তোমার অসহ্য রূপ পড়ে আছে ভূমিতে খানখান তুলে নিয়ে জোড়া দিই দুহাতের আঙুলে আঙুলে দশ আঙুলে জ্বলে ওঠে শিখা, ভুমা ফেটে যায় তুমি মুখে নিয়ে আগুন নেভাও আমি ফের গড়ে তুলি শূন্য হতে তোমার মৃত্তিকা ... ...
পুজোর গামছার প্রধান দুই সমস্যা ছিল তাদের দৈর্ঘ্য এবং ঘনত্বের। সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের গামছা সাপ্লাই করা হত পুজোর সময় ব্রাহ্মণদের প্রণামীতে। সেই গামছা প্রায় মসলিনকেও হার মানিয়ে দেয়, অনেকে ভয়ে ভাঁজই খুলত না গামছার, এই যদি ফেঁসে যায়! তবে পুজোতে গামছা এক সিম্বলিক জিনিস ছিল প্রায় – ডাঁই করে রাখা গামছার উপরের কয়েকটায় কিছু সিঁদুর এবং ফুল-গঙ্গা জল পড়ত। তাদের তলার গুলো পুজো শেষ হয়ে গেলে ব্রাক্ষণ ঠাকুর নিজে গিয়ে বিক্রী করে দিয়ে আসত আমরা যেই দোকান থেকে কিনেছি। পরের বছর আবার সেই গামছা আমরা কিনতাম। ... ...
দারিয়াবান্দা, কুতকুত (এইটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক খেলা, অনেক বিদেশি সিনেমায় দেখছি তারাও কুতকুত খেলে! নিয়ম কানুনে হয়ত পার্থক্য আছে কিন্তু খেলে।) ফুলটোকা বা গোলাপ টগর, রুমাল চোর, কানামাছি, মোরগ লড়াই, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বাইস্কোপ , আজকে আর কেউ খেলে না। এর মধ্যে দারিয়াবান্দা খুব জনপ্রিয় একটা খেলা। ব্যাডমিন্টন কোর্টের মত করে কোর্ট কাটা হত। একদল দাগে দাঁড়িয়ে থাকত অন্য দল ঘর গুলাতে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হবে। দাগে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা দাগে পা রেখে ঘরের ভিতরে যারা আছে তাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ও যদি ছোঁয়া যায় তাহলেও চলবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘর এভাবে পুরোটা যেতে হবে আবার আসতে হবে। সবাই মরে গেলে অন্য দলের সুযোগ। এই খেলার একটা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। দারিয়াবান্দা খেলা একটু নরম প্রকৃতির, মেয়েরাও অংশ নিতে পারত। এটার একটা পুরুষালি ধরণ ছিল। এতে হাত পা যেমন খুশি তেমন ছুঁড়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করা যেত। কেউ হয়ত লাফ দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করল, অন্য জন হয়ত সোজা লাথি মেরে ফেলে দিল! বেশ ভয়ংকর একটা ব্যাপার ছিল। এর নাম ছিল চিক। আমরা দারিয়াবান্দা খেললে কেউ কেউ মেয়েদের খেলা খেলছি বলে খেপানোর চেষ্টা করত। কিন্তু চিক খেলছি দেখলে! হুম, এবার হচ্ছে খেলা! কতদিন যে চিক খেলে হাত পায়ে ব্যথা পেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। সেই ব্যথাও এখন সুখের মনে হয়। কী অদ্ভুত সময় পার করে এসেছি। এখন ভাবলে পরাবাস্তব কিছু বলে মনে হয়। ... ...
আমার অনেক ইদ ছিল। কৈশোর থেকে যৌবন। সেই বৃত্তান্ত যদি বলি, বলতে হয় আমার ইদ হারিয়ে যাবার বৃত্তান্তও। দুটোরই বড় অবশ্যম্ভাবী আগমন জীবনে। তারও আগে যে সত্য স্বীকার্য – একটা বয়সে যে উৎসবে নতুন জামা জুতোর রং, নির্ঘুম অপেক্ষা, বালিশের নিচে জুতো নিয়ে ঘুমানো আর রান্নাঘরে মায়েদের রাতভর সেমাই পিঠা – তাই ইদ, তাই উৎসব। এই রাতজাগা আনন্দে যতদিন ঘুম টুটে টুটে যায়, ততদিন উৎসব রঙিন। ... ...
গভীরে ক্ষতটা আমরা দেখি, যারা দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্দরমহলের বাইরে থেকে গেছি। পূজা ও ঈদের মাঝে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি নিজেদের।যে একফালি চাঁদ এত আনন্দের তাকে ছুঁতে পারিনি আবার বিসর্জনের সময় দুর্গামাকেও সাথ দেওয়া হয়নি একবার।উৎসবে অবগাহন অধরা থেকে গেছে।মানুষ হওয়ার বোধহয় এটাই ট্রাজেডি।তাকে হিন্দু নয় মুসলিম হতেই হয়।মুসলিম জন্মায় না।মুসলিম হয় বিশ্বাসে।সে বিশ্বাসের আবার ৫ স্তম্ভ।তা চর্চার বাইরে আমি।তাই চাঁদ রাত আমার কাছে এক গল্পমাত্র ।আর আমি যদি বলি সিন্ধুর তীরের হিন্দু আমি, কে দেবে আমায় দুর্গা ঠাকুর পছন্দ করে মণ্ডপে আনতে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেই সরস্বতীদেবীকে তো হোষ্টেল সুপার আনতে দিতে বাদ সেধেছিলেন।জানিয়ে দিয়েছিলেন এক অহিন্দুর কখনো ঠাকুর চয়েস করার কাজ করতে পারে না!আমার মত অনেকের উৎসবের চেনা পথ তাই নির্জন,ব্যতিক্রমী।তবু আনন্দ জাগে………… ... ...
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....। আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন - ... ...
কুড়ি বছর আগের ঘটনা সেটা, আমি তখন প্যারিসে থাকি। ল্যাটিন কোয়ার্টারে খুব ছোট্ট একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম তখন আমি। মোটামুটি দিন চলে যাবার মত উপার্জন ছিল আমার, একেবারেই বেশি কিছু না। আমার লেখা একটি বই পড়ে সেটি নিয়ে আমাকে উচ্ছ্বসিত চিঠি লিখেছিল সে, আমিও ভদ্রতাবশত ধন্যবাদ জানিয়ে তার উত্তর দিই। তারপরপরই আমি আবার একটা ফিরতি চিঠি পাই। তাতে লিখেছিল, ওই সময়েই প্যারিস হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে সে; এই সুযোগে আমাদের দেখা হয়ে গেলে খুবই খুশি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তার সময়েরও আবার খুব টানাটানি, পরের বৃহস্পতিবারে ছাড়া আর কোনোদিন সময় বের করা খুব মুশকিল হবে। তাই জানতে চেয়েছে সেই বৃহস্পতিবারেই আমি তাকে ফয়ট’স-এ লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করতে পারব কি না। ... ...
আমি অবাক হয়ে আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, কুড়ি টাকা! মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে আম্মা কী বলছে এসব! একটা পিস্তলের দাম ৮ টাকা, ১ টাকা করে বারুদ। একটা বাঁশি দুই টাকা, একটা প্লাস্টিকের চশমা ৫ টাকা। তারপর? ট্রলারখান কেনা হবে না! সে ভারি দাম, অতি দরাদরি করলেও ১৮ টাকার নিচে কুলাবে না। কিন্তু বাদবাকি জিনিস কেনার পর আমার হাতে থাকবে সাকুল্যে ৪ টাকা! তাহলে? তাহলে কী, সব বাদ দিয়ে শুধু ট্রলারখান কিনে ফেলব? ... ...
যশপতি সিংহের বুকের মধ্যে অনেকগুলো কাশফুল ডিজে মিক্সের তালে নাচছিল। পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আজ আমদানি ভালই হল। দু'লাখ লাগিয়েছিলেন সকাল সাড়ে নটায়। বারোটার মধ্যেই বেড়ে হয়ে গেল দু'লাখ আশি। মানে ফর্টি পার্সেন্ট। শেয়ার বাজার কি জয়! প্রাণ ভরিয়ে ঝিঙ্গালালা ধ্বনি বাজছিল। অ্যাপ থেকে অর্ডার করে বিখ্যাত দোকানের কিং সাইজ বিরিয়ানি আনালেন। সাঁটিয়ে খেলেন। সঙ্গে ছিল মাটন চাঁপ, স্পেশাল রায়তা আর ফিরনি। তার পরে গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢাললেন। দু-প্যাকেট জলজিরা মেশালেন। গ্লাসের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এল আনন্দ বুড়বুড়ি। ... ...
- কী হয়েছে? তোমরা কোনটা করতে পারনি? - সব পেরেছি মেডাম, কিচ্ছু ছাড়িনি। - তাহলে? ভাইভা কেমন হয়েছে? কে ভাইভা ধরেছেন, কোনো ম্যাডাম নাকি স্যার? - একজন স্যার, একজন মেডাম – দু’জন মিলে ভাগ করে। - যিনি ভাইভা ধরছিলেন, তিনি ঐ কলেজের ইন্টারনাল নাকি এক্সটার্নাল, সেটা জেনেছ? - সেটা জানি না মেডাম, বুঝতে পারিনি। - কী জিজ্ঞেস করেছিলেন? তোমরা কি ভালো করে উত্তর দিতে পারনি? মুখগুলো কেমন ভারভার ঠেকছে। (এবার সমস্বরে) - উত্তর কী দেব মেডাম? দু’জনের কেউ তো ভূগোলের প্রশ্ন তেমন করলেনই না। - সে কী! তাহলে কী ভাইভা হল? ... ...
ছেলে বলেছিল আজ মায়ের হাতের রান্না খাবে।তাতেই নয়নতারার মাথাটা ধরেছিল। পার্টিশন! যত দোষ পার্টিশনের। না হলে এক গামলা ভাত রান্ধনের জন্য নয়নতারাকে ছেলে বৌ খোঁচা দিতে পারে? তাও যদি আরেকটা ছেলেপুলে হত। একটা মেয়ে নিয়ে দ্যাবাদেবী সারাক্ষণ আদিখ্যেতা করছে! মাণিকগণ্জের বাড়িতে নয়নতারা নিজের সাতটা ব্যাটা বেটির সঙ্গে কতগুলো ভাগ্নে ভাগ্নীও মানুষ করে ফেলেছেন। তবে ভাত রাঁধতে হত না। অতগুলো মানুষের ভাতের হাঁড়ি কি তেরো বছরের নতুন বউ সামলাতে পারে না মাড় গালতে পারে? বড় জা আর শাশুড়ি প্রায় সমবয়সী। তাঁরাই বলেছিলেন , এ বাড়িতে বউরা ভাতের মাড় গালে না। অত বড় হাঁড়ির ওজন বউ মানুষের নেওয়া নিষিদ্ধ। মাড় গালে মইনা নাগী। মণিভূষণ নিয়োগী।বাপ মা মরা ছেলে। ভাতের মাড় গালা থেকে শুরু করে তরতর করে নারকেল গাছে উঠে নারকেল পাড়া, সব পারে।এমনকী ইজারা নেওয়া পদ্মার বুকে জাল ফেলে যে কটি ইলিশ ওঠে, সবকটি ঘরে এনে তুলতে পারে মইনা নাগি। ... ...
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের উত্তরসূরী হিসেবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন বা আরও পরে ঋতুপর্ণরা যখন আলোচনায় চলে আসেন, তখনও কিন্তু কিছুটা ব্রাত্যই রয়ে যান তপন সিংহের মতো কিছু পরিচালক! হ্যাঁ, তপন সিংহ হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি এপার আর ওপারের মাঝের সেই সবুজ, স্নিগ্ধ এক ভূখন্ড যেখানে রয়ে যায় অদ্ভুত এক ভালোলাগা এবং সে ভালো লাগা কেবলই এন্টারটেনমেন্টজনিত ভালো লাগা নয়, সে ভালো লাগায় রয়ে যায় চিন্তার কিছু স্পেস, শিল্পের কিছু অনিবার্য শর্তপূরণ! সম্ভবত 'দ্য হিন্দু' পত্রিকা তাঁর 'দাদাসাহেব ফালকে' পাবার পর তপন সিংহের সিনেমা নিয়ে লিখেছিল – 'Complex ideas through a simple narrative.....!' হ্যাঁ, সত্যি তিনি পারতেন। তাঁর ছবির সুদীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র একটি ছবিকে আলোচনায় আনতে চাই, উদাহরণ হিসেবেই, 'গল্প হলেও সত্যি'! কোনো এক আলাপচারিতায় তপন সিংহ একবার বলেছিলেন – 'আমার হতাশ লাগে এই ভেবে যে দর্শক ছবিটাকে শুধুই হাসির ছবি হিসেবে নিল'! একজন পরিচালক হিসেবে তো হতাশ হবারই কথা এবং ন্যায্য কারণেই। যারা সিনেমাটি দেখেছেন, আরেকবার ভাবুন তো, 'গল্প হলেও সত্যি' কি নেহাতই হাসির ছবি? নির্ভেজাল হাসি আর এন্টারটেইনমেন্ট? রবি ঘোষের অসামান্য অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে বাঙালি দর্শকের কি একবারও মনে হয়নি, আপাত হাসির আড়ালে সিনেমাটির এক অন্তহীন স্পেস তৈরির কথা? প্রথম যখন 'গল্প হলেও সত্যি' দেখি, বয়েস নেহাতই কম। সেসময় নির্ভেজাল হাসি নিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখি, অনুভব করেছি একজন কুশলী পরিচালক কীভাবে তৈরি করেন ভাবনার স্পেস!ইংল্যান্ডের পাইনউড স্টুডিও থেকে সরাসরি কলকাতা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিচালনায়, বাংলা সিনেমার দর্শক পেল এক পরিচালককে যিনি হেঁটে গেলেন মাঝের এক পথ বেয়ে। পাশাপাশি দু'টো পথেরই হাতছানি ছিল। বিস্তর আন্তর্জাতিক ছবি দেখার সুবাদে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ঘরানাগুলোর সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় পরিচয়, অন্যদিকে তথাকথিত আপাত জনপ্রিয়তার হাতছানিও ছিল। দুটো রাস্তাকেই সহজে এড়িয়ে মাঝামাঝির যে পথ তিনি বেছে নিলেন তাতে ঝুঁকি নেহাতই কিছু কম ছিলনা। 'গল্প হলেও সত্যি' দেখতে দেখতে তপন সিংহ সম্পর্কে সেই মন্তব্য বোধহয় ভীষণভাবে অনুভব করি – " A magical union of liberate art and critical populism made Tapan Sinha middle-of-the road – Bengali Cinema. যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্টোরিলাইন সেই ধনঞ্জয়ের আবির্ভাব থেকে সিনেমার শেষদৃশ্যে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশার মধ্যে তার মিলিয়ে যাওয়া, পুরোটাই এক রহস্যময়তায় ঘেরা! কোথা থেকে এল ধনঞ্জয়, নানান প্রশ্নে তার হেঁয়ালি মাখানো উত্তর, একসময় চলেই বা গেল কোথায়, কোনো উত্তরই যনো প্রাত্যহিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনা, কিন্তু ভীষণভাবেই প্রাত্যহিকতায় গড়ে ওঠে এ কাহিনীর নির্মাণ, চরিত্র, আঙ্গিক! ... ...
আমডাল রাঁধি। একটা কোকিল চেঁচিয়ে যাচ্ছে তারস্বরে। তত ত্রাস নেই? মৃত্যুভাবনা? দিনগত কোনো পাপক্ষয়ের রাজনীতি নেই? সুগন্ধ ওঠে গ্রীষ্মকালের! দুর্গন্ধেও ভরে যায় আজ অসুখের ঘর! ... ...
বিনায়ক রুকুর ছবি ও কবিতায় দীপাবলী। ... ...
৫ বছরের ছেলে হারিয়ে গেছিল হালদার বাড়ির। সবে রমতা সাধু ডেরা পেয়েছি শিব মন্দিরের ধারে তখন। রাম জানে ক মুহূর্ত নাকি ক মাস। ও বাড়ির উঠোনে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হালদার বাড়ির ছ'ভাই ছেলে ধরা ভেবে বিড়াল যেভাবে ইঁদুর ঝাঁকায় সেই ভাবে ঝাঁকাতে আমার ল্যাঙট থেকে দুটো বেলফুল পড়লো ভুঁয়ে। কষ থেকে রক্ত পড়ছে দরদর করে। মনটা আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করছি শরীর থেকে। শুনেছি ব্যথা টের পাওয়া যায়না। কখনো কামড়ে ধরছি নিজের ঠোঁট। কোন জন্মে যেন পড়েছিলাম ব্যথার গেট থিওরি। জ্বলন্ত বাম কপালে লাগালে সুপারফিসিয়াল ব্যথার চোটে দপদপানি গভীর ব্যথা ফটক দিয়ে ঢোকার সুযোগ পায়না। ... ...
ক্যাপ্টেন সোহরাবকে দিয়ে শেখ আব্দুর রহমানকে বলান যে সে যদি প্রাণে বাঁচতে চায় তাহলে যেন জোরে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়। জিপের পেছনে রহমান পরিষ্কার সোহরাবকে বলে বাজান আমার যে পুত্র নাজিরের খালের ঘাটলায় ৫০ সালে পানিতে ডুবে মরেছে সে থাকলে এখন তোমার মত হইত, এই মুহূর্তে কেন জানিনা তোমারে মোর তার মত মনে হইল, তবে বাজান ওই শ্লোগান দেওয়া আমার পক্ষে সোম্ভব না। সোহরাব আবারও অনুরোধ করে বাজান আপনে আমার ধর্মের বাপ, আমারে পাপের ভাগী করবেননা শ্লোগানডা দেন। আব্দুর রহমান কঠোর আরও, সোহরাবের দিকে না তাকিয়ে বলে সোম্ভব না । ক্যাপ্টেন সিপাহীদের ইঙ্গিত করেন পুকুর পাড়ে দাঁড় করাতে । পুকুরের দিকে মুখ করে দাঁড় করাতে গেলে শেখ আব্দুর রহমান ফিরে যায় এবং বলে পিঠমে নেহি বুকমে গুলি চালাও এবং তারপর তার ওই উর্দু- বাংলা মিশ্রণে বলে সে নবীজীর বংশ তার বুকে নবীজীর চুম্বন রয়েছে, তোমাদের গুলি পিছলে যাবে । এই ঘটনা শ্রোতারা এমনভাবে শুনতে থাকে যেন তারা ’৭১ সালের আব্দুর রহমানের ওই ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গল্পকারের সহকারী তার ওস্তাদকে ইশারা করতে থাকে ওস্তাদ যেন তার আসল কাজ শুরু করে। সহকারী গল্পের মাঝে আরও দু’একবার ইশারা করেছিল, ওস্তাদ থামেনি। এবারেও তার ওস্তাদ গল্পকার থামেনি, বরং সহকারীর উদ্দেশ্যে গল্পকার শ্রোতাদের বলে দেয় যে ছোড়াটা চির-কৃমির বড়ি বিক্রি শুরু করে দিতে বলে এবং বড়ি বিক্রির পরে নাকি লাগলে আবার শুরু করা যাবে। কোন গল্পের মাঝ পথে তা থামিয়ে ক্যানভেসারের বড়ি বিক্রির রীতি সম্পর্কে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা হতাশ হয় কেনোনা গল্পটি চির-কৃমির বড়ি বেচার মধ্যে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ওস্তাদ তার সহকারী ও শ্রোতাদের সাফ কথা জানিয়ে দেয় সে কৃমির বড়ি আজ বিক্রি করবে না। শ্রোতারা ফিরে যেতে চায় তাদের গল্পে। গল্পকার চমক দেয় তার গল্প বলায় একথা বলে তাহলে বড়ি বিক্রি নাই যখন কিসসাটাও ক্ষান্ত দেই। শ্রোতারা এর প্রতিবাদে গরম মিছিল-শ্লোগানের মত প্রতিবাদ করেন। সত্য কিন্তু তাদের মুখ-ভঙ্গিতে হতাশার দৃশ্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ... ...
বাংলায় আদম পীরের প্রভাব সেই একাদশ শতকের পূর্ববর্তী সময়কালে থেকে আজও সমানভাবে বিদ্যমান। হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ী সংস্কৃতির এক অসামান্য ভাবধারা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে আদম পীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন। আদম পীর সম্পর্কে খুব সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যথেষ্ট মুশকিলের ব্যাপার। আদম পীরকে অনেকেই হযরত পীর আদম বলে অভিহিত করে থাকেন। কেউ কেউ বলেন বাবা আদম শহীদ। কিন্তু তাঁর জন্ম কোথায় ,তাঁর তিরোধানই বা কোথায়, কিভাবে হয়, মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ --এই সব কোনো কিছুই সঠিকভাবে জানতে পারা যায় না। তাঁর পারিবারিক পরিচয় ও কিন্তু খুব সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। খানিকটা অনুমান এবং অনুরাগীদের রেখে যাওয়া পরম্পরাগত বিফরণ এবং তাঁদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন গল্পগাছা কে নির্ভর করেই আদম পীর সম্বন্ধে কিছু কিছু ধারনা আমাদের উঠে আসে। ... ...
শিউলিকে বোঝাতে পারি না, যা দেখি তা নয়—সত্য তাই যা আমরা দেখি না। সে তখন হো হো করে হাসে। বলে, তুমি সেই তেমনি রয়ে গেলে—আগের মতই। পাল্টালে না, বদলালে না—এমন লোককে নিয়ে আর পারি না। ওকে বলি, এমন কথা তো ছিল না শিউলি। কথা ছিল, তোমাকে একটি নদী উপহার দেব। সঙ্গে একটি নৌকা। নদীতে ভেসে যাবে নৌকা, জলের উপর সূর্যাস্তের আলো—এমতাবস্থায় কত পাখি উড়ে যেতে পারে আকাশ দিয়ে—কল্পনা করে দ্যাখো একবার। ও বলে, আমি কল্পনা করতে পারি না। তুমি যা তোমাকে আমি তাই দেখি। দেখি শুনি, একা-একা কথা বলি। তার মধ্যে নদী নেই, সূর্যাস্ত নেই, নৌকা নেই। মাটির দোতলাবাড়ি’র পিছনে আমাদের চাষজমি। আমরা সেখানে মৌরি চাষ করি। ধনে আর জিরে। এই যে চাষজমি, এই যে চাষজন্ম—যেন তা আমাদের হাতে আছে অনন্তকাল। চাষ করতে করতে আমরা যখন সেই মাটির নীচে চলে যাই—দেখি সেখানে প্রাচীন জ্যোৎস্নাসকল পড়ে আছে। আর আমি অবাক হয়ে যাই শিউলির কথায়। এই তো কী সুন্দর কবিতার মত কথা বলে সে, কবিতার মতন চলন তার—কবিতার মত জীবন। অথচ সে বলে, আমি কবিতা লিখতে পারি না, কারণ আমি তা লিখিনি কখনও। কবিই সত্য আর জগত মিথ্যে—একথা তাকে বোঝাতে পারি না। সে একপাক ঘুরে গিয়ে বলে, ওসব হল তোমার কল্পনা। কবি হয়েই হয়েছে তোমার মুসকিল। জানো তো, কবিরা গজদন্তমিনারে বাস করে? আবোলতাবোল লেখে—আসলে ওসব কোনো কবিতাই নয়! অবাক হয়ে বলি, এসব কী বলছ তুমি শিউলি? জানো আমি কী ঠিক করেছি? এই গোটা ডিসেম্বর মাসটা তোমাকে উপহার দিতে চাই। একী কম কথা হল? হাত উল্টে শিউলি বলে, ঠিক আছে, দিলে না-হয়—কিন্তু তার পর? এই গোটা ডিসেম্বর নিয়ে আমি কী করব? ডিসেম্বরের সমস্ত শিশির আমার গায়ের উপর ঝরবে। সমস্ত শীত আমাকে কাঁপাবে। প্রজাপতিরা আমার গায়ে বসবে। বলো, তখন আমি কী করব? ... ...