আফগানরা স্বাধীনচেতা জাতি। ব্রিটিশরাও তাঁদের পুরোপুরি পদানত করতে পারেনি। তারা ব্রিটিশদের রক্ষাধীন ছিল, প্রটেক্টোরেট। গত চার দশকে মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই তাঁদের কব্জা করতে পারেনি। দেশটা জ্ঞাতি ও উপজাতি রেষারেষি ও দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ। দেশের বিভিন্ন পকেটে, দুর্গম অঞ্চলে যুদ্ধবাজ সামন্তসর্দারদের সার্বিক আধিপত্য, যেখানে ধর্মের চেয়েও নিজের ক্ল্যান বা উপজাতির প্রতি আনুগত্যই ছিল প্রধান। আশির দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ানকে আটকানোর জন্য উগ্র ধর্মান্ধ সৌদি জঙ্গিদের মাধ্যমে আমেরিকানরা প্রথম এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ রফতানি করে। আজকের তালিবানি উত্থান সেই নীতিরই বিষফল। এটা নিশ্চিত যে তালিবানিরা পালটাবে না। প্রতিদিন মধ্যযুগীয় বর্বরতার নতুন সব নমুনা প্রকাশ্যে আসছে। কিছু অসমসাহসী মহিলা এবং সামান্য কিছু জায়গায় সর্দারদের মিলিশিয়া প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। এটা চলবে, কারণ আফগানিস্তান এমন একটা দেশ যেখানে যুদ্ধ চিরন্তন। একটাই রাস্তা, আফগানদের তাঁদের নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া হোক। হয়তো তাতে আফগানিস্তান আগামী দিনে সৌদি আরবের মতো একটা ‘সভ্য’, ‘আধুনিক’ (যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার জন্য কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করতে হয়) মৌলবাদী দেশ হয়ে উঠতে পারবে। ইতিহাস বারবার শিক্ষা দিচ্ছে যে বহিরাগত শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে শুধুমাত্র হিতে বিপরীতই হবে। ... ...
ভারত সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য এদেশের সমস্ত নাগরিককে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সুষ্ঠভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। সেইসঙ্গে ভারতের সরকার ও বর্তমান শাসক দলের উচিত এই পরিপ্রেক্ষিতে সি এ এ আইনটিকে গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করা। এই আইন যখন মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল, তখনই এর প্রতিবাদ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানের মুসলিমদের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তালিবানি সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয় ও পুনর্বাসন কতটা প্রয়োজন। তালিবানকে দেখিয়ে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশানা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাও কোনও কোনও শিবির থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে যে বিশ্ব জনমত তালিবানি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, তার মধ্যে মুসলিম সমাজের মানুষজন রয়েছেন বিরাট সংখ্যায়। এই ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতিকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা দরকার। তালিবানি শাসনের প্রত্যাবর্তন দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক তৈরির চরম ক্ষতিকর চেহারাটি কেমন হতে পারে। বিশ্বের যেখানেই আধুনিককালে রাষ্ট্র ও ধর্মের নৈকট্য সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই গণতন্ত্র ও আধুনিকতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম ও বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রেখে রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা কতটা দরকারি – বর্তমান আফগানিস্তান তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দিচ্ছে। ... ...
একজন চিত্রপরিচালক হিসেবে, বিগত বহুবছরের পরিশ্রমে, আমি এদেশে ফিল্ম-শিল্পের যে পরিকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম – আশঙ্কা হয়, তা অচিরেই ধ্বংস করে ফেলা হবে। পুরোদস্তুর তালিবান শাসন শুরু হলেই তারা সব ধরনের শিল্প ও চারুকলার চর্চাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। আমি এবং আমার সকল সতীর্থ তাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠব এবং আমাদের সবার নাম তাদের হিট লিস্টে উঠে যাবে। নারীর সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের ঠেলে দেওয়া হবে অন্তপুরের অন্ধকারে, তাদের সমস্ত অভিব্যক্তির কণ্ঠরোধ করা হবে। ইতিপূর্বের তালিবান শাসনে একটি মেয়েও স্কুলে ছিল না। গত কুড়ি বছরে ৯০ লক্ষেরও বেশি আফগান মেয়েরা স্কুলে যেতে শুরু করেছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যে ‘হেরাত’ শহরের (যা ইতিমধ্যে তালিবান দখলে চলে গেছে) বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভর্তির প্রায় ৫০%-ই ছিল মেয়েরা। এমন সব সাফল্যের খবর কিন্তু বাকি দুনিয়ার কাছে পৌঁছয়নি। মাত্র গত কয়েক সপ্তাহে তালিবানরা অসংখ্য স্কুল ধ্বংস করেছে আর তার ফলে প্রায় ২০ লক্ষ মেয়েরা আবার স্কুল-ছাড়া। ... ...
গ্রেপ্তারের সময় ফাদার স্ট্যানের বয়স ছিল ৮৪। তিনি পার্কিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন এবং প্রায় শ্রবণশক্তিহীন ছিলেন। এছাড়াও তাঁর বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা ছিল। তাঁকে যখন তালোজা জেলে নিয়ে আসা হয়, তখন বরেণ্য কবি ভারভারা রাও প্রবল অসুস্থ, যমে মানুষে টানাটানি চলছে। জেল তখন উপচে পড়ছে; ২১২৪ জন কয়েদি যেখানে থাকার কথা – সেখানে বন্দির সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়ে গেছে। করোনার কারণে জেল খালি করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, সেখানে তখনও আরও অভিযুক্তদের ঠুসে দেওয়া হচ্ছে। এই ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে ফাদারকে ঠেলে দেওয়া হল.. ... ...
১৯২০তে ভারতবাসী যে স্বরাজের ছবি দেখেছিল, তা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা এবং তার ফলে গড়ে ওঠা আজকের রাষ্ট্রব্যবস্থার থেকে পৃথক ছিল। রাষ্ট্রের থেকে সমাজের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্বরাজের ধারণায়। ... ...
এমনই ভরা গ্রীষ্মের এক নিঝুম দুপুরে আচমকাই বাঁশপাতা উড়ে এসেছিল চোখের টলোমলো পাতা জুড়ে। নরম পায়ের নূপুরের গন্ধে উবে গিয়েছিল খাঁখাঁ দুপুরের শূন্যতা। খুশিতে কেঁপে উঠেছিল তিরতিরে চারাগাছ। মেঠো ফুলের খিলখিল হাসিতে মেঘেরাও নেমে এসেছিল করতলে। এমনই এক চুপ দুপুরেই বাষ্প হয়ে দুরের আকাশে মিলিয়ে গিয়েছিল ধুপের গন্ধ মাখা নূপুরের কলতান। ঝরে আসা বাঁশপাতাও। তালগাছ বেষ্টিত গহীন পুকুরের ঘন জল বুক পেতে আশ্রয় দিয়েছিল ব্যাথাতুর আকাশের প্রতিবিম্বকে। চিল চিৎকারে দিগন্তের পানে পাখা মেলে উড়েছিল অস্থির পানকৌড়ি। তারপর কত কৃষ্ণচূড়ার মহাজাগতিক আলো পার হয়ে এই বীজাণু জর্জরিত কালবেলায় আবার এসে মুখোমুখি অবিকল সেই নিঝুম দুপুর। জানালার চোখ বেয়ে ঝাঁক ঝাঁক কৃষ্ণচূড়ার আবেগ ঘন গাঢ় উচ্ছ্বাস। কাঁচা আমের গন্ধ মাখা অবরুদ্ধ চুপ দুপুরে অবিকল সেই লাজুক নূপুরের রিনিঝিনি! ... ...
এসএলপি দায়ের হয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারা আবেদনকারীদের একটি রিট পিটিশন খারিজ করার বিরুদ্ধে। ওই আবেদনের বক্তব্য ছিল, পিএম কেয়ার্স ফান্ড তার ট্রাস্ট ডীড বা রেজিস্ট্রেশনের সময় পেশ করা ওর গঠন সম্বন্ধীয় মূল দস্তাবেজের ভাষ্য অনুযায়ী – একটি বেসরকারী সংস্থা। অতএব এর গঠনের জন্য কোনও আইন পাশ করার দরকার নেই। এবং একই কারণে এর কাজকর্ম-আমদানি-খরচাপাতি সরকারি অডিট বিভাগের নাগালের বাইরে থাকবে, আর পাবলিক এ নিয়ে তথ্যের অধিকার আইন – ২০০৫ অনুযায়ী পিটিশন লাগিয়ে কোন তথ্য পেতে পারবে না। ... ...
এখানেই একটা মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন এসে যায়। গোপনীয়তা মানে কোনও কিছু লুকোনো নয়, উল্টে প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব জায়গা থাকাটাই গোপনীয়তা, যা কোনওভাবেই অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যাঁরা ভাবছেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ফোনে তো এই স্পাইওয়ার সরকার ঢোকায় নি, তাহলে তাঁর এই বিষয়ে না ভাবলেও চলবে, তাঁরা সম্পুর্ণ মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। যেহেতু কোনও একটি ব্যক্তির সমস্ত কিছুর নাগাল পাওয়া সম্ভব এই স্পাইওয়ারের দৌলতে, সুতরাং তাঁর কন্টাক্ট তালিকারও নাগাল পাওয়া এমন কিছু কঠিন নয়, সেই সুত্র ধরে তাঁদের অর্থনৈতিক লেনদেনও যে সরকার দেখছে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? ... ...
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে। ... ...
কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে আদিবাসীদের সমস্যার কি কোনও সুরাহা হয়েছে? নতুন সরকার ২০১২ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট প্রকাশ করে যেটি আগের বিব্জেপি চেপে রেখেছিল। ঐ বছর ২৮ জুন বিজাপুর জেলায় সারকেগুড়া নামে একটি জায়গায় বাহিনীর গুলিতে সতেরো জন মানুষের মৃত্যু হয়। বাহিনী তাঁদের বিজ্ঞপ্তিতে বলে যে মৃতেরা সবাই মাওবাদী ছিলেন। গ্রামবাসীরা এবং সুধা ভরদ্বাজের (যিনি নিজে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ভুয়ো অভিযোগে কারাবন্দি) নেতৃত্বে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। চাপে পড়ে সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিজয় কুমার আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। প্রায় সাত বছর বাদে কমিশন তাঁরা রিপোর্ট পেশ করেন এবং প্রমাণিত হয় যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। কংগ্রেস সরকার যদিও এই রিপোর্ট সর্বসমক্ষে আনে কিন্তু যে সতেরো জন নিহত হন এবং দশ জন আহত হন তাঁদের কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। একই ভাবে যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল তাদেরও হয়নি। ... ...
স্বৈরাচারকে একটা নান্দনিক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেই ব্যাটনই হাতে তুলে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। হিন্দু রাষ্ট্রকে নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ গড়ে তোলার জন্য যে নগর পরিকল্পনা তিনি করেছেন তার কাছে সঞ্জয় নেহাতই বামন। সঞ্জয় বড়জোর চাইতেন শহরটাকে নতুন করে দেওয়াল দিয়ে ঘিরতে। আর মোদির উচ্চাকাঙ্ক্ষা গোটা শহরটাকে নতুন করে গড়ার। যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন মোদির ধ্যান-জ্ঞান সেন্ট্রাল প্রোজেক্ট। শোনা যাচ্ছে, এমন ভাবেই এই সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরি করা হবে যাতে রাষ্ট্রপতি ভবন সংসদ ভবন অন্যান্য প্রশাসনিক দফতরগুলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকেই দেখা যায়। এর থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যদি সুযোগ থাকত তাহলে গোটা দেশটাই নতুন করে গড়তে প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই আমরা দেখে ফেলেছি বেনারস ঘাটের 'সৌন্দর্যায়ন' বা আমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামের নব নামকরণ। এগুলি সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশবিশেষ। ... ...
আজকের সময়টা তথ্যের সময়, যাঁর কাছে যত তথ্য, তিনি তত বেশি শক্তিশালী। যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্প। তারপর সেই তথ্য সংশ্লেষণ করে, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে, সমস্যা চিহ্নিত করে, আবার সেই মানুষটির কাছে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াটিই এই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা করেছেন এই নির্বাচনের শেষ অবধি। এর পাশাপাশি, নির্বাচনী প্রচারে, কোন নেতা কীভাবে কোন জায়গায় কতটুকু বলবেন, কোন সাংবাদিক সম্মেলনে কোন কথা বলা হবে সেই সমস্ত কিছু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, সৌজন্য আইপ্যাক। কোন জায়গায় কে প্রার্থী হবেন থেকে শুরু করে কাকে দলে রাখা উচিত হবে না, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাকে দলে কতটুকু স্থান দেওয়া হবে, সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে এই সংস্থা। আরো অনেক বিষয় হয়তো কাজ করেছে। ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ যাঁরা প্রচার করেছিলেন তাঁদের হয়তো অবদান আছে কিন্তু দিনের শেষে আইপ্যাকের ভূমিকা বড় নির্ধারক হয়ে দাঁড়াল। ... ...
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, ভারতীয় সমাজ গড়পড়তাভাবে পুলিশকে সাম্প্রদায়িক ভাবেই দেখতে চায়। পুলিশ নিরপেক্ষ হবে, হিন্দু- মুসলমান দুজনকেই সমান দৃষ্টিতে দেখতে সাধারণভাবে যে এটা ভারতীয় সমাজ চায় না বিভূতি নারায়ণ রাই ক্ষেত্র সমীক্ষা জনিত বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে তা দেখিয়েছেন।পুলিশ ও নিজেদের কেবলমাত্র সংখ্যাগুরুর রক্ষাকর্তা বলেই মনে করে।পুলিশ আর মুসলমানের সম্পর্কটা প্রথম থেকেই যে সংঘাতের সেকথা খুব পরিষ্কার ভাবেই বিভূতি রাই বলেছেন। পুলিশ যে ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে মুসলমানের উপরে করে চলেছে তার প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় না যে, মুসলমান পুলিশের নামেই অচলাভক্তি নিয়ে থাকবে। ... ...
আগামীতে এ দেশে বামপন্থার বিকাশের চাবিকাঠিও রয়েছে এই বিশাল বহুত্ববাদী সমাজের মাঝে বামমন্থীরা কতটা নিজেদের সাক্ষর রাখতে পারে এই জনজাতি সমূহের য়ার্থ-সামাজিক অস্মিতার উত্থানে। বাংলা, তামিলনাড়ুর বা কেরালায় বিজেপির পরাজয় আসলে বিজেপির আরএসএস-এর একমাত্রিক ভারত গড়ার প্রকল্পে এক বড় ধাক্কা যেমন বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ পরাস্ত হল ‘জয় বাংলা’ র কাছে। কিন্তু এই লগ্নে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত বামেরা কি পারবে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে? হিটলারের উত্থানের পশ্চাতে অন্যান্য নানাবিধ কারণের সাথে সে দেশের বামেদেরও অবদান ছিল বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে অদ্ভুত হল রাজ্যে রাজ্যে বাম দলগুলি অবাম দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী আঁতাতে সেই বোধ উধাও হয়ে যায়। আরও দুর্ভাগ্যজনক এই অতীব সংকটকালীন সময়েও এদের কেউ কেউ অপরকে ব্যঙ্গ করে বিপ্লবী আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন যা ভবিষ্যতে বাম ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। প্রশ্ন জাগে বিহারের বিজেপি বিরোধী জোটে বামেদের সাফল্য থেকে কি কিছুই শিখবে না তথাকথিত বড় বাম দলগুলি? ... ...
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা। ... ...
কিন্তু এতদসত্ত্বেও শেষেশ বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে এ যাবৎ কালে বহু আলোচনা সামনে এসেছে। আদি-নব্য সংঘাত, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঠিক করতে না পারা, মেরুকরণের তাস ঠিক মতো কাজে না আসা ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যখ্যা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অতি হিন্দুত্ব, যোগী আদিত্যনাথের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হুঙ্কার ইত্যাদি নানা কিছু। আমার মনে হয়েছে এর কারণ 'আরবিট্রারি মেকানিজম', খেয়ালখুশির নীতি। ২০১৪-এর আগে থেকেই বিজেপি আর স্রেফ রাজনৈতিক দল নয়, তার কর্মপরিচালন পদ্ধতি একটা কর্পোরেট হাউজের মতোই। ভোট পরিচালনার জন্য আইটি-সেল সহ নানা বিভাগের কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হয়। পাখির চোখটাও সুনির্দিষ্ট থাকে। ঠিক যেমন কোনও পণ্যের বাজারিকরণের ক্ষেত্রে প্রচার অভিযান যে ভাবে হয়, বিজেপিও সেইটাই করে। এমনটাই হয়ে এসেছে এ যাবৎ। বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিজেপির ভোট বিস্ফোরণ না হওয়া নিয়ে। তাঁর যুক্তি, বিজেপি যথেষ্ট হিন্দুত্বের প্রচার করেনি। মোহিত রায়ের যুক্তি একরকম ভাবে ঠিকই। বিজেপির নির্বাচন পটীয়ানরা এই একটা ইস্যুতে লক্ষ্য স্থির না করে যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতি নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে মুসলিম বিরোধিতা ও হিন্দুত্বের মুখ করতে। কোথাও চেয়েছেন নতুন জেলার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরতে। কোথাও আবার মতুয়া তাস, রাজবংশী তাস ফেলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর অভিন্নহৃদয় সহোদর। ভার্চুয়াল ক্যাম্পেনিংও হয়েছে তদনুসারী। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঈষৎ জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রেই বলবে, বিপর্যয়ের কারণটাই এইটাই, একটি মূল ফোকাস ঠিক করতে না পারা। ... ...
বিনয় চৌধুরীর মণ্ডল কমিশনকে এই রাজ্যে পশ্চাদপদ শ্রেণি বা ওবিসি নেই চিঠি দিয়ে জানানোর প্রায় ২৩-২৪ বছর বাদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওবিসি বা পশ্চাদপদ জাতির বা ওবিসিদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে। বলা যায় বাধ্য হয়ে এই কাজে হাত দেওয়া হয়। কারণ ততদিনে, অনেক রাজ্যেই ওবিসি এবং দলিতরা নির্বাচনে বড়ো ভূমিকা পালন করছে, তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও বিভিন্ন রাজ্য-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক মাপকঠিতে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণও ঘোষণা করা হয়। মুসলিমদেরও একটা বড়ো অংশ এই তালিকাভুক্ত হন। ২০১০-১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সমীক্ষা হয় পশ্চাদপদ জাতির সংখ্যা ঠিক মতো জানতে। যতটুকু সমীক্ষা হয়েছিল তা থেকে তখন একটা ধারণা হয়েছিল, গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ ওবিসি। যদিও এটা সরকারি তথ্য নয়। ... ...
ভারতবাসীর মনে হিমালয় পর্বতমালা এক রোমান্টিক ধারণায় অবস্থিত। আমরা ছোটবেলা থেকেই উত্তরে গিরিরাজ হিমালয় এবং তার ভাবগম্ভীর একটি মূর্তিকে কল্পনা করি ধর্মীয় অনুষঙ্গে। সেখানে দেবতাদের বাস, হিন্দু দর্শনের বহু তীর্থ এই হিমালয়ে অবস্থিত। হিমালয়- যা দুর্গম, যা উচ্চ, যা ভয়ংকর সুন্দর। কিন্তু কয়েক দশক ধরে যেভাবে উন্নয়নের নামে এখানে গাছ কাটা হয়েছে এবং ভয়ঙ্কর সব বাঁধ তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে সমতলের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। সময়ের সাথে সাথে স্থানীয়দেরও অনেকেই উন্নয়ন মানে চাকরি এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরলাল বহুগুণার মত মানুষ বরাবর আন্দোলন করেছেন। সুন্দরলাল গোটা বিশ্বের কাছে চিপকো আন্দোলনের মাধ্যমে হিমালয়ের ভয়াবহ পরিবেশ ধ্বংসকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে অরণ্য ধ্বংসের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ায় কাজের সন্ধানে পুরুষদের দূরদূরান্তে যেতে হয়। থেকে যান মেয়েরা, যাদের উপর থাকে সমস্ত দায়িত্ব। ... ...
৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি। ... ...
প্রকৃতপ্রস্তাবে বর্তমানের বিজেপি হল ভারতীয় জনমনের প্রকৃত প্রতিফলন। এই সরকার দেশের উদার-গণতন্ত্রের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে জনগণকে একেবারে তার উলঙ্গ প্রতিলিপির সামনে সটান দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজেপি দেশকে একটি বাইনারির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ... ...