যৌনকর্ম আর পাঁচটা পেশার মতই একটা পেশা মাত্র। কারখানার শ্রমিক গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন, যৌন শ্রমিকও গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। পিতৃতন্ত্র আমাদের শেখায় যৌনতা খারাপ, এবং নারী দেহ ভোগের বস্তু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বল মহিলাদের অসহায়তাকে হাতিয়ার করে তাঁদের কে পাচার করে নিয়ে আসা হয়, এবং যৌন দাসত্বে জোর করে ঢুকিয়ে শোষণ করা হয়। কারখানা-শ্রমিকদের যেটুকুও সামাজিক মর্যাদা আছে, সেটুকুও এনাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। এই অবস্থার বদলের জন্যে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছেন যৌনশ্রমিক মা বোনেরা। ... ...
যদিও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ তার পূর্ণ রূপে এখনো বহুদূর, ছোট ছোট ধাপ নেওয়া হচ্ছে, কিছু সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপগুলোর বেশিরভাগই বৈচিত্র আর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতি বিষয়ক, নানান পরিচয়ের মান্যতা প্রদান, আর প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ যাতে তারা নানান জায়গায় চাকরি পেতে আবেদন করেন। বিশেষ করে স্টার্টআপ, নন-প্রফিট সংস্থা, ছোট ছোট ফর প্রফিট কর্মক্ষেত্রগুলো যেগুলো সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ। এদের বেশিরভাগ কর্মখালির বিজ্ঞাপনগুলোয় লেখা হয় "আমরা সম-সুযোগে বিশ্বাসী চাকুরী দাতা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেমন প্রান্তিক জাতি, লিঙ্গ, যৌনতা এবং দক্ষতার মানুষদের আবেদন জানাতে উৎসাহিত করি।" কিন্তু, আমরা যখন "সমান সুযোগ"-এর কথা বলছি, আমরা কি ইক্যুইটি-র থেকে সরে যাচ্ছি? ... ...
ইংরেজিতে ক্যুইয়র কথাটার সাধারণ মানে “অদ্ভুত” বা “উদ্ভট”। এই শব্দটার সাথে এক দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ইতিহাসে দেখা যায় যে ক্যুইয়র কথাটা ইংরেজি সাহিত্যে এবং কথ্য ভাষায় ব্যবহার হতো যা কিছু অদ্ভুত তার প্রিফিক্স হিসেবে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এই শব্দটি ব্যবহার হতে লাগল অপমানসূচক ভাবে, গাল হিসেবে, বুলি করার জন্য - এবং মূলত সমকামী-রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য। এটার মানে এই নয় কিন্তু যে ক্যুইয়র ব্যাপারটা বিদেশী। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই শুনি, যে আমাদের আন্দোলনটা নাকি গভীর একটা চক্রান্ত। রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানান ন্যারেটিভ বেরোয়। সনাতনপন্থীরা বলেন যে আমরা নাকি ভারতীয় সংস্কৃতির কেউ নই, আদপে আমরা পশ্চিমি ষড়যন্ত্রের সভ্যতা দুর্বলকারী সংস্কৃতিভাঙানি কাপুরুষ। ... ...
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ: ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে। দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে। তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়? ... ...
- আচ্ছা, তুমি কি কোনো কঠিন রোগের জন্য স্টেরয়েড নিয়েছ ছোট থেকে? কারণ আমার কাছে একটি মেয়ে এসেছিল তার বাবা মার সাথে, তার boyfriend ছিল, কিন্তু তার ওষুধে সমস্যা হয়েছিল, তারপর লেসবিয়ান ছিল কিছুদিন। তারপর আমার ওষুধে ঠিক হয়ে একটা ছেলের সাথে সংসার করছে। তাই আমি তোমার মেজোমামাকে বলেছিলাম, তোমার সাথে একটু কথা বলব। ... ...
এই বহুমুখী আক্রমণ অস্বস্তিকর হলেও, হাসিমুখে মজাদার প্রতিক্রিয়া দিতে হয়। সীমা অতিক্রম করলে একটু মৃদু বিষ মিশিয়েও দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এটা করতে হচ্ছে। অন্য কোনো সমবয়সী কিম্বা জুনিয়র সহকর্মীর বিয়ের আগে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর আয়োজন হয়। তখন এই উপদ্রব আরও বেশি হয়। সরাসরি বলার সাহস হয় না বেশির ভাগ পুরুষ সহকর্মীর। তাদের কথার মধ্যে থাকে পরোক্ষ প্রশ্নমালা। ... ...
এত থিওরি কপচে কীই বা হয়? আমার খোঁজার পরিধি আপনার দ্বিগুণ বলে হিংসে করেই বা কী হবে? চলুন না প্রেমে পড়ি, প্রেমিকের কি আর ওরিয়েন্টেশন হয়? ব্রহ্মা শতরূপাকে মেপে কেটেছেঁটে সাইজ করে নিলেও, শিব কিন্তু অত ঝামেলায় যাননি। শক্তি হোন বা হরি, যেমন-কে-তেমন গ্রহণ করেছেন। প্রেমিকের মাপকাঠিতে তাই তাঁর চেয়ে ভারি আর কেউ নেই। আর একটা কথা, যে থাকার সে থাকবেই, ঠেলে সরিয়ে দিলেও শেষ মুহূর্ত অবধি সম্পর্কটাকে বাঁচানোর জন্য লড়ে যাবে। আর যে না থাকার, সে স্ট্রেট গে বাই ট্রান্স যাই হোক না কেন থাকবে না। বিশ্বাস করুন, মেঘে মেঘে বয়েস তো কম হল না, নিজের ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ... ...
ভদ্রমহিলা বললেন, আসলে ছেলে তো, ফুলটুল দেখলে আবার পছন্দ করবে না। আমার মনে হল বলি, ছেলের বিয়ের পর খাটটা কি ক্যাকটাস দিয়ে সাজাবেন? পৌরুষের এই সামাজিক নির্মাণ পুরুষকেই বেঁধে রেখেছে নির্মম শিকলে। ছেলেরা ফুল পছন্দ করবে না, বন্দুক পছন্দ করবে। ছেলেরা শান্তির পক্ষে থাকবে না, যুদ্ধের পক্ষে থাকবে। ছেলেরা ফল খাবে না, মদ খাবে.... ... ...
মায়ের যদিও আমার সাজগোজ সম্পর্কে কোন দিন কোনো সমস্যা ছিল না। ছোটবেলায় যখন অতিরিক্ত মেয়েলি ছিলাম তখন ও আমার মা কোনদিনও আমার মেয়েলি স্বভাব নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। আজ হয়তো সেই মেয়েলি স্বভাব গুলো জীবনে আর নেই কিন্তু আমি নিজে যে প্রচন্ডভাবে কুইয়ার সেটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই । তা সত্ত্বেও আমার মায়ের থেকে টিপিক্যাল রাশভারী পুরুষ চরিত্র না হওয়ার জন্য কোন দিন কথা শুনতে হয় নি। ... ...
আগে ভাবতাম আমার সুশিক্ষিত বাবা আমার সমকামিতা মেনে নেবে। কিন্তু আমার আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মা কে বোঝতে বেগ পেতে হবে। কিন্ত আসল ঘটনাটি একদম বিপরীত। স্কুলে থাকাকালীনই সমকামিতা আমাদের সমাজে স্বীকৃত নয় একটা পারিবারিক আলোচনাতে বাবা বলেছিল। আমার সিরিয়াল-প্রিয় মা তত দিন 'দোস্তানা', 'মেমরিস ইন মার্চ', দেখে ফেলেছে। আর তখন একটি হিন্দি জনপ্রিয় সিরিয়ালে (মর্যাদা/মরয়াদা, ইন্দ্রানী হালদার ছিলেন) অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিল সমকামী। এবং মায়ের চরিত্রটির জন্য বেশ সহানুভূতি ছিল। সে দিনই বুঝেছিলাম মা তার সন্তানকেও বুঝবে। হ্যাঁ মা বুঝেছে। ... ...
এই মানুষটাই নিজের সন্তান ও সন্তানসমদের ভাল থাকার জন্য ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারা রদ করার জন্য সবকিছুকে অতিক্রম করে ভারতীয় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে লিখিত আবেদন করতেও পিছপা হননি। কেউ কিছু বললে বলতেন, সমাজ আবার কী? সমাজ তো আমি আর তুমি, সমকামী বিষমকামী বুঝি না, গর্ভে থাকা সন্তান ছেলে না মেয়ে নাকি অন্য কিছু জানার দরকার নেই, সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতেই মায়েরা চায়। আর তাই সন্তানের পাশে দাঁড়ানোয় এতটুকু পিছপা হননি যে মানুষটা, তিনি আমার গর্ভধারিণী ভেবে আজ নিজের পিঠটা নিজেই চাপড়াই। ... ...
তোমার জন্য কিছুই করা হল না বাবা, কিছু কিনে দেওয়া হল না তোমায়। যে রাতে হঠাৎ তোমাদের সামনে নিজের সত্ত্বার কথা বললাম, তারপর মনে পড়ে না আর কতটুকু কী কথা হয়েছিল তোমার সাথে। পরে, মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম, তুমি নাকি খুব কেঁদেছিলে! আজ তুমি থাকলে তোমাকে আর মাকে সামনে বসিয়ে আরও একবার বোঝাতাম। তুমি বুঝতে তো, বাবা! ... ...
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম। ... ...
ঠাকুমার মতন আরও শত শত স্পর্শে গায়ে কাঁটা দিল রথের, রথের রশির। তাতেই নড়েচড়ে চলতে শুরু করলেন তালধ্বজ, দেবদলন এবং নন্দীঘোষ। রথ, পথ আর মূর্তি অন্তর্যাপন করলেন আমার, তোমার এবং সকলের। ঐশ্বরিক হয়ে উঠল গায়ে লেগে থাকা সময়টুকু। জনজোয়ারের প্রবল উচ্ছাসে ঢেকে গেল জন্মমৃত্যু। তাদের গায়ে তখন সূর্যের মতন তেজ। প্রবল বৃষ্টি তাঁর কাছে এসে ইলশেগুঁড়ি হয়ে যায়। আল্পনা এঁকে যায় রশির গায়ে সাতরঙা রোদ। রামধনু হয়ে ওঠে জনজোয়ার, আনন্দতরঙ্গ তোলে আমাদের বুক ছাপিয়ে। লক্ষ লক্ষ রোদের কণা, বৃষ্টির ছাঁট আর প্রজন্মব্যাপী আনন্দস্পর্শ রামধনুর ভার বয়ে নিয়ে চলে। তাঁকে টানতে হয় না আলাদা করে। কেবল ছুঁয়ে পথ চলতে হয়। ... ...
জানতাম না LGBT+ কাকে বলে। শুধু জানতাম একটি শব্দ ‘Gay’ আর এটাও জানতাম যে আমাকে সবসময় প্রমাণ করতে হবে যে আমি কোনো অবস্থাতেই Gay নই ... “এই বেটা, বেটিন্তর মতো হাটস কিতা, বুক ফুলাইয়া হাট” (মেয়েদের মতো হাঁটছিস কেন, বুক ফুলিয়ে হাঁট), বাবার এই কথাগুলো এখনো মাঝে মাঝে কানে বাজে। বা বোনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু রূপচর্চা করলে বাবা যখন বলতেন, “দুনিয়ার যত বেটিয়ামী কাম তোর” (পৃথিবীর সব মেয়েলোকের কাজ তোকে করতেই হয়) তখন মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন জাগত, কেন আমি এমন। কেন আমি এত হাত নাড়িয়ে কথা বলি, কেন আমার ছেলেদের শরীরের কাছঘেঁষা হয়ে থাকতে ভাল লাগে, কেন আমি ছেলেদের মত হাঁটতে পারি না। ... ...
এক জানালা বৃষ্টির সামনে সেদিন অনুষ্ঠান হবে। যারা মোটা করে কাজল পরে আসবে, সকলে কাঁদবার সুযোগ পাবে। এক-এক করে গিয়ে দাঁড়াতে হবে জানালায়। চোখের কালো জল মিশে যাবে কার্নিশে। সম্পূর্ণ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার আগে অবধি পড়া হবে জয় গোস্বামী। তারপর ব্যথাগুলোকে একটা কাচের প্লেটে করে কিছুক্ষণ রাখা হবে শুকিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধার স্টিক-এর পাশে। সমান করে দু’দিক কেটে সেলাই করা হবে। সাইকেল থেকে পড়ে গেলে, ওটাই শুধু ব্যথা হলে, কত ভালো হত। ‘ওর সাথে আর কোনোদিন কথা হবেনা’-র সাথে ‘বাড়ি থেকে কোনোদিন মেনে নেবে না’-কে সমান করে সেলাই করবি। দু’দিকের দুটো হাতা হয়ে যাবে। বোতামের ঘাট রাখিস। দুটো করে বোতাম দিবি, ভিতরের দিকে ‘পাড়ার লোক কী বলবে’, আর বাইরের দিকে ‘বড়রা যা বলে ভালর জন্য’। ... ...
আমার দুটো ঘর। একটাতে আমরা কয়েকজন মিলে থাকি, অন্যটায় পৌঁছতে হয় একা একা। যে ঘরটায় অনেকে মিলে থাকি, সেখান থেকে বার হয়ে অন্য ঘরে পৌঁছতে হলে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়... ... ...