ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিশ্রুতি থাকতো প্রত্যেক বুধবার করে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যা ছ-টায় দেখানো হত ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক, নন্দন তিন-এ। তবে সব বুধবার হত না। আর্কাইভের একটা ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলাম আমরা। বুধবার শো-য়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফোন করে কি ছবি এবং তার থেকেও বড় হল আজ দেখানো হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে নেওয়া হত। ৯৮-৯৯ সাল ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে নন্দনের অধিকর্তা ছিলেন অংশু শূর। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, সিনে সেন্ট্রাল, আইজেন্সটাইন সিনে ক্লাব, আর্কাইভের শো ও আরো অনেক ফিল্ম সোসাইটি - এসব মিলিয়েও আমরা পরিমিত আহার পাচ্ছি না মনে করেই সম্ভবত নন্দনে শুরু হল মাসিক রেট্রোস্পেক্টিভ! নন্দনের অধিকর্তা বদলে গিয়ে তখন নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক মাসে না হলেও মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিচালকের এক-গুচ্ছ ছবি দেখানো হত। নন্দনের মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাঁ-দিকের কাঁচের শোকেসে নতুবা ডান দিকে দাঁড় করানো স্ট্যান্ডে আটকানো থাকতো এই কর্মসূচির কাগজ। ছবিগুলি দেখানো হবে নন্দন দুই-এ। যারা দেখতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ থাকত নন্দনের লাইব্রেরি থেকে বিনি পয়সার পাস জোগাড় করে নেওয়ার! প্রথম রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হয় অ্যালফ্রেড হিচককের (১৮৯৯-১৯৮০)! চারটি ছবির কথা পরিষ্কার মনে আছে, 'রোপ'(১৯৪৮), 'রিয়ার উইন্ডো'(১৯৫৪), 'সাইকো'(১৯৬০) এবং 'দা বার্ডস'(১৯৬৩)! ... ...
কলেজজীবনের সময় থেকেই প্রদীপ হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রদীপকে হাংরি আন্দোলনের সাথে পরিচয় করান। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬১ সালে পাটনা থেকে প্রথম ম্যানিফেস্টো প্রকাশের মাধ্যমে। আন্দোলনের মূল স্রষ্টা ছিলেন কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। কবিতা সম্পর্কে হাংরিদের বক্তব্য ছিল, “…it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzling of the hymning five, a sowing of the tempestual hunger.”। হাংরিরা মনে করতেন পঞ্চাশের দশক অবধি বাংলা কবিতায় যে স্থিতাবস্থা চলে আসছে, কবিতার ভাষাকে সেই স্থিতাবস্থার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। একইসাথে স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে এবং বিশেষ করে দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা ও কায়েমি স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষের যে স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে হাংরিদের আন্দোলন সেসবের প্রতিই এক কাউন্টার ডিসকোর্স। ... ...
এই হলেন দেবনুরা মহাদেব। এক আইকনিক কন্নড় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, জনসাধারণের বুদ্ধিজীবী এবং কর্ণাটকের এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক কর্মী। এতই মুখচোরা এবং আত্মপ্রচার বিমুখ, যে মাঝে মাছে সন্দেহ হতে শুরু করে, যে এই লোকটি জনজীবনে করছে টা কী। জনতার মনোযোগ থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রতিভা রয়েছে তাঁর। মঞ্চে তাঁকে হঠাৎই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা— কেউ হয়তো দয়াপরবশ হয়ে বলল: উনি ধূমপান করতে গেছেন। মহাদেব সর্বদা এবং বিরক্তিকরভাবে দেরিতে চলেন, এমনকি আমার তুলনায়ও, সবসময় একটু অপ্রীতিকর, হয়তো কিছুটা বিকৃতও। সেটা কিন্তু বোহেমিয়ান কবির যত্ন সহকারে পরিকল্পিত অসাবধানতা নয়, তাঁর জীবনের এক আলাদা ছন্দ আছে, আছে নিজস্ব পূর্বাপরবোধ, যা চিরাচরিত কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায়না। ... ...
তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন! ... ...
সকালবেলা। জোরে জোরে দরজায় বেল বাজছে। আপনি দরজা খুললেন। খুলেই কিছু অফিসারদের দেখতে পেলেন: "আমরা ইডি। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। এক্ষুণি।" আপনি তাদের সাথে তাদের অফিসে পৌঁছালেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়: "আপনি কি গত বছর আপনার একটা প্লট গুপ্তজিকে বিক্রি করেছিলেন?" আপনি বললেন: "হ্যাঁ, আমার নিজস্ব প্লট ছিল, কোনো বিতর্কিত সম্পত্তি ছিল না। দু নম্বরি করে বিক্রি করিনি, কোনো কালো মামলাও নেই। সঠিক পন্থায় নথিভুক্ত, সাক্ষী, সমস্ত প্রমাণও আছে আমার কছে।" তারা আপনার প্রমাণের প্রতি একটুও আগ্রহী নয়: "আপনি কি জানেন যে গুপ্তা, যার কাছে আপনি প্লট বিক্রি করেছেন, ব্যবসায় কারচুপি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ৪২০ র মামলা আছে?" আপনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন: "দেখো ভাই, আমি তার কাছে প্লট বিক্রি করেছি, কন্যাদান করিনি। সম্পত্তির এজেন্ট চুক্তিটা করেছে। পেমেন্ট চেকের মাধ্যমে এসেছে। তার সাথে, তার পরিবার বা ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। মাস কয়েক আগে আমি খবরের কাগজে পড়লাম যে তার বিরুদ্ধে কিছু ফর্ম রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো আমাদের চুক্তির পরে ঘটেছে।" আপনি মনে করলেন,যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। বিষয়টা মিটে গেছে। কিন্তু তখনই আপনার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়বে: "মনে হচ্ছে আপনি PMLA (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) আইনটার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আপনি এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী। কারণ অপরাধের আয় আপনার পকেটে পৌঁছেছে। কাজেই আপনিও একজন অপরাধী। এই অপরাধের দরুন আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করছি!" ... ...
আমি নির্মলার জীবনী লিখতে বসিনি। তাঁর গায়কীর মূল্যায়নও আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বহু গানে নির্মলা যে সাধারণ থেকে দীক্ষিত শ্রোতাদের আনন্দ দিয়েছেন, এ লেখায় তার স্মরণ করিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। জনপ্রিয়তায় 'ও তোতাপাখিরে' বা 'এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'র সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এরকম গান নির্মলা আর গাননি। কিন্তু শুধু জনপ্রিয় সৃষ্টিই তো শিল্পীর একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। এখানে নির্মলার অল্পশ্রুত চারটে গানের উল্লেখ করব, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয়। চার দিকপাল সুরকারের চারটে গানের ধরণ আলাদা, তাদের বৈশিষ্ট্য আলাদা। ... ...
ইন্ডিয়া নামক পর্দার আড়ালে যে একেবারে হদ্দ গরীব ভারতটা লুকিয়ে রয়েছে, তার অধিকাংশ সন্ধ্যেবেলা এমনভাবেই কাটে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। বছর ঘোরে। দোকানের বাঁধা খরিদ্দারের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়। আবগারি দফতরের আদায় করা রাজস্বের খতিয়ান তার আগের বছরের হিসাবকে দশ গোল দেয়। দেশি মদ তৈরি করে যে সংস্থাগুলো, তারা গলদঘর্ম হয়ে গিয়ে প্রায় হাত জোড় করে বলে, ‘আর পারছি না।’ ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক খালি হয়ে যায় নিমেষে। ... ...
আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে। ... ...
প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যায় ভেসেছে আসাম। দু-সপ্তাহ আগে, রাজ্যের ২৪ টা জেলার ১৪ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছিল। প্রায় দেড় লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় ২০০ তে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সব তো পরিসংখ্যান। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা সবটুকু ভুলে যাব। খুব বড়ো জোর বন্যা ত্রাণে আসামকে দেওয়া অনুদানের কিছু খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। কিছু ছবি মনে থাকে যেখানে শিশুরা বাঁশের তৈরি নৌকা বাইতে বাইতে তাদের বাড়িতে যাচ্ছে। এবং এতো কিছুর পরেও আমরা আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা করব। ... ...
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যুগে যুগে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হল৷আমাদের জন্য রেখে গেল অত্যন্ত স্পষ্ট দুটি শিক্ষা৷ দেখিয়ে দিয়ে গেল, যতবড় ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, জেগে ওঠা জনতার শক্তির কাছে অত্যাচারী শাসক বন্যার জলে খড়কুটো ছাড়া আর কিছু নয়৷ পাশাপাশি এ শিক্ষাও রেখে গেল, অন্যায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রব্যবস্থাটিকে না পাল্টে শুধু শাসকের নাম বদলে জনগণের দুর্দশা ঘোচে না৷ ... ...
বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে সরকারি স্কুলের তুলনামূলক আলোচনা না করে আপাতত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলের বিভিন্ন স্তরের সমস্যা, তার অন্ধকার ও আলোকিত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করলেই বোঝা যাবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্রটা কেমন। ... ...
লেখাটির মাঝে কিছু সত্য আছে। আবার সত্যকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে লেখকের নিজের মর্জিমাফিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়নি, দুয়েকটি বিষয় এবং প্রধানত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর (“বরিষ্ঠ সম্পাদক” নন, সত্যের খাতিরে বললে) পিটার দোশীর একটি বা দুটি প্রবন্ধকে হাতিয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য গবেষণাপত্র আছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেট, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্য জার্নালগুলোতে। এবং এ জার্নালগুলো কর্পোরেটদের টাকায় নিয়ন্ত্রিত হয়না। এসব জার্নালে স্বাধীন গবেষণাপত্র ছাপা কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের বদান্যতা ছাড়া। যদি বিজ্ঞানের এই স্বাধীন পরিসর না থাকে তাহলে বলা ভালো – প্রপঞ্চময় এ কর্পোরেট বিশ্বে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীন হওয়া সম্ভবও নয়, “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” ফুটিয়ে না দিলে। এখানে একবার স্মরণ করে নেওয়া ভালো – যখন বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত, প্রমাণ বা সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তখন যে হেত্বাভাস বা অনুপপত্তি (অর্থাৎ ভ্রান্ত যুক্তি) সংঘটিত হয়, তাকে যুক্তিবিদ্যায় পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই বা ইংরেজি ভাষায় চেরি পিকিং (Cherry picking) বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই হতে পারে। তবে জনবিতর্কে এই ভ্রান্তি একটি বড় সমস্যা। ... ...
এই যে বৃন্দাবনের খোঁজ তা চিরন্তন আর সেই বৃন্দাবন সশরীরে এই পৃথিবীর বুকে খুঁজে চলার কাজটি করে চলে মায়াভূত রাশি রাশি কল্পনা। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রায় যে কোন ছবিতেই এই কল্পনা নামক মায়াদণ্ডটির ক্রীড়া একান্ত আবশ্যক। আর তাছাড়া আজকের এই মৃত পশুর দেহ নিয়ে মাছির ভনভন করা দুনিয়ায় আর আছেটাই বা কি! তবু শুধু প্রলাপের মতন কিছু অন্তহীন ভালোলাগাকে নিয়ে কলম ক্ষয় না করে কালপুরুষ ছবিটিকে নিয়ে কিছু বাক্য ব্যয় করবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ এই ছবির অসামান্য বিশ্বজনীন এক আবেদন যা যত সময় অগ্রসর হবে তৃতীয় বিশ্বের শরীরে ক্রমশ: সঞ্চারিত করবে জীবনবোধ এটুকু আশা হতাশ হয়েও করাই যায়। ... ...
হলিউডের অতি-জাগতিক সিনেমার আকর্ষণে এসপ্ল্যানেডের হল গুলিতে কলেজের কত ক্লাস যে আমরা করেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ক্রমে-ক্রমে অন্য-ধারার সিনেমার প্রতি আকর্ষণে এ.জে.সি বোস রোডের একটি স্থান আমাদের কাছে হয়ে ওঠে তীর্থক্ষেত্র। সময়কাল শূন্য-দশকের শুরুর বছর গুলি। টরেন্ট, ওটিটি এসবের তখন কল্পবিজ্ঞানের গল্পেও অস্তিত্ব নেই। ফলে অন্য-ধারার একটা ভালো ছবি অমুক জায়গায় দেখানো হচ্ছে, এসব ছিল লাখ-টাকার খবর! ... ...
যাকে ঘিরে এত আয়োজন, শোনা গিয়েছে নদীয়ার ওই ছাত্রীটি নাকি ভাল নেই একদম। খবরের কাগজ জানান দিচ্ছে, টিটকিরির শরশয্যার মধ্যেই সে শুয়ে রয়েছে আজকাল। ইউটিউবে ভিডিওটির জন্ম নেওয়ার পর থেকেই কার্যত সে ঘর বন্দি। মাত্র এ কদিনের মধ্যে তিন তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার বাসনা কতটা উদগ্র হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কেউ তিন বার এমন কাজ করার চেষ্টা করে, তা আঁচ করা যায়। বাড়িতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েও যে ও বেঁচে গিয়েছে, তা বলা ভুল হবে। অজ্ঞতার জন্য হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে ওঠা মেয়েটির বাড়ির সামনেও ভীমরুলের মত ছোবল মেরে চলেছে রঙ্গ ব্যঙ্গ টিটকিরি। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে জনতার একাংশ ছুঁড়ে দিচ্ছেন উল্টোপাল্টা মন্তব্য। ভার্চুয়াল দুনিয়ার কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, মেয়েটির বাড়ির দেওয়ালেও হয়তো প্রতিদিনই লেখা হয়ে চলেছে অজস্র কমেন্ট। ... ...
শিলচর শহরে ১৮ জুন মধ্যরাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে। কাছাড় জেলা প্রশাসন তার আগে একটা বিবৃতি দেন, সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেটা ছিল এরকম, "এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রশাসনের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী বেতুকান্দি বাঁধটি কিছু দুষ্কৃতী নষ্ট করে দিয়েছে, বাঁধের ওই ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু মেরামত করার চেষ্টা চালান সত্ত্বেও নদীর জল শিলচর শহরের নিচু এলাকা ও বেতুকান্দির আশপাশের এলাকাগুলোতে ঢুকে পড়তে পারে।" আস্তে আস্তে বরাক নদীর জল পুরো শিলচর শহরকে ভাসিয়ে দেয়। গরীবের কুঁড়ে ঘর থেকে বড় অট্টালিকা কিছুই আর বাদ যায় না। অনেক বাড়ীর জানালার উপর পর্যন্ত বান ভাসি হয়ে যায়। বিপন্ন মানুষ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। ... ...
২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষের ভাই গোটাবায়া রাজাপক্ষ ডিফেন্স মিনিস্টার হয়ে নির্মমভাবে তামিলদের দমন করলেন। জাফনায় ও অন্যান্য দ্বীপে সেনাবাহিনী অসামরিক জনতাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করল। আন্দোলনের কার্যত সমাপ্তি ঘটল ১৮ই মে, ২০০৯ সালে, লিট্টের সর্বেসর্বা প্রভাকরণ ও অন্যদের মৃত্যুতে। বিশ্বজুড়ে অসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি ও দলিল দেখে মানবাধিকার লংঘনের তদন্তের দাবি উঠল। রাষ্ট্রসংঘের অনুমান অনুযায়ী কয়েক দশকের ওই সংঘর্ষের ফলে অন্তত ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছেন কয়েক লক্ষ নাগরিক। তারপর সিংহলী বৌদ্ধ নাগরিকের প্রবল সমর্থনের ভিত্তিতে আজ রাজাপক্ষ পরিবারের পাঁচভাই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিত্তমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা আদি দেশের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে – যা প্রায় দুর্ভিক্ষগ্রস্ত কিছু আফ্রিকান দেশের কথা মনে করায়। ... ...
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ধ্বনির মধ্যে হয়তো আশা বেঁচেছিল তখনও। রাস্তার এপাশ ওপাশ দিয়ে, এ গাড়ি ও গাড়ি কাটিয়ে যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল সেই আপৎকালীন যান, রোগীর পরিবারের সদস্যদের মনে প্রায় নিভে আসা সলতের আগুনের মত হয়তো উষ্ণতা ভর করে ছিল, তখনও। দুটো হাসপাতাল ঘোরা হল। শয্যা পেলেন না হৃদরোগে ভোগা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মধ্যে বিষাদ মাখছিল ক্রমশ। ... ...