পরের গান মিশ্র পাহাড়িতে একটি দাদরা। 'ছোড় ছোড় বিহারি নারি দেখে সগরি'। দুই ধৈবতকে নিয়ে খেলছেন, পাহাড়ি ধুনে মন উদাস। 'ম্যায় জল যমুনা, ভরন গয়ি বিন্দা, লপট ঝপট সে মে ফোরি গাগরি'। রাধার কলসি ভাঙে, মনও কি ভাঙে? ভাঙন কি একদিনের? একটু একটু করে ভাঙে নদীর পাড়। বিরহ অক্ষয় হবে, প্রিয় ফিরবে না কোনোদিন। তারই প্রস্তুতি চলে যেন, পাহাড়ির আকুল করা সুরে। এটি প্রচলিত কথা ও সুরের দাদরা। আগেও শুনেছে। কিন্তু এমন করে মন হারায়নি। সে নিশ্চিত, বিরজু মহারাজ জাদু জানেন। ... ...
ছেলেটি আগামীকাল “ভোর” চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। ওর বাড়িতে নাকি ‘দুর্গো’ পুজো হয়। শুনেছিলাম দুর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন দুর্গা। তবে এমন সরাসরি দুর্গোপুজো করতে কাউকে দেখিনি। ওর কথাবার্তায় বাংলাটা অন্যরকম। ও ভোরে বেরোয় না, ভোর ভোর বেরোয় না, ‘ভোর’ বেরোয়। কচুরির দোকান থেকে খায় না। কচুরি দোকান, মিষ্টি দোকান, পান দোকান, মুদি দোকান থেকে জিনিস কেনে, ষষ্ঠী বিভক্তির অস্তিত্ব ওর বাংলায় নেই। ল্যাবে আড়ালে সবাই মজা করে। সে অবশ্য, জগাদার কথাও এরকম। ‘চলে গেলাম’ – বোঝাতে বলে, ‘পালিয়ে গেলাম’। চলে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে আলাদা, ওদের কাছে এক। ... ...
এ অধ্যায়ে চলছে উজিজির পথে রওনা হয়ে উগান্ডা গ্রামে পৌঁছনর বর্ণনা। ... ...
পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ ভারি হয়ে নেমে আসছিল বয়েজ হাইস্কুলের ওপরে। দু ঘন্টা ধরে সাহেবগলি বয়েজ হাইস্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে সাহিল - উঁচু পাঁচিল ঘেরা কম্পাউন্ড, জং ধরা সবুজ গেট বন্ধ রয়েছে। পেল্লায় গেট চোখে পড়তেই সাহিলের মনে হয়েছিল, একজন বুড়ো মানুষকে টুলে বসে থাকতে দেখবে।অথচ ধারে কাছে একজনও নেই। বস্তুত বিকেল চারটেয় একটা স্কুলের সামনে যা যা চোখে পড়ার- সে সব কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সাহিল। উপরন্তু ঘন কালো মেঘ নেমে আসছিল মাথার ওপর- মনে হচ্ছিল, সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে । সাহিল ফটক ঝাঁকাল, জোরে জোরে ধাক্কা দিল ,তারপর সবুজ দরজার খুব কাছে গিয়ে কান পাতল- সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ ওদিকটা। বড় ফটকের একপাশে আয়তাকার ছোটো দরজা- ঠেলাঠেলি করেও খুলতে পারল না সাহিল। ... ...
রুথ উডবার্নকে মোকাবিলা করার জন্য তৈরি ছিল। তাই বলে গিরগিটিটা যে তার সাজঘরে অপেক্ষায় বসে আছে সেটা ভাবতে পারেনি। নাচ শেষ করে পোশাক ঝলমলিয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই পেলো উডবার্নকে। তাকে দেখেই উডবার্ন নড়েচড়ে বসল, লাল বের করা জিভ বেরিয়ে এল এক হাত। আহা, এমন একটা নধর প্রজাপতি জিভের নাগালে আজ, সড়াত করে গিলে নেওয়াই শুধু বাকি। কথাতে কোনো রাখঢাক রাখেনি উডবার্ন। টাকা তো অনেক আছে, না চাইতেও পকেটে এসে জড়ো হচ্ছে। রুথের টাকায় কোনো লোভ নেই, চাই না মোটে। তাদের ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছাই নেই। তার শুধু চাই রুথকে। ওই শরীরটি একবারটি না চাখলে তার অঙ্গ জুড়াবে না। ... ...
শিল্পমহল বুঝেছে, যে তাপবিদ্যুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই সরকারি সংস্থা ছাড়া কেউ নতুন করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে না। সম্প্রতি আদানি-আম্বানি-টাটা সৌরবিদ্যুতে বিপুল বিনিয়োগ করছে। এবার, দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদক এবং তেল কোম্পানি নবায়নযোগ্য উন্নয়নে জুটি বাঁধছে। এনটিপিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের হয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়ন এবং শক্তি মজুত করার ব্যবস্থা করবে। এ বিষয়ে দুই বড় সরকারি কোম্পানির জোট এই প্রথম। ইন্ডিয়ান অয়েল তাদের রিটেল কেন্দ্রে রুফটপ সোলার এবং ইভি চার্জিং স্টেশন করবে। তাদের পরিকল্পনা হল, নতুন প্রকল্পের শতকরা ৮৫ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসবে। ২০১৯ সালে তারা এ-বাবদ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছে.. ... ...
কিছুদিন পরে ল্যাবের বড় দাদা মানে জগাদা আমাকে ডাকল – - কি রে! TUMPA-র সঙ্গে এত গল্প করছিস, ব্যাপার কী? - টুম্পার সঙ্গে গল্প মানে? আমার নাম তো টুম্পা। - কী! তোর ডাকনাম টুম্পা? তুই তাহলে টুম্পা ওয়ান। অমনি সবাই হো হো হা হা করে হাসতে লাগল। - কী ইনোসেন্ট রে, তুই TUMPA জানিস না?.... ... ...
এ অধ্যায়ে চলছে উজিজির পথে যাত্রার বর্ণনা। ... ...
সেদিনের আগে জানতাম না, যে এই রুটির মত জিনিসটাকে ওরা বলে ‘ইনজেরা’। এটা বেস করেই ওদের নানা খাবার গড়ে উঠেছে – আপনি নিরামিষ, আমিষ, ভাজাভুজি – যা-ই চান, এই রুটির উপর পরিবেশিত হবে। আর আমাদের ভারতীয় ক্যুজিন-এর মত ইথোপিয়ান ক্যুজিনেও ‘কারি’-র ব্যবহার প্রচুর, বেশ মশালাদার খাবার বানায় এরা। আমাদের মত এরাও ব্যবহার করে লঙ্কা, আদা, রসুন, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জিরা। ... ...
আমাদের প্রথম ওজু-অভিজ্ঞতা কিন্তু ওজুর নামকরা ছবি গুলির মধ্যে থেকে হয়নি। কোন উৎসব মনে নেই, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব হতে পারে আবার স্বতন্ত্র কোনো প্রদর্শনীও হতে পারে। এক দশকের একটু বেশি আগে হবে, সন্ধ্যা-বাসর, যতদূর মনে পড়ছে বিকেল চারটে বা সন্ধ্যা ছটার প্রদর্শনী, নন্দন দুই (তখন আলাদা আলাদা চেয়ার পাতা থাকত, এখনকার মত ফিক্স সুইঙ্গিং চেয়ার নয়)। ওজুর নামের সাথে পরিচিতি তখনও পর্যন্ত উপরের ঐ সত্যজিতের বক্তব্যটি। ... ...
বারলেস্ক থিয়েটার উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিল, থরথর করে কাঁপছিল প্রেক্ষাগৃহ, ছাদের থেকে ঝাড়লন্ঠন এই খুলে পড়ে বুঝি। বাতাসে উড়ছিল মাথার থেকে ছেড়ে দেওয়া টুপি, কারুর গুলি পাকিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ডলারের নোট, সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়া উল্লাস। আক্রাম রুথকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিতেই, সে ডান পায়ের তর্জনীতে ভর করে মঞ্চে অবতরণ করে, তার প্রথাগত ভঙ্গিতে মঞ্চের সামনের ভাগে এসে পা তুলে দিল আকাশপানে, আর একই ঘূর্ণিটানে সবার চোখের দৃষ্টি টেনে নিয়ে ভেসে গেল মঞ্চের পিছনে। নাচের এই শেষ অংশে এসে দর্শককে সেই দুই মুশকো পাহারাদার আর আটকে রাখতে পারে না মোটে। ... ...
লরেল মুখ খুলল প্রথমে – “লুক, উই অল নো হাউ গ্যাব্রিয়েলা ট্রিটেড সীতা। আমরা এইচআর-কে ডিসক্রিমিনেশনের কেস হিসেবে ব্যাপারটা জানাতে চাই। আর স্টিভ বলছিল, গ্যাব্রিয়েলা সীতাকে কিছু স্যাম্পল হ্যান্ডল করতে দিয়েছিল, যেগুলো হ্যাজার্ডাস। স্টিভের কাছে লিস্ট আছে। আমরা জানি না কীভাবে অ্যাপরোচ করা উচিত। উই নিড ইয়োর হেল্প হিয়ার লিপি। প্লিজ একটা ড্রাফট করে দাও। লিপি এক সেকেন্ডও সময় নিল না, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ল। “বোসো। লিখে দিচ্ছি। লিস্টটা আছে, স্টিভ?” “কাজকর্ম ফেলে কী হচ্ছে এখানে?” দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকেছিল গ্যাব্রিয়েলা – লরেল, স্টিভ, মেরির সুপারভাইজর। লিপির দিকে আঙুল তুলে বলেছিল – “ব্লাডি ইন্ডিয়ান, লোক খ্যাপাচ্ছ?” ... ...
দীর্ঘ এগারো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজও সুবিচার অধরা। একটি নিরস্ত্র, আত্ম-নিরাপত্তাহীনা কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএসএফের বিশেষ আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে। ২০১৫ সালে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা মামলায় সেই একই আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে পুনরায় নির্দোষ ঘোষণা করেছে। ফেলানি ও তার বাবা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং একই কায়দায় তারা আবার স্বদেশে ফিরতে চেয়েছিল। সেটা নিশ্চিতভাবে বেআইনি কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধই বটে। কিন্তু এ হেন অপরাধের শাস্তি কি মৃত্যু হতে পারে? আর এই মৃত্যুদণ্ড তো বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত-স্বীকৃত নয়! সীমান্তরক্ষীবাহিনীর কি কোনো নিরস্ত্র অনুপ্রবেশকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে? ... ...
.... এই পাতুরি ভাজার সব চেয়ে সুবিধে হল, কোনো সুতো, দড়ি কিচ্ছু লাগবে না। এমনিই সুন্দর মুড়ে থাকবে, কিন্তু মচমচে হবে। পরে আমার এক অধ্যাপিকা বন্ধু একটা খুব দরকারি পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেইমত বাড়িতে ইলিশের পাতুরি করতে গেলে আমি আর বাজারওলাদের পিছনে পড়ি না একটু কলাপাতার জন্য। আমার কর্তামশাইয়ের বাগানের শখ। ফ্ল্যাটের বারান্দায়, জানলায় মাচা বেঁধে শাকপাতি, শসা সব ফলান। তাই চালকুমড়ো, কুমড়ো, লাউ যখন যেমন পাই, টুক করে পাতা কেটে নিয়ে ওতেই পাতুরি বানাই। একেবারে পাতাসমেত খাওয়া যায়। শহরে কলাপাতা পাওয়া ভীষণ মুশকিল। তাই ইলিশ পাতুরির জন্য অন্তত আমার বাড়িতে এখন নো কলাপাতা বিজনেস। ... ...
১৭৬৫ সালের কথা। সেই বছরই মুঘল বাদশাহ বাংলার নবাবদের হাত থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেই অধিকার ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে দেওয়ায় নবাবদের অর্ধেক ক্ষমতা কমে যায়। নবাবদের সেই অবশিষ্ট ক্ষমতা টুকুও নবাব মুনসুর আলির খান ফেরাদুন জা’র আমলে চলে যায় উনবিংশ শতকের অন্তিম লগ্নে। ... ...
সেদিন আমরা সকাল থেকে আরবিক/মিডল-ইস্টার্ন খেয়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাদের হোস্ট বাছল ইতালিয়ান রেস্টুরান্ট। আমাকে আর মুখ খোলার অবকাশই দিল না – কারণ ইতালিয়ান ক্যুজিন আমার সবসময়ই ফেভারিট, অবশ্য যদি ভালো করে বানাতে পারে তবেই! রেস্টুরান্টে গিয়ে দেখা গেল, দুটো অপশন আছে – ভিতরে বসে খাওয়া এবং আউটডোর ডাইনিং। অবশ্যই আউটডোর ডাইনিং বেশি আকর্ষণীয়, বাইরে ১২ ডিগ্রি ঠান্ডা এবং হালকা বাতাস বইছে। এই অবস্থায় আউটডোর ডাইনিং করার কী মানে কে জানে! আমি মৃদুভাবে ভাবপ্রকাশ করলাম, দাদা, বাইরে কি খেতেই হবে? এদিকে আমার হোস্টের সেই রেস্টুরান্ট খুব ভালো লেগেছে আগের বার খেয়ে, তাই এইবারেও অতিথিসৎকার করতে বাইরেই বসা ঠিক হল। আমাকে আশ্বস্ত করা হল এই বলে, যে দেশে প্রচুর গ্যাস – তাই নাকি খেতে বসে ঠান্ডা লাগলে আমার পিছনে গ্যাসবাতি জ্বেলে দেবে! তাহলে আর ঠান্ডা লাগার চান্স নেই। ... ...
এ অধ্যায়ে শুরু হল উজিজির পথে যাত্রা। ... ...
শনিবার বাড়ি থেকে সরাসরি ডাক্তারের কাছে গিয়েছে মিঠু। বিপ্লব আর ছন্দা ওর সঙ্গে আজ; ফেরার পথে কেনাকাটা র প্ল্যান রয়েছে- পুজোর বাজার এখনই শুরু না করলে পরে বড় ভীড় হয়। আল্ট্রাসাউন্ড, এন্ডোস্কোপি হয়ে গিয়েছিল; টিস্যু স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে । সমস্ত রিপোর্ট এখন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে। আজও সেই কনকনে ঠান্ডা চেম্বার, অপেক্ষারত জনা পনের মানুষ, চশমা চোখে ছেলেটি আর তার কমপিউটার-ঘড়ির কাঁটা টিকটিক ঘুরছিল। -সেদিনও এতক্ষণ তোকে বসতে হয়েছিল? -হ্যাঁ "একা একা বসে ছিলি-ইশ, বড্ড স্লো না এই ডাক্তার" ছন্দা বিজবিজ করল। -স্লো কেন? যত্ন করে পেশেন্ট দেখেন- সময় লাগে। -বেশি দেরি হলে, আজ আর কেনাকাটা হবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে। শনিবার না? পাঁচ নম্বরে ডাক পড়ল মিঠুর। ডাক্তার আজ গম্ভীর। মাথা নামিয়ে মিঠুর রিপোর্ট দেখছিলেন। "সব রিপোর্ট এসে গেছে" এই বলে সামান্য থামলেন ডাক্তার "ভালো তো সব?" ছন্দা আগ বাড়িয়ে বলল। মুখ তুলে তাকিয়ে চশমা ঠিক করলেন ডাক্তার। ... ...