লেখক ইন্দ্রাণী দ্রষ্টা হয়ে দেখেন পরিস্থিতির চাপে অসহায় মানুষজন। এবং নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলেন ‘সুখী গৃহকোণ, শোভে গ্রামোফোন’ সমাপ্তির সম্ভাবনাগুলোকে। কোন ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চোখে পড়ে না। হিংসা ঝলসে ওঠে নীল আকাশে অকস্মাৎ। না একটু ভুল হল। ইন্দ্রাণীর বিশ্বে হঠাৎ করে কিছুই ঘটেনা। বজ্রগর্ভ মেঘের প্রস্তুতি চলে সন্তর্পণে। সমতলের নীচে টেক্টোনিক প্লেটের নড়াচড়া সহজে চোখে পড়বে না। কিন্তু ঈশান কোণে জমতে থাকা মেঘ মনোযোগী পাঠকের রাডারে ধরা পড়বে। ... ...
বিক্রমাদিত্য আর বেতালের গল্প কত পুরোনো ভাবো। ভারতীয় গল্প-সংস্কৃতি পুরোই হবেনা এই সিরিজটা বাদ দিলে। আমি খুঁজতে খুঁজতে, ধুলো, মাকড়্সার জাল হাতড়ে অনে-এ-এক দূরের এক দেশের উপকথার মধ্যে একটা গল্প খুঁজে পেলাম যার সাথে এই বিক্রম-বেতালের (পুরনো গান মনে আছে? বিক্রম বিক্রম বিক্রম, বেতাল তাল তাল?) বেবাক মিল! দেশটার নাম জর্জিয়া। হ্যাঁ, পূর্ব ইউরোপের সেই ককেশাস পাহাড় আর কালো সমুদ্দুরের দেশ। গল্পটা হলো 'রাজা আর আপেলের গল্প'। ... ...
গ্রীষ্মের রাতে নদীর দিক থেকে হাওয়া বাতাস খেলে যায় শহরের বুকে। মল থেকে বেরিয়ে তিনবারের চেষ্টায় সিগারেট ধরালো পঙ্কজ। পার্কিংএর দিকে হাঁটল। গাড়ির দরজা খুলতে যাবে, যেন হাওয়া ফুঁড়ে বেরিয়ে এল এক মূর্তি- ফাটা জুতো, মলিন জামা প্যান্ট, গোঁফ দাড়ি, লম্বা চুল- মুখ থেকে ভকভক করে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, একহাত পঙ্কজের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, অন্যহাত পিছনে। পঙ্কজের হৃদয়ের বরফ আতঙ্কের উত্তাপে গলতে শুরু করেই আবার জমাট বেঁধে গেল। পার্কিং লটের আলোয় লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, যে নিরানন্দ জগত থেকে আগত একমাত্র মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে , এ লোক সেই জগতেরই কেউ। এই আলোয়, এই নিয়ন সাইনের নিচে যাকে মানায় না। পঙ্কজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পাতল সেই লোক। ... ...
২০২১ সালের গ্রীষ্মে স্যান হুয়ানের গভর্নর রিকার্ডো রোসেলোর কিছু চ্যাট মেসেজ কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ফাঁস হওয়া ঐ মেসেজগুলি রোসেলো এবং তাঁর ঘনিষ্ট বৃত্তের মধ্যে বিনিময় হয়েছিলো। সেগুলো থেকে জানা যাচ্ছে হারিকেন মারিয়ায় যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁদের প্রতি রোসেলো অ্যান্ড কোম্পানি খুবই উদাসীন মনোভাব পোষণ করে। এছাড়াও ঐ মেসেজগুলিতে নানা আপত্তিকর মন্তব্য এবং দূর্নীতির স্বীকারোক্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট মানুষ এর পরেই রাস্তায় নেমে আসে। জালিয়াতির অভিযোগে রোসেলোর দুজন শীর্ষ আমলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর, জুন মাস নাগাদ, ব্যাপার খুবই ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের হঠাতে গিয়ে বলপ্রয়োগ করে, ফলে আরো বেশি প্রতিবাদ, পুরো দ্বীপ জুড়ে অন্দোলন ইত্যাদি হয়। বিদেশ থেকে নামকরা কয়েকজন শিল্পী আসেন প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে (তাঁদের একজন রিকি মার্টিন )। ... ...
লুলু হোয়াইট সাদা হয়েও সাদা নয়, অক্টারুন। সাত ভাগ দুধে, এক চামচ কফি মেশানো সৌন্দর্য নিয়ে লুলুর দাম আকাশছোঁয়া। তার মেহগনি হল বিখ্যাত অক্টারুন আর ক্রেওল সুন্দরীদের জন্য। তাই না এমন চকমিলান জায়গার পত্তন করতে পেরেছে! খিলানওয়ালা চারতলা প্রাসাদ। সেখানে পনেরো-বিশখানা ঘর আছে অতিথি আপ্যায়নের। কোনো ঘর পারস্যের কার্পেটে মোড়া, কোথাও জাপানের ছবিতে চিত্রবিচিত্র, আবার কোনো ঘর খোদ প্যারিস থেকে আনা আসবাবে ঠাট বাড়িয়েছে। প্রতিটা ঘরের সঙ্গে একেকটা গা ধোওয়ার জায়গা – যেখানে জলকেলি করতে করতে নারীসঙ্গের সুখ পেতেও কোনো অসুবিধা নেই। শ্বেত মার্বেলের প্রশস্ত সিঁড়ির দু’ ধারে পুষ্পকুঞ্জ – যেখানে অতিথির অপেক্ষায় লুলু হোয়াইটের অক্টারুনদের নিজস্ব পরিচারিকারা বসে থাকে। যাদের অক্টারুন বা ক্রেওল সুন্দরী-অবধি পৌঁছানোর হিম্মত নেই, তারা পরিচারিকাদের সঙ্গেই বিশ্রম্ভালাপ করে যায় খানিক। ... ...
আমার যেমন হয় – সন্ধেবেলা হলেই খিদে পেয়ে যায়! গেস্ট-হাউসে ঢুকেই খাবার টেবিলে বসে পড়ার ধান্ধা করছিলাম, যে কোনো একটা চেয়ারে। পিছন থেকে টান দিল এক কলিগ – সেই প্রথম জাপানে বসার এটিকেটের সাথে পরিচয়। এই নিয়ে আলাদা করে একটা লেখা হয়ে যাবে – পদমর্যাদা অনু্যায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। যারা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার লোকজন – তাদের বসার ব্যবস্থা প্রথমে এবং তারা যেখানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘কামিজা’। কম পদমর্যাদার লোকেরা যে স্থানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘সিমোজা’ .... আমাদের বসতে বলল সেই ঘরে ঢোকার দরজার থেকে দূরের চেয়ার গুলোতে। এটাও একটা রীতি – অতিথিদের বসতে দেওয়া হয় দরজার থেকে দূরে, আর দরজার কাছে থাকবে হোস্ট। এর কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং – এই রীতি চালু হয় বহু বহু আগে, জাপানের ফিউডাল পিরিওডে – যেখানে দুমদাম শত্রুর আক্রমণের বেশ চল ছিল। আমাদের মত জাপানীদেরও বিশ্বাস অতিথি নারায়ণ – তাই অতিথিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রবেশদ্বারের থেকে সবচেয়ে দূরে বসতে দেওয়া হত। ... ...
এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও ফের লিভিংস্টোনের খোঁজ শুরুর কাহিনী। ... ...
এখন যখন আমরা পত্রিকার পাতায় পড়তে বাধ্য হই তিন দিনের সদ্যজাত শিশুকে ডাস্টবিন হতে তুলে বাঁচাল ক্ষুধার্ত কুকুর, তখন আমাদের মনে পড়ে যায় ৬১ বছর আগে লেখা হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’ নামের গল্পটির কথা। যদিও সেই গল্পে কাদু শেখের বিধবা বোনকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল, চিহ্নিত করা গিয়েছিল শকুনদের, কিন্তু এই ২০২১ সালে যখন নগরের ডাস্টবিনে বা নালায় মাঝে মধ্যেই সদ্যজাত শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন সেই মা-দের আর চিহ্নিত করা যায় না। চিহ্নিত করা যায় না শকুনদেরও। এই ৬১ বছরের ব্যবধানে দেশটা ছেয়ে গেছে কাদু শেখের বিধবা বোন আর অসংখ্য শকুনে! কিন্তু হাসান আজিজুল হক আর নেই! ... ...
‘চাঁপাডাঙার বউ’ উপন্যাস ভাঙনের কাছাকাছি গিয়ে আবার এক হয়ে যাওয়ার কাহিনি। নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়ে বাড়িতে এসেছিল ‘বড়বউ’। দেওর মহাতাপ তখন আট বছরের বালক। তাই তারা পরস্পরের বাল্যসঙ্গী। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক নিবিড় ভালোবাসা ও ভরসার সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল। সেই ছিল ছোটবউ মানদার রাগের কারণ। গ্রামের পাঁচজনে বউদি-দেওর সম্পর্ক নিয়ে পাঁচ কথা বলতে শুরু করায় সেতাবেরও মনে সন্দেহ জাগে। একথা শুনে বড়বউ রাগ করে তার স্বামীকে বলত, ‘ইতর’। বলত, পটোয়ারি-জালিয়াতি বুদ্ধিতে এই সম্পর্কের হিসেব বোঝা যায় না। ... ...
... এই লাইনে এ লেখার সমালোচনা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি, সেটাই এই লেখার উপজীব্য। হয়নি, কারণ, একটা বড় অংশের লোক, যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা উপন্যাস এবং গল্প, কোনোটাই পড়েননি। কী পড়েছেন? না, ফেসবুক আর আনন্দবাজারের চিঠি। কনিষ্কর অভিযোগ, শ্রীজাতর উত্তর। হয় প্রোফাইলে গিয়ে পড়েছেন, কিংবা তাও নয়, স্ক্রিনশট পেয়েছেন, হাতের গোড়ায়, এবং চোখ বুলিয়ে উদ্ধার করেছেন। এরকমও লোকজন গর্ব করে বলছেন, যে, দু’পক্ষের বক্তব্যই পড়লাম, অমুকেরটা আমার বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। অতএব অমুক চোর (অথবা নয়)। এ যেন, “জানলার বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?” – এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলছেন, “গুগল আর ইয়াহু দু’জনেরই বক্তব্য পড়লাম। আমার জানলার বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিনা, এ ব্যাপারে ইয়াহুর বক্তব্যই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হল”। ... ...
চকচক করে উঠেছিল আমিনার চোখ, আশা আর আনন্দে চোখের কোলে টলটল করছিল দুটো মুক্তোদানা। ডান হাতে খামচে ধরেছিল মনিরুদ্দির পেটি। একটা খপর এনে দাও আমায়। আজ থে তুমি আমার ভাইজান হলে, আলেফের খপর তোমাকে আনতেই হবে ফের। কি কুক্ষণে মনিরুদ্দি সেদিন ব্যাপারি বুদ্ধি খেলিয়ে ভাইজান হবার সুবাদে কম পয়সায় মাল খরিদ করেছিল। তখন কি জানত ওয়াহিদ বক্স কোনো খবর আনতে পারবে না। মোদ্দা কথা হল, ওয়াহিদ নিজে তো যায়নি, এরকম বছর বছর লোক যায়। তার মধ্যে থাকবে কোনো এক আলেফ। কিন্তু যদি দশজনা যায়, ফেরে মুরুব্বি গোছের দু’জন। ক’মাস বাদে তারা আবার সঙ্গীসাথী জুটিয়ে পেটি নিয়ে সফরে রওয়ানা হয়ে যায়। আর সবার যাওয়ার জায়গা – সে-ও কি এক? বুঝিয়েছিল ওয়াহিদ বক্স। কেউ যায় লন্ডন, জোহানেসবার্গ, আবার এক দল যাবে নিউ ইয়র্ক, নিউ অরলিন, ভ্যাঙ্কুভার – এমনই হরেক বন্দর। কে আলেফ আলি, সে কোন দিকে গেছে, কে জানবে তার ঠিকানা? ... ...
হাজার বছর ধরে ইহুদি পেটানো, পোড়ানো এবং খ্যাদানো এক জনপ্রিয় ক্রীড়ায় পরিণত হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসে চড়ানোর অপরাধের কলঙ্ক ইহুদিদের মাথায় লাগানো রইল। তার ওপরে ইউরোপের গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় কেউ রটিয়ে দিলো ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুর রক্ত দিয়ে তাদের পুজো আচ্চা করছে (ব্লাড লাইবেল) অথবা তারাই ভয়ঙ্কর প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) কারণ। আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে ইহুদি হত্যায় লেগে গেলো। খুন কা বদলা খুন। নাৎসিরা কোনমতেই এই খেলাটির পেটেন্ট দাবি করতে পারে না। বরং ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মত আরেকটি নতুন ক্রীড়া উদ্ভাবনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের প্রাপ্য। জাতি ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে কি ভাবে একটা গোটা টিমকে রেড কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করা যায় সে খেলা দেখাল ইংরেজ। সিনাগগ বন্ধ হয়েছে, আত্ম পরিচিতির জন্য ইহুদিদের বিশেষ ব্যাজ পরা আবশ্যক (সাড়ে ছশো বছর বাদে নাৎসিরা এঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)। ... ...
টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ রেখে এক দুই তিন করে ছায়াপিণ্ডরা সব পাশের বাড়ির ছাদে উঠে আসছিল। অন্ধকারে লাল বিন্দু দেখতে পেল বিপ্লব- সিগারেট ধরিয়ে মজা দেখছে সুধীন। এই সময় বাড়ির সামনে বলাইএর রিক্সা এসে দাঁড়িয়েছিল।মিঠুকে নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল বলাই। টেনে টেনে প্যাডেল করছিল। কমজোরি আলোয় এ'পাড়ার প্যাঁচালো গলি আবার তার সমস্ত রহস্যময় বাঁক নিয়ে উপস্থিত। অসম্পূর্ণ এক্কাগাড়ির মত লাগছিল বলাইএর রিক্সাকে। ভৌ ভৌ করল কালু। রিক্সার পিছনে দৌড়োলো খানিকক্ষণ। ছন্দা দ্রুত নামছিল সিঁড়ি বেয়ে - দরজা খুলে দেবে। বিপ্লব ওর পিছনে। মিঠু ঘরে ঢুকে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল সোফায়- সকালের পারফিউমের গন্ধ উবে গিয়ে অদ্ভূত গন্ধ বেরোচ্ছে গা থেকে- অচেনা আর অস্বস্তিকর। ... ...
যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল: - এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার? - না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে। - হোটেলে ফিরতে হবে? কেন? - তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে? - হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ... ...
প্রাণকৃষ্ণ দত্তের কলিকাতার ইতিবৃত্ত বইতে পড়লাম, কলকাতার বহু প্রাচীন পরিবারে এখনও সতীর সিঁদুর পুজো করা হয়। তার অর্থ, আমার মামার বাড়ির পরিবার, বইয়ে বর্ণিত তেমনই একটি পরিবার। জেনে-ইস্তক আমার শরীরের শিরা উপশিরা কাঁপছে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য – বইতে যেমন পড়েছি, সালঙ্কৃতা, মাথায় সিঁদুর, পায়ে আলতা, আলুলায়িত কেশ, খালি পা, বধূকে পথ দিয়ে ধরে নিয়ে চলেছে নাপিতানীরা। সিদ্ধি জাতীয় কিছু খাইয়ে চেতনা কিছুটা বিস্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝেমাঝেই লোকেরা এসে সতীর সিঁদুর নিয়ে যাচ্ছে। চিতার ওপরে মৃত স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে চিতায় বসেছেন বধূ, ডালপালা দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল। অগ্নিসংযোগ করা হল, লোক ভেঙে পড়েছে, চারিদিকে ঢাক-ঢোল বাজছে, জয়ধ্বনি উঠেছে – লেলিহান আগুনের শিখায় জ্বলে যাচ্ছে বাংলার উজ্জ্বল ইতিহাস, চৈতন্যের ভক্তিবাদ, সন্ন্যাসীদের শিবজ্ঞানে জীবসেবা – কান মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। ছি ছি ছি! আর আমি ভাবতে পারছি না। ছয় প্রজন্ম আগে, কে মা তুমি প্রাণ দিয়েছ? তোমার মৃত্যু নয়, জীবন জানতে চাই আমি। তুমি কোন বাড়ির মেয়ে, কি তোমার নাম? কোনো সূত্র তো নেই। ... ...
এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও মিরাম্বোর সঙ্গে আর এক প্রস্থ যুদ্ধ। ... ...
ঘৃণায় উস্কানি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরই মঞ্চ, দেখেও দেখেননি ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিরা। ফ্রান্সিস হাউগেন মুখ খোলার পরে এ কথাটা প্রথম সামনে এল, এমনটা কিন্তু নয়। এমনকী হাউগেন আরও যেসব অভিযোগ এনেছেন, যেমন ফেসবুক যে মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়, নরেন্দ্র মোদী-সহ দেশবিদেশের দক্ষিণপন্থীদের নানা ভাবে সাহায্য করে এবং পক্ষান্তরে মুসলিম ভীতিকে চাড়িয়ে দেয়- এ বিষয়েও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা একপ্রকার ছিলই। তথাপি হাউগেনের আন্তঃতথ্য যাচাই এবং ফাঁস করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু কারণে। এই উন্মোচনের জেরেই হয়তো মার্কিন প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কংগ্লোমারেট ফেসবুক তথা মেটা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আনতে পারে। ... ...