গরু আমাদের রাষ্ট্রমাতা। সে কেউ বলুন চাই না বলুন। আদি-অনন্তকাল ধরে আমরা গরুকে মাতৃস্থানীয় করে রেখেছি। তাই, গোমাতা নিয়ে কেউ আমাদের বোকা বানালে সেই নিয়ে আমাদের সরব হয়ে ওঠা দরকার। প্রসঙ্গতঃ, গত কয়েক দিন ধরে চীনের কিছু গুপ্তচর আমাদের দেশের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির মাঠে-ঘাটে গরু সেজে অবাধ বিচরণ করছিল। দেশের খবর পাচার করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। ধরা পড়ে তারা এটা স্বীকার করেছে। এরকম ভাবে গরুর ছদ্মবেশ ধারণ করে আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে। ... ...
বাংলার ভাগ্যাকাশে এখন ব্যোমকেশের দুই সত্ত্বাধিকারী, ঈশেন আর সত্যবাহন, ইয়ে মানে দত্তবাবু আর শীলবাবু। দত্তবাবু ল্যাপ শুরু করেছিলেন আগে, অন্যজন সদ্য যোগ দিয়েছেন। ওনার আগের ফিল্মটা দেখে মনে হয়েছিল, বজরা টজরা এনে ট্রিবিউট দিয়ে ফাটিয়ে দিতে চাইলেও, জ্ঞানের বহর প্রথমজনের চেয়ে একটু কম হওয়ায় হয়তো একটু বেশি সহনীয় হবে। কিন্তু এই পর্ব দেখে উপলব্ধি: এটা বাস্তবে দত্ত vs দত্ত। আসলে ট্রিবিউটের মধ্যেই কেলোটা লুকিয়ে ছিল। এতে উনি ট্রিবিউট দিয়েছেন স্বয়ং অঞ্জন দত্তকেই, একটু আদিবাসী নাচে আগন্তুক, রেসকোর্সের বাইরে সীমাবদ্ধ ইত্যাকার কিছু হালকা সত্যজিৎ বাদ দিলে। লোকেশন সেই এক ডুয়ার্স, ভিলেন সেই এক কৌশিক, গ্রেফতারির আগের সেই এক ধাঁচের বক্তৃতা, এবং জ্ঞানের বাটখারা। ফিরে এসে মনে হল ন্যাশনাল এনথেম ও ন্যাশনাল সং দিয়ে মোড়া এই সিনেমাটিতে কী কী চমক লাগলো, তারও লিস্টি করা দরকার। শুরুতে ড্রোন ক্যামেরায় রেল লাইনের বিহঙ্গদৃষ্টি অতি চমৎকার, কিন্তু তারপরেই চমক। রাইটার্সে বসে আছেন স্বয়ং অরিন্দম শীল, টেবিলে লেখা 'মুখ্য সচিব'। এবং তার পর থেকেই সত্যবতী, অজিত, বড় দারোগা সবাই বিন্দাস বলে যাচ্ছে মুখ্য সচিব অমুক, মুখ্য সচিব তসুক। ১৯৪৮এর আগস্টের আগেই 'মুখ্য সচিব' শব্দের এরূপ প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা দেখে তাক লাগার শুরু। আমার সহদ্রষ্টাকে বললাম, ইয়ে তখনও মাউন্টব্যাটেন আছেন, সংবিধান আসতে বহু দেরি তো, তিনি বললেন, চুপ করে দ্যাখ। দেখলাম। এবং এটা হজম করার পর আর কষ্ট হল না যখন দেখলাম সেই মুখ্য সচিবের ঘরের দেওয়ালে অখণ্ড বাংলার ম্যাপ, তিনি নিজেই সান্তালগোলার তদন্তের দায়িত্ব দিতে তো এসেইছেন সরকারের তরফ থেকে, সেই সান্তালগোলার সম্ভাব্য কোন কোন ব্যবসায়ী আসামী হতে পারেন তার লিস্টিও তিনিই পকেটে নিয়ে ঘোরেন, দারোগা নন, এসপি নন, এমনকি সিপিও নন। তা সেই তথাকথিত নগণ্য জায়গার ওসিকে সরাসরি নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব, এবং তার পরেও সেই সচিবের পাঠানো খাস গোয়েন্দার সামনে সরাসরি তাচ্ছিল্য, হুমকি ইত্যাদি দেখাতে সাহস করেন আংরেজ জমানার সেই দারোগা। চুপ করে দেখা ছাড়া উপায় নেই। আমি তো কোন ছার, ব্যোমকেশ-ই চুপ। ... ...
দেশপ্রেমীঃ সীমান্তে সেনারা মারা যাচ্ছে আর তুমি দেশের জন্য একটু লাইনে দাঁড়াতে পারবেনা? নির্লজ্জ! জেএনইউ! দেশদ্রোহী! জেএনইউ ছাপ ২ঃ ভাই, দশ টাকা ধার হবে? চা খাবো। যাদবপুর ছাপঃ ভাই, দশ টাকা ধার হবে? চা খাবো। পোতিবাদ করে গলা শুকিয়ে গেছে। ... ...
মহানগরের পর্দা সরালেই মহারগড়ের প্রসেনিয়াম! কখনও আপনি দর্শক, কখনও আপনিই নটরাজ। হয় ফ্যালফ্যাল, নতুবা, স্বপ্নের বডি কাঁধে নিয়ে তপ্ত-মটকা ধেই ধেই। কোনও নাট্যকার নেই। যখন ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে যা ইচ্ছে। সিগনাল-তোড়ু বাইক থেকে ভিড়মি-জাগানো মাইক, কোলকাতা পুলিশের কেচ্ছা হইতে পাবলিক প্লেসের পেচ্ছাপ, দাদার হালুম টু চাঁদার জুলুম – মোদ্দা প্লট, কল্লোলিনীর কল খারাপ, আর মিস্তিরিরও ফোন অফ। ছিল তিলোত্তমা, হলো তিলোঃট্রমা! অতেব, টানার যেমন হ্যাঁচড়া, খিচুরির যেমন ছ্যাঁচড়া, কলকাতার তেমন ক্যাচড়া। জড়িয়ে পড়লেন দীপাংশু আচার্য ... ...
মুশকিলটা এইখানে, যে এই ধরণের কাজে গণতান্ত্রিকভাবে চাট্টি আলোচনা, বা কথা বলাটা গ্রাহ্য নয়। পাবলিক বলতেই পারে, এইসবই তারা করে আসছে শতশত বছর ধরে, কিন্তু বললেই শুনতে হবে, এরকম ধাষ্টামো করার সাহস ও শিক্ষা আমাদের থাকবে কেন? ছাগুলে পাবলিকের পাগুলে কথা নাহয় বাদই দেওয়া হলো, কিন্তু এমনকি আমাদের সিভিল ইÏনিয়ার ভাইবোনেরা ও উচ্চপদাসীন বিশেষজ্ঞরাই বা খবরের কাগজে - টিভিতে-মায় ফেসবুকে নিজেদের মতামত দেখে পুলকিত হয়ে ওঠার নাবালক লোভে বিশু থেকে শিশু হয়ে উঠছে আর আমরা সেই দেখে ধিনিকেষ্ট নাচ জুড়েছি। এভাবে হয় না। এজলাসে এই মোকদ্দমা উঠলে এই এতগুলি পণ্ডিতের রায় শুধু এক্তিয়ারবহির্ভূতই নয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসাবে গণ্য হতে পারে। ফলতঃ, আমোদগেঁড়ে জনতা নিজেদের মধ্যে প্রতর্ক করুক। কিস্যু আসে যায় না। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্পূর্ণ ঠিক কথা বলে থাকলেও না। সোসাল মিডিয়া আর খবরের কাগজে চ্যানেলে বসে এসব হয় না। তাই অন্ততঃ সাংবাদিক ভাইবোনদাদাদিদিবেয়াইবোনাই সকলকেই করজোড়ে অনুরোধ, এই বিশেষজ্ঞ মতামতটা দেওয়া একটু তামাদি রাখুন না। অনুভব করছি, তাই বলছি। ... ...
২০১৯ এ তাঁরা ক্ষমতায় ফিরবেন কিনা এই প্রশ্ন তোলায় প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। এইসময় দৃশ্যতই ঘর্মাক্ত প্রধানমন্ত্রীকে গলায় জড়ানো জাতীয় পতাকায় ঘাম মুছতে দেখা যায়। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য ইশারা করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আবেগঘন কণ্ঠে ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গানটি পরিবেশন করেন। ... ...
তবে উপায়? বিকাশ প্রথমে ওয়াটার থেরাপির ধান্দা করলেন। দিনে আট গেলাস জল পেটে ঢুকতে লাগলো, মদ্যপান বন্ধ, আর প্রতি ঘন্টায় দুচোখে জলের ঝাপটা। এতে করে কোনও লাভ হল না, বার বার বাথরুম যাবার প্রয়োজন পড়ল, ঝাপটা দিতে গিয়ে জামা ভিজে একশা হল, সন্ধ্যায় ইয়ারবক্সীরা 'উল্লাস' বলার একটি সাথী আপাততঃ হারিয়ে সামান্য বিমর্ষ হলেন। রাতে ঘুম এল না। ঘুম আসার জন্য সানন্দায় কানে কানে পড়তে গিয়ে মাথাটা শেষে খেলল। বিকাশবাবু গোপনে ওনার সহধর্মিনীর প্রসাধন সামগ্রী হাঁটকে শসা, লেবু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভেষজ দেওয়া ক্রিম চোখে লাগাতে শুরু করলেন ও কদিনের মধ্যেই ক্রিম সরাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। লাগিয়ে ফল হল কচু, হাতি আর ঘন্টা। চৌর্যের কোনও কারণ বাৎলানো দায় হল, গৃহিনীর মুখনাড়া সার হল, বিবিজান লবেজান করে দিলেন। কিছুতেই কিছু হল না দেখে মরিয়া বিকাশ খুব ভোরে উঠে আদা-মধু আর কল ওঠা ছোলা মুখে ফেলে দু-আঙুলে টেনে টেনে চোখের চামড়ার ব্যায়াম আরম্ভ করলেন। এতে তাঁর জীবনযাত্রা পূর্বের চেয়ে স্বাস্থ্যকর হল, তর্জনীর গাঁটে ব্যথা হল, কিন্তু চোখের কোনও রদবদল ঘটল না। হতাশ, ভগ্ন, ভীত, রোগগ্রস্ত বিকাশ সেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। ... ...
খল (নায়িকা)- সাধারণত নায়কের বড় পিসেমশাইয়ের ছেলের বা আপন জামাইবাবুর বা ভালোমানুষ ভাইয়ের খারাপ মানুষ বউ বা নায়কের প্রাক্তন প্রেমিকা যিনি ওই বড়লোকবাড়িতেই থাকেন বা সকালে উঠেই দাঁত মাজতে মাজতে চলে আসেন। বৌদির রান্নায় বেশি নুন ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার মত জিনিয়াস আইডিয়াগুলো যাদের মাথা থেকে বেরোয় কিন্তু স্ত্রৈণ স্বামীরা এক্সিকিউট করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ধরা পড়ে যান তারপর এনাদের নির্দেশেই পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চান। হাপুশ কেঁদে স্বামীকে জেলের লপসি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান। এরপর কয়েকদিন চুপচাপ থেকে আবার উক্ত কাজগুলো শুরু করেন। ... ...
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন চলে গেল। একজন রবীন্দ্র গবেষক হিসেবে কিছু একটা লেখা দরকার। আমার রবীন্দ্রগবেষণার শুরু ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতি নিয়ে এক ধ্রুপদি গবেষণার মাধ্যমে যা ২০১১ সালের মে মাসে এখানেই প্রকাশিত হয়েছিল। ধ্রুপদী শব্দের অর্থ বিজ্ঞ পাঠকেরা নিশ্চয়ই জানেন কিন্তু যদি কেউ থেকে থাকেন যিনি জানেন না তার জন্য বলছি ধ্রুপদী শব্দের অর্থ হল গুরুগম্ভীর, চিরায়ত, ক্লাসিকাল ইত্যাদি। উল্লেখ্য, শব্দের অর্থ আমি এইমাত্র অনলাইন অভিধানের সাহায্য নিয়ে জানলাম। এর আগে শব্দটির সাথে পরিচয় ছিল কবি হেলাল হাফিজের কবিতার খাতিরে, হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি নয় তো গিয়েছি হেরে থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা কে কাকে গেলাম ছেড়ে। ... ...
ডঃ পাত্র এর একটা বিহিত বা হেস্তনেস্ত করার দায়িত্ব নিলেন। অবশ্য এতে ওনার একটা অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টও ছিল। সময়সুযোগ থাকলে একদিন তিনিও পুরোদস্তুর গবেষণা করতে পারতেন, শুধু ছাত্র ঠেঙিয়েই চাকরির জীবনটি চলে গেল। সে যাই হোক, উনি অনেক আঁকজোঁক করে কিচ্ছু বের করে উঠতে পারলেন না। এই অবস্থায় উনি একদিন কাকভোরে উঠে লেকের মাঠে গাছপালার ঝোপে বান্ধবগড় থেকে কেনা ক্যামোফ্লাজ জ্যাকেট পরে ঘাপটি মেরে কী হয় দেখার জন্য বসে রইলেন। প্রথম দু দিন কিচ্ছু দেখতে পাওয়া গেল না। সুস্থ শরীর ব্যস্ত করে রাতের ঘুম নষ্ট হল। কিন্তু তাতে ডঃ পাত্র দমলেন না। এক সময় তিনি ডক্টরেট করেছিলেন, তাই অকিঞ্চিৎকর জিনিস নিয়ে খামোখা লড়ে যাবার ক্ষমতা তাঁর পুরনো। ... ...
চেতন ভগৎ তাহলে ফিরেই এলেন! সমালোচকের মুখে নুড়ো জ্বেলে কোটি কোটি ভক্তের প্রত্যাশা মেটাতে নিজের নতুন উপন্যাস নিয়ে শ্রীভগৎ স্বয়ং ধরাধামে পুনরাবির্ভূত হয়েছেন। আমরা জানতাম, ভগৎসাহিত্যগণিতের নিয়ম মেনে শ্রীভগতের নতুন বইয়ের নামে কোনও সংখ্যার উপস্থিতি অনিবার্য, কিন্তু এবারে শ্রীভগৎ আমাদের সবার ওপরে টেক্কা দিয়েছেন। তাঁর নতুন নামে সংখ্যা আছে ঠিকই, কিন্তু তা নেহাৎই ভগ্নাংশ: আধ। ভাবতে বসলাম। একুশ শতকের শেক্স্পীয়রের নামে সংখ্যা থাকবে – এটা এতদিনে বুঝে গেছি। কিন্তু পরের বইয়ে কোন্ সংখ্যাটা থাকবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব? হাজার হোক্ আমি স্ট্যাটিস্টিক্স পড়েছি – একটা মান-ইজ্জত আছে – ... ...
হে রাজন, এই ঘোর দুঃসময়ে, যখন পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশী ধ্যানধারণার জলাঞ্জলী ঘটবে, পাশ্চাত্য কুশিক্ষার প্রভাবে কিছু মানুষ সমকামী, লিঙ্গান্তরকামী প্রভৃতি বিকৃতরুচির অমানুষদের সমাজের মূলস্রোতে আনবার কুচেষ্টায় রত হবে, তখন, তখন সূচনা হবে এই আচ্ছে দিন উপযুগের। হে মহারাজ, এই যুগের উত্থান ঘটবে গুর্জর প্রদেশে এক অতিপ্রতিভাশালী এবং শক্তিশালী নেতার হাত ধরে। এই নেতা শৈশবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করলেও পরে সন্ন্যাস সংকল্প করবেন, কিন্তু হালে পানি না পাওয়ায় অতঃপর তিনি হিন্দু রাজনীতিতে যোগদান করবেন। জম্বুদ্বীপ সাধারণ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ভুবনে পরিচিত হলেও এই হিন্দু রাজনীতির নেতারা জম্বুদ্বীপকে হিন্দুপ্রধান দেশ বলে মনে করবেন, হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মের মানুষদের এঁরা তৃণাদপি তুচ্ছ জ্ঞান করবেন। ম্লেচ্ছজাতির গণকমান অনুযায়ী বিংশ শতকের শেষভাগে এই নেতার মনে হিন্দুভাব প্রকট হয়ে ওঠে এবং নিজ প্রদেশকে যবনমুক্ত করবার জন্য কিছু নিরপরাধ হিন্দুর শোচনীয় মৃত্যুর দায় তিনি যবনজাতির উপর চাপিয়ে দেবেন এবং হাজারে হাজারে যবনপুত্রকন্যাকে তাঁর অনুগামীরা বিবিধ উপায়ে আহত, নিহত, ধর্ষণ এবং গণধর্ষণ করে দীর্ঘকালের জন্য একেবারে চুপ করিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। ... ...
রামচন্দ্র জানতেন, এবং বুঝতেন, জম্বুদ্বীপে পাকাপাকি সাম্রাজ্য বিস্তার করতে গেলে, পপুলার সাপোর্ট তাঁর দরকার। শুধুমাত্র গায়ের জোরে এই আসমুদ্র-হিমাচল দাবিয়ে রাখা বেশিদিন সম্ভব নয়। আজ লঙ্কা জয়ের দরকার হয়ে পড়েছে কারণ এই অযোধ্যাই হবে তাঁদের আর্য-সাম্রাজ্যের পরীক্ষাগার। কিন্তু দশরথ বা গৌতম মুনির মতন ওটাকেই মূল লক্ষ্য বলে রামচন্দ্র ধরে নেননি। কারণ কেউ জানুক বা না জানুক, এটা ঘটনা যে আর্যত্ব দিয়ে রামচন্দ্রের কিছু এসে যায় না। ওটা ততদিন-ই দরকার, যতদিন ক্ষমতার পক্ষে কাজ করবে। রামচন্দ্র বোঝেন ব্যবসা। ক্ষমতার ব্যবসা। যে বা যা তাঁকে ক্ষমতা এনে দেবে, তিনি তাকেই ব্যবহার করবেন। যেমন, এই মুহূর্তে, অযোধ্যার ক্ষমতায় নিজের গদি সুনিশ্চিত করতে হলে, লঙ্কা অভিযান দরকারি, আর তাই ব্যবহার্য। ... ...
প্রত্যেক আবিষ্কারের যেমন একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, এই টেকনোলজিরও খুঁত ডিম বেচতে গিয়েই ধরা পড়ে। ডিমের ভেতরে ও খোসায় অধিক আয়রন থাকার দরুন কিছুদিনের মধ্যেই ডিমের গায়ে জল ও অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জং পড়া শুরু হয় ও ফেরোসোফেরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়ে খাবার অযোগ্য করে তোলে। ডিম কোম্পানীরা কিছুদিনের মধ্যেই গবেষণার মাধ্যমে স্টেনলেস ডিম তৈরি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু তার দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে হওয়াতে সাধারন মুরগির ডিম কেনাই মানুষের পক্ষে শ্রেয় হয়ে ওঠে। ... ...
যুবকরা যত্রতত্র বাজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যুবক বয়স হল খাটনির সময়। হাতের মুঠোয় ধরা জলের মতো যৌবনকে গলে যেতে দেবেন না। রাজ্য প্রগতির পথে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে, রথের রশিতে হাত লাগান। ঘাম ঝরান। যুবকরা স্বামী বিবেকানন্দের পথ অবলম্বন করে ফুটবল খেলুন, যুবনেতাদের অনুসরণ করে প্রোমোটারি করুন, মেয়ে দেখলে সিটি দিন, পাড়ার ক্লাবে তাস পেটান, চোর পেলে পিটিয়ে মারুন, যা খুশি করুন। কেবল আলস্য অভ্যাস করবেন না। গপ্পো থেকেই আসে গুজব। গুজবের সঙ্গে অপপ্রচার, আর অপপ্রচার মানেই চক্রান্ত। অলস মস্তিষ্ক হল মাওবাদীদের কারখানা। হীরকরাজ্যে আলস্য ও চক্রান্ত দুইই নিষিদ্ধ। যুবকরা নিজেরা নিজের মূল্য না বুঝে অকারণ রাজনীতি ও চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লে তাদের চোখে আঙুল্ দিয়ে বোঝানো হবে। অলস যুবক দেখলেই নাগরিক কমিটি গড়া হবে। শোধরানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও কাজ না হলে থানায় গিয়ে কড়কে দেওয়া হবে। এর নাম বেলঘরিয়া পদ্ধতি। এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পাড়ার ক্লাবে নাম লেখান, নাগরিক কমিটির হয়ে মাতব্বরি করুন, বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করুন। মোট কথা গঠনমূলক কাজে ঘাম ঝরান, কারণ কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। ... ...
বইয়ের বাজারে মন্দা লেগেছে কিছুদিন, এবারের হিসেবে তো সারা বাজার যোগ করলে বইয়ের দোকান পুরো একটাও হবে না, বারোআনা হতে পারে। তার মধ্যে নজরে পড়ার ব্যাপার হচ্ছে অনেক ইংরেজী বই-- অবশ্যই প্রায় সবই বাংলা বইয়ের অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ তো আছেই, "শ্রাদ্ধবার্ষিকীতে" দাড়ি মুচড়ে যতোটা উপায় করে নেওয়া যায়, কিন্তু সুনীল গাঙুলী বা শীর্ষেন্দু মুখুজ্জের উপন্যাস, এমন কী "পদিপিসির বর্মিবাক্স"? বাংলা সাহিত্যের এসব অমূল্য সম্পদ কি আমরা আমাদের বাংলাভাষা-অভাষী ছেলেপুলেদের হাতে পৌঁছে দিতে চাইছি? মধ্যে আমরা, আমাদের অভিবাসী সমাজের বেবী বুমাররা (সত্তরের বা তার আগের দশকে যাঁরা এসেছেন) যখন অবসর নেবার কাছাকাছি আসছি তখন কোলকাতার বহুতল বাড়ীর দালালেরা সদলে এসে অনেক ঝাঁপ খুলতেন আর চেঁচামেচি করে খদ্দের ডাকতেন। তা এখন অনেকেই কেনার থেকে বেচার কথা ভাবছেন, কাজেই সে বাজারটি মন্দা, দোকানীরাও অদৃশ্য। দুটি দোকান টিম্টিম্ করছে। তবে নজরে না পড়েই পারে না যেটি সেটি হোলো এক জ্যোতিষীর দোকান, সেখানে জ্যোতিষসম্রাট স্বয়ং দোকান আলো করে বসে আছেন। ইনি বেশ যশস্বী মনে হোলো, এঁর সচিত্র বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায় কাগজপত্রে, যাঁরা পরশুরামের সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড মনে করতে পারেন, তাঁরা শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারীর মূর্তিটি ভেবে নিন। গোড়ায় লোকজন হচ্ছিলো না, বোধ্হয় লোকে ভয়ে দূরে ছিলো, মেলা শেষের কালে দেখি বেশ ভীড়। এইটি যোগ হতেই মেলা একেবার খাঁটি মেলায় দাঁড়ালো। কেন, এদেশী কার্নিভালে স্ফটিক গোলক্ধারিণীদের দেখেননি? যাক, জ্যোতিষী আবার আসুন, বাতের ব্যথাটা চাগাড় দিচ্ছে, একটা পাথর-টাথর ধারণ করার দরকার হয়ে পড়ছে। ... ...
বঙ্গ সম্মেলনের তেত্রিশ বছরের ইতিহাস দেখলে আমাদের এখানকার অভিবাসী জীবন বিবর্তনের একটা চলচ্চিত্র পাওয়া যাবে, যেমন হওয়া উচিত। আমাদের সমাজ বেড়েছে, সমাজের সঙ্গতি বেড়েছে, সম্মেলনও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গোড়ার দিকের বোল ছিলো আমাদের সংস্কৃতির ধারা এখানে বহমান রাখা, তা সে আমরা নিজেরাই করতাম, দেশ থেকে গুণীদের এনে করবার রেস্ত ছিল না। মধ্যে ধুয়ো উঠলো আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী করে যেতে হবে। সে ভবীরা এসব ছেঁদো কথায ভোলবার নয়, তারা এ সম্মেলনের ধারে কাছেও ঘেঁষলো না। তবে আমরাও হতাশ হবার পাত্র নয়, আমরা আস্তে আস্তে দেশ থেকে নামকরা শিল্পীদের আনতে আরম্ভ করলাম, প্রথমে রবীন্দ্রসঙ্গীত, তারপর নাটকের দল, আধুনিক গাইয়ে-- তারপর আস্তে আস্তে বাউল, পল্লীগীতি এমনকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও ঢুকে গেলো কখন ফুড়ুত্ করে। বছর দশেক বা পনেরো আগে থেকে আমাদের সমাজে অনেক নতুন ধরণের মানুষ আসতে শুরু করলেন আর সম্মেলনের আর্থিক ব্যাপারটাতেও বেশ ঘোরতর পরিবর্তন এলো। সেটা কী, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে, কিন্তু ফলং আমরা ওই দ্বিতীয় প্রজন্ম-টজন্মের ছেঁদো কথা বাদ দিলাম, সম্মেলন হোলো "সন্মেলন" (এই সম্মেলনের ছাপা নির্ঘণ্ট পশ্য) আর সংস্কৃতির ফোকর দিয়ে বলিউডি নাচগানধামাকা ঢুকে গেলো। আমজনতা ভারি খুশি, এবং এই সব মেলার সেইটেই আসল কথা। ... ...
তবে ভেবে দেখতে গেলে, সংস্কৃত সভ্যতার ব্যাপকতর প্রভাব সম্যকরূপে অনুধাবন করা গেছে একমাত্র ভৌগোলিকদের মাধ্যমে। কলকাতার পুরনো নামটির কথাই ধরা যাক না কেন - এখনকার নাম তো বিদেশি। প্রাচীন বঙ্গে প্রথিতযশা সম্রাট বিজয়ের একমাত্র পুত্র ছিলেন রাজকুমার জয়। তিনি একবার সুতানুটির তীরে অপরূপ বাঙালি বৌদিদের গঙ্গাবক্ষে স্নানদৃশ্য দেখে বিহ্বল হয়ে তাঁর রসোপলব্ধি দুই ঠোঁটের ফাঁকে বায়ুর গতায়াত সংকুচিত করে তীক্ষ্ম ধ্বনিতে প্রকাশ করেন। তখন থেকে সেই এলাকার নাম হয় সিটি অফ জয়। সাগর পেরিয়ে বহু বিদেশেও সেই নামকরণের চিহ্ন বিদ্যমান। দক্ষিণ আমেরিকায় সংস্কৃতভাষী ভারতীয় নাবিকদের অজস্র অর্জুন গাছ লাগানোর স্মৃতি আজও বয়ে বেড়ায় আর্জেন্টিনা। অভ্রের খনি সমৃদ্ধ সুন্দরী অভ্রিকা আজ এক বিশাল মহাদেশ। ... ...
আজি এ প্রভাতে রবির লুক কেমনে টাচিল এ ফেসবুক জন্মদিনের প্রাক্কালে হঠাৎই রবীন্দ্রনাথ। ফেসবুকে এই প্রথমবারের জন্য। বাকি সবার নজর এড়ালেও ধরা পড়লেন বুলবুলভাজার পাতায়। ... ...
এখনো সেই মানছি না, মানব না? বামপন্থী হয়েও আপনার স্ট্রীট কালচারের ওপর রাগ? খেয়াল করছেন না এখন ইতিহাসে সমাজতত্ত্বে সাব-অল্টার্ন নিয়ে কথা বলা ইন-থিং? স্ট্র্রীট কালচারটাই মেইন স্ট্রীম হয়ে যাচ্ছে? নতুন নন্দনতত্ত্ব তৈরি করছে মানুষ। মহারাষ্ট্রের দলিত সাহিত্য পড়েছেন। ওরা 'নীরস -তরুবর -পুরতভাগে" না লিখে " শুষ্কং-কাষ্ঠং-তিষ্ঠতি-অগ্রে"টাই লিখছে। ফুলন দেবীকে নিয়ে শেখর কাপুরের ফিলিমটা দেখেছেন? যেখানে ফুলনকে ধর্ষক বাবু লোহারের খপ্পর থেকে বের করে আনা প্রেমিক ডাকাতটি ওকে গুলি চালাতে শেখাচ্ছে? মায়ের গালিটি কেমন আদর মাখানো উচ্চারণে বলে ফুলনকে সম্বোধন করছে? শুনুন, যারা হানি সিং এর গান ব্যান করতে চাইছে আর যারা বিহারীরাই ধর্ষক বলছে তারা একই রাশির লোক, একই নক্ষত্রে জন্মেছে। মূল বিতর্কের ট্র্যাক বদলে দিচ্ছে। এরা আসলে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আড়াল করতে চায়, বদলাতে চায় না। হানির গানে যদি তাৎকালিক চটকের বেশি কোন নান্দনিক আবেদন না থাকে তো কদিন বাদে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। আজ ক'জন বাবা সায়গল শোনে? ওসব ছেড়ে শীলা দীক্ষিতের বাড়ির দিকে ধর্ণায় যাবেন তো বলুন। আমি যাচ্ছি। ... ...