চমৎকার ঘাস কাটার হাত ছিল উমার। ছাগলের জন্য বেছে বেছে কালচে ঘন নরম ঘাস কাটতো। আমিও আমাদের ছাগলের ঘাসের জন্য উমার সাগরেদি করেছি। তালপুকুরের পাড় থেকে শুরু করে আশপাশের ধান কাটা জমিতে ভালো ভালো ঘাস কেটেছি। এছাড়া উমার একটা গুণ ছিল, এক ধরনের লম্বা ঘাস হতো। তাকে বলা হতো, ব্যাঙের বাড়ির ঘাস। ভিতরটা ফাঁপা । হাত দিয়ে টিপলে পটপট করে আওয়াজ হতো। আমাদের গ্রামীণ জীবনে ওইগুলোই তো ছিল আনন্দের উৎস। সেই ঘাস দিয়ে উমা দারুণ ঘর বানাতো। দোতলা তিনতলা। ... ...
১৯৬৭ সালে ইজরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। ওদিকে এই যুদ্ধের আগে থেকেই গাজার এক-পঞ্চমাংশ ইজরায়েলের দখলে। ২০০৪ সালের পর থেকে গাজাও যেন জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ইচ্ছেমত প্যালেস্টাইনিদের পশ্চিম তীরের বাসস্থান থেকে হঠিয়ে দিয়েছে। আরবরা যখনই প্রতিবাদ করেছে, তাদের বা আইডিএফের হিংসার শিকার হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আরবরা বসতি দখল ও নির্যাতন সইছে। ইজরায়েলিরা পশ্চিম তীরের ৫৯ শতাংশ দখল করে নিয়েছে, ইজরায়েলি বসতি বানিয়ে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন পৃথিবীর নজর যখন গাজার উপর, সেই অবকাশে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরে আরবদের বাড়িতে ঢুকে বাসিন্দাদের মারছে, গাড়ি, ফলের বাগান জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বসতিতে ঢুকে এমন সন্ত্রাস করছে যে ভয়ে সবাই বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। ... ...
মোহন ফরেস্ট চেক পোস্টে যখন আসে সে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। তার জিনসের প্যান্ট ফেঁড়ে গিয়ে পায়ে অল্প অল্প রক্ত বেরোয়। নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলল তার নাম আনিস। তার কথাবার্তা ঠিক ছিল না। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কেইবা ঠিকঠাক কথাবার্তা বলতে পারে। অনেকটা ঘোরের মধ্যে সে বার বার তার মোটর বাইকের দিকে দেখাচ্ছিল। আর বলছিল একমাত্র প্ল্যাটিনা নামের বাইকে চড়েছিল বলে সে পালাতে পেরেছে। ব্যাপারটা কী , কার হাত থেকে সে পালাতে পেরেছিল, এসব না বলে খালি বাইকের কথা বলায় অভিজ্ঞ ফরেস্ট গার্ডরা সব বুঝতে পারে আর এক গ্লাস গরম দুধের ব্যবস্থা করে। সেই দুধ খেয়ে ধাতস্থ হয়েও আনিস খানিকক্ষণ চুপ মেরে বসেছিল তারপর ধরা গলায় আদমখোরের কাহিনী শুরু করল। ... ...
পিংলা বলে, তুমি যখন বলছ কবিতা লেখা তোমার স্বাভাবিক ভাবে এখন আসছে না, বাদ দাও কবিতা লেখা। সিনেমা অনেক বড় ফীল্ড ওতেই মন দাও না তুমি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ যখন রাশিয়া থেকে ফিরলেন – আমাকে নয়, কিন্তু – গুরুদেবের আশপাশে যে-সব গুণী মানুষরা সব-সময়ই থাকেন, শুনলুম কবি তাদের বলেছেন, ওখানে আইজেনস্টাইন নামের একজনের তৈরি করা ব্যাট্ল্শিপ পোটেমকিন নামে দীর্ঘ একটা সিনেমা উনি দেখে এসেছেন, সেই সিনেমার সঙ্গে এখানে যে-সব সিনেমা দেখেছেন তার কোন তুলনাই হয় না। উনি নাকি বলেছেন, অনেকের ধারণা সিনেমা আর কিছুই না, শুধু ক্যামেরায় তোলা একটা নাটকের মতো। এমনকি, নিজের নটীর পূজা সম্বন্ধেও নাকি বলেছেন, ওটা কোন সিনেমাই হয়নি, সিনেমা আধুনিক মানুষের আবিষ্কৃত একটা সম্পূর্ণ অন্যরকমের শিল্প – এ ছবি-আঁকা-মূর্তি-গড়া নয় যা গুহাবাসী মানুষরাও করত, এ কবিতা-লেখা-গান-গাওয়া নয় যা বেদ-উপনিষদের সময়েও মানুষের আয়ত্ব ছিল – এই শিল্পের ভাষাই অন্য, এবং সে-ভাষা এখন ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে, আর শিল্পের নতুন নতুন চমক শিখছে মানুষ। ... ...
দোকানপাটের চরিত্র বদলে গেছে। আগে শুধু থাকতো সব মিলিয়ে গোটা ১০-১৫ টি দোকান। বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ। বারোয়ারিতলা তথা ওলাইচণ্ডী পূজার কাছে জিলিপি, জিভে গজা, গজা, কাঠিভাজা, এবং রসগোল্লার দোকান। পরপর দুটি। তারপর চপ বেগুনি পাঁপড়ভাজা। আর গোলামহলের দুপাশে মাঝেরপাড়া যাওয়ার রাস্তা ধরে বাচ্চাদের খেলনার দোকান। লাট্টু, কটকটি, তালপাতার সেপাই, বাঁদর লাঠি, ছোট ঢোল ইত্যাদি। থাকতো সংসারের জিনিস। খান দুই তিন দোকান। হাঁড়ি কুড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার কড়াই, তাওয়া, কাঠের বেলুনি, খুন্তি ইত্যাদি। আগে বেশিরভাগ থাকতো লোহার। মাটির হাঁড়ি কুড়ি, জালার দোকানও বসতো। আশির দশকে তার ঘন্টা বাজল। স্টিলের বাসনকোসন ঢুকল ১৯৮৫র পর। ... ...
তার পুব দিকের ঢালের উঁচুতে বড় বড় ওটের ঘাস জন্মেছে। ওই ঘাসবনের পরেই খাড়া পাহাড় সোজা নেমে গেছে কোশি নদীর পাড় অবধি। একদিন খাড়াই পাহাড়ের উত্তর দিকের গ্রাম থেকে একদল মেয়েবউ ওখানে ঘাস কাটছিল। হঠাৎ এক বাঘ তাদের মধ্যে এসে পড়ে, হুড়োহুড়িতে এক বয়স্কা মহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঢাল বরাবর গড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বাঘটা যেমন হঠাৎ আসে তেমনই চিৎকার চেঁচামেচিতে রহস্যময় তার পালানো। খানিকটা ভয় কাটলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে মেয়েরা আর ঘেসো জমির ঢাল ধরে খানিকটা নেমে এক সরু ধাপিতে ওনাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেল। মহিলা কোঁকাতে কোঁকাতে বলেন তিনি মারাত্মক চোট পেয়েছেন। ... ...
প্লাবনের বিষয় হিমালয়ে নতুন নয়। ২০০০ সালে শতদ্রু নদের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে হিমাচল। ২০২৩ সালে অবশ্য বার বার এসেছে বিপর্যয়। এই বছরে মেঘ ভাঙার ঘটনা এবং তার ফলে হড়পা বান, এসব ঘটেছে বার বার। সারা বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। হিমালয় ব্যতিক্রম নয়। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যোগ হয়েছে মনুষ্যকৃত কিছু হঠকারী কার্যকলাপ। সেই কাজের মধ্যে অন্যতম হল যথেচ্ছ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি গড়ে তোলা। ... ...
কাজিদার আহ্বান তো আর ব্যর্থ হবে না, কয়েকদিন পরেই চিঠি লিখে কলকাতায় হাজির হয় পিংলা। স্বদেশীয়ানা, দেশপ্রেম – এইসব উত্তেজনাকর শব্দগুলোর কী আবেদন কাজিদার কাছে, তা পিংলার চেয়ে বেশি কে-ই বা জানে! কিন্তু যে উত্তেজনায় শুরু, কিছুদিন বা কয়েকবছর সেই উত্তেজনার বেগেই এগিয়ে চলা আর তারপর হঠাৎই একদিন উত্তেজনাতেই শেষ! কাজিদা যখন বহরমপুরের জেল-এ, তখন তাকে একটা চিঠি লিখেছিল পিংলা – তার স্পষ্ট মনে আছে সে চিঠির কথা – তাতে সে অভিযোগ করে বলেছিল স্পষ্ট কোন রাজনৈতিক আদর্শ কাজিদার জন্যে নয়, সে কখনও বিপ্লববাদী কখনও গান্ধীবাদী; মুজফ্ফর আহ্মদ সঙ্গে থাকলে সে আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের কথা চিন্তা করে, জেলে-চাষা-শ্রমিক-কৃষকের জয়ধ্বনি তখন তার কথাবার্তায়, মিটিং-মিছিলে আর গানে-কবিতায়। ... ...
লাঠি ঠুকঠুক করতে করতে সনাতনদা আর নির্মলের মা এলেন। নির্মল এখন বড় পুলিশ অফিসার। সনাতনদার নাম করে পিসি কাঁদলেন। আমার বাবা গুরুচরণকাকা সবাই মিশে গেল কান্নার জলে। গুরুচরণ কাকা আশ্চর্য বিষয়, আমাদের তুমি বলতেন এবং লালু কাকা বা গুরুচরণ কাকা কোনওদিন মদ বা হাঁড়িয়া খেতেন না। মদ খেতেন রাধুকাকা আর পণ্ডিতপাড়ার বাদল পণ্ডিত। বাদল পণ্ডিত বড় ভালো মনের মানুষ। ভালো কবিতা লিখতেন। যাত্রা করতেন। বাবার অকৃত্রিম সুহৃদ। আমাকে তুমি বলতেন। কী লিখেছো বাবা, শোনাও তো একবার। ... ...
তার পুব দিকের ঢালের উঁচুতে বড় বড় ওটের ঘাস জন্মেছে। ওই ঘাসবনের পরেই খাড়া পাহাড় সোজা নেমে গেছে কোশি নদীর পাড় অবধি। একদিন খাড়াই পাহাড়ের উত্তর দিকের গ্রাম থেকে একদল মেয়েবউ ওখানে ঘাস কাটছিল। হঠাৎ এক বাঘ তাদের মধ্যে এসে পড়ে, হুড়োহুড়িতে এক বয়স্কা মহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঢাল বরাবর গড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বাঘটা যেমন হঠাৎ আসে তেমনই চিৎকার চেঁচামেচিতে রহস্যময় তার পালানো। খানিকটা ভয় কাটলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে মেয়েরা আর ঘেসো জমির ঢাল ধরে খানিকটা নেমে এক সরু ধাপিতে ওনাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেল। মহিলা কোঁকাতে কোঁকাতে বলেন তিনি মারাত্মক চোট পেয়েছেন। ... ...
এই যে মানুষের হিমালয়কে দেখবার এত ইচ্ছা, সে তো শুধুই তীর্থ দর্শনের পুণ্যার্জনের জন্য নয়। ট্রেকিং করতে যাওয়া ভ্রমণেচ্ছুক মানুষের সংখ্যা কম নয়। পর্বতারোহণ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে স্পোর্টস হিসেবে। শুধুমাত্র ভারতবর্ষ নয়, সারা পৃথিবী থেকে আগত ট্যুরিস্ট, পর্বতারোহী এদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিন দিন। হিমালয়ে পদে পদে এত বিপদ, সে কথা কি মানুষ জানে না? হয়তো এই বিপদের জন্যই হিমালয়ের আকর্ষণ আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ... ...
আমাদের গ্রামে ১৯ মাঘ ওলাইচণ্ডী পূজার মেলা। এই মেলাতেই হিন্দু মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষ বাড়ি ফেরেন। ইদ বকরিদ বা পূজা অনুষ্ঠানে না ফিরলেও মেলায় ফেরা চাই। বহু মানুষ এভাবেই ঘরে ফেরেন। আমিও। ... ...
কথায় কথায় বাইরের কথা আসে। আজ বিকেলের পাওয়া গন্ধ নিয়ে রাজু কথা বাড়াচ্ছে না। এইসব গন্ধ ও একটু বেশি পায় আর পেলে গুটিয়ে যেতে থাকে। এটা কখনো কখনো ওকে ভয়ঙ্কর চুপ করে তোলে। তখন বাইরের সব অন্ধকার ওর মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। একজনের এরকম ডিপ্রেসড অবস্থা থাকলে অন্যরাও প্রভাবিত হয়। আজও রাজু কি সেরকমই আছে? আসলে অনেকটা পথযাত্রার ক্লান্তি আমাদের ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছিল। বিকেলের কথা , আদমখোরের কথা, রাজুর পাওয়া গন্ধের কথা কোন কথাটা যে কেন্দ্রে থাকবে তা ঠিক করতে পারছিলাম না কেউ। ... ...
বাবা বেঁচে থাকলে দিব্যেন্দুদার সঙ্গে জমতো ভালো। দিব্যেন্দুদাও বাবার মতো পার্টি পাগল, নাটক ও সংস্কৃতি পাগল মানুষ। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো স্বভাব। লোককে ধরে ধরে নাটক দেখান, ভালো গান শোনান আর ফল ফুলের চাষ করতে বলেন। বলেন, শুধু ধান চাষ করে বাঁচবে না। চাষিদের ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝান, আর্থিক স্বনির্ভরতার কথা। আমাদের মানিকতলা খালপাড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝেও এসেছিলেন এটা বোঝাতেই। ... ...
নেনোরা ছিল বেশ কয়েকভাই। নেনোর ব্যবহার ছিল খুব মিষ্টি। সবসময় হেসে কথা বলতো। সেই নেনো অসুস্থ জেনে এবং কলকাতা নিয়ে গিয়ে ডায়ালিসিস না করালে ছেলেটা বাঁচবে না জেনে জোর ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম। পার্টি অফিসের মালেকদা চিঠি লিখে দিলেন। বললেন, কলকাতায় কার্তিকদাকে দিতে। ... ...
কথায় কথায় ঝগড়া। কিন্তু আমারও বাবাকে ছাড়া চলে না। বাবারও আমাকে ছাড়া। আমাদের এলাকায় অঘ্রাণের নবান্নের দিন থেকে নানা জায়গায় মেলা আর যাত্রা শুরু হতো। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর একটা নতুন জিনিস শুরু হল। গ্রামে গ্রামে কবিতা ও গল্প পাঠের আসর। সঙ্গে গান। কখনও কারও বাড়িতে, কখনও মঞ্চ বেঁধে এ-সব চলতো। আজকের দিনে বিশ্বাস হবে না, মানুষের। নবম শ্রেণিতে পড়ি। ১৯৮০ সাধারণ অব্দ। সাহাজাপুর গ্রামে মঞ্চ বেঁধে কবিতা পাঠ ও গানের আসর। এরপর বোধহয় বাবাদের নাটকের দল এলএমজি বা লাইটম্যান গ্রুপের নাটক ছিল। কাকদ্বীপের এক মা। সে নাটক দেখে স্বয়ং স্রষ্টা উৎপল দত্ত প্রশংসা করেছিলেন। সিপিএমের বর্ধমান জেলার পরবর্তীকালের বহু দাপুটে নেতা ওই নাটকে অভিনয় করতেন। বাবাকে পার্টির লোকরা সবাই 'কাকু' বলতেন, আর পার্টির বাইরের লোকেরা এনামভাই, বা মাস্টারমশাই। ... ...
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন। পরীক্ষার পাহারা দিচ্ছি ১০ নম্বর ঘরে। আমার সঙ্গে ডিউটি পড়েছিল শুভলক্ষ্মী পাণ্ডে দিদির। ইতিহাসের অধ্যাপিকা। প্রচুর বই পড়তেন। শুভদির হাতে সেদিন দেখি 'নির্বাস'। সুধীর চক্রবর্তীর লেখা। শুভলক্ষ্মীদি সুধীরবাবুর খুব প্রিয় জানতাম। শুভলক্ষ্মীদিকে বললাম, বইটা দাও। পড়ি। তোমার এখন থাকার দরকার নেই। আমি হলে আছি। তখন কড়া পাহারা দেওয়ার জন্য আমার খুব কুখ্যাতি। একটা ছেলে দেখি, দেখতে সুদর্শন, খুব বিরক্ত করছে। টুকলি উদ্ধার করলেও আবার ম্যানেজ করে ফেলছে। আমি চেয়ার থেকে উঠে ওর পাশে গিয়ে বসে বই পড়তে শুরু করলাম। ... ...
তখন এক অতি অমানবিক প্রথা ছিল। দূরে পরীক্ষাকেন্দ্র। ২৬ কিমি দূরে বাড়ি থেকে। বর্ধমান শহরে। দিনে দুবার পরীক্ষা। তিন তিন ছয় ঘন্টা। আলাদা বিষয়। চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক। তখন বাসে বর্ধমান যেতে সময় লাগতো দু থেকে আড়াই ঘন্টা। বাস খারাপ হলে তো কথা নেই। পরীক্ষার আগের দিন অভিভাবকদের শহরে আসতে হতো ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকতে হতো রান্না করে খেতে হতো। ... ...
রান্না প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, একবার, বোধহয় ১৯৭৭/৭৮, পাশের গ্রাম ধারানে ফুটবল ম্যাচ খেলা। সেমিফাইনাল। আমাদের গ্রামের হোমটিম বেশ ভালো ছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়েই আটকে যেত। এইজন্য বাইরে থেকে খেলি/ খেলোয়াড় হায়ার করে আনা হয়েছে। বর্ধমান শহর থেকে একদল। সঙ্গে এলাকার প্রসিদ্ধ খেলোয়াড় জিন্না। একমাথা কোঁকড়া চুল। ফর্সা রঙ। বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে যেত। তখনকার দিনে ৫০ টাকা প্রতি ম্যাচ। আমাদের গ্রামকে টাকা দিতে হয়নি। গ্রামে বোনের বিয়ে হয়েছে। কী করে টাকা নেয়! গোলকিপারের নাম যতদূর মনে পড়ে রামু। বর্ধমানের খ্যাতিমান খেলোয়াড়। দাদা তখন রাজ কলেজের জিএস। তাঁর সুবাদে এসেছে। পয়সা লাগেনি। কিন্তু খাওয়া দাওয়ার মোচ্ছব। আমাদের বৈঠকখানায় উঠেছে। গর্বে বুক ফুলে উঠছে। একবার খেলোয়াড়দের দেখছি আরেকবার ছুটছি চুলোশালে। ... ...
পাতালপুরী আর রানিগঞ্জ শব্দদুটো কাছাকাছি দেখে আন্দাজ করতে পারছিস সিনেমার গল্পটা কী বিষয়ে? কয়লাখনি। সেই কতদিন আগে হক সাহেবের নবযুগ পত্রিকায় – আরে, হক সাহেব বলছি কেন? তুই তো নিজেই ওই পত্রিকার সোল সেলিং এজেন্ট ছিলি, মনে নেই? – কয়লাখনির শ্রমিকদের শোষণের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখেছিলুম একটা। এখন আবার এসেছি ওদের সঙ্গে মিশতে; সারা দিনের ডিউটির পর ওদের বস্তিতে গিয়ে ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে, কী ধরণের অবসর ওরা কাটায় তাই বুঝতে। এই সব বুঝে তারপর গান লিখব, সুর দেব তাতে। আরও কয়েকটা কাজ করব, শৈলজাকে বলা আছে। ... ...