ভারতের নাগরিকেরা কি তবে আর ভারতীয় গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না? অন্তত নির্বাচন কমিশনের তথ্য তো তাই বলছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং তারপরে যে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভোটদানের হার ক্রমশ কমছে। গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মৌ চুক্তি অবধি করেছিল, যাতে সেই সব সংস্থাতে কর্মরত মানুষেরা ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ না করেন। যে সমস্ত কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাঁদের নামের একটি তালিকা অবধি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। বিরোধীদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই বন্দোবস্ত তো ‘বাধ্যতামূলক’ ভোটদানের প্রক্রিয়া, কোনও গণতন্ত্রে একজন মানুষ, নানান কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন, তা’বলে কি একজন মানুষকে ভোটদানে অংশ নিতে বাধ্য করা যায়? ... ...
সমস্যা শুধু এবছরের বা মধ্যপ্রদেশের নয়। এই পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রায় আমি ৭টি রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি। একেক জায়গার সমস্যা একেক রকম। কিন্তু একটি যন্ত্রণা দেশের প্রত্যেক কৃষককে এক করে দেয়: বাজারে ফসলের সঠিক দাম পাওয়া যায় না। পেঁয়াজ এবং রসুনের মত শাকসবজি বা ফলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নেই, তবে যে সব ফসলের সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে তাও পাওয়া যায় না। মুগ, ছোলা, অড়হরের মত ডালের জন্য কাগজে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয় কিন্তু বিক্রি হয় না। ফলে বাজারে ঘোষিত ন্যূনতম মূল্য থেকে এক হাজার বা দুই হাজার টাকা ক্ষতি হয় কৃষকের। ধান ও গমের সরকারি ক্রয় সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় কৃষক লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীর কাছে ফসল বিক্রি করেন। ... ...
আমি কয়েক বছর আগের একটি সেলফি হামলার কথা ভুলতে পারি না। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লির বিশ্ব বইমেলায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ ছোট সন্তান চোখের আড়ালে চলে যায়, তখন সবে সাত বা আট বছর তার বয়স। চলন্ত ভিড়ের মাঝখানে তাকে খোঁজার সময় আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করেছিল। সেই মুহূর্তে আমার কাঁধে একটি হাত অনুভব করলাম, “যোগেন্দ্রজি, এক সেলফি হো যায়ে (একটি সেলফি হয়ে যাক?)”, আমি শুনলাম এবং সেটা উপেক্ষা করে চারপাশে তাকাতে থাকলাম। তখন সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেলফি শিকারি আমাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেল। আমি তাকে আমার পরিস্থিতি বোঝালাম এবং ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। “অবশ্যই,” তিনি বললেন, “পর এক সেলফি তো বনতি হ্যায়”। আমি ঘুরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে এমন করলে তার কেমন লাগবে? তিনি সহানুভূতিতে মাথা নাড়লেন এবং তবুও সেলফি তুলতে গেলেন! ... ...
১) সংরক্ষণ কি দারিদ্র্য রোগের সঠিক ওষুধ? ২) ভারত জোড়ো যাত্রা অনেক কিছু বদলে দিয়েছে ... ...
জাতভিত্তিক সংরক্ষণের ওপর সাধারণ নজরদারির পরিবর্তে আদালতের উচিত সমাজে তার তীব্রতাকে পরীক্ষা করা। অর্থাৎ, সামাজিক সুবিধাভোগী গোষ্ঠীকে সংরক্ষণের ফলে গড়ে ওঠা সুবিধাভোগীদের সমানভাবে গুরুতর অর্থনৈতিক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। আদালত সমসত্ত্বতার পরীক্ষাকেও ছেড়ে দিয়েছে সম্ভবত, যাতে সম্পূর্ণ গোষ্ঠী একই রকম সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে। ইডাব্লুএস গোষ্ঠী অত্যন্ত অসমসত্ত্ব হতে বাধ্য। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। তাই বিচারবিভাগীয় নজিরগুলি এক সমসত্ত্ব শ্রেণীর সংকীর্ণ সনাক্তকরণের দাবি করবে। এটি নির্ধারণে নির্ভুলতার অভাব কম অথবা বেশি অন্তর্ভুক্তির কারণে যোগ্য ব্যক্তিদের প্রতি গুরুতর অবিচার হতে পারে। ... ...
আমি ২০১৯ সালে বলেছিলাম, “কংগ্রেসকে অবশ্যই মরতে হবে”। আমি তখন কী বোঝাতে চেয়েছিলাম? এখন কি সেই চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে? কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ একটি মৌলিক প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে ছিল, যে ভারতকে বাঁচানোর জন্য তাদের অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এই কারণেই আমি ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রাকে সমর্থন করছি। এই সমর্থন শর্তহীন নয়। কংগ্রেস কি শেষ তিন বছরে একটুও বদলেছে? আমাদের প্রজাতন্ত্রের ভিত্তির ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে আমি প্রতিরোধের সম্ভাবনা হিসেবে এখন বিশ্বাস করি? ... ...
ক্রিশ্চান গোষ্ঠীর সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের ইতিহাস নতুন না। গ্রাম স্টেনের কথা হয়তো অনেকেই মনে রেখেছেন। কিন্তু এখানে যে জিনিসটি নতুন, তা হল বিজেপির অ্যাজেন্ডার রাজনৈতিক সম্প্রসারণ। গোটা ভারতবর্ষে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে রুখতে নরম-হিন্দুত্বের ঝোঁক দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূলের গণেশ-পুজো থেকে শুরু করে কেজরিওয়ালের কাগজের নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপানোর প্রস্তাব পর্যন্ত। কিন্তু সংখ্যালঘুর 'দাঙ্গা' বাধানোর পরিকল্পনাকে রুখতে বিজেপি মডেলে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরা, বিজেপির গণমঞ্চের নিচে আসা, এটা বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম দেখা গেল। এর পরে কাউকে আদৌ বিজেপি-বিরোধী কেন বলা হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা বেনুগোপাল, একে 'অশুভ আঁতাত' বলেছেন। রাজ্যপালের চাপের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেছেন। যদিও তাঁর পার্টির অবস্থানও প্রশ্নচিহ্নের ঊর্ধ্বে না। আদানির বরাতপ্রাপ্তি কংগ্রেস জমানাতেই। ... ...
কীসের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে ভারতের স্বধর্ম আজ আক্রমণের মুখে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য নিবন্ধের প্রথম পর্বে আমি স্বধর্মের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বোঝাতে চেয়েছি যে স্বধর্ম আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতার সেই অংশ, যাকে আমরা সর্বোত্তম হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। অর্থাৎ মানব জীবনের আদর্শ হল স্বধর্ম খুঁজে বের করে তাকে অনুসরণ করা। এখন প্রশ্ন জাগে, একটি দেশের কি স্বধর্ম থাকতে পারে? আপনি যদি এর বাইরের রূপটি নিয়ে চিন্তা করেন, তবে কথাটি অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। ধর্ম তাই, যা ধারণ করা যায়। ধারণ করার জন্য প্রয়োজন চেতনাশীল ধারক। তাই একজন মানুষের ধর্ম থাকতে পারে। পশুপাখি বা গাছ-গাছালিরও থাকে। কিন্তু দেশের মত একটা অচেতন সত্ত্বার কীভাবে ধর্ম থাকতে পারে? দেশ যদি মানচিত্রে চিহ্নিত একটি রেখা হয়, তবে তার ইতিহাস এবং আবহাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু ধর্ম থাকতে পারে না। ... ...
বিজেপিকে টক্কর দিতে কংগ্রেসের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, প্রায় দুশো আসনে মুখোমুখি লড়াই। বাকি আঞ্চলিক দলদের অনেকটাই কম। কিন্তু বিগত ১৯-এর নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির কাছে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয় এবং তার ফলেই বিজেপি এতবড় সাফল্য পায়। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, যে, কংগ্রেস ৫০/৫২তেই আটকে থাকবে ও আঞ্চলিক বা অন্যান্য দলেরা এতটাই ভালো ফল করবে, যে, বিজেপি ২০০র নীচেই থেমে যাবে। গণিত কিন্তু তা বলছে না। ... ...
আগে বলা হত রাজনৈতিক দল গঠনে দলীয় কর্মী, দলীয় কর্মসূচী, দলীয় কার্যালয় ও দলীয় তহবিলের মত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশই ফাঁপা হয়ে যাওয়ায় এই চারটি স্তম্ভ এখন ক্রমশই আবছা হয়ে গেছে। একালে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল জনসমর্থন আছে, অর্থ ও মিডিয়ার বিশাল নেটওয়ার্ক আছে, নেতাদের দরবার আছে কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তা ও চর্চার বড়ই অভাব। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই, তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার মত উপযুক্ত কোনো পরিকাঠামো নেই। ... ...
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতে পারে না। দেশের সবথেকে নিচুতলার মানুষের সুখ-দুঃখকে না ছুঁতে পারলে ‘ভারত জোড়ো’ কেবলমাত্র একটা স্লোগান হয়েই থেকে যাবে। এটাও আমরা মাথায় রাখছি যে, ‘ভারত জোড়ো’-কে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে আমাদের একটি রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। সেটা হল দেশের মানুষের রোজগার সংক্রান্ত পরিসংখ্যান। গত ২ বছরে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু একই সময়ে মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ এবং আদানির সাম্রাজ্য ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দেশের বিত্তশালীদের মধ্যে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে শামিল হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে বিদেশে বসত গড়েছে। এইসব ধনী ভারতীয়রা আজকাল দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ‘হাম দো হামারে দো’, এটাই তো এই সরকারের অর্থনৈতিক নীতি। মোদি-শাহের এই আদানি-আম্বানিমুখী অর্থনীতিতে দেশ দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ না করে ভারত জোড়ার স্বপ্ন দেখাও বৃথা। নজিরবিহীন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার এই সময়ে ভারত ঐক্যবদ্ধ করার অর্থ হবে লুঠেরা-ডাকাতাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষকে অর্থনীতির কেন্দ্রেস্থলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। গর্বকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করা। ... ...
আমি বলছি না, যে ওপরে সেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত সত্য। আসুন আমরা অনুমান করি যে এইগুলি অসত্য ছিল, এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারপরেও, যখন মাটির তলায় চাপা দেওয়া এইসব অভিযোগগুলোকে ওপরে তুলে এনে তা জনসমক্ষে পেশ করা হয় এবং আইনি প্রকিয়ার মাধ্যমে কয়েক ডজন নথিপত্র, তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণ-সহ সেগুলো হাজির করা হয় – তখন আমরা কি আশা করতে পারি না, যে আদালত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করবে, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে? আমরা যদি ধরেও নিই, যে অভিযোগগুলি সত্য হলেও, সংশ্লিষ্ট বিচারকদের আচরণ বাইরের থেকে প্রভাবিত হয়নি – তারপরেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং আর্থিক নথি প্রকাশের নির্দেশিকা নিয়ে আসতে এই মামলাগুলি খতিয়ে দেখা কি সাহায্য করবে না? এবং যদি এই অভিযোগগুলিতে সত্যের কোনো উপাদান থেকে থাকে তবে এই ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু শুনানি কি বিচারবিভাগীয় দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি ও সংস্কারের সহায়ক হত না? ... ...
“বিদ্যুৎ (সংশোধনী) আইন ২০২২” নামক এই বিলের আসল কাজ হল বিদ্যুৎ বিতরণকে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তাদের মনমাফিক শর্তের ভিত্তিতে তুলে দেওয়া। বিদ্যুৎ ব্যবসার মোট তিনটে অঙ্গ আছে: কয়লা, জল বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন (জেনরেশন), হাইটেনশন টাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ (ট্রান্সমিশন) এবং স্থানীয় বা আঞ্চলিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ (ডিস্ট্রিবিউশন)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ২০০৩ সাল থেকেই প্রাইভেট কোম্পানি অনুমতি পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত অর্ধেক উৎপাদন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর একটুও আগ্রহ নেই। ... ...
দ্য প্রিন্টের ওপিনিয়ন এডিটর রমা লক্ষ্মী এই পদ্ধতিকে “বৃহৎ-ই-সেরা, প্রযুক্তি-সজ্জিত, চমকপ্রদ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটাই মোদি-র সযত্নে তৈরি করা এই ক্ষমতাবান ভাবমূর্তিকে বিকশিত করার তন্ত্র। যদি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধগুলির দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়, তাহলে ঠিক একইভাবে গ্র্যান্ড স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং আম্বেদকর মেমোরিয়াল হচ্ছে প্রাক-স্বাধীনতা পর্বের থেকে বর্তমান শাসকরা যা কৌশলে চুরি করে নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করতে পারে, তারই প্রচেষ্টা। সেন্ট্রাল ভিস্তা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি, তবে আমরা অনুমান করতে পারি, যে এটা একটা মহিমা প্রচার এবং বিস্ময়ে তাক লাগানোর প্রচেষ্টা হবে। সম্ভবত ওয়াল্টার বেঞ্জামিন ‘দেখনদারির রাজনীতি’ বলতে এইটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। যা জনসাধারণকে ফাঁকা বুলি দিয়ে প্রভাবিত করে, যা চারুকলা, বিনোদন এবং চমকের ভেল্কিতে মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতি ভুলিয়ে মাতিয়ে রাখে। ... ...
ভারতে খাদ্য হিসেবে জিনশস্য চালু করতে অনেক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। একমাত্র অখাদ্য ফসল হিসেবে জিনশস্য তুলোর চাষ ভারতে সর্বাধিক হয়। কিন্ত ওই তুলো বীজের তেল বনস্পতি তৈরীতে ব্যবহার হয়। এবার ভারতে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যার দোহাই দিয়ে এবার নতুন চাল। বছরে খরচ হবে প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা (indianexpress.com/article/india/cabinet-fortified-rice-cost-rs-2700-crore-per-yea…)। সব কিছুর মূলে রয়েছে পরোক্ষ ভাবে সেই বিশ্ব বানিজ্য চুক্তি ও ভারত মার্কিন কৃষি চুক্তি ২০০৫ (AKI চুক্তি)। ভিটামিন এ’র অভাবে রাতকানা রোগ, লোহার অভাবে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম হওয়ার জন্য রক্তাপ্লতা ও অনান্য অনুখাদ্য ও প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অপুষ্টি দুরীকরনের জন্য বিশেষ কিছু ফসলে প্রথাগত প্রজনন, বাইরের থেকে খাবারে লোহা ও জিঙ্ক মৌলের লবন মিশিয়ে ও জিন পরিবর্তনের দ্বারা ফসলের “পুষ্টিগুন” বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই ভাবে তৈরী “পুষ্টিকর ফসল” খেয়ে ভারতবাসীর অপুষ্টি দূর করা যাবে বলে দাবী করা হয়েছে। ২০১৬ সালের আগে থেকেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অনান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেছে। ২০২১ এর ১৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন অপুষ্টিতে ভোগা গরীব গরিব মহিলা ও শিশুদের জন্য ২০২৪ সালের মধ্যে রেশনে, অঙ্গনওয়াড়ী ও দুপুরের খাবার হবে জৈবিক ভাবে “পুষ্টি সমৃদ্ধ” চাল। এ হল “পোষান অভিযান” প্রকল্প। ... ...
এই হলেন দেবনুরা মহাদেব। এক আইকনিক কন্নড় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, জনসাধারণের বুদ্ধিজীবী এবং কর্ণাটকের এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক কর্মী। এতই মুখচোরা এবং আত্মপ্রচার বিমুখ, যে মাঝে মাছে সন্দেহ হতে শুরু করে, যে এই লোকটি জনজীবনে করছে টা কী। জনতার মনোযোগ থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রতিভা রয়েছে তাঁর। মঞ্চে তাঁকে হঠাৎই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা— কেউ হয়তো দয়াপরবশ হয়ে বলল: উনি ধূমপান করতে গেছেন। মহাদেব সর্বদা এবং বিরক্তিকরভাবে দেরিতে চলেন, এমনকি আমার তুলনায়ও, সবসময় একটু অপ্রীতিকর, হয়তো কিছুটা বিকৃতও। সেটা কিন্তু বোহেমিয়ান কবির যত্ন সহকারে পরিকল্পিত অসাবধানতা নয়, তাঁর জীবনের এক আলাদা ছন্দ আছে, আছে নিজস্ব পূর্বাপরবোধ, যা চিরাচরিত কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায়না। ... ...
তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন! ... ...
সকালবেলা। জোরে জোরে দরজায় বেল বাজছে। আপনি দরজা খুললেন। খুলেই কিছু অফিসারদের দেখতে পেলেন: "আমরা ইডি। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। এক্ষুণি।" আপনি তাদের সাথে তাদের অফিসে পৌঁছালেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়: "আপনি কি গত বছর আপনার একটা প্লট গুপ্তজিকে বিক্রি করেছিলেন?" আপনি বললেন: "হ্যাঁ, আমার নিজস্ব প্লট ছিল, কোনো বিতর্কিত সম্পত্তি ছিল না। দু নম্বরি করে বিক্রি করিনি, কোনো কালো মামলাও নেই। সঠিক পন্থায় নথিভুক্ত, সাক্ষী, সমস্ত প্রমাণও আছে আমার কছে।" তারা আপনার প্রমাণের প্রতি একটুও আগ্রহী নয়: "আপনি কি জানেন যে গুপ্তা, যার কাছে আপনি প্লট বিক্রি করেছেন, ব্যবসায় কারচুপি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ৪২০ র মামলা আছে?" আপনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন: "দেখো ভাই, আমি তার কাছে প্লট বিক্রি করেছি, কন্যাদান করিনি। সম্পত্তির এজেন্ট চুক্তিটা করেছে। পেমেন্ট চেকের মাধ্যমে এসেছে। তার সাথে, তার পরিবার বা ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। মাস কয়েক আগে আমি খবরের কাগজে পড়লাম যে তার বিরুদ্ধে কিছু ফর্ম রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো আমাদের চুক্তির পরে ঘটেছে।" আপনি মনে করলেন,যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। বিষয়টা মিটে গেছে। কিন্তু তখনই আপনার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়বে: "মনে হচ্ছে আপনি PMLA (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) আইনটার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আপনি এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী। কারণ অপরাধের আয় আপনার পকেটে পৌঁছেছে। কাজেই আপনিও একজন অপরাধী। এই অপরাধের দরুন আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করছি!" ... ...
আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে। ... ...