বি ... ...
রেমডেসিভির বিষয়ক দু-একটি কথা। দেখা যাচ্ছে যে ধরণের প্রমাণের ভিত্তিতে রেমডেসিভিরকে আমেরিকার এফ ডি এ ছাড়পত্র দিয়েছেন, সেই সমস্ত প্রমাণ খুব জোরালো নয়। এতৎসত্ত্বেও ভারতে রেমডেসিভির নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা তৈরী হয়েছে কি? ... ...
ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল ছেলে বেলা থেকেই, পুসুমার উতসাহে বাড়ির পাশে আঁকার স্কুলেও যাওয়া শুরু হয়েছিল, প্রায় হাতেখড়ির সঙ্গে সঙ্গেই ।আমাদের বাড়িটা ছিল বাস রাস্তার লাগোয়া। তাই বাড়ির বাইরে যাতে খুব বেশি যেতে না হয়, তারজন্যই হয়তো ছবি আঁকার পাঠ শুরু হয়েছিল আমার। খেলাধুলা আমায় কোনও কালেই টানেনি। পুসুমার দৌলতে খবরের কাগজের সাথে সাথে আসত চাঁদমামা। আর বামপন্থী ছোটকাকুর দৌলতে আসত সোভিয়েত ইউনিয়ন পত্রিকা। ছবিতে রুশ উপকথার গল্প, আর চাঁদমামার উত্তর রামায়ণ আর বিক্রমাদিত্যের ও বেতালের গল্প আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন। ... ...
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কোলকাতার ছবির কোলাজ, ব্যক্তিগত স্মৃতির টুকরো। ইতিহাস হওয়ার দায় নেই। ... ...
দেখি দুজন বয়স্ক সুদর্শন সুপোশাক পরিহিত মানুষ এসেছেন এইচ আইভি নিয়ে কথা বলতে, এরকম বয়সের লোকজন সাধারণত আসেন কোনও না কোনও এন জি ও র তরফে এইচআইভি সচেতনতার কাজ কর্ম করতে সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা জানতে। কথা বলতে গিয়ে দেখলাম না এনারা দুই বন্ধু এসেছেন এইচ আইভির পরীক্ষা, চিকিৎসা কোথায় হয় সেসব জানতে।মনে মনে ভাবলাম আজকাল তো অনেকেই ছেলে মেয়েদের বিয়ের আগে থ্যালসেমিয়া এইচ আইভি পরীক্ষা করায়, ওনাদের হয়তো তেমন কোনও ব্যাপার। তাও বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেকে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ রাখা উচিত সে ভাবেই আলোচনা শুরু করলাম। জানতেও চাইলাম ওনারা কেন হঠাৎ এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চাইছেন। কথায় কথায় জানলাম ওনাদের কোনও এক আত্মীয় বিদেশ থেকে ফিরেছেন, অনেক দিন যোগাযোগ না থাকায় তার যাপণ সম্পর্কে ওনারা জানেননা, সে হয়তো সেখানে ড্রাগ নিত, তার গায়েও উল্কি আছে অনেক তাই ওনারা তাকে এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চান। আর তাই সরাসরি স্বাস্থ্য দপ্তরে খোঁজ নিতে এসেছেন, বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে রাজ্য সরকারের এডস্ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে আরও জানতে চাইলেন এডস হয়েছে কিনা সেটাও কি করে জানা যায়। দেখলাম এনারা এডস আর এইচ আইভি র তফাতটা জানেন। কথা বলতে উৎসাহ পেলাম। ওনারা এইচ আইভি নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন নিয়েও জানতে চাইলেন। জানালাম বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এইচ আইভি নিয়েও লোকজন দীর্ঘদিন ভাল থাকেন, এবং আমিও ভাল আছি। ওনারা ধাতস্থ হলেন। কিন্তু মানুষের কৌতূহল অসীম, ওনাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করে বসলেন কিভাবে আমার এইচ আইভি হল। আজকাল এটাতে অবাক হই না হাসিমুখে বললাম, "সেটা জানাটা বোধহয় জরুরি না"। ... ...
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিনেই সারা দুনিয়া ববাসীরের বাজি রেখে সারিয়ে তোলার দম্ভের সামনে নতজানু হল।চারদিকে ওই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। রঙ্গনাথ হতভম্ব, একই বিজ্ঞাপন একটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে! কাগজটি রোজ সকাল দশটা নাগাদ শিবপালগঞ্জে পৌঁছিয়ে লোককে জানান দেয় যে স্কুটার ও ট্রাকের সংঘর্ষ কোথায় হয়েছে, আব্বাসী নামক তথাকথিত গুন্ডা ইরশাদ নামের কথিত সব্জিওলাকে তথাকথিত ছুরি দিয়ে কথিত রূপে কোথায় আঘাত করেছে। ... ...
তবুও কোথাও যেন একটা খচখচানি। বুঝতে পারতাম না আমি কেন আলাদা! সবাই যখন সিনেমার নায়িকাদের শরীর, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাতছানিতে ছন্নছাড়া হতে রাজী বুঝতে পারতাম না আমার কেন মনে মনে নায়কের পৌরুষ বা লোমশবুক অনেক বেশি টানে। দ্য গ্রেট আর্টিস্ট পত্রিকার পাতায় পাতায় নগ্ন পুরুষ দেখার লোভ কেন এত বেশি। বলতে দ্বিধা নেই ওইবয়সে ক্লাসের বন্ধুদের সাথে ক্লাসের কোলের ওপর ব্যাগ রেখে গোপন অঙ্গে স্পর্শের হাতছানি অগ্রাহ্য করিনি। ... ...
আমার আপাত মেয়েলি নরমসরম হাবভাবের জন্য মনে করা শুরু হল নাচই কারণ। আমাদের স্কুলের প্রার্থনা সভায় প্রতিদিন বেশ কিছুটা সময় বরাদ্দ থাকত বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেদের থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ওই সময় তাদের কোনও কোনও অ্যকটিভিটি পরিবেশন করতে হত। এটা সোশাল অ্যাংসাইটি বা জড়তা কাটানোর একরকম পদ্ধতি । ক্লাসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব কাউকে না কাউকে করতে হত। যদি কেউ না থাকত, তাৎক্ষণিক ভাবে কাউকে উঠতে হত। এরকম একদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই আমায় উঠতে হল, আমি পড়লাম বিড়ম্বনায়। মাস্টার মশায় তখন ভারতীয় নৃত্যের ইতিহাস নিয়ে কিছু বলতে বললেন। কোনওরকমে মান বাঁচালেও বুঝলাম আমার নাচ নিয়ে আরও পড়াশোনা দরকার। এবং যতই মনের আনন্দে নাচ করি না কেন ব্যকরণ গত ভাবে শাস্ত্রীয় নৃত্য অনুশীলন প্রয়োজন।লুকিয়ে লুকিয়ে শুরু করলাম নাচ। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই শরীর দিয়ে চোকাতে হল গুরুদক্ষিণা। লজ্জা আর ঘেন্নায় বন্ধ হয়ে গেল নাচ শেখা। ... ...
ভোটের বাদ্যির চোটে তার দ্বিরাগমনের পদধ্বনি কানে আসেনি। তাই পণ্ডিত মশাই যখন নিদ্রামগ্ন, ঠিক এই সময়েই পাগলা দাশু চিনে পটকায় আগুন দিয়ে ফেললো, একটু আনন্দের জন্য। সহপাঠীদের বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই কিন্তু তাদের টাইট দিতে হবে তাকে...তারপর? ... ...
আমাদের বাড়িটার একটা অদ্ভুত অবস্থান ছিল। আমাদের কোনও পাড়া ছিলনা সেই অর্থে। সামনে জিটি রোড দুপাশে দুটো বাড়ীর দুপাশ দিয়ে দুটো গলি।ওই গলি ধরে গেলে দুদিকে দুটো পাড়া। বাড়ির পিছনের বাড়িগুলো বা পাড়াগুলো কখনও আমি সেভাবে যেতাম না। আমাদেরকে মিশতেও তেমন দেওয়া হতনা। আমাদের বাড়ির লোকজনকেও পিছন দিকের পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত করতে দেখিনি। তবে বিকেল হলেই এপাড়া ওপাড়ার সবাই পুসুমার কাছে ঘুঁটে কিনতে আসত নয়ত দুধ নিতে আসত। সেইসময়টুকু যতটা এপাড়া ওপাড়ার আলোচনায় আমার জগত দর্শন। ... ...
বছর তিরিশ আগে এক তরুণ ডাক্তার গিয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বেল্পুকুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা এক আশ্চর্য নেই-রাজ্য। এরপর কীভাবে তিনি ভোল পাল্টালেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই কথাই তিনি লিখেছেন একটি ছোট্ট বইতে। বইটি আমাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। বইটি পড়ার সূত্রে আসা কিছু ভাবনা ভাগ করে নিলাম পাঠকদের সঙ্গে। ... ...
সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। ... ...
আমার মতে, যিনি ফ্যান আবিষ্কার করেছিলেন তিনি পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। যেকোনো মুহূর্তে খুলে মাথায় পড়তে পারে জেনেও নিচে আরামে শুয়ে থাকতে পারা, শুধুমাত্র আরামের জন্য - এ জিনিস পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন। ... ...
সরকারের দায়িত্বহীনতায় এখনো যদি ধর্মীয় দলাদলির উর্ধ্বে উঠে প্রশ্ন না তোলা হয় নাগরিক সমাজ থেকে, সামনে দুঃসহ দিন অপেক্ষা করছে। বেঁচে থাকার তাগিদে সরকারকে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বাধ্য করতে হবে। এভাবে নাগরিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কোনো নির্বাচিত সরকারের নেই। ... ...
গাড়ির আলোয় যতটা দেখা যাচ্ছিল, তার বাইরে কুয়াশা। প্রদীপ আর বিজন টর্চ জ্বেলে আশে পাশে দেখছিল। এদিক ওদিক কুয়াশা ফুঁড়ে ঝোপঝাড় বেরিয়েছে। ফণিমনসার মত কাঁটা গাছ। সেইখানে অন্ধকারের একটা স্তূপ পড়ে আছে যেন। বিজনের বুক কেঁপে উঠল। ... ...
সে রাতে বহু লোকেরই ভৌগোলিক অবস্থান গুলিয়ে যেতে থাকে। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ এ ওর ঘাড়ে চড়ে এক রাতে মফস্সলে মহাপৃথিবীর জন্ম হয়। ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক উপন্যাস ... ...