এই শিশুরা এখানে কেন? এদের সে এখানে আশাই করেনি। কিন্তু শিশুদের উপস্থিতি তার ভালোলাগল। শিশুরা থাকলে সে সবসময়ই নিরাপদ বোধ করে। মা আর বুড়ো অভিনেতা থাকলেও। মঞ্চে অভিনয় করার সময় এবং অভিনয় নিয়ে বইপত্র ঘাঁটার সময়ও সে একইভাবে নিরাপদ ভাবে নিজেকে। কিন্তু বাকি প্রতিটি মুহূর্তে কেমন একটা নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি হতে থাকে তার। সে কিছুতেই স্বস্তি বোধ করে না। কিছুতেই নিজেকে বয়স্ক লোকেদের একজন ভাবতে পারে না। বিশেষ করে শক্তি ও ক্ষমতার সামনে কেমন যেন গুটিয়ে যায়। এখনও গুটিয়েই ছিল। কিন্তু শিশুদের উপস্থিতি সমস্ত জড়তা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে তুলছিল তাকে। ... ...
এই পরিস্থিতির সাথে আমি আগেও পরিচিত। আমাদের আর একজন গৃহ সহায়িকা অঞ্জুদিকে পাশের পাড়ার এক বাড়িতে বলেছিল, 'তুমি ডাক্তারবাবুর বাড়িতে কাজ করো। ডাক্তারবাবু রোজ জ্বরের রোগী দেখছেন। ওই বাড়িতে কাজ না ছাড়লে আমাদের বাড়ি আর কাজ করতে পারবে না।' অঞ্জুদি আমাকে হেসে বলেছিলেন, 'বললুম, আপনাদের কাজটাই তাহলে ছেড়ে দিই। তবে আপনারা জ্বর হলে কোথায় যাবেন? ডাক্তার কি দেখাবেন না?’ ... ...
পবিত্র পরিচয় করিয়ে দিলো, এই আমিনুলদা, বিপ্লবের ভার বহন করতে করতে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড়; আর উজ্জয়িনী, উজ্জয়িনী ভৌমিক, এত বড় নামটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে, সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ কণ্ডিশন মিলে গেলেই ওজনদার নামটা ত্যাগ করে বিপ্লবকে নিয়ে নেবে মাথায়। আমিনুলদা, আমাদের নতুন কমরেড সোমেশ্বর, সোম বলে ডাকতে পারো, ফাটাফাটি কবিতা লেখে। লাল-টালের ছিটে আছে, রক্তপাতও ঘটাচ্ছে একটু একটু, আর এই ওর বন্ধু স্বরাজ। একে একে বিভিন্ন কলেজের কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো, আড্ডা শুরু হলো, একটু-আধটু কবিতা, গান, আর তার পরেই জোর তর্ক। এ তর্কে যোগ দিতে পারলো না সোমেশ্বর, বিষয়টা প্রায় অজানাই ওর। তেনালী নামের কোন একটা জায়গায় কম্যুনিস্ট পার্টির লোকজনরা কিছু একটা মীটিং করেছে, সেই মীটিং নিয়েই তর্ক। ... ...
ঠাকুমা তাড়াহুড়ো করে উনুনে নিরামিষ কড়াই বসায়। তাতে সর্ষের তেল, আর কালোজিরা ফোড়ন। এরপর সবগুলো শিম পড়ে কড়াইয়ে। হলুদ আর লবণ সেই কচি শিমে পড়তেই তাদের রঙগুলো আরোও সবুজ হয়ে ওঠে। এরপর লম্বা ফালি করে রাখা আলুও ঢেলে দেয় ঠাকুমা কড়াইয়ে। অল্প সময় ঢেকে ঢেকে সেই শিম আর আলু মজায় ঠাকুমা। শিম আর আলুগুলো মজে আসতেই চন্দনের মতো মিহি করে বাটা সর্ষে আর কাঁচামরিচ বাটা পড়ে তাতে। এরপর একটু সেই সর্ষে বাটার বাটি ধোয়া জল। ... ...
সবে দোকানের ঝাঁপ খুলেছি। ঝিলমিল ঝিলমিল প্রজাপতি রোদ্দুর মিছিল করে দোকানে ঢুকে পড়ল আমার কফির দোকানে। আমিই মালিক আমিই বারিস্তা। আমার তো পুঁজি খুব কম। ছোট্ট দোকান। তবে জায়গাটা এক্কেবারে মোড়ের মাথায়। মোড়ের মাথা মানে চারদিক থেকে ঢালু পাথর বাঁধানো রাস্তা উঠে এসে এখানে মিলেছে। একটা দামাল ঝামড়া বেদানা গাছ। তার ঠিক পাশটায়। সেদিক থেকে মোটামুটি জমজমাট। এখন সবে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। আমি কফির মেশিন গুছিয়ে রাখছি। ক্যাকটাসগুলো জানালার কাছে রেখে দিচ্ছি। বোগেনভিলিয়া লালে লাল হয়ে আছে আমার দোকানের কাচের দরজার ওপর। আমি হাট করে দরজা খুলে রেখেছি। রোদ মেখে ফুলের একটা লালচে রং আমার লালসাদা চেক চেক কফিটেবিলের নকশা বুনছে। আন্দালুসিয়ার সেভিয়াতে বরাত জোরে একটু দোকানের ব্যবস্থা হয়ে গেল কোনোমতে। সে আর-এক গপ্প। পরে বলবখন। ... ...
আমরা, পাড়ার বন্ধুরা বেনারস গিয়েছিলাম চুয়াত্তর সালে। প্রায় এগারোজন। ফেরার সময় টাকাপয়সা শেষ। মোগলসরাই থেকে হাওড়া - দিল্লি জনতা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় ফিরছি। মোগলসরাই পেরিয়েই এক মোষ কাটা পড়লো ট্রেনে। ট্রেন আর চলেই না। জল ফুরিয়ে গেছে। প্রচন্ড গরম। কামরাটা ফুটছে গরমে। গার্ডসাহেব বললেন ঘন্টা দুয়েকের আগে ছাড়বেনা ট্রেন। আমাদের বললেন - মাঠ পেরিয়ে সামনের গ্রামে চলে যান। জল পেয়ে যাবেন। গাড়ি ছাড়বেনা। নিশ্চিন্তে যান।আমরা তো চললামই। আমাদের সংগে আরো জনা পঞ্চাশ লোক। সবার হাতে ওয়াটার বটল। ... ...
এই রিপোর্ট তৈরি করার পথে অনেক বাধা এসেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা এইসব তথ্য পেয়েছি। তাঁদের নাম আমরা প্রকাশ করতে পারব না, কারণ তা অনৈতিক হবে। কিন্তু এই রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে যে ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা যা বুঝছি তার সারকথা হল—‘এখানে ধর্মীয় মেরুকরণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে যে-কোনো সময় আবার দাঙ্গা লাগতে পারে।’ ... ...
কোভিড ১৯ পরীক্ষা করানো এখন অনেক সহজ হয়েছে। কয়েকদিন আগেও আমরা যারা বেসরকারি চিকিৎসক, চাইলেই করোনা পরীক্ষা করাতে পারতাম না। পরীক্ষা হতো খুব অল্প জায়গায়। আর খরচও লাগতো প্রায় আড়াই হাজার টাকা। লকডাউনের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই সঞ্চয় তলানিতে। তাই আড়াই হাজার টাকার পরীক্ষা লেখার আগে অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হতো। চারদিকে কি বিপুল অপচয়। রাস্তাঘাট, বাড়ি- ঘর স্যানিটাইজেশনের নামে জল, অর্থ ও লোকবলের অপচয় হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আকস্মিক লকডাউন করে করোনাকে কতদূর ঠেকানো যাবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বরঞ্চ স্বাভাবিক জীবনে যত দ্রুত সম্ভব ফেরার চেষ্টা করা উচিত। মানুষদের কিভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেটা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে মাস্ক। একটা থ্রি লেয়ার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা গেলে মহামারী ছড়ানোর গতিকে আমরা অনেক শ্লথ করে দিতে পারব। কিন্তু সেটুকু করার বদলে বাদবাকি যাবতীয় কিছু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লোকজন করোনার ভয়ে স্বাস্থ্যকর্মীকে আবাসন ছাড়া করছেন। আর নিজে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে ভিড়ের মধ্যে চা- সিগারেট খাচ্ছেন। ... ...
আমরা অতীতে যেখানেই ছিলাম, যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ভেঙে ফেলা খেলাধুলোয় ব্যস্ত ও ত্রস্ত মানুষ -- আমরা কেবল ক্যালাইডোস্কোপের মধ্যে নাড়াচাড়া করে দেখছি। দেখছি, অক্ষরগুলো এখনও বেঁচে আছে কিনা। দেখছি, গনগনে চিতার শিখার থেকে কেউ রুমাল নাড়ে কিনা। চিতাভস্মে সমান হবার যে আবেগপ্রবণ আকাঙ্খা তার লেশমাত্র নাই। এখন কেবল ধানখেতে কালো একটি ছেলে শুয়ে আছে, রক্তাক্ত। কালো কালির ওপর লাল কালির এই কাটাকুটি লিখেছিলেন ভাস্কর চক্রবর্তী। ব্যাপারটা তেমন কিছুই নয়। ... ...
বরং বলি সেই অমাবস্যার আগের এক গোধুলির কথা যার সঙ্গে এ জীবন সংপৃক্ত হয়ে আছে। সেদিন ছিল চতুর্দশী কিংবা অমাবস্যা। কখন যে এক তিথি শেষ হয়ে অন্য তিথির আবির্ভাব হয়, তা পঞ্জিকাকাররা বলতে পারেন। বলতে পারেন মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র চেনা মানুষজন। জ্যোতির্বিদরা। সেদিন ছিল পিতৃপক্ষের শেষের আগের দিন। পরের দিন অমাবস্যা, কৃষ্ণপক্ষ শেষ হবে। তার পরের দিন থেকে আশ্বিনের শুক্লপক্ষ, দেবীপক্ষ আরম্ভ। আমার বাবা ভাদ্রমাসের পূর্ণিমার পর কৃষ্ণপক্ষ শুরু হলে পিতৃতর্পণ আরম্ভ করতেন। অমাবস্যার দিনে, মহালয়ার দিনে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে সেই তর্পণ শেষ হতো। মহালয়ার সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি সম্পর্ক রয়েছে। দেশভাগের পর এপারে এসে আমাদের পরিবার যে প্রথম মৃত্যুকে দ্যাখে, তা এই অমাবস্যা কিংবা চতুর্দশী ও অমাবস্যার সন্ধিক্ষণে। ... ...
অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যাণ্ডের দেশের মানুষের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা | এই যেমন ধরুণ কথাবার্তায়, উচ্চারণে | আপনি জানেন অজি (অস্ট্রেলিয়ান) আর কিউইদের (নিউজিল্যাণ্ডের মানুষ) ইংরিজি কমনওয়েলথ দেশেরই মতন, বানানবিধি প্রভৃতি সব এক রকমের, কিন্তু উচ্চারণের বেলা কিউই ইংরেজী স্বরবর্ণ এক সিলেবল এগিয়ে আর অস্ট্রেলিয়ান (“অজি”) এক সিলেবল পিছিয়ে। ব্যাপারটা কেমন জানেন? মনে করুন আপনি ফিশ আর চিপস (মাছভাজা আর আলুভাজা) কিনতে অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন, সে খাবারের উচ্চারণ সেখানে “ফিঈঈশ” আর “চিঈঈঈপস”, আর ওই একই খাবার, টাসমান সাগর পেরিয়ে কিউইর দেশে তার উচ্চারণ হয়েছে “ফশ” (“ফুশ” ও চলতে পারে) আর “চপস” (“চুপস”) ও দিব্যি চলতে পারে। তারপর ধরুন পাভলোভা নামের মেরাং | ... ...
শুরু হল রাহুল দাশগুপ্ত'র ধারাবাহিক উপন্যাস - সার্টিফিকেট। ... ...
যাঁরা মারা গেছেন বিজয় রজকের চোখে তাঁদের অধিকাংশই দাঙ্গাকারী নন। বিশেষত, যদি খতিয়ে দেখা হয়, তাহলে বোঝা যাবে যে নিহতদের কেউই অতীতে কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এখন সবকিছুতেই সাম্প্রদায়িক রং লাগানো হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়েছে যেখানে হিন্দু বসতি শেষ হচ্ছে আর মুসলিম বসতি শুরু হচ্ছে—বর্ডার জাতীয় এলাকায়। ... ...
এর মধ্যে একটা কাণ্ড ঘটে গেলো, এক দুপুরবেলা। বাইরের ঘরে বসে ছিলো তুলিকা আর জয়ি, দুজনে মিলে প্ল্যান করছিলো কেমন হবে পরের সংখ্যা শাম্বর প্রচ্ছদ। তুলির সামনে একটা বড় সাদা কাগজ, হাতে পেনসিল, একটা দুটো আঁচড় পড়েছে কাগজটায়, আর গলা ছেড়ে গাইছে জয়ি, মরি লো মরি আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে, এমন সময় বাইরের থেকে জোরে জোরে দরজায় ধাক্কার শব্দ, আর তার সাথে উচ্চকিত কণ্ঠ: কে গায় আমার গান, আমার গান গাইছে কে! থেমে যায় জয়ি, একটু ঘাবড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসু চোখমুখে তাকায় তুলির দিকে। ঠোঁট উলটিয়ে, বিস্ফারিত চোখে, দুটো হাতের কব্জি ঘুরিয়ে বোঝায় তুলি সে-ও বুঝছে না কিছু। এমন সময় আবার দরজায় ধাক্কা: কে গাইছে আমার গান? ... ...
অবৈধভাবে নদীবক্ষ খননের জন্য কাশ্মীর এখন সংবাদের শিরোনামে। কয়েক মাস আগেই নীলামের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে শতাধিক নদীবক্ষ থেকে মিনেরালস ( বালি, পাথর, নুড়ি) ছেঁকে নেবার ব্যাপারটি। যে কম্পানিগুলি নীলামে জিতেছে তারা পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা না করেই পরদিন থেকেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিয়েছে। তার কোনো বিহিত না করেই উল্টো চাপ দিয়ে সরকারি হুকুমনামা এসে গেল যে পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র দেবার ব্যাপারটিই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেরে ফেলতে হবে। আশ্চর্য কী যে একদিনে পঞ্চাশেরও বেশি মিটিং সেরে ফেলা হবে। ... ...
'আজ থেকে সাড়ে তিনশো বছর আগে ইউরোপের শিক্ষিত মানুষেরা সভ্যতার আলো নিয়ে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছেছিল। ওখানকার আদি বাসিন্দা অসভ্য রেড ইন্ডিয়ানদের যখন কিছুতেই বশ করতে পারছিল না, তখন কি করেছিল জানেন? হত দরিদ্র রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে শয়ে শয়ে কম্বল বিতরণ করেছিল।' 'সেতো অত্যন্ত ভালো কাজ। সভ্য মানুষদের মত কাজ।' আমি হাসলাম। বললাম, 'কম্বলগুলো ছিল হাসপাতালে স্মল পক্সে আক্রান্ত মৃত রোগীদের। উত্তর আমেরিকা স্মল পক্স মুক্ত অঞ্চল ছিল। তাই এই রোগের বিরুদ্ধে রেড ইন্ডিয়ানদের কোনরকম গোষ্ঠী ইমিউনিটিও ছিল না। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে কয়েক লাখ রেড ইন্ডিয়ান স্মল পক্সের মহামারীতে মারা গেল। আমেরিকা শেষমেশ সত্যিকারের সভ্য দেশ হয়ে উঠল।' ... ...
হারুনের এই ঝড়ের মতো হাজির হওয়া, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মজাদার কিসসা বলে এতগুলো ঝানু ব্যাবসাদারকে মাতিয়ে রাখা আবার ঝুপ করে অন্ধকার পথে মিলিয়ে যাওয়া এসবই একজন হাঁ করে গিলছিল। তার নাম হরিণ। বারো-তেরো বছরের বালক। এসেছে শান্তিপুরের দুকুল আর মলমল নিয়ে, দামোদর শেঠের তল্পিবাহক হয়ে। ফাই-ফরমাশ খাটে। শেঠের গা হাত পা টিপে দেয়। মাথায় তেল মাখিয়ে দেয়। শেঠ খাটিয়ে নেবে কিন্তু খেতে পরতে দেবে, কিছু টঙ্কাও আসবে গরিবের সংসারে। এই ভেবেই তাকে যেতে দিল তার বাপ। তা মন্দ লাগছে না হরিণের, এই শেঠের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে। তবে এই ভর হেমন্ত সন্ধ্যায় তার বাড়ির কথা মনে পড়ে। আকাশে মস্ত চাঁদ। জোছনার মধ্যে সে পিঠেপুলির গন্ধ পায়। নারকেলে গুড়ের পাক দেওয়ার গন্ধ। ... ...
কবিতা কি সত্যি কখনো অস্ত্র হয় বা হয়েছে? মানে ঠিক যেভাবে দেখাতে চায় মেরুকরণের রাজনীতি, কবিকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে? নাকি তার জায়গাটা একটু আলাদা যা চিনতে না পেরে আমরা কবিতার প্রাসঙ্গিকতাকে ওই একই খোপে ঢোকাতে চাই ও বারংবার ব্যর্থ হয়ে নিরাশায় ভুগি। আদতে, সমালোচকদের মধ্যে একটা মাপকাঠি কাজ করেছে চিরকাল, যে, যথেষ্ট দেকার্তিয়ান না হলে, সেইটে আধুনিক রাজনীতির অংশ হয় না। ... ...
কী হয়েছে না হয়েছে তা সকলেই জানতে পারে। লোকে সাধারণত পার্টি আর মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করেন, কিন্তু সেসব তথ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা থাকে। এরকম একটি সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত অঞ্চলে, যেখানে যে-কোনো সময় দাঙ্গার আগুন জ্বলে উঠতে পারে, সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যথেষ্ট কঠিন কাজ, বিশেষ করে যারা পরিবারের লোকজনদের হারিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বাদ দিয়েই আমরা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলব বলে পরিকল্পনা করলাম। ... ...
আমি ভিজিট রেখে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছিলাম, ছেলেটির বাবা বলল, ডাক্তারবাবু, দয়া করে টাকাটা রেখে দিন। সবার তো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমার ছোট্ট একটা মুদির দোকান আছে। লকডাউনে লোকজনের অবস্থা নিজের চোখে দেখেছি। তেমন কয়েকজনকে যদি পয়সা না নিয়ে দেখে দেন। ক্ষমতা থাকলে আরও দিতাম। আমি কিছুতেই নেব না। আর ছেলেটির বাবা দুহাত জোর করে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, আমি গরীব ডাক্তারবাবু, কিন্তু আমারও তো কিছু করতে ইচ্ছে করে। গরীব? কে গরীব? যে তার সীমিত সাধ্য নিয়েও এই অকালে অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাইছে? নাকি গরীব তারা, যারা এই মহামারীর সময়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াচ্ছে? ... ...