এক ইউরোপিয়ান আমায় বলেছিলো, কন্টিনেন্টাল ইউরোপকে বোঝার সবচেয়ে ভালো রাস্তা হল ফুটবল| ইউরোপ ফুটবলে বাঁচে, ফুটবলেই মরে| বড় বড় ক্লাবগুলোর রাইভ্যালরি, সিটি ডার্বি, কান্ট্রি ডার্বি, লিগ, কাপ - ফুটবল ফ্যানদের জীবন এতেই আবর্তিত| আমার বাড়ীর পাশের আইবেরিয়ান রেস্তোঁরার মালিক পর্তুগিজ বেনিতো তার জ্যান্ত উদাহরণ| তার বাসস্থান পোর্তো শহরের পোর্তো ফুটবল ক্লাবের জন্যে সে কি না করতে পারে? আজ তারই গপ্পো| ... ...
টিকটিকি দেখলো। মেয়েটা ল্যাপটপের সামনে।ওর দিকে তাকাচ্ছে না একবারও। অভিমান হল টিকটিকির।মানুষ বড় স্বার্থপর। ভেবে নিল। ডে ওয়ান। সকাল। উওলগ্যাংগ প্যাটেরসনের ছবি। আউটব্রেক। মেডিক্যাল থ্রিলার। জাস্টিন হফম্যান। মর্গান ফ্রিম্যান। রেঁনে রুশো। ইবোলার ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকার কোনো অন্চলে আর তারপর ইউ এস এর একটি ছোটো শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেটা। উনিশশো পঁচানব্বুই। ... ...
রাস্তাটার একদম শেষে একটা পুকুর, টলটলে। দুইপাশে জংলা ঘাস, কুচো কুচো তারা ফুল। পুকুরটাকে জাপটে ধরে আরেকটা রাস্তা, রাস্তার শেষে নিমোর বাড়ি। আমি তাই জানি, কারণ ঐ রাস্তা দিয়েই লাফাতে লাফাতে আসে। আমাদের পুকুর এক , শুধু রাস্তা আলাদা। ... ...
ডায়রিটা পড়ে ছিল একটা স্পটলাইটের মধ্যে। মেঝের রঙ কালো। যদিও স্বপ্নে আসলে রঙ হয় না বলে লোকে। তবে বোঝা তো যায়। অথবা স্বপ্নের যে স্মৃতি তাতে তো অন্তত মনে হয় যে সবকিছুরই যেন রঙ ছিল একটা। এটা সেই স্বপ্নের স্মৃতির বিবরণ। ব্রতীশঙ্কর ভাবছিল ডায়রিটা সে এগিয়ে গিয়ে তুলবে কিনা। ওই তো, 'অংশুমানের ডায়রি', যা কিনা তার এত পছন্দের। ডায়রিটা তুলে নিয়ে খুললেই পড়ে ফেলা যাবে যা যা গল্পে ছিল না। অংশুমান কে, কি হয়েছিল তার শেষ অবধি; সবটাই জেনে ফেলা যাবে। হয়তো তার নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতির সঙ্গে খানিক মিলও থাকবে সেটার। এইসব ভাবছিল ব্রতী। আর তখনই ... ...
একদিন জেন বলল ওর বৌদি বেশ সমস্যায় পড়েছে – কারণ ওর দাদা ফ্যামিলি ছেড়ে চলে গেছে অন্য ভালোবাসার মানুষের সাথে। জেনের দাদার বয়স তখন প্রায় ৪৮ মত – তিন ছেলে মেয়ের বাবা। বিদেশে এই সব হতেই পারে – কিন্তু আমার চমকটা লাগলো অন্য জায়গায়। বেশ কিছু দিন ধরেই দাদা-বৌদির বনিবনা হচ্ছিল না। ওর দাদা নাকি অন্য একটা ছেলের প্রতি আসক্ত হয় পড়ছিল ক্রমে – এবং খুব রিসেন্টলি জেনের বৌদি-কে জানায় আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়, কারণ তার উপর সে আর কোন আকর্ষণ অনুভব করছে না! বরং বুঝতে পেরেছে ওই ছেলেটিকে ও প্রবল ভালোবেসে ফেলেছে। তাই ডিভোর্স দিয়ে ছেলেটার সাথে থাকতে চায়। সেই শুনে আমার অবাক অবস্থা দেখে জেন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল "সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন" কাকে বলে ইত্যাদি। ... ...
জাতীয় শিক্ষানীতি বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা নিয়ে কী বলছে ? বেসরকারী স্কুলগুলোও কি পঞ্চম শ্রেণি অবধি মাতৃভাষা/ আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদান করতে বাধ্য হবে নাকি এলিটেরা ফাঁক ফোকর খুঁজে ইংরাজী মাধ্যমেই রয়ে যাবেন ? ত্রিভাষা নীতি কি অ হিন্দীভাষী রাজ্যগুলিতে কার্যত হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া ? এই প্রশ্নগুলো থাকছেই। ... ...
নবনীতা দেবসেনের মতো করে বলতে আর পারলুম কই – “হালের কাছে মাঝি আছে – এটা অস্থি-মজ্জায় জানি” (গৌরচন্দ্রিকা, ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে)? তাই প্রতিমুহূর্তের মৃত্যু জানান দেয় এখনো বেঁচে আছ। এমনটাই হয় হয়ত আমাদের সাধারণের ঘরকন্নার সাথে। যা নেই, তাই দিয়েই বুঝি কী ছিল। পায়েতে বেড়ি যতদিন না পড়ল, ততদিন ভুলেও ভাবিনি যে ছাড়া আছি। আজ যখন শারীরিক দূরত্বের সাথে সাথে মনে বাসা করেছে সন্দেহ, সংকোচ আর ভয়ের অগুণতি ঠাণ্ডা রক্তের পোকা, তখন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার জন্য পড়েছিল এই অপার পৃথিবী। তবু তেমন করে ভালোবাসতে পারি নি। ... ...
স্বাদের কথা যখন বললাম তখন আরেকটু বলি। বড় ঈদ মূলত খাওয়ার ঈদ। কোন পরিসংখ্যান আছে কিনা জানা নাই আমার। আমার ধারনা এই ঈদের পরে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়। কারণ সবার ঘরে ঘরে গোরুর মাংস। সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত চলছে গোরু খাওয়া। এখন অনেক ধরনের রান্না হয় মাংস। আগে তা হত না। আম্মাকে দেখতাম বড় এক পাতিলে অনেক মাংস একবারে রান্না করত। ওই এক জিনিসই। চলত জ্বাল দেওয়া আর খাওয়া। একদিন পর থেকে স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেত। যতই দিন যেত ততই নতুন স্বাদ পাওয়া যেত। দুইদিন তিনদিনের মাংসের যে স্বাদ তা রীতিমত স্বর্গীয় লাগত আমাদের। জ্বালে জ্বালে মাংস আর মাংস থাকত না, সব মিশে অন্য কিছু একটা হয়ে যেত, যার কোন তুলনা নাই। ঈদের পর দিন আমাদের বাড়িতে খাওয়া হত গোরুর মাংস আর পরোটা। কেউ কেউ চালের গুড়ার রুটি খেত, আমাদের এখানেও হত। লা জবাব স্বাদ! এখন নানান ধরনের রান্না হয় মাংস। কাবাব হয়, কোরমা হয়, টিকিয়া হয়, সাদা মাংস রান্না হয়, এবং আরও নানান ধরনের রান্নায় এখন ঈদ জমে যায়। ... ...
কবি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় -এর কাব্যগ্রন্থিকা নিয়ে আমার আলোচনা, শেষ পর্যন্ত আমাকে তুলে নিতে হচ্ছে। কেননা কবির মনে হয়েছে, যে আমি তাঁর বইটির প্রতি যথাযথ সুবিচার করিনি ... ...
ফেলুদার সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় করিয়ে দেয় তোপসে। জানায় ফেলুদা তার মাসতুতো দাদা। ফেলুদা, ফনি ডাক্তারের সাথে দেখা করে। তোপসেকে একটা মুখোশ কিনে দেয় 'নেপাল কিউরিও শপ' থেকে। প্রবীর মজুমদারের সাথে দেখা হয়, তার মুখ থেকে তার হোটেলের খবর বের করে নেয়। তিনকড়িবাবুর আসল পরিচয় জানতে পারা যায়। তিনকড়িবাবুও ডঃ ফনি মিত্রের কাছে গেছিলেন। এবং তাঁর বয়ান থেকেই প্রথম জানা যায় ফেলুদার সিগারেটের নেশা আছে। এর আগে ফেলুদাকে সিগারেট ধরাতে দেখা যায়নি। এরপরে আছে। এই রাতেই রাজেনবাবুকে মুখোশ পরে ভয় দেখায়, অপরাধী। ... ...
Commonwealth War Graves Commission নামে একটা সংস্থা আছে। এরা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ব্রিটিশ যত সৈন্য নিহত হয়েছে তাদের প্রতি সম্মান জানানোর কাজ করে। বিভিন্ন জায়গায় যত কবর আছে যুদ্ধের সব গুলোর যত্ন নেওয়া, ইতিহাস তুলে রাখা এবং তাদের যেন কখনোই মানুষ ভুলে না যায় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে এদের কাজ। CWGC একটা ওয়েব সাইট আছে, তাতে তারা বলছে পুরো দুনিয়ায় ২৩ হাজার স্থানে ওয়ার সিমেট্রি আছে আর তাতে শায়িত আছে ১.৭ মিলিয়ন নর নারী সৈনিক। এই সংস্থা ১৯১৭ সালে Imperial War Graves Commission নামে যাত্রা শুরু করে, ১৯৬৫ সালে নাম পরিবর্তন করে Commonwealth War Graves Commission হয়। কিন্তু কাজ একই আছে, এই দীর্ঘ দিন ধরে তারা নিজেদের বীরদের সম্মান দিয়ে আসছে। ... ...
দু হাজার কুড়ির শুরুর থেকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস অতিমারির তাণ্ডব চলছে। এখন অবধি ২০ মিলিয়ন (১৯৮ লক্ষ) লোক আক্রান্ত, ৮ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ মারা গেছে (৪% মৃত্যুহার)। এর মধ্যে খোদ ভারতেই সরকারী হিসেব অনুযায়ী ২১ লাখ লোক আক্রান্ত, সাড়ে ৪৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন, ছ'মাস বড়জোর অতিক্রান্ত হয়েছে। ... ...
এরপর একটা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে রেণু নামবে; পিয়ানো যেখানে বাজছে সেদিকেই যাবে রেণু- নামতেই থাকবে -তাকে আর আটকাতে পারবে না সুবর্ণ- আস্তে আস্তে রেণু কুহেলির সন্ধ্যা রায় হয়ে যাবে। ... ...
নামটা ছিল একটা মাত্র শব্দে, যার মানে করতে গেলে এরকম একটা মানে দাঁড়াতো। কিন্তু সেই ভাষা জানতো যারা তাদের কেউ আজ আর বেঁচে নেই। ফলে শব্দটা ঠিক কি ছিল আজ আর জেনে উঠতে পারা যাবে না। গ্রামের বাইরে ছিল শুধু জঙ্গল জঙ্গল আর জঙ্গল। যতদূর চোখ যায় আর যতদূর মানুষ যেতে পারে। মানুষের তো স্বভাব হেঁটে দেখা কতদূর যাওয়া যায়। তা, সেরকম মানুষ সব সময়েই থাকে। যারা ছিল সেরকম সেদিন, তারা যদি কেউ সেই জঙ্গলের শেষ দেখেও থাকে, গ্রামে আর ফেরেনিকো তারা। ... ...
শহরের মানুষ এতটা আকাশ দেখতে অভ্যস্ত নয়, তারা হঠাৎ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে শেষ কবে এতটা আকাশ দেখেছিল। ... ...
আপাতত মাথায় রাখা যাক যে, ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে সেই পচে-যাওয়া-রোগ ড্রয়িংরুমের চেয়ারটাকেও খেতে শুরু করেছিল। আর বইয়ের তাকটাও সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাছাড়া গোটা ড্রয়িংরুমের মেঝে পাঁকের মতো আঠালো হয়ে আসছে ক্রমশ। ঘরে হাঁটা দায়। সেন্টার টেবিল থেকে ডাইনিং টেবিলে পৌঁছতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যাচ্ছিলো প্রতিবার। এই ঘরটা শেষ হলে বাকি থাকবে বেডরুম আর বাথরুমগুলো খাওয়া। ... ...
ইটারসি থেকে দলটা একটু ছোট হয়েছে। ভাগ হয়েছে। প্রায় কুড়ি জনের একটা দল চলে গেছে দক্ষিণের দিকে। সুখনলালরা এখন আটজন। আটজন চলেছে নাগপুর স্টেশনের দিকে।দুই পায়ে দপদপে ব্যথা। দিনে নয়ঘন্টা হাঁটছে এখন ওরা। ভোর তিনটের সময় চলা শুরু। দিনে পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার হাঁটতেই হবে। বাড়ি যেতে হবে। বাড়ি। এক একেক দিন পেটে ব্যথা ওঠে। এত ব্যথা করে যে পেটে গামছা বেঁধে শুয়ে পড়ে। সুখনলালের একদিন খুব ব্যথা উঠেছিল। মনে হয়েছিল আর বাঁচবে না। ... ...
মোক্ষম বোমাটা ফাটিয়েছেন শংকরাচার্য স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী। কারণ কী জানা নেই, তবে কিঞ্চিৎ কাণ্ডজ্ঞান খাটিয়েই দ্বারকাপীঠের ভূতপূর্ব শংকরাচার্যের ঘোষণা: রূপান্তরিত বাবরি মসজিদ, থুড়ি রামমন্দিরের শিলান্যাস-নির্ঘণ্টটি ‘অশুভ’। নানা মহলেও তোলপাড়, যে সময় মহামারীতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে দেশ, কিঞ্চিৎ শ্রদ্ধাবশতই কি সে’ সময় স্থগিত রাখা যেত না আলো-ঝলমলে এই সব অনুষ্ঠানের বাহার? যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য গাঁট। ... ...
আমি বা আমরা এখন এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,যে যখন ব্যক্তি মানুষের স্বতন্ত্রতা প্রায় নেই , সে এখন এক বিপুল জনগোষ্ঠীর অংশমাত্র। মানুষ একেবারেই তার পূর্বপুরুষের মতোএকে অপরকে অনুকরণ করে , তাদের রাগ ঘৃণা বা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একইরখম । এই পৌনঃপুনিকতা থেকে একজন কবি বা শিল্পীও বিযুক্ত নন। ... ...
আলাদা বলেই এর একটা নাম রেখেছিলেন বিপ্লব - সানাই। ছোটবেলায় বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় যে পাড়াতে ওঁরা থাকতেন সেখানে একটা রাস্তার কুকুরের ওই নাম ছিল। কুকুরটা ডাকতো একটা অদ্ভুত গলায়, কেউ একজন ওই নাম দিয়েছিল, সেটা চালু হয়ে যায়। নামের কথা ভাবতে গিয়ে ওইটাই মনে এসেছিল তাঁর। এতদিন কোথায় ছিলে? ফিস ফিস একটা বনলতা সেনীয় প্রশ্ন করলেন বিপ্লব। ... ...