র্যাগিং নিয়ে অল্পবিস্তর চেঁচামেচি সব সময়েই হয়ে এসেছে, তবে সেই ১৯৯৫ সালে ব্যাপারটা খুব একটা উচ্চগ্রামে হত না। ফলে সিনিয়ররা, যারা মূলত র্যাগিং করত, তারা ব্যাপারটা বেশ খুল্লমখুল্লাই করত। প্রফেসররাও তাকিয়ে দেখতেন না, নাম-কা-ওয়াস্তে একটা অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি বানিয়ে তাঁরা দায় সারতেন। সেই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে থাকত কলেজের জি এস এবং আরও কিছু টপার গোত্রের ছেলে। ... ...
বাচ্চাটা যেখানে জন্মেছিলো সেই গভীর জঙ্গলে কোনো সেলফোনই কাজ করবেনা। কাজেই থাকলেও তাতে এসেমেস পাঠানো যেতনা। কিন্তু অন্যভাবে ভাবলেই তো হয়। শিশুমৃত্যুর হার নাকি খুব বেশি আমাদের দেশে? কই? এ বাচ্চাটা তো বেঁচেই আছে। হুররে, আমাদের নতুন একজন নাগরিক হলো। তাহলে এই খুশিতে আমরা কমনওয়েল্থ গেমসের হোস্ট হতে পারিনা? কিম্বা অলিম্পিক হলে তো আরো ভালো হয়। ... ...
আমি মোড়লকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক কী ঘটেছিল এখানে। "এক দিন জুডুম এল। গ্রামের কিছু লোককে মেরে দিল। আমরা ওদের পুঁতে দিয়ে পালিয়ে গেলাম'। একদম এই রকম। জ্যান্ত, শ্বাস নেওয়া মানুষ মিনিটের মধ্যে মাংসের টুকরোতে পরিণত। "কত জন মারা গে¢ছল? কারা ছিল তারা?' ... ...
রাত্রে পড়ব বলে যখন বইটা হিমাংশুজী'র থেকে ধার নিই, উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন "দেখবেন, কাল যেন আবার কেউ আপনার হাতে এই বই না দেখে'। "আরে না না', আমি ওনাকে আশ্বাস দিলাম। আজকাল রাজনীতির যা বাজার, নকশালপন্থা নিয়ে আলোচনা করলেই আপনাকে দাগী নকশাল বলে লোকে সন্দেহ করবে। এই বইটা অবশ্য শুধু নকশাল আন্দোলনের বিবর্তন কেমন করে হলো সেই নিয়ে লেখা। দিল্লীর একজন সাংবাদিক, সুদীপ চক্রবর্তী লিখেছেন। ... ...
দিল্লিওয়ালা কী করে চিনবেন? একটা প্রচলিত জোক চলে বাজারে, কলকাতার বাঙালির হাতে পয়সা জমলে বাঙালি কী করে? না, এবারে পূজোয় কোথায় বেড়াতে যাবে, তার প্ল্যান করে। বম্বের মারাঠির হাতে পয়সা জমলে সে কী করে? না, কোন শেয়ারে সেই পয়সা লাগালে তার সবচেয়ে বেশি লাভ হবে, তার ছক কষে। আর দিল্লিওয়ালার হাতে পয়সা জমলে দিল্লিওয়ালা কী করে? ... কী আবার, প্রপার্টি কেনে। ... ...
ভোজ কয় যাহারে - আজ বরম্ একটু খাওয়া দাওয়ার গল্প হোক। শুধু শুধু চা আর লেড়ো বিস্কুটের জোরে আর কতদিন গল্প জমে, বলুন? আচ্ছা, বলেন তো, দিল্লি বললেই প্রথম কোন্ খাবারের কথা আপনার মনে আসে? ....... ঐ দ্যাখেন, একসাথে কতগুলো হাত উঠেছে। এদিকে দমোদিদি চোখ পাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে যাচ্ছেন "ঘেভর ঘেভর'; ঐদিকে অজ্জিতকাকু এন্তার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছেন আর মন্তর পড়ার মত করে বলছেন "করিম্স ..... লস্যি ..... মালাই মার কে'। ... ...
উৎসবের নাম দুর্গাপূজো। মারাঠিদের যেমন গণেশ চতুর্থী, উত্তরভারতীয়দের যেমন দিওয়ালী, বাঙালির তেমনি ট্রেড সিম্বল হল দুর্গাপূজো। এমনিতেই বাঙালি কমিউনিটিপ্রিয় জাতি, বাংলার বাইরে এসে বাঙালির মত কমিউনিটি তৈরি করতে আর কোনও প্রবাসী ভারতীয় জাতি পারে না। তবে প্রবাসে সব ঐক্যের শেষ ঐক্য খাটে এই দুর্গাপূজোর সময়ে। ... ...
আবার অন্যদিক থেকে দেখলে, দিল্লিতে বাঙালি, পুনরায়, দুই প্রকার। এক গ্যাঁড়ার মত লোকজন, যারা প্রায়শই বড়মেজ বিভিন্ন রকমের চাকরি পেয়ে বাংলার মাটি ছেড়ে দুর্জয় ঘাঁটি গেড়ে বসছে দিল্লি এনসিআরের বুকে, এবং এখানেই থেকে করেকম্মে খাচ্ছে, পয়দা করছে সেকেন্ড, থার্ড জেনারেশন প্রবাসী বাঙালি। চাকরি অথবা উচ্চশিক্ষা, সঙ্গে সাইড ডিশ হিসেবে উইকএন্ডে বাংলা কল্চর, এই এদের গল্প তো শুনেছেন আগের বারে। ... ...
১৯৯৬ য়ের জুন মাস। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের দূর্গাবাড়ি রোডের রাস্তায় একটি টয়োটা গাড়ি। ভর-দুপুরে গাড়িটি ঢিমে লয়ে চলছে, এদিক-ওদিক, দোকানের সামনে থেমে জানতে চাইছে - সূর্যসিঁড়ি নামের বাড়িটি কি করে যাব? বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামে তারা দু'জন। কমবয়েসি ছেলেটি রজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের ছাত্র। এক বন্ধুর দাদার দেওয়া যোগাযোগে কদিন ধরে কাজকম্ম ছেড়ে ঘুরছে কোলকাতা থেকে আসা একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে। ঘুরছে চরকিবাজির মত। ... ...
যদিও শুরু করেছিলাম এই বলে যে, ধারাবাহিকভাবে কিছু লিখব না, তবুও শুরু থেকে এতখানি পর্য্যন্ত প্রচন্ডভাবেই ধারাবাহিক হয়ে গেল, খাওয়ার পর শোওয়া, শোওয়া হলে ঘুম থেকে ওঠার মত। আসলে এক ধরণের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে আসার পর নতুন জীবনে যাবার ট্র্যানজিশনটা এত বেশি ঘটনাবহুল মনে হয় নিজের কাছে, যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের দিকে মন চলে যায়। জলপাইগুড়িতে চার বছর কাটানোর প্রতিটা দিন আর আলাদা করে মনে নেই, কিন্তু ঐ শুরুর দিনকটা ভীষণভাবে মনে আছে। ... ...
দিল্লিতে বাঙালি দুই প্রকার। প্রথম প্রজন্ম, এবং দিতীয় বা ততোধিক প্রজন্ম। এই দুই রকম বাঙালির আচারে বিচারে, কথা-বার্তায় এবং চাল্চলনে তফাৎ এতটাই প্রকট যে ব্যাপারটা বেশ একটা কালটিভেট করার মত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ... ...
পুলিশ ঘুষ খায় - ধ্যার মশাই, এ আবার একটা লেখার মত জিনিস হল? পুলিশ ঘুষ খায়? এ তো চিরন্তন সত্য! অলমোস্ট প্রত্যেককেই কোনও না কোনও সময়ে পুলিশকে ঘুষ দিতে হয়েছে, যাঁরা এখনও দ্যান নি, নিকট ভবিষ্যতেই দেবেন টেবেন হয় তো। সেই বৃদ্ধ সর্দারজির অভিশাপ যেমন গ্যাঁড়ার জীবনে অচিরেই সফল হয়েছিল, ও অমন খুচরো অভিশাপের বোঝা অনেককেই বয়ে বেড়াতে হয়। ... ...
মোটরসাইকেল ডায়েরিজ - ভুবনেশ্বর থেকে পাকাপাকি পাট তুলে দিল্লিতে আসার সময়ে নিজের হোল্ডঅল আর সুটকেস ছাড়াও গ্যাঁড়া আর দুটো জিনিস নিয়ে আসতে পেরেছিল। এক, টিভি, আর দুই, মোটরসাইকেল। সেই ওড়িয়া মোটরসাইকেল গ্যাঁড়ার বেশ প্রিয় ছিল। ... ...
দিল্লির পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সব দিক থেকেই ইউনিক। এখানে এমন এমন সিস্টেম চলে, যা সম্ভবত ভারতের আর কোনও জায়গায় চলে না। প্রথম প্রথম এসে ব্যাপারগুলো ডাইজেস্ট হতে গ্যাঁড়া গেঁড়ি দুজনেরই বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। আর যেহেতু এর পূর্বে মেট্রো সিটি তথা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অভিজ্ঞতা বলতে দুজনেরই কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ, ফলে তফাৎগুলো প্রচন্ডভাবে চোখে লেগেছিল। ... ...
বাংলায় বলে প্রজাতন্ত্র দিবস, কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস, দূরদর্শনপ্রচারিত হিন্দি মাধ্যমে এরই নাম গণতন্ত্র দিবস। শুদ্ধ হিন্দিতে মূর্ধণ্য ণ-টা একেবারে মূর্ধণ্য ণ-য়ের মতই উচ্চারণ হবে, খানিকটা "ড়ঁ' ঘেঁষা। গড়ঁতন্ত্র দিবস। ... ...
দিল্লি অতি খাজা জায়গা .... সেই কবে কোন বিস্মৃত অতীতে অর্ণব চ্যাটার্জি অ্যালিয়াস ন্যাবা চিঠিতে লিখে সাবধান করেছিল তার প্রিয় বন্ধু আসমা চৌধুরি জয়িতা, ওরফে জয়ি-কে। তা, কে কার কথা শোনে! এই যুগে ভালো কথার কে-ই বা দাম দেয়, কে-ই বা শোনে। গ্যাঁড়ারই বা অতএব, শোনার কী দায় পড়েছে! একবিংশ শতাব্দী ঝক্কাস করে এসে পড়েছে তার স্লোডাউন সমেত, ওয়াইটুকে-র ম্যাজিক তখন একেবারে গায়ব-ইট'স গন-চলে গেছে কেস, তখন গ্যাঁড়ার দিব্যদৃষ্টি খুলে গেল, একেবারে পোষ্কারভাবে গ্যাঁড়া বুঝতে পারল জীবনের সমস্ত সাফল্য দিল্লিতেই মিলবে। ভুবনেশ্বরে নয়, বাড়ির পাশে কলকাতাতে তো নয়ই, প্রেমিকাকে বিয়ে করে শুরু থেকে পাশে পেতে হলে দিল্লিই একমাত্র সম্ভাব্য ডেস্টিনেশন। ... ...
কোনও ধারাবাহিক স্মৃতিচারণ হিসেবে রাখতে চাইছি না আমার এই লেখা, কারণ এই লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কোনও গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়ে নেই। নিছকই কিছু অদূর অতীতের স্মৃতিচারণ, লিখতে গিয়ে যখন যা যেমন মনে আসবে, লিখে ফেলব, তাতে করে পরের ঘটনা আগে আসতে পারে, আগের ঘটনা পরে। অনুচ্ছেদের পরে আরেকটা অনুচ্ছেদ ঠিকই আসবে, পড়তে গিয়ে পাঠক হয় তো খেইও হারিয়ে ফেলবেন না, তবে কোনওরকমের ক্রোনোলজিকাল অর্ডার মেইনটেইন করতে আমি রাজি নই। ... ...
পাকিস্তান ছাড়ল শেষ রেলগাড়ি ১৯৪৯এর কোলকাতা। ফাগুনমাসের শেষ। পশ্চিম আকাশে লজ্জা-লজ্জা গোলাপী আভা তখনও মিলিয়ে যায়নি। মনুমেন্ট ময়দানের পাশ দিয়ে কোণাকুণি হাঁটছেন সলিলকুমার। রোজ ফোর্ট উইলিয়মের ডিউটি সেরে এই পথেই কিছুটা এগিয়ে পার্কসার্কাস লেখা বোর্ড টাঙানো ২০নং ট্রাম ধরে বাড়ি ফেরেন। ... ...
এই রাস্তায় কিছুদিন না যাওয়াই ভাল। রাত যত বাড়ছে কুকুরেরা তত প্রবল হয়ে পড়ছে। ইতস্তত ভাবে ইঁটগুলোও ছড়িয়ে থাকবে। ঠোক্কর খেতে খেতে আমিও লাট খাওয়া ঘুড়ির মত এদিক-সেদিক। ঘুম অনেক স্মুথ আসে। নলেন গুড়ের মত। তারপর যা হয়, ইচ্ছেকে আটকাতে নেই। দুধে আম দাও, ব্যস সব ছানাকাটা। ... ...