অনেকে নাকি রাতের বেলা পুরনো বাড়িটার ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ শুনেছে। মড়ার খুলির ভেতরে টকটকা রক্ত নিয়ে নাকি ফকির পান করে। এইসব গল্প ছড়িয়ে পড়াতে এখন মাতবর ইদ্রিস আলীও বিব্রত বোধ করেন। অনেকে তার কাছে অভিযোগ নিয়ে গেছে। তাদের ধারণা এই লোক গ্রামে থাকলে গ্রামের ক্ষতি হবে। এর আসল নাম পরিচয়, কোথা থেকে এসেছে, কেউ জানে না। কী তার উদ্দেশ্য এখানে তাও বুঝা যাচ্ছে না। ইদ্রিস আলী অভিযোগের যৌক্তিকতা বুঝতে পারেন কিন্তু ফকিরকে চলে যাবার কথাও বলতে পারেন না। তার ভয় হয়। ... ...
তালাশ মাহমুদ বললেন, বেশি বুজরুকি দেখালে, আর বেশি বললেই যুক্তি শক্ত হয় না। আপনার ম্যাডামের সব কেচ্ছাকাহিনী শেষ করে দেব সামনের লেখায়। তাই সময় লাগছে। এর মধ্যে এখন আবার আরেক জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে। সেখানে ক'দিন থাকতে হবে, পরিস্থিতি কেমন হবে, কীরকম সময় পাব জানি না। যদি সময় পাই তাহলে ওখানে বসেই লেখা শেষ করে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। চিন্তার কিছু নেই। একশো ভাগ নিশ্চিত থাকুন, আমি জিতবই। কারণ আমার আগ্রহ সত্যে। সবুর খান বললেন, তাহলে আগে কিছু বলুন, দুয়েকটা পয়েন্ট। তালাশ মাহমুদ বিরক্ত স্বরে বললেন, কী আর বলব, এসব রেট্রোফিটিং, কিছু জেনারালাইজড অনুমান করে, তারপর যেটা মিলে ওইটারেই আপনারা সবাই মিলে সামনে আনেন। এসব চালাকি তো নতুন না। ... ...
রাজামশাইয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “আপনার রাজত্বকালের পনের বছর পূর্ণ হতে চলল। প্রথম দুবছরের কিছু গৌণ বিদ্রোহ এবং দু-একটা ছোটখাটো যুদ্ধের পর এই রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। অতএব অস্ত্র-শস্ত্রের কোন ঝনৎকার বহুদিন শোনা যায়নি। অসিবল্লভের সমস্যাটা ঘটছে সেখানেই। অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, অস্ত্র-শস্ত্রের চাহিদা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের কোন প্রয়োজনই থাকছে না। অসিবল্লভের কথায় ওর অস্ত্রনির্মাণশালায় যে ভাণ্ডারগুলিতে ও নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ করে, সেগুলিতে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। উপরন্তু, সংরক্ষিত অস্ত্রশস্ত্রগুলির অনেকাংশই দীর্ঘ অব্যবহারে জং ধরে এবং ধুলো পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে”। রাজামশাই চিন্তিত মুখে বললেন, “হুঁ। তার মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন, রাজ্যের পক্ষে নিরঙ্কুশ শান্তিও কাম্য নয়”? ... ...
হ্যাঁ শোন, বলে সে, যাবার আগে তোমাকে আর একটা অনুরোধ করব। এই অনুরোধটা সুধাকান্তদাদার পক্ষ থেকে। সুধাকান্তদাদা বলেছেন, গত-বছর সতেরই ফেব্রুয়ারিতে তুমি নাকি রেডিওতে বাংলা ছন্দ নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেছিলে। রেডিওর ভাষায়, কথিকা। ওঁর ভাষাতেই বলি, উনি বলেছেন, অনবদ্য। বলেছেন, এই কথিকা শুনে উনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তুমি কীভাবে সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছ, কবিতা তোমাকে ছেড়ে গেছে! সুধাকান্তদাদা আমাকে বিশেষ করে তোমাকে বলতে বলে দিয়েছেন যে, তুমি যে শুধু কবিতা লেখা চালিয়েই যাবে তা-ই নয়, রেডিওতে তুমি কবিতা রচনার একটা শিক্ষাবাসরও চালু করতে পার। তুমি ইচ্ছে প্রকাশ করলে রেডিওর কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই রাজি হবে। শুধু যে নতুন কবির দল আর কবিতা লেখায় উৎসাহীরাই এতে উপকৃত হবে তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠিত অনেক কবিরও তুমি তাতে কৃতজ্ঞতাভাজন হবে। ... ...
অনেক দূরের জিনিষ দেখতে পাওয়া আর তার ফলে যে সব তথ্য যোগাড় হল তাই দিয়ে অতীতের বিভিন্ন সম্ভাব্য ছবি ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক মহাকাশ গবেষণা আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কত রকমের তরঙ্গের ব্যবহার, কত রকমের দূরবীন, কত মাপজোক। অনেকে নিজের দরকারে বা শখে একনলা কি দোনলা দূরবীন কেনেন, ব্যবহার করেন, সাজিয়ে রাখেন। আমি এ পর্যন্ত যে দু-তিনটি কিনেছি, নিতান্ত মামুলি, খেলনার বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। হারিয়েও গেছে তারা। তবে অন্য একটি দূরবীন মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। স্মৃতির দূরবীন, ফেলে আসা জীবনের ছবি দেখতে। কতটা অতীত দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, যেন ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা। যা ঘটেছিল তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, যতটা পারা গেল। ... ...
রামজন্মভূমি ন্যাস কমিটি গড়ে উঠল। মাথায় রইলেন রামচন্দ্র পরমহংস। পিছনে অশোক সিঙ্ঘল, প্রবীণ তোগাড়িয়া। আর তাঁদের প্রধান মুখ তখন আদবানি। বাজপেয়ীকে ছাপিয়ে উঠতে চাইছেন। এরমধ্যেই ধুয়ো উঠল বোফর্স কেলেঙ্কারির । রাজীব গান্ধির অর্থমন্ত্রী মান্ডির রাজা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে এলেন। বের হলেন আরিফ মহম্মদ খান এবং অরুণ নেহরু। ভিপি সিং এবং আরিফ মহম্মদ খান তখন বামপন্থীদের নতুন নায়ক। আরিফ মহম্মদ খান আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মুসলিম মহিলা বিলের বিরোধিতা করে। তিনি বলতে বলে এলেন সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে। বর্ধমান টাউন হলে। হইহই করে সবাই গেলাম। এরমাঝে এসেছে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬। ... ...
আমার গ্রামজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ ছিল এই মাঠপাহারার দায়িত্ব পাওয়া। সপ্তাহে একদিন পালা পড়তো বাড়ি পিছু। মনে হতো রোজ যাই। ধানের খড়ের ঘরে কী উষ্ণতা অকল্পনীয়। আমি যদি নিজে ছবি বানাতে আপ্রি তবে এই দৃশ্য রাখবোই। সবচেয়ে ভয়ের ছিল, বউ মারার মাঠে রাখপাহারা। ভূতের ভয়ে যেতে চাইট না। আমি আর সিরাজ, বছর পাঁচেকের বড়, নাম ধরেই ডাকতাম, গ্রামের প্রথা অনুযায়ী, বেছে নিতাম ওই মাঠ। নুরপুর পলাশনের লোকদের সঙ্গে দেখা হতো। গল্প হতো। ওইটা ছিল আমাদের গ্রামের মির শেষসীমা। ... ...
যাব ব্রাতিস্লাভা। স্লোভাকিয়া দেশটি সবে আপন পতাকা উড়িয়েছে; আগে সে দেশে যাওয়ার পথ ছিল পুরনো চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ দিয়ে (১৯৭৭ সালে প্রথম ইউরোপে পৌঁছে সেখানে প্লেন বদল করেছি)। রাজধানী হলেও ব্রাতিস্লাভার বিমানবন্দর আকারে অতি ক্ষুদ্র। ১৯৯৬ সালে ব্রাতিস্লাভা এয়ারপোর্টে নেমে কোন ট্যাক্সি পাই নি। আরেকজনের সঙ্গে কোনমতে বাবা বাছা করে ভাগের গাড়ি চড়ে শহরে গিয়েছি। লন্ডন থেকে কোন প্লেন সরাসরি সেখানে যায় না- ইউরোপের কোথাও প্লেন বদলাতে হয়। ভিয়েনা-ব্রাতিস্লাভার ফ্লাইট কিছুকাল চালু ছিল কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের এই উড়ানে খরচা পোষায় না বলে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। তার চেয়ে সহজ তাদের প্রাক্তন প্রভুর দেশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে গিয়ে গাড়ি, নৌকো ( স্পিড বোট ) বা ট্রেন ধরা। সময় লাগে বড়জোর এক ঘণ্টা। দূরত্ব মেরে কেটে ৮০ কিমি। সীমান্ত খুলে গেছে। ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেখালেই অবারিত দ্বার; বড়জোর একটা ছাপ মেরে দেবে। ... ...
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। ... ...
অসুস্থ সুভাষ তখন জামাডোবায়, তাঁর চিকিৎসক-বড়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সারা বাংলা যখন ক্ষোভে উত্তাল, বিশেষ একটি উচ্চকিত কবিকণ্ঠের কোন স্বর শোনা গেল না কিন্তু সেই মুহূর্তে। সে-কণ্ঠটি বেশ কিছুদিন ধরেই নীরব হয়ে আছে। শুধু রাজনীতিতেই যে সে নীরব তা-ই নয়, সবাই জানে কবিতা সে আর লেখেই না প্রায়, গ্রামোফোন কম্পানীর রিহার্স্যাল রূমের বাইরে যা বলে সে, তাতে ঘন ঘন আল্লাহ্ বা কোন ভগবানের নাম শোনা যায়, কোন পরম শক্তির অস্পষ্ট ইচ্ছার কথা সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বেও হয়তো শোনা যায় কখনও কখনও! তরুণ সুভাষ যে “জ্যান্ত মানুষের” নেতৃত্বে কংগ্রেস দলকে উজ্জীবিত করবার আশায় ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক সময়, সেই নজরুল – আজকের প্রায় নিঃস্ব নজরুল – কী করছিলেন তখন? শোনা যায়, অনেককেই তখন পণ্ডিচেরিতে স্থিত অরবিন্দর সঙ্গে তাঁর যোগ-শরীরে সাক্ষাতের কাহিনী কেমন-একটা ঘোরের মধ্যে শোনাতেন তিনি সেই-সব দিনে। অরবিন্দকে যোগ-শরীরে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে নজরুল কি পরামর্শ করছিলেন কিছু? তাঁর যাবতীয় বঞ্চনার কাহিনী অন্তত মনে-মনেও নিবেদন করছিলেন যোগাভ্যাসের পায়ে? ... ...
প্রতিবাদে বাবাও বোধহয় কাঁসার থালাতেই খেতেন। 'হিন্দু' বাড়িতে কাঁসার থালা সম্মানসূচক হলেও আমাদের বাড়িতে যতদিন ঠাকুমার শাসন ছিল, কাঁসার থালা ছিল সংরক্ষিত। গেলাম। খেলাম। কাঁসার থালায় চুড়ো করে ভাত। পাশে আলু ভাজা, একটা সব্জি, ডাল আর হাঁসের মাংস। হাঁসের মাংস ততো মশলাদার নয়। খেলাম তো বটে, মনে মনে খচখচ করতে লাগল, ভাতটা কি পাথর হয়ে পেটে থেকে যাবে। রাত কাটলে, দিব্যি সব, পায়খানা হয়ে বেরিয়ে গেল। তা অনেকেই বোধহয়, এখনো আমার ঠাকুমার মতো হয়ে আছেন। ... ...
আমার বাবার মুখে শ্রদ্ধেয় কয়েকজন নেতার নাম উচ্চারিত হতো। মুজফ্ফর আহমেদ, আবদুল হালিম, পি সুন্দরাইয়া, হরেকৃষ্ণ কোঙার এবং নাগি রেড্ডি। পি সুন্দরাইয়া ১৯৭৬-এ পার্টি সংশোধনবাদী হয়ে যাচ্ছে বলে চিঠি লিখে পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদ ও পলিটব্যুরো সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ায় কষ্ট পান। জনসঙ্ঘের সঙ্গে হাত মেলানোয় ছিল মূল আপত্তি সুন্দরাইয়ার। বাবা অবশ্য ইন্দিরা জমানার অবসানে প্রাণপণ লড়ে যান। ... ...
পাঁচশ বছরের অটোমান রাজত্বে মাসিদোনিয়া কোন রাজ্য (সঞ্জক) ছিল না, ভারদার নদী বয়ে গেছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, সেই নদী অথবা প্রধান শহর উস্কুপ (আজকের স্কপয়ে) এর নামেই তার নাম। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসের (এন আর সি) প্রশ্ন ওঠে নি, কোনো রাজদপ্তরে পাসপোর্ট জন্মকুণ্ডলীর কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয় নি, তাঁরা কেউ ঘুসপেতিয়া নন। মাসিদোনিয়ানরা কোন স্বতন্ত্র জনজাতি নয়, আজকের বুলগারিয়া গ্রিস আলবানিয়া সর্বত্র মিলে মিশে বাস করেছেন – তাঁরা সংখ্যালঘু কিন্তু সুলতানের কাছে সবাই প্রজা। ... ...
বিদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি, বিশ্বব্যাঙ্কের শর্ত, বিদেশে মস্তিষ্ক পাচার তথা ব্রেন ড্রেন, এক চব্বিশ হাজার রকম ব্রান্ডের ওষুধের বদলে শুধু একশো চব্বিশ রকমের জেনেরিক নামের ওষুধ চাই, শিক্ষা স্বাস্থ্য কৃষি বীমা ব্যাঙ্কে বেসরকারিকরণ চাই না--এইসব ধ্বনিতে তখন আকাশ বাতাস মুখর। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা লেখা থাকতো পেট্রল ডিজেল কেরোসিন কয়লা গ্যাসের এক টাকা দুই টাকা দাম বৃদ্ধির খবর। খবরের কাগজ তোলপাড় করে ফেলতো দুধ পাঁউরুটির দাম ১০-২০ পয়সা ( টাকা নয় পয়সা) বাড়লে। ... ...
আনিসকে কেন্দ্রে রেখে আসরাফুলের আর আদমখোরের ব্যাপারে দুটো সুস্পষ্ট মত বেরিয়ে এসেছে।প্রথম মত , ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সার্চ পার্টি খুবই তৎপর ছিল কিন্তু তারা আসরাফুলের শরীরের কিছু পাচ্ছে না। দ্বিতীয় মত, করবেট আর ডাঃ রাওয়াতের টিম খুঁজে পাচ্ছে আসরাফুলের ডান হাত যা আদমখোর খায়নি। দুজনে মিলে এই সিদ্ধান্তে এলেন : বাঘটা মেয়ে বাঘ, যার সঙ্গে দুই সাব অ্যাডাল্ট। দ্বিতীয় মতটা যেহেতু ববিচাঁদের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মেলেনি, তাই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সাহাবরা ওটার সম্পর্কে চুপ। মিডিয়াও ববিচাঁদের কথাই বলে চলে কারণ সে জীবিত ,কথা বলতে পারে, যা হাজার চেষ্টা করলেও আসরাফুল পারবে না। ... ...
ঠিকই বলেছেন আপনার শাশুড়ি, বলে ভূতসিদ্ধ। সম্ভবত ওই মেয়ের ভূতই ঢুকেছে আপনার স্ত্রীর শরীরে, আর খুড়িমা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ওর আক্রমণ রুখতে। যাই হোক, বলতে থাকে ভূতসিদ্ধ, গত দশ দিনে ওকে – মানে ওই ভূতকে – আমি অনেকবার নামিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওকে বুঝিয়েছি ও ভুল মানুষকে ধরেছে। তাকে ছেড়ে ওর চলে যেতেই হবে। ও রাজি নয়। অনেক ভয় দেখিয়েছি আমি, তবুও ছেড়ে যেতে ও রাজি নয়। এখন রাস্তা একটাই। ভূত তাড়াবার মহৌষধ একজন ভূতকে দিয়েই আমি তৈরি করিয়ে নেব। কিন্তু শুধু যে সময় লাগবে তাই-ই নয়, অনেক কষ্ট অনেক খরচ। পেরে উঠবেন আপনি? সময় ধৈর্য এবং খরচ, এ-চিকিৎসায় এই তিনটের কোনটাই কম হলে চলবে না। ... ...
জলবায়ু পরিবর্তনকে এই বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি দায়ী করা যেতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সম্মুখভাগের অর্ধগলিত অংশে হ্রদ তৈরি হয় প্রাকৃতিকভাবে। এই হ্রদের তিন পাশের দেওয়াল নির্মিত হয় হিমবাহ বাহিত মোরেন দ্বারা। মোরেন শব্দটির অর্থ হল যে পাথর ও পলি হিমবাহ পাহাড় ক্ষইয়ে ভেঙে বয়ে নিয়ে আসে। এই মোরেন-এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় আকারের পাথর থাকে। সূক্ষ্ম দানার পলি খুবই কম। কারণ হিমবাহের গতি শ্লথ; ভেঙে আনলেও পাথর বেশিদূর বহন করে নিয়ে যায় না। ... ...
মাসিদোনিয়াতে তাঁরা জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি বললেন জনশ্রুতি এই যে মাসিদোনিয়ান সরকার তাঁদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আলবানিয়ান ভাষা শেখানো হয় না, ছেলে মেয়েদের আলবানিয়ান নাম দেওয়া নিষিদ্ধ, সরকারি দফতরে, আর্মিতে চাকরি জোটে না। ক্লিনটন সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু আপনাদের জানাতে পারি এটি সম্পূর্ণ অসত্য। মুশকিল হলো প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি এমন সব রাজনৈতিক ইসু তুলে ধরলেন যার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা ছিল না। ... ...
রাইফেলের মাছি ওর কপালে তাক করে ঘোড়ায় চাপ দিলাম আর , ঘোড়াটা টেপার সঙ্গে সঙ্গে সেফটি ক্যাচটাও খুলতে থাকি যাতে ওটা খোলা আর গুলির আওয়াজ এক সঙ্গে হয়। রাইফেল ছোড়ার এই উল্টোমুখি কায়দায় কী ভাবে কাজ হয় জানিনা , কিন্তু কাজ অবশ্যই হয়েছিল ; আর যখন কাছ থেকে ছোড়া শক্তিশালী রাইফেলের গুলি ওর কপাল ফুঁড়ে দিল শরীরটায় একটা ছোট কম্পন হয় ,ওর ল্যাজটা ছড়ানোই থাকে , পেছনের পাটা চারা গাছটার ওপরের ডালে যেমন ছিল রয়ে যায় ; উঁচু নাকটা এখনো স্বর্গের দিকে। ও যেমন ছিল ঠিক তেমনই রয়ে যায় যখন আমি প্রথমটার পরপরই সম্পূর্ণ অকারণেই , দ্বিতীয় একটা গুলি মারলাম। যে বদলটা চোখে পড়ে তা হল পেটের ওঠানামা বন্ধ হওয়া; আর কপালের দুটো আশ্চর্য রকমের কম ছোট ফুটো থেকে রক্ত চুইয়ে পড়তে থাকে। ... ...
আমরা নবম দশম শ্রেণিতে বাড়ি থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভর্তি হয়েছি। গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। পুরানো পাঠকদের মনে থাকতে পারে এ-সব কথা। আগের স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলে সরস্বতী পূজা করার দায়িত্ব পাওয়া যেত। করেছি ধুমধাম করে। তবে গ্রামে খিচুড়ি খাওয়ার চল ছিল না পেটপুরে। প্রসাদ মিলত। লুচি সুজির হালুয়া নানারকম ফল। খাওয়া নয়, পূজার আয়োজন ছিল আসল। অন্যদিন শীতকালে লাইতে (নাইতে/ চান করতে/ শহুরে স্নান করতে) ইচ্ছে করতো না, ওইদিন ভোর ভোর উঠে পুকুরে ডুব দিয়ে নতুন জামা পরে ছুট স্কুলে। ধুপধুনোর গন্ধ আমাকে খুব টানতো। আমার তো পরে ইচ্ছে করতো, বর্ধমানে অমল ব্যানার্জিদের পারিবারিক দুর্গাপূজার আয়োজন দেখে, একটা আস্ত দুর্গাপূজা একাই করতে। ২০১১ থেকে ২০২২ একটা দুর্গাপূজার অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে আমি পূজা পরিচালনা করেছি। ভোর পাঁচটায় উঠে রাত বারোটার সময় ঘরে ঢুকেছি। চারদিন দুবেলা খাওয়ার আয়োজন (পেটপুরে প্রসাদ ধরলে চার বেলা) একশো পরিবারের। সাড়ে তিনশো থেকে সাড়ে চারশো মানুষের। ... ...