটাস সিম্বল? – হতে পারে এর অনেকগুলোই কিছু কিছু সত্যি। শুধু অমৃতা নয়, একটু ভেবে দেখেছেন কি আই-ফোনে কি ভাবে ‘দ্যা মোবাইল’ হয়ে উঠল বা আজকাল আমজনতা কেন যে দামেই আই-ফোন বেরুচ্ছে সেই দামেই কেনার জন্য অগ্রীম অর্ডার দিচ্ছে বা রাত জেগে লাইন লাগাচ্ছে? তাই আসল প্রশ্ন অমৃতা কেন আই-ফোন কিনল সেটা নয় – প্রশ্ন হল, কিভাবে অসংখ্য অমৃতা-দের মনে হতে শুরু করল যে আই-ফোন-ই সেই মোবাইল যা তাদের চাই? আর এই যে আমি গুচ্ছ আঁতেল - এতো কিছু জেনেও তাহলে আমি আই-ফোন কিনলাম সত্যিই কি শুধু অমৃতার চাপে পড়ে? নাকি তার বাইরেও কিছু আছে? এই সব নিয়ে গভীরে ঢোকার আগে একটা গল্প শুনে নেওয়া যাক - কালো মুক্ত-র (ব্ল্যাক পার্ল) গল্প। ১৯৭৩ সাল নাগাদ একবার দক্ষিণ ফ্রান্সের কাছে সমুদ্রে নিজের ইয়াট-এ করে ছুটি কাটাতে গিয়ে সালভাদর এর সাথে আলাপ হয়ে গেল বরুইলে নামের এক স্টাইলিশ ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ীর সাথে। মুক্ত প্রসঙ্গে উঠতে বরুইলে জানালেন তিনি এক অদ্ভূত জিনিসে সন্ধান পেয়েছেন – এমনিতে তিনি এক তাহিতি কন্যার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি ওদিকে ঘোরার সময় লক্ষ্য করেছেন যে দক্ষিন প্রশান্ত মহাসগারে তাহিতির কাছেকাছি ওদিকেটা একধরণের কালো-মুখো ঝিনুকে ভর্তি – আর সেই সেই ঝিনুক থেকে নাকি বেরিয়ে আসে এক বিষ্ময়কর বস্তু ‘কালো মুক্তো’ ... ...
এই একটি ক্ষমা যার কাছে মৃত্যুও মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। এই একটি ক্ষমা, যা মৃত্যুকে অতিক্রম করে অমরত্ব স্পর্শ করে। ... ...
ইদানিং মাঝেমাঝেই দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত এক দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ মানুষের ছবির নিচে লিখে দেওয়া হয় ‘উইলিয়াম রোদেনস্টাইন অঙ্কিত মৃত্যুশয্যায় রবীন্দ্রনাথের বিরল ছবি’। স্বভাবতই এ ছবি দেখে বাঙ্গালী আবেগের স্রোতে ভেসে পড়েন, হাজারে হাজারে ‘লাইক’ দেন আর শয়ে শয়ে শেয়ার করে একটি অদ্যন্ত ভুল তথ্যকে চক্রবৃদ্ধি হারে মহামারীর মত ছড়িয়ে দেন দেশে দেশে, দিশে দিশে। অথচ তাঁরা একবারও ভেবে দেখেন না কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন চিত্রকর রোদেনস্টাইন রয়েছেন ইংল্যান্ডে, কিভাবে তিনি এমন একটি ছবি আঁকতে পারেন? ... ...
গুয়াহাটি-শিলং যাত্রাপথ তখন কাঁচা রাস্তা। পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে তিনদিন। অন্যথায় গরুর গাড়ি, সময় সেই তিনদিন। পথে দস্যুদের উৎপাত। সেই সময়ে এই পথে যাত্রার সময় একদিনে নামিয়ে আনলেন কশিমুদ্দিন। তাকেই এখন মনে করা হয় আধুনিক শিলংয়ের পথপ্রদর্শক। হাজি কশিমুদ্দিন মোল্লা জন্মগ্রহণ করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের শেষ দিকে, জনাই হাটপুকুর অঞ্চলে। পিতা গোলাম হায়দার। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে গোলাম হায়দার কিশোর পুত্র কশিমুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ববঙ্গের ছাতক (সিলেট) হয়ে জঙ্গলে ভরা দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছন চেরাপুঞ্জিতে। ১৮৪৯ সালে। ... ...
রবীন্দ্রসাহিত্যে যে ফুলের নাম আছে তার সঙ্গে পরিচয় না থাকলে নতুন প্রজন্মের কাছে বার্তা সঠিক ভাবে পোঁছাবে কি ? তাই এই লেখার অবতারণা ... ...
পাশের টেবিলে তিনজন বসে গল্প করছিল। আমি আড়ি পেতে শুনছিলাম। আড়ি পেতে ঠিক নয়, কানে আসছিল। অসমবয়েসী তিনজন। একজন বছর পঁচিশেকের, একজন বছর পঁয়তিরিশের, আর অন্যজন আমার বয়েসী হবে। বছর পঞ্চাশেক। পানভোজনের মাঝারি মানের রেস্তোঁরা। আমি অনেকদিন থেকে এখানে আসি। পান আর আহার দুইই ভাল। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম যেমন বদলেছে, আমার রুচিও। এদেরও দেখলাম রুচির তফাত। ছোটজন নিয়েছে বিয়ার। মেজোজন রেড ওয়াইন। বড়জন শুনলাম সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি অর্ডার দিল। খাবারেও তিনজন ভিন্নপন্থী। ছোটজন অর্ডার করল ঝাল চিকেন উইংস। দ্বিতীয়জন চাইল নিউজিল্যান্ডের আমদানী ল্যাম্ব শ্যাংক। বুড়োজন নিল রেয়ার-মিডিয়াম ফিলে মিনিয়ন। আট আউন্সের। মানে খুবই ছোট। ... ...
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কথাটা বললে অনেকের রাগ হতে পারে। তবু ক্লাস সেভেনে পড়া ভাইকে পুলিশের রেইডের থেকে বাঁচাতে গিয়ে স্কুল-পড়ুয়া সোলিহা জান পেটে বুটের লাথি খেলেন। তারপর রক্ত বমি, জ্ঞান হারানো। হাসপাতাল বাস। দুসপ্তাহ লাগল শারীরিক সুস্থ হতে। মনের ভয় কাটে নি এখনো। আরেক কন্যা জানিয়েছেন, সকালবেলা উঠে তার দিন শুরু হয় সেনাদের উঁচানো বন্দুকের নল দেখে। বাড়ির পাশেই সেনা ছাউনী। তারপর সারাদিন বাড়ী থেকে যেতে-আসতে প্রতি বার জিজ্ঞাসাবাদ, খানাতল্লাশি। নোংরা দৃষ্টিও বাদ যায় না। এটাই তাঁদের নিউ নর্মাল। ... ...
হাজংদের ‘প্যাঁক খেলার’ মতো কক্সবাজার-পটুয়াখালির রাখাইনদের রয়েছে আরেক ঐতিহ্যবাহী পানি-খেলা উৎসব-- সাংগ্রেং। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারাও পানি খেলার আয়োজন করেন, তারা একে বলেন-- সাংগ্রেই পোয়ে। সেটি অবশ্য বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের ভিন্ন এক উৎসব। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে বসবাসকারী গারো বা মান্দি জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে বীজ বপনের উৎসব ‘রঞ্চুগালা’ ও নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’। আর চাকমাদের বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উৎসবের নাম ‘বিঝু’। ত্রিপুরারা তাদের চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবকে বলেন ‘বৈসুক’। সাঁওতাল আদিবাসীর রয়েছে নবান্ন উৎসব ‘সোহরাই বাহা’ ও বৃক্ষ বন্দনা ‘কারাম’ উৎসবের ঐতিহ্য। ... ...
আতংকিত, মানুষ অসহায়। যেন এক যুদ্ধ পরিস্থিতি! যেকোন মুহূর্তে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে। আমার এতদিনের সযত্নে লালিত সংসার এক মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। এখন শত্রু আর ওইখানে কোথাও নেই, শত্রু আছে আকাশে-বাতাসে, মানুষের মধ্যে মিশে! তাই মানুষ মানুষকে সন্দেহ করছে। সামাজিক দূরত্ব রাখতে মানুষ মানুষের থেকে দূরে থাকতে চাইছে। সন্দেহ হলেই অপরকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে। করোনা-কেন্দ্রিক এক জীবন গড়ে উঠেছে আমাদের। এক মৃত্যু-মুখী চেতনার জীবন। ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া জীবন। "এরা ভিড় বাড়াচ্ছে, ওরা মাস্ক পরছে না" – এইসব নিয়ে অপরকে দোষারোপ করা একাকীত্ব যাপন। ... ...