এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • তুমি তো প্রহর গোনো, তারা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি

    অতনু চক্রবর্তী 
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৭ জুলাই ২০২২ | ১০৫৮২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৪ (৭ জন)
  • রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট  তোলপাড় তুলে উদ্ধার কোটি কোটি টাকা,  দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার  পার্থ চট্টোপাধ্যায় যিনি রাজ্য মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি । শুধু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীই নন, তিনি তৃণমূল দলের বিরাট মাপের এক নেতা, শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির চেয়ারম্যান ও বটে । শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যার উপর দল  সঁপেছিল তিনিই এতো বড় কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন --- নির্মম পরিহাসের এর থেকে বড় উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে রয়েছে কিনা সন্দেহ আছে । তাঁর সাঙাততন্ত্রের  কদর্য চেহারাও  দেখলো গোটা রাজ্য। কিভাবে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিলাসবহুল আবাসন থেকে উদ্ধার হল গুপ্তধন, কোটি কোটি টাকা,  অঢেল বিদেশি মুদ্রা ও সোনার অলঙ্কার! মিলল কি বিপুল স্থাবর  সম্পত্তির হদিশ । কুৎসিত বৈভবের নির্লজ্জ প্রদর্শনী চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল ক্ষমতার অলিন্দে থাকা এই সমস্ত হোমরা চোমরা নেতা - মন্ত্রী কত বড় বহরের অন্যায় - অবিচার - কে গোপনে সংগঠিত করেছিল বছর বছর ধরে। এতোবড় দুর্নীতির সাথে নাম জড়ানো  সত্ত্বেও রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে পার্থবাবুকে বরখাস্ত করা হল না। বোঝাই গেল, দুর্নীতির প্রশ্নে শূন্য সহনশীলতার নীতি আমাদের নীতিবাগিশ  মুখ্যমন্ত্রীর না- পসন্দ। আর তারপরেও সবাইকে  অবাক করে  মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি নাকি এই সমস্ত কিছুর বিন্দু - বিসর্গ ও জানতেন না!!  

    কিন্তু, এতো বড় অন্যায়ের শিকার যাঁরা হলেন, তাঁদের কি হবে?  রাজ্যের সাধারণ ঘরের অগুনতি  ছেলে মেয়েরা বহু পরিশ্রম করে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় নাম ওঠার পরও দেখলেন তাঁদের চাকরি হলো না। উল্টে তা বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেল।   এদিকে, ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।  বঙ্গ - সম্মান প্রদানের মঞ্চকে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের মঞ্চে পরিনত করে অবলীলায় জানালেন যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি আগে কিছুই জানতে পারেননি। অথচ কে না জানে, ২০১৯ সালের এসএলএসটি - র মেধা তালিকায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে- র নাম হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসল আর তিনি চাকরি পেয়ে গেলেন "যাদুকরী"  স্পর্শে।  গেজেট অনুযায়ী নিয়োগ না করার প্রতিবাদে ২০১৯ -র ২৮ শে ফেব্রুয়ারি কলকাতার মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে ' যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ' এর ব্যানারে দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে শুরু হয় অনশন আন্দোলন। ২৯ দিনের মাথায় হঠাৎ অনশনস্থলে আবির্ভূত হলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি এসএসসি কে ঘুঘুর বাসা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সেখানে গঠন করেন একটা কমিটি ---- আর, সেখানে তাঁদেরই রেখে দিলেন  যাঁরা ইতিমধ্যেই দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত।  কে না জানে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এসএসসি - র মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে যে পরীক্ষা হয়, তাতেও লেপ্টে ছিল দুর্নীতির বড়সড় অভিযোগ। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে যে এলো, তাও কি মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না?  হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি - র নিয়োগ দুর্নীতি যাচাই করতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এটাও কি জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী? হাইকোর্ট নিযুক্ত বাগ কমিটি এসএসসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে আঙুল তুলেছিলেন, তাও কি শুনতে পাননি মুখ্যমন্ত্রী?  না কি শুনতে চাননি? একদিকে   ক্ষমতার দম্ভ ও দাপটের মিশেল, অন্যদিকে ঠগ খুঁজতে দল উজাড় হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নীতিহীন আপোষ করেছেন দুর্নীতির সাথে। 

    ২০১৫ সালে সংঘটিত আপার প্রাইমারি প্যানেলের মধ্যে বিরাট অসঙ্গতি থাকায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল অবিলম্বে তা সংশোধন করতে।   আজও ওই প্যানেলের নিয়োগ সম্পন্ন হলো না। ফলে, প্যানেলের মধ্যে থাকা চাকুরিপ্রার্থীরা ২০১৫- ২০২২ - --- এই দীর্ঘ সাত বছর ধরে যে স্বপ্ন সযত্নে লালন পালন করেছিলেন, তার ভ্রূণ হত্যা হল। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসলেও তার সমাধান আজ পর্যন্ত হল না। এদিকে,  সংকট থেকে পরিত্রাণ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রী আদালতের দিকে দায় ঠেলে দিলেন। হাইকোর্ট ও শিক্ষা সচিবের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কোন কোন শূন্যপদ পূরণ আদালতের রায়ের কারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা হলফনামা পেশ করে জানাতে। 

    সাম্প্রতিক দুর্নীতি কান্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রাজ্যে আতঙ্কজনক কর্মহীনতার ছবি। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় ঘনিয়ে ওঠা সরকার - সৃষ্ট নৈরাজ্য, পড়ুয়া -পিছু শিক্ষকদের লজ্জাজনক ঘাটতি, রাজ্য সরকারি - আধা সরকারি - স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণে শূন্যপদ না পূরণ করার আখ্যান। পড়ুয়া - শিক্ষক অনুপাতের চরম দৈন্যতা আজ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গিলে খাচ্ছে। সংবাদে প্রকাশ, মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাকার ঘাট জুনিয়ার হাই স্কুলে উচ্চ প্রাথমিকে ৭৭২ জন পড়ুয়া পিছু শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১! এটা কোন ব্যতিক্রমী উদাহরণ নয়। বহু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মাত্র এক বা দু' জন শিক্ষকের উপর পঠন পাঠনের পুরো দায়ভারটি ন্যস্ত। এমনও দেখা যায়, সেই এক বা দু'জন শিক্ষক ছুটিতে গেলে স্কুলের গ্রুপ -  ডি কর্মীকে ক্লাস নিতে হয়। কখনও বা আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করে এই অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলে। শিক্ষার প্রতি এই নির্দয় অবহেলা অপরাধসম। শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলে ক্লান্তিহীন বিজ্ঞাপন যতই দেওয়া হোক না কেন, এই রাজ্য সরকার তিলে তিলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছয় মাস পার হওয়া সত্ত্বেও  ২০২১ সালের টেট লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা কর্মপ্রত্যাশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুই করা গেল না। আরও উল্লেখ্য, এই নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কোন ধরনের মামলাই দায়ের করা হয়নি।

    শুধু পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবই নয়, সরকার এবং সরকার - পোষিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ, পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। নেই পর্যাপ্ত স্কুল ঘর, কোথাও খোলা আকাশের নীচে চলছে পঠন পাঠন, কোথাও শিক্ষক নেই, নেই শৌচাগার - পরিশ্রুত পানীয় জল - এমনই করুন অবস্থা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। গোটা শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে কত শূন্যপদ রয়েছে ( শিক্ষক - অশিক্ষক পদে)  তার কোন সরকারি হিসাব আজ পর্যন্ত পেলনা রাজ্যবাসী। অথচ, তুমুল মস্করা করে, ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন রাজ্যে নাকি ৩০ হাজার চাকরি তৈরি! সরকার নাকি শুধুমাত্র নিয়োগ পত্র দেওয়ার অপেক্ষায়। আর, ঠিক ক'দিন আগে সংবাদে প্রকাশিত হল রাজ্যে কর্মসংস্থানের আরেকটি মর্মান্তিক ছবি। সংবাদে প্রকাশ, মালদায় সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্র পরিচারিকাদের জন্য একটা প্রশিক্ষণ শিবির সংগঠিত করে, যাতে অংশ নেয় ৪০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মহিলারা। 

    এতো বড় একটা ঘটনার পরও রাজ্যের নাগরিক  সমাজ নীরব নিশ্চল! ক্ষমতার উদ্ধত চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন তোলার মূল্যবোধ এ রাজ্যে যেন বড়ই বিষম বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, যে সমস্ত টগবগে প্রাণ কাউকে তোয়াক্কা না করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশকে পরিনত করেছেন তাঁদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের তীর্থস্থান, এক গণ আদালত, এক গণ সংসদে -- সেটাই আগামীতে রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনবে এক ফুটন্ত সকাল! সেই অবিচল, অবিনশ্বর বিশ্বাসের উপর ভর করেই উত্তাল সমুদ্রে বেয়ে চলেছে নবজীবনের তরনী। সমস্ত বাধা বন্ধনকে উপেক্ষা করে।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৭ জুলাই ২০২২ | ১০৫৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:a09:4741:0:6a:bed:6001 | ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৬530856
  • দীপ | 2402:3a80:a09:4741:0:6a:bed:6001 | ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৮530857
  • আজ রাজ্য পুলিশের এক সোর্স আমাকে পাঠালেন নীচের এই ইমেল নোটিসটা । 
    অবিশ্বাস করার মত নয় বলে তুলে দিলাম পুরোটা ।
    অভিষেক ব্যানার্জি আজ দত্ত ফুলিয়ায় যাচ্ছেন তার জন্য মোট নটা থানা থেকে ৬০০ সিভিক ভলেন্টিয়ার তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । 
    গাড়িতে করে সকাল সাতটার মধ্যে তাঁদের পৌঁছতে হবে দত্ত ফুলিয়ার নির্দিষ্ট ওপি তে । ডিউটি হয়ে গেলে তাঁদের গাড়ি করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে ওই নটি থানায় । সারা দিনের খাওয়ায় ব্যবস্থা নিশ্চিত ভাবে থাকবে জেলা পুলিশের।
     
    অভিষেকের সভায় এর বাইরেও থাকবে জেলা পুলিশ ফোর্স, র‍্যাফ, কমান্ডো বাহিনী, মহিলা পুলিশ, এস ডি পিওর বাহিনী, কনস্টেবল, ইন্সপেক্টর, আই সিরা, ওসি রা, হোমগার্ডরা, টেম্পোরারি হোমগার্ড, ট্র্যাফিক ফোর্স, এস বির লোকজনেরা । 
    সংখ্যাটা কত হবে সব মিলিয়ে ?
     
    আমার সোর্স যা বলল তা এইরকম - ন্যূনতম দেড় হাজার ফোর্স নামবে । নির্বাচন না থাকলে এই সংখ্যা আড়াই হাজার পৌঁছায় । 
     
    সব মিলিয়ে খরচ কত হয় ? বললেন সারাদিন হাজার দেড়েক এই ভি আই পি ফোর্স রাস্তায় থাকলে ন্যূনতম লাখ তিরিশেক খরচা সরকারের । 
    যখন আড়াই হাজার ফোর্স নেতাকে পাহারা দিতে রাস্তায় থাকে খরচটা তখন মেপে নিন ।
     
    বললেন অভিষেক যখন নব জোয়ার যাত্রা করেছিল রাজ্যের কোষাগারের কয়েক শ কোটি টাকা গেছে । সেই হিসেব গুলো আপনাকে আগেও দিয়েছি ।
     
    #### ####
     
    সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় 
    (৯৮৩০৪২৬০৭৮)
  • দীপ | 42.110.147.40 | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩১530951
  • দীপ | 2402:3a80:a01:545c:0:c:a9f7:2301 | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০৭530971
  • আমি এই প্রক্রিয়ার অংশ।এই দুর্নীতির জন্যে স্কুলে কাউন্সেলিং হয়ে গিয়েও আমি স্কুল যেতে পারছি না কারন এখনো পুরো প্রসেসটা কোর্টের বিচারাধীন।আমার একাডেমিক সবটাই ফার্স্ট ক্লাস থাকা সত্বেও ১১/১২  টা পাইনি।আমাদের upper প্রাইমারী প্যানেল প্রথম ক্যান্সেল হয়েছিল,তারপর আবার নতুন করে ভেরিফিকেশন,ইন্টারভিউ,স্কুল চয়েস কাউন্সেলিং হয়ে গিয়েও স্কুলে যেতে পারছি না....
    দুর্নীতি দুর্নীতি দুর্নীতি।এবং সদিচ্ছার অভাব।অথচ আমারই গ্রামের এ ৩ জন ওই টাকা পয়সা দিয়ে pg ও একজন ভুয়ো PH সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করেছে।যদিও এদের নাম আগেই সিবিআই থেকে বেরিয়েছে।আমরা শুধু হতাশ হয়ে দেখে গেছি,আর কলকাতার রাজপথে অবস্থান,ধরনা,মিছিল সবই করছি,কিন্তু চাকরিতে জয়েন করতে পারছি না।
    এভাবেই চলছে গত ৬/৮ বছর.....
    আবার আমার অনেক বন্ধুও আজ চাকরিহারা,ওরা তো ঠিক ভাবেই পেয়েছিল,এর দায় কে নেবে?????
     
    জনৈক চাকরিপ্রার্থীর অভিজ্ঞতা! 
    অবশ্য এরপরও কোনো কোনো মহাবিপ্লবী দুর্নীতি খুঁজে পাবেন না!
  • দীপ | 2402:3a80:a17:3470:0:8:3125:a701 | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৯530978
  • দীপ | 2402:3a80:a32:7032:0:60:403d:d201 | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৪530983
  • পরবর্তী অশনিসংকেত।
  • দীপ | 2402:3a80:a32:7032:0:60:403d:d201 | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৫৩530984
  • হাইকোর্টের রায় এবং বাস্তবতা---১
    ----------------------------------------------
    প্রথমত, অবৈধ ও অযোগ্যদের নিয়োগ করে রাজ্যের পড়ুয়াদের শিক্ষণ পদ্ধতি লাটে তুলে দেওয়া হয়েছে। 
    দ্বিতীয়ত, ওই বেআইনি নিয়োগকে আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্য গোটা ক্যাবিনেট মন্ত্রিসভা 'সুপার নিউমেরিক' (অতিরিক্ত শূন্যপদ) পোস্ট তৈরি করল। এটা কী কম বড় অন্যায়!
    তৃতীয়ত, হাইকোর্ট বলা সত্ত্বেও এসএসসি তার নিজের নিযুক্তদের মধ্য থেকে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা পৃথক করে তৈরি করে আদালতে জমা দেয়নি। ফলে সবার চাকরি বাতিল হল। তাই যোগ্যদের বিপাকে ফেলার দায় এসএসসির ও রাজ্য সরকারের।
    চতুর্থত, নিজেদের পাপ ঢাকার জন্য অরিজিন্যাল ওএমআর (উত্তরপত্র) সিট নষ্ট করে ফেলেছে এসএসসি এবং মিরর সিটও ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ,  যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করবে  সিবিআই এমন কোনও পন্থাই জীবিত রাখেনি এসএসসি।
    পঞ্চমত, ১৬ কলা ছাড়িয়ে দুর্নীতির ১৭ কলার আশ্রয়ে শিক্ষকতার মতো চাকরি বিক্রি করেছে।
    ষষ্ঠত, যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা নিয়োগের দাবিতে  তিন বছরেরও (১১৩৫ দিন) বেশি সময় ধরে ঝড়ে জলে রোদে শীতে কলকাতার রাজপথে পড়ে আছেন। অথচ তাঁদের আজও নিয়োগ করা হয়নি।

    *** তারপরেও যাঁরা হাইকোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনায় হা হুতাশ করছেন তাঁদের শুভবোধ ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জাগবেই।
     
    সংগৃহীত।
  • দীপ | 2402:3a80:a32:7032:0:60:403d:d201 | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৬531002
  • হাইকোর্টের রায় এবং বাস্তবতা ---- ২
    -------------------------------------------------
    অবৈধ নিয়োগের অপরাধে গত ২২ এপ্রিল এক লহমায় ২৫৭৫৩ জনের চাকরি খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। অর্থাৎ প্রায় ২৬ হাজার পরিবার (মুখমন্ত্রীর পাটিগণিত অনুসারে অবশ্য এক-দেড় লাখ পরিবার) দুম করে পথে বসে। আর তার জন্য নানা মহলে নানা প্রতিক্রিয়া, মনস্তাপ ও অভিশাপ। কেউ সরবে, কেউ নীরবে হাইকোর্টকে শাপশাপান্ত করছেন। কেউ এই রায়ের সঙ্গে ২০২৪ সালের লোকসভার ভোট ও বিজেপির অনুসঙ্গ টেনে আনছেন। কেউ ডিভিশন বেঞ্চকে হৃদয়হীন বলে কাঠগড়ায় তুলছেন। কিছুটা অন্ধের হস্তিদর্শনের মতো। দলদাস, বা অনুপ্রাণিতদের কথা ভিন্ন। কারণ, তাদের কোনও নিজস্ব চোখ নেই, মুখ নেই, কান নেই। দল যখন যে ভাবে দেখায়, তখন সেভাবেই দেখে, শুনে, ভাবে ও বলে। তাদের স্বাধীন চৈতন্য নেই। তারা চেতনাহীন দলীয় রোবট মাত্র। অতঃপর অনুপ্রাণিত ও দলদাসদের কথা তাই বাদ থাক।

    খাতাকলমে ২০১৬ সালের এসএসসির ব্যাচ হলেও নানা প্রক্রিয়া পদ্ধতির পর নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৪ বছর আগে। তার ২ বছর পর এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রথম শুনানি হয়। একদিকে বিচারক আর বিপরীতে রাজ্য সরকার। এই প্রবল দ্বৈরথের জেরে কয়েক বার ডিভিশন বেঞ্চ ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা যায়। আবার ফিরেও আসে। এ ভাবে জনগনের দেওয়া করের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়। কথা উঠে, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ও কখনও বৈধতা দিতে এই কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে ও করছে রাজ্য সরকার এবং এসএসসি। অবশেষে রাজ্য সরকারের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ মামলা গ্রহণ করে।

    ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। শুনানি শেষে ৬ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে হবে। এই ৬ মাসের মধ্যে রয়েছে ২ মাসের সিবিআই তদন্তের সময় সীমা। ৬ মাসের ওই সময় সীমা অতিক্রম করার ১৭ দিন আগে গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২৫৭৫৩ জনের চাকরি খারিজ করে দিয়ে নতুন ভাবে নিয়োগের নির্দেশ দেন। ফলে সহজেই অনুমেয়, এই রায় কোনও রাজনৈতিক দলের নির্দেশে নয়। এই রায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ৬ মাস আগের নির্দেশ মেনে। ফলে এই রায়ের বিষয়ে বিজেপি, বা ভোটের প্রসঙ্গ ফালতু এবং কাকতালীয়। আমি কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার কারণে ঘোরতর বিজেপি বিরোধী। ঘোষিত ও সক্রিয় বিরোধী। তাই বলে সত্যটা মিথ্যা হতে পারে না। মিথ্যাটা সত্য হতে পারে না।

    চাকরি বাতিল হওয়া ২৫৭৫৩ জনই অযোগ্য হতে পারে না। পরিবর্তিত সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক দুর্গতির কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে ঘুস দিলেও সবাই অযোগ্য নয়। তবুও দুঃখজনক ভাবে সবার চাকরি খারিজ হয়েছে। জনগণের করের টাকায় দুর্নীতিকে বৈধ করার তাগিদে বার বার সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ ও সুপ্রিম কোর্টে না দৌড়িয়ে এসএসসি ও সরকার যোগ্য-অযোগ্য তালিকা পৃথক করে আদালতকে জানালে এই দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্ম হত না। এমনকি ১৭ কলায় দুর্নীতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, আদালত নিজে যোগ্য-অযোগ্য পৃথক করবে তার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, প্রথমত আদালতের সেই পরিকাঠামো নেই। দ্বিতীয়ত, ওএমআর সিটেরই যথাযথ হদিশ নেই। তৃতীয়ত, এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে যে, তা খড়ের গাদায় সূচ খাোঁজার সামিল। তাই, প্রকৃত যোগ্যদের আজ এই করুণ পরিণতির জন্য আদালত নয়, দায়ি সরকার, এসএসসি ও পর্ষদ। 

    দুর্নীতিগ্রস্থদের আইনি সিলছাপ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ক্যাবিনেট মন্ত্রিসভার বৈঠকের মতো দুর্নীতি বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। কারণ রক্ষকরাই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অন্যায়কে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "সবটা কি আমি করি! সবটা আমি করি না।" এত বড় ডাহা মিথ্যা আর কী হতে পারে! যোগ, বিয়োগ না-জানাদের চাকরি দিয়ে এবং বছর আটেক ধরে মামলায় নিজেদের জড়িয়ে রেখে রাজ্য সরকার যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ না করে বাংলার সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার কফিনে পেরেক এঁটেছেন। 

    এই অবস্থায় বিদ্বজনদের সরকারি দু্র্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়া এই সময়ের জরুরি ডাক। কিন্তু খির খাওয়ার লোভে অধিকাংশ কবি, শিল্পী, চিত্রকর, সাহিত্যিক, অভিনেতা, গায়কের মুখে এখন সেলোটেপ। এটাও কম দুর্নীতি নয়। এঁরা আজ 'সমাজ-বিবেক'-এর ভূমিকা ত্যাগ করে দুর্নীতির নির্লজ্জ দালালিতে নেমেছে। চলতি ভাষায় তারা বেহায়া লোলুপ।

    ২৫৭৫৩ জনের মধ্যে যোগ্যদের চিহ্নিতকরণ করে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যপারে উপায় বের করতে আদালতের পুর্নবিবেচনা জরুরি। নইলে বিনাদোষে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে। #
     
    সংগৃহীত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন